#মেঘের_আড়ালে২(ফিরে আসা)
#পর্ব_০৯
#লেখিকা_ফাতেমা_জোহরা_নাভিলা
রাত সাড়ে বারোটা দিকে আসিফ আংকেলরা চলে গেলেন নিজ বাসার উদ্দেশে। দুই পরিবার সমাবেশ বোঠকে মিলে ঠিক করা হলো আমার আর ইয়াদ এর পারিবারিক অনুষ্টান হবে আজ থেকে ঠিক এক সাপ্তাহ পর আপি আর ইরফান ভাইয়ার সাথে। এক বাসায় যেহেতু এখন দুই মেয়ের বিয়ে একসাথে হবে তাই এ্যারেঞ্জ মেন্ট ঝামেলা কাজ ও অনেক বেরে গেলো ইতিমধ্যে । আসিফ আংকেলরা জাওয়ার পর পরই আম্মু আব্বু কিছুক্ষন নিজেদের মাঝে আলাপ আলোচনা করে, রিতিমত দাওয়াত এর লিস্ট লিখতে বসে গেছেন সময় যেহেতু হাতে খুব কম। রাত দুইটো বাজে এখন মূহুতে এতো রাতের মধ্যে ও বাসায় ছোটখাটো হট্রগোল তৈরি হয়ে গেয়েছে,খালা,খালু,মামা,মামি,ফুঁপি, ফুপার ব্যস্ততা হৈই হোল্লায়তে। সবায় কমোড় কাপড় বেধে কাজে লেগে পরেছেন।
এতো হৈঁইচৈঁই মাঝে ও আমার বিন্দুমাত্র কিছু ভালো লাগছে না, অতিরিক্ত টেনশনে ভয়ে মাথায় প্রচণ্ড রকমের ব্যাথা টনটন করছে। মনে হচ্ছে মাথায় কোনো টাইমার বোম ফিক্সড করা হয়েছে আর ব্লাস্ট হওয়ার প্রসেস এ আছে এখন। খালামনি আমাকে দেখে হয়তো আমার অব্যস্থা আচঁ করতে পেরে সহানুভূতি হলো আমার জন্য, তাই আমাকে আর আপিকে রুমে যেতে ইশারা দিলেন। উপরে সিঁড়ি পথে পা দিতেই পিছু থেকে আম্মু কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠলেন,,,,,,
.
রিনা ওদের বলে দেয় সকালে জেনো দশটার আগেই রেডি থাকে, কাল শপিং এ যেতে হবে। কোনো প্রকার ভাবে যাতে দেরি না হয়।
.
তুমি চিন্তা করোনা আপা আমি ওদের সকাল সকাল ডাক দিয়ে দিবো, দেরি হবে না।
.
আম্মুর বিপরীতে খালামনি বলে উঠলেন। আর আমাকে চোখের ইশারা দিয়ে খালামনি আসশাষ দিয়ে বুঝালেন সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মুকে একটু সময় দিতে।আমি খালামনির বিপরীতে শুধু খালি অলস ভঙিতে মাথায় দুলালাম।
.
এমনে তেই মেজাজ আমার তিক্ষোতম চ্রটে আছে এর মধ্যে রুমে এসে দেখি কাজিন নামক বিনা সুইচ এর টেপ রের্কডগুলো সব গোল হয়ে খাটে বসে আছে। সাথে ঘা জ্বালানো মতো মুখে তাদের চকচক ক্লোজ আপ, এনার্জি লাইট এডের বাতি জ্বলে আছে।
.
এখানে কি চাই তোমাদের!!! বেরিয়ে যাও বলছি।কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠলাম আমি।
.
লাভ স্টোরি সংজ্ঞাটা জানতে চাই। জামুনা আগে সংজ্ঞা এ টু জেট এর বিবরণ দেয়।দিপ্ত।
.
কোনো সংজ্ঞা নেই।তোমারা আসতে পারো।নূর।। হরাশ হওয়ার সুরে।।
.
বললেই হলো নেই। আমাদের কি নিব্বা ভাবিস বিনা সংজ্ঞাই লেবু পারতে গিয়ে টুপুস করে বিয়ে হয়ে গেলো তোর,এই কথা তুই বলবি আর আমরা হজম করে নিমু সহজে।অই মাইয়া আমাদের কি বোকা ভাবিস আর নিজেকে অতি চালাক নারী ভাবিস, না মালিহা মনে করিস আমাদের কোনটা???যে বংবাং ৪২০ কইবি আর আমরা তা নিমিষে নাইচ্চা মাইননা নিমু বদ্দ এর হাড্ডি ।ফারদিন।
.
দেখ এটা কিন্তু রুলস এর বাহিরে চলে গেলো একদমই। আমরা মিনিমাম হাল্কা পাতলা উপরে একটু ক্রাশ খাইলে ও কাজিন গ্রুপে টুপুস করে শেয়ার করি একে উপর এর কাছে। আর সেখানে তুই তলে তলে টেম্পু চালাইয়া ডাইরেক্ট বিয়া ও করে নিলি। এগুলো মানা যায়,,,,,, একটু বললেই কি হতো ফ্রিতে সাক্ষী দিতে হাজিরায় চলেইই জাইতাম কাজী অফিসে। অনিক।
.
হায়ায়ায়ায়া ভাবতে খুব অবাক লাগে বুঝসো অনিক ভাই,,,,,,, করোনার ট্রেন্ডিং যে এভাবে নিজেদেরই কপালে সুড়সুড় করে চলে আসবে জল্পনাতে ও কল্পনা করিনি কথাটা,বিশ্বাস করো।।। দিপ্ত
.
আর বিশ্বাস।।। অনিক।
.
মানে!!! কি বলতে চাস দিপু,,, বাই এনি চান্স দোস্ত তুই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হসনাই তো।। আল্লাহ।।। ইশারা।।
.
অই চুপ শেওলা গাছের প্রেত্নি ।। যখনই মুখ খুলোস আমার জন্য তখনই অশুভকর কথা সাপ্লাই করস, বেয়াদব মাইয়া কোনো দিন দেখলাম না তোরে আমার জন্য শুভ কিছু বলতে।করোনা ট্রেন্ডিং কি করোনা রে?? কোন দুনিয়াতে বসবাস করস অকাইম্মা ঢেহি ।করোনা ট্রেন্ডিং হলো,,, যারে পিচ্ছিকালে কোলে নিয়ে ঘরছি একসময় আজ তার বিয়ে দাওয়াত পাচ্ছি হাতে অথচ আমি আজ ও সিংগেল রয়ে গেলাম,,,,,, অসহায় ভঙিতে।।। দিপ্ত।
.
তোমরা কি আল্লাহ ওয়াস্তে চুপ হইবা একটু।।। বিনা সুইচ এর টেপ রের্কড গুলি, চললে চলতেই থাকে থামার কানো নাম নেই না। নিচে ফ্লোরে বসে কান্না করে।।।
.
নূর তুই কান্না করছিস কেন।।।। ইশারা।।।
“সবায় হঠাৎ নূরকে কান্না করতে দেখে খাট থেকে নেমে নূরের সামনে এসে দাঁড়ালো। সবার মুখে চিন্তা এসে ভর করলো “নূর কেন কান্না করছে এভাবে।।।
.
তো, আমার কি করা উচিৎ এখন !!! হাসমু হে হে হে করে,(চিল্লিয়ে) বলো চুপ কেন!!!!আমি যে এখনো বাইচ্ছা আছি সহিসালামত তোমাদের চোখের সামনে এটা সুকরিয়া আদায় করো তোমরা আল্লাহর কাছে।।। একদিনেই যে রংধনুর সাত রঙ দেখা হয়ে যাবে আমার আমি কখনো ভাবি নাই। যার কাছ থেকে দূরে জাওয়ার এতো চিন্তা ভাবনা আজ তার সাথেই কিসমত এসে ঝুড়ে গেলো আমার।।।। আল্লাহ।।। মাথায় চুলের ফাঁকে হাত দিয়ে। নূর।।
.
একটু বনিতা ছাড়া ক্লিয়ার কাট করে কথা বলবি আমাদের কি হয়েছে (চিন্তিতো সুরে)। বুঝলাম না ঠিক দূরে জাওয়ার চিন্তা মানে নিচে যতোটুকু শুনে বুঝলাম তুই আর ভাইয়া একে উপরকে ভালোবাসিস আগে থেকে,আজ একটা ভুল তথ্য শিকার হয়ে ভাইয়া রেগে তোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছে, এম আই রাইট!!! দিপ্ত। (নূর এর সামনে হাটু গেড়ে বসে)
.
নূর দিপ্তর প্রশ্নের বিপরীতে,,, তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠল ইউ আর রং ভাইয়া ,,, আমি তাকে না সেই আমাকে ভালোবাসে।।
.
মানেয়য়য়য়য়য়য়!!!!!!(সবায় এক সাথে বলে উঠল)
.
আমি বলছি।।।ইশারা।।।
.
ইশারা থেকে সব শুনে আর নূর এর থেকে কাজী অফিসের ঘটনা শুনে সবায় সুদ্ধ হয়ে নিচে গোল হয়ে বসে আছে। কি ভয়াংকর ঘটনা রিভালভার দিয়ে ভয় দেখিয়ে শেষমেষ বিয়ে করে নিলো।।। কাউর মুখে কোনো কথা নেই সবায় নিরবতা পালন করছে, নূরের কান্না এখন থেমে গেছে।সবায় আড়চোখে নূর এর দিকে তাকাচ্ছে অর মনের মধ্যে যে কি চলছে বুঝতে চেষ্টা করছে।
.
তুই আসলেই খুব বোকা রয়ে গেলি নূর আর সেই পুচকি আছিস বড় আর হলিনা চিন্তা শক্তিতে। (মুচকি হাসি দিয়ে) কাউকে এতো কাছ থেকে এতোদিনে দেখে তুই মিনিমাম তার গের্টাপ চায়চলন দেখে ও বুঝতে পারলিনা সে আসলে কি, লাইক সিরিয়াসলি!!! শেষমেষ অল্লিগল্লি আবারা নাম দিয়ে দিলি।।। হায়,বোকা মেয়ে (মাথায় ঘাটি দিয়ে)দিপ্ত।
.
আউউউউচচচচচচ,,,ভাইয়া।।।নূর
.
গাধি প্রেম নামক কঠিন রোগে পরলে যে কেউ প্রিয়তমাকে এক নজর চোখে দেখার জন্য ঘন্টা পর ঘন্টা অপেক্ষা প্রহর গুনতে পারে। তাই বলে সে অল্লিগল্লির আবারা হয়ে যায় না।আর যাই হোক আমার সাতাশ বছর এর এক্সপ্রিএন্স বলছে ইয়াদ খারাপ না নিচে যতোটুকু স্কেন করে বুঝেছি তাকে, সে তোকে উম্মাদ এর মতো ভালোবাসে খুব করে চাই তাই তো এই গাধির জন্য তার এতো পাগলামো। উফফফফফ।।দিপ্ত।।
.
তাহলে এখন কি করবো আমি । ।।
.
কি করবি বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে সংসার করবি,বছরে বছরে ক্রিকেট টিম গড়ে তুলবি। মজার করে বললো।।। দিপ্ত।
.
ভাইয়া।।।কাধে চাপট দিয়ে।।
.
এখন আজাইরা প্যারা গাছ মাথায় না ভুনে। এক ঘুম দেয় মনকে শান্তি হতে দেয় একটু কাল বিয়ের শপিং এ যেতে হবে তো। কপালে চুমো দিয়ে।তোকে সব সময় চঞ্চলতা মানায় বনু এভাবে লেটকানো চেহারাতে মানায় না। তাই অযথা মাথায় প্রেশার নিস না। যাহ ফ্রেশ হয়ে এসে এক ঘুম দে।দিপ্ত।
.
ভাইয়ারা সবায় নিচে চলে গেল,,আমি উঠে দীর্ঘ নিশ্বাস নিলাম।এখন মনটা কিছু হাল্কা লাগছে ভাইয়ার কথা শুনে, মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে ভারি যে পাথড়টা এতোক্ষন ছিলো তা সরে গেলো ।ঘুমে চোখ খুব ভার হয়ে আসছে হামি নিয়ে দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৪:১০ বাজে এইমা। অলস ভঙিতে ওয়াশরুমে দুরত্ব চলে গেলাম ফ্রেশ হতে,ফ্রেশ হলে রিলাক্স এ ঘুম দিতে পারবো। ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম আপু আর মালিহা আমার বেডে শুয়ে আছে তার মানে আজ তারা আমার রুমেই ঘুমাবে বুঝতে আর সমস্যা হলোনা। বেডে সাইডে ঘা এলিয়ে দিতেই ফোনের মেসেজ টুংটাং টোন বেজে উঠল, চোখ থেকে কাথাঁ নামিয়ে বালিশ এর পাশে থেকে ফোন নিয়ে দেখি মেসেঞ্জার জুগে কেউ ফোনে মেসেজিং দিয়েছে।
প্রিয়তমা 🥰🥰
আজ কি জানো!! যাকে দুই শব্দে যাকে বলে বাসর,,,, যার মাঝে ভুনে আছে এক ঝাক স্বপ্ন তোমার জন্য এই সুপ্ত অনুভুতিতে আমার মনের হ্রদ মাঝারে গবিরে,,,, আর তার সাথে তোমার মুখে একঝাক লজ্জা আভায় যাহ আমার জন্য থাকবে তোমার মুখপানে ।আজকে দিনকে গিরে অনেক ইচ্ছে ছিলো হাত হাত ধরে ব্যালকনি বসে তোমার হাতে কফি খাবো আর গল্প করবো রাত জেগে।তোমার কোলে মাথা রেখে অনেক কিছু বলা জানানো ছিলো তোমাকে। জানো তো মনের গবিরে এতোদিন তোমার জন্য সব কথা জমিয়ে রাখতে রাখতে মন যে বড্ডো পাহাড় সমান ভার হয়ে গেছে আমার শ্বাস নিতে ও খুব কষ্ট হচ্ছে এখন। তুমি বড্ডো খারাপ জানো আমাকে এই তুমিবিহীন এ আসাক্ত করে এখন দূরে বসে দিব্বি ভাবে আরামসে ঘুমানো হচ্ছে মেডাম। ঘুমিয়ে নিন আমার ও সামনে দিন আসছে আমাকে খুব জ্বালিয়েছেন এতোদিন । একবার শুধু আপনাকে খুব করে কাছে পাই তার পর সব সুদেআসলে সদ নিবো বলে দিলাম কোথাও আর যেতে দিবো না অনেক পালাই পালাই করে বেড়িয়েছন আর না।
ইতি আপনার
“সাইকো জামাই”
চলবে