ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে পর্ব-১০

0
930

গল্পঃ #ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে
পর্বঃ ১০
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)

.
সকালের নাস্তা করতে নিষান সবার আগেই চলে এলো। অন্যদিন নিষানের মা চিল্লিয়ে যেখানে
ছেলেকে ঘুম থেকে উঠাতে পারেন না, সেখানে আজকে নিষান সবার আগে চলে এসেছে দেখে নিষানের মা সোফায় বসে বসে মিটমিটিয়ে হাসল।
নিষান দুহাত ঘষতে ঘষতে চেয়ারে বসতে বসতে
মাকে জিজ্ঞেস করল,

‘মা, ভাইয়া আর বাবা কই? তারা সকালের নাস্তা করবে না, নাকি? ‘

নিষানের মা মুচকি হেসে বলে,
‘সবাই নাস্তা করবে।’

‘তা নিষান আজ এতো তাড়াতাড়ি নাস্তা করতে চলে এলে, অন্যদিন ডাকতে ডাকতেও আসো না। কি ব্যাপার? হুম?’
লিজা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে কথাগুলো বলল।

নিষান গলাকেশে বলল,
‘উহ, ভাবী সকাল সকাল পঁচাবে না একদম। তা যাকে খুঁজছি সে কোথায়?’ (লাজুক স্বরে)

‘তার আসার সময় হলে সে ঠিকই আসবে। এখন তোমার সে রান্নাঘরে আছে।’

‘ওহহ, আচ্ছা।’

কিছুক্ষনের ভিতরেই নিষানের বড়ভাই জিষান আর
ওর বাবা নাস্তা করতে চলে এলেন। নিরাও রান্নাঘর থেকে পরোটা, সবজি আর ডিম পোচ নিয়ে এলো।
সাথে দুকাপ চা নিয়ে এলো নিষানের বাবা-মায়ের জন্য।
পরোটা আর সবজি মুখে দিতে না দিতেই নিষান উচ্চস্বরে বলে উঠল,

‘ওয়াও, রান্না তো ফার্স্ট ক্লাস হইছে। আজকের পরোটা আর সবজির স্বাদ অসাধারণ। ডিম পোচটাও পারফেক্ট।’

নিষানের কথা শুনে ওর মা-ও বলে উঠল,
‘এতকাল বুঝি রান্না ঠিকঠাক ছিল না?’

লিজা এক ভ্রু উঁচু করে বলল,

‘দেবর সাহেব, যাকে ভেবে খাবারের রিভিউ দিচ্ছেন সে কিন্তু এসব রান্না করে নি।’

‘ ম-মানে? এগুলো নিরা রান্না করে নি? ওকে না দেখলাম রান্নাঘর থেকে এগুলো আসতে?’

নিরা মাথা নিচু করে বলল,
‘রান্না সব আম্মা করেছে। আমি রান্না করতে জানি না। আমি শুধু আব্বা-আম্মার জন্য চা বানিয়েছি আর রান্নাঘর থেকে এগুলো এখানে এনেছি।’

‘আজকে দেবর সাহেব নিজের বউয়ের রান্না ভেবে
প্রশংসা করছে, কই অন্য সময় তো
করো না? ‘ (লিজা)

‘আহারে, ভাই আমার এখনই বউ পাগল হয়ে গেছে।
বউকে খুশি করতে রান্না মজা হয়েছে বলেছে, তুমি এটাও বুঝ না লিজা?’

‘হ্যাঁ, বুঝেছি তো। সেই জন্যই তো বললাম। আমার বিয়ের পর থেকে আজ অবধি একদিনও নিষান নিজে থেকে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করতে আসে নি।অথচ আজ নিজে থেকে আগে তো এসেছেই সাথে
খাবার মুখে দেওয়ার আগেই রান্নার প্রশংসা
করছে। ‘(লিজা)

‘একেই বলে বউয়ের… ‘ জিষান কথাটা শেষ করার আগেই নিষান দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,

‘ধ্যাত, আমি আর নাস্তাই করব না। সবাই আমাকে লজ্জা দিচ্ছে।’ বলে নিষান চলে যাওয়ার আগেই ওর মা বলল,

‘বাবা, রাগ করিস কেন? ওরা তো মজা করছে। খেয়ে যা, খাবারের ওপর রাগ করতে নেই।’

‘তাহলে নিরাকে দিয়ে নাস্তা রুমে পাঠিয়ে দিও।'(নিষান)

জিষান নিষানের কথা শুনে মজা করে কিছু বলবে
তার আগেই ওর মা চোখ দিয়ে ইশারা করে থামতে
বললেন। তাই জিষানও চুপ হয়ে গেল।
নিষানের মা নিরাকে বললেন, ওদের দুইজনের খাবারের প্লেট নিয়ে রুম চলে যেতে।
নিরাও কোন কথা না বলে তাদের নাস্তার প্লেট নিয়ে
রুমে চলে গেল।
নিরা নিষানের হাতে নাস্তার প্লেট দিতে দিতে বলল,

‘ঢং দেখিয়ে উঠে আসলেন কেন নাস্তা না করে? আবার আসার সময় আম্মাকে বললেন কেন
নিরাকে দিয়ে নাস্তা রুমে পাঠাতে?’

‘কি করব? দেখছিলে না ভাইয়া ভাবী আমাকে লজ্জা
দিচ্ছিল তাও আবার বাবা-মায়ের সামনে।’

‘ঠিকআছে, আরও লজ্জা দেওয়া উচিত ছিল। আপনাকে অতি পন্ডিতি করে কে বলতে বলেছিল
রান্না মজা হয়েছে। এতদিন বলেন নাই, বিয়ে করার পরদিনই বলছেন লজ্জা দিবে না তো কি করবে?’

‘আমি কি জানি যে তুমি রান্না করো নাই? তোমাকে দেখলাম রান্নাঘর থেকে ঘেমে-টেমে বের হচ্ছো, তাই ভাবছি তুমি রান্না করছো।’

‘তাহলে আমাকে খুশি করতে এতক্ষণ মিথ্যা প্রশংসা করছিলেন?’

নিষান আমতা-আমতা করে বলল,
‘মিথ্যা বলতে যাব, খাবার ভালোই লেগেছিল। যাইহোক, আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে এখন খেতে দাও।’

খাওয়া শেষে নিরা এঁটো প্লেটগুলো রান্নাঘরে রেখে
আসার সময় ওর শাশুড়ী ওকে ডাক দিল। নিরা
রুমে গিয়ে দেখে লিজাআপুও আছে। ওদের শাশুড়ী
আলমারি খুলে তিনটে শাড়ি বের করল। তার মধ্যে দুটো জামদানী শাড়ি এক ডিজাইনের৷ একটা লাল-খয়েরী, অন্যটা জাম কালার। নিরার হাতে ওর শাশুড়ী নীল কাতান শাড়িটা তুলে দিয়ে বলল,

‘নিরা, আজকে হিসাব অনুযায়ী তোমাদের বৌভাত হওয়ার কথা ছিল। আমরা বৌভাতের অনুষ্ঠান
করতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিষান নিষেধ করেছে। ও বলেছে যেদিন ও চাকরি পেয়ে তোমার দায়িত্ব
নিতে পারবে সেদিন ও বৌভাতের অনুষ্ঠান করবে।
বৌভাত উপলক্ষে নীল কাতান শাড়িটা দিলাম। যদিও বৌভাত করছি না তবুও এ শাড়িটা সময় পেলে কোন একসময় পড়ে সেজেগুজে দেখাবে।’

‘জ্বি, আম্মা।’

নিষানের মা এবারে লিজা আর নিরাকে জাম কালার আর লাল-খয়েরি জামদানী শাড়ি তুলে দিয়ে বলে,
‘আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমার দুই ছেলের বউকে
আমি শাড়ি দিব। আজ সে ইচ্ছাটা আমার পূরণ হচ্ছে। তোমরা দুইজন আজ সন্ধ্যায় দুজনে এই শাড়ি দুটো পড়বে। আমি আমার মেয়েদের মন ভরে দেখব।তোরা আমার মেয়ে।’
বলে নিষানের মা ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।

লিজা আর নিরা দুজনই অবাক হয়ে শাশুড়ীর ‘তুই’ ডাক শুনে। লিজাকে বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই তুই বলে ডাকেনি ওর শাশুড়ী। আজ হঠাৎ কি হলো?

ওর শাশুড়ী নিজে থেকেই বলা শুরু করে,
‘আমার একটা পরীর মতো ফুটফুটে মেয়ে ছিল। আমার বিয়ের চার বছর পরে আমার কোল জুড়ে এসেছিল। সারাদিন একা একা কথা বলতো আর খেলতো। আমাদের গ্রামের বাড়িতে
বিল্ডিংয়ের ছাদে রেলিং ছিল না, একদিন খেলতে
খেলতে ও ছাদ থেকে পড়ে যায়।
নাআআ… আমি আর সেদিনের কথা চিন্তা করতে পারছি না।(চিৎকার করে)
এরপর আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে নানান কথা বলে।আমি প্রায় পাগলের মত হয়ে যাই। প্রায় দুই বছর পরে আমার কোল জুড়ে জিষান আসে এর ছয় বছর পরে নিষান জন্ম নেয়। ছেলে দুটো হওয়ার পরেও আমি স্বাভাবিক হতে পারি নি। সবসময় আমি অসুস্থ থাকতাম। এখনোও অসুস্থ হয়ে যাই, মাঝে মাঝে মনে হতো নিষানের বউ হয়তো দেখে হয়ত ম’রতে পারব না। তাই ওকে তাড়াতাড়িই বিয়ে করিয়েছি। এখন আমার আশা পূরণ হয়েছে ঘরে দুটো লাল টুকটুকে বউ এনেছি। আমার মেয়ের অনেক শখ ছিল। তাই আমি ছেলের বৌদের মেয়ে মনে করি। তোরাও আমাকে মা ভাববি।

লিজা আর নিরা দুজনই নিচুস্বরে বলে, ‘জ্বি।’
.
.
নিরা আর লিজা সন্ধ্যায় শাড়ি পড়ে সাজগোজ করছিল। দুপুরে নিষান একটা কাজে বেরিয়েছিল, সন্ধ্যায় বাড়ি এসেছে। রুমে এসে দেখে
নিরা সাজগোজ করছে। নিষান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে,

‘কি ব্যাপার ? হঠাৎ এতো সাজগোজ? ‘

‘মা বলেছে আজ তার দুই মেয়েকে মন ভরে দেখবে।’

‘লাল-খয়েরী শাড়িতে তো আমার বউটাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ‘

‘হুহ, আমি তো এমনিতেই সুন্দর। এ আর নতুন কি?আপনিও গিয়ে রেডি হোন। রাতে ডিনার করতে সবাই মিলে বাইরে যাব মা বলেছে। ‘

‘ওমা তাই নাকি? তাহলে তো আমাকেও নায়কের মতো সাজতে হবে।
যাই গিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হই বলে নিষান রেডি হতে
চলে গেল।

রাতে ওরা সবাই মিলে বাইরে ডিনার করতে গেল। নিরার খুব ভালো লাগছে এমন একটা মায়ের মত শাশুড়ী পেয়ে। সকলে ঘুরাঘরি করে অনেক রাতে
বাড়ি ফিরল।

#চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে