#মেঘের আড়ালে 💞
#পর্ব__০৯
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা
১৯.
“সাদিয়া স্কুলে যাওয়ার পরই বাধে সমস্যা”।ইয়াদ অর খালামনি কে বলে ও সাদিয়াকে বিয়ে করতে চায় আজ এখনি।।। সবায় ইয়াদ এর কথা শুনে বড় সড় হার্ট ফেইল টাইপ বিষম খায়।।। ইয়াদ এই সব কি বলছে??? আদৌ কি বুঝে বলছে??? আর তার থেকে বড় কথা সাদিয়া সবে মাএরো দশম শ্রেনীতে পড়ে আর বয়স ও মাএরো ষোল।এখন বিয়ে কিভাবে সম্ভব,,,,,,,,ইয়াদ এর কথায় সেই দিন আমরা কেউই রাজি হয়নি আর রাজি হবো বা কেন,এভাবে কি মুখের কথায় কোন বিয়ে দেওয়া যায় । কিন্তু অর জিদের ভসে পরে এক প্রকার হেরে ইয়াদ আর সাদিয়ার বিয়ে ঠিক করা হয় তিনবছর পর সাদিয়ার এইচ এস সি পর হবে ওদের বিয়ে। ইয়াদ প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যায় কারন সাদিয়া যে এখন খুব ছোট বিয়ের জন্য। বিয়ের বিষয় কথা সবায় জানলেও সাদিয়াকে এই ব্যাপারে কিছু জানাতে আপাততো পরীহ্মা শেষ হওয়া না পর্যন্ত নয়ন না করে।।।।।
.
.
আমার পঁচিশ বছর এর ছেলে যেই কিনা কোনো মেয়ের দিকে এর আগে ভালো করে ভুলে ও চোখ তুলে তাকাতো না, সেই কিনা হঠাৎ এইভাবে ষোল বছরের এক মেয়ের মায়ার মোহতে এমন ভাবে পরে যাবে, যাকে সেই প্রথম দেখাতেই বিয়ে করতে চায় ডাইরেক্ট ।।(মুচকি হেসে)।
.
.
সেইদিনের পর থেকে শুরু হয় ইয়াদ এর অদ্ভুত পাগলামো গুলো সাদিয়ার প্রতি ধীরে ধীরে। সাদিয়াকে ঘিরে তার সব চিন্তা ভাবনা ছিলো উম্মাদ এর মতো সাদিয়াকে ভালোবাস তো আমার ছেলে।
.
.
“উনি কাউকে এতো ভালোবাসে শুনেই বুকে বা পাশে কেমন জানি এক পিনপিন ব্যাথায় অনুভবে মোচড় দিয়ে উঠল,,,,,,,, কথা গুলো শুনতে কোথাও আমার খুব খারাপ লাগছে কেন।।।। আর চাপা অভিমানই বা হচ্ছে মনে উনার উপর ? কেন জানি না অই সাদিয়া মেয়ের উপর খুব রাগ উঠছে বিষাদহীন ও লাগছে শুনতে,,,,, কাপা কাপা আওয়াজে তার পর,,,,,, কি হয়েছিলো মামনি।
.
“এর পর না হয় আমি বলি নূর”,,,,,
.
হঠাৎ কথার আওয়াজ অনুসরণ করে পিছে প্রশ্ন বোধক চোখে তাকিয়ে দেখি জিজু দাঁড়িয়ে আছে।।।।। জিজু তুমি,,,,,,
.
হ্যা আমি মলিন ভাবে তাকিয়ে চোখ দুইটো পানিতে কিছুটা ছলছল করছে,,,,, মামনির সামনে এসে কাধে হাত দিয়ে,,,, আম্মু আমি বলছি অকে সব,,,,,,,, দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে,,,,,
.
ভাই সাদিয়াকে খুব রেস্ট্রিকশনে রাখতো সেইদিন এর পড় থেকে, চোখের কড়া নজরে শাসনে রাখতো একটু উনিশ থেকে বিনিশ হলেই পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতো আমার ভাই (মলিন হেসে)। সাদুকে কাউর সাথে সহজে মিশতে দিতো না ভুলে কোন ছেলের সাথে তো আরো আগেনা ।।। অপরিচিত কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে কাউর কাছ থেকে এই তথ্য শুনলেই খুব রেগে যেতো (আমার ভাই যে খুব পুরতো সেই লেবেল এর অকে হেসে কেউর সাথে কথা বলতে দেখলেই)। আর বেচারি সাদিয়ার উপর রাগের সব টনেডোর ঝড় বয়ে যেতো।।। কোথাও ভুলে একা বের হতে ও দিতো না। কোন ছেলের বা অপরিচিত কাউর সামনে ও বেশিক্ষণ থাকতে দিতোনা আর ঘোমটাহীন ছাড়া গেলেতো কথা নেই ও রেগে যেতো খুব।।।।। দিন দিন অর ভালোবাসায় উম্মাদ হয়ে যাচ্ছিল আমার ভাই তাইতো অর সামান্য সমস্যা হলে চোখের পানি দেখলে ও সহ্য করতে পারতো না। তখন ভাই নিজেকে এক প্রকার দোষারোপ করতে শুরু করতো সব কিছুর জন্য পাগলের মতো করে। ভাইয়ের ভালোবাসায় পাগলামোটা আর বাচ্চামো টা বড্ড বেশী ছিলো, অভস্য এতে আমাদের দুই পরিবার কোনো সমস্যা ছিলো না আমরা অর এতো ভালোবাসা আর পাগলামো দেখে খুশি হতাম,আর বলতাম যে ও সাদিয়াকে অনেক ভালো রাখবে অর কোনো কষ্ট কখনো অনুভব হতে দিবে না ,,,, না আজ আর না ভবিষ্যৎ।।।।
.
মামুনিঃ জানিস মামনি আমার ছেলে এতোই পাগল ছিলো নারায়ণগঞ্জ থেকে খুলনা রোজ সকালে বাই রোডে করে যেতো সাদিয়াকে একবার এক নজর দূর থেকে দেখার জন্য । (আচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে)
২০.
ইরফানঃ সাদিয়া প্রথমে ভাইকে একদমই সহ্য করতে পারতোনা তার পাগলামো তে খুবই বিরক্তি হতো, অবশেষ ভাইয়ের ভালোবাসা দেখে পরে ধীরে ধীরে অয় ও আস্তে আস্তে মেনে নিতে শুরু করে ভাইয়াকে,,,,,, ভালোবেসে ফেলে। এর মাঝে আমাদের দুই পরিবার হাসি খুশিতে দেখতে দেখতে কখন যে তিনটি বছর কেটে যায়। এর মধ্যে ভাইয়ার সাদিয়ার প্রতি পাগলামো গুলো কিছুটা কমে আসে কিন্তু ভালোবাসা আগের থেকে অনেক গুন বেরে যায় । বলে না দূরে থাকলে ভালোবাসাকে ভালো করে উপলব্ধি করা যায়। দিন গুলো অদের খুব ভালো যাচ্ছিল একে উপরকে ঘিরে।।।।।।
.
.
” এখন সাদিয়া কোথায় জিজু কাপা কাপা গলায়,,,,,,,উনার সাথে কেনো নেই??? এতোই যদি একে উপকে ভালোবাসতো তারা,,,,,, ওদের কি বড় সড় কোন ঝগড়া হয়েছিলো??? আর উনার অব্যস্থা এমন কি করে হলো!!!!
.
.
“নেই।।।।ভ্যাবলেশহীন ভাবে।।।।
.
নেই মানে???? কোথায় উনি??
.
“যেখান থেকে ফেরা আদৌ সম্ভব না কখনো।।।।। কান্নামিশিতো কাপা কাপা আওয়াজে”।।।
.
মানে!!!!
.
মামনিঃ সাদিয়ার এইচ এস সি পর,,,, ইয়াদ আর সাদিয়ার বিয়ের ডেইট ঠিক করা হয় প্রায় এক মাস পর ,,,,,, এনগেইজমেন্ট এর বেশ কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে বান্দরবন যাচ্ছিলো সাদিয়া নয়ন আর অর বাবা সাদিয়ার ফুঁপির বাসায় কিছুদিন এর জন্য ঘুরতে আর ওদের ইনভাইট করতে।অইখান থেকে আসার পথেই অদের কাপা কাপা আওয়াজে ওরা যেইই বা ববাসে টায় করে আসছিলো সেই বাস,,,,,,, স স সড় আড়ক দ দূরঘটনা হয় কান্না মিশিতো শুরে।।।।।।জা জা জানিস মামনি অকে দূরঘটনার স্থলে অ অনেএএক খুঁজেছি কিন্তি পাইনি আমরা। কিন্তু নয়ন আর সাদিয়ার বাবার নিথর দেহ পেয়েছি,,,,,,,ফুঁপিয়ে কান্না করে।যেখানে এক্সিডেন্টটা হয় অটা পুরোটা ছিলো পাহাড়ি এলাকা। অইখান থেকে পরলে আদৌ বাচাঁ সম্ভব না কাউর।।।।।।। আমার ছেলে পাগল ছিলো না পাগল হতে বাধ্য হয়েছে।।।।অনেক খুঁজেছে অকে পাইনি।।।।।।।। দিন এর পর দিন মাস এর পর মাস আমার ছেলে পাগল এর মতো নির্ঘুম হয়ে ওকে তন্য তন্য করে খুঁজে বেড়িয়েছ সেই যায়গায় কিন্তু পাইনি।।।।।। ইয়াদক তখন উম্মাদ এর মতো করতো সামলানো,,,,,, শান্ত করা খুব দ্বায় হয়ে যাচ্ছিল আমাদের কাছে দিন দিন।।
“তখন ইয়াদ এর মানসিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না দিন দিন অর পাগলামো গুলো বেরে যাচ্ছিল।শারিরিক অবস্থা দিন দিন আস্তে আস্তে ও খুব খারাপ যাচ্ছিল। তখন না পেরে বাধ্য হয়ে ছেলেকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হয় আমাদের। ডাক্তার, নার্স যাকেই সামনে পেতো তাকেই চিল্লিয়ে বাচ্চাদের মতো বায়না করে কান্না করে বলতো সাদিয়াকে এনে দিতে।।।।।।।আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে।।।।।।।। তোর আব্বু ইয়াদ এর এই করুন অব্যস্থা দেখে তখন আমাদের সাজেস্ট করে সাইকিয়াট্রেস্টের কাছে যেতে।।।।।। হসপিটাল এর ডাক্তার ও আমাদের তখন ঢাকা এক সাইকিয়াট্রেস্টের নীল এর কথা বলেন । কোন উপায় না পেয়ে ইয়াদকে সেইখানে নিয়ে যাই আমরা…….
জানিস মামনি আমার ছেলের শারীরিক অসুস্থতা যটতা না খারাপ ছিলো তার চেয়ে বেশি কষ্ট অর অসুখ মন মানসিকতায় ছিলো।। পরিস্থিতি সম্মুখীনে আমার চঞ্চল হাসি খুশি সর্বদা থাকা আমার ছেলে চুপ চাপ গম্ভির ঘর বন্দী হয়ে যায় দিন দিন ও হাসতে কথা বলতে যেমন ভুলেই গেছে আমাদের সাথে। কিন্তু হঠাৎ ইরফান এর বিয়ের দিন ও তিন বছর পর সেই দিন হেসেছিলো তোর কথায়।।।।।।।আমি জানি মামনি আমি তোর বাবা সেইদিন তোর সাথে ঠিক করিনি।।।।।আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে অনেকটাই সার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম তাইতো তোর আব্বু থেকে তোকে চেয়ে বসলাম,,,এই তিনটে বছর পর আমার ছেলে যদি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে তোর জন্য হয়েছে।।।।। আগের মতো যদি কিছুটা আমাদের সাথে নরমাল হতে পেরেছে শুধু তোর কারনে।। হাত ধরে।।।।পারবিনা মামনি আমার ছেলেকে আগের মতো করে তুলতে বলনা মামনি।।।
চলবে,,,,
[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি।]