ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-০১

0
1828

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০১
#অধির_রায়

“পরিবারের সম্মানের কথা বিবেচনা করে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি৷ তোমাকে আমি কোনদিন স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না৷” তূর্জয় নরম স্বরে মিহুকে বলে উঠে।

— মিহু কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে উঠে, ” আপনি কেন ছাঁদনা তলায় বিয়ে ভেঙে দিলেন না?”
“আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়নি৷ আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল আমার দিদির সাথে৷ তখন এই কথা মনে ছিল না৷ ”

— আমি এক কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না৷ বিয়ের আসর থেকে চলে আসলে তোমার বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে যেতো ৷ তুমি লগ্নভষ্টা হতে৷ তখন কিভাবে লোক সমাজে তুমি মুখ দেখাতে?


তূর্জয়ের বিয়ে ঠিক হয় মিহুর বোন ছোঁয়ার সাথে। ছোঁয়া পরিবারের চাপে বিয়েতে রাজি হয়৷ কিন্তু ছোঁয়া তূর্জয়কে ভালোবাসে না৷ ছোঁয়া ভালোবাসে অন্য কাউকে৷ বিয়ের আসর ছেড়ে ছোঁয়া পালিয়ে যায় একটা চিঠি লিখে৷ দুই পরিবারের সম্মান বাঁচাতে মিহুর স্বপ্নকে কবর দিতে হয়৷ মিহুকে তার দিদির পরিবর্তে বিয়ের আসরে নিয়ে আসা হয়৷

তূর্জয় বিয়েটা খুব খুশি। তূর্জয় সেই কলেজ লাইফ থেকে ছোঁয়াকে ভালোবাসে। কিন্তু কোনদিন বলার সাহস হয়নি৷ তূর্জয় অবশেষে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাবে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু নেই৷ কিন্তু শুভদৃষ্টির সময় বিয়ের কনে বদল দেখে তূর্জয় খুব রেগে যায়৷

— বিয়ের মালা ফেলে দিয়ে, “ছোঁয়া কোথায়?” আমি এই বিয়ে করতে পারবো না৷ আমি ছোঁয়াকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না৷

উপস্থিতি সবাই ছোঁয়ার নামে অনেক বাজে কথা বলতে শুরু করেন৷ বিয়ের আসর থেকে মেয়ে পালিয়ে গেছে সেই নিয়ে অনেকে ছোঁয়ার মা বাবাকে অপমান করতে থাকে৷ মিহুকেও কম অপমান সহ্য করতে হয়নি৷ অনেকে এটাও বলতে শুরু করে দেয় “মিহুর জন্য তার বোন ছোঁয়া পালিয়ে যেতে বাদ্য হয়েছে৷”

বড় বড় বিজনেস ম্যানরা চৌধুরীদেরও অপমান করতে থাকে৷ তারা বলতে থাকে ” মি. তিহান চৌধুরী আমরা এমনটা আশা করিনি। আপনি আমাদের বিয়েতে ইনভাইট করে এভাবে অপমান করবেন৷ আপনি আমাদের মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট না করলেও পারতেন। এভাবে লোক হাসানোর কোন দরকার ছিল না ৷” (তিহান চৌধুরী হলো তূর্জয়ের বাবা)

— প্লিজ আপনারা একটু শান্ত হোন৷ কে বলেছে বিয়ে হবে না? এই বিয়ে হবে৷ তূর্জয় মিহুকে বিয়ে করবে। এটা আমার শেষ এন্ড ফাইনাল কথা৷

তূর্জয় তার বাবার কথা শুনে করুন চোখে তার বাবার দিকে তাকায়৷ তূর্জয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না? তিহান চৌধুরী নিজের সন্তানের এমন অবস্থা দেখে বুঝতে বাকি রইল না তূর্জয় কি বলতে চায়ছে?

— তিহান চৌধুরী এগিয়ে এসে তূর্জয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠেন, ” প্লিজ তূর্জয় তুমি আমাদের মান সম্মানের কথা একটু ভেবে দেখো৷ আজ তুমি এই বিয়ে না করলে আমার মান সম্মান কিছু থাকবে না সমাজে। আমরা সমাজ ছাড়া চলতে পারি না৷ সমাজের নিয়ম নীতি আমাদের মেনে চলতে হয়৷”

তূর্জয় তার বাবার অসহায়ত্ব দেখে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়৷

— বাবা আমি কিছুতেই তোমার মাথা নিচু হতে দিবো না৷ কোন ছেলেই চাই না তার বাবা মাথা নিচু করে সমাজে বেঁচে থাকুক৷ তুমি সব সময় মাথা উঁচু করে চলবে৷

তিহান চৌধুরী ছেলের এমন উদারতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান৷ তিহান চৌধুরীর অনুমতিতে বিয়ের আসর আবার পুনরায় নতুন করে শুরু করে৷ এবার কোন হাসি নেই তূর্জয়ের মুখে৷ মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখেছে৷ দেখে কেউ বলতে পারবে না তূর্জয়ের আজ বিয়ে৷ তূর্জয়কে দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান চলছে।

ভালোই ভালোই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়৷ বাকি সকল নিয়মগুলো ধুমধামের সাথে আর পালন হলো না৷

বর্তমানে,,

— আপনি তো প্রথম বিয়ে করতে রাজি হননি। বিয়ে করতে কেন রাজি হলেন?

— তাহলে তুমিই বলো, তুমি কেন বিয়ের আসরে আসলে? তোমরা তো বলতে পারতে ছোঁয়া অন্য ছেলের হাত ধরে চলে গেছে৷ তাহলে তো কোন সমস্যা হতো না!

— ছোঁয়া চলে যাওয়াতে আমার মা বাবা ভেঙে পড়েন৷ যদি তারা এই কথা বিয়ের আসরে বলতেন, তাহলে সবাই তাদের অপমান করতো৷ এমনিতেও অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে মা বাবাকে। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এই বিয়েতে রাজি হয়েছি৷

— যদি আজ তোমার বিয়ে না হতো, তাহলে তোমার সকল স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যেত৷

— আমি তখন আমার কথা চিন্তা করিনি৷ আমার কাছে আমার পরিবার সবার আগে৷ আমি কিছুতেই নিজের পরিবারকে কারো কাছে মাথা নিচু করতে দিতে পারি না। তাদের মাথা সব সময় উঁচুতে রাখতে চাই৷

— তোমার ভাষণ বন্ধ হলে বাসর ঘর থেকে চলে যাও৷ তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ আর হ্যাঁ তুমি কোথায় যাবে? আমার কাছে কোন ম্যাটার করে না৷

— মানে কি বলতে চান? আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী। আপনার সব কিছুতে আমার অধিকার আছে৷

— “আমি এক কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না৷” ক্ষেপে বলে উঠে তূর্জয়।
.
মিহু তূর্জয়ের দিকে দৃষ্টি মেলে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তূর্জয়ের চোখ পাকানো দেখে থেমে যায়৷ তূর্জয় মিহুর হাত ধরে বিছানা থেকে নামায়৷ একটা বালিশ মিহুর দিকে ছুঁড়ে বলে উঠে ” আজ থেকে তোমার জায়গা মাটিতে৷ ভুলেও আমার কাছে আসতে চেষ্টা করবে না৷”

মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে কেঁদে ফেলে৷ মিহু জানতো তূর্জয় খুব ভালো ছেলে৷ কিন্তু তূর্জয় মিহুর সাথে এমন অন্যায় করবে মিহুর ভাবতে পারেনি৷ মিহু বালিশ নিয়ে ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে৷

তূর্জয় রাগে গরগর করতে করতে বাসর ঘরের সকল ফুল ছিঁড়ে ফেলে৷ আর ফুলগুলো ছিঁড়ে মিহুর দিকে ছুঁড়ে মারে। যা মিহুকে আরও কষ্ট দেয়৷ নিজের কষ্ট নিজের মনের মাঝে লুকিয়ে রাখে৷ তূর্জয়কে আর কোন প্রশ্ন করে না৷

তূর্জয় ফুলগুলো ছিঁড়ে মিহুর উদ্দেশ্যে বলে উঠে ” আমি তোমাকে দুই মিনিট সময় দিলাম, রুমটা পরিষ্কার করতে৷ রুমে যেন একটা ফুলের পাপড়িও না থাকে৷

মিহু কিছু বলতে নিবে তার আগেই তূর্জয় হন হন করে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ মিহু আর কোন উপায় না পেয়ে কান্না করতে করতে রুম পরিষ্কারের কাজ শুরু করে৷

মেয়েরা বাসর ঘর নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখে৷ মিহুও অন্যদের মতো বাসর ঘর নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনেছে৷ কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। তার জীবনে সেই স্বপ্নের কোন দাম নেই৷

মিহু অনেক কষ্টে সমস্ত রুম পরিষ্কার করে৷ তূর্জয় ওয়াসরুম থেকে এসে সোফায় বসে মনের সুখে ফোনে পাবজি খেলে যাচ্ছে৷ মিহুর কষ্ট তার চোখে একটুও পড়লো না৷

— মিহুর রুম পরিষ্কার করার পর বলে উঠে ” এখন কোন ফুল নেই৷ সম্পুর্ণ রুম পরিষ্কার করা হয়েছে৷”

— গুড জব৷

তূর্জয় আর কিছু না বলে ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে৷

মিহু বেলকনিতে বসে বসে কান্না করতে থাকে৷ মিহুর কি এমন দোষ ছিল? যার জন্য আজ তার এমন অবস্থা। মিহুর কান্নায় আজ পূর্নিমার চাঁদও কেঁদে উঠে মনে হয়৷ বার বার মেঘের মাঝে লুকিয়ে পড়ে।

মিহু কান্না করতে করতে বেলকনিতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল বেলা তূর্জয় ঘুম থেকে উঠে দেখে মিহু রুমে কোথাও নেই৷ তূর্জয় ভাবে মিহু ঘুম থেকে উঠে নিচে চলে গেছে৷ তূর্জয় ফ্রেশ হয়ে দ্বার খোলতে নিলে দেখে দ্বার বন্ধ। তার মানে মিহু রুম থেকে বের হয়নি৷ তূর্জয় মিহুকে খোঁজার জন্য বেলকনিতে যায়৷ বেলকনিতে এসে দেখে মিহু ছোট বাচ্চার মতো মুখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। যা তূর্জয়ের সহ্য হলো না৷ তূর্জয় এক বালতি জল এনে মিহুর উপর ছুঁড়ে মারে৷

— “মা মা আমাদের বাসার ছাঁদ ফুটো হয়ে গেছে৷” চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে উঠে মিহু৷

— বাসার ছাঁদ ঠিক আছে৷ কিন্তু ঘুমের সময় ঠিক নেই৷

মিহু চোখ মেলে দেখে, তূর্জয় চোখ পাকিয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে৷ হাতে বালতি। মিহুর বুঝতে আর বাকি রইল না তূর্জয় মিহুর উপর জল ছিঁটে মেরেছে৷

মিহু ঘুম পাগলী৷ মিহু ঘুমাতে খুব ভালোবাসে৷ ঘুমালে তার কোন বিষয়ে খেয়াল থাকে না৷ ঘুমের মাঝে মিহু তার মাকেও ছেড়ে কথা বলে না৷

— আপনি আমার ভালো ঘুমটা ভাঙলেন কেন? জানেন আমি কত সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম!

— স্বপ্ন মাই ফুট৷ এখন কয়টা বাজে৷ সময় সম্পর্কে কোন ধারণা আছে৷ আর ভুলে যেও না এটা তোমার বাবার বাড়ি নয়। সকাল ১০ টা অব্ধি ঘুমাবে।

মিহু বুঝতে পারে তূর্জয়ের কথা৷ এখন তো তার বিয়ে হয়ে গেছে। আর শ্বশুর বাড়িতে বেলা অব্ধি ঘুমানো যায় না৷ শ্বশুর বাড়িতে বেলা অব্ধি ঘুমালে অনেকে অনেক বাজে কথা বলে৷

মিহু তূর্জয়কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখে তূর্জয় খুব রেগে তাকিয়ে আছে মিহুর উপর৷

— মিহু ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে ” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

— তখন কি বললে?

— কখন?

— জল নিয়ে?

— কই কিছু নয়।

— আমি তোমার স্বপ্ন ভেঙেছি৷

— হুম আপনিই আমার স্বপ্ন ভেঙেছেন৷ আপনার জন্যই আজ আমার এমন অবস্থা।

— মিহুকে দেয়ালে চেপে ধরে ” কি বললে? ”

এত জোরে চেপে ধরে মিহু সহ্য করতে না পেরে কান্না করে দেয়৷

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে