#সেই_তুমি?
#পর্ব_১১
#Tabassum_Kotha
তুর্য ভাবছে হীরকে তার দেশের বাইরে যাওয়ার কথা কিভাবে বলবে। তখন হীর এসে তুর্যকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। তুর্য পিছন ফিরে হীরকে জরিয়ে ধরে ওর যাওয়ার কথা বললো।
— কি বললেন! ১ মাসের জন্য! দেশের বাইরে!! কিন্তু কেনো? এতো বছর তো বাহিরেই ছিলেন।
— মিউজিক ভিডিওর জন্য যেতে হবে। কিছুই করার নেই।
— হুম! কাজ খুব ইমপোর্ট্যান্ট। তা কবে যাচ্ছেন?
— পরশু সকালেই।
— কিহ! পরশু সকালে! মানে কালকের পরের দিন?
— হুম।
— এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবেন আর ফিরবেন ১ মাস পর।
— সরি কলিজা।
— এক শর্তে ক্ষমা করতে পারি।
— কি শর্ত?
— কিস মি। আপনি বলেছিলেন বিয়ের পর করবেন।
— কিন্তু তুমি এখনও ছোট। আর কয়েকটা দিন যাক তারপর না হয়।
— এই আপনি আমাকে ছোট বলতে বলতে আমার এখন মনে হচ্ছে আমি পুতুল দিয়ে খেলা করি। আর কয়েক মাস পরেই আমার আঠারো হয়ে যাবে।
— হ্যাঁ আঠারো হোক আগে।
— ঐ বেটা তুই আমাকে কি ভাবিস হ্যাঁ? জানিস সময় মতো বাসর টা হলে এতোদিনে একটা ২ বছরের বাবু থাকতো আমার।
— এসব কি বলছো হীর! এগুলো কোথা থেকে শিখলে তুমি?
— উফফ। চুপ একদম চুপ। আমি বাচ্চা নই। এখন আপনি আমাকে কিস করবেন মানে করবেন। কোনো কথা না।
তুর্য হীরের এহেম কান্ডে বেকুব বনে গেছে। সে মূর্তির ন্যায় আগের মতোই দাড়িয়ে আছে। হীর তুর্যর অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেই এগিয়ে এসে তুর্যর ঠোঁটৈ ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তুর্য চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। হীর যে এতো ডেঞ্জারাস হয়ে গেছে সেটা তুর্যর কল্পনার বাইরে ছিল।
হীর একহাত দিয়ে তুর্যর চুলগুলো আকড়ে ধরেছে। তুর্য হীরের কোমড় জরিয়ে ধরলো। দুজনে দুজনাতে মেতে উঠেছে।
বেশকিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর তুর্য হীরের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। তুর্য হীরের গলায় ঘাড়ে চুমু খাচ্ছে। হীর তুর্যর শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলে তুর্য হীরকে ছেড়ে দেয়। এভাবে ছেড়ে দেওয়াতে হীর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তুর্যর দিকে। তুর্য কিছু না বলে হীরের কপালে চুমু দিয়ে দেয়। হীরকে নিজের বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পরে তুর্য। তুর্য বিদেশে যাওয়ার আগে আর হীরের এতো কাছাকাছি যায় নি।
যেদিন তুর্য চলে যাচ্ছিল সেদিন তুর্যকে ঝাপটে ধরে অনেক কান্না করেছিল হীর। কিন্তু সেদিন তুর্য নিরুপায় ছিল। দ্বিতীয় বারের জন্য সেদিন তুর্য আর হীর আলাদা হয়েছিল।
তুর্য যাওয়ার পর দিনই হীরের বাবা মা চট্টগ্রাম থেকে আসে হীরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। হীরের যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিল না কিন্তু তার মা এক প্রকার জোর করেই সাথে নিয়ে যায়। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হীর রা সবাই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত মাঝ রাস্তায় হীরদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে।
রাস্তার লোকজন তাদের ধরাধরি করে হাসপাতালে নেয় ঠিকই কিন্তু হীরের মা-বাবা কে বাঁচানো সম্ভব হয় না। এক্সিডেন্টটা এতোটাই গুরুতর ছিল যে হীর কোমায় চলে যায়। ১ মাস নেটওয়ার্ক কাভারেজ এরিয়ার বাইরে থাকার দরূণ হীরের খুঁজ নিতে পারে নি তুর্য। তুর্যর বাড়ির মানুষ হীরের বাবা মার খোঁজ পেলেও হীরের খোঁজ পায় না। আর তুর্যকে কনটাক্ট না করতে পারায় জানাতেও পারে না।
দেশে ফিরে তুর্য হীরকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে। নিজের সব সোর্স কাজে লাগিয়ে দেয় হীরকে খুঁজে বের করার জন্য। অনেক খোঁজাখুজির পর যখন হীরকে খুঁজে পেয়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ায়। হীর তুর্যর পাশ কাটিয়ে চলে যায়। যেনো দেখেও দেখেনি তাকে। বারবার হীরের সামনে গিয়ে নিজের ভালোবাসা মনে করানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে কতোটা কষ্ট পেয়েছে তুর্য সেটা কখনই কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না সে।
।
।
।
।
।
।
।
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে আগুন নিভিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো তুর্য। এখন একটু ঘুম প্রয়োজন তার। হীরকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
সকালে হীর ঘুম থেকে উঠার আগেই তুর্য উঠে পরে। অনেকদিন জগিং এ যায় না সে। আজ খোলা হাওয়ায় প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছা করছে।
ঘুম থেকে জেগে নিজেকে একা ঘরে পেলাম। তার মানে কি তুর্য কাল রাতে ঘরে ফিরে নি? এতো ভোরে তুর্য কখনই উঠে না। এর মানে তো একটাই দাড়ায় রাতে তুর্য ঘরেই আসে নি। খুব কষ্ট হচ্ছে। তুর্যর হঠাত কি হলো? ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত আমি কিন্তু কোনো উত্তর নেই।
ফ্রেশ হয়ে রুমটা একটু গুছাচ্ছিলাম তখনই তাফসি এলো।
— ভাবি! কালকে বাসায় যে একটা লোক এসেছিল না? তার নাম্বারটা একটু দাও তো।
— কোন লোক? কালকে তো অনেকেই এসেছিল। তুমি কার কথা বলছো?
— আরেহ ওইযে ফর্সা মতো লম্বা লোকটা। এক্সিডেন্ট রোগী টা।
— ওহ রায়ান ভাইয়ের কথা বলছো!
— ওহ তো লোকটার নাম রায়ান। হ্যাঁ। ঐ লোকটাই। কালকে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে উনার একটা কাগজ পরে গিয়েছিল। এখন নাম্বার টা দাও আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি।
— আমি বলে দেবো সমস্যা নেই।
— আরেহ না না তোমার কষ্ট করতে হবে না নাম্বারটা দাও আমিই বলে দেবো।
— ঠিক আছে।
তাফসি রায়ানের নাম্বারটা নিয়ে শয়তানি হাসি দিতে দিতে হীরের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
তুর্য কোথায় আছে দেখার জন্য ঘর থেকে বের হতেই দেখি কিয়ারার ঘরের দরজা খোলা। অনিচ্ছা বশত ঘরের ভিতরে চোখ যেতেই আমার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। তুর্য কিয়ারাকে জরিয়ে ধরে আছেন। জানি না এভাবে জরিয়ে ধরে রাখার কি কারণ কিন্তু তুর্যর বুকে অন্য কাউকে দেখতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে। সহ্য হচ্ছে না আমার এই দৃশ্য তাই সরে এলাম সেখান থেকে।
নিচে নামতেই দেখি রুহান নিচে বসে আছে। এই লোকটা আরো একটা ঝামেলা। এমন চোখে তাকিয়ে থাকে অসহ্য!! কিচেনের দিকে যাচ্ছিলাম তখন রুহান পিছন থেকে ডাকলো।
— হীর ভাবি! I am sorry.
— কেনো? সরি কেনো?
— আমি জানি আর কেউ না বুঝলেও আপনি আমার দৃষ্টির মানে ঠিকই বুঝেছেন। আমি আমার কাজে লজ্জিত। প্লিজ ক্ষমা করে দিয়েন।
রুহানের কথা শুনে আমি এবার নিশ্চিত তার নজর ভালো ছিল না। কিন্তু সে নিজে থেকে সেটা স্বীকার করে নেওয়াতে আমার অনেক ভালো লাগছে।
— আপনি ভুলটা বুঝতে পেরেছেন এটা যথেষ্ট। সরি বলতে হবে না।
— ভাবি তুমি অনেক সুইট। এখন খেতে দাও।
— আপনি বসুন আমি খাবার দিচ্ছি।
কিচেনে গিয়ে আম্মুর কাজে সাহায্য করছি, নিজেকে যথেষ্ট ব্যস্ত রাখতে হবে। তুর্যর আর কিয়ারার কথা ভুলে থাকতে হবে। কিন্তু চাইলেই তো আর ভুলে থাকা সম্ভব না। বারবার সেই দৃশ্যই ভাসছে চোখের সামনে। খুব কষ্ট হচ্ছে। তুর্যর সাথে কাল রাত থেকে আর কথা হয় নি।
টেবিলে খাবার দিয়ে তুর্যকে ডেকে আনার জন্য ঘরে যেতেই দেখলাম ফোনে কথা বলছেন। যদিও আমি তার কথা শুনার জন্য যাই নি, তবুও তুর্য আমাকে দেখামাত্রই কল টা কেটে দিলেন। তুর্যর ব্যবহারে কষ্ট পেলেও কিছু বললাম না।
— খেতে আসুন।
— তুমি যাও আমি আসছি।
কিছু না বলে নিচে নেমে এলাম। কিয়ারা আর তুর্যকে একসাথে নিচে নামতে দেখে আমার চোখ ভরে আসছে। কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারছি না। তুর্য তো জানে কিয়ারা আমাকে তার থেকে আলাদা করতে চায় তাহলে কেনো সে আবার কিয়ারার সাথে ক্লোজ হলো।
খাবার টেবিলে তুর্যর পাশের চেয়ারে কিয়ারা বসে পরলো। আগে তুর্য আমাকে জোর করে তার সাথে বসাতেন। আর এখন সেই জায়গাটা অন্যকেউ দখল করছে। আমি দাড়িয়ে সার্ভ করছি, আম্মু-আব্বু সবাই তাদের সাথে বসার জন্য বলছেন কিন্তু তুর্য হয়তো দেখেতেও পারছেন না আমি সামনে দাড়িয়ে আছি।
খাওয়া শেষে তুর্য আর কিয়ারা একসাথে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। বরাবরের মতো এবারো তুর্য আমাকে দেখেন নি। বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। দুচোখ ভেঙে কান্না পাচ্ছে। কিন্তু আমার চোখের পানি কাউকে দেখানো যাবে না। ঘরের দরজা আটকে বালিশ চেপে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। কেনো করছে তুর্য আমার সাথে এমন। আমাকে না সে ভালোবাসে! তাহলে হঠাত্ এই অবহেলা কেনো?
?
রায়ানের নাম্বার মোবাইলে টুকে কিছু একটা ভাবছে তাফসি। নাম্বার অলরেডি সেভ করে ফেলেছে TR নামে। দুইবার কল করে রিং যাওয়ার আগেই কেটে দিলো। আবার কিছুক্ষণের নিরবতার পর তৃতীয়বার বেশ সাহস নিয়ে কল টা করে ফেললো। তিনবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ হলো।
— হ্যালো!
— কেমন আছেন?
— জ্বি ভালো। আপনি কে বলছিলেন?
— আপনার শুভাকাঙ্ক্ষি।
— শুভাকাঙ্ক্ষির নাম টা বলুন।
— কোনো নাম নেই। আপনি চাইলে আপনার স্বপ্নের রাজকন্যার নামটা আমাকে উপহার দিতে পারেন।
— এই মেয়ে ফাইজলামো হচ্ছে! সবাইকে কি নিজের মতো ছ্যাঁচড়া মনে করো? অসভ্য একটা মেয়ে। এরপর যদি এই নাম্বারে কল করো তাহলে খুঁজে বের করে মারবো।
— আরেহ ক,,,
টুট টুট টুট,, রায়ান কলটা কেটে দিলো। আর এদিকে তাফসির রাগে নিজের চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছে করছে। প্রথম দেখাতেই রায়ানের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে সে। সেদিন আপু বলার অপরাধে তাকে জব্দ করার জন্যই ফোন করেছিল। কিন্তু হলো তো উল্টোই। এখন রায়ানকে কুটি কুটি করে কাটতে ইচ্ছে করছে তাফসির।
সেদিনের রায়ানের লাল হয়ে যাওয়া গাল আর ভাঙা হাত কেনো যেনো ভীষণ টানছিল তাফসিকে। বেশি সময় সে রায়ানকে দেখতে পায় নি কিন্তু ওই অল্প সময়েই সে সব খুটিয়ে দেখে নিয়েছে। কিছুক্ষণ রায়ানের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে তারপর ফেসবুকে লগ ইন করলো। অনেক কষ্টের পর রায়ানের আইডি খুঁজেও পেলো। রায়ানের আইডির পিকগুলো দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেলো সে। ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিয়ে আইডি ঘাটতে লাগলো। রায়ানের ডিপিতে লাভ রিয়েক্ট দেওয়া প্রতিটি মেয়েকে মেসেজে আচ্ছামতো বকাঝকা করলো সে।
এখন তাফসির বেশ শান্তি লাগছে। কেনো যে এই মেয়েগুলো অন্যের বয়ফ্রেন্ডের ডিপিতে লাভ দেয়। তবে এখন সবাইকে কথা শুনিয়ে দিয়েছে সে। এখন আর কেউ লাভ দেবে না। আইডি লগ আউট করে ঘুমিয়ে পরলো তাফসি।
?
তুর্য আর কিয়ারা সেই সকালে বেরিয়েছে এখনও ফিরে আসে নি। তুর্যকে অনেকবার ফোন করেছি কিন্তু ফোনটা ধরছে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবারো তুর্যকে ফোন দেবো ঠিক তখনই রাহির নাম্বার টা স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে কথা শুরু করলাম।
— কি খবর কেমন আছিস?
— আমি তো ভালোই কিন্তু তোর কি হয়েছে আপু?
— কি হয়েছে মানে?
— আরেহ তুই এতো ছোট জামা কাপড় কবে থেকে পরা শুরু করলি?
— কি বলছিস?
— কলেজ থেকে ফিরছিলাম। তুর্য ভাইয়া আর তোকে রেষ্টুরেন্টে যেতে দেখলাম। কিন্তু কথা সেটা না। তুই এগুলো কি পরেছিস। তুই তো কখনও এই ধরনের পোশাক পরিস না।
রাহির কথায় আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কি হয়েছে। তুর্যর সাথে কিয়ারা ছিল। আর কিয়ারাও ওসব ছোট ছোট পোশাকই পরে। তার মানে তারা রেষ্টুরেন্টে একসাথে আছে। এদিকে আমি না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছি আর সে অন্য একজনের সাথে লাঞ্চ করছে। তুর্য হঠাত এমন কেনো করছে? সে কি আমাকে ভালোবাসে না? না না এ আমি কি ভাবছি! তুর্য আমাকে ভালোবাসে, অনেক ভালোবাসে। হয়তো আমার কোনো ভুল হয়েছে যেটা তুর্যর ভালো লাগে নি।
ফোনের ওপাশ থেকে রাহি হ্যালো হ্যালো করছে।
— আপু শুনতে পাচ্ছিস?
— হ্যাঁ আসলে তুর্যর সাথে আমি না। তুর্যর এক ফ্রেন্ড গেছে লাঞ্চ করতে। (মিথ্যা বললাম, তুর্যকে কারো কাছে ছোট করতে চাই না)
— কি বলছিস। তুর্য ভাইয়া মেয়েটার হাত ধরে রেখেছিল তাই আমি ভেবেছি সেটা তুই হবি। ফেইস দেখি নি আমি।
— তুর্যর লন্ডনের ফ্রেন্ড সে। ওখানে হাত ধরা কোনো বড় কথা না।
— ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস। আমি রাখছি।
— ভালো থাকিস মামা-মামির দিকে খেয়াল রাখিস।
রাহি ফোনটা রাখতেই দুচোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরলো। জানি না কোন অপরাধের শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে তুর্য। শুধু এটুকুই জানি আর সহ্য হচ্ছে না আমার। বুকটা কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে। এতো অবহেলা পেতে হবে তুর্যর কাছে থেকে কখনও ভাবি নি। এই ভালোবাসার চেয়ে ঘৃণা আর টর্চার গুলো বেশি ভালো ছিল। এতো কষ্ট তো পেতে হতো না। কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি নিজেও জানি না।
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছে। এতোটাই জোরে ধরে রেখেছে যে আমি নরতেও পারছি না। আমার গালে কারো গরম নিশ্বাস পরছে। আমি দেখতে চাই কে আমার পাশে আছে কিন্তু চোখ খুলতে পারছি না। ঘুম পরী বেশ ভালো ভাবেই আকড়ে ধরে রেখেছে আমাকে। গালের দিকটা ভেজা ভেজা মনে হচ্ছে। নাহ এইবার আমায় চোখ খুলতেই হবে। হয়তো তুর্য আমাকে ধরে রেখেছেন। তাই চোখ দুটো খুলে নিলাম। কিন্তু আমার পাশে কেউ নেই, কেউ আমাকে জরিয়েও ধরে ছিল না। তাহলে কি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম?
ওয়াশরুমের দরজা খুলে তুর্য বেরিয়ে এলেন। শাওয়ার নিয়েছেন মনে হচ্ছে। ভেজা শরীরে শুধু একটা টাওয়াল পেঁচানো তার। তুর্য এমনিতেই অনেক সুদর্শন, তার উপর এই অবস্থায় তাকে আরো আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। কিন্তু না আমি তাকে দেখবো না। আমি তার সাথে রেগে আছি। ভীষণ অভিমান জমে আছে আমার। এভাবেই তাকে ছাড় দেওয়া যাবে না।
বিছানার উপর বসে আছি অপেক্ষায় যে কখন তুর্য আমার কাছে আসবেন আর আমি তার সাথে ঝগরা করবো। কিন্তু না! আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে তুর্য কাপড় চেঞ্জ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। নিজের অজান্তেই মনটা আবার বিষন্নতায় ভরে গেলো। আবারো সেই অবহেলা। জানি না এই অবহেলার শেষ বেলা কখন আসবে।
তুর্যর পিছন পিছন গেলাম দেখার জন্য তুর্য কোথায় যাচ্ছেন। গিয়ে যা দেখলাম তারপর আমার পা দুটো আর নরছে না। কেমন সব উল্টো পাল্টা মনে হচ্ছে। তুর্য কিয়ারার ঘরে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে লাগিয়ে দিলেন। এর অর্থ আমি আর কি বুঝবো। এতো রাত করে একটা মেয়ের ঘরে যাওয়ার মানে কি যেখানে সে নিজে বিবাহিত। তার ঘরে যে বউ আছে সেটা কি সে ভুলে গেছে।
ঘরে গিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলাম। আমার মনে হয় কষ্ট পেলে পানিতে ভেজা উচিত। এতে করে কষ্টগুলো অনেকটাই ধুয়ে যায়। ঘন্টা খানিকের মতো ভিজে কাপড় পাল্টে বেরিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। সকাল থেকে খাওয়া হয় নি। ক্ষুধা পেয়েছিল কিন্তু তুর্যর অবহেলা পেয়ে পেট ভরে গেছে আমার।
মাঝরাতে কারো ডাকে ঘুম ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি তুর্য দাড়িয়ে আছে সামনে। সচরাচর কারো ডাকে আমার ঘুম ভাঙে না। কিন্তু আজকে কিভাবে ভাঙলো কে জানে। উঠে বসতে গিয়েই মাথা চেপে ধরলাম প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। হয়তো জ্বরও এসেছে রাতে ভেজার জন্য।
তুর্য রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। এই দৃষ্টির মানে আমি বুঝি। ভেজার কারণে জ্বর এসেছে এজন্যই রেগে আছেন। কিন্তু আমিও রাগ করেছি তার ওপর। একদম কথা বলবো না।
তুর্য খাবারের প্লেট সামনে এনে নিজেই খাবার আমার মুখের সামনে ধরলেন। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকে ধরে আছি। তাকে কেনো দেখাবো চোখের পানি! মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।
তুর্য প্লেট টা নিচে রেখে আমার মুখ তার দিকে ঘুরালেন।
— কি হয়েছে? খাও নি কেনো সারাদিন। আর ভিজেছো কেনো! দেখলে তো জ্বর এসে পরেছে।
এবার আর নিজের কান্না ধরে রাখতে পারলাম না। তুর্যকে ঝাপটে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিলাম।
তুর্য আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
— আপনি কেনো আমার সাথে এমন করছেন? কি অন্যায় করেছি আমি বলুন। যদি কোনো ভুল করে থাকি তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি। আপনি যেই শাস্তি দিবেন সব মাথা পেতে নেবো কিন্তু এভাবে আমাকে অবহেলা করবেন না প্লিজ। আপনাকে কিয়ারার সাথে দেখতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি তুর্য। আমার সাথে এমনটা করবেন না প্লিজ।
তুর্য আমাকে তার বুক থেকে উঠিয়ে আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন।
— আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি কলিজা। এখন খাবার খেয়ে ঔষধ টা খেয়ে নাও।
তুর্য আমাকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলেন।
চলবে..