ভালোবাসার তুই পর্ব-০৫

0
2427

#ভালোবাসার_তুই
#Part_05
#Writer_NOVA

ফুচকার স্টলে দুই গালে হাত রেখে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি সামনে থাকা পোটকা মাছের দিকে।আমার সামনে একের পর এক টপাটপ ফুচকা মুখে পুরছে সাইফ।ভেবেছিলাম এবারো বাঁশ দিবো।কিন্তু মনে হচ্ছে তা আমি পেতে চলেছি।কতদিন ধরে ওর কাছে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ছিলাম। যাতে ফুচকা না খাওয়াতে হয়।কিন্তু আজ বিধি বাম!কোচিং থেকে বের হতে না হতেই একটা বিশাল দেহী পোটকা মাছ আমার সামনে হাজির।সেখান থেকে আমাকে টেনে ফুচকার স্টলে নিয়ে এসেছে। আমার সামনেই আমার ফেবারিট ফুচকা মুখে পুরছে।একটাও দিচ্ছে না।

আমিঃ পোটকা কম করে খা।যেভাবে খাচ্ছিস মনে হয় ফুচকা খাওয়ার জন্য সারাদিন না খেয়ে ছিলি।৫ প্লেটের বেশি আমি একটাও খাওয়াবো না।

সাইফঃ আমাকে অনেকদিন ঘুরিয়েছিস।তাই তুই আরো দুই প্লেট বেশি খাওয়াবি।

আমিঃ আমি পারবো না।বেশি খেতে মন চাইলে নিজের টাকায় খা।টাকা গাছে ধরে না যে ঝাঁকি দিলেই পরবো।আমার বাপে অনেক কষ্ট করে ইনকাম করে।আমার আব্বু সারাদিন খাটুনি খেটে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা আয় করে।তোকে বলে কি লাভ?তুই কি করে বুঝবি।সারাদিন তো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াস।আর বাপের টাকায় ফুটানি করিস।যখন নিজে বাবা হবি তখন বুঝবি।

সাইফঃ আমাকে না বলে এসব নিজের কাজে লাগা।যখন বস্তায় বস্তায় লিপস্টিক কিনিস তখন এসব বড় বড় ডায়লগ কোথায় যায় তোর?নিজে যা করিস না তার উপদেশ অন্যকে দিস না।

আমিঃ চুপ কর। আমারটা আলাদা।আমি কি ছেলে নাকি যে তোর সাথে জোড়া হবে।একদম আমার সাথে জোড়া দিবি না।

সাইফঃ কথা বলিস না। চুপচাপ খেতে দে।খাওয়ার সময় কোন চেচামেচি আমার ভালো লাগে না।

আমিঃ আমি দুই প্লেট ফুচকা খাই।টাকা তুই দিয়ে দিস।আমি জানি তুই আমাকে ফিরিয়ে দিবি না।

সাইফঃ টাকা গাছে ধরে না যে ঝাঁকি দিলেই পরবো।আমার বাপে অনেক কষ্ট করে ইনকাম করে।নিজের টাকায় কিনে খা।

আমিঃ আমার ডায়লগ আমাকে দিচ্ছিস।(রেগে)

সাইফঃ তোর থেকেই তো শিখলাম।

আমিঃ সাইফ ভাইয়া।তুই আমার ভালো ভাইয়া,টুনটুনির ভাই, হাতির বাপ,জাদু ভাই। তুই না অনেক ভালো।

সাইফঃ কি দরকার সেটা বল?এতো সুনাম করতে হবে না।কি চাস তাই বল?

আমিঃ বুঝেই যখন গিয়েছিস তখন প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে না ভাই। আমার কাছে একটা টাকাও নেই।এখন যদি তুই আমাকে না ছারিস তাহলে আজকে আমাকে থালা-বাসন মাজতে হবে।প্লিজ ভাইয়া আজকে বিল তুই দিয়ে দিস।পরে একদিন আমি তোকে দিয়ে দিবো।

সাইফঃ তা হবে না মিস।আজকে তুই প্লেট মাজিস বা পাতিল ধোস আমার বিষয় নয়।আজকে তুই বিল দিবি ৭ প্লেটের।

আমিঃ আমার সব টাকা গেলো রে।আজকে মনে হয় ফুচকার স্টলের থেকে একটা প্লেট নিয়ে গিয়ে বাজারের চৌরাস্তায় বসতে হবে। যদি কিছু টাকা পাই।আমার লিপস্টিক কেনার টাকা বোধহয় গেলো রে।আমি আজকে শেষ। এখন মাটিতে গড়াগড়ি খেতে হবে।তাও মনে হয় এই পোটকা মাছটার দয়া হবে না।
(বিরবির করে)

আমার বুকটা কষ্ট ফাডি যাচ্ছে গো।আমি ভাবছি কিছু লিপস্টিক কিনমু।সেটা আর হলো না। দেখি আজ কাউকে খুঁজে পাই কিনা।আজকে একটাও মুরগী পাচ্ছি না। কাউকে যদি পাই তাহলে তার হাতে কৌশলে বিলটা ধরিয়ে দিবো।আল্লাহ একজনকে পাইয়ে দেও।

🍂🍂🍂

এনাজ ল্যাপটপে এক ধ্যানে মনোযোগ সহকারে কাজ করছে।নিঃশ্বাস ছারার সময় পাচ্ছে না।প্রচুর ব্যস্ত আজ সে।অন্য কোম্পানির সাথে আজ তাদের ডিল ফাইনাল করতে হবে।কিছু সময় পর একটা বিশাল রেস্টুরেন্টে তাদের বিকালের নাস্তার পাশাপাশি কোম্পানি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হবে।কিন্তু এখনো অনেক কাজ কমপ্লিট হয়নি।তড়িঘড়ি করে সব ফিনিস করছে।এনাজের কেবিনে ঢুকলো ওর এক কলিগ ও ফ্রেন্ড জিসান।

জিসানঃ কি খবর তোর?
এনাজঃ কথা বলিস না তুই। আমি নিশ্বাস ছারার সময় পাচ্ছি না।আর তুই এসেছিস পিনিক মারতে।
জিসানঃ প্যারা নিস না দোস্ত। যাস্ট চিল কর।
এনাজঃ এখন প্যারা না নিলে ডিল ক্যান্সেল হয়ে যাবে।কোম্পানির অনেক লোকসান হবে।তখন আমার চাকরী চান্দের দেশে পারি দিবে।
জিসানঃ সর, আমি তোকে হেল্প করছি।
এনাজঃ লাগবে না। আমি করে নিতে পারবো।
জিসানঃ বেশি কথা বলিস না।আমার কাজ আমাকে করতে দে।

এনাজ চেয়ার খানিকটা সরিয়ে জিসানকে জায়গা করে নিলো।জিসান সামনে থাকা ফাইলগুলো নিয়ে কাজে লেগে পরলো।এনাজ ও জিসানের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক।দুজন দুজনের সাথে সব কথা শেয়ার করে।পার্সোনালি বিষয় নিয়ে একে অপরের মতামত নেয়।নোভার ব্যাপারের সবকিছু জিসানকে বলেছে এনাজ।নোভার সাথে দুই দিন দেখা হওয়ার পর কি কান্ড হয়েছে সব খুলে বলে দিয়েছে সে।জিসানকে নিজের সাথে কিছু ঘটলে না বলা পর্যন্ত এনাজের শান্তি হয় না।পেটের মধ্যে কথায় খোঁচায়।যদিও এনাজকে দেখতে ভীষণ ভদ্র মনে হয়।তবে সে অনেকটা ভিজে বিড়াল টাইপের ছেলে।যাকে মিচকে শয়তান বললেও ভুল হবে না।দেখলে যতটা গম্ভীর টাইপের ছেলে মনে হয় আসলে সে বাস্তবে ভদ্র ফাজিল বা মিচকে শয়তান। ভদ্র ফাজিলকে কেউ ধরতে পারে না।অনেক ব্যাপারে এনাজকে দেখে মনে হয় সিরিয়াস কিন্তু মনে মনে সে শয়তানির মুডে আছে।জিসান ও এনাজ বেশ খানিক সময় ধরে কাজ করছে।কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়।পুরো রুমে পিনপিনে নিরবতা।নিরবতা ভেঙে জিসান প্রথম কথা বললো।

জিসানঃ ঐ মেয়েটার কি খবর?
এনাজঃ কোন মেয়ে?
জিসানঃ ঐ যে রনির বোনের জন্মদিনে যে মেয়েটার সাথে লিপস্টিক নিয়ে তর্ক করেছিস।
এনাজঃ ও নোভার কথা বলেছিস।
জিসানঃ মেয়েটার নামও জেনে ফেলেছিস!!
(অবাক হয়ে)
এনাজঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওর নাম আমি আরো ২ বছর আগের থেকে জানি।
জিসানঃ ২ বছর মানে!!!!

আগেরবার থেকে বেশি অবাক হয়ে এনাজের দিকে তাকালো জিসান।জিসানের মুখটা বাংলা পাঁচের মতো হয়ে হা হয়ে আছে।এনাজ ওকে এভাবে দেখে ফিক করে হেসে উঠলো। প্রচুর হাসি আসছে এনাজের।কিন্তু মুখ চেপে আটকে রেখেছে। জিসান এনাজের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

এনাজঃ এভাবে তাকানোর কোন ওয়ে খুঁজে পাচ্ছি না।আমি অবাক হওয়ার মতো কিছু বলি নি। নোভাকে আমি ২ বছর আগে কলেজে দেখেছিলাম।তখনই আমি ওর যাবতীয় ডিটেলস জোগাড় করে ফেলেছিলাম।

জিসানঃ ওরে ফাজিল।তলে তলে এতো কিছু। তুই ২ বছর ধরে নোভাকে চিনিস।এতো ভালুপাসা।কোথায় রাখিস ভাই?

এনাজঃ বাদ দে এসব কথা।

জিসানঃ বিয়ে কবে করবি?দাওয়াত দিস শালা।আবার একাই বউ নিয়ে পরিচয় করে দিতে আসিস না।যদি এমনটা করিস তাহলে তোকে মেরে হসপিটালে ভর্তি করে রাখবো।বিলের চিন্তা করিস না।সেটা তোর বউয়ের থেকে আদায় করে নিবো।

এনাজঃ লিপস্টিক পাগলীর থেকে টাকা আদায় করা এতো সহজ নয়।লিপস্টিক দেখলে হুশ থাকে না।ওকে হাজার বার অপমান করলে কোন রিয়েকশন হবে না।কিন্তু লিপস্টিক কে কিছু বললে বিনা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে ধুয়ে দিবে।

জিসানঃ ভাই, এটাকে নিয়ে সংসার করবি কি করে?
এনাজঃ আল্লাহ মালুম।চল,মিটিং-এ দেরী হয়ে যাচ্ছে।

জিসানঃ কথাটা পাল্টিয়ে ফেললি।

এনাজঃ জলদী চল।দেরী হয়ে গেলো।

জিসানঃ বললি না তো।আমিও তোর মুখ থেকে বের করেই ছারবো।

এনাজ মুচকি হেসে ব্যাগ কাঁধে নিলো।জিসানও ব্যাগ নিলো।দুজন একসাথে রওনা দিলো।এনাজ বাইকের চাবি হাতের আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে রওনা দিলো গন্তব্যে।এনাজের মাথায় এখন একটা শয়তানি বুদ্ধি ঘুরছে।নতুন করে আবার নোভাকে জ্বালানোর আইডিয়া সে পেয়ে গেছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে