মডেল মিফতা পর্ব – ১১

0
1516
মডেল মিফতা পর্ব – ১১ গল্পবিলাসী – Nishe কলেজ থেকে বের হয়ে সামনেই নুহাশকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। আজকাল ছেলেটাকে চোখে হারায় মোহনা। নুহাশকে রাগাতে বেশ ভালোই লাগে অন্যরকম একটা আনন্দ পাওয়া যায়। ব্লু শার্ট হোয়াইট জিন্স ওফফ কি যে লাগছে দেখতে। যে কেউ প্রেমে পরতে বাধ্য। কয়েকজন ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। মোহনাকে দেখেই এগিয়ে এসে -হেই মিস -হ্যালো নুহাশপল্লি -অনলি নুহাশ নট নুহাশপল্লি ওকে? পাশ ফিরেই হালকা হেসে দিলো মোহনা। – তুমি এই কলেজে পড়ো? -না ঘুরতে আসছিলাম। -তাহলে ইউনিফর্ম কেনো? – বুঝতেই যখন পারলেন তাহলে প্রশ্ন করলেন কেনো? প্রতিউওরে একটু হাসলো নুহাশ যা মোহিনার চোখ এড়াতে পারলোনা। -দেখুন আপনি কিন্তু একটু বেশিই করছেন এটা আমার কলেজ সো এখান থেকে ফুটোন -ফুটে তো বেলুন মানুষ না তাহলে কি তুমি আমাকে ফুটাবে? -বাড়ির মালিক বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি? -পুরো মানুষটাকেই যেখানে চাই সেখানে -আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে টিউশনি আছে বাই -আচ্ছা! পালানো হচ্ছে এখন? হালকা হেসে রিকশা ডাকতে লাগলো মোহনা। বাড়িওয়ালার ছেলে।কিছুদিনের পরিচয়। সামনেই ফাইনাল এক্সাম। তাই তিনজন মিলে একটা বাসা ঠিক করে ওখানেই থাকছে।বাড়ি থেকে গিয়ে ক্লাস করাটা একটু টাফ হয়ে যায় তাই আপুর ডিসিশন মতোই এটা করতে হলো।এই বাড়িতে আসার পরের দিনই ছাদটা ঘুরে দেখার জন্য ছাদে গিয়েছিলাম।টিপটিপ বৃষ্টি পরছিলো তখন। বাড়িটা দুতলা। খুব সুন্দর একটা বাড়ি। আমরা দুতলাতে একটা ইউনিটে উঠেছি। আর একটা ইউনিট খালি। মালিকদের কোনো গেস্ট আসলে নাকি ঐ ইউনিটে থাকে। হালকা বৃষ্টির মধ্যেই ছাদটা পর্যবেক্ষন করতে উঠেছিলাম। ছাদে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দুরের জায়গাগুলো দেখছিলাম আর মুখে ছিলো আমার প্রিয় সেন্টারফ্রুট। মুখ থেকে ফেলতেই কেউ চিল্লিয়ে উঠেছিলো কে চিল্লাতে পারে আশেপাশে তাকাতেই কাউকে দেখতে পেলামনা তাই নিচে তাকাতে দেখি চিৎকারের আওয়াজটা নিচ থেকেই আসছে। বুঝতে বাকি নাই ঘটনা কি দৌড়েঁ রুমে যাওয়ার জন্য বের হলেও ব্যার্থ হলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলেই একটা লোক এসে আটকে দেয়। – হেই ইউ!!!! তুমিই ফেলেছো এইটা নাহ?কিছুক্ষন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থেকে -হুম ফেলেছিলাম। তো এটা কি এমন মহারত্ন যে আপনি হাতে নিয়ে ঘুরছেন? -এক্সকিউজ মি! আমি হাতে নিয়ে ঘুরছি মানে? -তাইতো দেখতে পাচ্ছি। মোহনার কথা শুনে ছেলেটা তার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাতে থাকা সেন্টারফ্রুট টা ফেলে -এটা কোথায় ফেলেছো তুমি? -নিশ্চয়ই আপনার হাতের উদ্দ্যেশে আমি ফেলিনি ইলশেগুঁড়িতেও যে কেউ বৃষ্টিবিলাশ করে তাতো জানতাম না। – বেচেলারদের এইজন্যই বাড়ি ভাড়া দিতে নাই কই থেকে যে আসে এইসব বাচ্চাকাচ্চা -এক্সকিউজ মি! আম নট এ চাইল্ড ওকে? -হেহ! নুহাশ। অনলি নুহাশ। চাইল্ড বলেই তো এইসব ছাইপাঁশ খাও -আই সি মিঃ নুহাশপল্লি -সরি? কি বললে? -সরি মাই ফুট বলেই নিচে চলে এলো।এইসব ভেবেই হেসে উঠলো মোহনা। রিকশা ডেকে উঠে পরলো। সকাল থেকে নিরবকে কল করে যাচ্ছে মিফতা কিন্তু কোনো রেসপন্স পাচ্ছেনা। সকালবেলা মোবাইল হাতে নিতেই অনেকগুলো কল দেখতে পেয়ে তারপর থেকেই কল করে যাচ্ছে।আচ্ছা নিরব কি কল রিসিভ না করাতে রেগে আছে আমার উপর? তারজন্য রিসিভ করছেনা? আর এইদিকে সকালবেলাই ফাহিমা বেড়িয়ে গেছে। অনিকের সাথে কি ইম্পরট্যান্ট কাজে। সকাল গড়িয়ে প্রায় দুপুর হয়ে এলো কোনো খবর নেই। টেনশনে একাকার হয়ে আছে। পড়তে বসেও মন কেমন করছে বারবার নিরবের কথা মনে পরছে। ডায়েল নাম্বারটাতে তাকাতেই দেখতে পেলো অলরেডি পঁচাশি বার ডায়েল করা হয়ে গেছে। টেনশন থেকে ধীরে ধীরে ভয় লাগছে।ভয়ে খেতেও ইচ্ছে করছেনা।টেনশনে পুরো মাথাটাই বিগরে গেছে।বারবার শুধু একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে নিরব কি আবার হারিয়ে যাবে? ভেবেই খুব কান্না পাচ্ছে। সামনে এসএসসি পরিক্ষা।এখনি এক্সিডেন্টটা হতে হলো? ভাগ্যিস রোহান ভাইয়াটা ছিলো না হলে যে কি হতো সেটা ভেবেই গা শিউরে উঠছে ইফতির। ডান পাটাতে একটু লেগেছে আর ডান হাতের মধ্যেও অনেকটা লেগেছে। কিছুক্ষন আগেই হসপিটাল থেকে হোস্টেলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটাই নিলো বাড়িতে গেলে মা পুরো টেনশনে জমে যাবে তারচেয়ে বেটার এখানেই একটু কেয়ারফুল থাকলেই হবে।হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো।মিফতা কল দিয়েছে নিশ্চয়ই কিছুটা আন্দাজ করে নিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই ইফতির কিছু হলে সবার আগেই মিফতা বুঝে যেতো আজও নিশ্চয়ই তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়। ইচ্ছে করেই কলটা রিসিভ করেনি ক্রমাগত বেজেই চলছে থামবার জো নেই তাই বাধ্য হয়েই রিসিভ করতে হলো মোবাইলটা। -কোথায় ছিলি এতোক্ষন? কখন থেকে কল দিচ্ছি -ওয়াশরুমে ছিলাম তাই। কেমন আছো তুমি? -আমি ভালো আছি। তুই? -আমিও ভালো আছি। কোথায় আছো এখন? -সিলেটেই আছি।ঠিক আছিস তো তুই? -হ্যা একদম ঠিক আছি। – এক্সাম প্রিপারেশন কেমন? মোবাইলের ওপাশ থেকে অন্য কারো কথাও ভেসে আসছিলো মিফতা চুপ করে শুনতে লাগলো তোর ভাগ্য ভালো তেমন ইন্টারনাল কোনো ইনজুরড হয়নি যাস্ট স্কিনেই কিছুটা কেটে গেছে। একটু দেখে শুনে তো চলবি আজ আমি না আসলে কি হতো বলতো? -থ্যাংকস ভাই। এখন হোস্টেলে যেতে পারবোতো? -হ্যা চল আমি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসছি আর সামনের সপ্তাহেই ব্যান্ডেজটা খুলে ফেলতে পারবি। কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেছে মিফতা। ইফতি এক্সিডেন্ট করেছে!!!! ইফতি হয়তো ভূলেই গেছে সে মোবাইলে কথা বলছিলো। চোখগুলো ঝাপসা হয়ে এলো ইফতি!!!!!!!! মোবাইল থেকে সাউন্ড টা একটু জোড়েই এলো তাই মোবাইলে তাকাতেই থমকে গেলো ইফতি। যতোই চেয়েছিলো না জানাতে একটু ভূলের জন্য আপই জেনে গেলো। -আপু আমি তোকে পরে কল করছি -কিককিভাবে এক্সিডেন্ট ইফতি বলেই কেঁদে দিলো মিফতা। -আরে আপু তেমন কোনো ফ্রেকচার হয়নি যাস্ট চামড়াটা একটু ছিলে গেছে তুমি কান্না করছো কেনো? -তুই! তুই এখন কোথায়? আমি এক্ষনি আসছি বলেই কলটা কেটে দিয়েই ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে পরে মিফতা।রাস্তায় অনেকবার কল দিয়েও নিরবের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি মিফতা। ইফতি কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ করেনি মিফতা।সাধারন একটু ব্যাথাই সহ্য করতে পারেনা যে ছেলে আর এখন এতোবড় একটা এক্সিডেন্ট বলছে কিছুই না।বড় হয়ে গেছিস মনেহয় খুব? দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টা জার্নির পর ইফতির কাছে চলে এলো মিফতা। রুমমেট একটা ছেলে ইফতির মাথায় পানি ঢালছে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ আর কিনা বলছে তেমন কিছুইনা? পাশে বসে কপালে হাত রাখতেই দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। হাতের স্পর্শ পেয়েই চোখ খুলে তাকায় ইফতি -আপু? -কিরে খুব বড় হয়ে গেছিস? কথাও লুকাতে শিখে গেছিস এইতোর কিছুনা? -মুখে জোড় করে হালকা হাসি টেনে আরে তেমন কিছুইনা একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কেনো আসতে গেলে? – ছেলেটার হাত থেকে মগ নিয়ে মিফতা নিজে ইফতির মাথায় পাই দিতে থাকলো। প্রায় অনেক্ষন দেয়ার পর কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো।মিফতার হাত ধরে শুয়ে আছে ইফতি। সেদিনের মায়ের দৌড়ানি খেয়েও যেভাবে এসে আশ্রয় নিতো ঠিক সেভাবেই।ছোটবেলা থেকেই একদম কষ্ট সহ্য করতে পারেনা ইফতি। অল্প একটু জ্বরেই পুরো ভেঙে পরতো। অভাবের সংসার কিভাবে যে সামলে নিতো মা এক আল্লাহই ভালো জানতো। জোড় করে কিছুটা খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খেতে দিলো। -নে এবার একটু ঘুমো দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। -আপু তুমি কি এখনি চলে যাবা? -দেখি কি করা যায় তুই ঘুমাতো। -চুপচাপ শুয়ে পরলো ইফতি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে যেনো সেই ছোট্ট ইফতি।এই মুহুর্তে ইফতিকে ছেড়ে যাওয়া তার পক্ষে যেমন সম্ভব নয় আবার তেমনি ছেলেদের হোস্টেলে থাকাও তারপক্ষে সম্ভব নয়। বাড়িতে যাবেনা বলে চেপে আছে একদম। এই মুহুর্তে ঠিক কি করা যায়? এইসব ভেবে চলছে মিফতা। সারাদিন অফিসের কাজেই ডুবে আছে নিরব।সবকিছু চেক করে নিচ্ছে। এতোদিনের কাজ জমে আছে সেগুলো করতে করতে হঠাৎ করেই দেয়াল ঘড়িতে চোখ আটকে যায় সাড়ে ছয়টা বাজে!!!!! ওহ গড এতো সময় গেলো কখন? তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিতেই বড় ধরনের শক খেলো। এতো কল এতো মেসেজ এতোটাই কাজে ডুবে গিয়েছিলো যে একটা বারও মিফতার কথা মনেহয় নি। নিশ্চয়ই কেঁদে কেটে অবস্থা একাকার করে ফেলেছে।এমনিতেই গতকাল চলে আসাতে মুড অফ ছিলো আর আজকেই এমনটা হলো ওহ গড কিভাবে হলো এইটা? তাড়াতাড়ি ফাহিমাকে কল দিলো -হ্যা ভাইয়া বল – কোথায় তোরা? আমি আসছি -আমিতো রুমেই শুয়ে আছি।আসছি মানে? -হ্যা। মিফতা কি করছে? -ভাবিতো ইফতির কাছে গেলো ইফতি এক্সিডেন্ট করেছে আমাকে টেক্সট করেই দশটার দিকে বেড়িয়ে গেলো।তোর কথা হয়নি? -নাহ। সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। আচ্ছা শোন তুইকি ইফতির এড্রেসটা জানিস? – কেনো ভাই মিস করছো বুঝি? -নাহ কি অবস্থা একবার দেখা উচিত না? তাই ভাবছি যাবো -হ্যা তাও ঠিক। ফাহিমার থেকে ইফতির এড্রেস নিয়েই বেরিয়ে পরলাম।এভাবে মোবাইলে কথা না বলে সরাসরিভাবে সরি বলে ঠিক করে নেয়াটাই বেটার মনেহলো নিরবের কাছে। ফাস্ট ড্রাইভিং করে খুব দ্রুতই পৌঁছে গেলো নিরব। হোস্টেলে আসতে আসতে নয়টা বেজে গেছে। এদিকে মিফতা ইফতিকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার প্ল্যান করেছে। টেক্সি ডেকে আনতে ইফতির রুমমেট কে পাঠিয়েছে ও আসলেই বেড়িয়ে পরবে। ইফতিটাও ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ করেই দরজায় নক হলো। ইমন ( ইফতির রুমমেট) ভেবে দরজাটা খুলে দিয়ে নিরবকে দেখে বড় ধরনের ধাক্কা পেলো মিফতা। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। -আপনি? তারমধ্যেই হোস্টেল মেনেজার চলে এলো। মিফতার উদ্দ্যেশে -আপনার জন্য কি আমরা একটা রুমের ব্যবস্থা করবো? নিরব মিফতার দিক তাকিয়ে – না না তার দরকার নেই আমি এখনি ওদের নিয়ে যাবো। – সরি! আপনাকে চিনতে পারলাম না – আমি নিরব।মিফতার হাজব্যান্ড।মিফতা চুপ হয়েই আছে। নিরবের কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। আধাঘণ্টা পর নিরব ড্রাইভ করছে তারপাশেই মিফতা বাহিরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। পেছনের সিটে ইফতি ঘুমিয়ে আছে। চলবে,,,,,,,,,


( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/nishe.ratri.9809

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে