#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৪০+৪১
.
”তুমিই তো বলছিলে আজ বাসর হবে তাই?এমনিতেও আমার কোনো প্রবলেম নাই।গতকাল না হয় নেশায় তুমি আদর করেছিলে আজ নাহয় সজ্ঞানে করবা? কি বলো? ফুলের ব্যবস্থা করবো?”(চোখ টিপ দিয়ে)
.
.
আয়াতের উচ্ছাসী কন্ঠশুনে মাইশার চোখ বেরিয়ে যাওয়ার মতো উপক্রম।একটা ছেলে যে ঠিক কতটা লাগামহীন হতে পারে এই আয়াতকে না দেখলে মাইশা হয়তোবা তা ধারনাই করতে পারতো না।আয়াতের পাশ থেকে উঠে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকে সে আয়াতের দিকে।তারপর বিরক্তিসুরে বলে ওঠে……
.
”সবকথার উল্টা মনে করো কেন? এই ব্যাটা! আমি কি একবারও বলেছি যে আজ আমাদের বাসর হবে?”
.
মাইশার মুখে ব্যাটা কথাটি শুনে চোয়াল শক্ত করে ফেলে আয়াত।এমনিতেও মাইশার ইন্ট্যারন্যাশনাল ওয়ার্ডগুলো শুনে অতিষ্ট সে।আর এখন এই ব্যাটা ট্যাগটা নিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার।
.
একলাফে খাট থেকে উঠে আয়াত মাইশার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।অনেকটাই কাছে।মাইশা এতে একটু ভড়কে পিছনে চলে যায়।আমতা আমতা করে সে বলার চেষ্টা করে…..
‘.
”মা-মা-মানে আমি ব-বলতে চ-চেয়েছি আজ নুহাশ ভাইয়ার বা-বাসর হবে। আর তুমি তো আমাদের বাসর থেকে ফু-ফুল পর্যন্ত চলে গেলে ”
.
আয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে বলে………
.
”এটা সুন্দর করে বললেই তো হয়।তোমার কুটনীতিমার্কা হাসি যে তোমার ভাইয়ের বাসরের জন্য ছিলো তা-কি আমি জানতাম? আর কেমন বোন তুমি?নিজের ভাইয়ের বাসরে ড্রিস্টাব করার ভয়ঙ্কর প্ল্যান করছো?”
.
”আমার ভাই ! আমার ভাইয়ের বাসর ! আমার যা মন চায় তাই করবো? তোমার কি?”
.
আয়াত ঠোঁট কামড়ে মাইশার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।সরু কন্ঠে বলে……
”ভাইটা তোমার হলেও ওই ভাইয়ের বোনটাতো আমার বউ।এখন মানুষ যদি দেখে আমার বউ অন্যের বাসরে হাতছানি করছে তাহলে তারা তো ভাববে যে এই মেয়ের মাথায় কোনো সমস্যা আছে।”
.
ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে মাইশা আয়াতের দিকে।তার কথাটা বুঝতে পেরে ক্ষেপে কিছু বলতে যাবে আয়াত তখন বলে ওঠে……
.
”দুপুরে তো বাবার নাম করে ভেগে গিয়েছিলে তুমি।এখন এর শাস্তি হিসেবে তোমার সাথে কি করা যায় বলোতো?”
.
মাইশা এবার শেষ ! কোনোমতে দাঁত কেলিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে…
.
”আরে ! ওটাতো আমি দুষ্টামি করছিলাম।এই কথাটাও কি মনে ধরে রাখতে লাগে আয়াত !”
.
”তুমি যতই আমারে আদুরে গলায় ; হেসে হেসে কথা বলোনা কেন ; শাস্তি তো তোমায় এই আরহাম আয়াত থেকে পেতেই হবে।এখন আমি অনেক ক্লান্ত।খালু আর বাবা মিলে আমায় মদনপালের মতো খাটিয়েছে তাই তুমি চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো আমার মাথা টিপে দিবে।”
.
একথা বলেই খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে আয়াত।তার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বড্ড ক্লান্তি ভর করেছে তার শরীরে।আয়াত চোখ বুঝে বলে ওঠে……
.
”কি হলো মাইশু ! তাড়াতাড়ি আমার মাথা টিপে দাও।যত জলদি তুমি কাজ শুরু করবে তত তাড়াতাড়িই তোমার ছুটি।”
.
মাইশা কিছুক্ষণ করুন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেও সে বুঝতে পেরেছে এই ছেলে এখন একটুও তার কথার খেলাফ হবে না।তাই আয়াতের পাশে বসে সে আস্তে করে তার চুলে নিজের আঙ্গুল গুঁজে মাথা টিপতে থাকে।এমন করতে করতে ২০ মিনিট , ৩০ মিনিট হয়ে এলো কিন্ত আয়াত কিছুতেই মাইশাকে ছাড়ছে না।মাইশার তো এখন মন চাচ্ছে এই চুলগুলো টান মেরে ছিঁড়ে ফেলতে।
.
সময় এখন প্রায় সাড়ে বারোটা । বাড়ির কোলাহলটা আস্তে আস্তে কমে এসেছে।আয়াত এখনও ঘুমায়নি।চোখ বন্ধ করে মাইশার স্পর্শ তার চুলে অনুভব করছে সে।মাইশার আয়াতকে এভাবে আড়চোখে দেখতে কেন যেন অনেক ভালোলাগছে।কিন্ত সে জানে না কেন আয়াতকে এভাবে লুকিয়ে দেখছে।আয়াত ওর হাজবেন্ট; সে হিসেবে ওর তো চোখাচোখি আয়াতকে পর্যবেক্ষণ করার কথা।হঠাৎ আয়াত বলে ওঠে……
.
”মাইশু……….! ”
.
মাইশা আয়াতের দিকে মনোনিবেশ করে।আয়াত এখনো চোখযুগল বুজে আছে।আয়াত মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”আচ্ছা এমন যদি হয় যে আদ্রাফ ফিরে এসেছে তবে আমায় কি তুমি ছেড়ে চলে যাবে?”
.
আয়াতের চুল থেকে নিজের হাতের বিচরণ থামিয়ে দেয় মাইশা।বুকটাতে কেমন যেনো ছোটখাটো একটা সাইক্লোন বয়ে গেলো মাইশার। আয়াতের হঠাৎ এমন প্রশ্ন বেশ ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। মাইশার প্রতিউত্তর না পেয়ে আস্তে করে চোখ খুলে আয়াত। মাইশার দৃষ্টি অন্যদিকে।মনে মনে ছোটখাটো এক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
.
”কি হলো মাইশা? উত্তর দাও।”
.
”হঠাৎ……..এ প্রশ্ন? ”
.
বেশ শান্তভাবেই পাল্টা প্রশ্ন করেছে সে আয়াতের কাছে।কিন্ত মনে চলেছে ব্যাকুল অশান্তি তার ওর নীরবতার ভীড়েও স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে আয়াত।আয়াত এক অদ্ভুদ হাসি দিয়ে বলে,
.
”ভয় হয় তোমায় নিয়ে।বারবার মনে হয় এই বুঝি আমার থেকে দূরে চলে গেলে।আদ্রাফ আর তোমার ভালোবাসাকে যথেষ্ট সম্মান করেছি আমি।তবুও কোনো এক কারনে আদ্রাফকে হিংসে হতো আমার।প্রচুর হিংসে হতো।শুধু ভাবতাম , কি আছে ওর মধ্যে ?
যার জন্য তোমার মনে নিজের জায়গা করতে এতো কষ্ট হলো আমার।আমি কখনোই ওর মতো হতে চাইনি।কিন্ত আমি চেয়েছি আদ্রাফ যেমন তোমার ভালোবাসা পেয়েছিলো ; আমিও যেন সেই ভালোবাসার ভাগীদার হই।তাইতো ভয় লাগে…..আদ্রাফ যদি ফিরে আসে তবে তুমি কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে?”
.
আয়াত এই কথাগুলো বলার সময় বারবার থেমে যাচ্ছিলো।যেন মাইশাকে হারানোর কথা ভাবলেই তার অনুভূতির অবসান ঘটে যাবে।
.
মাইশা নীরবে আয়াতের প্রতিটা কথা শুনে যায়।বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা কাটানোর পর সে উত্তর দেয়……..
.
”আদ্রাফ আর কখনোই ফিরে আসবে না আয়াত। আদ্রাফের ফিরে আসার যদি ১ পার্সেন্ট চান্স থাকতো; তুমি আর আমি কখনোই এক হতে পারতাম না। আদ্রাফ আর প্রথম ভালোবাসা ; আমার প্রথম অনুভূতি।যা চাইলেও কখনো ভুলা সম্ভব না। আর তুমি? আমার অন্তিম অধ্যায় ; আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ যা আমি কখনোই দূরে রাখতে পারবো না। ”
.
আয়াত নিশ্চুপ।
.
”তোমায় আমি কখনোই ছেড়ে থাকতে পারবো না আয়াত।কিন্ত প্লিজ এই বিষয়টা আদ্রাফের সাথে জুড়িয়ে দিও না। কেননা তার উত্তর আমার নিজের কাছেই নেই।”
.
আয়াত উঠে বসে মাইশাকে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে।নিজের মুখটা আস্তে করে গুঁজে দেয় মাইশার গলায়।মাইশাও এর কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।আয়াতের পিঠে নিজের হাত নিয়ে যেতেই আয়াত যেন তাকে আরও আকড়ে ধরে।
পুরো পরিবেশটিতে বিরাজ করছে পিনপন নীরবতা।কিন্ত নীরবে থেকেই দুজনে যেন তাদের অনুভূতির আদান-প্রদান করছে।যেই অনুভূতির কোনো লেখ্য রূপ নেই ; শুধু রয়েছে অসামান্য প্রকাশময় ভালোবাসা।
.
.
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
.
.
গতরাতে নুহাশের বাসর হওয়া সত্বেও সে সাত-সকালে উঠে সবার সাথে আলাপচারিতা চালাচ্ছে আর আয়াত মশাই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।স এ নিয়ে সবার যেন হাসি-ঠাট্টার শেষ নেই।মাইশা তো বেচারা মাইনকা চিপায় পড়ে গিয়েছে।না পারছে বসতে তো না পারছে সরে আসতে।শেষমেশ মাইশা আয়াতকে ডাকতে রুমে গেলে আয়াত কম্বল মুড়ি দিয়ে বলে……….
.
”আরে মাইশা ! নুহাশ ভাই জেগে গিয়েছে দেখে বলে এখন আমারও উঠতে হবে? দরকার হলে নুহাশ ভাইকেও আমার সাথে ঘুমাতে বলো । তবুও আমায় আর ডাক দিও না প্লিজ।”
.
মাইশা আয়াতের কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে যখন নিচে গিয়ে এই উত্তর দেয় সবাই অট্টহাসিতে মেতে উঠে।আরিয়াপুতো টিজ করে বলে ওঠে…….
.
”হায়রে হায়! বাসর সাজালাম নুহাশের ; সকালে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আয়াত……….ব্যাপারটা বুজলাম না।”
.
মাইশার তো এখন মন চাচ্ছে গলা ফাটিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাদতে। কিন্ত এখন কষ্ট করে তার অনুভূতিটা একটা মেকি হাসি দিয়ে ধামাচাপা করে রাখলো আর মনে মনে বলে উঠলো….
.
”মিঃ আরহাম আয়াত ! আমি এর রিভেঞ্জ অবশ্যই নেবো।”
.
.
.
আজ বাসায় ফিরে যাচ্ছে মাইশা আর আয়াতসহ সবাই।আয়াতের অফিস থাকার কারনে নুহাশের রিসেপশন অনুষ্ঠানে কেউ থাকতে পারলো না।মাইশার একটু খারাপ লাগলেও আয়াতের কথা ভেবেই ফিরে যেতে হচ্ছে তাকে।
তাছাড়া মাইশার মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে বলে এমনিতেও তাড়াতাড়ি যেতে হবে মাইশাকে।তাদের পথসঙ্গী হিসেবে আনান আর পৃথাও অংশ নিচ্ছে।ইনায়া আর সামাদ অন্য রাস্তা দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যাবে।
দেখতে দেখতেই যে ফিরে আসার প্রহর এগিয়ে আসবে এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে মাইশার।উত্তরায় সেই ৪ বছর ছাড়া জীবনের বড় একটা অংশ বেইলী রোডের এই বাসাটিতে কাটিয়েছিলো সে।আর এখন সেই বাড়িতেই অতিথি হিসেবে আসতে হয় তাকে।কত অদ্ভুদ তাই না?
.
সবাইকে বিদায় জানিয়ে নিজেদের আয়াতদের বাসার দিকে অগ্রসর হচ্ছে গাড়িটি।সামনে বসে ড্রাইভ করছে আয়াত আর পেছনে বসে গল্প-মজলিশে ব্যস্ত পৃথা আনান আর মাইশা।
.
মাইশার এখন প্রচন্ড খারাপ লাগছে।এমনিতেও সকালে খালিপেটে ছিলো বলে এখন গাড়িতে বমি বমি লাগছে তার।ব্যগ থেকে এক বোতল পানি বের করে ঢকঢক করে এক লিটারের পানি শেষ করে সে। পানিটা খাওয়ার পরপরই ভালো হতে থাকে তার শরীর।বমি বমি ভাবটাও একটু করে কেটে যাচ্ছে।আয়াত বিষয়টা লক্ষ করে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই বলে…….
.
”কোনো সমস্যা হচ্ছে মাইশা?”
.
”তেমন কিছু না ! একটু বমি বমি লাগছিলো?”
.
”বলিস কি মাইশা……এমন হবে কেন?”(পৃথা)
.
”কে জানে?”(মাইশা🙄)
.
”আচ্ছা তোর কি আচার খেতে ইচ্ছে করছে?”
.
আনানের কথা শুনে ভ্রু কুচকে মাইশা ওর দিকে তাকায়।আনান উৎসুক চোখে উত্তর শোনার জন্য বসে আছে।মাইশা মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”মানে…….আচার খেতে ইচ্ছে করবে কেনো?”
.
”আমার সন্দেহ সঠিক কিনা তার বিচার করছি।বমি বমি ভাব…..তো প্রেগনেন্টে হওয়ার লক্ষণ।তাই আচার ……..”
.
আনানের এই কথাটা বলতেই দেরি ওকে থাপ্পড় মারতে মাইশার এক সেকেন্ডও দেরি হলো না।আনান গালে হাত দিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।পৃথা মোবাইল চালাতে চালাতে মিনমিনিয়ে বলে…
.
”তোর মতো হাদারামের সাথে এমনই হবে…….”
.
মাইশা ক্ষিপ্ত গলায় আনানকে বলে;
”আরে গাধআআ……বমি করলেই প্রেগনেন্টের লক্ষণ এই মহৎ কথা কে বলেছে তোরে? তুই কি বাংলা সিনেমার কাহিনী শুরু করেছিস? একবার ভার্সিটির ট্যুরে মনে আছে তুইও বাসে বমি করেছিলি ? তাহলে ওটার মানে কি এই; তুই ছেলে হয়েও প্রেগনেন্ট……?গবেট কোথাকার………….!”😫
.
.
.
~চলবে~