সাত সমুদ্রের তিমির পর্ব-০৫

0
1039

#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ০৫
#সুমাইয়া_আফরিন

অনুর কথায় হুশ আসে রিয়ার। নিজের দিকে তাকাতেই এক চিৎকার দিয়ে উঠল সে। রাগী কন্ঠে বলে উঠল,

‘ওএমজি,এইটা তুমি কি করলে লারা?’

‘আই এম সিনসিয়ারলি এপোলোজাই রিয়া। আসলে ভুল করে আমার হাত থেকে…….

লারাকে কঠাটি শেষ না করতে দিয়েই রিয়া বজ্রকন্ঠে বললে,

‘ওহ জাস্ট সাট আপ। তুমি জানো এই ড্রেসের প্রাইস কত?’

অনু রিয়াকে শান্তনা দিয়ে বলল,

‘রিয়া যা হয়েছে তা তো আর ইচ্ছা করে হয়নি বলো? তুমি এক কাজ করো, তুমি বাড়ি চলে যাও।’

রিয়া রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

‘ওহ, এবার আমি বুঝতে পেরেছি, এইসবকিছু তোমাদের প্ল্যান ছিল। রাইট?তোমরা বাড়িতে আসো আজকে, তোমাদের দেখাচ্ছি মজা।’

অনুর চোখের দিকে চোখ রেখে থ্রেড দিয়ে চলে গেল রিয়া। মেলার মধ্যে এক দৃষ্টি আকর্ষন করেছে রিয়ার চিৎকার। অধিকাংশ মানুষজন তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রিয়া হনহন করে মেলা থেকে বেরিয়ে গেল। অনু নিষ্পলক দৃষ্টিতে রিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেলার বাকি সবার মতো রাফাত আর তার ছোট বোনও এইসব কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেছে। রাফাত এক দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন এক ঘটনাতে প্রচুর আশ্চর্য হয়েছে সে। রাফাতের ছোট বোন সবার ভাবনার মধ্যে ছেদ ঘটিয়ে ফুচকাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘দুই প্লেট ফুচকা দেন তো?’

অনু রাফাতের দিকে তাকাতেই রাফাত নিজের চোখ সরিয়ে নিল তার থেকে। অনু ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ফুচকাওয়ালাকে দিয়ে দিল। তারপর সেখানে আর এক মুহূর্তও দাড়িয়ে না থেকে বড়বড় করে পা ফেলে মেলা থেকে বেরিয়ে গেল সে। রাফাত অনু যাওয়ার পানে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রাফাত কখনো কোনো মেয়ের দিকে এইভাবে তাকায় না কিন্তু এই অনু নামের মেয়েটির দিকে অসম্ভবভাবে তাকিয়ে রয়েছে সে। যা তার ছোট বোনকে খুব ভাবাচ্ছে। এতক্ষনে মেলার সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে। অনুর বন্ধবীরা অনুর চলে যাওয়া দেখে বুঝে গেল যা হয়েছে অনু এতে প্রচুর রেগে গেছে। ইরা আর মিমি চোখ গরম করে লারা দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর মিমি লারার হাত শক্ত করে চেপে ধরে মেলা থেকে বেরিয়ে এলো তারা তিনজন।

রিয়া বাড়িতে গিয়েই চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে। রিয়া প্রায় কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা। সোফায় বসে বসে দাত কিটমিট করছে সে। অনুর মা সবকিছু শুনে অসম্ভব রেগে গেছেন। রিয়ার মা খুব ভালোই বুঝতে পারছেন তার মেয়ে যা বলেছে তার আংশিক কিছু ঘটেছে। আর তার মেয়ে কিছু মশলা মিশিয়ে তাদের কাছে এসে বলছে।

দরজা ঠেস দিয়ে অনু বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল। অনু ঘরে ঢুকতেই অনুর পা অনুকে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল।রিয়ার মা এমন কাজে অনেকটা অবাক হয়ে গেলেন। অনুরমায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে বললেন,

‘এ কি করছেন আপনি?এত বড় মেয়েকে কেউ মারে নাকি?’

অনুর মা তার হাত রিয়ার মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,

‘ছাড়ুন আমাকে? আমি আর পারছি না ওকে নিয়ে? চাকরী করে বলে এত দেমাগ কেন ওর? আর কত বছর এই বাড়িতে পড়ে পড়ে থাকে ও?’

মায়ের এমন কথায় অবাকের চুড়ান্ত সীমায় পৌছে গেল অনু। কারন সে কখনো চাকরী নিয়ে দেমাগ দেখায়নি। আর আজ তো এখানে তার কোনো দোষ ছিল না তাহলে কেন তার মা তাকে থাপ্পর দিল?কিছু না জেনেই সব দোষ দিয়ে দিল তার ঘাড়ে?

অনুর চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল এক ফোটা নোনা জল। বুকের মধ্যে এক অজানা তুফান বয়ে যাচ্ছে তার। অনু চোখ মুছতে মুছতে উপরে চলে গেল। নিজের রুমে গিয়েই দরজা শব্দ করে লাগিয়ে দিল সে। দরজার গা ঘেষে নিচে বসে পড়ল সে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝস্র চাপা কান্না। আর সহ্য করতে পারছে না সে এই ব্যাথা।

দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ল ইরা,মিমি আর লারা। অনুর মা সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন
লারা কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছে না। তার একটা ভুলের কারনে সবকিছু ওলোট পালোট হয়ে গেল। ইরা অনুর মায়ের পাশে গিয়ে বসে সবটা খুলে বলল তাকে। অনুর মা সবটা জেনেও যেন তার রাগটা কমাতে পারলেন না। কারন তার রাগ অন্য জায়গায় বিরাজ করছে। অনু মা সোফা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন।ইরা লারার মাথার জোড়ে করে একটা টোকা মেরে বলল,

‘জীবনে ছেলে দেখিসনি তুই? সবার মুডের বারোটা বাজিয়ে ছাড়লি তুই?’

‘আরে না রে আমি ওই দিকে তাকাতে গিয়ে হাত থেকে ফুচকার প্লেট ছুটে গিয়েছে।'(লারা)

‘তোর দ্বারা তো সামান্য কাজটাও হয় না, তুই আবার একসাথে দুইটা কাজ করতে গেছিস?'(মিমি)

ইরা, লারা আর মিমি অনুর রুমের সামনে গিয়ে নক করল। অনু কিছুক্ষন পর দরজা খুলে৷ দিল।অনুর চোখ সামান্য লাল হয়ে আছে। লারা অনুকে জড়িয়ে ধরে সরি বলল।অনু একটা হাসি দিয়ে বলল,

‘আরে ঠিক আছে। ভুল হতেই পারে মানুষের।’

অনু লারা পেছনে তাকিয়ে দেখল রিয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে মুখে রাগ আর হিংসার ছাপ স্পষ্ট। অনু রিয়াকে উদ্দেশ্য করে লারাকে বলল,

‘কিছু কিছু মানুষের বোঝার মতো জ্ঞান থাকা দরকার যে ভুল হতেই পারে। একজন ভালো মানুষ কখনো ইচ্ছা করে কারো গায়ে ফুচকা ফেলে দেবে না।’

অনু তিনজন ফ্রেন্ডই বুঝে গেল অনু কি বোঝাতে চাইছে। সবাই একটু মিটিমিটি করে হেসে রুমের ভেতরে ঢুকে পড়ল। ফ্রেশ হয়ে সবাই আড্ডায় মেতে উঠল।

__________

সকালে অনুর ঘুম ভাঙল বাইরের চেচামেচিতে। অনু বিছানা থেকে নেমে নিচে গিয়ে দেখল তার ফুফাতো বোনের ফ্যামিলির সবাই চলে যাচ্ছে। অনু একটু মনে মনে খুশিই হলো। কারন রিয়া নামক ইডিয়েটটা চলে যাচ্ছে। অনু নিচে নেমে সবাইকে বিদায় জানাতে গেল।কিন্তু অনু রিয়াকে দেখে চরম আকারে একটা ধাক্কা খেল। কারন রিয়া এখনো নাইট ড্রেসেই আছে। অনু বিষ্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করল,

‘তুমি এই পোশাকে কেন রিয়া?তুমি যাবে না?’

‘কেন? আমি চলে গেলে তো তোমার খুব লাভ হয় তাই না? আমি যাচ্ছি না কারন আমার লাভার এখানে আছে। কালকে তো ভেবেছিলাম তার সাথে কথা বলবো আমি কিন্তু তোমার আদরে ফ্রেন্ড তা হতেই দিল না।’

অনুর মন নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। রাক্ষসিটাকে যত পেছন ছাড়াতে চাচ্ছে সে ততই জড়িয়ে পড়ছে।অসম্ভব মন খারাপ নিয়ে অনু সবাইকে বিদায় জানিয়ে উপিরে চলে আসলো।

বিকালের দিকে অনু আর তার বান্ধবীরা মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিল।হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দ কানে এলো তাদের। অনু ছাদ থেকে নিচে তাকিয়ে দেখল,একটা নীল গাড়ি এসে ঢুকেছে তাদের বাড়িতে। গাড়ি থেকে তারা নামতেই অনু উল্লাসে লাফিয়ে ওঠে। নিচে নামার জন্য এক দৌড় দেয় সে। অনুকে এত উত্তেজিত দেখে ইরা, লারা আর মিমি প্রচুর অবাক হয়ে যায়। ছাদ থেকে নিচে তাকাতেই দেখল,

চলবে,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে