রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৯

0
2619

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৯
.
আয়াতের চুমুথেরাপির ভয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে বদ্ধ পাগল মনে হচ্ছে মাইশার। আয়াত সরাসরি বলে দিয়েছে ,”চোখ একটু এদিক সেদিক হবে তার প্রভাব তোমার গালে আর ঠোঁটে পড়বে ; সেটা চুমুথেরাপিও হতে পারে আবার থাপ্পড় থেরাপিও হতে পারে। ”মাইশাতো বুঝেই নিয়েছে এই ছেলে যেই ছ্যাচড়া ওরে নির্ঘাত চুমুথেরাপিতো দিবেই আবার ওর দুই গাল লাল করতেও দুইবার ভাবে না। অনার্সের ছাত্রী এগুলোর ভয়ে গদগদ করে পড়ছে । ভাবা যায় ?
আবার পড়া শেষ করার পর আয়াত মাইশাকে ফ্লাইং কিস দিয়ে বলে…
”Goodbye babe….আমি আজকে পুরোনো ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা দিতে যাবো। খবরদার উড়াউড়ি করার চিন্তা মাথায় আনবা না। আমার একটা চোখ কিন্ত তোমার উপরে….”
.
মাইশা আয়াতের এই নির্মম অত্যাচারগুলোর জন্য শুধু পারছে না ফ্লোরে গলা ছেড়ে ভ্যা ভ্যা করে কাদতে। ওর আব্বু আম্মুকেও কিছু বলছে না এই খবিশটার ব্যাপারে। কেননা তাদের ভাষ্যমতে আয়াত হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভদ্র বাচ্চা। মাইশা মনে মনে আয়াতকে গালাগাল করে যাচ্ছে।
.
” আরহাম আয়াত আমার লিচুপাতার লাইফটা তু্মি কচুপাতা বানাইয়া ফেলসো।কি মনে করো এমনেই তুমি আমার লাইফটারে কচুপাতা বানাবা। এক একটার রিভেঞ্জ আমি নেবোই নেবো !”
.
.
আজ বড় খালামণিদের বাসায় যাচ্ছে মাইশা। বড় খালামণিদের বাসায় যাওয়া মানেই আয়াতের ইউজলেস কথা শোনা এন্ড ফ্ল্যাটিং এর খপ্পরে পড়া। আয়াতের প্রত্যেকটা বিষয়কে সে টাইম পাস আর ফ্লাটিং ছাড়া অন্যকিছুই মনে করে না। মনে করবেই বা কেন ? আয়াত কখনোই এমন কিছু করেনি যাতে মাইশার মনে হয় এটা মাইশার প্রতি ভালোবাসার জন্য করেছে। ওদিকে মন দেয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তার। গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে বনশ্রী এর দিকে।
বড় খালামণিদের এই বাসাটাতে প্রথম এলো মাইশা । অ্যামেরিকা থেকে আসার পরপরই এই বাড়িটা কিনেছে তারা। প্রথমেই চোখ পড়ে সাজানো গুছানো ছোট্ট এই বাংলোবাড়িটির দিকে । তার ডানপাশে ছোট একটি সবজির বাগান। বাড়িটাতে কেমন যেন একটা ছিমছাম ভাব। তবে সূর্যের আলোটা তীর্যকভাবে ড্রইংরুম আর ডাইনিংরুমে পড়ছে বলে এই ছিমছামভাবটাও কেমন যেন সজীব লাগছে।
..
ড্রইংরুমে বসেই খালামণি আর আরিয়া আপুর সাথে কথপোকথন চালিয়ে যাচ্ছে সবাই। মাইশার খালুজান ব্যাবসায়িক কিছু কাজের জন্য ভিয়েতনাম গিয়েছে। মাইশা কোনো কথাই বলছে না শুধু চুপচাপ তাদের কথপোকথন শুনে যাচ্ছে।
.
”এই বুঝি ভাবির ছোট মেয়ে?”
.
মাইশা সেই আগন্তুকটির দিকে তাকায়। মধ্যবয়সী মহিলাটা দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইনি বোধহয় খালামণিদের প্রতিবেশী।
”মাশাল্লাহ ভাবি , আপনার মেয়ে তো দেখতে অনেক সুন্দর। কেম মিষ্টি মুখ , ভাসা ভাসা চোখ ,শুধু আপনার ছেলের তুলনায় গায়ের রংটা একটু চাপা ”
মাইশা তার থেকে চোখ ফিরিয়ে আবার বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন কথা শুনার অনেক experience আছে মাইশার।
.
.
” গায়ের রং দিয়ে কিছুই হয় না আণ্টি ; যার মন সুন্দর সেই সুন্দর।এই যে আমার আরিয়া আপুকেই দেখো। সেও তো শ্যামলা। তাই বলে কি তার জন্য যোগ্য পাত্র ঠিক করেছি না? এমন একজন যে তাকে মন দিয়ে আগলে রাখবে?”
.
সেই মহিলাটি আর কিছুই বলে না। আয়াত সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে একথা বলে ডাইনিং টেবিল থেকে এক বোতল পানি নিয়ে তাদের কাছে গিয়ে দাড়ায়।
,
” খালামণি , নুহাশ ভাইয়া আজ কিন্ত এখানে থাকবা। এ নিয়ে please কোনো বাহানা দেখাবা না , বুঝছো?”(আয়াত)
.
” বলে কি ছেলেটা ? না বাবা ; তোমার খালুর কাজ আছে….নুহাশের অফিস আছে…..এটা সম্ভব না।অন্য একদিন অবশ্যই থাকবো।”
আয়াত মুচকি হেসে বলে ওঠে…
” তা দেখা যাবে খালামণি ! ”
.
মাইশা গোল গোল চোখ করে আয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে । তার ব্যবহার দেখে এখন মনে হচ্ছে পুরাই ভদ্রের গুদাম নিয়া বসে আছে । আয়াত তারপর বলে উঠে,
.
” আম্মু আমি এখন রুমে যাচ্ছি । প্লিজ আমাকে ডাকবা না ।”
মাইশা চুপচাপ ঘরের এ দৃশ্যগুলো উপভোগ করে যাচ্ছে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
একপা এগোচ্ছি তো দু’পা পিছাচ্ছি আমি। মিহি আপুর কাছে এসেছিলাম। আদ্রাফের বড় আপু সে। এবার আদ্রাফকে দেখার উদ্দেশ্য না ; আমার কাজের জন্যই এসেছি। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে দরজার বেল বাজাই। আমাকে দোরগোড়ায় দেখে একটু অবাক হয় মিহি আপু।
.
” মাইশা …ভিতরে আসো ! ”
.
আদ্রাফ ভাইদের বাড়িটা ছোট হলেও বেশ পরিপাটি। মাত্র ২টা বেডরুম , ডাইনিংরুম-ড্রইংরুম একসাথে আর কিচেন রুম। ডাইনিং টেবিলে আমাকে আপু বসতে দেয়। আপু চা দিয়ে আমাকে বলে….
” তো বলো….কী সাহায্য করতে পারি তোমার ?”
.
”আপু আমাকে পড়াতে পারবেন? আমি তো science এর student…..physics এ একটু প্রবলেম হচ্ছে আমার। আপনি তো Physics student তাই…..”
.
আপু একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
” ও এই ব্যাপার ? আচ্ছা ঠিকাছে। আমি দেখি time manage করে তোমাকে পড়াবো নে।”
.
আমি একটু আমতা আমতা করে বলি,
”আদ্রাফ ভাই কোথায় আপু ?”
,
”আদ্রাফ তো ভার্সিটিতে ক্লাস করতে গেছে। সামনে ওর exam তো …..প্রচুর চাপ। এখন বাদ দাও তো এসব…..একটা জিনিস দেখাবো তোমায়….”

”কি আপু ?”
.
আমি আপুর পিছে পিছে ছাদে যাই। মনে আমার অনেক কৌতুহল যে আপু আমাকে কি দেখাতে চাচ্ছে। ছাদের দরজা খুলে পশ্চিম দিকের পাশটিতে গিয়ে আমি অবাক। নানারকম সবজি গাছ , ফুলের গাছের বাহার। এপাশটি আমাদের ছাদ থেকে দেখা যায় না। যেই করেছে বোঝা যাচ্ছে বেশ সৌখিন মানুষ সে। আমি অবাক কণ্ঠে বলে উঠি..
” আপু এত সুন্দর করে কে বুনেছে এগুলো?”
.
”আদ্রাফ ! ”
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
মুচকি হাসে মাইশা। আদ্রাফের নামটা মনে পড়তেই এক ভালোলাগা কাজ করে মনে।২ বছর প্রায় হয়ে উঠেছে কোনো যোগাযোগ নেই মিহির আপুর সাথে। খালামণিদের সবজি বাগানটি দেখে হঠাৎ এগুলো মনে পড়ে যায় ওর। তারপর আস্তে আস্তে খালামণিদের বাসাটা ঘুরতে থাকে সে।
.
একটা বেডরুমের দরজা খুলতেই সে অবাক। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনোই পরেনি সে। আয়াতের রুম ছিলো এটা। সবেমাত্র আয়াত ওয়াশরুম থেকে বের হলো তাও কোয়াটার প্যান্ট পড়ে। শাওয়ার নিয়েছিলো সে। আয়াতও মাইশাকে এভাবে আশা করেনি। মাইশা একটা চিৎকার দিতে যাবে আয়াত তার হাত টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে এসে দরজা লাগিয়ে মুখ চেপে ধরে।
মাইশা শুধু উম্ উম্ করে যাচ্ছে। আয়াত ভ্রু কুচকে আয়াত বলতে থাকে,
.
”আমাকে তুমি বলো যে কারও রুমে permission ছাড়া ঢুকতে না আর তুমি আমার রুমে permission ছাড়া ঢুকলা? নাকি আমাকে শার্টলেস দেখতে চেয়েছিলে তুমি?”
.এটা বলেই মুখ ছেড়ে দেয় মাইশার। মাইশার আয়াতের শার্টলেস বডি দেখে প্রচুর অকওয়ার্ড লাগছে। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে সে বলে….
.
” আমার তো আর কাজ নেই না? তোমার বডি দেখার জন্য আমি এখানে আসি নাই। দরজা লক করো নাই কেন? নিজে তো একটা লুচুবাঘ আবার আমারে বলতেছে।”
আমতা আমতা করে একথা বলে মাইশা। আয়াতের দিকে একবারও তাকায়নি সে। কেননা আয়াতের শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে যা খুবই attractive লাগছে ওর কাছে। আয়াত তা বুঝে বাকা হেসে বলে…..
.
”আমায় কিস করতে মন চাচ্ছে , মাইশুপাখি ?”
.
.
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে