সব সম্পর্কের নাম হয় না পর্ব-১০+১১

0
750

#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗

পর্বঃ১০

#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা

হুট করে এভাবে এতোরাতে কথাকে সামনে দেখে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না উচ্ছ্বাসের। প্রতিদিনের মতোই মনের ভুল মনে হচ্ছে।কিন্তু কথার পাশেই অজান্তা খান কে দেখে অনেকটা অবাক হচ্ছে।তাহলে কি সকালে বাড়িতে আসার পর উচ্ছ্বাসের করা পাগলামোর জন্যই কথাকে নিয়ে আসলো তার মা।আর যাই হোক সন্তানের কষ্ট তো কখনো কোন মা সহ্য করতে পারে না।মনের বিরুদ্ধে গিয়েও কিছু কাজ করতেই হয় তাদের খুশীর জন্য। ছেলের দিকে তাকিয়ে অজান্তা খান অভিমানের সুরে বলতে লাগেন,

“তুমি চেয়েছিলে ওকে জানি আমি নিয়ে আসি।তোমার কথাই রইলো।আশাকরি এখন আর মাকে ভুল বুজবে না। কথাগুলো বলেই অজান্তা খান চলে যায়।যাওয়ার আগে শুধু আড়চোখে একবার কথার দিকে তাকায়।

উচ্ছ্বাসের হাত পা কাপছে।মুখে একরাশ হাসি আর চোখে চিকচিক করছে পানি।হয়তো মাত্রাতিরিক্ত খুশিতেই এই অবস্থা তার।

“আমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো?

কথার ইশারায় ঘোর কাটে উচ্ছ্বাসের।তড়িঘড়ি করে সরে দাঁড়ায় আর কথাকে ভেতরে আসতে বলে।

“আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার সামনে? কিন্তু মায়ের ওপর আমার একেবারে ভরসা ছিলো জানো? আমি জানতাম মা আমার কথা ফেলবেই না।দেখেছো তো দিন টা পার হতেও দেয় নি।ঠিক তোমায় নিয়ে এসেছে।

উচ্ছ্বাসের কথায় একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় কথা,

রাতের খাবার শেষ করে সবেই ওঠেছিলো কথা আর মা।এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে দড়জা খুলে কথার মা।সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে অনেকটা ঘাবড়ে যায় মা।পাশ কাটতেই ভেতরে ঢুকে অজান্তা খান।কথা তো মনে মনে ভেবে নিয়েছে সকালে তার ছেলের সাথে ঘুরতে যাওয়ার কৈফিয়ত নিতেই এসেছে হয়তো এখানে।কিন্তু না কথা আর ওর মাকে অবাক করে দিয়েই অজান্তা খানের শান্ত চাহনি,

“কথা আমি তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি।যাও রেডি হয়ে এসো।

শাশুড়ির কথা ঠিকমতো বোধগম্য হলো না কথার।তাই মায়ের দিকে তাকাতেই মা সবটা বুঝিয়ে দেয়।কিন্তু কথার এখন কি করা উচিত সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।ভাবাভাবির সময়টাও পেল না ঠিকভাবে।তার আগেই অজান্তা খান কথাকে নিয়ে কথার রুমে চলে যায়।এপাশ ওপাশ তাকিয়ে আলমারি খুলে একটা ড্রেস বের করে কথাকে পরে আসতে বলে। ব্যস নিজের হাতে ছেলের বউকে কোনরকম রেডি করেই বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময়ই আসল রুপটা বেরিয়ে আসে তার।হঠাৎ থেমে গিয়ে বুঝাতে লাগে কথাকে,

“ভেবো না তুমি আমার চোখে মহান হয়ে গেছো।তোমার এই ইনোসেন্ট চেহারায় গলে যাওয়ার মতো মানুষ আমি না।শুধু মাত্র আমার ছেলেটা পাগল হয়ে যাচ্ছে তাই তোমায় এখানে এনেছি।আমার সাথে তোমার সম্পর্ক টা কখনোই ভালো হবার না।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথা।উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দেয়।সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকায় উচ্ছ্বাস।এগিয়ে এসে দুই কাধে হাত রাখে কথার,

“মা তোমায় এখনো আগের মতোই ভাবছে তাই না?

মাথা নিচু করে দেয় কথা।উচ্ছ্বাস মুখটা তুলতেই ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে,

“আমাদের মতো অক্ষম মেয়েদের কে ভালো ভাবার কিছু নেই।তার ওপর আমরা হচ্ছি মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। ভাগ্যের জোড়ে পড়াশোনা টা শিখতে পেরেছিলাম বলে হয়তো অশিক্ষিত কথাটা শুনতে হয় না।ছাড়ুন ওসব আমার এখানে আসার প্রধান কারণ আপনার মা নয়।বরং আমার চারপাশের মানুষগুলো।এতোদিন মার কাছে গিয়ে থাকাটা তারা ঠিক ভাবে নিতে পারে না।তবে হ্যাঁ তাদের নিজের মেয়ে হলে অন্য কথা।আর আপনার আমার মধ্যে তো বিচ্ছেদ টাও হয় নি।তাই আর লোক হাসালাম না। যদি কখনো চিরতরে সম্পর্ক টা শেষ করেন তখনই না হয় যাবো লোক হাসানোর জন্য।

কথা একমনে বুঝিয়ে যাচ্ছে।আর উচ্ছ্বাস শুধু চেয়ে আছে।কিছুই বলার নেই।কি বা বলবে কোন উত্তরও যে জানা নেই।কথা চুপ হয়ে বিছানা ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।আর তাপরেই বিছানায় শুয়ে পরে।বিষয়টা দেখে উচ্ছ্বাস পুরো থ।এটা কি আসলেই কথা? উচ্ছ্বাস ভেবেছিলো আজও হয়তো কথা সোফায় ঘুমাবে।উচ্ছ্বাস গিয়ে নিজের বালিশটা নিয়ে যেতে চাইলেই হাত ধরে বসে কথা,

“নাটক সিনেমা অনেক হয়েছে চুপচাপ নিজের জায়গায় শুয়ে পরুন।

উচ্ছ্বাসের আর কি বউয়ের কথা মতো পাশেই শুয়ে পরে।।।


রাত প্রায় ২ টা ছুই ছুই।কিন্তু ঘুমহীন উজ্জ্বল। চোখ বন্ধ করতেই শুধু ভেসে আসছে সকালের সেই দৃশ্য। এখনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না উজ্জ্বলের।বৃষ্টি আসলেই ওকে এতোগুলো কথা বলেছে? এতোটা সংগ্রাম নিয়ে বেঁচে থাকা মেয়েটাকে বাইরে থেকে দেখলে কেউ ই বিশ্বাস করতে পারবে না মেয়েটার ভেতরে এতোটা ক্ষত। কতো সুক্ষ্মভাবে নিজেকে আড়াল করে রাখে।কতোটা স্ট্রংলি চলাফেরা করে।অথচ প্রতিটা দিন ভেতরে ভেতরে একটু একটু করে শেষ হচ্ছে মেয়েটা।মুহুর্তেই উজ্জ্বলের খেয়াল হয় বৃষ্টির বলা শেষ কথাগুলো।

“এখনো আমার রাতে ঘুম হয় না উজ্জ্বল। আমার শুধু একটা প্রশ্নই মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় আমি কে? কি আমার পরিচয়? আমি কি কোন সৎ বাবা মায়ের হারিয়ে যাওয়া সন্তান নাকি কোন অমানুষের ভুলের মাসূল।আমার খুব কষ্ট হয় উজ্জ্বল আমারও কাঁদতে ইচ্ছা করে। আমার জীবনটা এমন কেন আমারও জানতে ইচ্ছা করে।কেনই বা সেদিন ওই বাবা মা নামক মানুষগুলো আমায় তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছিলো আর কেনোই বা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ওইটুকু মেয়েকে রাস্তায় বের করে দিয়েছিলো।আমার জানতে ইচ্ছে করে খুব ইচ্ছে করে।

বিছানা ছেড়ে ওঠে বসে উজ্জ্বল। মনটা কেমন ছটফট করছে।আচ্ছা বৃষ্টি ঘুমিয়েছে তো? নাকি ওর বলা কথাগুলোর মতোই আজও না ঘুমিয়েই আছে? কিছু না ভেবেই ফোনটা হাতে নেয় উজ্জ্বল। ২ঃ২৩ বাজে।বৃষ্টিকে ফোন দেওয়ার কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই ওপাশ থেকে হ্যালো বলে ওঠে বৃষ্টি,

“এখনো ঘুমাও নি?

“ঘুমিয়েছিলাম।হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো।হঠাৎ ফোন দিলে যে?

“আমার ঘুম আসছে না।

“কেন শরীর খারাপ?

“জানি না। তুমি ঘুমাও নি তাই না?

“শুধু শুধুই নিজের মতো ভাবছো।আমি এতোক্ষন ঘুমেই ছিলাম।ইনফেক্ট আজকে অনেকদিন পর কেন জানি ঘুমটা দু চোখে আপনা আপনি চলে এসেছে।

“মানে? তুমি কি রাতে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাও নাকি?

“আরে ধুর।ওসব দুই একটা লাগেই মাঝে মাঝে।তেমন কিছু হয় না।

কথাটা শুনে আচমকাই উজ্জ্বলের রাগটা বেড়ে যায়।

“লাস্ট একটা কথা বলছি বৃশু। আজকের পর থেকে তুমি রুমে কোন ঘুমের ঔষধ রাখবে না। রাখবে না মানে রাখবে না।

“আরে বাবা কিছু হয় না। আমার প্রেসক্রিপশন করা আছে তো।

“আমি কিছু শুনতে চাইনি শুধু যেটা বলার দরকার সেটাই বললাম।না হয় আমি কিন্তু তোমার প্রেসক্রিপশন ছিড়ে ফেলবো সাথে ঔষধ গুলাও ফেলে দিয়ে আসবো।

ফিক হেসে দেয় বৃষ্টি,

“আচ্ছা লেডিস হোস্টেলের গেট বুঝি তোমার জন্য ২৪ ঘন্টা খোলা?

“তুমি ভুলে যেও না তোমার রুমমেট যারা আছে সবাই কিন্তু আমার ভীষন ভাবে ক্লোজ ফ্রেন্ড। সো আমি না গেলেও তারা আমার হয়ে এতোটুকু ঠিকই করে দিবে।

“দেখা যাক।

“প্লিজ বৃশু আর কোন মেডিসিন নিও না।আচ্ছা তোমার ঘুম না আসলে আমায় ফোন দিও।ওকে তোমার ফোন দিতে হবে না আমিই রোজ ফোন করে গল্প শোনাবো তোমায়।তুমি না হয় ঘুমিয়ো।আমি কিন্তু বাচ্চাদের ঘুম পারাতে এক্সপার্ট অনেক।

“আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হলো নাকি?

“উহু। তুমি তার থেকেও বাচ্চা।লাইক আ আণ্ডাবাচ্চা।

“কাল একবার ক্যাম্পাসে এসো বুঝাবো তোমায় বাচ্চা কতো প্রকার ও কি কি?

“চুপচাপ ঘুমাও এখন।

“আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।

“একদম না।

“আবার কি?

“না কিছুই না। আল্লাহ হাফেজ।


সূর্যি মামার শীতের মিষ্টি রোদের সাথে কারো হাত ভর্তি কাছের চুড়ির শব্দে ঘুম ভাঙে উচ্ছ্বাসের। চোখে মেলে কোনরকম তাকাতেই ঘুম যেনো একেবারে উধাও। দুইহাত দিয়ে চোখ পরিষ্কার করে এক পলকে চেয়ে আছে।

কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। চোখে গারো কাজল।ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি লিপস্টিক গায়ে কালো খয়েরী রঙের সুতির শাড়ি।হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আধ ঘুমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কথা।ছোট চুলগুলো কপালে এসে পরেছে।একটা মানুষ এতোটা মায়াবী কি কখনো আসলেই হতে পারে।ঠিক যেনো একটা পুতুল।সবাই বলে ধবধবে ফর্সা মানুষদের নাকি দেখতে মোটেও ভাল্লাগে না।কিন্তু কথাকে দেখলে তো সেটা ১০০ তে হাজার বার ভুল প্রমান হবে। কথার হাতে থাকা গরম চায়ের ছেকায় ঘোর কাটে উচ্ছ্বাসের। অনেকটা লাফিয়ে ওঠে। এদিকে কথা তো শব্দহীন হেসেই যাচ্ছে। আবারও উচ্ছ্বাস সেদিকেই মগ্ন।

আচ্ছা কথা যদি শব্দ করে হাসতে জানতো তাহলে ওই শব্দটা কেমন হতো? নিশ্চয় আরও বেশি সুন্দর শোনাতো।খিলখিলিয়ে হাসির সাথে সেই শব্দটা ভীষন ভাবেই শুনতে ইচ্ছে করছে উচ্ছ্বাসের। কিন্তু সব ইচ্ছা তো আর পূরণ হওয়ার নয়।

কথা চা টা টি টেবিলে রেখে উচ্ছ্বাস কে বিছানা থেকে ওঠার জন্য বলে,,,

“এখন ওঠে কি করবো? আজ তো অফিস নেই।বলেই চায়ে দুটো চুমুক দিয়ে কম্বল টা ভালোভাবে জড়িয়ে আবার ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয় উচ্ছ্বাস। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। কম্বল টা এক টানে সরিয়ে নিজের মতো করে বিছানা গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পরে কথা।বিছানা থেকে নেমেই কথাকে নিজের দিকে ঘুরায় উচ্ছ্বাস,

“এটা কি হলো?

“সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে যান।সবাই অপেক্ষা করছে খাওয়ার জন্য।

“তুমি যাবে না?

“জ্বী। আপনি ফ্রেশ হয়ে যান আমি একটু পরেই চলে যাবো।

“গেলে একসাথেই যাবো আসছি আমি।

উচ্ছ্বাস ফ্রেশ হয়ে এসে কথাকে নিয়ে নিচে নামে।দেখে সবাই টেবিলে অপেক্ষা করছে।অজান্তা খানের মুখের দিকে ঠিক তাকানো যাচ্ছে না।উচ্ছ্বাস ব্যাপার টা বুঝেও না বোঝার ভান করে একটা চেয়ার টেনে বসে পরে। কথা সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।কিন্তু শাশুড়ীর প্লেটে খাবার দেওয়ার আগেই সে কাজের মেয়ে জোনাকি কে এটা ওটা দেওয়ার জন্য বলে যাচ্ছে।কথা যাতে বুঝে সে জন্য ইশারাতেই বলছে সব।নিমিষেই মনটা ছোট হয়ে যায় কথার।পুরো ব্যাপারটাই খেয়াল করছে আমজাদ খান।খিটখিটে মেজাজ নিয়েই কথাকে খেতে বসতে বলেন।

“অনেক করেছো সকাল থেকে।কিছু মানুষকে কলিজা ছিড়ে দিলেও তুমি তাদের মন পাবে না মা।খেতে বসো।

আড়চোখে তাকায় অজান্তা খান,

“কথাটা কি তুমি আমাকে মিন করে বললে?

“যাক সন্দেহ করলেও ঠিকটাই বুঝেছো।আর একটা কথা।বড় বউমার হাতে বাড়া খাবার যখন তোমার পেটে যাবে না তাহলে নিশ্চয় তার রান্নাটাও পেটে যাওয়ার কথা না।যাক গে আজকে বসেছো বসেছো।কাল থেকে জোনাকি কেই বলো তোমার জন্য আলাদা করে সবটা করতে।কথা মা কাল থেকে তুমি তোমার মা ছাড়া সবার জন্য রান্না করবে।

কিছু একটা বুঝাতে চাই কথা কিন্তু তার আগেই বাধা দেয় আমজাদ খান,

“যা বুঝিয়েছি ঠিকই বুঝেছো।উচ্ছ্বাসের মায়ের জন্য রান্না তার সব কাজ বাড়ির যে কেউ করবে তুমি ছাড়া।

খাবার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ায় অজান্তা খান,

“বাড়ির প্রতিটা মানুষের সামনে আমায় ইনসাল্ট করার কি খুব বেশিই দরকার ছিলো তোমার? দিন দিন আমি যেনো তোমার চোখের বিষ হয়ে যাচ্ছি।

“খাবার টা খেয়ে তারপর ওঠবে তুমি।

স্বামীর কথাটা ঠিক কানে যায় না অজান্তা খানের। সামনে থাকা প্লেট টা ধাক্কা দিতেই এক ধমক দিয়ে ওঠে আমজাদ খান।টেবিলে থাকা প্রতিটা মানুষই ভরকে যায় শুধু কথা ছাড়া।,

“আমি বলেছি যখন খাবার শেষ করে যাবে তারমানে খাবার শেষ করেই যাবে।বসো বলছি।

রাগে কটমট করতে করতেই আবার বসে পরে অজান্তা খান।রক্তচক্ষু নিয়ে এক পলক কথার দিকে তাকাতেই চোখ সরিয়ে নেয় কথা।ভালোই বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটেছে এখানে।

সবার সামনে এভাবে লজ্জা অপমান টা ঠিক নিতে পারলো না অজান্তা। চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পরে যাচ্ছে।হঠাৎই বিষম খেয়ে ওঠে।কথা ওঠে তড়িঘড়ি করে পানি ঢালে ঠিকই আমজাদ খানের ইশারায় বসে যায় আবার।অনু ওঠে পানি টা খাওয়ায় মাকে।কোন রকমে পানি টা খেয়েই ওঠে উপরে চলে যায় অজান্তা। সবাই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলোই।

বাবার মুখের ওপর কোন কথা বলার সাহসই উউচ্ছ্বাস বা উজ্জ্বলের নেই।নিরবতা ভেঙে দাদিই বলতে লাগে ছেলেকে,

“এভাবে মেয়েটাকে না বললেও পারতি।

“এই একই কথা তো আমিও বলতে পারি মা।অজান্তা এরকমটা কথার সাথে না করলেই তো পারে।

ছেলের কথার জবাবে কিছুই বলতে পারবে না মা।তাই আর কথা বাড়ায় না।চুপচাপ নিজের খাওয়া টা শেষ করতে লাগে।

চলবে..

#সব_সম্পর্কের_নাম_হয়_না💗

পর্বঃ১১

#লেখাঃ #বাশরুন_বর্ষা

ক্যাম্পাসের সবুজ ঘেরা মাঠের একটা কোনে গোল হয়ে বসে আছে উজ্জ্বল রা নয়জন।অপেক্ষা শুধু একজনের আসার। বৃষ্টি আসলেই বিদায়ক্ষন টা এগিয়ে আসবে। এতোগুলো মানুষের মধ্যে শুধু উজ্জ্বলের মুখেই বিরক্তের ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছে না।বাকি সবাই কেমন মুখ গোমড়া করে আছে। ফাইনাল এক্সাম টা এবারে শেষ হয়েই গেলো। বাকি ছিলো ভাইবার। সেটাও আজকে শেষ। সুতরাং আজকের পর থেকে কারো সাথে দেখা হওয়াটা কাকতালীয় ব্যাপার বললেই চলে।বৃষ্টির ভাইবা টা এখনো শেষ হয় নি।তাই বসে বসে অপেক্ষা করছে সবাই। এরই মধ্যে চলছে সবার খোস গল্প।

“শুধু শুধুই আমরা এখানে বসে আছি।আর যার জন্য বসে আছি সে এদিকে আসবে কি না তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।

তানিয়ার কথায় এবার একে একে সুর বাধে সবাই।নিচে থাকা ঘাসগুলো একটা একটা করে ছিড়ে যাচ্ছে সোহাগ।তানিয়ার কথা শেষ হতেই ছেড়া ঘাসগুলো ওঠিয়ে ফু দিয়ে ওর মুখের দিকে দেয়,

“তোর এই ফোটা ফ্রেমের চশমাওয়ালা মাথায় এইসব ঢুকবে না।আর তাছাড়া এইটা সাইন্স।চার বছর আগেই গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছিস।এখন তো মাথায় ঘোরপাক খায় শুধু যন্ত্রপাতি।

চুলে লেগে থাকা ঘাস গুলো ঝরে ফেলে তানিয়া।হাতে থাকা কাগজে কিছু একটা আঁকার চেষ্টা করছিলো এতোক্ষন।পৃষ্ঠা টা ছিড়ে কোনরকম মুড়িয়েই ছুড়ে দেয় সোহাগের দিকে।কিন্তু নিশানা টা ঠিকভাবে গেলো না।কাগজের শক্ত গোলক টা সোজা গিয়ে লাগে আতিকের কানে।

কানে একবার হাত দিয়ে কাগজটা খুলে আতিক বিটকেল মার্কা হাসি দিয়ে বলতে লাগে,

“আরে বাহ লাভ লেটার দেখছি।ভালোই হয়েছে আজকে দিয়ে দিলি।না আক্ষেপ থেকে যেতো।এমনিতেই আব্বু বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে দিছে। হালকা কেসে গলাটা ঝেড়ে একটু নড়েচড়ে বসে আতিক।

ওকে গাইস। এখন আমি তোমাদের লাভ লেটার টা পরে শোনাচ্ছি,

“প্রিয় সোহাগ কাগজ টা আমি তোমাকে দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু এটা স্পেশালি আতিকের জন্য।কজ আই লাভ হিম ভেরি ভেরি মাচ। তাই কাগজটা সুন্দর করে ওকে দিয়ে দিও।আর আতিকের জন্য একটা কবিতাও লিখে ফেলেছি আমি আতিক জাস্ট ফর ইউ বেইবি,

উজ্জ্বলের পাশেই বসেছিলো বুশরা।এক লাফে গিয়ে মিতুকে সরিয়ে তানিয়ার পাশে গিয়ে বসে,

“দোস্ত তুই আসলেই আতিক কে চিঠি লিখেছিস? আমি তো আগেই সন্দেহ করেছিলাম তুই ওর প্রতি ওয়িক।যাক ভালোই হয়েছে বলে দিলি। আজকে তো ট্রিট পাক্কা।এই আতিক কবিতা টা পড় না। আমাদের তানু কবিতা লিখেছে,,,

“ওয়েট বেবি এখনি পড়ছি।

আতিকের আর কবিতার ক টাও পড়া হলো না তার আগেই তানিয়া ওঠে গিয়ে আতিকের ঘারটা ধরে ঘাসের ওপর বসিয়ে দেয় আর ধাপ ধাপ কয়েকটা বসিয়ে দিলো ঘাড়ে।এর মাঝেই মিতু গিয়ে কাগজটা হাতে নিয়েই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।

“এই তানু এটা কি এঁকেছিস তুই।নিচে তো একটু নাম লিখে দিবি।আমাদের একটু বুঝতে সুবিধা হতো।আর আতিক্কা এই তোর লাভ লেটার।

তানিয়ার রাম ধোলায়ের চোটে নিচে থাকা কতোগুলো ঘাস আতিকের মুখে ঢুকে গেছে।পেছন ঘুরে সেগুলোই থু থু করে বের করায় ব্যস্ত সে।হাপাতে হাপাতে ঘুরে তাকিয়ে তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগে,

“আরে আমার ছিড়া ত্যানা রে তোর এই জগাখিচুরি আফ্রিকার পরিত্যক্ত জঙ্গল আঁকিবুঁকির চাইতে আমার গোবর মাথার কবিতাটা বেশি সুন্দর ছিলো।কপাল খারাপ তাই তোর শোনার ভাগ্য হইলো না।

“তোর ওই হিরো আলমের কবিতা তোর কাছেই রাখ।আমার আর্ট নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।

“জানু তুমি শুধু শুধুই রাগ করছো।আমি কি তোমার পর। আর এখনো যদি আর্টে এতো কাঁচা থাকো দুদিন বাদে যখন ইয়া বড় বড় ঘর বাড়ির কামলা নিবা তখন কি করবা চান?

আতিকের পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে শুরু করে উজ্জ্বল,

“তোর আর আমার মতো কি ওর জায়গায় জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে হবে নাকি।ওর বাবার কোম্পানিতেই তো কামলা দিয়ে শেষ করতে পারবে না।তোর উচিত ওকে সম্মান দিয়ে কথা বলা।যদি একবার হাতে পায়ে ধরে একটা কন্টাক্ট পেয়ে যাস রে আতিক।

“কি ব্যাপার সবাই এখনো এখানে কি করছো? যাক গে ভালোই হলো আছো এখনো।

বৃষ্টির গলার আওয়াজে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় উজ্জ্বল। কিছু বলার আগেই পাশ থেকে সোহাগ ওঠে দাঁড়ায়,

“তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।বসো না।সোহাগ সরে গিয়ে বৃষ্টিকে জায়গা করে দেয়। বৃষ্টি বসতেই তানিয়ার প্রলাপ শুরু হয়ে যায়,

“তোমায় কাল এতোবার করে বললাম সবাই একভাবে আসবো তুমিও শাড়িটা পরে এসো।আসলে না কেন।

বৃষ্টির স্বাভাবিক উত্তর,

“আমি শাড়ি পরে ঠিক হাটতে পারি না একদম অভ্যস্ত না।আর তাছাড়া সেদিন উজ্জ্বল বাড়িতে তো নিশ্চয় খেয়াল করেছো সবাই।কোথায় অনুকে আমি সামলাবো সেখানে মেয়েটা আমাকে সামলাচ্ছিলো।

“তোমার আর চিন্তা কি। ফরমাল ড্রেসে আসলেও ফুল মার্ক পাবে না আসলেও পাবে।

সোহাগ এখন ভালোই বুঝতে পারে তানিয়া এখন থামবে না।ভার্সিটির শেষ দিনে এসেও বৃষ্টিকে খুচিয়ে কথা না বললে চলছে না ওর।আশ্চর্য একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়েও এতোটা হিংসে নিয়ে কিভাবে থাকে এই মেয়েটা।তাও শুধুই বৃষ্টির সাথে।ওদের কে থামাতেই ওঠে দাঁড়ায় সোহাগ,

“আচ্ছা অনেকক্ষন তো থাকলাম এখানে। এবার তো চলো সবাই কে কার গাড়িতে যাবে ফাইনাল তো? আমার গাড়িতে ৫ জন আর উজ্জ্বলের গাড়িতে ৫ জন।বৃষ্টি তুমি আমার গাড়িতে যাচ্ছো ঠিক আছে?

সবার সাথে ওঠে দাঁড়ায় বৃষ্টিও,

“তোমার কথা ঠিক বুঝলাম না সোহাগ। কোথায় যাচ্ছি আমরা?

“যেখানেই যাই না কেন।আজকে অন্তত না করো না প্লিজ।চল সবাই।

হাটতে হাটতেই উজ্জ্বল বলতে লাগে,

আমার আজকে ড্রাইভ করতে ভালো লাগছে না।তোরা প্লিজ কেউ ড্রাইভ করিস।আমি পেছনে বসবো।

উজ্জ্বলের কথা শেষ হতেই পকেটে হাত হাত ঢুকিয়ে দেয় আতিক।মুহুর্তেই লাফিয়ে ওঠে উজ্জ্বল।

“এই কি করছিস কি তুই?

“গাড়ির চাবি দে হারামি।মুখে বললেই কি গাড়ি চালানো যায় নাকি?

“তাই বলে এভাবে। ধর এবার দূর হ। আতিকের হাতে গাড়ির চাবিটা দিতেই ৩ লাফে গিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে।না চাইতেও বৃষ্টির ওঠে বসতে হয় সবার সাথে। পাশে থাকা বুশরাকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছি।বেচারি নিজেও জানে না কোথায় যাচ্ছে।তাই শুধু সামনের গাড়ি গুলো দেখা ছাড়া কোন উপায় নেই। দুপুরের পুরো কাঠফাটা রোদের আড়াই ঘন্টা জ্যাম ঠেলে বিকেল সাড়ে চারটায় গাড়ি এনে পার্ক করে হাতিরঝিল।ছেলেরা সবাই হৈ-হুল্লোড়ের সাথে নামলেও অনেকখানি বিরক্তি নিয়েই গাড়ি থেকে নামে মেয়েরা। গাড়ি থেকে নেমেই চেচিয়ে ওঠে বুশরা,

“আরে ওই খাটাশের দল।একেকটার মাথায় কি গ্যাস্টিক আছে।শেষে কি না এই হাতির ঝিল নিয়ে আসলি।এর চাইতে তো আমাদের লীলাবতী পার্কটাই ভালো ছিলো রে।৩ ঘন্টার জ্যামে বসে থাকতে হতো না।

বুশরার চিল্লানিতে এগিয়ে আসে আতিক,

“এখানে তোমাদের নিয়ে প্রেম করতে আসি নি মামনিরা।প্রেম দেখাতে এসেছি।

মেয়েদের সবার চোখেই প্রশ্ন,

“এখানে কে প্রেম করতে এসেছে?

ছেলেরা সবাই এক সুরে বলে ওঠে,

“আমাদের সোহাগ।

সবার মুখে এভাবে সোহাগের নামটা শুনে সোহাগ নিজেই হম্ভতম্ভ খেয়ে যায়।জোরে জোরেই কয়েকবার দোয়া ইউনুস পরে বুকে থু থু দিতে লাগে,

“নাউজুবিল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ।লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লা আলিউল আজিম।আল্লাহ মাফ করো। কাদের মাঝে ফেললা আমারে।ওই হারামির দল আমি কেন প্রেম করতে আসমু।আর আসলেই বা দুনিয়ায় আর জায়গা নাই।এইখানেই আসতে হইবো?

“আচ্ছা হয়েছে তো। চল একটু বসি গিয়ে ওপাশ টাতে।

উজ্জ্বলের কথায় সবাই কোনরকম শান্ত হয়ে এগিয়ে যায়। একটু এগিয়ে যেতেই আতিক লাফিয়ে ওঠে,

“মামা আইসসা গেছে। ওই দেখ লাল চুড়িদার।

আতিকের সাথে সাথে রাকিব শুরু করে দেয়,

“তুই সিউর যে ওই মেয়েটাই এইটা।

“আরে শালা সিউর মানে ডাবল সিউর।ফোন ভর্তি ওর ছবি।

ওদের কথা শুনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে বুশরা,তানিয়া আর মিতু একটু এগিয়ে ছিলো বৃষ্টি ওদের এভাবে দাড়াতে দেখে ঘুরে তাকায়,

“কি হলো তোমাদের?

ফুসে ওঠে মিতু,

“আতিক্কা এইসব তাহলে তোর প্ল্যান।মেয়ে পটাতে এসেছিস এখানে তুই? আজকে তো তোর হচ্ছে।প্রথম দিনেই ব্রেকআপ করিয়ে দেবো শালা।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।কথাটা বলেই ওরা তিনজন ওই লাল ড্রেস পরা মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগে।

পেছন থেকে রাকিব আর রনি একসাথে ফিসফিস করতে লাগে উজ্জ্বলের সাথে,

“ভাই রে ভাই ওই মেয়ে কে চিনিই না। এখন এই পেত্নী গুলা ওই মেয়েরে কি করবে আল্লাহ মালুম।

ওদের কথায় দাঁড়িয়ে যায় সবাই।ভ্রু কুচকে তাকায় উজ্জ্বল,

“চিনিস না যখন লাফালি কেন?

একটু পার্ট নিতে চেয়েছিলাম।

“তোরা যে একেকটা গাধা তার প্রমান কি মিনিটে মিনিটে দিতে হবে তোদের।

এতো কিছু বুঝি না ভাই ওদিকে তাকিয়ে দেখ মনে হয় ঝগড়া লেগে গেছে।তোরা থাক ঝগড়া শেষ হলে খবর দিস।কথাটা বলেই চারজন উধাও ওখান থেকে।থেকে বৃষ্টি সোহাগ আর উজ্জ্বল দাঁড়িয়ে আছে।উপায় না পেয়ে এগিয়ে যায় তানিয়াদের দিকে।গিয়ে দেখে আসলেই এক দফা লেগে গেছে ওদের ভেতর।

“শুনোন আমার বয়ফ্রেন্ড কে আমি খুব ভালো ভাবেই চিনি বুঝলেন। আর ও আসুক তাহলেই প্রমান হবে সবকিছু। তখন যদি কিছু ভুল প্রমান হয়।

মেয়েটার কথায় খুব জোর দিয়েই বলতে লাগে মিতু,

“আর আপনার বয়ফ্রেন্ড এর আসা।এক নাম্বারের ধান্দাবাজ টা ঝিলের ওপাশে কার সাথে বসে আসে দেখে আসুন যান। কথাগুলো বলেই মনে মনে তৃপ্তির হাসি হাসে মিতু।কারণ এর আগে পরপর দু দুটো রিলেশনের ব্রেকআপ করিয়েছে আতিক রা শুধু এইসব ভুলভাল কথা বলে।আজকে একটা সুযোগ পেয়েছে রিভেঞ্জ নেওয়ার।ওদের কথার মাঝখানে এসেই উজ্জ্বল বৃষ্টি আর সোহাগ ওদের থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ই শুনতে চাইছে না। ঝগড়ার এক পর্যায়ে সবাই লক্ষ্য করে কোন এক সুদর্শন পুরুষ চোখে কালো রঙের সানগ্লাস স্যুট-কোট পরে এগিয়ে আসছে।

“ওই তো আমার বয়ফ্রেন্ড এসে গেছে।এখনি বুঝা যাবে কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা।

লোকটাকে দেখেই শুকনো ঢোক গিলে মিতু।এতোক্ষন মিতুই সবথেকে বেশি বেশি বলছিলো।সোহাগের দিকে তাকাতেই বিড়বিড় করে ওঠে সোহাগ,

“বলেছিলাম সরে এসে আমার কথা শোনার জন্য।এবার বুঝ কতো ধানে কতো চাল।

“এখন কি করবো রে?

“বাঁচতে চাইলে আগেই ক্ষমা চেয়ে হাটা ধর।

সোহাগের কথা শেষ হতেই মিতু বুশরা আর তানিয়া তিনজন মিলে মেয়েটার হায় ধরে বসে।

“সরি আপু আসলে আমরা ভেবেছিলাম আমাদেরই কোন ফ্রেন্ড হয়তো আপনার বয়ফ্রেন্ড। সত্যি বলছি আমার ফ্রেন্ডলিস্টের সব কয়টা ছেচড়ার নাম্বার ওয়ান পিছ তাই প্লিজ কিছু মনে করবেন না।এই সোহাগ ভাই বাকিটা তোরা দেএএখ।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সবকয়টা উধাও সেখান থেকে।ততোক্ষণে ছেলেটা সামনে এসে গেছে।

“সো সরি ম্যাডাম।আসলে পুরোটাই একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং। ওদের হয়ে আমরা ক্ষমা চাইছি প্লিজ।

“কি হয়েছে সাথী। এনারা কারা। আর কিসের ভুল বুঝাবুঝির কথা বলছে?

মেয়েটা আর কিছু বলে না।হয়তো ঝামেলা জিনিসটা একদমই পছন্দ করে না। তাই শুধু ইটস ওকে কথাটা বলেই অন্যদিকে চলে যায়।উজ্জ্বল রা তিনজনেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সোহাগ অনেকটা রাগ নিয়েই বলতে লাগে,

“আমার কি মনে হয় জানিস তো সবগুলো ওই রোহিঙ্গাদের ওখান থেকে ওঠে এসেছে।এরা নাকি ইঞ্জিনিয়ারিং পরেছে। নেহাত মেয়েটা ভালো না হলে এতোক্ষনে পাব্লিকের মাইর কপালে ছিলো।

সোহাগ কে থামায় বৃষ্টি,

“আহা হয়েছে তো।এখন তো তুমিই আবার শুরু করছো।একসাথে ঘুরবে বলে আসলে। আর কে কোথায় গেলো কে জানে।চলো একটু খুজে দেখি।ফোন দাও একটু,

“তোমরা এখানেই ওয়েট করো আমি দেখছি কোথায় ওরা।একটাও ফোন ধরছে না।উজ্জ্বল তুই বৃষ্টিকে নিয়ে এখানে বস।আমি আসছি এখনি।

পাশে থাকা উঁচু জায়গাতে বসতেই হেসে গড়িয়ে পরার অবস্থা বৃষ্টির,

“আল্লাহ গো।তোমাদের গ্যাং টা তো পুরোই একটা ডাকাত।যা করলো এইটুকু সময়ে।

“এক দিনেই এই অবস্থা তোমার।ভাবো একবার সেই কলেজ লাইফ থেকে সহ্য করে যাচ্ছি।

“কিহ তোমরা কলেজেও একসাথে পড়েছো?

“হ্যাঁ। মোট ১৩ জনের একটা টিম ছিলো আমাদের এখন ছিটকে গিয়ে ৯ জন আছি।

“এর জন্যই হয়তো এতো ভালো বন্ডিং তোমাদের। কয়েক সেকেন্ড নিরব থাকার পরেই ডাকে উজ্জ্বল।।

“তোমার ব্যাগটা একটু দিবে?

“কেন?

“দাও না?

বৃষ্টি ব্যাগটা হাতে দিতেই ওঠে দাঁড়ায় উজ্জ্বল।

“দুটো মিনিট দাও এখনি আসছি। উজ্জ্বল দৌড়ে গিয়ে গাড়ির কাছে যায়।আর একটা র‍্যাপিং করা বক্স বৃষ্টির ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে আবার চলে আসে।

“আস্তে হাপিয়ে গেছো তো।শুধু শুধুই দৌড়ালে।

“না হয় ওরা এসে যেতো।আর হাজার রকম ভেবে নিতো।


বেলকনির রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে বাগানের দিকে চেয়ে আছে কথা।কাধে কারো স্পর্শে ঘুরে তাকায়।দুই হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উচ্ছ্বাস।একটা কাপ কথার হাতে দিয়ে বুঝায়,

“আমি নিজে বানিয়েছি। এই প্রথম।

“উচ্ছ্বাসের কথায় অবাক হয়ে তাকায় কথা।এক চুমুক মুখে দিতেই চোখ কপালে।মুহুর্তেই আবার ঠিক হয়ে কফিটা খেতে লাগে।

“কেমন হয়েছে বললে না তো?

“আপনার হাতের টাও আমিই খাবো।ওয়েট এটা শেষ করে নেই।

উচ্ছ্বাস অনেকটা খুশি হয়ে কফির মগে চুমুক দিতেই থু থু করে পুরোটা ফেলে দেয়।

“এটা কিভাবে খাচ্ছো তুমি। ফেলো বলছি।

এক পলকে চেয়ে আছে কথা।শুধু এটাই বুঝাতে চায়,

“অনেকটা ভালোবেসেই তো বানিয়েছে কফিটা। আর সেটার জন্য এতোটুকু তো আপনার প্রাপ্য।

মুহুর্তেই ভাবনায় চলে যায় উচ্ছ্বাস,

সেদিন রাতে অফিসের কোন একটা কাজে খুবই বিজি ছিলো উচ্ছ্বাস কাজ করতে করতে অনেকটা রাত হয়ে গেছিলো। পরের দিন সারাটা দিন মাথা ব্যাথায় খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো।এরকমই বিকেল বেলা তাই কথা এক কাপ কড়া কফি নিয়ে আসতেই উচ্ছ্বাসের মেজাজ চরম ক্ষেপে যায় আর সেখানেই কফিটা ফেলে দেয়।

চোখের কোনায় দু ফোটা পানি এসে জমে।কথার দিকে তাকাতেই গড়িয়ে পরে সে পানি।এক হাতে কথার হাত দুটো ধরে।আরেক হাতে নিজের কান ধরে বলে

“সরি

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে