রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩৫+৩৬+৩৭

0
2533

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৫
.
”কার ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আমি তো এখনো কিছুই করিনি।”
আয়াতের একথা শুনেই চোখ বড়বড় করে ফেলে মাইশা। আয়াতের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে সে।বুঝতে পেরেছে যে রাগের বশে কেমন একটা বোকামিমূলক কথা বলে ফেলেছিলো। তাই আয়াতের কলার থেকে নিজের হাতের বাঁধন আলগা করতেই করতেই মাইশা বলে,
.
”আ-আমি স-সেটা বলতে চ-চাইনি।”
.
”তো একথা বললে যে? বাচ্চা কি আসমান থেকে টপকে পড়বে যেদিকে আমি কিছুই করি…….”
.
আয়াতের মুখ চেপে ধরে মাইশা।আয়াতের লাগামহীন কথা শোনার মতো আর বিন্দমাত্র সাহস নেই তার।এই ছেলে যা ভয়ঙ্কর এই অসময়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে দুদন্ডও ভাববে না ও। মাইশা করুন কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
” আরে আমি রাগের বশে ও কথা বলে ফেলেছি আর তুমি কোন কথাকে কোন দিতে নিয়ে যাচ্ছো?”
.
আয়াত তা শুনে দুষ্টু চোখে মাইশার দিকে তাকায়।তারপর মাইশার হাতের তালুতে চুমু দিতে থাকলেই সাথে সাথে আয়াতের ঠোঁট থেকে নিজের হাত সরিয়ে সরে আসতে নিলেই আয়াত মাইশার কোমড় চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।আয়াত অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছে। আর মাইশা এখন বিভ্রান্ত হয়ে আয়াতের চোখের থেকে নিজের চোখ সরিয়ে আনমনে ঠোঁট কামড়াতে থাকে। আয়াত তা দেখে ঠোঁট টা হালকা প্রসারিত করে ফেলে। মাইশার বিভ্রান্ত হয়ে ঠোঁট কাভড়ানোটা বরাবরই পছন্দ আয়াতের।
.
মাইশার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে আয়াত বলে ওঠে……
.
”এখন আমার মুখ আটকিয়ে দিলে চলবে না। আমায় লুতুপুতু ট্যাগ দেয়ার আগে মনে করা উচিত ছিলো তোমার। আমার জানামতে আমি এমন কিছুই করিনি তবে তুমি যখন বলছো তবে তো করতেই হবে…….কিন্ত তা করবো তোমার সাথে।”
.
আয়াতের ফিসফিসানো কথা শুনে কাপাঁকাপি শুরু হয়ে যায় ওর।সে এখন ভাবছে যে কেন তখন আয়াতকে টেনে নিয়ে আসতে গিয়েছিলো।
.
” আমাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছিলো তাই না?”
.
”কই ন-না-না তো?”
.
”হায় হায় ! বলো কি ? তুমিই তো তখন তাকে বললে আমাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছিলো।আমি কিন্ত মেনে নিয়েছি মাইশুপাখি।”
.
মাইশা এবার বুঝে গিয়েছে এই ছেলে ওই কথাগুলোকে কেন্দ্র করে সেকেন্ডে সেকেন্ডে তাকে টিজ করবে।তবে আয়াতের কাছ থেকে সে ছুটে আসছে না। আয়াতের লাগামহীন কথাগুলো মাঝে মাঝে তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও ওর প্রতিটি মুভমেন্ট চোখে আটকে যায় মাইশার।আয়াত আস্তে করে তার কোমড় ছেড়ে দিতেই দূরে সরে যায় মাইশা।আয়াতের ঠোঁটে নেশাময় হাসি ফুটিয়ে দেয়ালে হেলানরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে মাইশা।যতবারই আয়াতের কাছে সে যায় ততবারই মনে অদ্ভুদ অনুভূতির সামনে পড়ে যায় সে । যার বিস্তর ধারনা হয়তো তার কাছে নেই।সে এখান থেকে চলে যেতে নিলেই আয়াত পেছন থেকে বলে ওঠে ,
.
”মাইশু”
,
পেছনে ঘুরে মাইশা। ফ্লাইং কিস দিয়ে মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”ভালোবাসি…..”
মুচকি হাসে মাইশা। একটু জোরে মাইশাও বলে দেয়….
.
”আমিও………”
বলেই সে ঝড়ের গতিতে অদৃশ্য হয়ে যায় এখান থেকে।হয়তো লজ্জার সংমিশ্রনের কারনে ; অথবা হয়তো অনুভূতির সম্মুখ হওয়ায়।
.
.
****************
.
আজ নুহাশ ভাইয়ার গায়ে হলুদ।সকাল থেকেই তোরজোড় চলছিলো। সন্ধ্যায় লোকজনের সমাগমে তা যেন আরও নির্লিপ্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। আজ সকাল থেকেই আয়াতের সাথে দুদন্ড কথা বলতে পারেনি মাইশা। বাড়ির জামাই হওয়ার আগে সেও পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য ; তাই হয়তো কাজের ভারটাও সমানতালে তাকে বহন করতে হচ্ছে।
এইতো কিছুক্ষণ আগে আয়াত কোথা থেকে এসে আলমারি থেকে পাঞ্জাবি নিয়ে চলে গেলো আর মাইশাকেও বললো রেডি হতে। ঘটনাটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যাওয়ায় মাইশার প্রথমে বুঝতে সমস্যা হলেও বর্তমানে এসব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সে। সে জানে আয়াতের সাথে থাকতে হলে আজীবনই এমন কাজকর্ম চলতে থাকবে।
.
একটি কাচা হলুদ রঙের লেহেঙ্গা যার মধ্যে কলাপাতা রঙের নকশা করা ; এই ড্রেসটি পড়ে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে যাচ্ছে সে।কথাটি আসলেই সত্য যে আয়নার সামনে যেকোনো মেয়েরই সুপ্ত ভাবভঙ্গির গুণটি বেরিয়ে আসে।মাইশাও তেমনি একবার নিজেকে চুলছাড়া দেখছে ; তো একপাশে রেখে আবার খোঁপা করে দেখছে। অবশেষে সে তার হাল্কা কোকড়ানো চুলগুলো খোঁপা করে চারিপাশে বেলী ফুল আটকে দেয়।
.
আয়ানাতে নিজেকে দেখে ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে মাইশা। কেন জানি আজ আবার আদ্রাফের কথা মনে হচ্ছে তার।আদ্রাফের খুব ইচ্ছে ছিলো তাদের বিয়ে হলে এভাবে একদিন সাজিয়ে দেবে মাইশাকে।যদিও এখন এগুলো কেবল অতীতের এক পরিত্যাক্ত স্মৃতি।
.
দরজায় টোকা পড়তেই ধ্যান ভাঙ্গে মাইশার।দরজাটা খুলতেই আয়াত ঘরে প্রবেশ করে। যেই না ব্যতিব্যস্ত আয়াত ঘরে প্রবেশ করে মাইশা দেখে অমনি থমকে যায় সে। নিজের ভারসাম্য হারিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে অবাক চোখে দেখতে থাকে মাইশাকে।
.
মাইশা বোকার মতো তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে। আয়াতের চোখে-মুখে বিস্ময়ের হাসি। বুকে হাত দিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।নেশাকাতুর গলায় বলে ওঠে…….
” আমায় পাগল না করলে তোমার কি ভালোলাগে না? এই সাজে কি আমায় পাগল করতে চাও?”
.
আয়াতের কন্ঠ শুনে অজানা এক শিহরণ বয়ে যায় মাইশার মনে। আয়াতের গলা অনেক দুর্বল শোনাচ্ছে। চোখে-মুখে রয়েছে অজানা এক অনুভূতির সংমিশ্রণ।
.
”ট্রাস্ট মি মাইশু……তোমায় এই সাজে মারাত্নক থেকেও মারাত্নক হহহট….(জিভ কেটে)….আমি মিন মারাত্নক লেভেলের সুন্দর লাগছে।”
.
”হয়েছে-হয়েছে-আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড না যে পাম মারতে হবে।”
.
আয়াত ঠোঁট কামড়ে মাইশার দিকে এগিয়ে আসতেই কানের কাছে ঝুঁকে বলে ওঠে….
.
”তা তো জানি। গার্লফ্রেন্ড না বলেই তো মন চাচ্ছে ঠেসে তোমায় ধরে একটা চুমু খাই।আফটার অল এখন তো আমি আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছি। ”
.
দূরে সরে আসে মাইশা।ভ্রু কুচকে তাকায় আয়াতের দিকে। আয়াত মুখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মাইশা আমতা আমতা করে বলে ওঠে…..
.
”আ-আ-আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
.
কথাটা শুনতেই আয়াত কিছু বলে না।আস্তে করে বলে ওঠে…….
.
”এমনিতেও তোমার ভাইয়ের বিয়ের কাজে আমি আধমরা হয়ে গেছি এখন তো তোমার সাথেও ঘুরতে ঘুরতে পুরোমরা হয়ে যবো। যা লাগছে তোমাকে…..কেউ তো হলদে পাখি মনে করে টুপ করে খাঁচায় আটকে নিবে।”
.
.
.
চলবে***
.
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৬
.
হলুদ অনুষ্ঠানের অনন্য আবহাওয়ায় গমগম করছে সারা পরিবেশ।একপাশে সুন্দর গান চলছে তো একপাশে সামাজিক আলাপচারিতা চলছে।এসময় অপরিচিত কেউ থাকলেও তাকে কাছের মানুষের মতোই সাদরে গ্রহণ করে নিতে হয়।ইতিমধ্যে নুহাশ ভাইয়াকে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সারিয়ে নেয়ার কারনে তার অবস্থা বেহাল।এই মাঘ মাসে কোন পাগল ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে এটা ভাবতেই পুরো বিয়ের বাড়ি মাথায় উঠিয়ে দিয়েছে সে।এখন চুপচাপ ভদ্র এক ছেলের মতো স্টেজে বসে আছে সে ; শুধু মাঝে মাঝে হাচি দিচ্ছে ….ভাবা যায়?
.
মাইশা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নুহাশ ভাইয়ার পাশে চুপচাপ বসে পড়ে।ভাই-বোন হলেও অন্যান্য ভাইবোনের মতো খুনসুটি তাদের মধ্যে নেই।তাদের মধ্যে কখনো কি ঝগড়া হয়েছিলো এ নিয়েও মাইশার মনে সন্দেহ জাগে।কেননা জ্ঞান হয়ার পর থেকে সে কখনো তার ভাইয়ের সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনি।
তবে তার ধারনা তাদের সম্পর্কে অন্যরকম এক মায়া-মমতা ছিলো; ভালোবাসার অন্য এক টান ছিলো যা অন্য ভাইবোনদের খুঁনসুটিময় সম্পর্কের তুলনায় অনেক বেশি।
.
কিন্ত এখন নুহাশকে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে তার।এমনিতেও মাঘ মাস ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার মতো সময় না তার ওপর সবাই মিলে এই বেচারাকে এত অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাতে বাধ্য হয়েই সর্দি নিয়ে স্টেজে বসে আছে সে।
.
কোনোমতে হাসি আটকে মাইশা নুহাশের কানে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”খুব ঠান্ডা লাগছে ভাইয়া? কম্বল আনবো?”
.
নুহাশ করুন চোখে মাইশার দিকে তাকায়।আবার একটা হাচি দিয়ে সে বলে ওঠে….
”এটা তুই বলতে পারলি মাইশা? এমনিতেও আম্মু আর খালামণির জ্বালায় এই ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে লাগছে আর এখন তুই মশকরা করছিস?”
.
”আচ্ছা তো তুমিই বলো এখন কি করবো?”
.
”তোর কিছুই করতে হবে না বোন ! যা ঘটার ঘটেই গেসে।তুই ওদিকে গিয়ে আয়াতের সাথে পারলে সামাল দে।খালু তো ওরে কাজ করিয়ে করিয়ে আধমরা বানিয়ে ফেললো।”
.
আয়াতের নাম শুনতেই মুখে বিরক্তিভাব প্রকাশ করে মাইশা।এখন সে কিছুতেই আয়াতের কাছে যাবে না।আয়াতের কাছে গেলেই কখন কোন ভয়ঙ্কর কাজ করে বসবে আল্লাহই জানে !
.
.
এক নীরব পাশে চেয়ার নিয়ে পৃথা আর সামাদের সাথে বসে মাইশা গল্প করে চলছে।কিছুক্ষণ আগেই নুহাশ ভাইকে হলুদ লাগিয়ে এখানে বসলো সে। আয়াত বেচারা একমুহূর্তও বসতে পারছে না।এই ডেকোরেশনের দিকটা সামাল দিচ্ছে তো আবার এদিকে সবার সাথে আলাপচারিতা চালাচ্ছে।
মাইশাও ওকে এভাবে ব্যস্ত দেখে একটু মায়া লাগলেও পরে ভাবে….আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।মাইশা নিশ্চিত যে আয়াত একটু ফুরসত পেলেই মাইশাকে আবার জ্বালাতে এসে পড়বে।
.
কথাটা ভাবতেই দেরি আয়াতের মাইশার পাশে বসতে এক সেকেন্ডও দেরি হলো না।আয়াত মাইশার পাশের চেয়ারটিতে হেলান দিয়ে বসে একনাগাড়ে দেড় লিটার বোতলের পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।আয়াতকে বসতে দেখেই পৃথা আর সামাদ আস্তে করে কেটে পড়ে।আয়াত পানি খেয়ে বিক্ষিপ্ত চোখে তাকায় মাইশার দিকে।মুখে রয়েছে ক্লান্তির ছাপ।হাল্কা চাপ দাড়িতে হলুদ পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় বেশ চমৎকার লাগছে আয়াতকে।
আয়াতের দৃষ্টি উপেক্ষা করার জন্য মাইশা অন্যদিকে তাকাতেই আয়াত বলে ওঠে……..
.
”তোমার ভাই বিনামজুরের হাওলাদার পেয়েছে।কই ভাবছিলাম নিজের বিয়েতে ধুমধাম করে আনন্দ করবো….বিয়ের অনুষ্ঠান তো হলোইনা ! উল্টো মানুষের বিয়েতে হাওলাদারের কাজ করতে হয়েছে।”
.
আয়াতের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় মাইশা।আয়াত ভ্রু কুচকে তাকাতেই মাইশা হাসি দমিয়ে বলে
”সরি……”
আবারও মিনমিনিয়ে বলে ওঠে;” যে যেই কাজের যোগ্য তারে সেই কাজই করতে দেয়া হয়েছে।”
.
”কিছু বললা?”
.
‘হুম…না ! কিছুনা !”
.
আয়াতকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কিছু লোকজন ডাকতেই মুখে বিরক্তিভাব প্রকাশ করে আয়াত।দুই মিনিটও হয়নি আবারও ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে তারা। ধিক্কার গলায় সে বলে ওঠে,
”এই ব্যাটাগুলো একমিনিটও শান্তিতে বউয়ের সাথে কথা বলতে দিবো না।”😫
,
,
হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষ।আত্নীয়-স্বজন অনেকে যাওয়া শুরু করেছে।গমগম করা হলুদের মূল কেন্দ্রটিতে চেয়ারগুলো ভাজ করে একপাশে গুছিয়ে রাখছে ডেকোরেটররা।মাইশাও ক্লান্তিমুখে ওর আম্মুর কাধে মাথা দিয়ে চোখ বুজে আছে। আবারো মাথাব্যাথা করছে তার।ওর খালামণি এই বিষয়টা খেয়াল করতেই সেদিন যেই ট্যাবলেটটা খেতে দিয়েছিলো সেই ট্যাবলেটটা আবার খেতে দেয় তাকে।
সেটা খাওয়ার পর মাইশা ওর বন্ধুদের কাছে যায় সাহায্য করার জন্য।প্রায় ১০ মিনিট ওর চোখের সামনে সবকিছু ঘোলাটে হতে থাকে।এমন মনে হচ্ছে যে সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় দেখছে সে।
.
ইনায়া অবাক কন্ঠে বলে ওঠে….
.
”কি হয়েছে তোর?”
.
মাইশার কেন যেন মনে হচ্ছে সে নিজের মধ্যে নেই।উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করতেই আনান বুঝে গিয়েছে আর কোনো কাহিনী নয় ! এই মেয়ের নেশা চড়েছে। আয়াত ডেকোরেটরদের কাজ ভালোমতো বুঝিয়ে এদিকে আসতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।মাইশা আয়াতকে দেখতেই তার বুকে মিশে গিয়ে আবোল-তাবোল কথা বলতে থাকে।
.
”কি হয়েছে ওর?”(সন্দিহান গলায় বলে আয়াত)
.
”বুঝলাম না ভাইয়া…..কিছু একটা খেয়ে নেশা হয়ে গেছে ওর।”(সামাদ)
.
”কিন্ত এখানে তো আ্যলকোহল জাতীয় কোনো ড্রিংক ছিলো না…….মাইশা!(গালে হাত দিয়ে)কি খেয়েছো তুমি?”
.
”মাথাব্যাথা করছিলো টাই ট্যাবলেট খেয়েছি।”(নেশাজড়ানো গলায় বলে ওঠে)
.
আয়াত বুঝে গিয়েছে মাইশা আ্যলকোহলযুক্ত কোনো ট্যাবলেট খেয়েছে আর অনেকের তা অল্প পরিমাণ খেলেও নেশা হয়ে যায় যেমনটা মাইশার হয়েছে।আয়াত আর কিছু না ভেবে কোলে তুলেনেয় মাইশাকে।মাইশা এবার চিল্লিয়ে বলে ওঠে…..
.
”এই লুচুবাঘ ! আমায় ছেড়ে দাও।আমি এখন আকাশে উড়বো।”
.
এই কথা বলে মাইশা আয়াতের বুকেপিঠে কিলঘুষি দিতে থাকলেই হাসিতে মেতে ওঠে মাইশার দস্যু বন্ধুগুলো।আয়াত এবার ভাবতে থাকে আজ বোধহয় মাইশা সারারাতই এভাবে জ্বালিয়ে মারবে আয়াতকে।
(বেচারা আয়াত!)
.
.
.
চলবে।।।

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৭
.
ভারক্রান্ত অবস্থায় সোফায় বসে মাইশার উদ্ভট আচরনগুলো দেখে যাচ্ছে আয়াত।মাইশা আনমনে আয়নার সামনে গুণগুণ করে গান গাচ্ছে তো কিসব ভাবভঙ্গি করছে যেগুলো সজ্ঞানে থাকলে মাইশা কল্পনাও করতে পারতো না।এমনিতেও নুহাশের হলুদের অনুষ্ঠানের কাজ করে আয়াত শেষ এবার মাইশার পাগলামি সামলানোর কথা ভেবেই কপাল দিয়ে ঘাম ছুটছে তার।মাইশা ড্রসিংটেবিল থেকে হলুদের বাটিটা নিয়ে আয়াতের কাছে আসে।তারপর ঝাপসা গলায় বলে ওঠে….
”আমায় হলুদ লাগিয়ে দাও।”
.
আয়াত চোখজোড়া ছোট করে ফেলে মাইশার এ কথা শুনে।
”কেন?”
.
”আমরা দুজন মিলে এখন হলুদের অনুষ্ঠান করবো।”
.
”কিভাবে?”
.
”তুমি আমায় হলুদ লাগাবে আর আমি তোমায় হলুদ দেবো ব্যাস !”
মাইশা একথাগুলো কোনোরকম বলে আয়াতের দিকে বাটিটা এগিয়ে দেয়।আয়াত এবার হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না।মাইশা আবারো ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে….
”কি হলো হলুদ লাগিয়ে দাও আমাকে !”
.
আয়াত হলুদের বাটি থেকে হালকা হলুদ নিয়ে লাগিয়ে দেয় মাইশার গালে।মাইশা এতে মুখে একটি মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে তুলে।
”এবার আমি দিবো।”
এ বলেই মাইশা আয়াতের কোলে বসে তার ডান গালটি আয়াতের বাম গালে মিশিয়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়।আয়াতের মাথার ফিউজ যেনো এবার উড়ে গিয়েছে মাইশার এহেন কান্ডে।মাইশার নরম গালের স্পর্শ হঠাৎ এভাবে নিজের গালে অনুভব করতেই থমকে গিয়েছে সে।মাইশা এবার হাল্কা সরে এসে আয়াতের মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যায়।দুজনের মুখের নিঃশ্বাস ক্রমাগত একে অপরের কাছে বারি খাচ্ছে।আয়াত এবার মাইশাকে সরিয়ে বারান্দার কাছে দাঁড়ায়।ক্রমাগত নিঃশ্বাস ফেলছে সে।এমনিতেও মাইশাকে দেখলে ওর মাথা ঠিক থাকে না এইবার তো সত্যি সত্যি পাগল বানিয়ে ছাড়বে তাকে।
.
মাইশা কটাক্ষ চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে…
”এই ব্যাটা ! দূরে সরে গেলি কেনো? এমনি তো সারাদিন ফেবিকলের মতো আমার সাথে চিপকে থাকিস।আর এখন আমি তোর কাছে আসছি আর তুই দূরে সরে গেলি……..খালামণি !😭”
.
মাইশার কথা শুনে ওর হাত অটোমেটিক্যালি কপালে চলে যায়।কি ওষুধ খেয়েছিলো যাতে এত হাইডোজের আ্যলকোহল ছিলো? আর এই খেয়ে কি থেকে কি বলে যাচ্ছে তার কোনো হুশঁ নেই !মাইশা এবার রাগ করে বলে,
.
”তুমি অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছো।তুমি শুধু আমায় বিরক্ত করো।একটুও ভালোবাসো না।আমিও এখন আদ্রাফের কাছে চলে যাবো।আর ফিরে আসব না !”
.
আয়াত এবার মাইশার কাছে গিয়ে বুকে মিশিয়ে নেয় তাকে।মাইশা নেশার ঘোরে কথাটা বললেও কথাটি ওর একেবারে বুকে গিয়ে লাগে।মাইশা চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো আয়াতের বুকে মিশে আছে।তার কাছে মনে হচ্ছে আদ্রাফের স্মৃতি এককোণে আবদ্ধ করে সামনে এগোনোর জন্য এর থেকে নিরাপদ স্থান আর নেই।আয়াত স্তব্ধ কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
”কে বলেছে তোমায় ভালোবাসি না? অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।হয়তো আমার ভালোবাসা আর আদ্রাফের ভালোবাসা এক না তাই ভুলেও ওর সাথে আমার তুলনা করবে না।ওর জায়গা আমি চাই না।আমি আমার জায়গা চাই।”
.
”তবে কি তুমিও চলে যাবে আদ্রাফের মতো?”
মলিন হাসে আয়াত। মাইশার মাতালকন্ঠ শুনে অদ্ভুদ এক অনুভূতি হচ্ছে ওর।
”আল্লাহ না চাইলে কখনোই যাবো না।এখন এসব কথা বাদ ! চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।নেশার ঘোরে কি আবোল-তাবোল বলছো একটুও হুঁশ নেই তোমার।পরে সকালে উঠে তুমি আমায় কথা শুনাবে।”
.
মাইশাকে খাটে শুয়িয়ে দিলে সাথে সাথেই মাইশা আয়াতের পাঞ্জাবির কলার চেপে তাকে পাশে শুয়িয়ে বুকে মাথা রাখে।আয়াত নীরবে তার কাজ দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে।এই মেয়ে এখন উল্টাপাল্টা কাজ করে আয়াতকে পাগল বানাবে আর পরে আয়াতকে দোষারোপ করে এটা ভাবতেই আয়াত তাকে সরিয়ে দিতে নিলেই মাইশা নিজের শরীরের সম্পূর্ণ ভর আয়াতের উপর ছেড়ে তার বুকে মুখ গুঁজে দেয়।ব্যাস ! আয়াতের সম্পূর্ণ বডি এখন মাইশার আবদ্ধে।মাইশা চোখ বুজে বলে ওঠে……
.
”আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে একেবারে নারী নির্যাতন মামালা করবো।বলবো যে এই ধলা কুদ্দুস (আয়াতকে মাইশা ধলা কুদ্দুস বলসে দেখে আবার রাগ করো না পাঠকবাসী😅)আমারে খালি ধুমধাম কইরা মারে।”
.
মাইশার কথা শুনে আয়াতের এবার শ্বাস বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।এতোদিনের জমা সব শোধগুলো এবার মনেহয় একসাথে তুলবে মাইশা।এবার যে সে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাই ভেবে কূল পাচ্ছে না ।মাইশা এবার মুখ তুলে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে….
.
”ওই বুইড়া মোড়লটা আমাদের বিয়ে দিয়ে ভালোই করেছে।প্রথমে অনেক কান্না পেলেও এবার মন চাচ্ছে খুশির ঠেলায় ওই বুইড়ারে একটা পাপ্পি দিয়ে আসি।”
.
এবার আয়াত আর হাসি আটকাতে পারছে না।মাইশার এক একটা কথা শুনতেই বিদ্যুতের ঝটকা খাচ্ছে সে।কোনোমতে সে করুন গলায় বলে ওঠে,
”আর না মাইশু প্লিজ এবার ঘুমিয়ে পড়ো।”
.
এটা বলেই থেমে যায় আয়াত।হঠাৎ পরিবেশে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। আয়াতের গলায় মুখ ডুবিয়ে মাইশা এবার বলে ওঠে…..
.
”আয়াত?”
.
”হুম?”
.
”আমায় একটু ভালোবাসবে?”
.
চুপ হয়ে গিয়েছে আয়াত।মাইশার মিহি কন্ঠ উপেক্ষা করার মতো শক্তি তার এখন নেই।মাইশার চুলে নিজের হাত বুলিয়ে বলে ওঠে……
”এখন না মাইশা ! তুমি এখন সজ্ঞানে নেই।সজ্ঞানে থাকলে কিছুতেই একথাটা বলতে না তুমি।”
.
”প্লিজ আয়াত! আমার না কেন যেন দমবন্ধ লাগছে।আমি এখন কেমন আছি জানিনা কিন্ত আমার এখন তোমাকে চাই আয়াত।খুব করে চাই।আদ্রাফের স্মৃতি উপেক্ষা করে সামনে এগোতে চাই।আমার সঙ্গী হবে না?”
.
আয়াতের দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে থাকে সে।কেউ বলবেই না এতক্ষণ এই মেয়ে আয়াতকে জ্বালিয়ে মারছিলো।কেননা তার চোখে এখন আকুল ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্খা আছে।মাইশা এবার এগিয়ে আসতে থাকে আয়াতের ঠোঁটযুগলের দিকে।আয়াতের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।এই মাইশাকে এখন কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারবে না সে।ধীরে ধীরে সে তার প্রয়সীকে নিয়ে হারিয়ে যায় এক অজানা রাজত্বে।
.
❤❤❤❤❤❤❤❤❤
.
চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে