বৃষ্টি এসো সাঁঝের বেলা ২য় পর্ব

0
2436

#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক



নিতুল ভাইয়া বললেন,’তোমায় নিজের করে নেয়ার জন্য।’
‘মানে?’
‘মানে টানে নাই কোন।তোমায় আমি বিয়ে করবো।’
নিতুল ভাইয়ার কথা শুনে আমি যেন হঠাৎ আকাশ থেকে পড়লাম। আমার কান ছুঁয়ে দেখলাম কান গরম হয়ে উঠেছে। চোখ দিয়ে কেমন সবকিছু ধাঁ ধাঁ দেখছি। না এটা আমার দূর্ভাগ‍্য নয় যে নিতুল ভাইয়া আমায় বিয়ে করতে চাইছেন। কারণ ওর পেছনে অনেক বড় বড় ঘরের সুন্দরী মেয়েরা ঘুরেও কোন সাড়া পায়নি। আর আমি তো এক অনাথ মেয়ে।বাবা মা মারা যাওয়ার পর ওদের ঘরেই বড় হয়েছি। ওদের নোন পান্তা খেয়ে জীবন ধারণ করেছি। আর আমি যে অতি রুপবতী কেউ তাও কিন্তু না। তবুও কেন নিতুল ভাইয়া আমায় এতো পছন্দ করেন কী জানি!আর পছন্দ করলে এভাবে জোর করেই বা কেন বিয়ে করতে হয় তার আমায়!
আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,’নিতুল ভাইয়া,আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না!’
নিতুল ভাইয়া কথাটা শুনে এমন রেগে গেলেন! তারপর হাতটা উপরে তুলে ঠাস করে আরেক চড় বসিয়ে দিলেন আমার গালে।
আমিও ছোট বাচ্চাদের মতো ভে ভে করে কেঁদে উঠলাম।নিতুল ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে বললেন,’কাঁদবানা জান। প্লিজ কাঁদবানা। তুমি কাঁদলে আমার ভীষণ খারাপ লাগে।আর কোনদিন তোমায় কষ্ট দিবো না জান।’
কিন্তু আমার কান্না থামছে না। কান্না থামছে না এই জন্য যে আমি মনে করছি আমার সামনের সময়গুলোর কথা। আমি জানি নিতুল ভাইয়ার বৌ হিসেবে তাদের ঘরের কেউ আমায় কোনদিন মেনে নিবে না। তাদের ছেলে দেখতেও যেমন রাজপুত্রের মতো ঠিক তার যোগ‍্যতাও তেমন।
সে একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বাংলাদেশের নামীদামী কোম্পানির বড় অফিসার।মার কত আশা তার ছেলের জন্য রাজরানীর মতো বউ আনবেন ঘরে। বাবার স্বপ্ন ছেলের শশুর বাড়ির বংশ হবে বেশ নামিদামি। শশুর হবে শিক্ষিত, পরিচিত,বেশ ধাপটি মানুষ। আর সে তুলনায় আমি কোন ছাড়!
আমি সত‍্যি সত‍্যিই নিতুল ভাইয়ার পায়ে পড়ে গেলাম। তারপর বড় অনুনয়ের সঙ্গে বললাম,’ভাইয়া,কেউ মেনে নিবে না এটা। আপনি বরং আগে সবাইকে জানান বিষয়টা।ওরা যদি রাজি হয় তবে আমিও রাজি। খুশি মনে তখন আপনাকে আমি বিয়ে করবো।’
নিতুল ভাইয়া হা হা করে হেসে উঠলেন। হেসে তিনি বললেন,’কে রাজি হবে না হুম? আমার বউকে আমি পছন্দ করে বিয়ে করবো এতে কার কী!’
‘বাবা মার অনুমতি ছাড়া আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। কিছুতেই পারবো না।’
নিতুল ভাইয়ার সারা শরীর ঘামছে। তিনি আমায় টেনে উপরে তুলে আমার দুটো হাত তার দু হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,’আমি তোমায় ভালোবাসি পৃথু। আমার ভালোবাসার কসম আজ তোমায় আমি বিয়ে করবোই করবো।’
‘কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না!’
নিতুল ভাইয়া এবার রাগে গর্জে উঠলেন। তারপর বললেন,’আমার কী নেই যে তুমি আমায় ভালোবাসো না পৃথু? আমার কী নেই?
আমি কী দেখতে খুব বাজে? আমার কী ভালো জব নেই? আমার কী ভালো বংশ পরিচয় নেই? আমার কী ভালো একটা মন নেই?বলো পৃথু বলো?’
আমি কী বলবো সত‍্যিই বুঝতে পারছি না। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। আমি কাঁদতে কাঁদতে নিতুল ভাইয়াকে বললাম,’বাবা মাকে আগে রাজি করান প্লিজ! তারপর আর আমি না বলবো না।সত‍্যিই আমি আপনাকে বিয়ে করবো। আপনাকে আমি ভালোবাসবো।’
নিতুল ভাইয়া বললেন,’যদি এতো সহজেই সবকিছু হয়ে যেতো তবে অতটা কঠিন পথে হাঁটার প্রয়োজন আমার ছিল না। আমি তোমায় ভালোবাসি এবং এই ভালোবাসা পেতে অনেক কিছুই আমি করে ফেলতে পারি পৃথু!’
ভয়ে আমার গা কেঁপে উঠলো। আমি বললাম,’প্লিজ! আপনি আমায় ক্ষমা করুন ভাইয়া!’
কিন্তু নিতুল ভাইয়া হাল ছাড়লেন না। তিনি খুব জেদি। খুব খুব জেদি। হঠাৎ করে পকেট থেকে একটা চকচকা চাকু বের করে তার নিজের গলায় এটা ধরে তিনি বললেন,’মরে যাবো আমি।মরে গেলেই তো তুমি মুক্তি পাবে পৃথু! আমি মরে যাই তাহলে?’
আমি ভয়ে শিউরে উঠলাম।মাথায় কোন কাজ করছিলো না আমার। এমনিতেই আমার আর কেউ নাই। ওদের দয়ায় বেঁচে আছি। এখন যদি আমার জন্য নিতুল ভাইয়া এমন কান্ড করে বসে তখন আমার জীবনটা কত দুঃসহ আর বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কবলে পড়বে! সেই কথা ভেবে আমি বললাম,’চাকুটা ফেলে দিন প্লিজ!’
নিতুল ভাইয়া তার ঘামে ভেজা কাঁপা কাঁপা ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে বললেন,’আগে বলো তুমি আমায় বিয়ে করবে কি না?’
আমি—–

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে