ভালবাসার এক রাত পর্ব-১৯+২০

0
1273

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ১৯

শুভ্র পাগলের মতো দৌড়ে এসে রোজকে তুললো। রোজকে সোফায় শুইয়ে পাগলের মতো ডাকছে।”

—-” রে্ রেড রো্ রোজ কি হয়েছে তোমার? এভাবে চোখ বন্ধ করে আছো কেন? প্লিজ ওঠো রোজ প্লিজ ওঠো। দেখো আমি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো। আমি জেনে গিয়েছি সামির তোমাকে টর্চার করতো। আমি তোমাকে আর কষ্ট পেতে দেবো না প্লিজ ওঠো রোজ। এই দেখো তোমার শুভ্র এসেছে প্লিজ ওঠো। আমি তোমাকে এভাবে দেখতে পারছি না প্লিজ ওঠো,

সামির পা টিপে, টিপে নিচে এসে বললো।”

—-” শুভ্র ওকে হসপিটালে নিয়ে চল,

শুভ্রর সামিরকে দেখেই মাথায় রক্ত উঠে গেলো। রোজের হাত ছেড়ে সামিরকে মারতে শুরু করলো। মারতে, মারতে চিৎকার করে বললো।”

—-” তুই একটা জানোয়ার। তুই বেস্ট ফ্রেন্ড হতেই পারিস না কারো। তোকে ছোট থেকে নিজের থেকে বেশী ভালবাসি। কিন্তুু তুই কি করলি সামির? প্রথমে আমার ভালবাসা কেড়ে নিলি। আর এখন ওকে মেরে ফেলতে চাইছিস? শুনে রাখ সামির আমার রোজের যদি কিছু হয়। কসম আল্লাহর তোকে আমি জানে মেরে ফেলবো। প্রয়োজনে তোকে মেরে জেলে যাবো,

শুভ্র সামিরকে ছেড়ে রোজকে কোলে তুলে বেরিয়ে গেলো। রোজের মাথায় ওড়নার টুকরোটা বেধে গাড়ি স্টার্ট দিলো। পাগলের মতো ড্রাইভ করছে শুভ্র। তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করায় হসপিটালে পৌছাতে বেশী দেড়ী লাগলো না। হসপিটালে এসে শুভ্র রোজকে কোলে নিয়ে ডক্টরকে ডাকতে লাগলো। এদিকে শুভ্রকে দেখে অনেকে অটোগ্রাফ নিতে এলো। শুভ্র রেগে এক ধমক দিয়ে বললো।”

—-” আপনারা দেখতে পারছেন না? আমি এখানে পেশেন্ট নিয়ে এসেছি চলে যান,

শুভ্রর ব্যাপারটা বুঝে সবাই চলে গেলো। ডক্টর এসে রোজকে ভেতরে নিয়ে গেলো। শুভ্র ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।”

—-” আমার রোজের সাথেই কেন এমন হলো? ও আর কত সহ্য করবে আল্লাহ? প্রথমে আমি ওকে না জানিয়ে লন্ডন চলে গেলাম। আর সেই দিনই ও মামনি আর আঙ্কেলকে হারালো। এরপর সামির ওর সাথে নোংরা খেলা খেললো। ওকে দিনের পর দিন টর্চার করলো। আর আজ ওর এই অবস্থা হলো। আল্লাহ আমার রোজকে ঠিক করে দাও আল্লাহ। ও যে আমার প্রান ভোমরা। বাবাই, আম্মুর জন্য ২বছর ওর থেকে দুরে ছিলাম আর পারবো না। এবার আমি সত্যিই মরে যাবো। রোজ আমার ভালবাসা আল্লাহ আর ওকে তোমার আমার কাছে ফিরিয়ে দিতেই হবে। না হলে তুমি আমাকেও নিয়ে নাও,

কিছুক্ষণ পর ডক্টর এলো। ডক্টরকে দেখে শুভ্র উঠে ডক্টরের কাছে গিয়ে বললো।”

—-” ডক্টর রোজ কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো? আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারবো?”

ডক্টর মাথা নিচু করে বললো,

—-” দেখুন পেশেন্টের অবস্থা ভালো না। মাথার আঘাতটা খুব গুরুতর। তাছাড়া পেশেন্ট নিজেই রেসপন্স করতে চাইছে না। আর উনি মেবি কোন কারণে খুব টেনশন করতো ডিপ্রেশনে থাকতো। ওনার হাতে মারের দাগ আছে। লাইক বেল্ট দিয়ে মারলে যেমন আঘাত হয় তেমন। যা বুঝলাম ওনাকে শারীরিক এবং মানসিক টর্চার করা হয়েছে খুব। যার কারণে পেশেন্ট ট্রিটমেন্টে রেসপন্স করতে চাইছে না। উনি নিজেই বাঁচতে চাইছে না। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি বাকীটা আল্লাহর হাতে।”

ডক্টর আবার ভেতরে চলে গেলো। শুভ্র ফ্লোরে বসে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে দিলো। একটুপর সামিরও এলো। সামির এসে শুভ্রর কাঁধে হাত রাখলো। শুভ্র না দেখেই কেঁদে বলে উঠলো,

—-” আমি বাঁচবো না মরে যাবো। সেদিন আমি যদি লন্ডন না যেতাম এসব হতো না। কিন্তুু বাবাই, আম্মুর মরা মুখ সন্তান হয়ে আমি কিভাবে দেখতাম? একদিকে যেমন রোজ আরেকদিকে বাবাই, আম্মু। কিন্তুু আমি এখনো ওনাদের সাথে যোগাযোগ করিনি। আজ যদি আমার রোজের কিছু হয় আমি সব শেষ করে দেবো। নিজেকেও শেষ করে দেবো আমি। আমি কাউকে ছাড়বো না কাউকে না।”

_____________

—-” এই সবকিছুর জন্য আমি দায়ী,

শুভ্র সামিরের কন্ঠ শুনেই পেছনে তাকালো। সামিরকে দেখেই শুভ্রর রাগ উঠে গেলো। চোখগুলো রক্তের মতো লাল হয়ে গিয়েছে। ঘাড়ের রগগুলো রাগে ফুটে উঠেছে। কপালের রগও ফুটে উঠেছে। শুভ্র সামিরকে এক ঘুষি মেরে বললো।”

—-” তোর এত বড় সাহস? তুই আবার এখানে এসেছিস? আবার বড় গলায় বলছিস? যে তোর জন্য রোজের এই অবস্থা? আমি তোকে খুন করে ফেলবো সামির,

শুভ্র সামিরকে মেরেই যাচ্ছে সামির নিরবে মার খাচ্ছে। কতক্ষণ পর সামির বললো।”

—-” আমাকে মেরে ফেল শুভ্র। কিন্তুু আমাকে কিছু কথা বলতে দে। আমি আজ তোকে সব সত্যি জানাবো,

শুভ্র মারা বন্ধ করে বললো।”

—-” কোন সত্যি?”

সামির কিছু বলার আগেই ডক্টর হাসি মুখে বেরিয়ে এসে বললো,

—-” মিস্টার শুভ্র।”

ডক্টরকে দেখে শুভ্র ভয় নিয়ে বললো,

—-” আমার রোজ?”

ডক্টর মুচকি হেসে বললো।”

—-” উনি এখন ঠিক আছে। লাস্ট মোমেন্টে এসে উনি রেসপন্স করেছে। সবটাই আল্লাহর ইচ্ছে,

শুভ্র খুশিতে সামিরকে জড়িয়ে ধরে বললো।”

—-” তুই শুনলি? আমার রোজ ঠিক আছে। আমি জানতাম আল্লাহ আমাকে ফেরাবে না। আল্লাহ আমার কথা শুনেছে রে সামির,

শুভ্রর এখন কোন হুশ নেই এখন। সামিরও সাহস নিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে বললো।”

—-” আমাকে তুই ক্ষমা করে দে শুভ্র। আমি জানি আমি যা করেছি তার ক্ষমা হয় না। কিন্তুু আমি বাধ্য হয়েছিলাম এসব করতে কারণ,

শুভ্র সামিরকে ছেড়ে বললো।”

—-” কারণ?”

সামির যখনি বলতে যাবে তখনি অপারেশন থিয়েটার থেকে রোজকে বের করে আনলো। শুভ্র দৌড়ে রোজের কাছে চলে গেলো। রোজকে কেবিনে নিয়ে রাখা হয়েছে। মুখে অক্সিজেন হাতে স্যালাইনের ক্যানোলা লাগানো। চোখ, মুখ একদম শুকিয়ে গিয়েছে। শুভ্রর বুক ফেটে কান্না আসছে রোজকে এভাবে দেখে। বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে বারি দিচ্ছে। শুভ্র গিয়ে রোজের পাশে বসে রইলো। সামির আর সত্যিটা বলতে পারলো না। ২দিন পর রোজের সেন্স এলো। সেন্স আসতেই দেখলো শুভ্র পাশে বসা। রোজ কিছু বলতে গেলেই শুভ্র বললো,

—-” তোমার কিছু বলতে হবে না। এবার আমি বলবো তুমি শুনবে। আর এই শরীরে একদম চুপ থাকো।”

ডক্টর এসে বললো রোজকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তুু ওর প্রপার রেস্টের দরকার। শুভ্র হসপিটালের ফর্মালিটি শেষ করে রোজকে নিজের বাড়ি নিয়ে এলো। রুমে এনে রোজকে বিছানায় শুইয়ে কম্বল টেনে দিলো। রোজ ঘুমানোর পর শুভ্র ওর কপালে ছোট্ট করে চুমু একে দিলো। এরপর রোজের পাশে চেয়ার টেনে বসে মনে, মনে বললো,

—-” তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের আমি ছাড়বো না। তোমার চোখের পানির হিসেব তাদের দিতে হবে। তোমাকে দেয়া এক একটা আঘাত আমি ওদের ফিরিয়ে দেবো। ওদের জীবন আমি নরক করে ছেড়ে দেবো। এবার ওরা দেখবে শুভ্র চৌধুরীর আসল চেহারা। আমি রেগে গেলে কতটা ভয়ংকর হতে পারি ওরা এবার দেখবে।”

এরমাঝে রুমে ড্যানি এলো। শুভ্র রোজের দিকে তাকিয়েই বললো,

—-” কাজ হয়েছে?”

—-” স্যার আসলাম খাঁনের উত্তরার গার্মেন্টস শেষ।”

শুভ্র বাঁকা হেসে আঙুল ইশারা করলো। ড্যানি ইশারা পেয়ে চলে গেলো। শুভ্র রোজের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

—-” আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তুই। আমার ভালবাসাকে আঘাত করেছিস তুই শেষ। খেলা শুরু আজ ঠিক এই মুহূর্ত থেকে।”

#চলবে…

#ভালবাসার এক রাত❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ২০

শুভ্র রোজের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো।”

—-” আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তুই। আমার ভালবাসাকে আঘাত করেছিস তুই। কত সম্মান করতাম তোকে আর তুই? আমার থেকে আমার ভালবাসা দুরে সরিয়ে দিলি। আবার আমার রোজকে ২বছর টর্চার করলি তোকে আমি ছাড়বো না। তিলে, তিলে মারবো আমি তোকে। তোর খেলা শেষ আমার খেলা শুরু আজ ঠিক এই মুহূর্ত থেকে,

শুভ্র রোজের কপালে ভালবাসার পরশ দিয়ে নিচে নেমে এলো। নিচে এসে সোজা কিচেনে এলো। শুভ্রকে কিচেনে দেখে সার্ভেন্টরা অবাক হয়ে বললো।”

—-” স্যার আপনি এখানে?”

শুভ্র একটা নাইফ হাতে নিয়ে বললো,

—-” ইয়াপ আজকে আমি আমার রেড রোজের জন্য রান্না করবো। তোমরা এখন যাও পরে এসো।”

সার্ভেন্টরা হা করে তাকিয়ে আছে। নিজেদের সামলে বললো,

—-” স্যার আমরা হেল্প করি?”

—-” নো আমার হেল্প লাগবে না।”

ভ্রু কুঁচকে কথাটা বললো শুভ্র। সার্ভেন্টরা মুচকি হেসে চলে গেলো। শুভ্র ভাবলো রোজের জন্য ও রোজের ফেবারিট চাইনিজ চিকেন কারী রান্না করবে। তাই ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে বাটিতে ভিজিয়ে রাখলো। ভিজিয়ে রেখে ইউটিউব দেখছে শুভ্র কিভাবে রান্না করে। কারণ এরআগে শুভ্র রান্না তো থাক দুরে কিচেনে আসেওনি। ইউটিউব ভিডিও মন দিয়ে দেখে শুভ্র হেসে দিলো। কতক্ষণ পর মাংসটা ধুয়ে নিলো ভালমতো। এরপর আরেকটা বাটিতে রাখলো। মাংসর মাঝে কয়েক চামচ গোল মরিচের গুড়া, লবন আর কর্ণ ফ্লাওয়ার দিলো। মাংসের সাথে সব মিশিয়ে তার ভেতর একটা ডিম দিয়ে আবার মিশিয়ে ভেজে নিলো। এদিকে একটুপর রোজ আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। রুম দেখেই ওর মনে পড়লো ওকে শুভ্র নিয়ে এসেছে। রোজ বিছানা থেকে নামতে গিয়েও পারলো না। শরীরে একটু শক্তি নেই বেচারীর। রোজ বিছানাতেই বসে রইলো। রুমের রাইট সাইডে চোখ যেতেই অবাক হলো। রাইট সাইডে রোজের অনেকগুলো ছবি দেয়ালে টাঙানো। শুধু তাই না রোজের সাথে শুভ্র এক ফ্রেমে এমন ছবিও আছে। রোজ মনে, মনে বলে উঠলো,

—-” উনি আমার ছবি কেন রেখেছে? উনি তো আমাকে আর ভালবাসে না তাহলে? সেদিন রাতে ও কি এই ছবিগুলো ছিলো নাকি? শুভ্র কি চাইছে আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। এখন আবার কেন আমার পিছনে পড়ে আছে? ২বছর আগে যা করেছে তার জন্য আমি ওনাকে ক্ষমা করবো না।”

শুভ্র রান্না শেষ করে রুমে নিয়ে এলো। রুমে এসে দেখলো রোজ বসে আছে। আর তার দৃষ্টি দেয়ালের ছবিগুলোর দিকে। শুভ্র বাটি টি টেবিলে রেখে বললো,

—-” কি ভাবছো মাই লাভ?”

রোজ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললো।”

—-” আপনি এসব কি শুরু করেছেন?”

শুভ্র রোজের পাশে বসে বললো,

—-” কি শুরু করেছি গো রেড রোজ?”

—-” দেখুন আপনি কিন্তুু বারাবারি করছেন। আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন? আর এই রুমে এসব ছবি রেখে কি প্রমাণ করতে চাইছেন? যে আপনি আমাকে কতটা ভালবাসেন? শুনুন মিস্টার শুভ্র চৌধুরী আমি আপনাকে আর ভালবাসি না। ২বছর আগে আপনি যা করেছেন তার জন্য আমি আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবো না। শুধু মাত্র আপনার জন্য আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। বাঁচতে ইচ্ছে করেনা আমার আর।”

শুভ্র আতংকিত হয়ে রোজের মুখে হাত দিয়ে বললো,

—-” হিসসস এসব কি বলছো তুমি? তুমি বাঁচবে আমার জন্য বাঁচবে। আমার জন্য তোমাকে বাঁচতে হবে। আর যারা তোমাকে এই ২বছর অত্যাচার করেছে তাদের শাস্তি দিতে চাও না তুমি?”

রোজ ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো।”

—-” আমি কি করে ওদের শাস্তি দেবো? আমি কিছু করলেই তো ওরা আমার ভাইয়াকে মেরে দেবে,

____________

শুভ্র অবাক হয়ে বললো।”

—-” এসব কি বলছো?”

রোজ ঘাবড়ে গিয়ে মনে, মনে বললো,

—-” এটা আমি কি বলে ফেললাম? ওরা জানলে তো আমার ভাইয়ার ক্ষতি করে দেবে। আর ভাইয়া দেশেও নেই আমি তো ওকে দেখতেও পাবো না। না আমি আর কাউকে হারাতে পারবো না। আমার আর হারানোর ক্ষমতা নেই। এবার আমি মরেই যাবো।”

—-” রোজ কি হলো? আমাকে সবটা বলো,

শুভ্রর কথায় রোজ ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো।”

—-” কিছু না আমি এখান থেকে চলে যাবো,

শুভ্র বুঝলো রোজ বলবে না। তাই আপাতত আর জোড় করলো না। টি টেবিল থেকে বাটিটা এনে বললো।”

—-” সি এটা তোমার ফেবারিট না? চাইনিজ চিকেন কারী। আমি বানিয়েছি হয়তো বেশী ভাল হয়নি। বাট তুমি জাস্ট একটু টেস্ট করলেই হবে,

রোজ হা করে থেকে বললো।”

—-” এটা আপনি বানিয়েছেন?”

শুভ্র ছোট মুখ করে বললো,

—-” কালার সুন্দর হয়নি না? খেতেও নিশ্চয় পচা লাগবে। ওকে তোমার খেতে হবে না যদি পচা লাগে তো। তুমি বসো আমি তোমার জন্য জুস নিয়ে আসছি।”

বলে শুভ্র বাটি রেখে নিচে গেলো। শুভ্র প্রথমবার নিজে কিছু বানিয়েছে। এটা ভেবে রোজের কৌতুহল হচ্ছে ওটা খেতে কেমন হবে ভেবে। রোজ সাতপাঁচ না ভেবে একটু মুখে নিলো। মুখে নিয়ে রোজের চোখ বড়, বড় হয়ে গেলো। তখনি শুভ্রও রুমে এলো। রুমে এসে দেখলো রোজের হাতে বাটি আর হাতে চিকেন। চোখ বড়, বড় করে আছে। শুভ্র দৌড়ে এসে গ্লাস রেখে বললো,

—-” তুমি এটা খেয়েছো নাকি?”

রোজ হুট করেই বললো।”

—-” আনবিলিভেবল এটা আপনি বানিয়েছেন?”

শুভ্র অসহায় ফেস করে বললো,

—-” হ্যা প্রথমবার তো তাই ভাল হয়নি।”

রোজ আরেকটু মুখে নিয়ে বললো,

—-” কে বলেছে ভাল হয়নি? এটা অনেক সুস্বাদ হয়েছে। আমি তো ভাবতেই পারছি না এটা আপনি রান্না করেছেন।”

শুভ্র খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,

—-” সত্যি?”

রোজ এক্সাইটমেন্টে নিজেই শুভ্রকে খাইয়ে দিয়ে বললো।”

—-” কি বিশ্বাস হলো গোমরামুখো?”

শুভ্র স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে। একেই রোজ ওকে খাইয়ে দিলো। আবার ওকে গোমরামুখো বললো। আজ আড়াই বছর পর রোজের মুখে আবার গোমরামুখো শুনলো। শুভ্রর চোখ ছলছল করছে। নিজেকে সামলে সে তার রেড রোজের খাওয়া দেখছে। দিন দুনিয়া ভুলে রোজ খেয়ে যাচ্ছে। খাওয়া শেষে রোজ বাটি রেখে দেখলো শুভ্র তাকিয়ে আছে। রোজ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” কি হলো তাকিয়ে আছেন কেন?”

শুভ্র মুচকি হেসে বললো।”

—-” তোমাকে দেখছি,

—-” আমার আপনার উপর যতই রাগ থাকুক খাবারের উপর না তাই খেয়েছি। আপনি ভাল মতোই জানেন আমি খাবারের উপর রাগ দেখাই না। তাই আপনি আবার এটার মানে অন্যকিছু বের করবেন না কেমন?”

রোজের কথায় শুভ্র হালকা হেসে বললো।”

—-” ওকে ফাইন, এখন মেডিসিন খাও,

রোজ চুপচাপ মেডিসিন খেয়ে নিলো। নয়তো শুভ্র জোড় করবে এটা রোজ জানে। মেডিসিন খেয়ে একটু চুপ থেকে বললো।”

—-” এখন আমার যাওয়া উচিত,

—-” তুমি কোথাও যাচ্ছো না এখানেই থাকবে। জুস রইলো ১০মিনিট পর আমি আবার আসবো।”

বলে শুভ্র চলে গেলো। রোজ আহম্মকের মতো বসে ভাবছে,

—-” এই লোকটা আমার কথার পাত্তাই দিলো না?”

_____________

সামির রুমের ফ্লোরে বসে আছে। হাত থেকে রক্ত পড়ছে। আর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। একটু পর সামিরের বাবা রুমে এসে বললো।”

—-” কি গোমর ভাঙলো তোর?”

সামির ঘৃণার দৃষ্টিতে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

—-” আই হেইট ইউ আসলাম খাঁন। ঘৃণা করি আমি তোমাকে বুঝেছো?”

সামিরের বাবা সামিরের সামনে বসে বললো।”

—-” এখনো তেজ কমেনি তোর? তোর ভুলের জন্য আমার গার্মেন্টস শেষ হয়েছে। তুই বলেছিস না শুভ্রকে সবকিছু?”

সামির তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

—-” আফসোস যদি আমি বলতে পারতাম সবটা। কিন্তুু না সেদিন আমি বলার আগেই তুমি আমাকে নিয়ে এসেছো। ভুলে যেয়ো না ও রকস্টার শুভ্র চৌধুরী। ওর কাছ থেকে কোন সত্যি তুমি গোপন রাখতে পারবে না। তোমার ধ্বংস শুরু হয়ে গিয়েছে। তোমার দিন শেষ এবার তুমি পুরোপুরি খতম হয়ে যাবে।”

সামিরের বাবা সামিরকে এক চর মেরে দিলো। সামির গালে হাত দিয়ে হেসে বললো,

—-” আমাকে মেরে ফেললেও তুমি বাঁচতে পারবে না। শুভ্র তোমাকে বাঁচতে দেবে না।”

—-” আর তোর মাকে কে বাঁচাবে?”

সামির ওর বাবার পা জড়িয়ে ধরে বললো,

—-” আমার মাকে ছেড়ে দাও বাবা। মা ছাড়া আমি শেষ হয়ে যাবো। তুমি আমার মায়ের কোন ক্ষতি করো না প্লিজ। আমার মাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। তুমি এত খারাপ কি করে হতে পারো?”

—-” আমার স্বার্থর জন্য আমি সব করতে পারি।”

বলে পা ছাড়িয়ে বেরিয়ে এলো। আর দরজা লাগিয়ে দিলো যাতে সামির বের না হতে পারে,

—–” মাআআআআআআআ।”

সামির একটা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে, কাঁদতে বললো,

—-” আল্লাহ আমার মাকে বাঁচাও প্লিজ। ওই লোকটা যেন আমার মায়ের কোন ক্ষতি না করতে পারে।”

এদিকে রোজ শুভ্রর কাছ থেকে আসার জন্য জোড় করছে। আর শুভ্ররও এক কথা সে রোজকে যেতে দেবে না। রোজ রেগে শুভ্রকে ধাক্কা মেরে বললো,

—-” এখন নাটক করছেন কেন? কোথায় ছিলেন তখন? যখন আমার আপনাকে দরকার ছিলো। সবথেকে বেশী আপনাকে দরকার ছিলো। আমার আম্মু আর বাবাই মরে যাওয়ার পর আমি কতটা একা হয়ে গিয়েছিলাম জানেন? ভার্সিটি থেকে বাড়ি গিয়ে শুনলাম ওনারা শপিং করতে গিয়েছে আমার জন্য। রুমে গিয়ে চুপচাপ টিভি দেখছিলাম। কত খুশি ছিলাম আমি ভেবেছিলাম আপনাকে পেয়েছি বাবাই, আম্মু, ভাইয়া আর কি চাই? ভাইয়া যদিও তখন আমেরিকা ছিলো। কিন্তুু এত খুশী আমার কপালে সইলো না। দুপুর তিনটের দিকে আমার বাবাই, আম্মু এসেছিলো বাড়ি কিন্তুু লাশ হয়ে। আমার কেমন লেগেছিলো জানেন? আপনাদের বাড়ি থেকেও কেউ আসেনি। বাবাই, আম্মু মারা যাওয়ার পর আপনাকে আমি পাশে চেয়েছিলাম। আপনি যখন আমার সাথে যোগাযোগ রাখছিলেন না তখন আমি আপনার বাড়ি যাই। ওখানে গিয়ে শুনি আপনি।”

রোজ থেমে আবার বললো,

—-” আমি ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। নানুমনি আমাকে সামলেছে আর তারপর সামির ভাইয়া এসব করলো। আমি কি আপনাদের হাতের পুতুল? আমাকে আপনাদের হাতের রিমোট কন্ট্রোলের পুতুল মনে হয় তাই না? যে যখন রিমোট যার কাছে থাকবে তখন আমি তার কাছে থাকবো? কেন আমার সাথে এমন করেন আপনারা? আমাকে আপনাদের মানুষ মনে হয় না?”

___________

কথাগুলো বলতে, বলতে রোজ সেন্সলেস হয়ে গেলো। শুভ্র রোজকে ধরে শুইয়ে দিলো। ইচ্ছে করেই রোজের সেন্স আনলো না। শুভ্র ভাবছে রোজ হয়তো ওর বাড়ি গিয়ে ও লন্ডন গিয়েছে জেনেছে। এভাবে ২দিন কেটে গিয়েছে। রোজ যেতে চাইলেও শুভ্রর জন্য যেতে পারেনি।”

এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে আছে রোদ আর তনয়া। রোদের সাথে তনয়াও চলে এসেছে। রোদ প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,

—-” উফ কতদিন পর সবাইকে দেখবো। বাবাই, আম্মু আর আমার ব্ল্যাক রোজ। ব্ল্যাক রোজ যে আমাকে কি করবে। ওর জন্য গিফট নিতে হবে।”

রোদ এয়ারপোর্ট থেকে সোজা শপিং মলে এলো। সামিরও এসেছিলো শপিং মলে। রোদকে দেখে সামির খুশিতে রোদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” কি রে এত আদর?”

সামির খুশি হয়ে বললো।”

—-” রোদ তুই এসেছিস? এবার সব ঠিক হয়ে যাবে,

রোদ কিছু বুঝলো না তাই বললো।”

—-” কি ঠিক হবে?”

সামির কথা ঘোরাতে বললো,

—-” না কিছু না আসছি।”

বলে সামির চলে এলো। সামির হাটছে আর ভাবছে,

—-” রোজকে আর ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে না আসলাম খাঁন। এবার ওনার শাস্তি পেতে হবে। তার আগে ওনার কাছ থেকে মাকে আনতে হবে।”

হঠাৎ সামির কারো সাথে ধাক্কা খেলো। ধাক্কা খেয়ে মেয়েটা নিচে পড়ে চেঁচিয়ে বললো,

—-” আহ আমার কোমর।”

সামির ঢোক গিলে বললো,

—-” আই এম সরি আমি খেয়াল করিনি।”

মেয়েটা দাড়িয়ে বললো,

—-” খেয়াল করেননি? নাকি সুন্দরী মেয়ে দেখলে ধাক্কা দিতে মন চায়?”

সামির হু হা করে হেসে বললো।”

—-” আপনি আর সুন্দরী? ওয়েল নাইস জোকস,

মেয়েটা রেগে তেড়ে এসে বললো।”

—-” কি বললেন আপনি?”

—-” রাইসা,

এরমাঝে কেউ রাইসা বলে ডাক দিতেই মেয়েটা আসছি বলে চলে গেলো। সামির বুঝলো মেয়েটার নাম রাইসা। সামির একবার রাইসা নাম রিপিট করে মুচকি হেসে চলে গেলো।”

রাত ৮টা নেশা করে শুভ্রকে এটা, ওটা বলছে রোজ। শুভ্র সবকিছুর উত্তর দিচ্ছে। রোজ দাত কেলিয়ে বললো,

—-” আপনি এত হট কেন শুভ্র?”

শুভ্র চোখগুলো মার্বেলের মতো করে বললো।”

—-” এসব কি বলছো?”

রোজ শুভ্রর গাল টেনে বললো,

—-” বলুন না।”

—-” শুনতে চাও?”

—-” হুম চাই,

শুভ্র একটা পেপারস বের করে বললো।”

—-” এটাতে সাইন করলে তুমি যা জানতে চাইবে সব বলবো,

রোজ খুশি হয়ে বললো।”

—-” সত্যি?”

শুভ্র রোজের গাল টেনে বললো,

—-” হ্যা একদম সত্যি।”

রোজ কিছু না ভেবে সাইন করে দিলো। সাইন করেই রোজ ঠাস করে বিছানায় শুইয়ে পড়লো। শুভ্র বাঁকা হেসে পেপারসটা কাবার্ডে রেখে দিলো। পরেরদিন চেঁচামেচি শুনে রোজের ঘুম ভাঙলো। রোজ নিচে গিয়ে দেখলো সামিরের বাবা আর পুলিশ। রোজ শিরি বেয়ে নিচে আসতেই শুনলো শুভ্র বলছে,

—-” রোজ আমার ওয়াইফ আর ও কোথাও যাবে না।”

এটা শুনে রোজ যেন টুপ করে আকাশ থেকে পড়লো,

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে