ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০১

0
1887

ভাবিনি ফিরে আসবে
সূচনা পর্ব
রোকসানা আক্তার

হঠাৎ ভাবীকে দেখে আমি বড়সড় একটা ধাক্কা খাই।১ বছর আগে যে মেয়েটির কারণে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমার ব্রেকাপ হয়েছিল, আজ কি না সে মেয়েকে আমার বড় ভাই বিয়ে করে এনেছে। তাহলে এই শিপ্রা আপুর সাথেই আমার ভাইয়ের এতটা বছর সম্পর্ক ছিল!?হায় আল্লাহ আমিতো আগে জানলে কচুগাছে দড়ি লাগিয়ে গলায় ফাঁস দিতাম!

উনিসহ আমরা একই ভার্সিটি পড়তাম।উনি ছিলেন ১২তম সেমিস্টারে,আর আমি ৭ম সেমিস্টারে।উনাকে আমি বড় আপু হিসেবেই জানতাম। আমার এতদিন সেমিস্টার এক্সাম ছিল।আজ শেষ হলো।তাই, বিয়ে এবং এংগেইজমেন্ট-এ উপস্থিত থাকতে পারিনি। দুপুরে পরিক্ষাটা শেষ দিয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করি। বিকেল ৪টায় বাড়ি এসে পৌঁছি।আর এখন সন্ধে ৬ টা, ভাইয়া বউ নিয়ে আমাদের বাড়ি হাজির!!তাও নিজের শএুকে আমার ভাইয়া বিয়ে করে ঘরে তুলছেন,ভাবতেই সারা দেহের লোম খাড়া হয়ে যায়।

একমুহূর্তে সদর দরজার সামনে না দাড়িয়ে তরহর ছুটে আমার রুমের বেলকনিতে এসে দাড়াই।ঘামের যে ঝর্ণাধারা বেয়ে পড়ছে মনে হয় আজকে২ বার গোসল সেরেছি একটা ঘামের গোসল,আরেকটা পানির গোসল।মাথাটা যেন খুব ভার হয়ে আসছে,আর বার বার উনার মুখখানা চোখের সামনে ভাসছে!

আর ভাবনার স্মৃতিগুলো পৃষ্ঠার পাতা উল্টোচ্ছে।
-ভাইয়া শেষমেশ এই গুন্ডি একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনলো?এ’তো আমাদের সংসারে ফাটল ধরে ১২ টা বাজাবে। হে মাবুদ,এই মেয়েটিকে বিয়ের আগে একবার দেখলেইতো আজ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।সেদিন কেন ভাইয়ার সাথে গেলাম না,নাহলে তো বিয়ে কেন রিলেশনটাই লন্ডভন্ড করে দিয়ে আসতাম উনি যেমনটি আমার সাথে করেছিলেন!!

এসব ভাবছি আর নিজের কপাল নিজে চাপড়াচ্ছি । দরজায় কারো টোকার শব্দ হয়।
-শাওন?এই শাওন?আরে ব্যাটা তুই কই? ভাবীকে বাড়িতে সবাই মিলে সাদরে গ্রহণ করবি তা না,উল্টো দরজা বন্ধ করে আছিস।আরে দরজা খোল।

এই পাবাজের জন্য-না শান্তিতে একটু থাকতেও পারছি না।শালা যেখানে সেখানে জ্বালাতন শুরু করে।আমি জোরে বলে উঠি,
-আমি এখন বাহিরে যেতে পারবো না।কাজ আছে আমার।তোরা বন্ধু-বান্ধব থাকতে আমার আবার কষ্ট করা লাগে নাকি?

-শালা তুই পাগল?আমরা হচ্ছি বন্ধু,আর তুই হচ্ছিস দেবর।এখানে আমাদের থেকেও তোর প্রাধান্য বেশি এবং দায়িত্বও।

ইসসস!আসছে আমার সুশীল দায়িত্ববান। শালা ন্যাড়া একটা সবসময় টাক থাকে।নিজের চুলেরই দায়িত্ব নিতে পারে না,সে কি না মানুষের দায়িত্ব নেয়।খাটাস কোথাকার!!
অবশ্য কথাগুলে মনে মনেই বলছি,নাহলে পাবাজ বাদরটা আবার রাগ যাবে।

-কিরে এই শাওন?কথা বলছিস না কেন?কতক্ষণ ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকবো?পা টা তো ব্যথা হয়ে যাচ্ছে।

– আরে ব্যথার কথা ভুলতে ওখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মশা মার শালা।

পাবাজ জানে আমার সাথে কথা বলে ফেরে উঠতে পারবে না।তাই এক বস্তা বিরক্তি নিয়ে নিচে চলে যায়।।।হয়তো মায়ের কাছে গিয়ে বলবে আমার পাগলামোর কথা!

নিজের মনকে আর সায় দিতে না পেরে পায়চারী করতে থাকি।একবার দক্ষিণ দিকে হাঁটি,আরেকবার উওর দিকে।


আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ আসে,তাও সজোরে।অতঃপর,মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে দরজা খুলে কড়া চোখে সবার দিকে তাকাই।
এরই মধ্যে মা বলে উঠে,
-বাবা,বউমা বলছে ওর ছোট দেবর যদি ওকে বরণ না করে ঘরে তুলে,তাহলে সে কোনোমতে ঘরে আসবে না।

উফস!!এই মহিলাটা আসলে কি চায়!?

-কি হলো,বাবা?কথা বলছিস না কেন?মেহমানরা কি বলবে এমন ত্যাড়ামী করলে?আমাদের ভালো জানবে?বল?
-ও বরণ করবে না?ও কি বলতে চায়?!!(বাবা)

আমি বাবাকে দেখে ঢুকরে যাই।কারণ,বাবাকে আমি সবার থেকে বেশি ভয় পাই।এখন একটা ফন্দি না আঁটলে ফেঁসে যাওয়ার উপক্রম,কাজেই বোকা বক দেখিয়ে বলে উঠি,
-বাবা আমার না প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে।
-মাথাব্যথা -টাথাব্যথা সব ভালো হয়ে যাবে।আগে সবার সাথে ভাবীকে বরণতো করে নে,নাহয় বরণটা করেই রুমে আবার চলে আসিস।
-হু,বাবা।তোর বাবা ঠিকই বলছে।

আমি বাধ্য হয়ে বাবাকে সম্মতি জানিয়ে সবার সাথে হাঁটা ধরি।আর হাঁটার তড়িৎ গতি পালস রেট বেড়ে যাচ্ছে।এখনই যেন মন চায় পালিয়ে বদ্ধ একটা ঘরে একা বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলি।

ভাবতে ভাবতে কণের সামনে প্রায়ই উপস্থিত।আমি মুখতুলে উনার দিকে তাকাই,উনি শতানী হাসির চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে । মাথাটা আবার নিচু করে ফেলি।উনি মুহূর্তে বলেন,
-শাওম?আমায় ঘরে তুলবে না?দাড়িয়ে আছো কেন সং এর মতো?
-হ্যা,কি রে শাওন?তোর ভাবীকে ঘরে তুল?(হাসিমুখে বলেন ভাইয়া)
আমি উনার পাশে যেতেই উনি চোখগুলো বড় করে ফিসফিস করে বলেন,
-প্রাণের দেওরা,বিয়েতো করলাম নামে তোমার ভাইকে,আর আসল খেলাতো হবে তোমার সাথে!!!

আমি ভড়কে খুক খুক করে কাশতে থাকি।সবাই সরু দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি মুঁচকি হেসে হাতের ইশারায় বলি,
-ভাবী,চলুন?
উনিও মুঁচকি হাঁসছেন,তবে বিষাদ মনে।

কোনো মতে উনাকে সবাই মিলে সোফার উপর বসিয়ে আমি তড়িঘড়ি আমার রুমে এসে হাঁপাতে থাকি।হাঁপাতে হাঁপাতে চোখে প্রায়ই কান্না চলে আসে।নিজের চুলগুলো নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে,কিন্তু কি করব আমি যে নিরুপায়!!!

ওসব ভাবনা পরক্ষণে ঝেড়ে ফেলে বিছানায় এলিয়ে একসাইড হয়ে বালিশের উপর মাথাটা পেঁতে রাখি।হালকা ঘোর চোখে একটা তন্দ্রাঘুম চলে আসে।


হঠাৎ শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পাই। আমার সারা শরীর শিরিশির করে উঠে।বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসি। চোখ তুলে তাকাতেই,
আ-আরে আ-আ-পনি?
বাম হাত দিয়ে আমার মুখ চাপড়ে বলেন,
-চুপ,একদম চুপ।কোনো কথা বলবি না!আমার অনেক দিনের শখ ছিল তোর সাথে বাসর করার।
এই বলে উনি উনার বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে ব্লাউজ খুলতে যাবেন,ওমনি আমি বলে উঠি,
-ভাবি,প্লিজজ? এমনটি ঠিক না।আমি আপনার ছোট ভাই।মানুষ ছোটভাইয়ের সাথে এমনটি করলে,আল্লাহর কাছে এর দায়ী দিতে হবে।প্লিজজ ভাবী,দোহাই আপনার!!

উনি আমার কথা কর্ণপাত না করে ফকফক ব্লাউজ খুলে অর্ধনগ্ন অবস্থা!আমি দু’হাত মুঠ করে চোখদুটো বন্ধ করে রাখি।আর উনি ধাপে ধাপে আমার দিকে এগুচ্ছেন।আমি আর উপায়ন্তর না পেয়ে ছিটকে উনাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলি,
-গুন্ডামি করেছেন,তা ভার্সিটিতে।এটা বাড়ি,ভার্সিটি নই। ভদ্রতার সহিত চলবেন,ভালো ব্যবহার পাবেন।তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হোন,নাহলে আপনার আসল মুখোশ সবার সামনে খুলে হাতে তুলে দিব!!

উনি অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক তাকিয়ে উনার ব্লাউজটি তরহর পরিধান করে নিজের ব্লাউজ নিজেই ছিঁড়তে থাকেন।
আমি অনেকটা অবাক হয়ে যাই,কিন্তু এর মানে বুঝতেছি না কেন উনি এমনটা করতেছেন!

এরই মধ্যে কান্নামুখরে চিৎকার করে উঠেন উনি।আব্বা-আম্মা,ওগো?কোথায় সবাই?দেখো,শাওন আমার কি সর্বনাশ করে ফেলল গো?ও আমার কি করে ফেললো!

এ বলে উনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অভিমানী কান্না জুড়ে দেন।
আমি অনেকটা হতভম্ব হয়ে পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে।আমার দু’পা এবং মুখ থরথরে কাঁপতে থাকে।মুখ দিয়ে আমার কোনো ভাষা আসছে না কি থেকে কি বলব!!

ভাইয়া,মা-বাবা চিৎকারের আওয়াজে দরজার সামনে এসে দরজায় জোরে জোরে নক করতে থাকেন।
-শাওন,দরজা খোল?এই শাওন?
-বউমা তোমার কি হয়েছে দরজা খুলো?

আমার এতক্ষণে ঠাহর হয় উনি যে ভেতর থেকে দরজাটা আগেই নক করে দিয়েছিলেন।
আমি কোনোকিছু না বুঝার আগেই উনি গিয়ে দরজা খুলে ভাইয়াকে কাঁদো কাঁদো চেহারায় আঁকড়ে ধরে আর বলে,
-তোমার ভাইয়ের থেকে আমায় রক্ষা করো,রক্ষা করো ফাহিদ।নাহলে,আমার সর্বনাশ কের ফেলবে!!

বাবার রাগটা একটু বেশিই।ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে ঠাস ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দেন।
-কুলাঙ্গার ছেলে!!!তোর মতো কুলাঙ্গারকে আমি জন্ম দিয়েছি আমার ভাবতেই ঘৃণা লাগছে!

আবারও বেহুঁতাশ চোপড়াতে থাকেন।
-ওগো,থামো,থামো।
-মা,তুমি কোনো কথা বলো না!শিপ্রা শাওনকে ছোট ভাই হিসেবে জানে।যখন বললাম, আবিরের প্রচন্ড মাথাব্যথা, দৌড়ে ওকে দেখতে যায়।।আর এখানে এসে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়বে,ছিঃ মা,ছিঃ!!ভাবতেই আমার মাথা হেইট হয়ে আসে।

বাবার থাপড়ানো কিছুতেই কমছে না। থাপড়াতে থাপড়াতে গালদুটো লাল করে ফেলে,আর ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।মা অবুঝের মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।।
চিল্লা-পাল্লার আওয়াজে পাবাজ দৌড়ে আসে।
-আঙ্কেল এসব কি করছেন!নিচে তো মেহমান! সবাই দেখলে কি ভাববে!?প্লিজজজ চাচা এমনটি করবেন না।

বাবার হিংস্র জানোয়ারের মতো আমার উপর আরো বেশি খেঁপে উঠেন।পাবাজঅনেক কষ্টে সংযত করে আমার থেকে বাবাকে ছাড়িয়ে নেয়।আর বাবা গলা উঁচিয়ে বলেন,
-ওরে বলবা,ও যাতে রুম থেকে আর বের না হয়!!!আমার সব মেহমানের সামনে এই কুলাঙ্গাররে চেহারা দেখতে চাই না,নাহলে আমার মাথা হেইট হয়ে যাবে

পাবাজ আবার বলে উঠে,
-আঙ্কেল এখনো কেউ কিছু বুঝেনি।প্লিজজ এই জিনিসটা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করবেন না।শাওনেরর হয়তো ভুল হয়ে গেছে।এই কথাটা ধামাচাপা দিয়ে অন্যকথা বলতে হবে। ভাবি প্লিজজ?আপনিও নিজেকে একটু এখন কনজার্ভেটিভ রাখবেন,কেউ যাতে কিছু না বুঝতে পারে।নাহলে আমাদের খারাপ ভাববে।।

জানেন,বাবা?আমি ফাহিদের(আমার বড় ভাই)থেকে যখন শুনলাম মাথাব্যথা নিয়ে কাতরাচ্ছে,তখনই আমি ওকে দৌড়ে দেখতে আসি।
আর এসে যে…..
মুখটা নিচু করে ন্যাকা কান্না শুরু হয় ভাবীর

উনি আবার হাউমাউ কান্না করে বলেন,
-আমি পারবো,পারবো!আমার স্বামীর বাড়ি আমার সম্মান,উনাদের কোনমুখে ছোট করব!

-এইতো লক্ষী বউ।চলো এবার।
ভাইয়া একথা বলে ভাবিকে জড়িয়ে নেন।সবাই আমার দিকে কটু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যান পাবাজ দাড়িয়ে থাকে শুধু।
অতঃপর, আমি পাবাজকে জড়িয়ে ধরে কাছে এসে বলি,

-পাবাজ রে আমি বুঝি এতই খারাপ!?আমার উপর মা-বাবার এতটাই অবিশ্বাস!উনারা আমায় এখনো চিনলো না!?যারা তিল তিল করে আমাকে ছোট থেকে বড় করেছে আজ তারা আমায় চিনলো না?!
আজ সবার কাছে আমি চরিএহীন অপরাধী!!আমি খারাপ,আমি কুলাঙ্গার!!

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি আমি!!পাবাজ সান্ত্বনা দিতে থাকে।
-দোস, ভুল বোঝাবুঝি তে সবার এরকমই হয়।দেখবি,সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন বাসায় মেহমানতো তাই আঙ্কেল রেগে গেছেন।

-দোস,তুই বল?আমি কি এরকম ছেলে?আমার চরিএে কখনো খারাপ কিছু দেখেছিস?

-আরেহ বোকা,তুইতো পুরাই সিরিয়াস!আমরা দু’জন ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছি,শুধু আমিই জানি তুই কেমন।কিন্তু,উনি এসব কি বলছেন?আর উনার ব্লাউজ ছিঁড়ল কিভাবে?

আমি পাবাজের কথায় চুপ করে থাকি।
-কি শাওন, বল?তোর সাথে কিছু হয়েছে?

আমি যদি এখন সব বলতে যাই।তাহলে, আমাদের ফ্যামিলির ওপর সবার খারাপ দৃষ্টি যাবে।সবাই ভাববে,উনার সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক আছে।পরে,মা-বাবা,ভাই সমাজের কাছে কলুষিত হবে।আমি চাইনা আমাদের ঘরের কথা বাহিরে রটাক,তা যতই নির্বোধ মিথ্যে হোক ।।কিন্তু কেউতো আর বিশ্বাস করবে না আমার সে ভার্সিটি লাইফের কালো অধ্যায়ের ঘটনা!

-আচ্ছা বুঝলাম,তুই বলবি না।এখন পেলাম বন্ধুর পরিচয়। তুই আমায় এতটাই অবিশ্বাস করিস।গেলাম।
এ বলে পাবাজ ব্যথিত হৃূয় নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করে।।

আমি ফ্লোরের দিকে চোখগুলো সরু করে তাকিয়ে থাকি।আমার আজ কিছুই বলার নেই।কারণ,আমার সাথে আজ যা ঘটছে, কেউই আমার কথা বিশ্বাস করবে না।।।

কি ব্যাপার বেহাই সাহেব,মন খারাপ?
আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা শুচিস্মিতা মেয়ে অপলক চাহনি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।।পরনে তার গাঢ় খয়েরী কালার লেহেঙ্গা।বেশ বানিয়েছে যেন কোনো অপ্সরী।তবে মেয়েটিকে আমি চিনতে পারিনি,এই প্রথম বোধহয় দেখলাম।

আমি কিছু না ভেবে বলে উঠি,
-কে আপনি???!
হেলেদুলে হেঁটে আমার পাশে এসে বসে বলে,
-প্রথমে আমি আপনাকে কি নাম ডেকে সম্বোধন করলাম,একটু ভাবুনতো?

আমি হতভম্ব হয়ে ভাবতে থাকি এবং বলা শব্দগুলো মাথায় আসতেই,বলে উঠি
“কি ব্যাপার বেহাই সাহেব”
-ইয়েস,এটা।এবার বলুন আমি আপনার কি হতে পারি?

-আপনি আমার ভাইয়ের আত্মীয়! এটাই?
-ও মা,সেটা কেমন কথা!শুধু আপনার ভাইয়ের আত্মীয় হতে যাবো কেন,আপনারও তো আত্মীয়!
প্রচন্ড রাগ চটে বসে মাথার উপর আমার।রাগকে সামাল দিয়ে অনেক কষ্টে বলে উঠি,
-আপনি যাবেন?..
-যাবো মানে?
-মানে আমার হেড পেইন।পরে কথা বলছি!!!

আমার কথায় মেয়েটি মাথা এগিয়ে আমার দিকে অনেকক্ষণ নিশ্চুপতারসহিত তাকিয়ে থাকে।আর তরতর করে বিছানা থেকে উঠে আমার সামনে দাড়ায়।হাতের মধ্যে গুঁজে রাখা তুলো এবং ডেটল বের করে,তুলাতে হালকা ডেটল লাগিয়ে নেয়।

তুলা-ডেটল মিশ্রিত হাত আমার ঠোঁটের দিকে ক্রম অগ্রসর হতে থাকে।আমি আমার মাথাটা পিছু হেলিয়ে এক ঝটকায় মেয়েটির হাত থেকে তুলো- ডেটল ফেলে দিই। সড়াৎ সড়াৎ দাড়িয়ে বলি,
-এখান থেকে চলে যান!!আমাকে তুলা-ডেটল লাগিয়ে দিতে হবে না।আমি নিজেই লাগিয়ে নিতে পারবো।

মেয়েটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অন্যদিক তাকায়।পরক্ষনে আমার দিকে কড়া দৃষ্টি দিয়ে বলে,
-আপনার এসব ড্রামা পকেটে নিয়ে ঘুরেন। আর নিজের প্রায়শ্চিত ফল পাওয়ার অপেক্ষায় বসে বসে প্রহর গুনেন!. এখন জস্ট সময়ের পালা!!
এ বলে দমকা হাওয়ায় উধাও হয়ে যায় মেয়েটি।আমার মাথাটা ভীষণ ভার হয়ে আসতেছে!এসব আমার সাথে থেকে কি হচ্ছে?কেন হচ্ছে?আমি কার কি ক্ষতি করেছি?!

আমিতো সোহানাকে অনেক ভালোবাসতাম।কিন্তু সে জায়গায়ও উনি বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছিলেন।মেনে নিলাম সোহানাকে ছাড়তে!!! এখন কেমন নাটক শুরু করলেন আমার সাথে?কি এমন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে আমার বিপক্ষে হাত বাড়ালেন!.
হে আল্লাহ,তুমি রহম করো আমাকে?সকল বিপ-মসিবত থেকে রক্ষা করো,,,!!
আজ কান্না যেন কোনোকিছুতেই থামছে না।কন্ঠ যেন বাকরুদ্ধ!!!

চলবে???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে