সাত সমুদ্রের তিমির পর্ব-১৩

0
955

#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ১৩
#সুমাইয়া_আফরিন

অনু দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল রাফাত ও একটা অচেনা ছেলে কেবিনে ঢুকেছে। অনু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। কারন অনু ভেবেছিল রাফাতের মা আসবেন কেবিনে। কারন একজন মায়ের থেকে নিজের মেয়েকে কেউ বেশি কেয়ার করতে পারে না। আর এখন স্নেহার প্রচুর বেশি কেয়ার দরকার। অনু রাফাত আর আগুন্তুক লোকটাকে দেখে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

রাফাত আর ওই ছেলেটি অনুর সামনে রাখা দুইটি চেয়ারে বসে পড়ল। অনু ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে রইল দুইজনের দিকে। তারপর প্রেসক্রিপশনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,

‘প্রেশেন্টের মা আসলে খুব ভালো হতো।’

‘আসলে ভাবী না মানে ডক্টর শাশুরী মা আমার ছেলেকে নিয়ে খুব ব্যস্ত তো তাই আসেনি।’

অনু লেখা ছেড়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইল।ইনিই প্রথম মানুষ যে অনুকে ভাবী বলে ডাকলো। অনু লোকটার কথার ধরন শুনে বুঝতে পারল যে লোকটা স্নেহার হাজবেন্ট। অনু ভ্রুটা উচু করে আবার নিচে নামিয়ে বলল,

‘আপনিই প্রেশেন্টের হাজবেন্ট?’

‘জ্বী। আর ও হচ্ছে রাফাত। রাফাত প্রেশেন্ট মানে আমার স্ত্রীর ব্রাদার।’

অনু লোকটার কথায় ভীষন বিরক্ত হলো। কিন্তু বিরক্তের থেকে অবাক হলো বেশি। অনু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে।আনমনে ভাবতে থাকলো সে,

‘আজব তো, এমনভাবে পরিচয় দিচ্ছে যেন আমি জানি না রাফাত কে!ওনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে উনি জানেন না যে আমি রাফাতের স্ত্রী। কিন্তু যদি না জেনে থাকেন তাহলে ভাবী বললেন কেন?কিন্তু যদি জেনেই থাকতেন তাহলে পরিচয় দেবেন কেন?’

মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনুর। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে সে। ভাবনার দুনিয়ায় বাস করছে সে। হঠাৎ রাফাত গলা খাকারি দিয়ে বলল,

‘অনু? আমার বোনের জন্য এখন কি কি করা উচিত তাড়াতাড়ি বলো।’

রাফাতের কথায় অনুর হুশ ফেরে। অনু নিজের চোখের চশমাটি ঠিক করে স্নেহার ব্যাপারে উপদেশ দেওয়া শুরু করল। এক পর্যায়ে অনু বলে উঠল,

‘কোনো রকমের যেন ব্যালেন্স ডাইট না করে। সকল পুষ্টিকর খাবার তাকে খেতে হবে। আর দিকে দুটো করে ডিম খেতে হবে তাকে।’

অনুর সামনে বসে থাকা লোকটি চোখ বড় বড় করে বললেন,

‘কি বলছেন আপনি? আমার বউ ডিম খায় না। অন্য কিছু বলুন।’

অনু ভ্রু কুচকে বলল,

‘ What? আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে? একজন মানুষের ডিম খাওয়া দরকার এখন আমি সেইটা কি করে বদলাবো? তার ডিম খাওয়া দরকার তাকে ডিম খাওয়াতেই হবে বুঝতে পেরেছেন’

লোকটার মাথায় অজানা চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। অনু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে রাফাত আর লোকটার দিকে প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিল। অনু একটি অবাক হয়েছে রাফাতের সারাক্ষন এমন চুপ থাকায়। লোকটা প্রেসক্রিপশন নিয়ে উঠে দাড়ালো। সাথে সাথে রাফাতও বসা থেকে উঠে দাড়ালো।

লোকটা দরজার কাছে গিয়ে আবার ফিরে এসে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘আপনি গাইনালোজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?’

‘পড়াশোনা আমি সবকিছু নিয়েই করেছি। আর ডিগ্রি পেয়েছি গাইনালজি নিয়ে।’

লোকটা ”ওওও”বলে চলে গেল। অনুর কেন জানি লোকটাকে একটা পাগল মনে হলো। অদ্ভুত ধরনের প্রশ্ন করে। অনু আর কিছু না ভেবে নিজের ব্যাগ গোছাতে লাগল এবং নিজেকে তৈরি করতে লাগল বাসায় যাওয়ার জন্য।

কেবিন থেকে বের হয়েই রিয়াদ রাফাতের হাত চেপে ধরল। তারপর শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

‘কি ব্যাপার শালাবাবু, ভাবীর সামনে গিয়ে তো একেবারে চুপ হয়ে গেলে।’

রাফাতের দিক থেকে কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া গেল না। রাফাত আপন মনে হেটে চলেছে করিডর দিয়ে। রিয়াদ কথার সাথে আরো ঝাল মশলা মাখিয়ে বলল,

‘কি রে, কি হয়েছে তোর? আচ্ছা আমি একটা জিনিস বুঝলাম না তুই মেয়েটার নাম জানলি কীভাবে? তুই কি মেয়েটার সাথে কথা বলেছিস?কবে কথা বললি? আমাকে তো বললি না?’

রাফাত রিয়াদের কথায় বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ওই মেয়েটাই অনু মানে যার সাথে আমার সাত বছর আগে বিয়ে হয়েছিল।’

কথাটা শুনেই রিয়াদ খুকখুক করে কেশে উঠল। কাশি যেন থামতেই চাইছে না তার। রাফাত পানি যোগাড় করে রিয়াদের সামিনে তুলে ধরল।রিয়াদ ঢক ঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি শেষ করে দিল। তারপর রাফাতের দিকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,

‘কি বললি তুই?’

‘তুই যা শুনেছিস।’

‘মানে আমি যাকে উড বি ভাবী ভাবছিলাম সে জেনুইনলি আমার ভাবী?’

রাফাত হুম বলে হনহন করে স্নেহার কেবিনের দিকে ছুটে গেল।রিয়াদ এখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে রাফাতের যাওয়ার পানে।

রিয়াদ আর রাফাত ছোট বেলার বন্ধু সাথে সাথে বেস্ট ফ্রেন্ডও তারা। রিয়াদকে কাকলি সরকার অনেক পছন্দ করতেন তাই রিয়াদের সাথেই নিজের মেজো মেয়ে স্নেহার বিয়ে দেন তিনি। রাফাত রিয়াদের সাথে সবকিছু শেয়ার করে তাই অনুকে ভালোবাসার ব্যাপারটাও শেয়ার করেছিল সে। রাফাত আর রিয়াদের পক্ষে কোনোদিন সম্ভব হয়নি অনুর সাথে কথা বলার তাই অনুর সমন্দ্ধে কিছুই জানে না তারা।

যার জন্য আজকে রিয়াদ অনুর পরিচয় জেনে অবাক হয়েছে। তখন অনুকে ভাবী বলার কারন রাফাত অনুকে ভালোবাসতো এবং বিয়ে করার ইচ্ছাও ছিল তার। যার জন্য অনুকে আগে থেকে ভাবী বলা শুরু করে দিয়েছিল রিয়াদ। অভ্যাসগত হওয়ায় ভুলবশত ভাবী বলে ফেলে সে।

রিয়াদ আকাশ থেকে পড়েছে রাফাতের কথায়। রিয়াদ নিজেকে সামলিয়ে ওষুধ কিনতে চলে গেল।

অনু রেডি হয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুদুর যেতেই পেছন থেকে চেনা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো তার কানে। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল রাফাত দাঁড়িয়ে আছে। অনু এতক্ষন খেয়াল করেনি যে আজকে রাফাতকে অপরুপ সুদর্শন লাগছে। একদম হালকা গোলাপি রঙের ব্লেজার আর ব্যাক কালারের গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পড়েছে সে।

অনু পেছন ফিরে তাকাতেই রাফাতের ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠেছে। কারন রাফাত ভেবেছিল অনু রাফাতের আহ্বানকে উপেক্ষা করে চলে যাবে। রাফাত একটু তাড়াতাড়ি অনুর কাছে চলে আসলো। অনু জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রাফাতের দিকে। রাফাত হাস্যজ্জল চেহারায় বলল,

‘আমি কি তোমাকে একটু এগিয়ে দিতে পারি?আসলে কিছু কথা ছিল।’

অনু রাফাতের কথায় একটু খুশি হলো। কারন অনুও চাইছিল রাফাতের সাথে কথা বলতে। কিন্তু কি করে বলবে সেইটাই বুঝতে পারছিল না সে। অনু নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

‘হুমম,পারেন। আমারো কিছু কথা আছে আপনার সাথে।’

রাফাত অনুর কথায় ভীষন খুশি হলো। অনু আর রাফাত একসাথে রাস্তায় হাঁটা শুরু করল।নিস্তব্দ্ধ রাস্তায় দুইজন হেঁটে চলেছে আপন গতিতে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সম্পূর্ন দেখা যাচ্ছে দুইজনের মুখটা। কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। কথা বলছে না। অদ্ভুত সংকোচ আর জড়তা কাজ করছে তাদের মধ্যে। সাত বছর হয়েছে বিয়ের কিন্তু আজও তারা নবদম্পতিদের মতো আচরন করছে।

সব সংকোচ আর জড়তা কাটিয়ে রাফাত অনুর দিকে নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকালো। শান্ত গলায় বলে উঠল,

চলবে,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে