বৃষ্টির পড়ে পর্ব-০৫

0
850

#বৃষ্টির পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম_লেখিকা
#পর্ব_৫
#সারপ্রাইজ_পর্ব

রুনাকে মেরে ওখানেই ফেলে আয়াত মেহুল কে কোলে নেয় তারপর গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসায়। পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে মেহুলের চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়।
আয়াত গাড়ি চালিয়ে এক পাঁচ তারকা হোটেলের নিচে গাড়ি পার্ক করলো।এবার আয়াত মেহুল কে ডেকে তোলার চেষ্টা করলো।

মেহুল শুনতে পাচ্ছো? এই মেহুল উঠো অনেকক্ষন হয়েছে ঘুমিয়েছো এবার উঠো। ( আয়াত)

আয়াতের ডাকে পিটপিট করে চোখ খুললো মেহুল,মেহুলের মাথা রীতিমতো ভার হয়ে আছে। আয়াতের ডাক শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আয়াত ওর সাথে এতো ভালো ব্যাবহার করছে কি ব্যাপার? তুমি তুমি করে ডাকছে। মেহুলের কলেজের কথা মাথায় আসলো কলেজের মধ্যে তাকে রুনা থা*প্প*র মেরেছিলো এরপর তার মাথা ঘোরাচ্ছিল পড়ের কিছুই মনে পড়ছে না।

আয়াত ভাই সেখানে কি হয়েছিলো আর আমরা এখানেই বা কি করছি? (মেহুল)

ঠিকমতো খাবার খাস না আর হবে কি, প্রেসার লো হয়েছিলো তোর। সিনিয়র এর হাতের এক থা’প্প’র খেয়ে নাকি সে সেন্স হারায় এর থেকে লজ্জার কি আছে? (আয়াত)

এইযে আয়াত তো তাকে এখন তুই বলে ডাকছে। আগেরবার যে তুমি তুমি ডাকছে না কি একা থাকার জন্য মনে ভ্রম হচ্ছে। হয়তো ঘোরের মধ্যে আবোলতাবোল দেখছে সে নাহলে আয়াত কেন তাকে তুমি ডাকবে।

এইভাবে লজ্জা দিয়েন না আসলে গরম লাগছিলো এইজন্য মেবি। যাইহোক এখানে গাড়ি থামিয়ে রেখেছেন কেনো আমরা বাসায় যাবো না? (মেহুল)

হ্যাঁ যাবো তার আগে আমার কিছু কাজ আছে চল এমনিও তোর জন্য অনেক লেট হয়ে গেছে আমার। আর শোন যা বলবো চুপচাপ শুনবি মানুষের সামনে আমাকে লজ্জায় ফেলবি না। (আয়াত)

আমার বয়েই গেছে আপনার কথা শুনতে আসছে রে লাট সাহেব যার কথা শুনা লাগবে৷ মনে মনে এই কথা গুলো আওরাচ্ছিলো মেহুল। মুখে কিছু না বললেও সে আয়াতকে অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মেহুলের অনেক আনইজি ফিল হচ্ছে সে এর আগে এতো বড় রেষ্টুরেন্ট এ যায় নাই। রুনা আপুর এক চ*র এ আমার এই অবস্থা বাসায় জানলে তো আর কথা শুনাইতে ছাড়বে না কেউ আমাকে । আমাকে বসিয়ে দিয়ে সে নানারকম এর খাবার অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে। এতো এতো খাবার অর্ডার দেওয়ার পর একটা কফি অর্ডার দিলো আর আমি হা করে তাকিয়ে আছি।মনে মনে ভাবছি যে আয়াত ভাই এর মধ্যে কি ঢুকলো অল্প খাওয়া ব্যাক্তি আজ গাদা গাদা খাবার অর্ডার দিলো। আমার ভাবনার মধ্যে ওয়েটার এসে টেবিলে খাবার এনে সাজাচ্ছে একের পর এক আইটেম। সব খাবার দিয়ে যাবার পর যখন কফি দিয়ে গেলো আয়াত ভাই কফির কাপ হাতে নিয়ে ফু ফিয়ে সিপ দিচ্ছে।

আমার খাবারের দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে ওখান থেকে খাবার বেরে খাওয়া শুরু করে দে। ( আয়াত)

আমি আয়াত ভাইয়ের খাবার লক্ষ করছিলাম এটা যে ভাইয়া ও লক্ষ করছে কে জানতো। এই লোক যে সবসময় লজ্জায় ফেলবে তাকে। মেহুল তো এতো গরম কফি আয়াত কিভাবে খাচ্ছে তা দেখছিলো।

বাহিরে কেনো আজ খাওয়া লাগবে এমনি দেরি হয়ে যাচ্ছে ফুপি বকবে ভাইয়া। ( মেহুল)

মা বকবে কি না সে আমি দেখে নিবো আর রেষ্টুরেন্ট এ আসলে যে কাটা চামচ দিয়েই খেতে হবে এমন নিয়ম নাই হাত আছেনা তোর তা ব্যাবহার করে খেতে পারছিস না। (আয়াত)

আপনি কিভাবে জানলেন যে আমি কাটা চামচ দিয়ে খেতে পারিনা তাই এভাবে বসে আছি। ( মেহুল)

মেহুল আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে, আয়াত কিভাবে এতো কিছুর খেয়াল রাখে মেহুলের মনের মধ্যে একরাশ মুগ্ধতা ছেয়ে যাচ্ছে। আয়াত নিজের জন্য খাবার বরে অন্য প্লেটে মেহুলকে বেরে দিলো। আয়াত হাত দিয়ে মেখেই খাওয়া শুরু করলো, মেহুল সেটা লক্ষ করে নিজেও খাওয়া শুরু করে দিলো। মেহুলের প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছিলো আজ কতদিন পর কেউ ওকে এভাবে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। মেহুলকে যতজ বলুল আয়াতকে পছন্দ করে না আয়াতের এই ছোট ছোট কেয়ার রাকে মুগ্ধ করে। ফুপি এসব জানলে কেলেংকারী হয়ে যাবে এসব ভাবনা মেহুলকে আর প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

নিজের সমস্যার কথা সব সময় নিজেকে মুখ খুলে বলতে হয় নাহলে অন্যকেউ কিভাবে জানবে নিজের কি চাই। নিজের জিমিসের প্রতি অধিকার ছাড়তে নাই জোর করে আদায় করে নিতে হয়।নিজেকে সব পরিস্থিতিতে মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করে নিতে হয়। (আয়াত)

আমি সবরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে খুব ভালোভাবে সামলাতে পারি, আজকে এমন হবে মনে হয় নাই। ( মেহুল)

এরপর আর কোনো কথা হলো না সে নিজের মতো খাচ্ছে আমিও আমার মতো খেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে বিল পে করে বেরিয়ে যাই আমরা ওখান থেকে। এরপর সে আমাকে নিয়ে সপিংমল এর দিকে ঢুকলো ভাবলাম হয়তো জেনিফার আপু চলে যাবে তার জন্য কেনাকাটা করতে আসছে তাই আর কিছু জিজ্ঞাস করলাম না। আয়াত ভাই নিজের মতো কেনাকাটা করছে। এমন না যে আমাকে কেউ জামাকাপড় দেয় না দাদি আমাকে প্রতি ঈদে দেয় সেই বা এই বয়সে টাকা কোথায় পাবে। আমি নিজেও কিছু চাই না লজ্জা করে এমনি না কি তাদের ঘারে বসে অন্য ধংশ করছি এইভেবে আমাকে পড়াচ্ছে এই ঢের। নিজের পায়ে দাড়াবো এরপর নিজের সব ইচ্ছেপূর্ণ করবো কারো কাছ থেকে নিয়ে নয়। আয়াত ভাই এর সাথে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে এলো আমার টেনশন হচ্ছে বাসায় গেলে ফুপির রিয়েকশন কি হবে আমি ভাবতে পারছি না। আমাকে আয়াত ভাইয়ের থেকে দূরে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। ফুপাও বাসায় নাই আর থাকলেও জি দুই বাপ ছেলের মধ্যে যে সাপ নেউল এর সম্পর্ক তা তো জানি ই। আয়ান ভাইয়া আর আয়াত ভাইয়া যে কেনো বাসায় বেশি থাকে না আর বাবা-মায়ের সাথে এতো রুড তা বুঝতেই পারলাম না। বাসায় ফিরে দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে আমরা প্রবেশ করতেই সবার অগ্নিদৃষ্টি আমার উপর পড়লো। ভয়ে হাত – পা কাপতে লাগলো আমার।

এতো লেট হলো কেন আর তোরা একসাথে কি করিস। ( ফুপি)

মেহুল তুই যা রুমে গিয়েছে ফ্রেস হয়ে নে আমি বলছি সব। ( আয়াত)

আমি ভয়ে ফুপির দিকে তাকাচ্ছি না, চুপচাপ দাড়িয়ে আছি৷ দেখি বাবা আমার দিকে তাকিয়ে আছে রাগি চোখে৷

এই মেয়ে এই দুপুরে তোমার ক্লাস এতো সময় কই ছিলা না কি সুযোগ পেয়ে আয়াত কে ফাসাতে চাচ্ছো। ( বাবা)

নিজের বাবা কি কখোনো নিজের মেয়েকে এতো অপমান মূলক কথা বলতে পারে? বাবার মুখে এইসব বাক্য শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো । ফুপি ও দেখি রাগে ফুসছে কিন্তু মুখে কিছু বলছে না হয়তো আয়াত ভাই আছে দেখে। আয়াত ভাই এর চুপচাপ দড়িয়ে আছে।

আপনার মেয়ে লাগি আমি তবুও কখোনো মেয়ের আদর ভালোবাসা আপনার থেকে পাই নাই। বাবার কোনো দায়িত্ব ও আপনি পালন করেন নাই আচ্ছা এসব ছাড়েন নিজের মেয়েকে কোন বাবা এসব অসভন কথা বলতে পারে? মেয়ে নাই বা মানতে পারেন তবে এগুলা কোনো শিক্ষিত মানুষের কথা বাবা ছিহঃ। ( মেহুল)

তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি বেদ্দপ মেয়ে মুখে মুখে তর্ক। ( বাবা)

বাবা আমাকে মারতে নিলে আয়াত ভাই সেই হাত ধরে ফেলে। বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে।

আপনার সাহস দেখে তো আমি আরো বেশি অবাক হচ্ছি মিঃশেখ। (আয়াত)

আয়াত ও তোমার মামা তার সাথে এসব কি ব্যাবহার। ( ফুপি)

আরে আপু এইটা তো আয়াতের দোষ না অই মেয়ের কাজ সাজি ব্রেন ওয়াস করছে। ( বাবা)

Shut up mr sheikh Don’t say utter a word Against mehul. আমাকে রাগাইলে আপনার জন্য ভালো হবে না বলে দিলাম। আর আপনার কোনো লজ্জা নাই মিঃ শেখ বড় বোনের শশুর বাড়িতে বেহায়ার মতো বসে বসে অন্নধ্বংস করছেন। আপনার আবার লজ্জা সরম সে যাইহোক আপনি মায়ের ভাই হতে পারেন তবে এ বাড়ির কেউই না। আর আমাদের পারিবারিক বিষয়ে কথা বলার অধিকার আপনার নাই। (আয়াত)

ফুপি এবার আমার দিকে এগিয়ে আসলে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন, হঠাৎ ধাক্কা সামলাতে না পেরে টি-টেবিলের কোনের উপর পড়ে যাই আমি। আয়াত ভাই দ্রুত আমাকে টেনে তুলেন আমার দিকে তাকাতেই দেখেন টেবিলের কোন কপালে ঢুকে অনেকটা কেটে যায়৷ কেটে যাওয়া স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরলেন তিনি আর মায়ের দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমাকে টেনে সোফায় বসালেন। আম্মু দ্রুত গিয়ে ফার্স্ট এড বক্স এনে দিলে আয়াত ভাই যত্নসহকারে আমার মাথা ব্যান্ডেজ করে দিলেন। প্রচন্ড ব্যাথা আমি দাতে দাত চেপে সহ্য করছি লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছি না।

আয়াত ভাই ড্রয়িংরুমে সব কিছু ভাংচুর করা শুরু করলো। সবাই আয়াত ভাই এর এরুপ কর্মকান্ডে অবাক হয়ে আছেন, পকেট থেকে গান বের করে বাবার মাথায় চেপে ধরলেন৷ আৎকে উঠলাম আমি,সাথে মা আর ফুপিও।

মিসেস সিকদার আপনি যেভাবে আমার মেহুলেকে আঘাত করলেন এবার সেভাবে আপনার প্রিয় ভাই কে দুনিয়ার ওপারে পাঠিয়ে দেই। ( আয়াত)

কি বলছেন আপনি আয়াত ছেড়ে দিন আব্বুকে এমন কেনো করছেন। (মেহুল)

আয়াত বাবা মামা লাগে তোমার ছেড়ে দেও উনাকে। (আম্মু)

আপনি একটা কথাও বলবেন না সব থেকে বড় অপরাধি আপনি, আমি বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে আর এসে অবদি বারবার বলছি কেউ আমার ভালোবাসার গায়ে একটা টোকা দিলে তাকে আমি জাহান্নাম দেখিয়ে আনবো এবার সে আর যেইহোক তা এই আয়াত আয়াশ সিকদার দেখবে না। চিনেন না আমাকে আমার কাছে অপরাধিদের একটাই শাস্তি আর তা হলো মৃত্যু। (আয়াত)

আয়াতের এই ভয়ংকর রুপ সবার অবগত কিন্তু কিছু কারণে সে এতোদিন ভালোই ছিলো কিন্তু আবার তার এই রুপ দেখে ফুপির মুখ দিয়েও কথা বের হচ্ছে না।

আয়াত ভাই কল দিয়ে কাকে যেনো তাড়াতাড়ি আসতে বললো, সবাইকে সোফায় বসিয়ে রেখেছেন আয়াত ভাই। আর সিংগেল সোফায় বসে গানের মাথা দিয়ে নিজের কপালে ঘসছে। কি চলছে তার মাথায় কেউ জানেনা। কিছুক্ষণ পড়ে একজন উকিল আসলো ড্রয়িংরুমে আয়াতের হাতে কিছু কাগজ পত্র দিলো। আয়াত আমার দিকে কাগজ আর কলম এগিয়ে দিলো।

আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করি না কোনো কথা না বলে এখানে সাইন করবি তুই, আর সাইন করতে একমিনিট লেট হলে এইখানের সব বুলেট মিঃ শেখ এর মাথায় যাবে।(আয়াত)

আমি চুপচাপ সাইন করে দিলাম, আমার সাইন হতে সেও সাইন করে ফেললো। কিসের কাগজ তা কেউ জানিনা। ফুপি,আম্মু,আর আব্বুকে দিয়েও সাইন করিয়ে কাগজ গুলো এবার উকিল এর হাতে ফিরিয়ে দিলো।

congress mr shikdar,আজ থেকে আপনারা স্বামী স্ত্রী। (উকিল)

উকিল সাহেবের কথায় ব্জ্রপাত হলো ড্রয়িংরুমে। সবাই অবাক হয়ে বসে আছে। আমার মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের হচ্ছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো। আয়াতের মুখে রহস্যময় এক হাসি লেগে আছে।

….#চলবে..???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে