রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩৮+৩৯

0
2118

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৮
.
নিজেদের রুমে মুখোমুখি বসে আছে মাইশা আর আয়াত।মাইশার আয়াতের দিকে তাকাতে বেশ সংকোচ কাজ করছে তাই নিজের হাত জোড়া আনমনে ঘষাঘষি করে যাচ্ছে চোখের দৃষ্টি নত রেখে।আয়াত তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।এদিকে বরযাত্রী কনের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অলরেডি বের হয়ে গিয়েছে আর আয়াত তাকে এভাবে ওখানে থেকে নিয়ে আসলো কেনো এটা ওকে বেশ ভাবাচ্ছে।
.
নীরবতা কাটিয়ে আয়াত হঠাৎ বলে ওঠে…..
”এভাবে ইগ্নোর করছো কেন?সকালে তোমায় যে কোনো অস্বস্তিতে পড়তে না লাগে তাই তোমার ওঠার আগেই আমি চলে গিয়েছি।কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি চেষ্টা করেছি তোমার সাথে কথা বলতে আর তুমি? বারবার আমায় এড়িয়ে যাচ্ছো । কেন?”
.
কেন কথাটি একটু চিল্লিয়ে বলে ওঠে মাইশা। মাইশা এতে একটু কেঁপে ওঠে।আয়াত হঠাৎ এভাবে রেগে যাচ্ছে কেন?মাইশাকে বিচলিত হতে দেখেআয়াত পুনরায় শান্ত হয়ে যায়।মাইশার একটু কাছে এসে ওর হাতজোড়া নিজের হাতজোড়ায় বন্দী করে নরম সুরে বলে ওঠে,
.
”গতরাতের কথা ভেবেই কি আমায় ইগ্নোর করছো?”
.
মাইশা নীরব।
.
”বলো?”
.
মাইশা এবার প্রতিউত্তর দেয় ;”হ্যাঁ।”
.
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আয়াত। সকালে উঠে প্রথমে তার মনে ভয় কাজ করছিলো যে মাইশা বোধহয় ওকে ভুল বুঝবে।কিন্ত ঔষুধে এত বেশি পরিমাণ এলকোহল ছিলো না যতটা কোনো নেশাজাতীয় কোনো দ্রব্যে থাকে।তাই গতরাতের প্রতিটা ঘটনাই মাইশার মনে আছে।আয়াত বুঝতে পারছে এর জন্যই মাইশা মনে মনে অনুশোচনা বোধ করছে।কেননা গতকাল তাদের মধ্যে সবকিছুই অনিশ্চিতভাবে হয়েছিলো।
মাইশার গালে আলতো করে নিজের হাত রাখে আয়াত।এতে মাইশা চোখ তুলে তাকায় আয়াতের দিকে।আয়াতের ঠোঁটে রয়েছে স্মিত হাসি যাতে আয়াতের সৌন্দর্য আরও গভীরভাবে ফুটে উঠেছে।ওর কালচে বাদামী চোখগুলো প্রকাশ করছে অসীম ভালোবাসা।আয়াত হাল্কা করে নিজের ঠোঁট নাড়িয়ে বলে ওঠে……
.
”এত ভাবার কিছুই নাই মাইশু !বিশ্বাস আছে না আমার উপর?”
.
”হুম…”
.
”তাহলে……….? এত ভাবাভাবির কি আছে?………..এমন তো না এখনো আমায় মানতে পারোনি বা আদ্রাফকে ভুলতে পারোনি।একটি সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস।এই বিশ্বাসটাই আমার উপর রেখো কেমন?”
.
আয়াত কথা বলছিলো তখনি বাহিরে থেকে ভেসে আসে আরিয়াপুর গলা।
”মাইশা…….আয়াত?কতক্ষণ রুমে থাকবি?আমরা তো বেরিয়ে যাচ্ছি।”
আরিয়াপুর কথা শুনে দুজনেরই ধ্যান ভাঙ্গে।এতক্ষণ যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো দুজনে।আয়াতের প্রতিটা কথার মধ্যে অন্যরকম একটা আকর্ষণ অনুভব করতে পারে মাইশা যেই অনুভূতিটা অবর্ণণীয়।মুচকি হেসে এবার মাইশা রুমের থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসে আর আয়াতও তার পিছে পিছে নামে।
সবাই তাদের দুজনের জন্য অপেক্ষা করছিলো।আনান আর সামাদকে ট্রাকে করে যেতে দেখে খুব হাসি পায় মাইশার।হঠাৎ আয়াত তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠো……
.
”গতরাতে মাতাল হয়ে ওদের সামনে আমার মান-সম্মানের হালুয়া বানিয়েছো তুমি।কি মনে করেছো আমি ভুলে গিয়েছি? ওই বাড়িতে আগে যেয়ে নেই ; তারপর বুঝবে আরহাম আয়াত কি জিনিস ! আমায় লুচুবাঘ আর ধলা কুদ্দুস বলার শাস্তি আমি দেবোই।”
.
একথা বলেই আয়াত শিস বাজাতে বাজাতে গাড়িতে উঠে পড়ে।আয়াতের কথা শুনে হিম ধরে গিয়েছে মাইশার গায়ে।আল্লাহই জানে কি করবে সে !
.
.
চলবে।।

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৯
.
মাইশাকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে আয়াত তার একহাত মাইশার পেছনের দেয়ালটিতে রেখে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।আয়াতের নিশ্বাস মাইশার মুখ বরাবর বারি খাচ্ছে আর বেচারা মাইশা তো না পারছে এখানে থাকতে না পারছে এখান থেকে যেতে।কিছুক্ষণ আগেই নুহাশের নিকাহ সম্পন্ন হয়েছে আর সবাই এখন বর-কনেকে নিয়ে ব্যাস্ত।আয়াতের ভয়াবহ কথাগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য মাইশা কনে বাড়িতে সারাদিন আয়াতের থেকে ১০ হাত দূরে দূরে ছিলো । কিন্ত এখন সবাই ব্যস্ত বলে আয়াত সুযোগের সৎ ব্যবহার করে ভেন্যুর একেবারে নীরব কোণে নিয়ে যায় মাইশাকে।
.
মাইশার তো এখন ”ছেড়ে দে জামাই কেঁদে বাচি”এর মতো দুর্লভ অবস্থা।আয়াতের কালচে বাদামী চোখে অন্যরকম এক মাদকতা আছে । যা মাইশা কখনোই উপেক্ষা করতে পারে না।ওই নজরকাড়া চোখজোড়ার দিকে তাকালেই হাজারো অনুভূতির সংমিশ্রণ তার চোখের সামনে উপস্থিত হয়।কোনোমতে আমতা আমতা করে মাইশা বলার চেষ্টা করে…..
.
”ওদিকে সবাই কথা বলছে আ-আমায় এ-এখানে আনলে কেন?”
.
মাইশার কথার ধরন দেখে আয়াত আলতো হাসে।তারপর নিজের ঠোঁটজোড়া জিহবা দিয়ে হালকা ভিজিয়ে মাইশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ওঠে,
”মনে আছে গতকাল আমায় কি কি বলেছিলে?”
.
লজ্জায় লাল-নীল-বেগুনি হয়ে যাচ্ছে মাইশা।নেশার ঘোরে আয়াতকে যে কি কি বলেছে তা সম্পূর্ণ মনে না থাকলেও আংশিক মনে আছে ওর।আর আয়াতের ঠোঁট নাড়ানোর সময় তার কানের লতিতে বারবার ছুঁয়ে দিচ্ছিলো যার কারনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে মাইশার শরীরে।এতে একটু কেঁপে ওঠে মাইশা।আয়াত আবারো তা দেখে বলে ওঠে……
.
”আজ আমরা একসাথে এতদিন থাকছি তবুও তোমার কাঁপাকাঁপির অভ্যাসটা আর গেলো না।সত্যি ! মাথা ঠিক রাখতে পারি না আমি।”
.
মাইশা এবার চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
”আয়াত খালু আসছে।”
,
হুড়মুড়িয়ে মাইশাকে ছেড়ে দেয় আয়াত।এমনিতেও বাবাকে বড্ড ভয় পায় সে।আয়াত মাইশাকে ছেড়ে দিতেই মাইশা দেয় এক ভৌ দৌঁড় । আয়াত কিছুক্ষণ গোল গোল চোখে ওপানে তাকিয়ে থাকলেও পরে সে বুঝতে পারে মাইশার কুটনামি।মাইশাতো পৃথা আর ইনায়ার কাছে আসতেই সেই লেভেলের হাঁপাতে থাকে।যেন বড় এক রাক্ষসরাজের কাছ থেকে ছাড় পেলো সে।
ইনায়া মোবাইল চালাতে চালাতে বলে…..
.
”কিরে…? হাপানি রোগ হলো তোর?”
.
” কস কি ইনায়া ! যে জামাইরে লুচুরাঘ বলতে পারে; জামাইয়ের ধারপাশ দিয়ে গেলে ওই জামাই যেকোনো কিছু করতে পারে। বুঝস না?(ইনায়াকে চোখ টিপ দিয়ে বলে পৃথা)
.
”তোদের ভিত্তিহীন কথা হইসে?”(মাইশা)
.
”(সত্যি বললেই তা ভিত্তিহীন হয়ে যায়)”মিনমিন করে বলে ওঠে পৃথা।
.
.
আজ বেশ সুন্দরমতোই নিকাহ সম্পন্ন হয়েছে।সামাজিক অনুষ্ঠান জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।আর বিয়ে শুধু দুটো মানুষের মধ্যেই হয় না ; দুটো পরিবারের মধ্যেও হয়।হাসি-আনন্দ, উচ্ছাস-ভালোবাসা………জীবনের মাধুর্য স্মৃতি হয়ে দাঁড়ায় এই উৎসবগুলো।যথাসম্পন্নভাবে সকল রীতিকার্য সাধন করে কনেকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে সবাই।
নুহাশ ভাইয়ার বউয়ের নাম রেহানা।দেখতে যেমন মিষ্টি………কথাবার্তায়ও রয়েছে সুমিষ্ট ভাব।ঠোঁটে যেন সর্বদাই একধরনের প্রশস্ত হাসি বজায় রাখে সে।নুহাশের মতোই বড্ড শান্তশিষ্ট স্বভাবের।সবাই এককন্ঠে বলেছে , ”ওদের আল্লাহ একে অপরের জন্যই বানিয়েছে।”
.
তাদেরকে বাসরঘরে ঢুকিয়ে রীতিমতো টাকা আদায় করে রুমে বসে উচ্ছাসে টাকা গুণছে মাইশা।বড় ভাইয়ের বাসরে টাকা আদায় করার মতো আলাদাই এক আনন্দ আছে।কিন্ত ওর মনে এক অন্য দুষ্টু পরিকল্পনাই চলছে।আয়াত সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে মাইশাকে এমন দুষ্টু হাসি হাসতে দেখে একটু ভড়কে যায়।
.
আলমারি থেকে টিশার্ট নামিয়ে পড়তে পড়তে বলে……..
”এমন কুটনীতিমার্কা হাসি হাসছো কেন?”
.
”আজ বাসর হবে তাই !”
.
আয়াতের যেন মাথায় আকাশ পড়ার মতো অবস্থা।মাইশার কাছে গিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলে……
”এই মাইশু ! আবারো ওই ঔষধ খেয়ে মাতলামি করছো নাকি?”
.
”মানে?”
.
”তুমিই তো বলছিলে আজ বাসর হবে তাই?এমনিতেও আমার কোনো প্রবলেম নাই।গতকাল না হয় নেশায় তুমি আদর করেছিলে আজ নাহয় সজ্ঞানে করবো? কি বলো? ফুলের ব্যবস্থা করবো?”(চোখ টিপ দিয়ে)
.
.
চলবে।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে