মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৬

0
1723

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_06
#Writer_NOVA

আদিয়াত ও আকশি আজ ছদ্মবেশে অফিসে এসেছে।ফিহা আজ কোম্পানির সব ক্লাইন্টের সাথে মিটিং রেখেছে।ওরা দুই বন্ধু ক্লাইন্ট সেজেই এসেছে।
দুজন এমনভাবে সেজে এসেছে যে কেউ ওদের দেখলে চিনবে না।আলগা দাড়ি,চুল,তিল লাগিয়ে ভিন্ন ধরনের বেশ ধরেছে দুজন।আবদুল আজিজ সাহেব ওদের দুজনকে ফিহার কেবিনে ঢুকলো। ফিহা অনিয়াকে চামচ দিয়ে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছিলো।সারা মুখে অনিয়ার খিচুড়িতে মাখামাখি। তাতে যেনো অনিকে আরো বেশি কিউট লাগছে।

আবদুলঃ ছোট বউমা আসবো?
ফিহাঃ কতবার বলেছি চাচা,আপনি আমার থেকে অনুমতি নিবেন না।নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।

ফিহা অনির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।আকশি ও আদিয়াত এমনভাবে এসেছে যে আবদুল সাহেবেও চিনে নি।আর এদিকে আবদুল সাহেবের মুখে ছোট বউমা ডাক শুনে আকশির মাথা ঘুরে গেছে। ফিহা অন্য দিকে ঘুরে থাকায় এখনো দেখি নি।আবদুল সাহেব আকশির কানের কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বললো।

আবদুলঃ আমাদের ছোট বউমা খুব ভালো। আকশি বাবা নিজের জন্য একটা পারফেক্ট মেয়ে খুঁজে নিয়েছে।বউমার সবদিকে নিখুঁত নজর। দেখেন না স্বামী নেই তারপরও সবকিছু নিজে একা সামলে নিচ্ছে। কোন অভিযোগ করে না।আমাদের দিদিভাই তো বউমার জীবন।
ফিহাঃ চাচা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন।

তারা তিনজন ভেতরে ঢুকলো। টেবলেট টেবিলের সামনে চুপ করে বসে ছিলো।হঠাৎ একটা পরিচিত ঘ্রাণ পেয়ে আকশির সামনে এসে ঘুরঘুর করতে লাগলো।
আবদুলঃ ছোট বউমা তোমার সাথে পরিচয় করতে নিয়ে এলাম এদের।
আবদুল সাহেবের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে ঘুরলো ফিহা।সামনে আকশি ও আদিয়াতকে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আবদুল সাহেবের দিকে তাকালো।
আকশিকে দেখিয়ে আবদুল চাচা বললো।
আবদুলঃ উনি হলেন মি.সুমন পাটোয়ারি।
ফিহাঃ পাটোয়ারি আবার কি রকম বংশ পরিচয়?
(মনে মনে)
এবার আদিয়াতকে দেখিয়ে বললো
আবদুলঃ উনি মি.সুমন পাটোয়ারীর ভাই সোহেল পাটোয়ারী।

আকশি ও আদিয়াত হ্যালো বলে হাত বাড়িয়ে দিলো ফিহা সুন্দর করে একটা সালাম দিলো।কিন্তু হাত মিলালো না।সেটা দেখে আকশি কিছু সময় ফিহার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
আকশিঃ না,মেয়েটাকে দেখে তো ফ্রড মনে হচ্ছে না।ব্যবহারেও অমায়িকতার ছোঁয়া রয়েছে। আমার ভাতিজীর তো বেশ খেয়াল রাখে মনে হচ্ছে। কিন্তু টেবলেটের জন্য আবার বিপত্তি না বেঁধে যায়।সে যে আমায় চিনতে পেরেছে তা আমি বুঝে গেছি। আমার সামনে যদি টেবলেট এরকম ঘুরে ঘুরে ঘনঘন লেজ নাড়ে তাহলে আমি ধরা পরে যাবো।আল্লাহ রাস্তা দেখাও।আমি এখন ধরা পরতে চাই না। এখন ধরা পরলে আমি সব রহস্যের সমাধান করতে পারবো না। (মনে মনে)
ফিহাঃ বসুন, মি.পাটোয়ারী।
আকশিঃ হ্যাঁ,ম্যাডাম তাতো বসতেই এসেছি।আমাদের এখনো কত কাজ বাকি।(চেয়ারে বসে)

আনমনে কথাটা বলতেই আকশিকে আদিয়াত কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারলো।

ফিহাঃ আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বললেন?
আকশিঃ না মানে আমি বললাম যে এখন কি বসে থাকলে চলবে।মিটিংটা জলদী সেরে নিলে ভালো হতো।আমাদের অফিসেও তো কাজ আছে।
ফিহাঃ ওহ বুঝতে পেরেছি। আমার বাচ্চাকে খাওয়ানো শেষ হলেই আমি মিটিং শুরু করবো।এক মিনিট (একটু ভেবে)আমি তো ১১ টার সময় মিটিং শুরু করবো বলেছি।এখন বাজে ৯টা ৪৫। আপনারা এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন যে??

অনির মুখে খিচুড়ি ভর্তি চামচ দিতে দিতে কথাটা বললো ফিহা।আকশি আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে মুখটা শুকনো করে ফেললো।যার মানে হলো ভাই এবার তুই সামলা।আমি পারবো না।

আদিয়াতঃ আসলে ঢাকার রাস্তায় তো ভীষণ জ্যাম থাকে।আমরা ভাবলাম জলদী রওনা দেই। যদি জ্যামে পরি তাহলে তো মিটিং-য়ে এটেন্ড করতে পারবো না।তাই জলদী চলে এসেছি।
ফিহাঃ ওহ্ ভালো।
আকশিঃ এই কুকুর কি আপনার?কখন থেকে আমার পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর করছে।আমার অবশ্য এসব কুকুর ছানা পছন্দ না।

আকশির কথা শুনে আদিয়াত ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। আকশি চোখের ইশারায় বুঝালো, এই কথাটা না বললে ওকে সন্দেহ করে ফেলতো।

আবদুলঃ কুকুরটা ছোট বউমার নয়।আমাদের আকশি বাবার। আকশি নেই বলে এখন সবসময় ছোট বউমার সাথেই থাকে।
আকশিঃ আকশি কে?(না জানার ভান করে)
আবদুলঃ ছোট বউমার স্বামীর নাম আকশি।

মাত্রই বেচারা আকশি টেবিল থেকে গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে মুখে দিয়েছিলো।আবদুল সাহবের কথা শুনে বিষম খেলো।কথাটা হজম করতে না পেরে পেচকির মতো সব পানি আদিয়াতের শরীরে ছিটিয়ে দিলো।সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আদিয়াতঃ কি করলি এটা তুই?
আকশিঃ সরি ভাই, খেয়াল করিনি।

ফিহা টেবিলে থাকা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু নিয়ে আদিয়াতের দিকে বাড়িয়ে দিলো।আদিয়াত হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে কোর্ট মুছতে লাগলো।টেবলেট এখনো ঘন ঘন লেজ নাড়িয়ে তার মালিকের আকর্ষণ পাওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু আকশি মোটেও সেদিকে তাকাচ্ছে না।টেবলেটের দিকে তাকালেই ওর মনটা খারাপ হয়ে যাবে।সাথে ওকে আদর করতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠবে।ফিহা টেবলেটের দিকে একবার তাকিয়ে আকশির দিকে তাকালো।

আকশিঃ মেয়েটা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আমায় চিনে ফেললো নাকি?
ফিহাঃ আপনাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথাও যেনো দেখেছি।(ভাবার মতো করে)
আদিয়াতঃ কোথায় দেখবেন আমাদের?আমরাতো অনেক বছর পর দেশে ফিরলাম।তাছাড়া এক মানুষের চেহারার সাথে অন্য মানুষের চেহারা অনেক সময় মিলে যায়।আপনি হয়তো তেমনি ভাবছেন।
ফিহাঃ আপনি ঠিক বলেছেন।হয়তো অন্য কাউকে দেখেছি।(টেবলেটের দিকে তাকিয়ে) টেবলেট এদিকে চলে আয়।উনাদের বিরক্ত করছিস কেন?অনিকে দেখে রাখতে হবে তো।

কিন্তু টেবলেটের কানে কথাটা ঢুকলো না।সে আকশির পায়ের কাছে ঘাপটি মেরে বসে রইলো।সে এখন কিছুতেই এখান থেকে উঠবে না।এতদিন পর মালিককে দেখে সে ভীষণ খুশি হয়েছিলো।কিন্তু আকশি এখনো ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেইনি বলে মন খারাপ করে চুপটি মেরে বসে আছে। চোখ দুটো ছলছল। মনটাও তার ভীষণ খারাপ। টেবলেটকে এভাবে নিতে পারছে না আকশি।ভীষণ অস্থির লাগছে তার।আবদুল আজিজ সাহেব বললেন।

আবদুলঃ মি.পাটোয়ারী আপনারা বসুন।আমি মিটিংয়ের তৈরী করি।আমার কত কাজ বাকি আছে। অনেক ফাইল কমপ্লিট করতে হবে।

আবদুল আজিজ সাহেব চলে গেলেন।তিনি চলে যেতেই আকশি ইচ্ছে করে টেবিলে থাকা পেপারওয়েট
ফেলে দিলো।সেটা তোলার বাহানায় টেবলেটর মাথা নেড়ে দিলো।ওমনি টেবলেট খুশি হয়ে কয়েকবার ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
ফিহাঃ টেবলেট হচ্ছেটা কি?তুই তো কখনও এমন করিস না।উনাদের সাথে এমন করছিস কেন?

টেবলেট খুশি মনে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতদিন পর মালিকের হাতের ছোঁয়া পেয়ে সে বেশ খুশি।
ফিহাঃ আপনারা কিছু মনে করবেন না প্লিজ। টেবলেট কারো সাথে এমন করে না।ও খুব ভালো।ও তো সাধারণত কারো সাথে মিশে না।কিন্তু মি.সুমন আপনার সাথে সাথে কেন ঘুরছে তা আমি বুঝতে পারছি না।আপনার পায়ের নিচে গিয়ে কেন বসে আছে সেটাও আমার জানা নেই।
আকশিঃ আপনি জানবেনও না মিস।(বিরবির করে)
ফিহাঃ কিছু বললেন মি.সুমন?
আকশিঃ না না কিছু বলি নি।আপনার কুকুরটা খুব ভালো তাই বললাম।

ফিহা অনিয়াকে খিচুড়ি খাওয়ানো শেষ করে ফিটারে করে পানি খাইয়ে দিলো।মুখটা পানি দিয়ে মুছিয়ে দিলো।তারপর টিস্যু দিয়ে মুখের পানি মুছিয়ে দিলো। নিজের হাত ধুতে ওয়াস রুমে চলে গেল।যাওয়ার আগে ওদের দুজনকে বললো।

ফিহাঃ আমার মেয়েকে দুই মিনিটের জন্য একটু দেখবেন প্লিজ। আমি হাত ধুয়ে আসছি।আমার বেশি সময় লাগবে না।
আদিয়াতঃ আপনি যেতে পারেন।
ফিহাঃ ধন্যবাদ।

ফিহা ওয়াসরুমে ঢুকতেই আকশি জলদী করে অনিয়াকে কোলে তুলে নিলো। যদিও এর আগে কখনও নেয়নি।অনিয়ার ছবি দেখেছে।দুই বছর লন্ডনে থেকে গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে তারপর ফিরলো।কিন্তু বাড়িতে যাওয়া হলো না।তার আগেই ঘটে গেল অঘটন।ভাই-ভাবীর মৃত্যুতে আসতে পারেনি।এর থেকে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে?অনিয়াকে কোলে তুলতেই মনটা হালকা হলো আকশির।অনিয়া তো ওর ভাই-ভাবীর শেষ স্মৃতি।এখন সব ঠিক হয়ে গেলে নিজের বাবা ও ভাতিজী কে নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবে।অনিয়াও মনে হয় বুঝতে পেরেছে এই মানুষটার সাথে তার রক্তের সম্পর্ক।তাই চুপটি করে আকশির বুকের সাথে মিশে আছে।নিজের মাথাটা হেলিয়ে রেখেছে।টেবলেট সামনে এসে খুশিতে লেজ নারতে লাগলো।আকশি এক হাতে অনিয়াকে ধরে টেবলেটের মাথায় অন্য হাত বুলাতে বুলাতে বললো।

আকশিঃ শোন টেবলেট আমি এখানে ছদ্মবেশে এসেছি।এখন যদি তোকে যখন তখন সবার সামনে আদর করি তাহলে তো ধরা পরে যাবো।আমার সামনে তুই একদম মন খারাপ করে থাকবি না।তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার কি ভালো লাগে বল।তোর চোখের পানি আমি একদম সহ্য করতে পারি না।সব ঠিক হলে আমি তোকে সবসময় আমার কাছে রাখবো।এখন আপাতত মেয়েটার সাথে থাক।

টেবলেট সব কথা বুঝতে পেরে অনির দোলনার সামনে বসে মুখ গুঁজে রইলো।টেবলেট যে আকশির ওপর রাগ করেছে সেটা আকশি ঢের বুঝতে পারলো।

আদিয়াতঃ তুই এখানে থাক আমি বাইরের দিকটা দেখছি।সাবধানে কথা বলিস।
আকশিঃ ওকে তুই যা।মেয়েটার সব ইনফরমেশন নিতে থাক।কোন কিছু যাতে বাদ না পরে।
আদিয়াতঃ অফিসের কেউ মনে হয় না ওর ব্যাপারে জানে।কাউকে তো কিছু জানায়নি।
আকশিঃ তারপরও তুই খোঁজ লাগা।যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়।
আদিয়াতঃ তার চেষ্টাই করতে হবে।
আকশিঃ আর শোন সাবধানে কাজ করিস।
আদিয়াতঃ আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না।আমি সবধানেই থাকি।তুই অসাবধানে মুখ ফসকে কথা বলে ফেলিস।

আদিয়াত চলে যেতেই আকশি টেবলেটের সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।ওর মাথায় আলতো করে হাত রাখলো।অনি ওর কোলে খুশিমনে বুড়ো আঙ্গুল চুষছে।যার কারণে চুক চুক শব্দ ভেসে আসছে আকশির কানে।

আকশিঃ টেবলেট প্লিজ আমার অবস্থা বোঝার চেষ্টা কর।আমি এখন পরিস্থিতির শিকার।আমি চাইলেও তোকে আমার কাছে রাখতে পারবো না।তোকে কতবার বলবো তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।
ফিহাঃ কে মন খারাপ করে থাকলে আপনার ভালো লাগে না?(কপাল কুঁচকে)

আকশির বুকটা ধুক করে উঠলো।ফিহা ওদের সব কথা শুনে নেয়নি তো।এবার কি করবে সে?যদি সব কথা শুনে ফেলে।তাহলে তো ধরা পরে যাবে।আর সবকিছুর পেছনের মাস্টার মাইন্ডকে ধরতে পারবে না।আকশির নিজেকে চোর চোর মনে হচ্ছে। কিছু সময় এদিক সেদিক তাকিয়ে বুদ্ধি পেয়ে গেলো।পকেট থেকে মোবাইল বের করে হাতে নিলো।

ফিহাঃ কি ব্যাপার মি.পাটোয়ারী? বললেন না কে মন খারাপ থাকলে আপনার ভালো লাগে না?
আকশিঃ আমি ফোনে কথা বলছিলাম।আমার এক ফ্রেন্ড। ও মন খারাপ থাকলে আমার ভালো লাগে না।
ফিহাঃ ওহ্। আপনি ঐ খানে কি করছেন?
আকশিঃ অনিয়া কান্না করছিলো তাই ওকে কোলে তুলে এদিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম।(আমতা আমতা করে)

আকশি বড় করে হাফ ছারলো। ফিহা কিছু শোনে নি।এমনকি সে যে টেবলেটের সাথে কথা বলছিলো সেটাও বুঝতে পারে নি ফিহা।আকশি পেছনে ঘুরে থাকায় ফিহা টেবলেটকে খেয়াল করলো না।ফিহা যে খুব চতুর ও সব দিকে নজর রাখে সেটা আকশি বুঝতে পেরে মনে মনে নিজেকে আরো সাবধানে থাকার তাগিদ দিলো।আকশি খেয়াল করলো অনিয়া ও ফিহা আজ এক রংয়ের ড্রেস পড়ে এসেছে।দুজনকে বেশ মানিয়েছে। ফিহাকে তার ভালোই লেগেছে।

আকশিঃ মেয়েটার চেহারাটা বেশ মায়াবী।যতটুকু বুঝলাম অনিয়া ও টেবলেটকে সে অনেক ভালবাসে।আমারতো তাকে ভালোই লেগেছে।চোখ দুটো একটু বেশিই মায়াবী।এক কথায় সব মিলিয়ে অপূর্ব।ধ্যাত,আমি এসব কি ভাবছি? পাগল হয়ে গেলাম নাকি।(মনে মনে)

ফিহা আকশির চোখের সামনে তুরি বাজালে ওর ধ্যান ভাঙ্গে। এতখন সে এক ধ্যানে ফিহাকে দেখছিলো।সেটা মনে করে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল।

ফিহাঃ আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছেন মিস্টার?
আকশিঃ ক ক কই কিছু না তো।
ফিহাঃ তোলাচ্ছেন কেন?আপনারা এখানে কেন এসেছেন বলেন তো?আপনাদের বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।(চোখ, মুখ কুঁচকে)
আকশিঃ এই রে বুঝে ফেললো নাকি।এবার কি হবে?আদি থাকলে ম্যানেজ করে নিতো।এবার আমি কি করবো?মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।(মনে মনে)

ফিহা আকাশির মুখের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে উঠলো। তাতে অবাক হয়ে আকশি ওর দিকে তাকালো।না,মেয়েটা হাসলে আরো বেশি ভালো লাগে।আজ মনে হয় আকশি ফিহার প্রতি পাগল হয়ে যাবে।ফিহার সবকিছু তার ভালো লাগছে।

ফিহাঃ আমি মজা করছিলাম।আর আপনি সিরিয়াস নিয়ে নিয়েছেন।আপনারা তো এখানে মিটিংয়ের জন্য এসেছেন। সেটাও ভূলে গেছেন নাকি।
আকশিঃ ভূলে নি মনেই আছে।(হাসি দিয়ে)
ফিহাঃ আমার মেয়ে কে আমার কোলে দিন।নাকি ওকে আপনি রেখে দিবেন।
আকশিঃ রাখতে পারলে তো রেখেই দিতাম।আপনাকে কখনও দিতাম না।
ফিহাঃ আমিও আমার মেয়ে কাউকে দিচ্ছি না বাপু।তাই ওই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
আকশিঃ আচ্ছা ঝেড়ে ফেললাম।

আকশি অনিয়াকে উল্টো করে ফিহার দিকে ঘুরিয়ে কথা বলছিলো।ফিহা টুপ করে অনির থুতনিতে আদর করে একটা চুমু খেলো।এক হাতে আলতো করে অনির গাল ধরে রেখেছে।আকশিও এই সুযোগে অনির মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।পুরো ঘটনাটা ক্যামেরা বন্দী করতে ভুললো না আদিয়াত।এতো সুন্দর একটা মোমেন্টে পিকচারটা বেশ উঠলো।রুমে ঢোকার সময় হাতে মোবাইল ছিলো।তাই দেরী না করে হুট করে ছবিটা তুলে নিলো।ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চা, বাবা-মা নিয়ে হ্যাপি ফ্যামেলী।তিনজনকে একসাথে বেশ মানিয়েছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে