Sunday, October 5, 2025







ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-২৩

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৩

পুরো দমে তিনদিন শশুর বাড়ী মধুর হাড়ি খেয়ে আদ্রিয়ান ঢোল হয়ে গেল। রোদ এই কয়দিন নিজের মন মতো চলেছে। নিজের বাসায় এসে ওর ডানা গজিয়েছে। আদ্রিয়ানের বকা যাতে না খেতে হয় তাই একটু দূরে দূরে থেকেছে ও। মিশির কোন চিন্তা নেই। সারাদিন নানা,নানী, মামা, খালাদের কোলে কোলে ঘুরে দিন কেটেছে ওর। মিশিকে যে এখানে এতটা আদর,ভালোবাসা দেয়া হবে জানা ছিলো না আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান নিজেও অতিরিক্ত জামাই আদর খেতে খেতে হাঁপিয়ে উঠলো। সারাদিন কেউ না কেউ ওকে দেখতে আসবেই। সবচেয়ে লজ্জা লাগে যখন তারা আবার হাতে সালামি গুজে দিয়ে যায়। কেমন যেন নিজেকে নতুন জামাই নতুন জামাই লাগে আদ্রিয়ানের। এই অনুভূতি সব নতুন আদ্রিয়ানের কাছে। একদম অপরিচিত অনুভূতি।
অফিসেও যেতে দিচ্ছে না শশুর শাশুড়ী অগত্যা বাসায় বসেই যতদূর পারা যায় ততটুকু কাজ এগিয়ে রাখছে আদ্রিয়ান। আপাতত ভিডিও কনফারেন্সে একটা মিটিং করছে।এমন সময় কেউ ছোট্ট হাত দিয়ে আদ্রিয়ানের হাত ধরে ডাকছে আদো আদো গলায়। আদ্রিয়ান চমকে পাশে তাকাতেই ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে হাত দিয়ে ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো রুহাকে। এই রুহা হলো আদ্রিয়ানের সবচেয়ে ছোট শালী। তিন বছরের শালী আদ্রিয়ানের। ভাবা যায়? এর থেকে তো আদ্রিয়ানের নিজের মেয়েও বড়। রুহা চোখ গোল গোল করে ল্যাপটপে তাকিয়ে বললো,

— দুতাভাই এতা কি?

আদ্রিয়ান আবারও হেসে রুহার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,

— এটা ল্যাপটপ শালী সাহেবা।

— দুতাভাই আতনাকে ডাতে নিতে।

আদ্রিয়ানের ভীষণ হাসি পায় রুহার কথা গুলো। ও জানে শাশুড়ী বড়দের কড়া ভাবে বলেছে এখন আদ্রিয়ানকে ডিসটার্ব না করতে তাই তো ফাজিলগুলো ছোট্ট রুহাকে টার্গেট করে আদ্রিয়ানের পকেট খালি করার ধান্দায় আছে। আদ্রিয়ান রুহাকে বসিয়েই বাকি কাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ালো রুহাকে কোলে নিয়ে। নিচে নামতেই দেখলো আজ রোদের চৌদ্দ গুষ্টি হাজির। এত জাতগুষ্টি দেখে আদ্রিয়ানের মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। পুরান ঢাকায় মানুষের জাত গুষ্টি মানেই হলো এক গোত্রের সমান৷ সবার সাথেই আদ্রিয়ান টুকটাক কথা বলে রোদ আর মিশিকে খুঁজতে লাগলো। না পেয়ে রুহাকে বললো,

— ছোট্ট শালী সাহেবা আপনার আপিকে ডেকে নিয়ে আসুন তো।

রুহা টুপটাপ পা ফেলে রোদকে খুঁজতে গেল। রোদ এলো বেশ কিছু সময় পর। এসেও আদ্রিয়ানের কাছে ঘেঁষছে না। আদ্রিয়ান নিজেই উঠে ওর কাছে গেলো। হাত ধরে সাইডে নিয়ে বললো,

— রুমে যাচ্ছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমে আসবা। আর হ্যাঁ কোন ঘাড়ত্যাড়ামি চলবে না রোদ।

কথাটা গুলো বেশ জোর দিয়ে বললো আদ্রিয়ান। রোদ মুখ তুলে তাকালো না। আদ্রিয়ান চলে গেল রোদের রুমে। রোদ আবার রুদ্রর কাছে গিয়ে বসলো৷ ভাইটার মন কাল রাত থেকে খারাপ। আদ্রিয়ান কাল রাতেই জানিয়েছে আজ চলে যাবে ওরা। সেই থেকে বাড়ীর সবার মনই ভার হয়ে আছে। রোদ কাল আদ্রিয়ানকে রুমে স্পষ্ট জানিয়েছে, যদি এখান থেকে যায় তাহলে শশুর বাড়ী ই যাবে। আদ্রিয়ানের সাথে অন্য কোথাও যাবে না। রোদ একথা বলার সাথে সাথেই আদ্রিয়ান ধমকে ওকে চুপ করিয়ে দেয়। সেই থেকে আদ্রিয়ানের আশেপাশে তেমন একটা আসছে না রোদ। রাতেও আগে আগে মিশিকে নিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। তাই আদ্রিয়ান এখন এভাবে বলে গেলো।
রুদ্রর কাছে বসতেই রুদ্র বোনের কোলে মুখ গুজে দিলো। রোদের নিজেরই ভাবতে কান্না আসছে যে আজ চলে যাবে। এতদিন আসে নি তবে এখন এসে আর যেতে মন চাইছে না তাও আবার কি না আদ্রিয়ানের পাগলামির জন্য কোথায় না কোথায় যেতে হয়। রোদ রুদ্রকে অনেক করে বুঝালো। রুদ্র এখন বড় হয়েছে। এতটুকু বুঝে যে চাইলেও বোন এখন থাকতে পারবে না। রুদ্রকে সামলাতে সামলাতে রাদ হাজির। রোদকে ধরে বসে রইলো। রোদ দুই ভাইয়ের মাঝখানে মন মরা হয়ে বসে রইলো।
_________________

রুমে ডুকতেই আদ্রিয়ান ফট করে দরজা লাগিয়ে দিলো। রোদ চমকে তাকাতে আদ্রিয়ান ওর বাহু ধরে নিজের দিকে নিয়ে কিছুটা অধৈর্য হয়ে বললো,

— এতক্ষণ কেন লাগলো?

………

— রোদ কিছু জিজ্ঞেস করেছি?

— ভাইয়া আর রুদ্রর সাথে ছিলাম।

আদ্রিয়ান নরম হলো। দুই হাতে রোদকে আগলে নিলো। চুলগুলো একত্রে করে বেঁধে দিয়ে বললো,

— মন খারাপ করে না সোনা। আবার আসব।

— হুম।

— বের হতে হবে এখন।

–হুম।

আদ্রিায়ান জানে রোদের মন খারাপ। হওয়াটাও স্বাভাবিক। আদ্রিয়ান ওকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে দিলো। রোদ ওয়াসরুমে ডুকে পড়লো। আদ্রিয়ানের শাশুড়ী, শশুড়,চাচা শশুড় আর শাশুড়ী দাঁড়িয়ে। তারা ভেতরে এসে আদ্রিয়ানের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললেন। আরো কিছুদিন থাকতে বললেও আদ্রিয়ান বললো,

— মাফ করবেন। আসলে এখন একদমই সময় নেই। আবার আসব।

তারাও আর জোর দিলো না। রোদ বেরিয়ে এলো একেবারে তৈরী হয়ে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে গেল। রোদ তো মাকে কতক্ষণ ধরে রাখে আবার চাচিকে কিছুক্ষণ ধরে রাখে। ওর মা নিজেকে শক্ত রাখলেও চাচি কেঁদে কেঁটে অস্থির। চাচিটা একটু আবেগী মানুষই। রোদকে অনেক আদর করেন তিনি। রাদ, রুদ্র একজনও কাছে নেই। দুই ভাই এখানে থাকলে রোদ নিশ্চিত যেতে পারবে না তাই ওর বাবা আগেই বলেছে দুই ভাই যাতে এখানে না থাকে।

অনেক কষ্টে গাড়ীতে উঠালো রোদকে। ইশান ধরে টরে বসিয়েছে। রোদ আবার ইশানকে ধরে রাখলো কতক্ষণ। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। একঘন্টা ধরে বিদায় পর্ব চললো। অবশেষে গাড়ী স্টার্ট দিলো ড্রাইভার। মিশি বাবার বুকে লেগে আছে। ছোট্ট মিশিরও মনটা খারাপ। নানা বাড়ী বলে কথা। এত এত আদর আর মানুষের ভীরে মিশি ছিলো আদুরীনি হয়ে। সেই আদর ছেড়ে যেতেই এত মন ভার করে আছে। রোদ জানালা ঘেঁষে বসে আছে। আদ্রিয়ান পরলো মহা ঝামেলায়। দুই মা-মেয়ের যত মান অভিমান সব এই বেচারা আদ্রিয়ানকে ঘিরে।

________________

ধানমন্ডির বিশাল এক বিল্ডিং এর সামনে এসে থামলো আদ্রিয়ানের গাড়ি। এই গাড়ি আদ্রিয়ানেরই কেনা। ড্রাইভারের সাহায্য সব ছয়তলায় নেয়া হলো। ড্রাইভারকে কিছু টাকা দিয়ে বিদায় দিলো আদ্রিয়ান। রোদ মিশিকে ধরে দাঁড়িয়ে দরজার বাইরে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে। এই তলায় মোট ৩ টা ফ্লাট। বিশাল বড় জায়গা৷ আদ্রিয়ান এসেই চাবি বের করে মেইন ডোর খুললো। একহাতে রোদকে আরেক হাতে মিশিকে ধরে ডান পা দিয়ে ভেতরে ডুকে সালাম দিলো। লাইট অন করে লাগেজ দুটো ভিতরে নিলো। রোদ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ফ্লাটটা বেশ জায়গা জুড়ে। চারটা বেডরুম,ওপেন কিচেন ডায়নিং এর সাথে এডজাস্ট করা আর একপাশে বসার রুমের মতো সাথেই কাঁচের একটা দেয়াল। এটা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি সুন্দর ভাবে দেখা যাচ্ছে। ছোট্ট মিশি ও চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে বুঝার চেষ্টা করছে যে কোথায় এলো এটা। ওদের মা-মেয়ের ভাবনার মাঝেই আদ্রিয়ান এসে মিশিকে কোলে তুলে রোদকে বললো,

— ওটা আমাদের বেড রুম। চলো।

রোদ আদ্রিয়ানের পেছনে পা বাড়ালো। বেশ গোছানো একটা রুম। প্রয়োজনীয় ফার্নিচার বাদে আকর্ষণীয় করে সাজানো অফ হোয়াইট থিমে। মিশি বাবার কোলে জিজ্ঞেস করলো,

— বাবাই আমরা কার বাসার এসেছি?

— এটা আমাদের বাসা মা। তোমার, ভাইয়ার,মাম্মার আর বাবাইয়ের।

মিশি অবুঝ গলায় বললো,

— এটা তো আমাদের বাসা না বাবাই। আমাদের বাসায় চলো। এখানে থাকব না। আলিফ ভাইয়ের সাথে খেলবো। দিদার কাছে যাব।

আদ্রিয়ান পড়লো মহা টেনশনে। রোদকে তো ধমকে চুপ রেখেছে মিশিকে কি বলবে? রোদের দিকে তাকাতেই দেখলো রোদ শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান বুঝলো রোদ মোটেও এই ব্যাপারে হেল্প করবে না। তাই নিজেই মেয়েকে হ্যান ত্যান ভাতের ফ্যান বুঝ দিলো। মিশিও বাবার উল্টো পাল্টা কথা কিছু মিছু বুঝলো। কি বুঝলো ওরাই জানে মিশি আর জেদ করে নি। আদ্রিয়ান লাগেজ থেকে মিশির জন্য পাতলা গেঞ্জি নিয়ে ফ্রক খুলে তা পড়িয়ে হাত মুখ ধুয়ে দিলো। রোদ তখনও ঠাই বসে। মিশিকে ফোনে সিনচেন ছেড়ে দিয়ে আদ্রিয়ান আলমারিতে ওদের কাপড় গুছিয়ে রাখলো। নিজেই ফ্রেশ হয়ে এসে লাগেজ গুলো একা একা তুলে রাখলো। রোদের মন চাইলো একবার হেল্প করতে পরক্ষণেই ভাবলো, “কর ব্যাটা একা একাই কর।নতুন সংসার করবি একা, মজা বুঝ এবার”। মনে মনে এসব ভেবে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে ফ্রেশ হলো রোদ। অবাক হলো দেখে প্রয়োজনীয় সব রাখা এখানে। তাহলে কি আদ্রিয়ান আগে এসেই এসব গুছিয়েছে?
আপাতত সব চিন্তা বাদ দিলো রোদ। বের হয়ে আসতেই দেখলো আদ্রিয়ান নেই রুমে। মিশি বেডে বসে বসে কার্টুন দেখতে ব্যাস্ত। রোদ বেরিয়ে গলা উঁচু করে এদিকে ওদিকে টোপ মারছে তখনই খেয়াল করলো কিচেনের দিকে টুংটাং আওয়াজ হচ্ছে। পা বাড়িয়ে যেতেই দেখলো আদ্রিয়ান কফি বানাচ্ছে। ওপেন কিচেন হওয়াতে রোদের দেখতে অসুবিধা হয় নি। এবার আর নিজেকে আটকাতে পারেনি রোদ। ও থাকতে সামান্য কফিটুকু যদি আদ্রিয়ানের করে খেতে হয় তাহলে কেমন বউ হলো রোদ? রোদের ভেতরের বউ বউ ভাব নিমিষেই জেগে উঠলো। আজকে আসার সময় চাচি একগাদা সংসারের জ্ঞান দিয়েছে এতে করে রোদের মনের গৃহিণী ভাব ফুটে উঠেছে।
এগিয়ে এসে আদ্রিয়ানের হাত থেকে কাপ নিয়ে বললো,

— সব বের করে দিন আমি বানিয়ে দিচ্ছি।

আদ্রিয়ান না করলেও রোদ শুনে নি। আদ্রিয়ানের এমনিতেই মাথা ধরে আছে তাই আর জোর না করে রোদকে সব বের করে দিলো। রোদ ও ঝটপট করে কফি বানিয়ে আদ্রিয়ানকে দিলো।
.
রোদ ফোনে এতক্ষণ শাশুড়ীর সাথে কথা বলে জানলো যে আদ্রিয়ান মায়ের সাথে ঠিকই যোগাযোগ করছে। রোদের মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। এ কেমন রাগ? ঘর-বাড়ী ছেড়ে দিবানিশি হইলা আবার যোগাযোগ ও করো? তেড়ে আদ্রিয়ানের কাছে গেতেই আদ্রিয়ান হাত উঠিয়ে বললো,

— একটু পরে আদর করো বউ। এখন একজন আসছে।

রোদ থ হয়ে গেল এহেন কথায়। আদ্রিয়ান ওর গাল টিপে দিলো। কলিং বেল বাজতেই আদ্রিয়ান খুলে দিলো ওমনি রোদ দেখলো ইয়াজ দাঁড়িয়ে হাতে একগাদা বাজারের ব্যাগ। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ধরে বললো,

— দারোয়ানকে বলতা হেল্প করতে।

— সমস্যা নেই ভাই।

বলে ব্যাগ গুলো কিচেনে রেখে সোফাতে হেলান দিয়ে শুয়ে পরলো। রোদ এগিয়ে এসে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

— তুই এখানে কি করিস?

— দেখলি না বাজার আনলাম।

— বাহ্। ডক্টর থেকে কাঁচা বাজারের ব্যাবসা। খারাপ না।

— বাদ দে। বল কেমন সাজালাম?

— কি সাজালি?

— ভোনদি কোথাকার। তিনদিন ডাক্তারি কইরা কামলা খাটা খাটসি তোর ফ্লাট সাজাতে। তোর জামাই তো শশুর বাড়ী রসের হড়ি খাইসে।

রোদ অবাক হয়ে বললো,

— তুই করেছিস এসব?

— গাধী আমি একা কিভাবে করব? লোক দিয়ে করিয়েছি। এখন এসব নিয়ে এলাম। কথা না বাড়িয়ে ব্যাগে লেবু আছে শরবত বানিয়ে নিয়ে যা।

রোদ খেয়াল করলো ইয়াজ আসলেই টায়ার্ড তাই কথা না বাড়িয়ে শরবত বানাতে গেলো।
আদ্রিয়ান মিশিকে নিয়ে আসতেই মিশি ইয়াজকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে কোলে উঠে বললো,

— মামা।

— জ্বি মা।

— তুমি এতদিন আসো নি কেন?

— এই যে আজকে আসলাম মা’কে দেখতে। মায়ের নতুন বাসা কেমন লেগেছে?

মিশি চিন্তিত ভঙ্গিতে ভাবতে লাগলো। ইয়াজ হেসে বললো,

— কি ভাবে মাম্মার মেয়ে?

— এটা তো আমাদের বাসা না।

ইয়াজ আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান কথা ঘুরিয়ে মিশিকে বুঝালো। রোদ শরবত এনে ইয়াজকে দিলো। বেশকিছু থেকে ইয়াজ চলে গেল। রোদ মিশিকে নিয়ে পুরো ফ্লাট ঘুরে ঘুরে দেখছে। আদ্রিয়ান ততক্ষণে ফ্রিজে আর কিচেনে সব গুছাতে ব্যাস্ত। রোদ সোফায় দিক থেকে দেখতেই এগিয়ে এসে আদ্রিয়ানকে সরিয়ে দিয়ে বললো,

— আমাকে বললেই তো হতো।

আদ্রিয়ান নিজেই করতে করতে বললো,

— তোমাকে বললে হবে না রোদ।

— কেন?

ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো রোদ। আদ্রিয়ান সবজি গুলো রাখতে রাখতে বললো,

— তুমি তো এখনও এটাকে তোমার ঘর ভাবতে পারো নি রোদ তাহলে কিভাবে অন্যের ঘরের কাজ তোমাকে করতে বলি?

কথাটা সামান্য হলেও রোদের ভীষণ গায়ে লাগলো। ভেতরে ভেতরে খারাপ লাগছে ওর। এভাবে কেন বললো আদ্রিয়ান? রোদ আলাদা হতে চায় না তাই তো এমন করছিলো তার মানে এটা না যে আদ্রিয়ানের সাথে অন্য ঘরে থেকে সেটাকে নিজের করে নিতে পারবে না। রোদ আদ্রিয়ানের হাত থেকে দুধের প্যাকেটটা নিয়ে বললো,

— এটা অন্যের ঘর তাই না?দেখি কার সাথে সংসার করবেন আপনি তাকে নিয়ে আসুন। যান। এক্খনই যান।

কথাটা গুলো বলে বিরবির করতে করতে রোদই সব গুছালো। হাতে হাতে আদ্রিয়ানও সব এগিয়ে এগিয়ে দিলো। সব গুছাতে বেশ সময় লেগে গেল। রোদ মিশিকে নিয়ে বসলো সোফায়। আদ্রিয়ান এসে পাশে বসে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো নয়টার মতো বাজে। ঐ বাসা থেকে রওনা দিয়েছিলো বিকেল দিকে। এরমধ্যে মিশিকে শুধু ফল খায়িয়েছে রোদ। রোদ নিজে কিছুই খায় নি। আদ্রিয়ান গায়ে শার্ট পরতে পরতে বললো,

— রোদ আজকে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসি। কাল থেকে বুয়া আসবে।

রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— কই যান আপনি?

— খাবার নিয়ে আসি।

— আমি একা থাকবো?

— একা কই? মিশি আছে না।

রোদ হা করে তাকিয়ে বললো,

— আজব মিশি কি করবে?

আদ্রিয়ান রোদকে টিভি অন করে দিয়ে বললো,

— আমি যাব আর আসন সোনা। কেউ আসলে দরজা খুলবে না। ঠিক আছে?

— আচ্ছা। আইসক্রিম নিয়ে আসবেন।

আদ্রিয়ান বেড়িয়ে যেতেই রোদ দরজা অফ করে দিলো। মিশিকে নিয়ে বসে বসে টিভিতে সিনচেন দেখায় মনোযোগ দিলো। অনেক সময় হয়ে গেলেও আদ্রিয়ান আসে না। মিশি এদিকে ঢুলছে। রোদ কোনমতে এটা ওটা বলে জাগিয়ে রাখছে। মিশি মায়ের দিকে ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে বললো,

— মাম্মা মিশি ঘুমাবে।

রোদ ওকে কোলে নিয়ে কিচেনে ডুকতে ডুকতে বললো,

— মিশি এখন ঘুমাবে না।

বলে মিশির মুখে পানি দিয়ে ছিটে দিলো তখনই বেল বাজতেই রোদ মিশিকে কোলে নিয়ে যেতে যেতে বললো,

— বাবাই এসেছে তোমার।

বলে দরজা খুলতেই আদ্রিয়ান ব্যাগ হাতে ডুকতে ডুকতে বললো,

— এরপর থেকে না দেখে খুলবে না। অন্য কেউ ও তো হতে পারতো।

রোদ মিশিকে টেবিলে বসিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান প্লেট, গ্লাস আনতেই রোদ খাবার বের করে সার্ভ করে মিশিকে খাওয়ালো। উঠে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বললো,

— তুমিও খেয়ে নাও।

— আগে ঘুম পাড়িয়ে আসি। এত পর্যন্ত তো জাগে না।

বলে মিশিকে রুমে নিয়ে শুতেই মিশি ঘুমে ঢলে পরলো। রোদ বেরিয়ে টেবিলে বসতেই আদ্রিয়ান বেড়ে দিলো ওকে। খাওয়া শেষ করে দুই জন সব গুছিয়ে রাখলো। আদ্রিয়ানের মেডিসিনগুলো রোদ খুলে হাতে নিয়ে পানি নিয়ে রুমে এলো। আদ্রিয়ান তখন ঘুমন্ত মিশির পায়ে লোশন লাগাচ্ছে। রোদ মেডিসিন আদ্রিয়ান মুখের সামনে নিয়ে বললো,

— হা করুন।

মেডিসিন খাওয়াতেই রোদ চুল আঁচড়ে বেঁধে নিলো। আদ্রিয়ান পেছন থেকে ধরে উঁচু করতেই রোদ হকচকিয়ে বললো,

— কি করেন?

— ভালোবাসি।

বলে ব্যালকনিতে গেলো। এত উঁচু থেকে শহরের রাস্তাটা বেশ লাগলো এই রাতে। ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোতে ঝলমল করছে ঢাকার ব্যাস্ত এই এলাকা। অনিমেষ চেয়ে রইলো রোদ। আদ্রিয়ান পেছন থেকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে রোদের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিলো। রোদ নিজের সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে দিলো নিজের সবচেয়ে ভরসার স্থানে। আদ্রিয়ানের বুকে। বুক ভরে শ্বাস নিলো দুজন। রোদ রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো,

— সুন্দর না?

— অনেক।

— এখানে আনার অন্য কারণও আছে তাই না?

— হু।

— কি?

— হু।

রোদ আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে বললো,

— “হু”কি হ্যা? বলুন অন্য কারণ কি?

আদ্রিয়ান যেন হুসে এলো। এখানে আনার অন্য কারণও আছে যা আপাতত রোদকে বলতে চায় না আদ্রিয়ান। রোদকে আবারও টেনে নিজের কাছে নিতেই রোদ ছটফট করলো উত্তরের জন্য। আদ্রিয়ান মুখ ডুবিয়ে ঘাড়ে জোরে একটা বাইট দিতেই রোদ ” আহ” করে উঠলো। আদ্রিয়ান বুঝি আর থামে? ছোট ছোট ব্যাথাদায়ক আদরে ভরিয়ে তুললো রোদকে। দু’জনের শ্বাস তখন বেসামাল। সাথে বাড়লো বাতাসের বেগ বাড়লো। বাতাসের দাপটে যেন হারিয়ে যাচ্ছে দুই মানব-মানবী। হঠাৎ আবার বর্ষন শুরু হলো৷ এই ঋতুটা এমনই। কেমন খাপছাড়া। এই রোদ, এই বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটালো রোদ আদ্রিয়ানের মিষ্টি মুহূর্তে। আদ্রিয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। “ধ্যাত” বলে রোদকে নিয়ে ভেতরে ডুকে পড়লো। কাঁচের গ্লাস বেয়ে বেয়ে তখন তুমুল বেগে ঝড় উঠে গেল। রোদ যেতে নিলেই আদ্রিয়ান টেনে নিয়ে বললো,

— একদম না। ঠান্ডা লাগবে।

— শুধু পা ভিজাই?

— না।

— আইসক্রিম এনেছিলেন?

— না।

— কিপ্টে কোথাকার।

আদ্রিয়ান রোদের কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,

— আদরে আমি মোটেই কিপ্টে না। দেখাই?

রোদ লজ্জা পেল। আদ্রিয়ানকে সরিয়ে মিশির কাছে চলে গেল। আদ্রিয়ানের ভীষণ হাসি পায় যখন রোদ এমন লজ্জা পায়।

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ