সপ্নছোয়া পর্ব-১০+১১

0
1400

#গল্পঃ_সপ্নছোয়া
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ___১০__And__১১

____________১০______________

হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করথে সবাই। কেও হয়তো বসে আছে। ভিতরে অনিকা আর কিছু ডাক্তার।
মুহুর্তেই সেখানে ছুটে এলো শ্রাবন। শ্রাবন বার বার ফোন। করছিলো আদিত্বের কাছে অনিকার খবর জানার জন্য। আদিত্ব সত্যিটাই বলে দিলো তাকে।
তারপরই শ্রাবন ছুটে আসে হসপিটালে।

রাতে সাবাই ঘুমের ঘরে বিভোর। অনিকা পাঁচটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ধিরে ধিরে দুচোখ লেগে আসছে তার। গভির ঝিমুনিতে নিজের দেহটা এলোমেলোভাবে এলিয়ে দিলো খাটে। চোখ দুটু বন্ধ হয়ে এলো তার।
ওদিকে মোহনা তার রুমে ফোনটা খুজে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোথাও নেই। হটাৎ মনে হলো অনিকার রুমেই রেখে এসেছে হয়তো। আর অনিকাকেও এভাবে একা রেখে যাওয়ায় কিছুটা অনুশুচনায় ভুগছে সে। তাকে কি এভাবে একা রেখে যাওয়াটা তার হয়তো ঠিক হবেনা। হয়তো অনিকা রাগের মাথায় তাকে চলে যেতে বলেছিলো তাই বলেকি সে চলে যাবে?
এই সময় অনিকার একটু সঙ্গ দারকার।
মোহনা এগিয়ে যাচ্ছে অনিকার রুমের দিকে। দরজাটা খোলাই ছিলো।

ভিতরে গিয়ে দেখে অনিকা ঘুমের ঘরে বিভোর। কিন্তু এলোমেলো ভাবে।
মোহনা তাকে ভালো ভাবে সুইয়ে দিয়ে ফোনটা তুলে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে।
হটাৎই তার চোখ পরে প্লোড়ে পরে থাকা একটা ঔষধের পাতায়।
মোহনা সেখান থেকে সেটা তুলে নিয়ে দেখে এগুলো ঘুমের ঔষধ। নিজের অজান্তেই চোখটা অনিকার দিকে চলে যায়।
দেখে অনিকার মুখ দিয়ে ধিরে ধিরে ফেনা বের হচ্ছে।
মুহুর্তেই মোহনার হাত থেকে ঔষধের পাতাটা আর ফোনটা ফ্লাড়ে পরে গেলো। ফোনের গ্লাসটা হয়তো কয়েক টুকরু হয়ে গেছে।

দুই কান হাত দিয়ে চেপে ধরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে মোহনা।
দৌড়ে আদিত্ব সেখানে প্রবেশ করলো। রুমে প্রবেশ করা মাত্রই দেখে অনিকার মুখে ফেনা। আদিত্ব যা বুঝার বুঝে গেছে। অনিকাকে কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাইরে গাড়ির দিকে।
মোহনাকে পাঠালো সবাইকে নিয়ে অপর গাড়িতে করে হাস পাতাল চলে যেতে।

এতো রাতে সকল হসপিটালই বন্ধ। আদিত্ব এক হাতে ড্রাইবিং করে অপর হাতে ফোনটা ধরে তার এক পরিচিত ডাক্তারকে হসপিটালে আশার জন্য অনুরুধ করতে থাকে। ডাক্তার ছিলো পরিচিত আর রুগির অবস্তার কথা শুনে সেও রওনা দিলো হসপিটালের দিকে। যদিও টাকার পরিমান দিগুন দিতে হবে। তার দুজন সহকারিকেও ফোন করে হসপিটালে নিয়ে এলো। এক সহকারি ও ডাক্তারের বাড়ি হসপিটালের খুব কাছেই ছিলো তাই তাদের আসতে এতো দেরি হলোনা। তবে আরেক জনের কিছুটা দেরি হয়েছিলো বৈকি।
,
,
,
,
অনেক্ষন পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে আসে ডাক্তার। সবাই কৌতহল নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যায়।

— ডোন্ট অরি, রোগি এখন মোটামুটি সেইব আছে। ভাগ্য ভালো যে সময় মতো সব কিছু হয়ে গেলো।

কৌতহল নিয়ে শ্রাবন বলে উঠলো,

—–আমরা কি দেখা করতে পারি?

—হ্যা অবস্যই কিন্তু বেশি প্রেশার দেওয়া যাবেনা।

শ্রাবনের মুখে এমন কথা শুনে অনিকার বাবা আহান চৌধুরি মাথা নিচু করে আছে। ঘৃনায় নয়, বরং লজ্জায়।
দুইটা মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে দুইবারই ছোট হতে হয়েছে তাকে। দুই মেয়েই ধোকা দিয়েছে শ্রাবনকে।
যদিও সত্যটা আহান চৌধুরির অজানা। মোহনার বিষয়টার থেকে অনিকার বিষয়টা একটু ভিন্ন। আর তা শ্রাবনও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। যদিও তার এই ভাবনাটা বিশ্বাসে রুপান্তর করতে পারেনি এখনো।
,
,
,
,
সকালে বিছানায় শুয়ে আছে অনিকা পাসে আদিত্ব ও মোহনা। জদিও অর্পিতার এসব বিষয় নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। সে আছে সুধু আদিত্বকে যত তারাতারি পাসে পাওয়া যায় এই চিন্তায়। কারন সে এই কয়দিন এখানে থেকে যা বুঝতে পারলো তাতে, আদিত্ব ও মোহনার ব্যপারে যথেস্ট সন্দেহ ঢুকে গেছে মনে। কেনো যানি মনে হচ্ছে আদিত্ব তার থেকে মোহনাকেই সময়টা বেশি দিচ্ছে।

শ্রাবন রাতেই বাড়ি চলে গেছে। কারন তার মা মেঘলা চৌধুরি যদি যানতে পারে এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও সে অনিকার কাছে গিয়েছিলো তাহলে কি হবে তা মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছে সে। ছোট বেলা থেকেই শ্রাবন মাকে খুব সম্মান করতো।

সকাল থেকে দুই তিনবার ফোন করেছে শ্রাবন আদিত্বের কাছে অনিকা কেমন আছে তা যানার জন্য। তার কেনো জানি মনে হচ্ছে অনিকা তাকে ঠকায়নি। তাদের মাঝে ভুলবুঝাবুঝি সৃষ্টি করছে অন্য কেও। কিন্তু সে কে তা খুব শিগ্রই বের করছে শ্রাবন। যেভাবেই হোক সে বের করবে এর মুল খেলোয়ার কে?
,
,
,
অর্পিতা তার মাকে একা ছাদে নিয়ে আসে কিছু কথা বলার জন্য।

— কি হলো এভাবে ছাদে নিয়ে এলি কেনো?

—- মা আমরা এখানে কেনো এসেছি?

— কেনো আবার? বিয়ের আগে তুই আর আদিত্ব একে অপরকে যেনো একটু ভালো করে চিনতে পারিস।

— ওকে ফাইন, কিন্তু আশার পর থেকে আদিত্বকে আমার সাথে শেষ কবে দেখেছিলে।

— এখন তুই বলতে চাইছিস কি?

— দেখো মা আমি সোজাসুজি সব বলে দিচ্ছি, তুমি আংকেলকে বলে যত তারাতারি সম্ভব আমাদের ব্যপারটা এগিয়ে রাখো। মোহনাকে আমার সুবিধার ঠেকছেনা। বিচ্বাস না হলে গি দেখো অনিকাকে কেয়ার করার নামে এখনো দুজন দুজনার হাত ধরে বসে আছে।

— আরে ওরা ভাই বোন।

— কাজিন, আপন বোন নয়, আমারই মতো। সুধু পার্থক্য সে পেরালাল কাজিন আর আমি ক্রস কাজিন।

— ছোট বেলা থেকেই তোর মনে সুধু সন্দেহ।

— আমি এতো কিছু বুঝিনা, তুমি বাবা আর আংকেলকে বলে দু একদিনের ভিতরে সব কিছুর ব্যবস্থা করো।
,
,
,
,
রাতে নিশ্তব্দ অন্ধকারে ছাদের কর্নিশ ধরে দাড়িয়ে আছে আদিত্ব। সাথে আছে নানান চিন্তা। এক হলো অনিকা আরেক হলে সে নিজেই। এই কয়দিনে অনেক কিছু ঘটে যাওয়ায় বাড়ির সবাই মানসিক ভাবে বেথিত। বাবার কাকার সবারই বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে তাদের উপর থেকে। হয়তো বাবা খুব তারাতারিই তার আর অর্পিতার বিয়েটা ঠিক করে ফেলবে। মনে হয় বিয়ে চক্র শুরু হয়ে গেছে এই বাড়িতে। একে একে ভাই বোন সবার দিকে চোখ পরেছে বাড়ির সবার। নাজানি মোহনের দিকেও চোখ পরে যায় কিনা।

কিন্তু এতো কিছু ঘটে গেলো। তার ভিতর তার আর অর্পিতার বিয়ের মাঝেও যদি মোহনাকে মাঝখানে নিয়ে আশা হয় তাহলে পরিস্থিতিটা কেমন হবে। নাকি পরিবারের মুখে হাসি দেখতে চেয়ে আমার আর মোহনার সকল সপ্ন মাটি চাপা দিয়ে চোখ বুঝে বিয়ে করে নিবো অর্পিতাকে।
কিন্তু মোহনা? তার কি হবে?

____________১১_____________

বর্ষা প্রায় শেষের দিকে, এর পর শীত। কিন্তু এই করদিনে শীতের পুর্বাভাষটা ভালোই বুঝা যাচ্ছে। বর্ষার বৃষ্টিও যেনো ধিরে ধিরে বিদায় নিচ্ছে তাদের থেকে। দুই এক দিন পর পর হালকা পাতলা বৃষ্টি হয় তবে বশি ভারি না এই বৃষ্টি।

আদিত্ব একটা পাতলা টি-শার্ট পরে ছাদে দাড়িয়ে থাকায় একটু একটু ঠান্ডা অনুভব করছে। ছিন ছিন বাতাস বইছে। কিন্তু চিন্তাগুলো তাকে করে তুলছে অস্থির।

এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পর সে কি করে বলবে মোহনাকে সে এবং মোহনা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। নাকি অপুর্নই থেকে যাবে তাদের সপ্ন।
একবার প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে কষ্টটা কোনো রকম মানিয়ে নিয়েছি। সেখানে দোষটা ছিলো তৃষ্নারই। তাই অতিত নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই আমার। কিন্তু মোহনার ব্যপারে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিবো? কিছুই মাথায় আসছে।

তা ভাবনার ছেদ ভেদ করে পেছন থেকে কেও একজন হালকা কিশি দিতেই। একটু নড়েচরে দারায় আদিত্ব। কারন সে আর কেও নয়, অর্পিতা।
মোহনার ব্যপারে যদিও অনুভুতিটা থাকতো একটু ভিন্ন।

— অর্পিতা তুমি এতো রাতে এখানে?

— ঘুম আসছিলোনা, কিছুক্ষন আগে দেখলাম তুমি ছাদে আসছো তাই ভাবলাম একাকিত্ব দুর করে তোমার সাথে একটু সময় কাটাই।

— ভালোবাসার মানেটা বুঝো অর্পিতা।

— হটাৎ এই প্রশ্ন?

আদিত্ব। এবার এবার হেলান দিয়ে মুক্ত আকাশটার দিকে তাকায়। দুজনের মাঝেই নিরবতা। অর্পিতা কথা বলার চেস্টা করলেও হয়তো টপিক খুজে পাচ্ছেনা।

নিরবতা ভেঙে আদিত্ব বলে উঠে,
—- সামনে ভয়ানক বিপদ, পিছু হাটতে হাটতে যখন দেওয়ালে পিঠ থেকে যায় তখন কি করবে মানুষ? হয়তো সামনে বিপদটাই মাথা পেতে নিবে না হয় অসম্ভব হওয়ার সর্তেও দেওয়াল ভেঙে পালানোর চেস্টা করবে।

— কেনো সে যুদ্ধ করে বাচার চেস্টাওতো করতে পারে।

—- সব সময় চেস্টা সফল হয় না। আর সেই শক্তিটাও থাকা প্রয়োজন।

— যদিও তোমার কথাগুলোর আগা মাথা কিছু বুঝতে পারছিনা বাট ভালোই লাগছে।

— কোনো রহস্যময় বিষয় জানতে হলে তা গভির ভাবে চিন্তা করতে হয়।

আবার দুজনার মাঝে নিরবতা। আদিত্ব হাটা ধরলো ঘরের দিকে। কারন সে এখন অর্পিতার ইমোশনলেস কথা সুনার কোনো ইচ্ছেই নেই।

— কোথায় যাচ্ছো?

আদিত্ব কোনো রেসপন্স না দিয়ে সোজা নিচে চলে গেলো। অর্পিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দির্ঘশ্বাস নেয়। আর আদিত্বের বলা কথাগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে ভাবতে থাকে।
,
,
,
,
অনিকা এখন মোটামুটি সুস্থ, কিন্তু সব সময় একাকি থাকে সে। নিস্তব্দ নিরবতার ঘিরে নিয়েছে তাকে।

রাতের আধারে বারান্দায় কারো আনাগোনা টের পায় অনিকা। হটাৎই রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো শ্রাবন।
অনিকা বিছানা থেকে নেমে দড়ায়। কিছুক্ষন চুপ থেকে শ্রাবন অনিকাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। অনিকা এখনো মুর্তির ন্যায় সোজা হয়ে রয়েছে শ্রাবনের বুকে।

— আমি জানি অনিকা তোমার কোনো দোষ নেই। সব কোনোনা কোনো খেলা চলছে। আর তা খুব শিগ্রই জানতে পারবো আমি।

শ্রাবনের বুকে থাকা অবস্থায় ছোখ বেয়ে বেয়ে পানি পরছু অনিকার। যেখানে নিজের মানুষরাই তাকে বিশ্বাস করছেনা সেখানে কিনা?

অন্ধকার একটা ঘরে চেয়ারে হাত পা বাধা অবস্থায় বসে আছে মুখে কাপর পেচানো একটা ছেলে। সামনে চেয়ার টেনে বসলো শ্রাবন।

মুখ বাধা অবস্থায় হো হো করা ছেলেটা হলো সেই যার কারনে অনিকার বিয়ে ভেঙেছিলো।

— অনিকার সাথে তোর কিশের সম্পর্ক?

—- হো হো হো

— ওহ্ সরি তোর মুখটাইতো খুলতে ভুলে গেলাম।

এবার বল।

— অনিকা আমার গার্ল ফ্রেন্ড। সেই দিনতো প্রমানও দেখলে এখন আবার কি চাও।

— বেশি কিছুনা, আমি সুধু সত্যিটা যানতে চাই।

— কি সত্যি? এটাই সত্যি যে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি।

শ্রাবন একরাশ বিরক্ত নিয়ে তার মুখে একটা টেপ মেরে চলে আসে।

ঐদিকে দুই দিন পর অর্পিতার বাবা আসবে আদিত্ব আর অর্পিতার বিয়ের কথা পাকা করবে বলে।

বারান্দায় দাড়িয়ে আছে আদিত্ব অনুভব করলো পেছনে কোনো মেয়ে দাড়িয়ে আছে পেছনে ফিরতেই দেখে মোহনা ছলছল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ওই দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরবে অজশ্র অশ্রু কনা।

ঐদিকে শ্রাবন বসে আছে বেধে রাখা লোকটার সামনে। দুই দিন তাকে বেধে রেখেছে শ্রাবন, সত্যটা জানার অপেক্ষায়। কিন্তু এতো কঠিন হৃদয়ের মানুষও আছে তা শ্রাবনের আগে জানা ছিলোনা।

—- তুই কি সত্যিটা বলবি নাকি আরো কয়দিন এভাবে পরে থেকে থেকে মরবি?

— ভাইয়া আমি আপনাকে সব বলবো, আগে শুধু আমাকে একটু খাবার দিন। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে আমার। দুদিন ধরেতো এখানেই বেধে রেখেছেন খাবার ছারা।(হাপাতে হাপাতে)

—-আগে সত্যিটা বলবি তারপর এসব কিছু। বল(ধমকের সুরে)

— বিশ্বাস করুন আমি সব কিছু করেছি ওই আগুনের কথায়। সেই আমায় টাকা দিয়েছিলো এসব কিছু করার জন্য।

To be continue………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে