#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__১
বৃষ্টির মাঝেও এখন বেড়ে উঠছে একটি নতুন প্রান। তার আর রাতের ভালোবাসার একটা অংশ। এর মাঝে সে আজ চলে যাচ্ছে স্বামির সংসার ছেরে। রাতকে ছেরে দিলেই জদি সব সমস্যার সমাধান হয় তাহলে মন্দ কি? এতো ডিপ্রশন এতো ঝামেলা তার আপন বোনের ব্লেকমেইল। বৃষ্টি রাতকে ছেরে না দিলে সুইসাইড করবে তার আপন বড় বোন বর্ষা। যাকে সে খুব বেশি ভালোবাসতো।
আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে, এই কথাটার উপর ভরসা করেও অনেকটা দিন পার করেছে সে। কিন্তু না এসবের কিছুই পরিবর্তন হলোনা। অবশেষে নিজের অনাগত বাচ্চাকে পেটে নিয়েই চলে যাচ্ছে রাতের সংসার ছেরে।
চার দিকটায় ভোরের আভাস ভেষে উঠেছে। ট্রেন চলছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনা জল। তার সামনের সিটেই বসে আছে একটা যুবক। পেপার দিয়ে ঢেকে আছে তার মুখটা। পেপারটা সামনে এমন ভাবে ধরে আছে তাতে সে কি পেপারটা পড়ছে নাকি নিজেকে ঢেকে রেখেছে তাও বুঝতে পারেনা বৃষ্টি। তার থেকে চোখ সরিয়ে পুনরায় বাইরের দিকে তাকালো বৃষ্টি। বেশ কিছুক্ষন পর একটা স্টেশানে এসে ট্রেন থামলো।
বৃষ্টি লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– এই যে ভাইয়া, আপনি কি এখানে নেমে যাবেন?
লোকটার মুখে কোনো উত্তর না পেয়ে আবার চুপ হয়ে গেলো বৃষ্টি। তখনই লোকটা একটা কাগজ এগিয়ে দিলো তার দিকে। তাতে ছোট্ট করে লিখা,
– না।
বৃষ্টি হুট করে বলে উঠে,
– আপনি কি কথা বলতে পারেন না?
আবারও একটা কাগজ এগিয়ে দিলো বৃষ্টির দিকে।
– গলায় একটু প্রব্লেম হয়েছিলো তো তাই কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। এভাবে বলতে সমস্যা হচ্ছেনা আমার আপনি বলুন। আমার হ্যান্ড রাইটিং আবার দ্রুত আছে।
আর কিছু বললোনা বৃষ্টি, চুপচাপ বসে আছে। ছেলেটা আরেকটা কাগজে বলে উঠে,
– আপনার সাথে আর কাওকে দেখছিনা। কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
– জানিনা…(গম্ভির ভাবে উত্তর দিলো বৃষ্টি)
বৃষ্টি মুখে কথা বলছে আর ছেলেটা কাগজে।
– মানে?
– কিছুনা।
– আমাকে বলতে পারেন সমস্যা নেই।
যেতে যেতে এভাবেই বাকিটা পথ দুজনের মাঝে কথা হলো।
ট্রেন থেমে গেলো। নেমে গেলো দুজন। ছেলেটার গায়ে একটা চাদর মোড়ানো। মুখটাও চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে। আজব লোকটার কি গরম লাগছে না? বৃষ্টি নেমে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,
– এতোটা পথ সঙ্গ দেওয়ার জন্য থ্যাংক্স।
– কোথায় যাবেন এখন?
– হয়ে যাবে একটা ব্যাবস্থা।
– আপনার ব্যাপারে যা শুনলাম তাতে আপনাকে তো হ্যাল্প করতেই পারি তাই না? আমার সাথে চলুন। যতদিন না একটা ব্যাবস্থা হচ্ছে আমার বাড়িতেই থাকবেন।
লোকটার কথায় একটু ঘাবড়ে যায় বৃষ্টি।
– তার দরকার নেই ভাইয়া থ্যাংক্স।
– ভয় পাবেন না। বাড়িতে বাবা মা আছে। আর আমি ওরকম বাজে ছেলে নই। আমি মাসে ২৮ দিনই থাকি বাইরে। বাড়িতে থাকা হয়না বললেই চলে। আর ওই বাড়িতে কোনো প্রব্লেম হবেনা আপনার।
– না ভাইয়া, আমি ব্যাবস্থা করে নিতে পারবো। সমস্যা নাই।
– দেখেন এই দুনিয়ায় কোথাও শুন্য হাতে এসে, একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে এটা বলা যতটা সহজ ঠিক ততোটাই কঠিন হলো ব্যাবস্থাটা করার। তাছারা আপনি একটা মেয়ে মানুষ। সে ক্ষেত্রে রিস্ক বেশি আপনারই। আর এখন কোথায় বা যাবেন। হয়তো এখানে তেমন কিছু চিনেন ই না। আমি আপনার ভালোর কথা চিন্তা করেই বন্ধু ভেবে বলছি। বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
বৃষ্টি এবার একটু রেগে বলে উঠে,
– আপনাকে বলছি আমার ভালোর কথা চিন্তা করতে? আপনি আপনার রাস্তা মাপুন তো ভাই।
– ওকে গেলাম আমি। আর এই নিন আমার নাম্বার কোনো প্রব্লম হলে, চোর ছিনতাই কারির কবলে পরলে অথবা অন্য কিছু ছিনতাই কারির কবলে পরলো ফোন দিয়েন বন্ধু হিসেবে সাহায্য করার চেষ্টা করবো। গেলাম আমি।
লোকটা কিছু দুর যেতেই বৃষ্টি বলে উঠে,
– দাড়ান আমি যাবো।
– আচ্ছা একটা কথা বলবো?
– হুম।
– আপনি এভাবে মেয়ে মানুষের মতো মুখ ঢেকে রেখেছেন কেনো? নাকি গলার মতো মুখেও কোনো প্রব্লেম হয়েছে? এমন চাদর ছারা হাটলে সমস্যা কি?
– এভাবে যখন হাটছি সমস্যা তো অবস্যই আছে তাই না?
– আচ্ছা আপনিই কি ছিনতাই কারি বা ডাকাত দলের কেও?
চাদরের আড়ালেও যে ছেলেটা হেসে উঠলো তা বুঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।
লোকটা কলিং বেল বাজাতেই একজন মহিলা এসে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু আজব ব্যাপার হলো বৃষ্টিকে পাশে দেখেও মহিলাটা কোনো প্রশ্ন করলোনা লোকটাকে। দুজনকেই ঘরে নিয়ে গেলো।
একটু নাস্তা পানি খেয়ে মহিলাটার সাথে কথা বলছে বৃষ্টি।
– আমার ছেলেটা তোমার সম্পর্কে আগেই বলেছে। এমন বিপদে পরেছো আর যাওয়ারও কোনো জায়গা নেই। তাই আমি বললাম এখানে নিয়ে আসতে। কোনো একটা ব্যাবস্থা হওয়া অব্দি এখানেই থাকবে সমস্যা হবেনা তোমার। আর আমার ছেলেটা এই সকালে আসছে বিকেলে আবার চলে যাবে। আর তোমার আঙ্কেলও থাকে বাইরে সন্ধার পর বাসায় আসে। সো আমিও এখানে আমার এক সঙ্গি পেয়ে গেলাম। তোমার কোনো প্রব্লেম নেই তো?
সবার অচরণে কেমন সন্দেহ হচ্ছে বৃষ্টির। অপরিচিত কাওকে কি এভাবে নিমেশেই কেও আপন করে নিতে পারে? তাদের আচরনে মনে হচ্ছে তারা আমায় আগে থেকেই চেনে। আশে পাশে চোখ বুলাতেই দেওয়ালের একটা ফটোর উপর চোখ আটকে যায় বৃষ্টির।। একটা মেয়ের ছবি দেওয়ালে। কেমন চেনা চেনা লাগছে মেয়েটাকে। কেমন যেনো মনে হচ্ছে মেয়েটাকে আগে কোথাও দেখেছে সে। পাশ থেকে মহিলাটা বলে উঠে,
– আমার মেয়ে, বছর খানেক আগে বিয়ে হয়েছে। মাঝে মাঝে আসে। এখন শশুর বাড়িতেই আছে।
সারা বাড়িটা হেটে হেটে দেখলো বৃষ্টি। কিন্তু লোকটাকে আর চোখে পড়েনি তার। কেমন আজব প্রকৃতির লোক। মুখে তো কথা বলেই না তার উপর মুখটা দেখাতেও লজ্জা করে। আর এখন কোথাও গায়েবই হয়ে গেছে। দুপুরে খাবার খেয়ে বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। তার পাশে মহিলাটি এসে বসে।
– তুমি কিন্তু আমাকে আন্টি ডাকতে পারো। আসার পর দেখছি কেমন চুপচাপ হয়ে আছো। আমার ছেলের বন্ধু তুমি, আন্টিই ডাকবে ঠিক আছে?
– জ্বি আন্টি।
– আচ্ছা বলতো, সন্তান যখন খুব বেশি চাপে থাকে। তখন কেও জদি বলে মায়ের কাছে যাবিনা। তখন কি সন্তান সেই কথায় কান দেয়? সবার আগে মায়ের সাথেই বিষয়টা শেয়ার করে তাই না?
– জ্বি আন্টি মা ই এক মাত্র মানুষ যার সাথে মন খুলে সব শেয়ার করা যায়।
– আরো একজন আছে যার সাথে আরো মন খুলে কথা বলা, সব শেয়ার করা যায়। আর সে হলো তোমার স্বামি। আমার মতে তুমি যতই ডিপ্রেশনে থাকোনা কেনো তোমার স্বামীর সাথে বিষয়টা শেয়ার করা উচিৎ ছিলো।
– আসলে আন্টি জীবনে এমন এমন ডিপ্রশন থাকে তখন অনেকে কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক এটাও বুঝতে পারেনা। আমার মনে হয় এতে আরো ঝামেলা বারবে। আর আমায় হয়তো দু,একদিন খোজাখুজি করবে। এর পর সব আবার ঠিক হয়ে যাবে। সবাই সবার দিক থেকে হ্যাপি থাকবে।
– জীবনে এতোটা সেক্রিফাইজ করাও কিন্তু উচিৎ না। নিজের কথাও ভাবতে হয়।
কিছু না বলে নিশ্চুপ হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো বৃষ্টি।
সন্ধার দিকে রুমের পাশ দিয়ে যেতেই খেয়াল করে লোকটা কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। লোকটাকে দেখার জন্য রুমের দরজার কাছে আসতেই দেখে ততোক্ষনে চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়েছে লোকটা আজব মানুষ একটা। বৃষ্টি হেটে চলে গেলো সেখান থেকে।
কিছুক্ষন পর খেয়াল করলো লোকটা দাড়িয়ে দাড়িয়ে মহিলাটা মানে তার মাকে কি যেনো বলছে।
আজব তো, লোকটা আজ সকালে বললো তার গলায় সমস্যা দেখে কথা বলতে কষ্ট হয় কিন্তু এখন দেখি মায়ের সাথে নরমালিই কথা বলছে সে। আড়ালে দাড়িয়ে সব দেখছে বৃষ্টি।
বৃষ্টির মাথায় ঘুরছে একটা প্রশ্ন।
” লোকটা কেনো এমন করছে? কে এই লোকটা? কি চায় বা কি করতে চাইছে সে? আচ্ছা এটা তার কোনো ফাদ নয় তো যে এই ফাদে এনে ফেলেছে আমায়?
মনের মাঝে একটা ভয় গ্রাস করে নেয় বৃষ্টির।
গায়ে চাদর পেচানো অবস্থায় একটা ব্যাগ নিয়ে হেটে বাইরে চলে যেচ্ছে লোকটা। পেছন থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– এই যে শুনছেন।
লোকটা থমকে গেলো। কাগজ কলম বের করে কি যেনো লিখছে। বৃষ্টি কিছু বলতে চেয়েও থমকে গেছে। হয়তো বলতে চেয়েছিলো, চিরেকুটের শব্দে কথা বলতে হবেনা। আমি জানি আপনি কথা বলতে পারেন। কিন্তু বলতে চেয়েও কিছুই বললো না বৃষ্টি। চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। লোকটা কাগজটা দিয়ে একটা প্লেন তৈরি করলো। আর তা ওভাবে অপর দিকে তাকিয়েই বৃষ্টির দিকে আস্তে করে ছেরে দেয়। কাগজটা আস্তে করে প্লেনের মতো এসে তার পায়ের কাছে থামলো। আর লোকটা চলে গেলো। বৃষ্টি কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে,
“” ভয় পাবেন না। আপনি এখানে পুরুপুরিই সেইফ।
বৃষ্টি তাকিয়ে আছে লোকটার চলে যাওয়ার দিকে।
লোকটাকে গেট অব্দি এগিয়ে দিলো তার মা। লোকটা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠোটের কোনে ছোট্ট একটা হাসি ফুটিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– দেখো কোনো অসুবিধে যেনো না হয়। আমার একটাই মাত্র প্রিয়সি।
To be continue…………