Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"মেঘের বাড়িমেঘের বাড়ি পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

মেঘের বাড়ি পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব

#মেঘের বাড়ি☁
#শেষপর্ব
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
.
.
মেঘ স্টাচু হয়ে বসে রইল৷ চোখের পলক ফেলতে যেন ভুলে গেছে মেঘ৷ সুবর্না ইশারায় তার তার স্বামীকে রুম থেকে বের হতে বলতে একে একে সবাই রুম থেকে বের হয়৷ সোহেল একপা একপা করে মেঘের পায়ের সামনে হাটু গেড়ে বসে মেঘের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,” শেষ একটা সুযোগ দিবে বউ? কথা দিচ্ছি অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না তোমায়৷ এত গুলো মাসে তোমার অনুপস্থিত আমাকে হাড়ে হাড়ে তোমার মূল্য বুঝিয়েছে৷ সত্যি বলছি এই জীবনে কখনো তোমাকে অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না ৷ আমাদের সন্তানকে নিয়ে আলাদা সুন্দর একটা সংসার গড়বো৷ যেখানে কেউ তোমার আমার সন্তানের ক্ষতি করতে পারবে না আর না সেই মানুষ গুলোর কোন ঠাঁই হবে আমাদের সংসারে৷” মেঘ তখনও চুপ হয়ে রইল৷ মেঘকে কোন কথা বলতে না দেখে সোহেলের চোখ মুখে অন্ধকার ছেঁয়ে গেলো৷ ভেবেছে হয়তো মেঘ কিছু বলবে কিন্তু না মেঘ কিছুই বললো না৷ সোহেল আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগে মেঘ বলে,” ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছেন?”

মেঘের কথা শুনে সোহেল তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,” না না আমি সাইন করিনি৷ ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছি৷ ” মেঘ আবার ও চুপ হয়ে গেলো সোহেলের কথা শুনে৷ সোহেল বলতে লাগলো,” বউ বলো না আমায় ক্ষমা করেছো? তুমি আমায় ক্ষমা না করলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না৷ আমাদের অনাগত সন্তানের কসম কেটে বলছি আমি একজন আদর্শ স্বামী একজন আর্দশ বাবা হয়ে দেখাবো বউ৷”

সোহেলের কথা শুনে মেঘের ঠোঁটের কোণে বিষাদের হাসি ফুঁটে উঠলো৷ মেঘ মুখে হাসি নিয়ে বললো,” তোমার কাছে আমি কখনো কিছু চাইনি সোহেল৷ আমি যদি তোমার কাছে কিছু চাই তুমি কী দিবে?”

সোহেল দ্বিগুন উচ্ছ্বাসে বলতে লাগলো,” দিবো বউ বলো তোমার কী চাই? তোমার যা চাই আমি তাই দিবো৷”

” কথা দিচ্ছো?”

” কথা দিলাম৷”

” তোমার সন্তানকে ছুঁয়ে বলো৷”

সোহেল মেঘের পেটে উপর হাত রেখে ছুঁয়ে বললো ,” কথা দিলাম তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দিবো৷”

এতক্ষণে মেঘের ঠোঁটের কোণে বিস্তর হাসি ফুটে উঠলো৷ মেঘের মুখে হাসি দেখে সোহেল বুঝে নেয় মেঘ আর রাগ করে নেই৷ সোহেল উঠে দাড়িয়ে মেঘের কপালে চুমু দিয়ে বলে,” ভালোবাসি বউ৷”

কিছুক্ষণ বাদে সবাই রুমে এসে হাজির হয়৷ মেঘকে ধরে নিয়ে ডাইনিংয়ে এসে বসায়৷ মেঘের প্রিয় সব রান্না হয়েছে৷ বিরিয়ানি , পোলাও, রোস্ট, কাবাব, কালো ভুনা, পাঁচ সাত রকমের সবজি ভাজা, বড় রুই মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট, কাতলা মাছের কালিয়া, ইলিশ মাছের ডিম ভাজা, পায়েশ, কালোজাম ৷ এতো সব আয়োজন দেখে মেঘ অবাক হয়ে তার মা ভাবিদের বললো,” তোমরা কী পাগল এতো কিছু কেন করতে গেলে? এত খাবে কে?” পাশ থেকে আলিয়া বলে উঠলো ,” উফফ আন্টি এত চাপ কেন নিচ্ছো? এই খাবার তুমি খাবে + আমার জামাই খাবে সাথে তার বউও খাবে বুঝছো?”

” এই দাড়া দাড়া জামাই বউ পাইলি কোথায়?”

আলিয়া লজ্জা মাখা ভঙ্গিমায় বলে উঠলো , ” বাহ রে আন্টি তুমি তো একবার বলেছিলে তোমার ছেলে হলে আমাকে তোমার ছেলের বউ বানাবে৷ এখন তোমার ছেলে আমার জামাই হলে আমি তো তার বউ আর তুমি আমার শাশুড়ি হবে তাই না?”

আলিয়ার কথা শুনে সবাই হু হা করে হাসতে লাগলো ৷ মেঘ হাসতে হাসতে বললো, তা তুই জানলি কি করে তোর জামাই আসবে? ”

” আমি জানি আমার জামাই আসবো৷”

” পাকা বুড়ি একটা এর পর জামাইকে কোলে নিয়ে রহিম রুপবান হয়ে ঘুরবি৷”

৩২.
খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকানোর পর মেঘ তার রুমে এসে রেস্ট নিচ্ছে তখন সোহেল রুমে এসে মেঘের পাশে বসে বলে,” বউ বাড়ি ফিরবে না?”

মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে সোহেল কে বলে,” ডেলিভারির আর কিছুদিন বাকি আছে৷ এই সময়টায় আমি কোথাও যেতে চাই না৷”

” কিন্তু আমাকে তো বাড়ি ফিরতে হবে গরু বাছুর ছাগল তুলতে হবে৷”

” আপনি ফিরে যান৷ ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত আমি ফিরবো না৷”

” কিন্তু”

” দেখুন আমাকে দেখার মত ওখানে কেউ নেই৷ আমার প্রয়োজনে ওখানে কাউকে পাবো না কিন্তু এখানে আমাকে দেখার মত সবাই আছে৷”

” বুঝতে পারছি৷ ঠিক আছে আমাকে এখন ফিরতে হবে৷”

মেঘ ভালো মন্দ কিছু বললো না৷ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল৷ সোহেল আর কিছু বললো না বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো৷ রাতে সোহেল কয়েকবার কল দেওয়ার পর মেঘ কল রিসিভ করে৷ কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়৷ রাত প্রায় দশটা বাজে হঠাৎ দরজায় নক পড়তে মেঘ উঠে বসে বলে,” ভেতরে এসো ছোটভাই ৷”

” ডেকেছিলি?”

” বসো ছোটভাই তোমার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে৷ কিন্তু তার আগে তোমাকে কথা দিতে হবে আমি যা বলবো তুমি কাউকে কিছু বলবে না?”

” ঠিক আছে বলবো না৷ এখন তো বল?”

মেঘ একটু দম নিয়ে বলতে লাগলো………

সকালে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে একটু হাটাহাটি করতে লাগলো৷ ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে কাঁথা সেলাই করতে বসে যায়৷ সোহেল ঘন্টায় ঘন্টায় মেঘকে কল করে খোঁজ খবর নেয়৷ মেঘ নির্লিপ্ত গলায় সোহেলের সব কথার জবাব দেয়৷

সোহেল প্রত্যেক সপ্তাহে মেঘের সাথে দেখা করে যায়৷ মেঘ সেদিনটা চুপচাপ থাকে সোহেলের সাথে তেমন একটা কথা বলে না৷ তবুও সোহেল হার মানে না৷ দেখতে মেঘের ডেলিভারির ডেট চলে আসে কিন্তু হঠাৎ করেই ডেলিভারির ডেট এর দুইদিন আগে মেঘের পেইন ওঠে৷

সূর্বনা নুর দিশে হারা কি করবে করবে না ভেবে তৎক্ষনাৎ সোহাগ এসে হাজির হয়৷ এম্বুলেন্স আসতে লেট হবে ভেবে ওটোতে করে মেঘকে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ সূর্বণা সোহেলকে ফোন করে জানাতে চাইলে মেঘ ব্যাথায় দাঁতে দাঁত চেপে সূর্বণা কে বলতে লাগলো,” ভাবি সোহেলকে ফোন করো না৷”

” কিন্তু কেন মেঘ৷”

মেঘকে বলতে না দিয়ে সোহাগ বলে উঠলো,” ভাবি মেঘ যা বলেছে তাই করো সোহেলকে জানানোর প্রয়োজন নাই৷”

” কিন্তু ভাই৷”

” কোন কিন্তু না আপনি ভাইকে ফোন করে জানান মেঘের কথা৷”

সূর্বণা ঠিক তাই করলো৷ মেজ এবং সেজ ভাইকে ফোন করে জানায়৷ আধাঘন্টার ভেতর হাসপাতালে পৌছে যায়৷ ডাক্তারের সাথে আগে থেকে কথা বলে রাখা ছিলো বিধায় হাসপাতালে পৌছানোর পর মেঘকে ওটিতে নিয়ে যায়৷ প্রায় দেরঘন্টা পর একজন নার্স তোয়ালে জড়ানো সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটিকে নিয়ে আসে৷ সূর্বনা সর্বপ্রথম শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়৷ সোহাগ হাজার টাকার একটা নোট নার্সের হাতে গুজে দেয়৷ নার্স খুশি হয়ে বলে,” ধন্যবাদ স্যার৷”

” পেশেন্ট কে বেডে কখন দেওয়া হবে?”

” পনেরো মিনিট পর পেশেন্ট কে বেডে দেওয়া হবে৷”

সবাই মেঘের ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো৷ বাচ্চা এবং দুজনে সুস্থ আছে জেনে মেঘের ভাইয়েরা আট কেজি মিষ্টি কিনে বিলাতে লাগলো৷ বাসায় শুধু আলিয়া নুর একা আছে বিধায় নুরের মামাতো ভাই এসে হাজির হয়৷ তারা এক সাথে বাড়ির সব ভাগ করে সেরে ফেলে রান্না করতে চলে যায়৷ হাসপাতালে খাবার পাঠাতে হবে৷ মামা মামী নানী মা সাথে আরও অনেকে আছে৷ আলিয়া মোটা মুটি রান্না জানলেও নুর একদমি রান্না জানে না তাই সবজি কাটাকুটি করে হেল্প করছে৷

সোহাগ ডাক্তারের সাথে কথা বলে মেঘকে আগামীকাল হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চাইলে তারা রাজি হয় যেহেতু নরমালে বাচ্চা ডেলিভারি হয়েছে আর মা বাচ্চার কোন রকম সমস্যা দেখা দেয়নি বলে ডাক্তার রাজি হয়৷

রাতে সোহাগ এসে নিজে ফ্রেস হয়ে সকলের জন্য খাবার নিয়ে যায়৷ পরেরদিন দুপুরে বাকি বিল পরিশোধ করে বিকেলে মেঘকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে সবাই৷ মেঘকে তার রুমে শুইয়ে দেয় সুবর্না বলে,” এখন রেস্ট নেও মেঘ বাবু এখন ঘুমাচ্ছে৷ ঘুম থেকে উঠলে ফিড করিয়ে দিও৷”

” ভাবি ছোটভাইকে একটু পাঠিয়ে দেও আর আমার ফোনটা কোথায়?”

“ওয়েট দিচ্ছি৷ ড্রয়ার থেকে মেঘের ফোনটা বের করে মেঘের হাতে দিয়ে সূর্বনা রুম থেকে বেরিয়ে সোহাগ কে মেঘের রুমে যেতে বলে চলে যায়৷ সোহাগ মেঘের রুমে এসে বলে,” ডেকেছিস?”

” ভাই এবার কাজটা করার সময় হয়ে গেছে৷ সোহেল হয়তো যে কোন সময় এসে পড়বে৷”

” চিন্তা করিস না৷ আমি পেপারস গুলো আগেই রেডি করে নিজের কাছে রেখেছিলাম৷ আর বাকি রইল দ্বিতীয় কাজটার জন্য আমার বন্ধুদের অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছি৷”

সোহাগের কথা শুনে মেঘ নিশ্চিন্ত হয়ে বললো,” ছোটভাই তারপরে কী করবে ভেবে রেখেছো?”

” আমার সবটাই ভাবা আছে তুই টেনশন করিস না রেস্ট কর৷”

মেঘ ভাইয়ের উপর সব ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো৷ এদিকে সোহেল কোন ভাবে মেঘের খবর জানতে পেরে মেঘের বাড়ির উদ্দেশ্য বের হতে নিলে মনি সোহেল কে আটকে বলে,” ভাইজান দাড়ান আমিও যাবো৷”

” মনি তুমি ও বাড়ি যাবে? তাহলে বাচ্চারা কার কাছে থাকবে?”

” সমস্যা নেই ওরা চাচীর বাসায় থাকবে৷”

” ঠিক আছে তবে সবুজকেও বলো মিষ্টি আর বাবুর জন্য কিছু জামা কাপড় কিনতে হবে৷”

সবুজকে ফোন করে বলা মাত্র সবুজ বাজারে গিয়ে বাচ্চার প্রয়োজনীয় সকল জিনিস কিনে হাজির হয়৷ সোহেল সবুজ আর মনি বেরিয়ে পড়ে৷

৩৩.

সোহেল তার ভাই আর বউ মেঘের বাড়ি হাজির হলে সোহাগ তাদের আলাদা রুমে বসায়৷ সোহেল ছটপট করছে তার বাচ্চাকে দেখার জন্য সোহাগ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বলে,” সোহেল তুমি এখানে বসো আমি আসছি দুমিনিটের ভেতর৷” কথাটা বলে সোহাগ মেঘের রুমে চলে গেল৷ মেঘ তার বাচ্চাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে সোহাগের দেওয়া পেপারস গুলোয় সাইন করে রাখে৷ সে সময় সোহাগ এসে জানায় সোহেল এসেছে৷ মেঘ তার ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে হেটে সোহেলকে যে রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে সে রুমে গিয়ে হাজির হয়৷ সোহেল মেঘকে দেখে খুশি হয়ে বলে,” কেমন আছো মেঘ? আর বাবু কোথায়?”

মেঘ মুচকি হেসে বললো,” বাবু ঘুমাচ্ছে৷ সোহেল মনে আছে তুমি আমাকে কথা দিয়ে ছিলে আমি যা চাইবো তুমি তাই দিবে?”

” হ্যাঁ মনে আছে৷ কিন্তু তার আগে আমি বাবুকে দেখতে চাই মেঘ৷ আমার সন্তানকে আমি কোলে নিতে চাই৷”

” নিবে তার আগে এই পেপারস গুলোয় সাইন করে দেও সোহেল৷”

“কিসের পেপারস এগুলো?”

” ডিভোর্স পেপারস সোহেল৷”

ডিভোর্স পেপারস শুনে সোহেল সবুজ দাড়িয়ে পড়লো৷ মনি আগের মতই বসে আছে৷ তার কোন হেলদোল নেই৷ সোহেল কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,” ডিভোর্স কেন বউ?”

মেঘ শান্ত গলায় প্রত্যুত্তর করলো,” কী বলছো সোহেল আমাদের ডিভোর্স না হলে তুমি তো দ্বিতীয় সংসার করতে পারবে না৷”

মেঘের কথা শুনে সোহেল আর সবুজের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জোড়ো হলো৷ সোহেলের হাত পা কাঁপছে৷ সোহাগ দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে৷ সুর্বনা চুপ করে দাড়িয়ে সবটা দেখছে কিছু বলছে না৷ সোহেল আবারও কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,” দ্বিতীয় সংসার কী বলছো মেঘ? ”

” বুঝতে পারছো না? ওয়েট ছোটভাই৷”

সোহাগকে ইশারা করতে সোহাগ রুম থেকে বের হয়ে একমিনিটের মাথায় রুমে এসে হাজির হয়৷ এক বোরকা পরিহিত মেয়ে কে মহিলাকে নিয়ে৷ মহিলা নেকাব সরাতে সোহেল সবুজ বড়সড় এক ধাক্কা খায়৷

” কী হলো সোহেল এনাকে চিনতে পারছো না? জুঁই যাকে তিনমাস আগে গোপনে বিয়ে করেছো?”

” বিশ্বাস করো মেঘ আমি এই বিয়ে করতে চাই নি সবুজ আমাকে জোড় করে জুঁইকে বিয়ে করায়৷”

সোহেলের কথা শুনে মেঘ পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে বললো,” তুমি কী টিনএইজার সোহেল? তোমাকে তোমার ভাই জোড় করলো আর তুমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে?”

সোহেল মেঘের হাত চেপে ধরে বলে,” বিশ্বাস করো মেঘ আমি তোমাকে ভালোবাসি৷”

” তাই তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে এই মহিলাকে বিয়ে কেন করলে? আর ভালো না বেসে থাকলে সন্তান সম্ভাববা কি করে হলো? নাকী এই বাচ্চা তোমার না?” তখনি পাশ থেকে মেয়েটি বলে উঠলো,” বিশ্বাস করে আপা এই বাচ্চা ওনার আর বিয়ের আগে আমাকে ওনার ভাই(সবুজ) বলেছিলো উনি(সোহেল) অবিবাহিত৷ আমার পরিবার বলতে শুধু মা আর ছোট বোন আর কেউ নাই৷ তারা হয়তো ভালো কইরা খোঁজ নেয় নাই৷ তাই ওনার আগের বিয়ের কথা জানতে পারি নাই৷”

মেঘ সোহেলের থেকে হাত ছাড়িয়ে সোহেলকে বললো,” এবার কী বলবে সোহেল? তোমার কী মনে হয় আমি তোমার সাথে সংসার করবো সব জেনেও? ”

সোহেল আবারও মেঘের হাত ধরে বলতে লাগলো,” আমি তোমাকেই ভালোবাসি মেঘ৷ আমি জুঁইকে ডিভোর্স দিবো৷ আমি তোমার সাথেই সংসার করবো৷”

মেঘ আজ সহ্য করতে না পেরে সোহেল কে স্বজোড়ে এক থাপ্পর মেরে বলে,” কাপুরুষ , জানোয়ার তোদের কাছে অন্যের মেয়েরা কী খেলার পুতুল৷ যখন মন চাইবে তখন খেলবি আর যখন মন চাইবে না ছুড়ে ফেলবি? জুইয়ের গর্ভের সন্তানের কী হবে ভেবে দেখেছিস? একজন অসহায় মেয়েকে ধোঁকা দিতে তোদের দুই ভাইয়ের একটুও বাধলো না? তোরা জানোয়ারের থেকেও খারাপ৷ তোদের তো পুলিশে দেওয়া উচিত৷ তোর মা বাবা বোনেরা যেখানে আছে তোদেরও সেখানে থাকা উচিত৷”

সোহেল কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না৷ পাশ থেকে সবুজ বলে উঠলো,” ভাবি সব দোষ ভাইয়ের একার না আপনারও দোষ আছে৷ আপনি ফিরে আসলে ভাইকে বিয়ে করাতাম না৷ আপনি ফিরবেন না দে… বাকিটা বলার আগেই আরেকটা থাপ্পর পড়লো সবুজের গালে তবে সে থাপ্পর মেঘ নয় মনি মেরেছে৷ মনিকে থাপ্পর মারতে দেখে সবুজ গালে হাত দিয়ে রাঙ্গানিত চোখে তাকাতে মনি বলে ওঠে,” রক্ত কথা বলে জানিস তো? আর আবারও তার প্রমান পেলাম৷ ভাবি অসুস্থতার কয়েকমাস দুরে ছিলো বিধায় তোর ভাইকে বিয়ে করাতে হবে? এতই যখন ভাইয়ের উপর দরদ আছিলো তাইলে ভাবির উপর অত্যা*চার করার সময় কোথায় আছিলি তুই? ক কই ছিলি? এখন তো আমারও মনে হয়তাছে আমি কয়দিন বাড়ি থেইক্কা দুরে থাকলে তুই বিয়া কইরা সংসার পাতবি আর কইবি আমি বাড়ি আসিনাই দেইখা বিয়া করছো? ভাবি ঠিক কইছে তোগো আসল জায়গা জেল ওইহানে তোগো থাকা দরকার৷ যেমন মা তেমন পোলা৷”

মেঘ তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,” চিন্তা নাই মনি আপা পুলিশকে সবটাই জানিয়েছি৷ ডিভোর্স দিতে কোন ঝামেলা করলে একি কেসে দুই ভাইকে জেলে দিয়ে দিবে৷” মেঘের কথাটা শুনতেই দুই ভাইয়ের মুখ ভয়ে চুপসে গেলো৷ তখন সোহাগ সোহেলের কাঁধ চেপে ধরে বলে,” ভালোই ভালোই সাইনটা করে দে সোহেল নাহলে তোদের কপালে কী নাচছে তা তোরা নিজেরাও জানিস না৷ সুন্দর করে সাইন টা করে দিয়ে ওই মেয়েকে নিয়ে সংসার কর৷ আর আমার ভাগনার দিকে হাত যদি কখনো বাড়াস তাহলে ওই হাত কেটে ফেলতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না নিশ্চয়ই জানিস?” সোহেল আর কথা বাড়ালো না জুই আর মেঘের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলো৷ সোহাগ তাদের আনা প্রত্যেকটা জিনিস বাইরে ছুড়ে ফেলে বলে,” আর এক মুহূর্ত এবাড়িতে দাড়ালে তোদের কী অবস্থা করবো আমি নিজেও জানি না৷ তাই আমার সামনে থেকে চলে যা আর কখনো এবাড়ি আর আমার বোন ছেলের আশে পাশে আসলে তোদের আমি মাটিতে পুঁতে ফেলবো৷” সোহেল সবুজ আর দাড়ালো না সাথে সাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো৷ জুই মাথা নিচু করে মেঘকে বলে,” আমাকে মাফ করবেন আপা আমি সত্যি জানতাম না উনি বিবাহিত জানলে কখনো ওনাকে বিয়ে করতাম না৷”

” তুমি বিয়ে না করলেও অন্য কেউ করতো তাই তোমার উপর আমার কোন রাগ নেই ৷ আল্লাহ যা করে তার বান্দার ভালোর জন্য করে৷ তুমি তোমার সন্তান সংসার নিয়ে ভালো থাকো দোয়া করি৷” জুই চলে যাওয়ার পর পর মেঘ মনির হাত ধরে বলে,” মনি আপা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তোমার জন্য আমি সবটা জানতে পারলাম তুমি সাহায্য না করলে হয়তো সোহেল পুরোটা জীবন আমাকে ঠকিয়ে যেত৷”

” ভাবি আপনারে আমি বড় বইনের মত দেখি বলে আপনার খারাপ চাই না৷ আপনে আপনার পোলা লইয়া ভালো থাকেন আল্লাহর কাছে দোয়া করি৷ আর কবে দেখা হইবো কী না জানি না তয় বাবুরে একবার দেখতে চাই ভাবি৷” মেঘ মনির হাত ধরে তার রুমে নিয়ে যায়৷ মনি মেঘের ঘুমন্ত বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে মাশাআল্লাহ ভাবি পোলা তো দেখতে আপনার নাহান হয়ছে৷”

” মনির কথা শুনে হাসলো মেঘ৷” মনি তার গলা থেকে স্বর্নের চেইন খুলে বাচ্চাকে পড়িয়ে দিতে মেঘ বাধ সেজে বলে,” কী করছেন আপা৷ এটা করার কোন দরকার নাই৷ আপনি ওর জন্য শুধু দোয়া করবেন যেন মানুষের মত মানুষ হয়৷”

” দোয়া তো করমুই কিন্তু এটা দেওয়ার আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে কারন আমি ওর চাচী হই আবার খালা তাই আমারে বারণ করতে পারেন না৷” মেঘ আর কিছু বললো না৷ মনি বাচ্চাকে আদর করে চলে যায়৷

সবাই সোহেলের সম্পর্কে সবটা জেনে ভিষণ রেগে যায় মেঘের উপর৷ মেঘের বাকি ভাইয়েরা সোহেলকে জেলে দিতে চাইলে মেঘ বাধ সাজে কারণ তার নতুন সংসারে নতুন অতিথি আসতে চলেছে আর মেয়েটিরও যে গোড়া শক্ত নয়৷ এখানে যেমন তার মা ভাই ভাবি বোন আছে সার্পোট করার কিন্তু সে মেয়েটির কেউ নেই৷

মেঘের কথা তার ভাইয়েরা ফেলতে পারেনা ৷ তাই মেঘের কথাই মেনে নিলো৷

সেদিনের পর প্রায় এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স কার্যকর হয়৷ মেঘ সুস্থ হওয়ার পর পর মেঘকে ন্যাশনাল ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেয় তার সেজভাবি৷ পড়াশুনার পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজটা করতে থাকলো মেঘ৷ দেনমোহরের টাকাটা দিয়ে মেঘ তার ভাইয়ের বাড়ির পাশাপাশি তিন কাটা জমি কিনে ফেলে মেঘ৷

তার ভাইয়েরা খুব গোপনে তার বোনের একাউন্টে মাসে মাসে পাঁচভাই কিছু কিছু টাকা রাখে যেটা মেঘ ব্যতিত আর কেউ জানে না৷ আর মেঘেরও যা ইনকাম হয় সেটা সে তার একাউন্টে রাখে কারণ তার ভাই ভাবি তার থেকে একটা টাকাও নেয় না৷ বাচ্চার যাবতীয় জিনিস পত্র শেষ হওয়ার পূর্বে এনে রাখে৷ এমন পরিবার দেখলে যে কারও হিংসে হয়৷ এত মিল মহব্বত তেমন কোন সংসারে দেখা যায় না৷

মেঘ তার বাচ্চার নাম ঠিক করার পূর্বে তার বড় মামা রাখেন৷ আব্রাহাম হোসাইন মিহির৷ সবাই মিহির বলেই ডাকে৷ মেঘ আর বিয়ে করবে না বলে পণ করেছে৷ মেঘ চায় তার সন্তান কে মানুষের মত মানুষ করতে৷ তাকে নিয়েই তার জীবন গড়তে চায়৷ নতুন করে আর সংসার করার ইচ্ছে বা শখ কোনটাই নেই মেঘের৷ তাই মেঘ এবার তার অপূর্ণ ইচ্ছে গুলো পূরণ করবে৷

তিন বছর পর…….

মেঘ আজ তার নতুন বাড়িতে পা রেখেছে৷ সেই জমিতে মেঘ নিজের টাকায় বাড়ি করেছে তবে ভাইদের সাহায্য নিয়ে৷ একতলা বিশিষ্ট বাড়ি৷ বাড়ির সামনে নানা রকম ফুলের গাছ ৷ বাগানের এক পাশে দোলনা৷ টিপ টিপ বৃষ্টিতে বাড়ির নেমপ্লেটে পানি পড়ায় মেঘ শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিয়ে নেমপ্লেটের গোটা গোটা অক্ষরে লেখা নামটা মনে মনে আওড়ালো ” মেঘের বাড়ি”

”সমাপ্ত”

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

1 মন্তব্য

  1. অসম্ভব সুন্দর, পড়তে পড়তে চোখ বেয়ে পানি পরছে।এমন কত মেঘ এর নিজের কোন বাড়ি হয় না,,,কত মেঘ আত্মহত্যা করে,কত মেঘ এমন সব জানোয়ার দের সাথে সংসার করে।অনেক সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন।❤️❤️❤️❤️❤️👍👍👍👍👍

Leave a Reply to mahfuja ononna উত্তর বাতিল

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ