মনের অন্তরালে পর্ব -০৫

0
986

#মনের অন্তরালে
#পর্ব_৫
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

দুলাভাই আমাকে কিছু বলতে যাবে তখনি অর্থি আপু সেখানে এলো। এসে দুলাভাই কে ইশারায় থামিয়ে দিল। আমি দুলাভাই কে বললাম,কি হলো দুলাভাই বলুন,ওরা আমার সাথে কি মজা করেছে? দুলাভাই বলল, না কিছু না আমি এমনিই বললাম আর কি।অর্থি আপু আমাকে মায়ের কাছে যেতে বললো। আমি ওখান থেকে উঠে মায়ের কাছে চলে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর আপু আর দুলাভাই কে নিয়ে আমরা বাসায় চলে আসলাম। ফুপি আমাকে আসতে দিতে চাইছিল না কিন্তু আমি ফুপি কে বললাম, তোমার ছেলের বউ বাসায় গিয়েছে, তুমি গিয়ে তাকে তোমার বাসায় নিয়ে আসবে।সে নিজে থেকে চলে আসবে কেন? এসব শুনে ফুপি আমাকে আর আটকায় নি। বাসায় এসে আমি আমার রুমে চলে এলাম। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয় নি আমার।ফুপির বাসায় মানে শশুর বাড়িতে ও কিছু খাইনি আমি। এখন ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে। আমি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। দরজা লাগিয়ে দিয়ে প্রায় ভুত দেখার মত চমকে উঠলাম আমি। আশিক ভাই আমার ওয়াশরুমের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখে ভয় ও পেলাম আবার রাগ ও হলো আমার। এই নির্লজ্জ টা আমার ওয়াশরুমে কি করছে?

আশিক ভাই তুমি আমার ওয়াশরুমে কি করছো? এখুনি যাও এখান থেকে।

যাওয়ার জন্য কি এক ঘন্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি নাকি মেহুল?

মানে টা কি?

মানে টা হচ্ছে আমি তোমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি অনেকক্ষন থেকে। আমি জানি তুমি বাইরে থেকে এসে আগে ওয়াশরুমে আসবে। সেজন্যই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার গায়ে হাত তুলেছিলে না কালকে? তার দাম নিতে এসেছি আজ।
আশিক ভাইয়ের এরকম কথা শুনে আমি আপু কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলাম। আমাকে ডাকতে দেখে আশিক ভাই আমার মুখে হাত চেপে ধরলো। আপু তখন আমার রুমেই আসছিল। আমার ডাক শুনে তাড়াতাড়ি আমার রুমে এলো। এসে আমাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ওয়াশরুমের সামনে এসে ডাকলো,

মেহুল তুই কি ভেতরে আছিস? আমাকে ডাকলি কেন?
আপু এসেছে দেখে আশিক ভাই আরো জোরে আমার মুখ চেপে ধরলো। আমার নিঃশ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছে এখন। উপায় না দেখে আশিক ভাইয়ের হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম। আহঃ বলে আশিক ভাই হাত ছাড়িয়ে নিল। আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম। আপু আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি আপুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম। আমার পিছনে আশিক ভাই ও বেরিয়ে এলো। আপু যা বুঝার বুঝে গেছে। জোরে জোরে মা বাবা আর মামা কে ডাকতে লাগল আপু। আপুর ডাক শুনে দুলাভাই, মা, বাবা, মামা আর মামী আমার রুমে তাড়াতাড়ি এলো। ওদের ডাকতে দেখে আশিক ভাই তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আপু ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে। ওরা আমার রুমে এসে দেখে আমি আপুকে ধরে কাঁদছি আর পাশে আশিক ভাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে কাঁদতে দেখে বাবা জিজ্ঞেস করল,

মা কি হয়েছে তোর?কাদছিস কেন তুই আর আশিক এই রুমে কি করছে?
আমি থেমে থেমে বললাম,

আমি যখন আমার রুমে ঢুকে ওয়াশরুমে ঢুকলাম তখন দেখি আশিক ভাই আমার ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে আছে।আর কাল রাতে আমাকে বাজে কথা আর জড়িয়ে ধরার জন্য আমি থাপ্পড় মেরেছিলাম তার দাম নিতে এসেছে সে কথা বলছিল। বলে আমি আবার কাঁদতে লাগলাম। আমার কথা শুনে বাবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আশিক ভাই কে বাবা বেশ কয়েকটা থাপ্পর মারলো।

আমার বাড়িতে এসে আমার মেয়ের সাথে অসভ্যতা করার সাহস কে দিয়েছে তোকে আশিক?
বাবার থাপ্পর খেয়ে আশিক ভাই চুপ।ধমক শুনে একটু কেঁপে উঠল। বাবা তাকে আর কিছু না বলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিল। দিয়ে বলল,আর কোনদিন যেন আমি তোকে আমার বাড়ির চৌকাঠে না দেখি। আশিক ভাই কে বের করে দেওয়ার পর মামা মামি ও চলে গেলো।ছেলের জন্য লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে গেছে ওদের। মা একবারও ওদের থাকতে বললো না। আমি তখনো কাঁদছি। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,আর কাদিস না মেহুল। ওই জানোয়ার টাকে ওর কাজের উচিত শাস্তি দিয়েছে তোর বাবা।আর কাদিস না।এখন ফ্রেশ হয়ে খাবি আয়। বলে মা চলে গেলেন। আপু আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে নিজেই আমাকে ছোট বাচ্চাদের মত হাত মুখ ধুয়ে দিল। দুলাভাই ওদিকে গিয়ে আয়াশ ভাই কে ফোন করে সব কিছু বলে দিল। আমাকে হাত মুখ ধুয়ে দেওয়ার পর আপু আমাকে নিয়ে খাবার ঘরে এলো। খেতে চাইছিলাম না তারপরও মা আমাকে জোর করে খাইয়ে দিলেন। খাওয়ার পর আমি আমার রুমে চলে এলাম। আপু আমার সাথে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি না করে দিয়েছি। রুমে এসে আমি দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিছু ভালো লাগছে না আমার। আশিক ভাইয়ের বাজে স্বভাবের কথা জানতাম আমি কিন্তু সে যে এতো টা বাজে সেটা কখনো ভাবতেও পারিনি আমি। চুপচাপ শুয়ে রইলাম আমি।
সন্ধ্যার দিকে আমার ফোনে একটা এসএমএস এলো। তখন শুয়ে ছিলাম আমি।এস‌এম‌এস টা ওপেন করে চমকে গেলাম। লেখা আছে,
“একটা জানোয়ার তোমার সাথে মিস বিহেভ করেছিল তিন ঘণ্টা আগে।সে এখন কমফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি আছে। তোমার দিকে যে বাজে নজরে তাকাবে তাকে সোজা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব আমি। তুমি কোন চিন্তা করোনা, আশিক বেঁচে থাকতে আর কখনো তোমার নাম টাও মুখে আনবে না।”
এরকম এসএমএস কে দিলো আমাকে। নাম্বার টা চেক করে দেখি,কাল রাতে যে নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল সে নাম্বার থেকেই এস‌এম‌এস এসেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম সে নাম্বার টাতে। কিন্তু সেটা বন্ধ দেখাচ্ছে এখন। আমি তাড়াতাড়ি করে নিচে এলাম আপুকে এসএমএস এর কথাটা বলার জন্য‌‌‌। কিন্তু নিচে আসার সঙ্গে সঙ্গে মা বললেন,পাপীদের শাস্তি আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গেই দেয়।
এটা শুনে আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন মা কি হয়েছে? তখন মা আমাকে বলল,
কিছুক্ষণ আগেই খবর এসেছিল, আশিক কে কে জানি বেদম পিটিয়েছে।এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি এটা শুনে তো খুব খুশি হয়েছি। আমার ভাইয়ের ছেলে হয়েছে তো কি হয়েছে, আমার মেয়ের দিকে বাজে নজরে তাকাবে সেটা তো আমি মেনে নিতে পারিনা। আমি এটুকু শুনে আপু কে আর কিছু বললাম না। আমার রুমে চলে গেলাম।
(চলবে…..)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে