ভাড়াটে বউ পর্ব-১২

0
2390

ভাড়াটে বউ
লেখকঃ সানভি আহমেদ সাকিব
পর্ব ১২
.
সানভিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রিহা নিজের রুমে আসার সময়
সানভি রিহার হাতটা চেপে ধরে।
– আপনি ঘুমান নাই?(রিহা)
– নাহ ঘুম আসতেছেনা কি করবো বলো?(সানভি)
– চেষ্টা করুন ঘুমানোর।(রিহা)
– আমার পাশে বসো আর মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।(সানভি)
– কিন্তু আমার অনেক ঘুম পাইতেছে।(রিহা)
– ঘুম পাইলে এখানেই ঘুমাবা।(সানভি)
– পাগল হইছেন? কি সব বলতেছেন আপনি??(রিহা)
– যাই হোক তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।(সানভি)
.
রিহা কিছুটা বিরক্ত হয়।
সানভির জ্বর অনেকটা কমে গেছে নেই বললেই চলে।
রিহা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমিয়ে পড়ে।
কিন্তু সানভির চোখে ঘুম নাই।
রিহার ঘুমন্ত মুখটারর দিকে তাকিয়ে ঘুম সব উধাও হয়ে গেছে। এক অদ্ভুত মায়া কাজ করেতেছে।
কেমন জানি পেত্নির মতো লাগতেছে রিহাকে। কিন্তু তারপরও ভালো লাগতেছে।
.
নাহ আর দেরি করা উচিত হবেনা এইবার কাজটা সেরে ফেলি। আরে ভাই উল্টা পাল্টা ভাইবেন না।
.
সানভি কম্বলটা রিহার গায়ে চাপিয়ে দিয়ে অন্য রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। রিহার এই ঘুমন্ত মুখটা দেখার জন্যই এতোকিছু করা।
পরের দিন সকালবেলা ভোরের আলো চোখে পড়তেই রিহা চোখ মেলে তাকায়।
সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়,
সানভি কফি বানিয়ে নিয়ে আসছে। কিন্তু এর চাইতে বড় ব্যাপার হলো সে খেয়াল করে সে সানভির সাথে এক রুমে ঘুমাইছে। রিহা চিন্তায় পড়ে যায়।
.
সানভির দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হাসতেছে।
তার মানে কিছু একটা হইছে । নইলে হাসবে কেনো??
– আমি সারারাত এখানে ছিলাম??(রিহা)
– হ্যা তো??(সানভি)
– আর আপনি??(রিহা)
– আমি পাশের রুমে ঘুমাইছি।(সানভি)
রিহা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলে,
– জ্বর কমছে??(রিহা)
– একটুও নাই। ধরো কফি।(সানভি)
– হুমম। দেখি জ্বর আছে নাকি!(রিহা)
.
রিহা সানভির কপালে হাত রেখে দেখে জ্বর নেই শরিরে।
যাক আজকে তাহলে বাসায় যাওয়া যাবে।
.
কফি খেতে খেতে সানভির সাথে আড্ডা দেয় রিহা।
তারপর রান্না করে প্রতিদিনের মতোই খাইয়ে দেয় সানভিকে।
.
এভাবেই চলে দুজনের দিনকাল।
রিহা প্রতিদিন আসে রান্না করে খাওয়া দাওয়া।
সানভির সাথে ঘুরাঘুরি আর আড্ডা দেওয়া।
এসবের মধ্য দিয়েই কেটে যায় এক মাস।
.
রিহার নতুন চাকরি জোগাড় হয়ে গেছে।
২০০০০ টাকা বেতন। অফিসে কাজ করতে হবে।
কালকে থেকে জয়েনিং।
সানভিকে বলে নাই এখনো।
আজকেই বলতে হবে। রিহার ভয় লাগতেছে + খারাপ ও লাগতেছে। সানভির সাথে কাটানো সময়গুলা সত্তিই খুব ভালো ছিলো। তবে সানভি যেটা চায় সেটা সম্ভবনা তাই আজকে চাকরিটা ছেড়ে দিতে হবে।

কালো শাড়িটা পড়ে বেরিয়েছে রিহা।
ভয় আর খারাপ লাগা দুটোর মিশ্রনে যেনো পৃথিবিটা খুব ছোট মনে হচ্ছে। এক অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে রিহার।
ওদিকে সানভি ভেবে রেখেছে আজকে রিহাকে একটা সারপ্রাইজ দিবে।
আজকে অনেক প্লানিং করেছে সে।
কারন আজকে তার বার্থডে।
রিহা জানেনা ব্যাপারটা তাই তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সবকিছু অ্যারেন্জ করে রেখেছে।
রিহার সাথে বার্থডে সেলিব্রেট করবে বলে রুমটা সাজিয়েছে সেইরকম করে।
.
রিহা ঘরে ঢুকে দেখে সানভির রুমে তালা।
– স্যার আছেন??(রিহা)
– ওহ রিহা হ্যা বলো।(সানভি)
– কোথায় আপনি?(রিহা)
– আমিতো রান্নাঘরে।(সানভি)
– আচ্ছা আমি আসতেছি।(রিহা)
.
রিহা রান্নাঘরে ঢুকে দেখে সানভি আটা মাখতেছে।
হাতে মুখে আটা মেখে সে কি বাচ্চাদের মতো অবস্থা।
মন খারাপ থাকলেও সানভির এই অবস্থা দেখেখে রিহা হাসতে থাকে।
– হাসতেছো কেনো??(সানভি)
– স্যার আপনি এগুলা কি মেখেছেন?? ফর্সা হওয়ার জন্য নাকি??(রিহা)
– হুরর কি যে বলো। রুটি বানাবো তাই। (সানভি)
– আমি বানাচ্ছি সরুন।(রিহা)
– না আজকে আমি বানিয়ে খাওয়াবো তোমাকে।(সানভি)
– আচ্ছা দেখি কিরকম বানাতে পারেন।(রিহা)
– তোমার চাইতে ভালো পারবো।(সানভি)
– বলছে।(রিহা)
– দেখো তো আগে।(সানভি)
– হুমম দেখি।

সানভি রুটি বানায়। ওদিকে রিহা হাসতে হাসতে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।
সানভির পুরো শরিরে আটা লেগে ভুতের মতো লাগতেছে তাকে। আর একেকটা রুটি যা হইছেনা।। গুগল ম্যাপের মতো। মনে হয় জুম করলে বাংলাদেশও খুজে পাওয়া যাবে রুটির মধ্যে।
.
রিহা চুপচাপ সানভির রান্না করা দেখে আর মাঝে মাঝে খিলখিল করে হেসে উঠে।
সবকিছু শেষ করে সানভি গোসল করতে যায়।
গোসল শেষ করে এসে রিহাকে বলে,
– চলো আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিবো।(সানভি)
– আচ্ছা।(রিহা)
.
রিহাকে নিজের হাতে করে খাইয়ে দেয় সানভি।
রিহার চোখের কোনে জল চলে আসে।
এই মানুষটাকে ছেড়ে থাকতে হবে কালকে থেকে। ভাবতেই কেমন জানি লাগতেছে।
– আপনি হা করুন।(রিহা).
– হুমমম।(সানভি)
রিহা সানভিকে খাইয়ে দেয়।
প্রচন্ড কান্না পায় রিহার তবে কাদতে পারেনা।
– স্যার একটা কথা বলার ছিলো।(সানভি)
– হ্যা বলো।(রিহা)
– স্যার মাস শেষ হয়ে গেছে।(রিহা)
– ওহ বেতন লাগবে?? সমস্যা নাইই আমি দিতেছি দাড়াও।(সানভি)
– নাহ বেতন লাগবেনা।(রিহা)
– তাহলে??(সানভি)
– আসলে আমি আর আসবোনা কালকে থেকে। আমি অন্য একটা চাকরি পেয়ে গেছি ওখানেই কাজ করবো।(রিহা)
– মজা কইরো নাতো যাও!(সানভি)
– আমি মজা করতেছি না। সত্তিই বলতেছি আমি আর আসবোনা।(রিহা)
.
সানভি চুপ করে থাকে কিছুক্ষন। কিছু বলেনা।
চুপচাপ ভাবতে থাকে কি করবে।
মনে মনে ভাবে,
রিহা যদি ভালোবাসতো তাহলে চলে যেতোনা।
একটাবারের জন্যও কি মনে পড়েনি তার আমি তাকে ভালোবাসি? সামান্য পরিমান অনুভুতিও কি কাজ করেনা আমারর প্রতি?
নাহ। যদি করতো তাহলে চলে যাওয়ার কথাটা কখনো ভাবতো না।
রিহাকে কে তো সেই কবেই হারাইছি। আজকেও নাহয় চলে যাবে।
– স্যার কিছু বলুন।?(রিহা)
– আচ্ছা সমস্যা নাই আজকে থেকে তোমার ছুটি আর আসতে হবেনা আমার কাছে।(সানভি)
– ধন্যবাদ স্যার আপনার রুমে যাবো আমি একটু কয়েকটা জিনিস আছে ওখানে।(রিহা)
– তুমি দাড়াও আমি আনতেছি।(সানভি)
– কিন্তু স্যার আপনি পাবেন না।(রিহা)
– সমস্যা নাই আমি আনতেছি।(সানভি)
.
সানভির আচরন আজকে কেমন যেনো লাগতেছে। প্রথমে নিজ হাতে খাইয়ে দেওয়া তারপর এইসব করেতেছে।
সবকিছু কেমন যেনো এলোমেলো মনে হচ্ছে।
সানভি রুমে ঢুকে রিহার জিনিসপত্র আনার জন্য
দরজার ফাক দিয়ে রিহা দেখে রুমটা সাজানো।
বেলুন আর নানারকম ফুল দিয়ে।
লাইটিং ও করা হয়েছে ভিতরে।
তার মানে কি আজকে সানভির জন্মদিন??
রিহা হুট করে রুমের ভিতর ঢুকে পড়ে।
সবকিছু দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়।
আজকে সানভির জন্মদিন আর আজকেই সে এসব কিছু করলো।
.
রিহা সানভির দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটার চোখেরর কোনে জল চিকচিক করতেছে।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে