রোমান্টিক কালো বউ পর্ব-০৩

0
2519

#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ৩…

√-আমিঃ আরে তরীর কথা বলছি। গতকাল থেকে এতো এতো কথা শুনিয়েছিলাম যে আজই আমাদের বাসা থেকে পালিয়েছে, হা হা। এতো তাড়াতাড়ি এতো বড় কাজে সফল হবো বুঝতে পারি নাই রে।

মায়াঃ ভাইয়া তুমি এতো খারাপ। শেষ পর্যন্ত ভাইয়া তুমি ভাবিকে বাপের বাড়ি পাঠাতে এতো সয়তানি বুদ্ধি করছিলে। কত বড় সয়তান তুমি।

আমিঃ তুই ছোট মানুষ, ছোট মানুষের মত থাক। আগে বল, কখন গিয়েছে সে..?

মায়াঃ ঘোড়ার ডিম গিয়েছে।

আমিঃ তার মানে যায় না..??

মায়াঃ আরে না। ভাবি রান্না ঘরে আমার জন্য নুডলস রান্না করে দিচ্ছে। তুমি খাবে নুডলস? দিবো না, হা হা…

আমিঃ ওই পাজি মেয়ে, নতুন বউকে দিয়ে কেউ নুডলস রান্না করাই..?

মায়াঃ আমি কি বলছি নাকি রান্না করে দিতে। আমি শুধু বললাম, ভাবি এখন একটু নুডলস খেতে পেলে দারুণ হতো। আর ওমনি ভাবি বললো, আমি রান্না করে দিচ্ছি। তুমি বলো ভাইয়া, তাকে মুখের উপর মানা করে দিতে পারি নাকি, তাহলে তো বেয়াদবী হয়ে যাবে, হা হা…

আমিঃ খুব চালাক হয়েছেন তো আপনি। কুড়ে নিজে রান্না করতে আলসেমি লাগে তাই না। যা বের হ আমার রুম থেকে।

~ মায়া মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো। নুডলসের কথা শোনে আমার তো খুব লোভ লাগছে ~

আমিঃ ওই আম্মু, আম্মু…

~ কিছুক্ষণ পর আম্মু এলো ~

আম্মুঃ কি হয়েছে?

আমিঃ আমি নুডলস খাবো, যাও নুডলস রান্না করে দেও।

আম্মুঃ অপেক্ষা কর, বউমা রান্না করতেছে নুডলস। রান্না শেষ হলে তুরীকে বলবো তোকে দিয়ে যেতে।

আমিঃ তাকে চিনি না, জানি না, তার হাতের নুডলস খাবো আমি, কখনো না। তুমি যাও আমায় রান্না করে দেও…

আম্মুঃ ওরে আমার নবাব পুত্র। খেলে খাবি, না খেলে খাবি না। তাতে আমার কি৷ আমি পারবো না রান্না করে দিতে, পারলে নিজে করে খা…

~ বলে আম্মু রাগী মুখ নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। এখন তো আম ছালা সব গেলো। ৩০ মিনিট হয়ে গেলো এখনো কেউ নুডলস এনে দিলো না। তাহলে মনে হয় আমার কপালে আর নুডলস জুটলো না।

হঠাৎ তরী রুমে এলো, হাতে নুডলস ভরতি প্লেট ~

তরীঃ আপনি নুডলস খাবেন ভাইয়া?

আমিঃ কিসের ভাইয়া? বলছি না শুভ ভাইয়া বলতে…(ধমক দিয়ে)

তরীঃ শুভ ভাইয়া আপনি নুডলস খাবেন?

আমিঃ কে রান্না করছে?

তরীঃ আমি রান্না করছি শুভ ভাইয়া।

আমিঃ তাহলে তো আর খাওয়ার যোগ্য হয় নাই মনে হয়। অখাদ্য হয়েছে…

তরীঃ আমার মা বলে, আমার হাতের রান্না নাকি অনেক ভালো হয়।

আমিঃ হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না। কি ভালো হয় সেটা তো দেখতে পারছি, লাল রং হয়েছে নুডলস, আবার বলে ভালো হয়…

~ বলছি আর তার হাত থেকে প্লেট নিচ্ছি। বাপ রে, এই বার আর রিক্স নেওয়া যাবে না, যদি নুডলস নিয়ে চলে যায় ফেরত । এর চেয়ে প্লেট আগে নিজের কাছে এনে রাখা ভালো ~

তরীঃ লাল তো হয়েছে, সামান্য শুকনো মরিচের গুঁড়ো ও সস দেওয়ার জন্য। আপনি খেয়ে দেখুন খুব স্বাদ পাবেন..

~ মুখে দিয়ে দেখি, সত্যি অনেক স্বাদ হয়েছে ~

আমিঃ ঘোড়ার ডিম ভালো হয়েছে। শুধু মুখে নিয়েছি বলেই এখন পুরোটা খাবো, খাবার ফেলে দেওয়া ঠিক না তাই। নাহলে এমন রান্না আমি খায় না…

~ মনে মনে ভাবি, আজ বউ হয়েছে বলে নুডলস না চাইতেও পেয়ে গেলাম। আর আগে, ২ টা ডিম আর ১ প্যাকেট নুডলস নিয়ে আম্মুর পিছনে পিছনে ঘুরতাম আর বলতাম, দেও না আম্মু একটু রান্না করে, দেও…
কিন্তু আম্মুর সেই সব সময় এক কথা, চোখ গরম করে বলতো, “পারলে তুই নিজে রেঁধে খা”
কখনো রান্না করে দিতো না। কি আর করার, পরে নিজেই রান্না করতাম। হয়তো নুডলস রান্না করতে গিয়ে পায়েস রান্না হতো, তাও চুমুক দিয়ে খেয়ে নিতাম। কথা গুলো মনে পড়ে চোখে পানি চলে এলো ~

তরীঃ কি হলো, আপনি কান্না করছেন কেনো.?

আমিঃ কোথায় কান্না করছি.?

তরীঃ চোখে পানি কেনো..?

আমিঃ পানি আসবে না। এতো ঝাল কেউ নুডলসে দেয়। ঝালে আমার মুখ পুরে যাচ্ছে।

তরীঃ সবাই যে বললো সব ঠিক হয়েছে।

আমিঃ সবাই বললে হবে নাকি? আমি যেটা বলবো, সেটায় আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে ও মানবে হবে। যান পানি নিয়ে আসুন…(ধমক দিয়ে)

তরীঃ আচ্ছা শুভ ভাইয়া।

~ বলে পানি এনে দিলো। যাক অনেক দিন পর একটু স্বাদের নুডলস খেলাম ~

আমিঃ নুডলস কাকে কাকে দিয়েছেন?

তরীঃ বাসার সবাই কে…

আমিঃ আপনি তো খুব চালাক মেয়ে। সবাইকে নুডলস খাওয়ায়ে মন জয় করতে চান তাই না। আপনার সেই স্বপ্ন আমি কখনো পূরণ হতে দিবো না বলে দিলাম।

তরীঃ না ভাইয়া, মায়া আপু বলছিলো বলে নুডলস রান্না করছিলাম মাত্র।

আমিঃ আপনি তো খুব বেয়াদব মেয়ে। মুখে মুখে তর্ক করেন। যান সামনে থেকে যান বলছি..(ধমক দিয়ে)

~ তরী চলে গেলো রুম থেকে। আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হলাম। বন্ধু নাইমকে দেখি হালিম খাচ্ছে পাড়ার মোরে বসে ~

নাইমঃ নতুন জামাই বাড়ি থেকে বের হয়েছে বুঝি, হা হা…

আমিঃ চুপ সালা।

নাইমঃ ভাবির সাথে গতকাল রাতে কি কি হলো রে দোস্ত…

আমিঃ পরে বলবো, আগে হালিম খেয়ে নেই।

~ হালিম অডার দেওয়া কিছুক্ষণ পর হালিম দিয়ে গেলো। আমি হালিম খাচ্ছি ~

নাইমঃ দোস্ত, বললি না গতকাল ভাবির সাথে কি কি হলো.?

আমিঃ অনেক ঝগড়া হয়েছে, ঝামেলা হয়েছে।

নাইমঃ মানে.?

আমিঃ আরে আমি ওই মেয়েকে বউ হিসাবে মানি না। তোর মনে নেই সাদিয়াকে বলছিলাম তার থেকে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করবো, কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়। আমার মা-বাবা জোর করে কালো একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলো।

নাইমঃ আরে বাদ দে ওই সাদিয়ার কথা। ওই সব খারাপ মেয়ের সাথে আবার বাজি ধরা হলো নাকি।

আমিঃ আমি ওকে দেখিয়ে দিবো বুঝলি। লাগলে এই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে আবার নতুন করে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করবো।

নাইমঃ তুই দোস্ত, আবার ভুল করছিস। সব জায়গায় সুন্দর দিয়ে বিচার করা যায় না। আগে হলো মেয়ের চরিত্র ও ভদ্রতা।

আমিঃ থাক এতো জ্ঞান দিবি না। সাদিয়াকে বলছি যখন তার থেকে আমার বউ বেশি সুন্দরী হবে, তাহলে তাই হবে।

নাইমঃ তাহলে ভাবির কি হবে?

আমিঃ কই তোর ভাবি। গতকাল আমি ওই মেয়েকে বলে দিয়েছি সে আমার থেকে স্বামীর অধিকার পাবে না। বাপের বাড়ি চলে যেতে বলছি।

নাইমঃ তুই কি রে ভাই। নতুন বউকে কেউ এভাবে বলে…

আমিঃ বউ তাড়াতে এমন বলতে হয়। আচ্ছা বাদ দে, অন্য কিছু বল।

~ তারপর আরো ২ বন্ধু এলো। ঘন্টা খানেক সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে যখন বাসার দিকে আসবো, তখন নাইম পিছন থেকে বললো ~

নাইমঃ এই হালিম নিবি না..?

আমিঃ খেলাম তো। আবার নিবো কেনো..?

নাইমঃ ভাবির জন্য নিবি না। মনে নেই ভাবির কথা।

আমিঃ আরে ধুর, ওই মেয়ের জন্য আমি হালিম নিবো। খেয়ে আর কাজ নেই।

নাইমঃ আচ্ছা তোর নিতে হবে। আমি দিচ্ছি, তুই শুধু ভাবির হাতে পৌঁছে দিস…

~ তারপর নাইম ২ বাটি হালিম প্যাক করিয়ে আমার হাতে দিলো।
আমি বাসায় চলে এলাম। এসে দেখি তরী মায়ার রুমে লুডু খেলছে। আমি আমার রুমে সরাসরি চলে গেলাম। একটু পরেই তরী আমার রুমে এলো ~

আমিঃ ওখানে হালিম আছে আপনার জন্য।

~ সে গিয়ে ব্যাগ খুলে ২ বাটি বের করে আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো ~

আমিঃ এতো হেসে লাভ নেই। আমি আপনার জন্য আনি নাই, আমার বন্ধু নাইম আপনার জন্য পাঠিয়েছে সে কিনে। আমি শুধু এনে দিলাম…

তরীঃ ওহহ আচ্ছা।

আমিঃ কোথায় যাচ্ছেন ওগুলো নিয়ে.??

তরীঃ মায়া, ছোট ভাইয়া ও মা-বাবা কেও দিতে।

আমিঃ আচ্ছা যান। আপনিও কিন্তু খাবেন কেমন…

তরীঃ আচ্ছা।

~ তরী হালিম নিয়ে চলে গেলো। মেয়েটা এমনি অনেক ভালো আছে, অনেক মিশুক। একদিনেই সবার মন জয় করে ফেলছে।

রাতের খাওয়া দাওয়া করে রুমে এসে দেখি তরী নিচে বিছানা করছে। মেয়েটার কি সাহস, আজও আমার নিচে শুতে দিবে ~

আমিঃ আপনি আজও নিচে বিছানা করছেন কেনো?

তরীঃ আপনি তাহলে কোথায় ঘুমাবেন?

আমিঃ কোথায় মানে? বিছানায় উপর।

তরীঃ তাহলে আমি কোথায় ঘুমাবো..?

আমিঃ বাসায় হাস মুরগী পালন করলেও যত্ন নিতে হয়। আর আপনি তো মানুষ। শীতের দিনে তো আপনাকে আর নিচে ঘুমাতে দেওয়া যায় না, তাই খাটের উপরই থাকবেন। কিন্তু শর্ত হলো আমার থেকে ২ ফুট দূরে সরে থাকবেন।

তরীঃ যদি ঘুমের মধ্যে ২ ফিটের মধ্যে চলে আসি… তাহলে

আমিঃ তাহলে আর কি, এক ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিবো।

তরীঃ হেএএএএ…

আমিঃ হেএএএএ না হুম।

~ আমি গিয়ে শুইয়ে পড়লাম। তরীও শাড়ি ঠিক করতে করতে শুয়ে পড়লো আমার থেকে একটু দূরে দূরে ~

তরীঃ শুভ ভাইয়া, আপনি কম্বল কোনটা নিবেন, মোটা নাকি পাতলা টি..?

আমিঃ আমায় মোটা কম্বল দিন। আপনি তো মোটা শাড়ি পড়া, পাতলা কম্বল নিলেও ঠান্ডা লাগবে না।

তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া।

~ আমার রুমে টিভি থাকায় আমি টিভি অন করে নিউজ দেখতে লাগলাম। নিউজ শেষ হওয়ার পর টিভি বন্ধ করে দিলাম। তাকিয়ে দেখি তরীর চোখ বন্ধ ~

আমিঃ ঘুমিয়ে গিয়েছেন নাকি.?

তরীঃ না ভাইয়া। ঘুম এখনো আসে নাই।

আমিঃ তাহলে যে চোখ বন্ধ দেখলাম।

তরীঃ আমার ঘুম না এলে চোখ বন্ধ করে রাখি, যেনো ঘুম আসে।

আমিঃ আচ্ছা ভালো। আপনি কি আবার নাটক সিরিয়াল দেখেন নাকি?

তরীঃ দুইটা সিরিয়াল দেখি। “বউ VS শাশুড়ী, কে বেশি ঝগড়াটি” আর “বউয়ের টাইটে অবশেষে সোজা হলো জামাই” এই দুইটো দেখি…

আমিঃ এগুলো তো দেখবেনই। নাহলে কি শাশুড়ী ননদের সাথে ঝগড়া করে জিতা যাবে নাকি তাই না.?

তরীঃ ইয়ে মানে…

আমিঃ আর ইয়ে মানে বলতে হবে না। আগামী কাল থেকে নাটক একটাও দেখবেন না ওকে…

তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া।

আমিঃ আচ্ছা ভাইয়া আবার কি? বলুন আর দেখবো না.. (ধমক দিয়ে)

~ ভয় দেখানোর জন্য জোরে একটা ধমক দিয়েছি। কাজও ভালোই হয়েছে, চমকে উঠেছে ~

তরীঃ আর দেখবো না (ভয় পেয়ে)

আমিঃ এই তো গুড গার্ল। তাই আপনার না বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো আজ, কই গেলেন না তো।

তরীঃ আপনি তো নিয়ে গেলেন না।

আমিঃ আমি নিয়ে যেতে পারবো না। আপনি একটায় চলে যাবেন ওকে।

তরীঃ বিয়ের পর প্রথম বার স্বামীকে সাথে না নিয়ে গেলে সবাই আজেবাজে কথা বলবে ভাইয়া। আমি একা যেতে পারবো না ভাইয়া, এতে নাহলে আমার মা-বাবার ইজ্জত থাকবে না।

~ কথা গুলো তো ঠিকই বলছে ~

আমিঃ কিন্তু আমার এখন অনেক কাজের চাপ আছে। আমিতো যেতে পারবো না।

তরীঃ আপনি যখন ফ্রী হন, তখন আমায় নিয়ে যাবেন সমস্যা নেই।

আমিঃ আপনি পড়াশোনা জানেন..?

তরীঃ সামান্য একটু।

আমিঃ কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়ছেন?

তরীঃ ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত।

আমিঃ তারপর আর পড়েন নাই কেনো?

তরীঃ মা-বাবা আর পড়ান নাই।

আমিঃ পড়াবে কেমন করে, আপনার মাথায় যত গোবর ভরা, তাকে দিয়ে আবার পড়াশোনা হবে নাকি । আপনি তো একটা গরু…

তরীঃ আমি গরু..?

আমিঃ আপনি গরু না, তাহলে কি আমি গরু (ধমক দিয়ে)

তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া, একটা কথা বলি, আপনি একবার আমায় পিতার বাড়ি নিয়ে গেলে ওখানেই ফেলে চলে আসবেন তাই না.? আর আপনার সাথে করে জীবনেও ফেরত আনবেন না তাই না…?

~ মেয়েটা হঠাৎ এমন একটা প্রশ্ন করছে, কি উত্তর দিবো বুঝতে পারছি না ~

আমিঃ তখন কার কথা তখন দেখা যাবে। আপনি এখন বকবক না করে ঘুমান…

~ তরী আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম শরীর কম্বল পেচিয়ে।
ভোর রাতে ঘুম ভাঙ্গলো তরীর ডাকে ~

তরীঃ শুভ ভাইয়া উঠুন, শুভ ভাইয়া উঠুন…

আমিঃ কি হয়েছে, ডাকছেন কেনো.?

তরীঃ আজান দিয়েছে তো, নামাজে যাবেন না.??

আমিঃ আপনি নামাজ পড়েন?

তরীঃ হুমম। কেনো আপনি নামাজ পড়েন না.?

আমিঃ ইয়ে মানে…

তরীঃ হা হা হা, এখন আপনিও আমার মত ইয়ে মানে বলছেন ভাইয়া…

আমিঃ এই ভাবে বড়দের মুখের উপর হাসতে নেই। নাহলে বেয়াদব বলে।

~ তরী হাসি থামিয়ে দিলো ~

আমিঃ আপনি তাহলে গতকাল রাতে ফজরের নামাজ পড়লেন না তো…?

তরীঃ পড়েছি তো। আপনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন।

আমিঃ তাহলে গতকাল আমায় ডাক দিলেন না কেনো..?

তরীঃ গতকাল তো আপনি অনেক রেগে ছিলেন।

আমিঃ আজ বুঝি আমি রেগে নাই?

তরীঃ আজ একটু রাগ কম…

আমিঃ আপনি বুঝি মুখ দেখে সব বুঝতে পারেন..?

তরীঃ একটু একটু…

আমিঃ তাহলে বলুন তো এখন আমার মনে কি বলছে…

তরীঃ এখন আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, আপনার মন বলছে, তাড়াতাড়ি আমায় বাথরুমে যেতে হবে, নাহলে প্যান্ট ভিজে যাবে.. হা হা…

আমিঃ আর কোনো কথা পেলেন না বলার জন্য, একদম সত্যি টাই বলে দিলেন। তাড়াতাড়ি সরুন তো, আমি নামবো…(চোখ গরম করে)

~ কি মেয়েরা বাবা, একদম লজ্জায় ফেলে দিলো। আমি বাথরুম থেকে একসাথে ওজু করে বের হয়ে দেখলাম তরী নামাজে দাড়িয়ে গিয়েছে। আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে মসজিদে চলে গেলাম। মসজিদ থেকে এসে দেখি তরী খাটের উপর বসে আছে ~

আমিঃ আপনি এখনো বসে আছেন কেনো?

তরীঃ আপনার জন্য।

আমিঃ মানে…

তরীঃ আপনি মসজিদ থেকে আসবেন তার অপেক্ষা করছিলাম।

আমিঃ ওহহ। আচ্ছা এবার ঘুমিয়ে পড়ুন।

~ আমি গিয়ে কম্বল জরিয়ে শুয়ে পড়লাম। সেও আমার পাশে শুয়ে পড়লো ~

তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া, আপনি সকালে চা পান করেন ঘুম থেকে উঠে.?

আমিঃ আর চা, আম্মুকে যদি বলি তাহলে বলে বানিয়ে খা..

তরীঃ তাহলে এখন থেকে সকালে আপনাকে আমি চা বানিয়ে দিবো কেমন..

আমিঃ আপনি আমাকে চা বানিয়ে দিয়ে বুঝি আমার মন জয় করতে চান তাই না? খুব চালাক আপনি…

তরীঃ একদম না। আপনি শুধু নেগেটিভ চিন্তা করেন কেনো..?

আমিঃ এই যুগের মেয়েদের নিয়ে বিশ্বাস নেই। বেশির ভাগ বদ বুদ্ধির কারখানা এক একজন।

তরীঃ আমি ওমন কোনো সুযোগ নিবো না। আমায় বিশ্বাস করতে পারেন।

আমিঃ আচ্ছা করলাম। এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।

~ আমি আর তরী ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে জাগার পরেই তরী চা করে আনলো। কতদিনের শখ ছিলো ঘুম থেকে উঠেই চা খাবো, আজ বিয়ের পর সেটা পূরণ হলো। সাড়ে ৮ টার দিকে নাস্তা করতে টেবিলে গেলাম। তরী আর মায়া কি বিষয়ে যেনো আলোচনা করছিলো, আমায় দেখে চুপ হয়ে গেলো ~

আমিঃ আমায় দেখে চুপ হলেন কেনো?

মায়াঃ ভাবি তুমি কিন্তু ভুলেও ভাইয়াকে বলবে না, নাহলে ভাইয়া আমায় বকা দিবে।

আমিঃ আপনি বলুন কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, এটা আমার আদেশ…(একটু ভাব নিয়ে)

তরীঃ মায়া আপু বলছিলো ভাত খাবে না, পরোটা করে দিতে।

আমিঃ মায়া আবার আপনার আপু হলো কিভাবে.? আপনার বয়স কত..?

তরীঃ ১৯-২০ হবে।

আমিঃ মায়ার মাত্র ১২ বছর। এই টুকু পিচ্চিকে কেউ আপু বলে নাকি। আর আপু বলবেন না।

তরীঃ ছোট মানুষ তো, বললে সমস্যা নেই।

আমিঃ ওর সমস্যা না থাকলেও আমার সমস্যা আছে। ওকে আর আপু বলবেন না কেমন। সব সময় মনে রাখবেন, বাড়ির একমাত্র মেয়ে ও ছোট মেয়েদের আদর দিলে তারা বাদর হয়ে যায়।

মায়াঃ ভাবি জানো, ভাইয়া না সব সময় আমায় নিয়ে হিংসা করে।

আমিঃ আমি তোকে নিয়ে হিংসা করি তাই না..? আপনি ওর জন্য একটাও পরোটা বানাবেন না এটা আমার আদেশ।

মায়াঃ ভাইয়া এমন করো না। নতুন ভাবির হাতের পরোটা কেমন স্বাদ হয় একটু খেয়ে দেখতে দেও।

আমিঃ তোর তো সবার হাতের পরোটাই পছন্দ হয়। শুধু খায় খায় স্বভাব। তরী ম্যাডাম, আপনি কিন্তু পরোটা করবেন না।

মায়াঃ নিজের বউয়ের নাম টাও জানে না, আবার এসেছে বউকে আদেশ করতে…(ভেংচি কেটে)

আমিঃ নাম জানি না মানে.??

মায়াঃ ভাবির নাম তরী না তুরী বুঝলেন।

আমিঃ তোর থেকে আমার জানতে হবে না। আমি যেটা বলছি সেটায় সঠিক।

মায়াঃ ভাবি আপনার নাম কি, আপনি নিজের মুখেই ভাইয়াকে শুনিয়ে দিন তো…

তরীঃ আমার নাম তুরী। কিন্তু মায়া আপু, তোমার ভাইয়া আমার নাম দিয়েছে তরী।

মায়াঃ ও মোর খোদা, এই কালা বউ রাখবো না, আরো কত কিছু বলে ঝামেলা করলো। আর বউয়ের নামও দেওয়া হয়েছে আদর করে। আরো কত যে ঢং দেখবো..(ভেংচি কেটে)

আমিঃ তোর আর কিছু দেখতে হবে না। তুই তোর মত করে খা তো…

~ মায়া বেচারির মন খারাপ হয়ে গিয়েছে পরোটা না পেয়ে। আমার প্লেটে যখন তরী ভাত দিবে, তখন বললাম ~

আমিঃ ভাত এখন দিয়েছে না।

তরীঃ তাহলে কখন দিবো….

আমিঃ মায়ার জন্য যখন পরোটা করবেন, তার সাথে আমার জন্য ৩-৪ টা পরোটা কি বানানো যাবে.? (হাসি দিয়ে)

~ তরী আর মায়া হেসে দিয়েছে ~

মায়াঃ হা হা, জানো ভাবি আমার ভাইয়া কিন্তু খাওয়া দাওয়াতে উস্তাদ। সব সময় VIP খাওয়া দাওয়া করতে চাই। একটু পেটুক পেটুক ভাব…

তরীঃ মায়া আপু এই ভাবে বড় ভাইয়াকে বলতে হয় না। শুভ ভাইয়া একটু অপেক্ষা করুন, আমি পরোটা করে এখুনি আনছি।

~ বলে তরী একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর পরোটার সাথে ডিম ভেজেও নিয়ে আসলো তরী।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আমার কাজে চলে গেলাম। আজ কাজে আর যাওয়ার সময় কোনো ঝামেলা করলাম না। ১১ টার দিকে আম্মু ফোন দিলো ~

আম্মুঃ এই তুই কি পেয়েছিস শুভ। তোর বাবা রেগে গিয়েছে।

আমিঃ কেনো আম্মু, কি হয়েছে.?

আম্মুঃ আজও তুই বউমাকে……………….. (#চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে