সেই তুমি পর্ব-১২

0
3879

#সেই_তুমি?
#পর্ব_১২
#Tabassum_Kotha

তুর্যর দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি। আজ সারাদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো চোখের সামনে দিয়ে ভাসছে। তুর্যকে আমি অনেক ভালোবাসি তাই তার অবহেলাগুলো আমাকে কাঁদায়। কিন্তু তাকে আর কিয়ারাকে এতো কাছে আমি দেখতে পারি না। কেনো দেখবো তাদের আমি কাছে? আমি তার বউ, আমার অধিকার আছে তার উপর। সে অন্য কোনো মেয়ের কাছে কেনো যাবে? তুর্য উঠে চলে যাচ্ছিল তার হাতটা ধরে আমার সামনে বসিয়ে দিলাম।

— আপনার কি হয়েছে আমাকে কি একটু খুলে বলা যায় না? কেনো করছেন এতো অবহেলা? আপনাকে ভালোবাসি আমি তুর্য। জানি না যেই মানুষটা আমার এতো বড় অপরাধী সেই মানুষটাকে আমি কিভাবে এতো ভালোবেসে ফেললাম। হয়তো কিছু প্রশ্নের কোনো উত্তর হয় না। কিন্তু ভালোবাসি এটা তো সত্যি।

— হীর! আমি এই মুহূর্তে তোমাকে শুধু একটুকুই বলতে পারবো। আমি তোমাকে আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। তোমাকে অবহেলা করছি না। শুধু বলবো আমি নিরুপায়।

— আপনার জন্য জীবন দিতে পারবো, কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে আপনাকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারবো না। আমি আপনাকে চাইলেও অবিশ্বাস করতে পারছি না। বারবার মনে হচ্ছে হয়তো আপনি নিজেও কোনো সমস্যায় আছেন, তাই কিয়ারার সাথে,,, । এরপরও বলবো, আপনি যদি আমাকে নাও ভালোবাসেন তবুও আমি যতোদিন বাঁচবো ততোদিন আপনি শুধু আমার। অন্যকারো না। অন্য কারো সেদিন হতে পারবেন যেদিন আমি মারা যাবো,,

তুর্য আমার মুখ চেপে ধরলেন।

— এসব কথা ভুলেও মুখে আনবে না কলিজা। আমি শুধু লোক দেখানোর জন্য বলিনা তুমি আমার কলিজা, তোমাকে নিজের থেকেও অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।

— ভালোই যদি বাসেন তাহলে কেনো এমন করছেন? কাল থেকে এতো টা অবহেলা!! একটা বার ভেবে দেখেন আমার কেমন লেগেছে। অবহেলাগুলো এক পাশে সরিয়ে দেখলেও কিয়ারার সাথে আপনাকে একঘরে দেখতে আমার কেমন লাগে জানেন? যখন আপনি কিয়ারার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন তখন আমার কি মনে হয়েছে জানেন? একবার ভেবেছিলাম আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু আমি তো আপনাকে ছেড়ে বাঁচতে পারবো না। তাই ভেবেছিলাম নিজেকে শেষ করে দেবো। কিন্তু সেটাতেও সাহস জোগাতে পারলাম না। আপনার সাথে বাঁচতে চাই। অনেক স্বপ্ন দেখেছি আপনাকে সাথে নিয়ে সেগুলো পূরণ করতে চাই। চুপ করে আছেন কেনো তুর্য উত্তর দিন কেনো করছেন এসব?

তুর্য অপরাধরীর মতো মাথা নিচু করে আছে। তার চোখ দুটো টলমল করছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে এই চোখ বেয়ে অশ্রু ধারা ঝড়ে পরবে। এভাবে তুর্যকে দেখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার অভিমান গুলো যে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।

— হীর আমি তোমাকে ঠাকচ্ছি না। এখন আমি এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি যে আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারছি না। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি,,,, আমি তোমাকে ধোঁকা দেওয়ার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারি না। আমি শুধু তোমার কাছে একটু সময় চাইছি। সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে যাবে। শুধু একটু সময় দাও। তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমি সব করতে রাজী আছি।

তুর্য পিছন ফিরে দেখে হীর ঘুমিয়ে পরেছে। আসলে হীরের খাবারে ঘুমের ঔষধ তুর্যই মিশিয়ে ছিল। তুর্য জানতো হীর তাকে আর কিয়ারাকে একসাথে দেখে প্রশ্ন করবে।

সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে ব্যালকোনিতে চলে গেলো তুর্য। হীরের করা এসব প্রশ্নগুলো তার কাছে জটিল নয়। খুব স্বাভাবিক এ প্রশ্নগুলো। যেকোনো মেয়েই করবে তার স্বামীর এই রূপ দেখে। কিন্তু জটিল হলো প্রশ্নের উত্তর গুলো। প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে যে হীরকে সব বলতে হবে।

সেদিন কিয়ারাকে ওর বাসায় আনতে যাওয়ার পর কিয়ারা ওয়াশরুমে যাওয়াতে তার ঘরেই অপেক্ষা করছিল তুর্য। তখন কিয়ারার মোবাইলে একটা ফোন আসে। যদিও তুর্যর কলটা রিসিভ করার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু যেহেতু বেজেই যাচ্ছিল তাই রিসিভ করে নেয়। কিন্তু ওপাশ থেকে যা বলছিল তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না তুর্য।

ওপাশের কথাগুলো ছিল, ” কিয়ারা তুমি যে এতোটা ইউজলেস আমি ভাবতেও পারি নি। তোমাকে আমি তুর্যর বাড়ি পাঠালাম যেনো তুমি হীরকে তুর্যর থেকে আলাদা করতে পারো। কিন্তু তুমি কি করলে? ওদের আলাদা করার জায়গায় আরো কাছাকাছি নিয়ে চলে এলে। তুমি জানো তোমাকে খুন করে ফেললেও এখন আমি শান্তি পাবো না। আমার নিজের উপর রাগ হচ্ছে। কেনো যে তোমার মতো একটা ইডিয়ট কে এই কাজটা দিয়েছিলাম। আমার এতো মাসের প্ল্যানিং এ তুমি জল ঢেলে দিয়েছো। তোমার চেহারাও আর দেখতে চাই না আমি।”

ফোনটা রেখে তুর্য থ মেরে বসে পরে। তারমানে কিয়ারা ওই মাষ্টার মাইন্ডের সাথে জরিত। তাকে আর হীরকে আলাদা করার এতো প্ল্যানিং কিয়ারার না বরং সেই মাষ্টার মাইন্ডের ছিল। কিয়ারা তো মাত্র একটা পুতুল, যাকে চাবি অন্য কেউ দিয়েছিল। তুর্য এবারো সেই লোকটার নাম্বার নিতে ব্যর্থ হলো কেনোনা লোকটা আবারো প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল করেছে। কিন্তু এবার তুর্য বুঝে গেছে কিভাবে লোকটাকে সামনে আনবে। কিয়ারা তার মোটিভে সাকসেসফুল হয় নি দেখে লোকটা আরো সতর্ক হয়েছে। কিন্তু যদি কিয়ারা তার মোটিভে সাকসেসফুল হয়ে যায় তাহলে লোকটাকে ধরা অনেক ইজি হয়ে যাবে। হ্যাঁ এটাই হবে তুর্যর প্ল্যান। সে এমন নাটক করবে যাতে কিয়ারা আর মাষ্টার মাইন্ডের বিশ্বাস হয়ে যায় তুর্য হীরের কাছে থেকে সরে এসেছে।

সেই প্ল্যান অনুযায়ীই তুর্য সবাইকে দেখিয়ে হীরের কাছে থেকে দূরে দূরে থাকতে শুরু করে। কিয়ারাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, লাঞ্চে যাওয়া সবটাই কিয়ারার বিশ্বাস জোগানোর প্ল্যান ছিল। রাতে কিয়ারার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল কিয়ারার জিনিস পত্র তল্লাশি নিয়ে মাষ্টার মাইন্ড সম্পর্কে কিছু খুঁজে বের করা। এটা করার জন্য অবশ্য তুর্য কিয়ারার জুসে ঘুমের ঔষধ মিলিয়ে দিয়েছিল।

কিয়ারার ঘর তল্লাশি করে তুর্য এমন কিছুই পায় নি যার মাধ্যমে কালপ্রিটটাকে খুঁজে বের করা যাবে। কিন্তু কিয়ারাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার সময় তার কাঁধে R অক্ষরের ট্যাটু দেখেছে। ট্যাটুটা যে কিয়ারার বয়ফ্রেন্ডের জন্য করা সেটা তুর্য ভালো করেই জানে। তুর্য একটু হিসাব করছে, কিয়ারা যদি সত্যিই প্রেগন্যান্ট হয় তাহলে ও সিরিয়াস রিলেশনে আছে। হতে পারে কিয়ারার বয়ফ্রেন্ডই মাষ্টার মাইন্ড। অনেক কিছু ভেবে ফেলেছে তুর্য, কিয়ারা হয়তো তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করছে। সে তার প্ল্যানে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু এসবে হীর সব চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে। যদিও হীরকে কষ্ট দিতে চায় নি সে কিন্তু তার সামনে যে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। চারপাশে শত্রুর মেলা, যারা তার হীরকে তার কাছে থেকে কেড়ে নিতে চায়। হীরকে এভাবে কষ্ট দিয়ে তার হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হীরের চোখের পানিগুলো সে তুর্যকে দেখাতে পারছে কিন্তু তুর্য তার কষ্টগুলো কাকে বোঝাবে!!

আর অল্প একটু অপেক্ষা, তারপর হীর আর তুর্যর মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তারা একসাথে থাকবে।

৪/৫ টা সিগারেটের অবশেষ মেঝেতে পরে আছে। ইদানিং তুর্য একটু বেশিই স্মোক করে। কিন্তু এইটা নিয়ে তাকে বকাঝকা করার মতো কেউ নেই। কয়েকমাস আগের হীর আর এখনকার হীরের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত্। তুর্য জানে হীরকে ড্রাগস্ গুলো দেওয়াতে তার ব্রেইন আগের চেয়ে অনেক স্লো আর ড্যামেজ হয়েছে। এতে যদিও হীরের কোনো দোষ নেই কিন্তু তার সেই আগের দুষ্টু, প্রাণোবন্ত হীরকে ফিরে পেতে ইচ্ছে হয়।

আগের হীর কথায় কথায় ঝগড়া, খুনসুটি করতো। আর এখনকার হীর! ভীতু! সময় মানুষকে বদলে দেয়। তবুও হীরকে ভালোবাসে তুর্য।

হাতে থাকা সিগারেটটা ফেলে দিয়ে তুর্য ঘরে চলে গেলো। প্রতিদিনকার মতো হীরের কপালে, গালে আদরের পরশ বুলিয়ে দিয়ে তাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুর্য আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। কতো নিষ্পাপ এই চেহারাটা, কেনো যেনো মনে হয় না জানি কতো কষ্ট লুকিয়ে রেখেছে এই ফর্সা মুখটার গভীরে। তুর্যর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি না আমি। নিজের অজান্তেই আমার চোখ ভরে আসে। কিন্তু আমি এসব কেনো ভাবছি? লোকটা আস্ত একটা খচ্চর, শাকচুন্নি, এনাকন্ডা! আমায় এতো কষ্ট দেয়, এতো কাঁদায়। তবুও কেনো ভালোবাসি তাকে!!

তুর্যর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাকে নিজের উপর থেকে সরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে আম্মু-আব্বুর কথা শুনতে পেলাম। তারা রুহানের সাথে তাফসির বিয়ের দিতে চায়। রুহানকে আমার পছন্দ ছিল না কিন্তু সেদিন নিজে মুখে সব স্বীকার করে নেওয়াতে এখন অবশ্য তেমন সমস্যা নেই। ভুল তো মানুষই করে! রুহানও করেছিল, সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে সেটাই অনেক।

খাবার টেবিলে সবাই এসে গেছে কিন্তু তাফসি এখনও আসে নি। তাফসিকে ডাকতে গিয়ে দেখি বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে সে। এ বাড়িতে আসার পর থেকে তাফসিকে একবারের জন্যও কাঁদতে দেখি নি আমি। এতো হাস্যোজ্জল, চঞ্চল মেয়েটার হঠাত কি এমন হলো!

— তাফসি! কি হয়েছে তোমার! কাঁদছো কেনো?

— ভাবি! আমি রুহান ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাই না। তাকে আমি সবসময় তুর্য ভাইয়ার মতোই দেখেছি। আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না।

— সব ঠিক আছে তাফসি কিন্তু রুহান ভাইয়া ছেলে হিসেবে খারাপ নয় আর সাকসেসফুলও বটে। আর আব্বু আম্মু রাজী আছেন এখানে।

— কিন্তু আমি রাজী নই ভাবি। আমি উনাকে ছাড়া আর কাউকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না।

— কি বলছো? কাকে ছাড়া? তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?

— ভাবি আমি জানি না এটা ভালোবাসা না কি অন্য কিছু কিন্তু বিশ্বাস করো তাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেও পারি না আমি। এই অবস্থায় স্বামী হিসেবেও তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতে পারবো না।

— কার কথা বলছো?

— তোমার ভাই রায়ান, তার কথা বলছি। সেদিন বাসায় তাকে দেখার পর থেকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি নি তাকে। ভাবি তুমি একটু বোঝাও না তোমার ভাইকে আমাকে বিয়ে করার জন্য।

— রায়ান ভাই! কিন্তু রায়ান ভাই কি রাজী হবে?

— তুমি বললে ঠিক রাজী হবে। তোমাকে অনেক ভালোবাসে উনি তোমার কথা ফেলতে পারবে না।

সেটাই তো সমস্যা, রায়ান ভাই আমাকে ভালোবাসে। আমি কিভাবে বলবো এই কথাগুলো তাকে? (মনে মনে বললাম কথাগুলো)

— কি ভাবছো ভাবি! বলো না তুমি কথা বলবে রায়ানের সাথে!

— আচ্ছা তুমি কেঁদো না আমি দেখি কি করা যায়। এসো খাবার খেয়ে নাও।

তাফসি আমাকে মহা ঝামেলায় ফেলে দিলো। রায়ান ভাইয়াকে কিভাবে রাজী করাবো আমি!!

আজকেও কিয়ারা তুর্যর সাথে বেরিয়ে গেলো। আমার চোখের পানির কোনো মূল্য নেই এই লোকটার কাছে। এই লোকটা আসলেই একটা খচ্চর। আর ওই কিয়ারা একটা পেত্নি। এই পেত্নিটাকে উচিত শিক্ষা দিতেই হবে। পরের স্বামীর দিকে নজর দেওয়া তাই না। আসো চাঁদ আজকে তুমি বাড়িতে আসো।

তাফসি রায়ানের ছবির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখনই রায়ানের আইডি থেকে মেসেঞ্জারে কল এলো তাফসির মোবাইলে।

— হ্যালো! তাফসি চৌধুরী বলছেন?

— জ্বি! আপনি আমাকে ফোন করেছেন! সত্যি নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।

— ফোন না করে উপায় আছে? আপনি আমার ডিপিতে লাভ রিয়েক্ট দেওয়া মেয়েদের বকাঝকা কেনো করেছেন?

— ওহহো তো ওই মেয়েদের হয়ে সাফাই গাওয়া হচ্ছে তাই না! ওই মেয়েগুলো এতো ছ্যাঁচড়া কেনো?? অন্যের বয়ফ্রেন্ডের ডিপিতে লাভ রিয়েক্ট দেয় কেনো? আমি ওদের সামনে পেলে ওদের ন্যাঁড়া করে গাঁধার পিঠে চরিয়ে ঘুরাতাম।

— What!! ছ্যাঁচড়া ওরা না ছ্যাঁচড়া তুমি। ওরা আমার কাজিন, কলিগ, রিলেটিভ ছিল। আর তুমি ওদের কে বলেছো আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড!!

— তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড কেনো হতে যাবা? তুমি আমার স্বামী হবা কয়েকদিন পর। তখন তোমার ডিপিতে একটাই লাভ থাকবে ওটা তোমার বউ মানে আমার থাকবে।

— এই মেয়ে তুমি কি পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছো?

— না কিন্তু তোমার বউ আমিই হবো দেখে নিও।

রায়ান তাফসির পাগলামির সাথে না পেরে কলটা কেটে দিলো। আর তাফসি একটা বিশ্বজয় করা হাসি দিলো। প্রপোজ না করে সোজা বিয়ের কথা বলে দিয়েছে সে।

টেনশনে একপ্রকার মরে যাচ্ছি। একেতো ওই কিয়ারা পেত্নি আবার এখন তাফসি-রায়ান ভাই। হায় আল্লাহ কিভাবে রাজী করাবো রায়ান ভাইকে। তাফসি অনেক ভালো মেয়ে রায়ানকে সবসময় সুখি রাখবে। যে করেই হোক রাজী করাতেই হবে।

হীর রায়ানকে ফোন করে দেখা করতে বললো।

রায়ান ভাই আর আমি সামনা সামনি বসে আছি। কিন্তু কথাটা কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। আমাকে চুপ দেখে রায়ান ভাই নিজেই বলতে শুরু করলেন।

— আর কতোক্ষণ এভাবে থাকবি বলতো। কিছু একটা বল।

— ভাইয়া তুমি বিয়ে করবে না?

বিয়ের কথা শুনে রায়ানের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। যেই বুকে একসময় হীরের আনাগোনা ছিল সেই বুকে অন্য একজনকে কিভাবে জায়গা দেবে সে।

— কি হলো বলো! বিয়ে করবে না?

— করবো না কেনো অবশ্যই করবো কিন্তু এখন না। পরে এক সময়।

— পরে ভালো মেয়ে পাবে না। আমার নজরে অনেক ভালো একটা মেয়ে আছে। এখনই রাজী হয়ে যাও। দেখো তোমার জীবন সুখ দিয়ে ভরিয়ে দেবে।

— এখন আমি বিয়ে করতে চাই না হীর।

— এমন করো না প্লিজ। আমার ননদ তাফসি তোমাকে অনেক ভালোবাসে। অনেক ভালো একটা মেয়ে তাফসি তোমাকে অনেক সুখে রাখবে।

— কি নাম বললি? তাফসি? এটা কি তাফসি চৌধুরী?

— হ্যাঁ তুমি চেনো নাকি?

— এই মেয়েটাই তো তাই না। (মোবাইলে একটা পিক বের করে দেখালো)

— আরেহ তুমি তো চেনো।

— এই মেয়েটা আস্ত একটা সাইকো হীর। আমার মাথা খেয়ে ফেলবে এই মেয়ে। তুই আর মেয়ে পেলি না?

— এতো কথা শুনতে চাই না। তুমি তাফসির সাথে দেখা করবে মানে করবে। আমার এতোটুকু কথা রাখতে পারবে না?

— তোর কোনো কথা ফেলতে পারি আমি বল! ওকে দেখা করবো।

হীর রায়ানকে রাজী করে বাড়ি ফিরে এলো। আসার পথে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে এসেছে সে। এগুলো তাকে সাহায্য করবে তার প্ল্যানিং এ। বাসায় এসে প্ল্যানিং অনুযায়ী কাজে নেমে পরলো হীর।

সন্ধ্যায় কিয়ারা আর তুর্য বাসায় ফিরে এলে কিয়ারা তুর্যকে ফোর্স করে তার সাথে আরো কিছুটা সময় কাটানোর জন্য।

— তুর্য আর কিছুক্ষণ থাকো না আমার সাথে।

— তুমি রেষ্ট নাও। আমার একটু কাজ আছে। সারাদিন তোমার সাথেই তো ছিলাম। এখন একটু কাজ না করলে যে রকস্টার তুর্য ফ্লপস্টার হয়ে যাবে।

— ওকে বেবি। বাই।

— বাই।

তুর্য ঘরে ঢুকতেই দেখলো হীর খুব হাসি খুশি মুড নিয়ে বসে আছে। তুর্য হীরের এতো সুইট রূপটা মেনে নিতে পারছে না। যেখানে বারবার তাকে কিয়ারার সাথে দেখছে সেখানে এতো খুশি থাকার তো কথা না। ডাল মে কুছ কালা হেই। তুর্য সন্দেহর চোখে পুরো ঘরটা দেখছে।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে