সংসার পর্ব-১৮

0
1366

#সংসার
#পর্ব_১৮

#লেখিকা_সুরাইয়া_ইসলাম_সানজি।

ভালোবাসায় বেশি কিছুর প্রয়োজন নেয়। সবার এক রকম করে ভালোবাসতে পারে না। কেউ প্রকাশ করে ভালোবাসে আবার কেউ অপ্রকাশ্য ভাবে ভালোবেসে। আবার কেউ যতটা প্রকাশ করে তার থেকেও দ্বিগুণ ভালোবাসে।
ভালোবাসার মানুষটির কাছে সব কিছু আসা না করে তার ভিতর যা আছে তা নিয়ে সুখী থাকলে সব সুখ খুজে পাওয়া যায়।

৩৫.
সবাই টেবিলে খাবার খাচ্ছিলাম। তখন জেনি আপু বলল-
“রুদ্র আমরা বান্দরবান ঘুরতে যাওয়ার প্লান করছি। তোরা যাবি? অনেক দিন থেকে কোথাও যাওয়া হয় নাই রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন।”

রুদ্র জেনি আপুর কথার উপরে না করে দেয় অফিসে অনেক কাজ আছে বলে। তখন জেনি আপু রাইমা আপুদের উদ্দেশ্য করে বলে-

“তা রাইমা তোমারাও তো হানিমুনে কোথাও যাও নি। চলো আমাদের সাথে কোথাও ঘুরে আসি। তোমাদের হানিমুন হবে আর সাথে আমাদের একটা ট্রুরও হবে। কি রাকিব সাহেব আপনার অফিসে কোন কাজ নেই তো?”

“না আমার অফিসে কোন কাজ নেই। রাইমা চাইলে আমার যেতে সমস্যা নেই। রাইমা তুমি যেতে চাও?”

রাইমা আপু করুণ চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল-
“না না আমরা সবাই যাব আর ভাইয়া যাবে না তা হয় না। ভাইয়া গেলে আমিও যাব।”

সবাই রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র কি বলে শুনার জন্য। আমি রুদ্রের হাতটা টেবিলের নিচ থেকে চেপে ধরি। যার মানে প্লিজ চলুন না আমিও যেতে চাই। রুদ্র আমার দিকে তাকালে আমি ইশারায় অনুরোধ করে চোখের ইশারা দিয়ে বললাম আমি যেতে চাই।

“আচ্ছা যাব। তবে মাএ তিন দিনের জন্য। তারপরেই ফিরতে হবে। কিন্তু পূর্ণতাকে নিয়ে যাব কি করে?বাবুর ঠান্ডা লাগবে তো।”

“রুদ্র তোর ভাবতে হবে না। আমরা আগেই সব ঠিক করে নিয়েছে। ফুপি আসছে সেই থাকবে পূর্ণতার সাথে। আর তাছাড়া তোরাও তো হানিমুনে কোথাও যাস নি। রিফ্রেশমেন্টও হবে সাথে হানিমুন এক্সটা ফ্রি।”

আমি আকাশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম-
“তা ভাইয়া আমরা তো সবাই হানিমুনে যাব। কিন্তু আপনারা কেন যাবেন শুনি?”

আকাশ ভাইয়া আমার কথা শুনে বাঁকা হেসে জেনি আপুকে উদ্দেশ্য করে বাম চোঁখ টিপে দিয়ে বলল-

“ভাবিজান আমরাও না হয় হানিমুনটা সেরে ফেলি। বিয়ের পর আর কোন ঝামেলা থাকবে না তাহলে।”

আকাশ ভাইয়ের কথা শুনে জেনি আপু লজ্জায় লাল হয়ে ভাইয়ার পিঠে কয়েক টা কিল বসিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
,

ফুপির সাথে বাবাও আসছে। নয়ত বাড়িতে বাবা তিন দিন কি করে একা থাকবে। শাশুড়ি মা বার বার অনুরোধ করে আসতে বলায় বাবা এসেছে। শাশুড়ি মা এই তিন দিন আমি থাকব না বলে সময় কাটানোর জন্য ফুপি আর বাবাকে তাদের সাথে থাকতে অনুরোধ করেছে। মানুষ যতই স্মার্ট হোক বৃদ্ধ বয়সে নিজের বয়সের মতো কারো সাথে কথা বলার মত একজন সাথি পেলে সব সময় হাসিখুশি থাকে। নিজেকে উৎসর্গ করে নিজের কথার মাঝে।

আমি পূর্ণতার সব কিছু ফুপিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এতক্ষণ যাওয়ার জন্য বেশ উৎসাহ থাকলেও পূর্ণতাকে ছেড়ে এই তিন দিন থাকতে হবে ভেবে যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু আমি এখন যেতে না চাইলে কারোই আর যাওয়া হবে না ভেবে সব কিছু গোছাতে শুরু করি।

রুদ্র আমার মন খারাপের কারন বুঝতে পেরে বলে-
“মেঘ কোথাও যাওয়ার আগে এত মন খারাপ করতে নেই। পূর্ণতা আর একটু বড় হলে নিয়ে যেতে পারতাম তাছাড়া মোবাইল তো আছেই আমার ওখান থেকে সব সময় পূর্ণতা কে দেখব।”

সত্যিই তো, আমার এতক্ষণ মনেই ছিল না ভিডিও কলে পূর্ণতাকে যখন খুশি দেখতে পারব। মনে পরতেই মুখে হাসি ফোটে ওঠে।

সবাই সবার বাসায় চলে গেছে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আসার জন্য। অনেকটা পথ যেতে হবে তাই আমি টপস আর জিন্স পরে নিলাম। এগুলো আগে পরলেও বিয়ের পর শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরে হয়নি।

আমাকে এই ড্রেসে দেখে রুদ্র স্যার খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমার বউটার দিন দিন এমন সুন্দর হওয়ার কারন কি শুনি?”

“যার বর এত স্মার্ট, তার বউ যদি সুন্দরী না হয় তবে কি মানায়? তাছাড়া হানিমুনে যাচ্ছি বলে কথা।”

রুদ্র পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবিয়ে বলে-
“তা বউটার হানিমুনের যাওয়ার এত তাড়া কেন? হানিমুনের জন্য প্রস্তুত তো? সেখানে গিয়ে লজ্জায় কুঁকরে গেলে কিন্তু চলবে না।”

৩৬.
আমি রুদ্রের কথা শুনে কোন জবাব না দিয়ে মুচকি হাসি দেই। পিছন থেকে রুদ্রকে ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ।

“উমম ডিস্টাপ করো না।”

“উহু ছাড়েন তো, আমার সুরসুরি লাগছে।”

“তুমি তোমার কাজ করলেই তো পার। আমায় বিরক্ত করছো কেন? আমি কি তোমাকে বিরক্ত করছি?

আমি রুদ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে যাই। কি বলে ওল্টো আমি নাকি তাকে বিরক্ত করছি ভাবা যায়!
আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে আগের মতো জামা কাপড় গোছাতে শুরু করি।

আমরা সবাই বান্দরবান যাওয়ার উদ্দেশ্যে ডলফিন পরিবহণে ওঠে বসে আছি। কিন্তু আকাশ ভাইয়া আর জেনি আপুর কোন খোঁজ নেই। তাদের সিট ফাঁকা পরে আছে। আমি বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। বার বার রুদ্র তাদের ফোনে কল দিচ্ছে কিন্তু কোন সাড়া নেই। বাস ছেড়ে দিয়েছে আস্তে আস্তে চলতে শুরু করছে। যতটা আগ্রহ নিয়ে এসে ছিলাম তা এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।
হঠাৎ বাসের ভিতর লাফিয়ে জেনি আপু আর আকাশ ভাইয়া ওঠি। দুজনের পিঠে দুটো ব্যাগ। মনে হচ্ছে কোন কলেজের স্টুডেন্ট তারা। আমি তাদের দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠি কিন্তু রুদ্র রাগে চেঁচিয়ে বলে-

“সালা তোদের আসতে এতক্ষণ লাগে? কি করছিস এতক্ষণ ফোন ধরিস নাই কেন?”

রুদ্রের কথা শুনে জেনি আপু বলে ওঠল-
“রুদ্র আর বলিস না। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমি ওর কাছে আমার ব্যাগটা দিয়ে ছিলাম আর এই আকাইশ্যা ব্যাগটা দরজার সামনেই রেখে আসছে। অর্ধেক রাস্তা আসার পর আমার ব্যাগের কথা মনে পরলে বলে ইচ্ছে করে বাসার সামনে রেখে আসছে।তখন আবার ব্যাগ নিতে বাসায় যেতে হয়। বল কেমনডা লাগে?”

জেনি আপুর কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ ভাইয়া চেঁচিয়ে বলল-
“দেখ রুদ্র এই জেনি ছেনিরে আমারে আকাইশ্যা বলতে নিষেধ কর। ওর জন্য পুরো পাঠক মহল আমাকে আকাইশ্যা নামে ডাকে। হবু বউ বলে তুমি করে না বলুক অন্তত আকাশ বলে তো ডাকতে পারে।”

“রুদ্র, আকাইশ্য আমারে জেনি ছেনি কইলো ক্যান? আমি ওর সাথে এক সিটে বসবো না। ওরে ওঠতে বল নয়তো খরব আছে।”

“হ্যাঁ আমি ও তোর সাথে বসমু না। এই রুদ্র বাস থামাতে বল। আমি পরের বাসে যামু।”

রুদ্র এতক্ষণ তাদের কথায় ‘তুমি বলোনি আমি বুঝিনি’ টাইপ ভাব ধরে থাকলেও এবার চিৎকার করে ধমক দিয়ে বলল-
“এবার আর একটা কথা বললে আমি তোদের দুটো কে বাস থেকে ফেলে দিব। এই মামা বাস থামান। এখনই দুজনে নামবি হেঁটে হেঁটে আসবি। যাহ নাম।”

রুদ্রের ধমক শুনে তারা দুজনে চুপচাপ বাসের সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো। তাও একজন আর একজনকে মিনমিন করে বলছে-
“এসব তোর জন্য হইছে, রুদ্র তোর জন্য খেপছে।”

আমি তাদের জগড়া দেখে মুচকি হাসছি। এই জগড়ার মাঝেও দুজনের ভিতর আলাদা ভালোবাসা জড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ বাস কিছুর সাথে ধাক্কা খাওয়ার উপর থেকে নিচে ছিটকে পরে আবার চলতে শুরু করে। আমি ভয়ে রুদ্রের এক বাহু জড়িয়ে ধরি। আর সে আমাকে তার বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। হঠাৎ রাকিব ভাইয়ের দিকে চোখ পড়ায় দেখি রাইমা আপু ভয়ে রাকিব ভাইয়ার হাত তার দু হাত দিয়ে মুঠো করে শক্ত করে ধরে আছে। আর রাকিব ভাইয়া অস্তির হয়ে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বলছে-
“এই নিন পানি খান, ভয় পাবেন না। সব ঠিক আছে।”

রাইমা আপু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল। রাকিব ভাইয়ের কথা শুনে চোখ খুলে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ঠকঠক করে পানির বোতল শেষ করে। রাকিব ভাইয়ের এক বাহু জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে চোখ বুঝে শুয়ে পরে।

আমার তাদের দিকে তাকিয়ে নিমিষেই ভয় কেটে যায়। আর মুগ্ধ চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। সৃষ্টি কর্তার এক একজোড়া ভালোবাসার সংসার কতই না মধুর।

#চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে