Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"লীলা বোর্ডিং-১২১৫ পর্ব-০৩

লীলা বোর্ডিং-১২১৫ পর্ব-০৩

#লীলা_বোর্ডিং-১২১৫
খন্ডঃ০৩

বিয়ে বাড়িতে চারটে অপরিচিত মেয়েকে দেখে সবাই উৎসুক চোখে তাকিয়ে তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে। নিয়াজদের মস্ত বড় ড্রয়িংরুমেও মানুষ গিজগিজ করায় কানিজরা বসার সুযোগ না পেয়ে ঘরের এক কোণেই দাঁড়িয়ে ছিল। দোতালা থেকে নিয়াজের বাবাকে নামতে দেখেই কানিজ এগিয়ে গিয়ে নিয়াজের বাবা সেলিম সাহেবের পা ছুঁয়ে সালাম করল৷ সেলিম সাহেব স্নেহাতুর হাসি হেসে বললেন, তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না, কে তুমি?

আব্বা, আমি আপনার ছেলের প্রথম পক্ষের বউ । আপনার শরীর ভালো আব্বা?

সেলিম সাহেবের মাথাটা তৎক্ষনাৎ চক্কর দিয়ে উঠলো, অপরিচিতার ভাবগতিক সুবিধার না দেখে গলা নামিয়ে বললেন, এই মেয়ে আব্বা মানে কি! আমার ছেলে আবার কখন বিয়ে করল তোমাকে! তোমার মতলব কী?

-আহারে! আব্বা ঘেমে গেলেন যে, কপালটা মুছে দেব? শরীর খারাপ করেনি তো আব্বা?

রাখো তোমার কপাল মোছা, তুমি চাও কী? দেখো মেয়ে, কোনো ঝামেলা হলে কিন্তু তোমার খবর করে ছাড়ব। তুমি বিদায় হও এক্ষুনি।

কেয়া দু হাত দূর থেকে মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছিল কানিজ যে সেলিম সাহেবেকে কথার বাণে ঘামিয়ে ছাড়ছে। কেয়া সেলিম সাহেবের দিকে এগিয়ে এসে বলল, ও তালোই দেহি! বেইন্যাকালে কিছু খান নাই? মুখডা কেমুন হুগনা হুগনা লাগে, ও আপা খাড়াইয়া থাকলে হইবে? তোমার শ্বশুর আব্বার লাইগা ছ্যাৎ কইর‍্যে নাস্তা নিয়া আসো যাও।

সেলিম সাহেব অবস্থা বেগতিক দেখে আর দাঁড়ালেন না। ইয়াকুব, এই ইয়াকুব… বলে গলা ছেড়ে ডাকতে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। কানিজরা মনেমনে নিয়াজের মাকে খুঁজতে লাগল, মেয়েদের দ্রুত ঘাবড়ে দেয়া যায়, আর একবার নিয়াজের মাকে ঘাবড়ে দিলেই বাড়িতে হুলুস্থুল কান্ড বেধে যাবে।

না, নিয়াজের মাকে কানিজরা খুঁজে পেল না, তার আগেই তিনটে ছেলে এসে ওদের ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে গেল। সেলিম সাহেবের সাথে আরো দু তিনজন দাঁড়িয়ে নিচু গলায় কিছু বলে চলেছিল, কানিজদের দেখেই কথা বন্ধ করে দিল। সেলিম সাহেব চোখ পাকিয়ে বললেন, তোমরা কে? কী উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছ এখানে?

কানিজ কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই লম্বা চিকন এক লোক মেজাজের সবটুকু ঢেলে দিয়ে, দাঁত কটমট করে বললেন, ভালো কথায় কাজ হবে না এদের সাথে। কী প্যাঁচ লাগাতে আসছো এখানে? বাড়ি কই তোমাদের? ভালোই ভালোই বিদায় হও নাইলে পোলাপান লেলায় দিমু কিন্তু।

কেয়া কাউকে উত্তর দেবার সুযোগ না দিয়ে একগাল হেসে বলল, হালার পো হালা! হালা ধইঞ্চার বাচ্চা, পুলিশ, র‍্যাব, পার্টির পোলাপান সব আইতাছে দশ মিনিটের মইধ্যে, দেহি কে কার পিছনে লাগে।

কানিজ কৃত্রিম ধমক দিয়ে বলল, আহ কেয়া! বড়দের সাথে এভাবে ভয় দেখিয়ে কথা বলে! আব্বার হার্টের রোগী, মাস ছয়েক আগেও ইন্ডিয়া গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য, আস্তে কথা বলো।

লম্বা চিকন মতো লোকটা কেয়ার কথা শুনে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল তবে সেলিম সাহেবের মনে এবার ভয় ধরেছে কানিজের কথা শুনে, কানিজ তার চিকিৎসার কথা কীভাবে জানলো? সেলিম সাহেব নরম সুরে বললেন, মা তোমরা কারা? সত্যি করে বলো তো, বিয়েতে কোনো ঝামেলা হলে আমার ইজ্জত থাকবে না যে।

কেয়া মায়া মায়া মুখ করে বলল, তালোই কেয়া আপা আপনার ছেলের বউ, আপনার ছেলেরে ডাক দিয়া আনেন, সে আইলেই সব পরিষ্কার হইবে৷

সেলিম সাহেব তার ছেলেকে ডাকতে পাঠালেন। রুবাইয়া ফোন কল রিসিভ করে ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে জোরেজোরে বলল, হ্যাঁ, সেলিম ম্যানশনে চলে আসেন, দেখবেন একটা বিয়ের গেট আছে বাড়ির সামনেও, নীল রঙের বিল্ডিং।

সেলিম সাহেব অসহায়ের মতো রুবাইয়ার দিকে চেয়ে বললেন, মা আপনি কারে আসতে বলছেন!

– আরে আংকেল আর বলবেন না, আমি বললাম এক গাড়ি পুলিশ আসলেই হবে, পার্টি থেকে দুই গাড়ি পুলিশ পাঠাচ্ছে, খামাখা মশা মারতে কামা দাগার ব্যবস্থা, তাই না আংকেল?

সেলিম সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না, দিতে পারলেন না। নিয়াজ দূর থেকে কানিজকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ল, সেলিম সাহেব চোখ পাকিয়ে, ইশারায় নিয়াজকে কাছে ডাকলেন। নিয়াজ কাছে আসতেই কেয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, হুমুন্দির পো, বিয়া তোমারে করাইতাছি খাড়াও। নিয়াজ কেয়ার কথা কানে না তুলে কেবল কানিজের দিকেই তাকিয়ে রইল, কানিজ নিয়াজকে দেখেও দেখল না। সেলিম সাহেব নিয়াজকে বললেন, এই! তুই এই মেয়েকে চিনিস?

নিয়াজ কোনো উত্তর দিল না, ঘটনার আকস্মিকতায় নিয়াজ থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল। কানিজ যে তার বাড়িতে ঠেলে উঠবে তাও আবার বিয়ের দিনে সেটা কল্পনার বাইরেই ছিল।

সেলিমা সাহেব ছেলের নিশ্চুপ থাকা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে ব্যস্ত গলায় বললেন, চুপ করে আছিস কেন? এই মেয়েকে তুই চিনিস?

নিয়াজ থেমে থেমে বলল, হ্যাঁ, ও আমার বন্ধু।

কানিজ নিয়াজের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, হারামজাদা! আমি তোর বন্ধু! দেড় বছর প্রেম করলি, বিয়ে করলি, বাসর হলো, তারপর থেকে উধাও!

নিয়াজ এবার বড়সড় ধাক্কা খেল, মেজাজ হারিয়ে বলল, কানিজ! এসব কী বলছো তুমি? আমাদের প্রেম ছিল, বিয়ে তো করিনি! তুমি কোনো ঝামেলা করলে এখান থেকে যেতে পারবে না কিন্তু, ঝামেলার আগেই এখান থেকে বিদায় হও যাও।

নিয়াজ আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই বাড়িতে দশ-বারোখানা মোটরসাইকেল, পুলিশের গাড়ি ঢুকল। নিয়াজ বিস্ময় নিয়ে, হতভম্ব হয়ে কানিজের দিকে তাকালো, কানিজ মুচকি হেসে চোখ টিপ মেরে বলল, চলে যাব ঘন্টা খানেকের ভেতরেই।

বরযাত্রীতে যাবার জন্য যারা এসেছিল, সাথে অন্য মেহমানদের মাঝে মুহূর্তেই ছড়িয়ে গেল, নিয়াজ আগেও বিয়ে করেছে, প্রথম বউকে ঢাকায় ফেলে আবার বিয়ে করছে।পুলিশ, পার্টির ছেলেমেয়ে দেখে অনেকেই ভয়ে, ঘৃণায় বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছে। পুরো এলাকায় নিয়াজের লুকিয়ে বিয়ে করার ঘটনা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার লোকজন বাড়িতে এসে ভীড় জমাল। মান ইজ্জতের ভয়ে সেলিম সাহেব কানিজদের আর পুলিশদের ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলেন। নিয়াজের মা এর মাঝেই ফিট হয়ে গেছে পুত্রের ওমন লীলাখেলার গল্প শুনেই।

থানার ওসি পানের পিক গিলে নিয়ে বললেন, দেখেন সেলিম সাহেব, মেয়ে আমাদের কাছে তাদের বিয়ের সব এভিডেন্স দিয়েছে, ছবি দিয়েছে, আপনার ছেলের স্বাক্ষরও আছে তাতে।সব প্রমাণিত। মেয়ের বাড়িতে আপনার এই দুশ্চরিত্র ছেলের সব ঘটনা আমাদের ঐ থানার ওসি সাহেব এতক্ষণে জানিয়ে দিয়েছেন মনে হয়। মান হানি মামলা করতে পারে মেয়ের বাড়ির লোকজন। যাই হোক সেসব কথা আমার বলে লাভ নেই আপনার ছেলেকে যদি আবার কোথাও বিয়ে দেবার চেষ্টা করেন তবে বাপ ছেলেকে জেলের একই সেলে মশা মারতে হবে বাকি জীবন। আর উনাদের সাথে কোনোরকম অসম্মান হলে আমার চাকরি যাবে, উপর থেকে অর্ডার আছে। যাই হোক, বাইরে পার্টির ছেলেরা আছে ওদের খাবার ব্যবস্থা করুন, আয়োজন তো করাই আছে।

রুবাইয়ার দিকে তাকিয়ে ওসি সাহেব একগাল হেসে বললেন, ম্যাডাম আমরা তাহলে আসি? কোনো সমস্যা হলে সাথেসাথে জানাবেন আমাকে।

-হ্যাঁ শিওর জানাব। আপনারা আসুন।

পুলিশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই সেলিম সাহেব কান্না শুরু করলেন ছেলের অপকর্মের জন্য। নিয়াজ কী করবে ঠিক তা বুঝে উঠতে পারছিল না। কানিজ ওসবে পাত্তা না দিয়ে খাবার টেবিলে কেয়াদের নিয়ে বসে পড়ল। টেবিলে খাবার রাখাই ছিল। কেয়া, শ্রাবণী, রুবাইয়ার পাতে খাবার তুলে দিতে দিতে কানিজ ঢঙ্গী গলায় বলল, খা! বেশি করে খা, এই প্রথম আমার শ্বশুর বাড়ি এলি।

বাড়িতে যখন মরা বাড়ির মতো কান্নাকাটি লেগে গেছে নিয়াজ তখন খাবার টেবিলের দিকে এসে কানিজের মুখোমুখি দাঁড়াল। নিয়াজের চোখ ভরা কেবল ক্রোধ! নিয়াজ আঙুল নাচিয়ে নাচিয়ে বলল, তোর কপালে শনি আছে কানিজ, তোর কপালে সত্যিই শনি আছে। কানিজ নিয়াজকে পাত্তা না দিয়ে বাড়ির কাজের লোককে আদুরে গলায় বলল, দুটো টিফিন বাটি আনেন তো, বিয়ে বাড়ির রোস্ট, পোলাও অনেকদিন খাই না, গাড়িতে যেতে যেতে খাব। বাড়ির কাজের লোক ভয়ে ভয়ে টিফিন বাটি এনে দিতেই কানিজ বাটি উঁচু উঁচু করে খাবার তুলে নিয়ে নিয়াজের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল, আমার শনির কপাল অনেক আগে থেকেই৷ শনিটা তুই লাগিয়েছিস, আমি আজ শনি কাটিয়ে গেলাম। প্রেমের আগে আমার ব্রোকেন ফ্যামিলি, আমি ঢাকার মেয়ে এসবে আপত্তি ছিল না৷ তুই যেভাবে চেয়েছিলি সেভাবে মিশেছি তোর সাথে,তুই বললি চলো কক্সবাজার যাই, গেলাম! ভুলটা ওখানেই ছিল আমার। যখন সত্যিকারের বউ হতে চাইলাম কাগজে কলমে তখন বললি, সিলেটের ছেলেরা সিলেটেই বিয়ে করে! আর তোর ফ্যামিলি ব্রোকেন ফ্যামিলির কাউকে মানবে না! কতটা আঘাত লেগেছিল তা শুধু আমার নীল বালিশের কাভার জানে, আর কেউ না। জীবনে কারো সাথে বেশিদিন থাকতে পারবি না, বিয়ে তো মেলা দূরের ব্যাপার।

নিয়াজ কানিজের কথার পাল্টা কোনো জবাব দিতে পারল না। কানিজ ধরা গলায় বলল, কেয়া, অনেক খেয়েছিস, গাড়িতে যেয়ে বয়, রওনা হব।

গাড়ি চলেছে ঢাকার অভিমুখে। রুবাইয়ারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে জানালা দিয়ে আসা ফুরফুরে বাতাসে। কানিজের চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। হাতের তালুতে চোখ মুছে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল৷ বারবার মনে পড়ছে সেদিনের কথা, যেদিন কানিজ নিয়াজের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, প্লিজ! আমাকে এভাবে ছেড়ে যেও না, আমি থাকতে পারব না, মরে যাব আমি। কানিজ কাঁদতে কাঁদতে ফিক করে হেসে ওঠে। ভাবতে থাকে, আসলেই তো বাঁচা যায়, কত বোকা ছিলাম আমি!

রাতে শিরিন আপার ঘরের ফ্লোরে সবাই গোল হয়ে বসেছে। শিরিন আপা লীলা বোর্ডিং এর সবচেয়ে কাটখোট্টা স্বভাবের, বয়স তেত্রিশ পেরিয়েছে। বিয়ে করেননি এখনো, কেন করেননি এই প্রশ্ন করার সাহস বোর্ডিং এর কারো হয় না। লীলা হালদারের খুব কাছের বান্ধবী শিরিন আপা, লীলা হালদার নিজেই ভয় পায় এই শিরিন আপাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে বোর্ডিং এর সবাই লীলা হালদারকে আন্টি ডাকলেও অদ্ভুত কোনো এক কারণে শিরিনকে আপা বলেই ডাকে তারা।

শিরিন আপা রুবাইয়ার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে কতদিন বলেছি খাবারের বিল যেন মাস শেষে সাড়ে তিন হাজারের উপরে না যায়, অথচ তুমি প্রতি সপ্তাহে তিন চারদিন খাসির মাংস, রুই মাছ আনাচ্ছ! কেন? বোঝ না, বোর্ডিং এ এমন মানুষও আছে যাদের ঐ সাড়ে তিন হাজার টাকা আর বোর্ডিং ভাড়া দিতে দুটো টিউশনের পুরো টাকাটাই দিয়ে দিতে হয়।

রুবাইয়া আমতা আমতা করে বলল, ভুল হয়ে গেছে আপা। আর এমন ভুল হবে না আমার।

শিরিন আপা কানিজের দিকে তাকিয়ে বলল, ওরা না হয় ছোটো, তুমি তো বোঝো কানিজ। আমি সারাদিন কলেজে ক্লাস, পরীক্ষার জন্য। তুমি তো বোর্ডিং এ থাকো সারাটা দিন।

কানিজ নিজেই যে রুবাইয়াকে প্রায় প্রায় খাসির মাংস, রুই আনতে পাঠায় সে কথা শিরিন আপাকে কীভাবে বলবে সে। কানিজ অপরাধীর মতো বলল, আচ্ছা আপা, আমি এবার থেকে খেয়াল রাখব, আমি একটু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম তাই খেয়াল রাখা হয়নি।

শিরিন আপা গলা উঁচিয়ে হাসান মামাকে ডাক দিতেই হাসান মামা এসে হাজির। শিরিন আপা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, মামা, এখন কটা বাজে?

-নয়টা পয়তাল্লিশ, আপা।

বোর্ডিং এর নিয়ম অনুযায়ী স্টুডেন্টরা ঢুকবে আটটার আগে আর চাকরিজীবীরা দশটার ভেতর। নতুন যে মেয়েটা এসেছে সে দুদিন পর পর রাত এগোরটায় ফিরেছে, আপনি ঢুকতে দিলেন কেন? আর জুঁই দশটার দিকে ফেরে কেন? তাকে ঢুকতে দেন কেন! ও তো স্টুডেন্ট, আর টিউশন তো রাত দশটা অবধি করে না কেউ।

-শায়লা আপারে আমি বলছি দশটার আগেই ফিরতে, সে শোনে না আমার কথা। আর জুঁই আপা তো এখন নাকি সেলসম্যানের কাজ নিছে।

শিরিন আপা আর কিছু বলে না, খানিকক্ষণ কী যেন ভেবে বলল, যাও সবাই সবার রুমে যাও। সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেও মোনা রুম থেকে বেরোয় না। মোনা মাথা নিচু করে বলল, আপা! এই মাসের টাকাটা আমি সামনের মাসে দেই? এই মাসে দুটো বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি, ড্রেস বানিয়ে দিয়েছি, অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে গেল।

শিরিন আপা খুব কম হাসেন। হলদে ফর্সা রঙা শিরিন আপা হাসলে তাকে অদ্ভুত রকমের সুন্দর দেখায়। শিরিন আপা হেসে বললেন, এই মাসের টাকা মওকুফ তোমার, ওটা আমি দেব৷ তুমি এইটুকুন একটা মেয়ে, টিউশন করে সংগঠন চালাও! কত দম লাগে, তা আমি জানি। আর হ্যাঁ, জুইঁকে আসলে বলবে ওর আবদার রাখা হয়েছে, খাবার বিল সাড়ে তিন হাজারের উপর যাবে না আর৷ তবে কী জানো তো, এখানের প্রায় সবাই স্বচ্ছল ফ্যামিলির, ওদের ভালোমন্দ ছাড়া খেতে কষ্ট হয়। আমার মাঝেমধ্যে ওদের জন্যও মায়া হয়। এনিওয়ে, যাও পড়তে বসো গে।

মোনা রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাবার আগে শিরিন আপার বদান্যতার জন্য একগাদা ধন্যবাদ দিয়ে যায়।

শিরিন আপা জানালা খুলে জানালার পাশে রাখা টুলটায় বসেছে । আজকাল খুব বাবার কথা মনে পড়ে তার। বাবাটা তার উপর অভিমান করে এখন আর খোঁজখবর নেয় না, মা তো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেই কবেই। শিরিন আপার নিশ্বাস ভারী হয়, বুকের ভেতরটায় কেউ খামচি মেরে ধরে ।

প্রচন্ড গরম আর জ্যামের মাঝেও শায়লা রিক্সার হুড তুলে দিয়েছে। পঞ্চাশ পেরোনো এক পুরুষ তার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে, হাত ধরার জন্য কোনো পুরুষ হুড তুলে দিতে পারে সেটা শায়লা খাইরুল সাহেবকে না দেখলে জানতেও পারত না। দুবছর আগে হলেও শায়লা আজকের এমন ঘটনা জন্য নিঃশব্দে কেঁদে উঠত। শায়লা ফিসফিস করে বলল, এই শহরে কেউ হাত ধরতে গেলেও রিক্সার হুড তুইলে দেয় বুঝি? আচ্ছা আপনি আমার কী হন?

খাইরুল সাহেব শায়লার হাত শক্ত করে চেপে ধরে, চোখের দিকে তাকিয়ে যন্ত্রের গলায় বলল, কেউ না।

চলবে……

লেখকঃ Borhan uddin

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ