ভালোবাসি ভালোভাসা পর্ব-০৪

0
809

#ভালোবাসি_ভালোভাসা ♥️
#written_by_Liza_Moni
#part_4

সেদিন সন্ধ্যায় সাদাফ তার মা বাবাকে নিয়ে হিয়াদের বাড়িতে যায়। হিয়া ছাদে বসে ছিল।আনহা এসে বলে
.
হিয়াপু সাদাফ ভাই তার আব্বু আম্মু কে নিয়ে আসছে।ফুফু মনি বললো তোমার বিছানার উপরে শাড়ি রেখে আসছে পড়ে নিতে।
.
ওনারা এখন কোথায়?
.
ড্রইং রুমে ফুফু মনি আর রিয়ান ভাইয়ার সাথে কথা বলছে।
.
আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
আনহা আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল।
.
সাদাফ ভাই তাহলে সত্যি বিয়েটা করছেন। কিন্তু তিনি তো আমায় ভালোই বাসেন না। তবে কী দয়া দেখাচ্ছে আমাকে?
.
হিয়া নিজের রুমে গিয়ে বিছানার উপরে কালো রঙের একটা শাড়ি রাখা দেখলো।ওয়াস রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সে শাড়িটা পরে তৈরি হয়ে নিলো।
হিয়া মেয়েটা দেখতে ফকফকা ফর্সা না। তবে ফর্সাদের তালিকায় পড়ে।কালো রঙের শাড়িতে হিয়াকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। দুই হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি।কালো পাথরের ঝুমকা। কোমর অবধি চুল গুলো ছাড়া।
.
.
হিয়া কে আমার আগে থেকেই পছন্দ ছিল। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য সাদাফ কে বললে ও জানায় হিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আগে থেকেই। বললেন সাদাফের আম্মুর কথায় মুচকি হাসলেন মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন।
.
আল্লাহর ইচ্ছায় সেই সাদাফের সাথেই বিয়েটা হবে। ওরা দুজন দুজনের জন্যই এসেছে দুনিয়ায়।তাই তো এত কিছুর পরেও ওদের মিল হচ্ছে ।বললেন সাদাফের আব্বু।
.
কীরে শালা,উপস সরি এখন থেকে তো তুই আমার বোনের জামাই হবি। তোরে আর শালা ডাকা যাবেই না।রিয়ানের কথা শুনে সাদাফ মুচকি হাসলো।
.
থেংক্স দোস্ত। এই অসময়ে আমার বোনের পাশে থাকার জন্য। আমার বোনের সম্মান বাঁচানোর জন্য।এ ভাবেই সব বিপদে আপদে আমার বোনের পাশে থাকবি, কথা দে আমায়?রিয়ান তার ডান হাতটা এগিয়ে দেয় সাদাফের সামনে।সাদাফ রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর হাতে হাত রেখে কথা দেয়
.
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হিয়ার ভালো সময় খারাপ সময় ওর সকল বিপদে আপদে আমি ওর পাশে ওর ছায়া হয়ে থাকবো। কথা দিলাম।
.
আবেগে আপ্লুত হয়ে রিয়ান সাদাফকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আমি আমার বোনের জন্য একটা ভালো মানুষ পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ।
.
.
মিসেস সাবিনা হিয়া কে আনতে হিয়ার রুমে যায়। হিয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।
রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায়।
কীরে মা মন খারাপ?
.
মলিন হাসলো হিয়া। না আম্মু।
আজ তার এতো বছরের একতরফা ভালোবেসে যাওয়া মানুষটার সাথে তার আকাদ হবে,, তবুও কেন জানি হিয়া খুশি হতে পারছে না। বুকের মাঝে ভয় হচ্ছে কোনো এক অজানা কারণে।
.
ড্রইং রুমে সাদাফের আব্বু আম্মু বসে আছেন।চল আমার সাথে।
হিয়া মাথা নাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে মায়ের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে।
.
ড্রইং রুমে এসে সবাই কে সালাম দিলো হিয়া। হিয়া কে দেখে সাদাফ আবারো হিয়া প্রেমে পড়ে গেলো।
.
আসো মা এদিকে এসে আমার পাশে বসো।
.
হিয়া সাদাফের মায়ের পাশে গিয়ে বসলো।
.
মাশাআল্লাহ। আমরা চাচ্ছি আজকেই আংটি পরিয়ে দিতে। আমাদের একমাত্র ছেলে, ধুমধাম করে বিয়ে না দিলে আত্মিয় স্বজনের কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। এখনকার যুগের মানুষ কে তো চিনেন কথায় কথায় খোঁচা দেওয়ার ধান্দা খুঁজে।
বললেন সাদাফের আব্বু সোহেল আহমেদ।
.
আপনাদের যেভাবে সুবিধা হয় আপনারা সে ভাবেই এগোতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই।

.
বড়দের কথার মাঝেই হিয়ার ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসে। হিয়া মোবাইল অন করে দেখে মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে আছে,,,
.
“”হিয়া তুমি যদি চাও সাদাফের অবস্থা আমানের মতো না হোক তাহলে এই বিয়েটা ভেঙে দাও।আর যদি এই বিয়েটা না ভাঙো তাহলে আমানের থেকে ও তোমার ভালোবাসা সাদাফের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে। মনে রেখো।””
মেসেজ টা পড়ে হিয়া স্তব্দ হয়ে গেছে।মে নাম্বার থেকে মেসেজ টা আসছে সে নাম্বারে ডায়েল করেন হিয়া। কিন্তু নাম্বার বন্ধ। হিয়া এখন কী করবে বুঝতে পারছে না। হিয়ার হাত পা রিতিমত কাঁপছে।এই অবস্থায় কী করা উচিত কিছুই মাথায় আসছে না হিয়ার।
.
সাদাফের আম্মু ব্যাগ থেকে একটা আংটির বক্স বের করে সাদাফের উদ্দেশ্য বললেন,,
.
সাদাফ যা হিয়া মা কে আংটি টা পরিয়ে দে।
.
সাদাফ তার মায়ের হাত থেকে আংটি টা নিয়ে হিয়ার কাছে যায়। হিয়া আবেগ শূন্য ভাবে তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে।সাদাফ হিয়ার বা হাত টা ধরেতেই হিয়া ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নেয়।বসা থেকে উঠে বলে,,,
.
এই বিয়ে হবে না। আমি এই বিয়েতে রাজি না।
.
হিয়ার কথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সবার মাথার উপর।
.
কী যাতা বলছিস হিয়া? মাথা ঠিক আছে তোর?চিল্লিয়ে বলে রিয়ান।
.
আমার কারো করুনার দরকার নেই। আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েন সাদাফ ভাই। আন্টি আংকেল আমাকে মাফ করে দিয়েন। আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
.
কিন্তু কেন হিয়া? আমি তোমায় দয়া দেখাচ্ছি না হিয়া।
.
মা এমন করিস না।কি হয়েছে তোর আমাকে বল?
.
আমি ঠিক আছি আম্মু।আপনারা আস্তে পারেন বলে হিয়া তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে।
.
কেন হয় আমার সাথে এমন? কী দোষ করছি আমি?
.
এই জন্যই মানুষের ভালো করতে নেই। আপনাদের মেয়ে যদি বিয়েটা নাই করতে চায় তাহলে সাদাফ কে শর্ত দিল‌ কেন আমরা রাজি হলে সে সাদাফ কে বিয়ে করবে? দেখতে তো শান্ত ভদ্র মেয়ে মনে হয়। পেটে পেটে এত শয়তানি।যে যেমন তার সাথে তেমনি ঘটে।চল সাদাফ আর এক মূহুর্ত ও এই বাড়িতে থাকার দরকার নেই বলে সাদাফের আম্মু সাদাফের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
.
হিয়া হঠাৎ এমন করলো কেন সাদাফের মাথায় আসছে না।হিয়া মে শুধু শুধু এমন করছে না এটা আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক সাদাফ ঠিক বুঝতে পারছে।
মে করেই হোক হিয়ার সাথে আমার কথা বলতে হবে। জানতে হবে কেন হিয়া এমন করলো?
.
.
.
বলেছি না তোমায়, আমার সাথে লাগতে আসলে তার ফল ভালো হবে না। কিন্তু তুমি তো আমার কথায় পাত্তাই দিলে না।
আমাকে জেলে দেওয়ার শাস্তি তোমাকে সারা জীবন ভোগ করতে হবে মি.সাদাফ আহমেদ।
শুধু শুধু তোমার জন্য হিয়া বেচারি কষ্ট পাচ্ছে।ওমন একটা মেয়েকে কষ্ট দিতে আমার ও তো বুকে লাগে।
হাহা হা হা হা,,,,,,,
.
.
চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে