শেষ ডাইরি পর্ব-০১

0
975

#শেষ_ডাইরি
#লেখক_আরিফ_ইসলাম
#সূচনা_পর্ব

মাঝরাতে হঠাৎ ঈশিতা ভাবিকে গোসল করতে দেখে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে । সিয়াম ভাই মারা গেছে ১ সপ্তাহ হয়েছে । হুট করে বাড়ির বড় ছেলের মৃত্যুতে পরিবারের সবাই ভেঙ্গে পড়েছে। তার মধ্যে হঠাৎ এত রাতে ভাবী গোসল করতে যাবে কেনো? বিড় বিড় করে বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে সিয়ামের ছোট ভাই আরিফ ।
মির্জা বাড়ির ঘটনা ২০১৮ সন ।
আরিফ ও সিয়াম! মির্জা হারুন অর রশিদের দুই সন্তান। মির্জা বাড়ির বড় ছেলে সিয়াম হুট করে ঈশিতা নামের একটা এতিম মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। মেয়েটা পরিচয় হীন হওয়ায় প্রথমে একটু সঙ্কোচ বোধ করলেও পরে মির্জা পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নেয়। বিয়ের কিছুদিনের মাথায় হুট করেই অস্বাভাবিক ভাবে সিয়াম নিখোঁজ হয়ে যায়। কিছুদিন পর তার মন্ডুবিহীন মৃত দেহ বাড়ির পেছনে পাওয়া যায়। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো মির্জা বাড়িতে।
স্বামীর মৃত্যুর ৭দিন হয়েছে মাত্র, এরমাঝে হঠাৎ এত রাতে ঈশিতাকে গোসল করতে দেখা বেশ অবাকের বিষয় ।
আরিফ জানে এত রাতে ঈশিতা ভাবির রুমে উঁকি দেওয়া মোটেও ঠিক নয়। তবুও সঠিক জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করছে আরিফের মনে। রুমের কাছে এসে ফিসফিস শব্দে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পায় সে। বেশ উত্তেজনা কাজ করছিলো আরিফের মনে। ঈশিতা ভাবিকে এত দিন ভালো মনে করলেও আজ কেমন সন্দেহ হচ্ছে তার উপরে। আরিফের দেহের প্রতিটি শিরা-উপশিরার রক্ত টগবগ করছে। ঘামের বিন্দু বিন্দু কনা থুতনিতে জড়ো হচ্ছে। এখন তার কী করা উচিত? প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে , চিন্তা শক্তি লোপ পেয়ে যাচ্ছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকবে? সেটাও কী ঠিক হবে?
দরজার ছোট ছিদ্র দিয়ে ভিতরের দৃশ্য দেখবে বলে মনস্থির করে সে । নিচের দিকে হালকা ঝুকে ছিদ্র দিয়ে তাকিয়ে দেখে মাটিতে হুমরি খেয়ে পড়ে আছে একটা জলজ্যান্ত মানুষের রক্ত মাখা লাশ।
তার পাশে বসে ঈশিতা ভাবি অর্ধ নগ্ন অবস্থায় হাতে রক্ত মাখা চাকু নিয়ে ভেজা শরীরে বসে আছে।
ভয়ে গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে যায় আরিফের। ভয়ের শিহরণে কেঁপে উঠে প্রান। লোকটাকে খুন করে ফেলছে ঈশিতা ভাবী ?
আরিফ উঠে দাঁড়ানোর আগেই হঠাৎ দরজা খুলে যায়। “_কী হলো আরিফ বাইরে দাঁড়িয়ে কেনো ভিতরে আসো ।
ঈশিতা যেনো এতক্ষণ আরিফের অপেক্ষাতেই ছিল। আরিফ ভেবাচেকা খেয়ে গেছে। এতদিনে সাধারণ মনে করে আসা ঈশিতা কে ভিষন ভয় পাচ্ছে । কাঁপা কন্ঠে বলে “_ না ভাবী আমি এমনি এখানে আসছি। আমি ঘরে চলে যাই।
আরিফের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় ঈশিতা। “_না ঠিক আছে আমি ভিতরে আসছি।
আরিফ ভয়ের চরম সীমায় পৌছে গেছে। কাঁপা কাঁপা পদক্ষেপ নিচ্ছে। চোখ ফ্লোরে পড়তেই দ্বিতীয় বারের মত অবাক হয় সে । “_একি ? কোথায় গেলো সেই রক্ত মাখা লাশ?
বিড় বিড় করে বলতে থাকে আরিফ ‌। এদিক সেদিক তাকিয়ে লাশটা খুঁজে হতাশ হয় সে । ঘরে কোনো লাশ তো দূরের কথা সামন্য পরিমাণ রক্তের ছিটেফোঁটা নেই। “_ আরিফ কিছু খুঁজতেছো ?
ঈশিতার নরম কন্ঠে আরিফ তার দিকে অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকায় ‌। “_ কই না তো ভাবী কিছু না। আমি তো তোমাকে দেখতে আসছিলাম।
ঈশিতা লাজুক চাহনিতে ধীর পায়ে আরিফের দিকে অগ্রসর হয়। আরিফের কলার চেপে ধরে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার পাশে বসে। “_ এখন দেখো ভালো করে।
ঈশিতা বেশ সুন্দরী। গায়ের রং হালকা শ্যাম বর্ণের। চিকনা দেহ এককথায় অসাধারণ রূপবতী। বয়স আনুমানিক ২৩ – ২৪ বছর হবে । আরিফ ঈশিতার সমবয়সী । ভয় ভয় দৃষ্টিতে ঈশিতার পানে তাকিয়ে রইল। “_ শোনো তুমি চাইলে আমার সব কিছু তোমায় দিতে পারি।
ঈশিতা ভাবির মুখে এমন কথা শুনে আরিফ অবাক হচ্ছে বার বার । কিছু খারাপ ঘটার আগেই ঈশিতা কে ধাক্কা দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে । এখনো তার চোখে সেই রক্ত মাখা লাশটা ভাসছে। ঈশিতা ভাবির এমন আচরন জিবনে দেখেনি সে ‌। হঠাৎ দরজার ঠক ঠক আওয়াজে ঘাবড়ে যায় সে। “_কে দরজা টুকায়?
আরিফের কথায় শব্দ থেমে যায়। বিছানায় নিজের শরীর হেলিয়ে দিয়েছে । কনকনে শীত, বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। তবুও ঘেমে ডুব দিয়ে উঠেছে সে। পুনরায় আবার কেউ দরজা ঠকঠক আওয়াজ করে ‌। এইবার বলার পরেও শব্দ দ্বীগুন বাড়ছে। উপায় না পেয়ে ধীর পায়ে দরজার দিকে অগ্রসর হয় সে । কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দেয়। কেউ নেই । নিজের সাথে এমন অস্বাভাবিক ঘটতে দেখে নিজেকেই সন্দেহ করছে সে। পুনরায় ঘরের দিকে পদক্ষেপ নেয়। আশ্চর্য জনক ভাবে টেবিলে একটা ডাইরি পড়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় আরিফ। কিছু সময় পূর্বেও এখানে কোনো ডাইরি বা খাতা কিছুই ছিলো না। উৎসাহ নিয়ে ডাইরিটি হাতে নেয়। অন্যের ডাইরি ধরা অবশ্যই বাজে অভ্যাস। তবুও ডাইরিটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে। ডাইরি টা মির্জা সিয়ামের । বেশ বড় বড় করে ডাইরির কভারে তার নাম লেখা আছে। মৃত ভাইয়ের ব্যাক্তিগত ডাইরি হাতে পেয়ে পড়ার দ্বীগুন আকাঙ্ক্ষা। হঠাৎ পুনরায় দরজা ধাক্কানির শব্দ। ডাইরিটা বিছানার নিচে লুকিয়ে রেখে দরজা খুলে দেয় সে।
“_ কিরে দরজা খুলতে এত দেরী হলো কেনো?
আরিফের মা সালেহা বেগম হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। তার মানে সকাল হয়ে গেছে। এতটাই দুশ্চিন্তায় ছিলো, যে সময় কখন চলে গেছে টের পায়নি সে। “_না মা আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।
মায়ের মন! সন্তানের মুখ দেখেই বলে দিতে পারে কিছু একটা হয়েছে। “_ আরিফ কি হয়েছে তোর? মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেনো?
“_না মা কিছুই হয়নি তুমি শুধু শুধু ভাবছো।
নাস্তার টেবিলে যেতেই ঈশিতা ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরিফের দিকে। আরিফ ঈশিতার চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে ফেলে। “_ মা ঈশিতা তোমাকে একটা কথা বলবো।
মির্জা হারুন সাহেব মুখে রুটি পুরে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে আছে।
“_ জ্বী বাবা বলেন!
হারুন মির্জা বেশ ভালো মনের মানুষ। ঈশিতার ব্যবহারে অনেক সন্তুষ্ট তিনি। “_ আসলে মা আমি আর তোমার শাশুড়ি চাই তুমি আমাদের কাছে আমাদের পুত্র বধু হয়েই থাকো সারাজীবন । তাই তোমার আর আরিফের বিয়ে দিতে চাই যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে।
বাবার কথায় চোখ বড় বড় হয়ে যায় আরিফের। হৃদস্পন্দন বেড়ে চলছে ক্রমশ। ঈশিতা লাজুক হাসি দিয়ে নিচের দিকে মাথা নামায়। “_ জ্বি বাবা আপনারা যা ভালো মনে করেন। তাছাড়া আমিও চাই সারাজীবন আপনাদের সেবা করতে।
আরিফের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। গত রাতে নিজের চোখে দেখা ঘটনা গুলো বার বার মনে পড়ছে। কিন্তু কী বলবে ? তার কাছে এই দেখার কোনো ভিত্তি নেই যে ___

চলবে __

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে