মিসেস চৌধুরী পর্ব-১০

0
1891

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_10
#Writer_NOVA

হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ব্যক্তিটার হাতে অনেকগুলো নানা রংয়ের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহার নাকে মন মতোয়ারা একটা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে।কেন জানি পারফিউমের ঘ্রাণটা নাকে আসতেই মুহূর্তে মনটা ভালো হয়ে গেল তার।ছেলেটা কানের কাছে মুখটা এনে লো ভয়জে বললো।

—Many many happy returns of the day.Happy birthday too you,my dear Mrs.Chowdhury.May Allah bless you.Now you are my sweet hurt.Don’t wary dear I am always with you.Because you are only mine.Take care yourself.Allah Hafiz.❤️❤️

ফিহা এই ভয়েজটা সে আগেও কোথাও শুনেছে।কিন্তু কোথায় শুনেছে তাতো মনে নেই। চোখ ধরে থাকা ব্যাক্তিটা কে সেটা ফিহা জানে না।তবে নিজের চোখকে তার হাত থেকে ছুটাতেও ইচ্ছে করছে না।এই মানুষটাই আজ এমন বিশেষ দিনে তাকে সর্বপ্রথম জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানালো।ফিহা নিজের মনের মাঝে অন্য রকম একটা ফিলিংস খুঁজে পাচ্ছে।
আস্তে আস্তে চোখের বাঁধন ঢিলে হয়ে এলো ফিহার।কিন্তু ফিহা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।বেশ কিছু সময় পর চোখ খুলে অবাক হলো ফিহা।কারণ ওর আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না সে। ফিহার অবাক সাত আসমানের চূড়ায় উঠলো যখন সে দেখলো দরজা ভেতর থেকে লক করা।সারা কেবিনের এদিক সেদিক মানুষটাকে খুঁজতে লাগলো সে।কিন্তু কাউকে দেখলো না।

ফিহাঃ আশ্চর্য কে ছিলে এখানে?আমার চোখ ধরেছিল কে?আমাকে জন্মদিনের উইশ করে গেল।এটা কি ভ্রম ছিলো।না,এমন টাতো হওয়ার কথা নয়।তাহলে কে এসেছিলো এখানে?তার লো ভয়েজটা আমার কাছে অন্যরকম কিছু মনে হলো কেন?যদি কেউ এসে থাকতো তাহলে গেলো কোথায়?এতো তাড়াতাড়ি তো যাওয়ার কথা নয়।আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি দরজাটা ভেতর থেকে লক করা।সে আসলো কি করে আর গেলোই কিভাবে?আমি কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি নাকি।আমার মাথা ঘুরছে।কি হলো আমার সাথে?হঠাৎ করে কি ম্যাজিক হয়ে গেলো।আমার যে জন্মদিন সে জানলোই বা কি করে?

মাথায় হাত দিয়ে ডোভেনে বসে পরলো ফিহা।সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে গেছে তার।হঠাৎ টেবলের দিকে তাকাতেই ফিহার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেল।চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে অনেকগুলো রং-বেরঙের হার্ট শেইপ বেলুন।ফিহা প্রায় দৌড়ে সেখানে চলে গেল।একটা টকটকে লাল বেলুনে ছোট একটা চিঠির খাম।চিঠির খামটা হাতে নিয়ে ভেতর থেকে চিঠিটা বের করলো।চিঠির ভাজ আস্তে আস্তে খুললো ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে সবকিছু স্বপ্ন। চিঠির মধ্যে লেখা ছিলো।

“This is only for you. My little surprise. You are my sweet hurt dear.Because you are only me Mrs. Chowdhury.”

চিঠিটা হাতে নিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে ফিহা।ওর কাছে মনে হচ্ছে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে। একটু পরেই সব আগের মতো হয়ে যাবে।নিজের গায়ে চিমটি কেটলো সে।ব্যাথা পেয়ে মৃদু শব্দও করলো।কিন্তু এখনো ঘোর কাটেনি ফিহার।বুকের বা পাশটা সমান তালে ঢিপঢিপ শব্দ করেই যাচ্ছে। কে হতে পারে? এই চিন্তায় বিভোর সে।তার তো কোন বয়ফ্রেন্ডও নেই যে এভাবে হুট করে এসে উইশ করে যাবে।কিছু একটা ভেবে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলো ফিহা।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ ওর সামনে
একজন পিয়নকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো ফিহা।

ফিহাঃ এই যে শুনুন।
—জ্বি বলুন।
ফিহাঃ আমার কেবিন থেকে কি কাউকে বের হতে দেখেছেন?
—ম্যাম, আমি অনেক সময় ধরে এখানে আছি।কিন্তু আপনার কেবিনে কাউকে ঢুকতেও দেখিনি আবার বের হতেও দেখেনি।
ফিহাঃ তাহলে কি করে ভেতরে আসলো সে?
(বিরবির করে)
–কিছু বললেন ম্যাম??
ফিহাঃ না কিছু না।আপনি এখন আসতে পারেন।
—ওকে ম্যাম।
ফিহাঃ উনার কণ্ঠটাও এতো চেনা চেনা মনে হলো কেন?পুরো চেহারাও তো দেখলাম না।ক্যাপ পরা ছিলো বলে মুখটা দেখতে পায়নি।নিচের দিকে তাকিয়ে সব কথার উত্তর দিলো।অদ্ভুত লাগলো তো ব্যাপারটা।আমার চেহারার দিকে তাকালো না কেন?

নিজের মনে কথাগুলো বলে পেছন দিকে ঘুরতে ঘুরতে বললো
ফিহাঃ আপনার সাথে আমার—–যাক বাবা, কোথায় গেলো?মাত্র তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। এই লোকটাও তো হাওয়া হয়ে গেলো।আমার সাথে আজ হচ্ছেটা কি?আজ সবকিছু অদ্ভুত, অদ্ভুত লাগছে।ভূতের পাল্লায় পরলাম নাকি আমি।

মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে কেবিনে ঢুকলো ফিহা।চেয়ারে বসে দুই হাতে মুখ ঢেকে পুরো অঙ্ক মিলানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

সিঁড়ি বেয়ে খুব জলদী করে নেমে পরলো আদিয়াত।আরেকটু সময় থাকলে সে ধরা পরে যেতো ফিহার কাছে। আদিয়াতের গায়ে অফিসের পিয়নের পোশাক,মাথায় বিশাল বড় ক্যাপ।তখন ফিহা আদিয়াতকেই ডাক দিয়ে কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।আদিয়াত বুঝে যায় যে ফিহা ওর দিকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে। মানে সন্দেহ করছে।বেশ কয়েকবার ফিহা ওর মুখ দেখার জন্য উঁকি ঝুঁকিও মেরেছে।কিন্তু মুখ দেখতে পারে নি।

আদিয়াতঃ এই আকশির জন্য যে আমাকে আরো কত কিছু করতে হবে আল্লাহই জানে।আর এক মিনিট থাকলেই ধরা খেয়ে যেতাম।তারপর নির্ঘাত চোর ভেবে গণ ধোলাই দিতো।আকশিটা শেষ পর্যন্ত আমাকে ওদের অফিসের পিয়নের ড্রেসও পরালো।একবার ফিহার কেবিন থেকে নিচে নামুক ও।আজ ওর খবর আছে। আকশির একদিন কি আমার যতদিন লাগে।এই ছেলেটার কখন কি হয় আমি নিজেই বুঝি না।

আপন মনে কথা বলতে বলতে আদিয়াত অফিসের পেছনে এসে দাঁড়ালো। তখনি পেছন দিক থেকে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে এলো আকশি।ফিহাকে পেছন থেকে চোখ আটকিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা আকশিই জানিয়েছে। আর আদিয়াতকে পিয়নের পোশাক পরিয়ে বাইরে পাহারা দিতে রেখে গিয়েছিলো।ফিহার রুমের দক্ষিণ দিকে একটা ছোট জানালা আছে। যেটায় কোন গ্রীল নেই।অবশ্য অনেক উচুতে থাকার কারণে গ্রীল বা কাচ লাগানোর প্রয়োজন মনে করেন নি আকশির বাবা।জানালা না বলে ছোট খুপরী বললেও ভূল হবে না।পাইপ বেয়ে উঠে সেই জানালা দিয়ে কেবিনে প্রবেশ করা যায়।তাই আকশি টুপ করে চোরের মতো সবার অগোচরে বেলুন নিয়ে ফিহার কেবিনে ঢুকে ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফিরে এসেছে।

আকশিঃ বাপ রে আরো কত কি যে করতে হবে?

শরীরের ধূলা ঝারতে ঝারতে আকশি কথাটা বললো।আদিয়াতের দিকে তাকাতেই দেখে আদিয়াত ওর দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।

আকশিঃ কি হয়েছে? চোখ দুটোকে এমন করে রেখেছিস কেন?মুখটাও তো পটকা মাছের মতো ফুলিয়ে রেখেছিস।

আদিয়াতঃ ইচ্ছে করছে তোর মাথাটা সামনের ঐ ইট দিয়ে ফাটিয়ে ফেলতে।আমাকে শেষ পর্যন্ত তুই তোদের অফিসের পিয়ন বানিয়ে ফেললি।

আকশিঃ ওহ এবার বুঝেছি তোর মুখটা পটকা মাছের মতো ফুলানো কেন?তুই পারমানেন্টভাবে পিয়নের চাকরীটা চাচ্ছিস ভাই। দেখ আমি তো এখন এই কোম্পানির মালিক নই তাই আমাকে এসব বলে লাভ হবে না।তুই বরং এই ব্যাপার নিয়ে ফিহার সাথে কথা বল।ফিহা চাইলে তোকে দয়া মায়া করে পিয়নের পোস্টে চাকরী দিতে পারে।ও যদি নাও দেয় তাহলে তুই কান্না করিস না।আমি যখন মালিক হবো তোকে তখন অবশ্যই পিয়নের পোস্টে একটা চাকরী দিবোই দিবো।(এক চোখ মেরে)

এমনিতে আদিয়াত আকশির ওপর রেগে বোম হয়ে ছিলো।আর এখন আকশির কথাগুলো ঠিক আগুনে ঘি ঢালার মতো ওর মনে কাজ করলো।

আদিয়াতঃ শালা,তোর জন্য এতকিছু করছি আর তুই আমাকে কি না তোর কোম্পানিতে পিয়নের চাকরী দিবি।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।আমার বাপের টাকা কি কম পরছে নাকি?তোর অফিসে আমাকে পিয়নের চাকরী করতে হবে।আমি আমাদের এতো বড় কোম্পানি ছেরে তোর পিছনে সময় নষ্ট করছি।আর তুই কি না বলছিস আমাকে পিয়নের চাকরী দিবি।যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর।তুইও তো এই প্রবাদ বাক্যের মতো করলি।যা তোর সাথে কোন কথা নেই। (রেগে)

আদিয়াত রেগে চলে যেতে নিলে আকশি ওর হাত ধরে ফেলে।আকশি মিটমিট করে হাসছে।একটু বেশি রাগানো হয়ে গেছে আদিয়াতকে।এখন নিজেদের রাগ মিটিয়ে না নিলে পরে আরো দুরত্ব বেড়ে যেতে পারে।সেটা ভেবে আকশি বললো।

আকশিঃ ধূর আমি তো মজা করছিলাম।আর তুই সত্যি ভেবে নিয়েছিস।তুই না থাকলে আজ আমি সবার আগে ফিহাকে বার্থ ডে উইশ করতে পারতাম না।

আদিয়াতঃ ফিহার যে আজ বার্থ ডে সেটা তুই জানলি কি করে?

আকশিঃ ঐদিন মিটিংয়ে ফাইল চেক করে জানতে পারি।ওর নামের জন্য ফাইল ওপেন করলেও ওর নাম জানতে পারি নি।কিন্তু তখন বার্থ ডে মনে রাখি।তাই আজ উইশ করে দিয়েছি।এমনভাবে উইশ করেছি যে আজ সারাদিন ওর সাথে কি হয়েছে সেটা ভেবে কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারবে না।

আদিয়াতঃ আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি??
আকশিঃ হুম বল।
আদিয়াতঃ তুই কি ফিহাকে ভালবাসিস?
আকশিঃ হুম।(অন্য দিকে তাকিয়ে)
আদিয়াতঃ সত্যি 😲।
আকশিঃ হুম😐।
আদিয়াতঃ ভাই তাহলে অবশেষে তুইও কারো প্রেমে পরলি।আমারতো বিশ্বাস হচ্ছে না।
আকশিঃ তোর বিশ্বাসের জন্য আমি কি করতে পারি?
আদিয়াতঃ ধূর এটাতো কথার কথা।আমার এমনি তোর ওপর সন্দেহ হচ্ছিল। তুই যখন ফিহাকে দালানের পাইপ বেয়ে বেলুন নিয়ে গিয়ে উইশ করে এলি তখনি আমি সিউর হয়ে গেছি।
আকশিঃ হবিই তো।তুই তো আবার প্রেমে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিস।
আদিয়াতঃ একটা কথা।তুই যে গ্যাস বেলুন কোমরের সাথে বেঁধে ওপরে উঠলি তখন যদি বাতাস বইতো তাহলে তোর অবস্থা কি হতো ভাব তো।তোকে তো বেলুনসহ উড়িয়ে নিয়ে যেত।অবশ্য তোকে তো আকাশে তুলতে পারবে না।তোর যা বডি।
(মুখ টিপে হেসে)
আকশিঃ খুব মজা নিচ্ছিস।আমার তো ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছিলো।কি করে যে উঠলাম তা ভেবে এখন আমার হাত-পা কাঁপছে।
আদিয়াতঃ বলতে হবে তোর ভালবাসার পাওয়ার আছে।যে ছেলে একতলার থেকে দোতালায় উঠতে চাইতো না সে পাইপ বেয়ে চার তালায় উঠে গেছে। ভাবা যায় এগুলো।ভালবাসার মানুষের জন্য কতকিছু করে আসলি।সবে তো শুরু। আরো কত কি যে দেখতে হবে রে।

—-কে কে রে ঐ খানে কথা বলে কে??

দারোয়ানের গলার স্বর পেয়ে দুই বন্ধু পরিমরি করে উল্টো দিকের গেইট দিয়ে দৌড়।তাদের আর পায় কে?নিজের অফিসের দারোয়ানের ধাওয়া খেয়ে আকশি এখন আপাতত রাস্তা দিয়ে দিশাহারা হয়ে দৌড়াচ্ছে।

অন্য দিকে ফিহা চিঠির খামের এক কোণা ঠোঁট দিয়ে ধরে রেখে ভেবেই চলেছে।কে দিতে পারে এটা?মানুষটাই বা কে ছিলো?সবকিছু তার কাছে এখন ধোঁয়াসা, ধোঁয়াসা লাগছে।আজ সারাদিন তার এই কথা চিন্তা করতে করতেই কাটবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে