বৃষ্টির পড়ে পর্ব-০৩

0
936

#বৃষ্টির পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম_লেখিকা
#পর্বঃ৩

রাতের আধার পেরিয়ে নতুন দিনের সূচনা হয়। টেবিল থেকে মাথা তুলে তাকায় ঘাড়ের দিকটায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে মেহুলের। ধীরে ধীরে টেবিল থেকে মাথা তুলে সে কাল রাতে পড়তে পড়তে সে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে। চারোদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসছে,এ বাড়িতে এতো সকালে কেউ ঘুম থেকে উঠে না মেহুল আর রোকসানা ছাড়া। কাল রাতে না খেয়ে থাকার দরুন খিদে টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে তার। কাল যে না খেয়ে আছে এই বাড়ির লোকের এতে কিছুই হয় না কেউ তাকে খাবারের জন্য ভুলেও ডাকে না। টেবিল থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে সে নিচে চলে যায় ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে রান্না ঘরে নাস্তা বানানোর জন্য যায়। রান্না-ঘরে ততোক্ষনে ফুপি নাস্তা বানানো শুরু করে দিয়েছে। মেহুল কে দেখে বলে,,

তাড়াতাড়ি কফি বানিয়ে আয়াতের রুমে আসো ও সকালে কফি ছাড়া চলতে পারে না। আয়াতকে কফি দিয়ে এসে লেবু-মধু গরম পানিতে মিক্স করে জেনিফার কে দিবে এটাতে জেনো ভুল না হয়। নাশতা আমি বানাচ্ছি তুই গিয়ে এগুলা দিয়ে আয় আর শোন আয়াতের সামনে কোনো কথা বলার চেষ্টা ভুলেও করবি না। আয়াত যেকয়দিন দেশে আছে তোর আর কোনো কাজ করার দরকার নাই রুম এ থাকবি তোর বের হবি না বেশি তোর খাবার রোকসানা দিয়ে আসবে। মেহুল অবাক হয়ে শুধু ফুপির কথাই শুনে যাচ্ছে কি হচ্ছে কাল ওর মা আজ আবার ফুপি সবাই এতো সুন্দর ভাবে কথা বলছে।

বেশিকিছু ভাবলোনা এমনিও আজ তার প্রিটেস্ট কদিন পড় ই আবার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম শুরু হবে।কফি নিয়ে আয়াতের রুমের সামনে দাঁড়ায় মেহুল আজ আর ভুল করলো না সে দরজায় নক করলো।

চলে আয় নক করে ভদ্রতা দেখানো লাগবে না। ( আয়াত)

কি করবো বলুন এখানে আবার নক না করলে মেনারসহীন ভাবা হয়। ( মেহুল)

ত্যারা ত্যারা কথা তো ভালোই শিখেছিস রে, আহ সাহস দেখে অবাক হচ্ছি শেষমেষ কি না মেহুল এই আয়াত আয়াস সিকদার কে বাহ বাহ। (আয়াত)

আয়াত এক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মেহুলের দিকে, মেহুল আয়াতের মনে কি চলছে তা তার চেহারা দেখে বুঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু আয়াতের ঠান্ডা মুখোশ্রীতে অদ্ভুদ এক ক্রুর হাসি লেগে আছে আর আয়াতের এই হাসির মানেটা বোধগম্য হলোনা মেহুলের। এই লোকের থেকে যতো দূরে থাকবে ততোই মোঙ্গল।

আপনার সাথে এসব আজাইরা প্যাচাল করার সময় আমার কাছে নাই আপনার কফি নেন। (মেহুল)

আমার সাথে বেশি চালাকি করার চেষ্টা করবি না মেহুল ভুলেও না, আয়াত আয়াস সিকদার কে আগের রুপে ফিরে যেতে বাধ্য করলে কারো জন্য ভালো হবে না। আয়াত ক্ষমা করতে জানলেও তার কাঁছে ক্ষমা মানে এক জিনিস আর তা কি ভালো করে জানিস। (আয়াত)

আয়াতের ঠান্ডা মাথায় দেওয়া হু*ম*কি তে মেহুলের ভিতর নাড়িয়ে দিলো। সেই কালো দিন মনে আসলেই শরীরে রীতিমতো কাটা দিয়ে উঠছে। আয়াতকে দেখলে কেনো জানি না ভয় আর রাগ দুটোই যেগে উঠে ওর মনে।

আপনি জানেন আমি আপনাকে এতো পরিমান ঘৃনা করি তা বলার মতো না। আমার জিবন টা নরক বানিয়ে দিয়েছেন আপনি। আপনার জন্য এখন আমাকে ফুপি..! ( মেহুল)

ফুপি কি এইটুকু বলে আটকাই গেলি কেনো? (আয়াত)

ফুপি মেহুল কে বারবার বলে দিছে আয়াতের সাথে বেশি কথা বলতে না। মেহুল কি করতে বসেছিলো ফুপির কাজ ভুলে বলে দিতে নিয়েছিলো। যদি ভুলেও ফুপির কানে যায় আয়াত ভাই জানে মা- ছেলের মধ্যে তু*ফা*ন শুরু হয়ে যাবে।

আব আসলে এক্সাম আজ তাই ফুপি জলদি নিচে যেতে বলছে। (মেহুল)

আয়াতকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সে দ্রুত বের হয়ে যায়। এখোনো হাত -পা কাপছে কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। মেহুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আয়াত মেহুলের কথা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। মেহুল কিছু একটা লুকাচ্ছে তা খুজে বের করতে হবে।

মেহুল রান্নাঘরে গিয়ে জেনিফার এর জন্য মধু-লেবু দিয়ে পানির শরবত বানাচ্ছে। জেনিফার এর কাছে তার একদম যেতে ইচ্ছে করেনা মেয়েটা কেমন জেনো মেহুল কে দেখে অদ্ভুদ ব্যাবহার করে। মেহুল ভেবে পায় না এই অচেনা মেয়েটি কেনো মেহুলের সাথে এমন রুড ব্যাবহার করে। মেহুল কে দেখলেই জেনিফারের সাদা মুখ কালো হয়ে যায়। লেবু পানি নিয়ে মিরার রুমের দরজায় টোকা দিলো।

কে ভিতরে আসতে পারেন। ( জেনিফার)

এই নিন আপু আপনার পানি ফুপি পাঠিয়েছে। (মেহুল)

মেহুলকে দেখে জেনিফার কি জেনো ভাবলো মেহুল সেগুলো পাত্তা না দিয়ে চলে আসতে নিলে জেনিফার দরজার সামনে হাত আগলে দাঁড়ায়। মেহুল কে যেতে বাধা দেওয়ায় বিরক্তি লাগে কি চাচ্ছে এই আজব মেয়েটা।

আসছো আমার আর কিছু লাগবে কি না জিজ্ঞেস না করেই চলে যাচ্ছো স্ট্রেঞ্জ। (জেনিফার)

আম সরি আপু আমার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো বলেন কি লাগবে আপনার। (মেহুল)

তা দেখছো আমার জুতো ওখানে রাখা আছে দেখো হাল্কা ধুলো লাগা আছে ওইগুলা কাইন্ডলি একটু পরিষ্কার করে দিবে? ( জেনিফার)

মেহুল এবার জেনিফারের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে জেনিফার যে ইচ্ছে করে মেহুল কে ছোট কর‍তে চাচ্ছে। মেহুল এবার জেনিফার এর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়। জেনিফার মেহুলের হাসি দেখে ভরকে যায়।

আসলে আপু আমি এ বাড়ির কাজের লোক নই বুঝছেন যে আমাকে আপনি এইভাবে বলছেন। আর এইবাড়ির কাজের লোকদের ও কখোনো জুতো পরিষ্কার করার মতো কাজ দিয়ে অপমান করা হয় না। অবশ্য এইটা সিকদার বাড়ির শিক্ষা আপনি উচ্ছৃঙ্খল দেশের মানুষ হয়ে এ দেশের ওয়েল এন্ড গুড এডুকেশন বেংগলি এথিক্স রিসপেক্ট সম্পর্কে কিভাবে জানবেন। (মেহুল)

মেহুল খুব সুন্দর ভাবে যে জেনিফার এর অপমানের পালটা জবার দিয়ে দিবে তা জেনি মাথাতে আনে নাই। জেনির ধারনা মতে বাঙালি মেয়েরা নরম হবে কাউকে উল্টো কথা বলতে পারবে না। জেনি জানতো না যে এ দেশের মানুষ মনের দিক দিয়ে নরম হলেও আত্তসম্মান প্রবল, অযথা অন্যায় সহ্য করবে না। অবাক হয়ে মেহুল কে দেখে যাচ্ছে তার ভাবনায় ছিলো মেহুল কে শান্ত দেখে ভাবছে মেয়েটা বোকা অথচ সব কথা গুছিয়ে রিটার্ন করতে পারে। জেনিফার এর রাগ হচ্ছে, না এভাবে বসে থাকলে হবে না কিছু একটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে পরিস্থিতিকে হাতের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না।

মেহুলের শান্তি লাগছে খুব এভাবে যে সে জেনিকে উত্তর দিয়ে আসছে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। থাক এবার খেয়ে নেই দেন রেডি হয়ে যেতে হবে। মেহুল নাস্তা শেষ করে কলেজ ড্রেস পড়ে রেডি হয়ে নিলো কলেজ যাওয়ার জন্য।

ডাইনিং এ গিয়ে ফুপিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

আমি আসছি ফুপি গেলাম দোয়া করিও। (মেহুল)

আয়াত টিস্যুতে হাত মুছে নেয় খাবার শেষ না করেই উঠতে উঠতে বলে।

আম্মু আমি আজ ভার্সিটিতে যাবো স্যার ডেকেছেন মেহুল যেনো আমার সাথে যায় আর এই নিয়ে আমি আর একটা বাক্য ওয়েস্ট করতে চাই না আই হোপ কারো সমস্যা হবে না। (আয়াত)

আমেনা সিকদার কিছুক্ষন ছেলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে দুপাশে মাথা নাড়ায় যাতে বুঝায় তার কোনো আপত্তি নাই।

মেহুল আজ তুই তোর আয়াত ভাই এর সাথে যা। ( ফুপি)

আমিও যাবো আয়াত তোমার সাথে চলো। (জেনিফার)

আমি কোনো সার্কাস এ খেলা দেখাতে যাচ্ছি না জেনি যে তোকে নিয়ে যাবো লাইক আ জোকার। ড্রামা কম করবি আর কাল তোর ফ্লাইট আমি প্ল্যানের টিকিট বুক করেছি লাগেজ গুছিয়ে রাখিস এ নিয়ে আমি রাতে কথা বলবো তোর সাথে। (আয়াত)

আয়াতের মুখে জেনির যাওয়ার কথা শুনে তো সবাই অবাক তার থেকে জেনি আরো বেশি অবাক। মেহুলের বাবা এতে খুশি হয়েছে তা তার দিকে ভালোভাবে লক্ষ করা যায়, অবশেষে রাস্তা থেকে একটা কাটা ক্লিয়ার হতে যাচ্ছে।

জানো আমি অনেক অবাক হচ্ছি সব থেকে বেশি অবাক হচ্ছি কেনো যানো একজন কে বিশ্বাস করেছিলাম সে এইভাবে পিঠে ছু*রি মা*র*বে ভাবনায় আসে নাই। (আয়াত)

আয়াতের কথা মানে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না।

….#চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে