মায়াবন্দী পর্ব-০৮

0
1038

#মায়াবন্দী
#লেখিকা- তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৮

☆☆☆

-না আমার মেয়ের সাথে ওর বিয়ে দিবো (সিয়া)

-না আমার মেয়ের সাথে (ছায়া)

-তুই চুপ থাক আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো (সিয়া)

রিয়া শুয়ে আছে আর রাব্বি রিয়ার পাশে বসে সিয়া আর ছায়ার ঝগড়া দেখছে আর হাসছে।ইমন ফোন টিপতে টিপতে বিরক্তি নিয়ে বলল

-ওফ থামবি তোরা সেই কখন থেকে পকপক করে কানের পোকা নাড়িয়ে দিলি এবার চুপ যা (ইমন)

-এই তুই চুপ থাক চ্যাপকে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো (সিয়া)

-না আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো (ছায়া)

-নাহ আমার মেয়ের সাথে বিয়া দিবো ওরে (সিয়া)

ওদের কথার মাঝে সাদমান, সাদিয়া, নিলা, সাইমা এলো সাদিয়া বলল

-কার বিয়ে? কিসের বিয়ে? (সাদিয়া)

-ওফ আন্টি এটলিস তুমি আসলা এই দুই মহিলাকে থামাও কানের পোকা নাড়িয়ে দিলো (ইমন)

-কেনো কি নিয়ে এতো বকবক করছে শুনি (সাদিয়া)

ছায়া দাঁতে দাঁত চেপে রাগি চোখে তাকিয়ে জোর করে হেসে বলল

-তেমন কিছু না আন্টি ও মিথ্যা বলছে (ছায়া)

সিয়াও রাগি চোখে তাকিয়ে ছায়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলল

-হ্যাঁ আম্মু ইমন মিথ্যা বলছে

ইমন দাঁত কেলিয়ে বলল

-আসল ব্যপারটা হলো আন্টি এদের দুইটার এখনো বিয়ে হয়নি বাচ্চা হয়নি তার আগে থেকে রিয়ার ছেলেকে নিজের মেয়ের জামাই হিসেবে ঠিক করে রাখছে এই হচ্ছে কাহিনি (ইমন)

-তা কে জিতলো শুনি (সাদিয়া)

-তোমরা না এলে থামতো না এখনো চলতো এই যুদ্ধ (ইমন)

সাদমান আর সিয়ার চোখাচোখি হতেই সিয়া চোখ নামিয়ে নিলো। [আসল লেখিকা-তাসনিম তামান্ন]রাব্বি বলল

-আন্টি ওদের কথা বাদ দাও তো বসো আব এনা…. (রাব্বি)

-ওহ হ্যাঁ এটা আমার মেজ জা আর ওরা হলো….(সাদিয়া)

-ও তার মানে এটা সিয়ার মেজম্মু, সাইমা, সাদমান আ’ম রাইট? (রাব্বি)

-ইয়েস হেন্সাম ইউ আর আবসিলিউটলি রাইট (সিয়া)

-আন্টি বসেন তোমরাও বসো (রাব্বি)

-কিন্তু তুমি কি ভাবে আ….(নিলা)

-সিয়া আপনাদের সবার কথা এতো বলে দেখেই চিনতে পারছি (রাব্বি)

-ও আচ্ছা (নিলা)

-বসেন আন্টি আপনারা (রিয়া)

-সে তো বসবো তুমি কেমন আছো এখন (নিলা)

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আন্টি (রিয়া)

সাইমা হাতের প্যাকেট গুলো রাব্বির কাছে দিয়ে বলল

-এই নেন ভাইয়া এগুলো বাবুর জন্য (সাইমা)

-এগুলোর দরকার ছিলো না আ….(রাব্বি)

-এগুলো আপনাদের জন্য না বাবুর জন্য আর বাবু কিছু বলছে না তাই আপনিও কিছু বইলেন না (সাইমা)

-ও আচ্ছা পাকনি আপু দেখছি (রাব্বি)

-ভাবি (রিয়ার আম্মু) কই (সাদিয়া)

-আসলে আম্মুকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি ওনার রেস্টের প্রয়োজন (রাব্বি)

-ভালো কাজ করছো (সাদিয়া)

-আন্টি আপনি যাবার সময় এই তিন ছাগলকেও নিয়ে যাবেন এদেরকে কোনো কাজে লাগে না এখানে (রাব্বি)

-মটেও না হেন্সাম তোমাকে কোনো কাজে লাগে না তুমি বাড়ি যাও আমরা কোথাও যাচ্ছি না (ছায়া)

-আরে চুপ করতো বুইড়া ব্যাটার কথা কে শুনে (সিয়া)

-আমি তো যাচ্ছিই না (ইমন)

-দেখলে আন্টি আমার কোনো ভ্যলুই নাই এখানে থেকে আমি কি করবো আমি যে ওদের বড় কোনো দাম ই দেই না (রাব্বি)

-তুমিই তো ওদের ওমন শিখাইছো এখন দুঃখ করে কোনো লাভ আছে (সাদিয়া)

-আন্টি তুমি ও এমন ভাবে বলতে পারলা (রাব্বি)

-না বলতে পারার কি আছে (ইমন)

তখনি বাবু ভ্যা করে কেঁদে উঠলো সিয়া, ছায়া পাশে থাকায় লাফিয়ে উঠলো।

-এবার আমরা কিছু করেনি ও একা একা কাঁদছে (ছায়া)

-এই তোরা তিনটা বের হ আমার ছেলে কে এভাবে এই নিয়ে ৩বার কাঁদালি (রিয়া)

-আরে বইন তোর ছেলে এমনিতেই কাঁদছে ওকে কাদানো লাগছে না শুধু একবার ইচ্ছে করে জাগিয়ে ছিলাম (সিয়া)

-খুব ভালো করছিস এবার ওকে এখানে দে (রিয়া)

-না না তুই নিয়ে যা (সিয়া)

-কি ও উঠবে কেমন করে ফাইজলামি করিস (সাদিয়া)

-আর বললো না আন্টি বাবুর ব্যথা পাবে বলে কেউ কোলে নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না (রাব্বি)

-পাগল নাকি তোরা (নিলা)

-না মেজম্মু যদি ও ব্যাথা পাই (সিয়া)

-আচ্ছা আমি নিচ্ছি (নিলা)

নিলা বাবুকে কোলে নিয়ে দোল দিতে লাগলো। বাবু আস্তে আস্তে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। এর মধ্যে সাদিয়া রিয়াকে খাইয়ে দিয়েছে। সাদমান আর রাব্বি গল্প জমিয়ে ফেলছে রাব্বি মানুষটাই এমন সবার সাথে সহজে মিশে গিয়ে আপন করে নেই। সাদমান গম্ভীর সভাবের কিন্তু রাব্বির সাথে কথা বলে ফ্রী হয়ে গেছে। সিয়া সাদমানকে বেশ কয়েক বার আড়চোখে তাকিয়ে দেখেছিলো চোখেচোখ পড়ায় অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে আর তাকাইনি। আরো কিছুক্ষণ থেকে সাদমান, সাইমা, নিলা, সাদিয়া চলে যায়।
.
.
রিয়াকে বাসায় আনার পর কলেজ শেষ করে রিয়ার সাথে সময় কাটিয়ে কোচিং করে বাসায় এসে রেস্ট নিয়ে বাবা-মার সাথে সময় কাটানো পর পড়তে বসা পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে টেবিলে ঘুমিয়ে যাওয়া এতো কিছুর মাঝে প্রিয় হয়েও অপ্রিয় মানুষটার কথা মনে পড়ে বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে। [আসলে লেখিকা-তাসনিম তামান্না]দেখতে দেখতে পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো এই এতো গুলো দিনের মধ্যে সিয়া আর সাদমানের একবার রাস্তায় দেখা হয়ে ছিলো।

-কেমন আছিস? (সাদমান)

-আলহামদুলিল্লাহ আপনি? (সিয়া)

-ভালো পড়ালেখা কেমন হচ্ছে? (সাদমান)

-ভালো (সিয়া)

-আচ্ছা থাক তুই আমার কাজ আছে আমি যায় (সাদমান)

আর কিছু না বলে চলে গিয়েছিলো সেদিন সাদমান। পিছন ফিরে আর তাকাই নি সাদমান ফিরে তাকালে হয়তো দেখতে পেতো তার মায়পরি তার দিকে তৃষ্ণা নিয়ে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে ছিলো ‘একটু কি সময় নাই আমার জন্য আমি এতোটাই অবহেলিত আপনার কাছে’। কিন্তু সে কথা প্রকাশ করা হয়নি এখনো।

★★★

সিয়া শুয়ে শুয়ে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বইটা পড়ছিলো। আর তখন সাদিয়া হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল

-ব্যাগ গোছা তোর যা যা লাগবে গুছিয়ে নে (সাদিয়া)

সিয়া ভ্রু কুচকে কিছু বুঝতে না পেরে বলল

-মানে কোথায় যাবো আমি কোথাও যেতে টেতে পারবো না এখন রিলাক্স করবো (সিয়া)

-তোর কাছে কোনো কিছু শুনতে চাইছি আমি গোছা আমরা সিলেট যাবো (সাদিয়া)

-সেদিন তো আসলাম আর জাবো না (সিয়া)

-সেদিন আসলি মানে তিনমাস হয়ে গেছে ব্যাগ গোছা আমি জাচ্ছি আমার কাজ আছে (সাদিয়া)

বলে সাদিয়া চলে গেলো। সিয়া ফোঁস করে একটা শ্বাস নিলো কোথায় ভাবলো পরিক্ষা শেষ পড়ালেখা নাই কোথায় রিলেক্স করবে শুয়ে বসে কাটাবে আর খাবে ফোন টিপবে ওর রিলেক্সে বালতি বালতি পানি ঢেলে দিলো সবাই। ভাবতেই কান্না পাচ্ছে ওর। এদিকে ইমন, ছায়া, রাব্বি, রিয়াকে নিয়ে যেতে চাইলে ও যাবে না সিয়া ওদের গালি দিতে দিতে অসহায় হয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে ব্যাগ গোছানোই মন দিলো। এখন ওর কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শেষ হয়ে গেলেও ওর মা বাবা ওকে রেখে কোথাও যাবে না যেখানে যাবে সাথে করে নিয়ে যাবে।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে