রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৪

0
2916

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
#পর্ব:৪
” কি হয়েছে জান…..এত প্যারা নিচ্ছো কেনো?”
.
মাইশা এবার চোখ গরম করে ইশানের দিকে তাকায়।
” তোমারে না আমি বলছি এভাবে জান জান বইল্লা ডাকবা না। আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের জান বাঁচাতে চাইলে এখান থেকে কেটে পড়ো। আমি আছি আমার প্যারা নিয়া আর এই পোলা জান জান কইরা আমার মাথা শেষ করতেছে ।”
.
ইশান তো মহাবিরক্ত। ২ মাস হলো তাদের রিলেশনের বাট মাইশা ওকে কোনো পাত্তাই দেয় না।
.
ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে ইশানের সাথে মিট করতে এসেছে মাইশা।এমনিতেও আয়াতের প্যারায় ওর মাথা আউট অফ কন্টো্রলে আছে আবার ইশান ওর মাথা একেবারেই গরম করে দিলো।
কিছুক্ষণ পর মাইশা ওকে সরি বলতে যাবে কোথেকে ঝড়ের গতিতে আয়াত ওদের সামনে এসে পড়লো। আয়াতের চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ দেখতে পারছে মাইশা। মাইশা মনে মনে ভাবছে….
” এরে…..যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এবার কি হবে?”
.
আয়াত ইশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
”Hello man, তুমি তো দেখছি বেশ হ্যান্ডসাম বাট কি হিসেব করে এই lady ghost কে নিজের গার্লফ্রেন্ড বানালা ? দেখলা না এখনই তোমার তামা তামা বানানোর প্ল্যান এ আছে এই ভূতনি টা। একজন ফ্রেন্ড হিসেবে তোমাকে advice দিচ্ছি….নিজের ভালো চাও তো এই lady ghost এর কাছ থেকে কেটে পড়ো।”
বেচারা ইশানতো পড়েছে মহাফ্যাসাদে। এদিকে আয়াতের কথাও ঠিক আবার মাইশা যে তার কি হাল করবে তা ভেবেই কাঁপাকাপি করছে সে।কিছু একটা ভেবে সে বলে উঠে….
”sorry মাইশা ,আমি অনেক ভেবেই বলছি এই রিলেশন কিছুতেই আমার continue করা সম্ভব না।”
একথা বলেই চলে যায় ইশান।মাইশা এবার আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াততো হো হো করে হাসছে।
” কি করলা তুমি ?”
.
”দেখলা না একটা মহৎ কাজ করলাম। প্রবাদটা আসলেই সত্যি ;কোনো মহৎ কাজ করলে মনটা অনেক ভালো হয়ে যায় !”
বেশ কিছুক্ষণ পর আয়াত স্বাভাবিক হয়। তারপর মাইশার কাছে দাঁড়িয়ে বলে….
”ভালোবাসলে সত্যি কাউকে ভালোবাসো …এইরকম রিলেশন করে কি লাভ? তাই বলছি এসব useless জিনিসে টাইম ওয়েস্ট করো না।আর এতই যখন এসবের শখ ডাইরেক্ট পতিতালয়ে যেয়ো কেমন ?”
.
মাইশার চোখ এবার জলে টলমল করছে। কি স্বাভাবিকভাবেই আয়াত তার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলে গেলো।দূরে মাইশার ফ্রেন্ডরা সব কিছুই দেখছিলো। আয়াত যে মাইশাকে এতটা ঘৃণা করে তা কেউই এতটা ভাবতে পারেনি ।
ব্যাগটি নিয়ে মাইশা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায়। আয়াতকে আর ওর অপমানকে দুদণ্ড দেখতে ইচ্ছে করছে না মাইশার। রাস্তায় হাটছে আর বারবার চোখ মুছার ব্যর্থ প্রচেস্টা চালাচ্ছে ।বেশ কিছুদূর এগিয়েই তার কানে ভেসে এলো গিটারের সুর। সম্ভবত রাস্তার চায়ের দোকানে কিছু ছেলেমেয়ে আড্ডা দিচ্ছে। রাস্তার কাছে যে পার্কটি আছে সেখানে বসে চোখ বন্ধ করলো সে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
”এখনও ঘুমাওনি তুমি?”
.
আদ্রাফের মিহি কণ্ঠ শুনে আমার দম যায় যায় অবস্থা। আমি একটু অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলি,
.
”ইয়ে মানে…..আমার আসলে ঘুম আসছিলো না তাই বারান্দায় বসে ছিলাম। আমি আসলে বুঝতে পারিনি যে আপনি এখানে গান গাচ্ছিলেন।Sorry….”
.
আদ্রাফ আলতো হাসে। পাশের বারান্দায় থাকা সত্বেও রাস্তার লাইটের আলোয় আদ্রাফকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি। ছেলেটাকে যেভাবেই দেখি সেভাবেই অনেক ভালোলাগছে আমার।
.
গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে সে হঠাৎ আমার দিকে তাকায়। আমি এতে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।তার চাহিনীতে আমার মন চাচ্ছে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে। কিন্ত তা তো আর সম্ভব না !
.
” বয়সে তুমি আমার ছোট তাই তুমি করেই বলছি…..জানিনা কেন আমার মনে হয় তোমার আর আমার মধ্যে অনেক মিল।”
.
তার প্রতিটা কথা আমার বড্ড আজব লাগছে।
” মাত্র দু’বার দেখা করেই এত মিল পেয়ে গেলেন।কই আমি তো কোনো মিল পেলাম না”
.
আদ্রাফ এবার হো হো করে হেসে উঠে।আমি বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছি তার দিকে। এমন কি বললাম যে এত হাসছে সে।
.
” আস্তে আস্তে বুঝে যাবে । আজ আমাদের প্রথম দেখা হলো । দিন তো সামনে পড়েই আছে। তখন নাহয় মিল খুঁজে নিও।”
.
তার কথা শুনে আমি বিনিময়ে কিছুই বলি না। কিছু বলার মতো ভাষা আপাতত আমার কাছে নেই। মনে বিচরণ করছে নানা অনুভূতি যার মর্ম হয়তো আমি জানি না।আমি একটু আগ বাড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি ,
” ভাইয়া আমি না আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।”
.
ভাইয়া নাম শুনলেই আদ্রাফ মুখ কুঁচকে ফেলে।তারপর অনুনয় করে বলে,
”প্লিজ আমায় ভাইয়া বলোনা , আপু এত সুন্দর নাম রেখেছে আমার ”আদ্রাফ” এই নামেই ডাকো বা আদ্রাফ ভাই ডাকো।”
.
” আচ্ছা ,আদ্রাফ ভাই ”(মুচকি হেসে)
.
আদ্রাফ একটু থেমে বলে,
”আমি আদ্রাফ এহসান। এক ভাই এক বোন । জন্ম কিশোরগঞ্জ ।১ বছর প্রায় হলে এলো ঢাকায় এসেছি পড়াশোনা করতে। এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।আর কিছু জানতে চাও….”
.
আমি কিঞ্চিত হেসে বলি,
” না ভাই, আপাদত এটুকুই থাক।”
রাত পাল্লাক্রমে গভীর হচ্ছে। আমার চোখে-মুখে এখন ঘুম বিচরণ করছে। কিন্ত আমার কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছে না।হঠাৎ আদ্রাফ বলে উঠলো……
” ভালোবাসি এই নিঃসঙ্গতার মাঝে নিজেকে হারাতে
ভালোবাসি এই নিশিরাতের জোছনাকে…
জানি না কেউ থাকবে কি-না আশেপাশে
তব হারাবো নিজের হৃদয়ের ভালোবাসাতে…….”
.
আমি যেনো তার ছন্দের ভীড়ে নিজের অনুভূতিগুলোকে মিলিয়ে ফেলেছি। আদ্রাফ আবার বলে,
”আমার সম্পর্কে তো সবই জেনে নিলা;তবে তোমার সম্পর্কে কিছু আমার না জানলেও চলবে। তবুও একটা জিনিস জানতে চাই…..নাম কি তোমার?”
.
আমি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলে উঠি…”মাইশা জামান নূর”
.
.
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে