বিষাক্ত প্রেম পর্ব-০৭

0
834

#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_7
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

তিতির শক্ত কন্ঠে মুরতাসিম কে আসি স্যার বলে বেরিয়ে গেলো।

মুরতাসিম রেগে গ্লাস দূরে ছুড়ে মারলো৷ একটা কেও ছাড়বো না কল দিয়ে কাউকে বললো সব গুলো ছেলেকে আমার সামনে দেখতে চাই। আমি ওদের শুধু টাকা গুলো নিয়ে নিতে বলেছি ওর গায়ে হাত দিতে নয়।

~ সরি বস আমি বুঝতে পারিনি৷ এখনি ওদের আমাদের পুরান বাড়িতে নিয়ে আসছি।
মুরতাসিমঃ নিজ হাতে আমি ওদের শাস্তি দিবো।কতো বড় কলিজা হয়েছে দেখতে চাই।

মুরতাসিম কল কেটে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তিতিরের দিকে।

আজ সে অনেক বড় একটা সত্যি জানতে পেরেছে।। আর আজই সে তিতিরকে কষ্ট দিলো!! এখন নিজের প্রতি নিজের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।

_______________

শার্লিনের একদম ভালো লাগছে না তিতিরকে ছাড়া।
সাইফঃ কি রে মুখ টাকে এমন পেঁচার মতো বানিয়ে রেখেছিস কেনো..!!??
শার্লিনঃ তুই পেঁচা তোর বউ পেঁচা!! তোরে বলছি আমার দিকে তাকাতে..? চোখ বন্ধ করে বসে থাক।

সাইফ দেখে গেইট দিয়ে ফারাজ স্যারের গাড়ি ঢুকছে। শার্লিনকে ডাকতে গিয়ে দেখে ফারাজের সাথে সেই মেয়েটা এসেছে।

শার্লিন খুব পছন্দ করে ফারাজকে সেটা সাইফ জানে। তাই শার্লিনকে নিয়ে ক্লাস রুমে চলে গেলো। ইভা কে ফারাজের সাথে দেখলে শার্লিন কষ্ট পাবে৷

কিন্তু তাতেও লাভ হলো না সিঁড়িতে যেটার ভয় পেয়ে ছিলো সেটাই হলো। ইভা কে ফারাজের সাথে দেখে ফেললো শার্লিন।

শার্লিনঃ সাইফের বাচ্চা এই মাইয়া ভার্সিটিতে কি করে,…!?
সাইফঃ আমি কেমনে জানমু।
শার্লিনঃ ভালোবাসা রাখতে জায়গা পায় না ভার্সিটিতে চইলা আসছে। এই মাইয়া জেনো আমার সামনে না পড়ে। একদম অবস্থা খারাপ করে ফেলবো।
সাইফঃ কেনো এই মেয়ে তোকে কি করছে.??
শার্লিন কিছু না বলে হন হন করে ক্লাস রুমে চলে গেলো।
সাইফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শার্লিনের পিছু পিছু গেলো।

শার্লিন একটু পর পর চোখের পানি সাইফের শার্টে মুছে নিচ্ছে।

সাইফঃএই মেয়ে ক্রাশ খেতে খেতে বাঁশ খেয়েছে এখন। কতো বলি এতো ক্রাশ খাসনা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। কে শুনে কার কথা এবার কান্না করে বালিশ ভিজা, বালিশ না পেয়ে এখন আমার শার্ট আছে এটাই এখন কাজে লাগাচ্ছে।
শার্লিনঃ চুপ করে বসে থাক একটুও টু শব্দ ও করবি না।

সাইফ মুখে আঙ্গুল দিয়ে সামনের দিকে তাকালো।

ক্লাসে ফারাজ আসতেই শার্লিন মাথা নিচু করে নিলো। এক বারের জন্যও সামনে তাকালো না।

ফারাজ ক্লাসের ফাঁকে শার্লিনের দিকে তাকালো। এই মেয়ের আসলে হয়েছেটা কি!!.?

ক্লাস শেষে ফারাজ যাওয়ার সময় আবার শার্লিনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ওর সাথে দেখা করতে..’
শার্লিন নিচের দিকে তাকিয়ে আচ্ছা বললো।

শার্লিনঃ আসবো স্যার..?
ফারাজঃ আসেন।
শার্লিনঃ কিছু বলবেন স্যার..?
ফারাজ কিছু সময় চুপ থেকে ভাবলো কি বলা যায়।
ফারাজঃ আপনার ফ্রেন্ড কোথায়..? ঠিক আছে তো..?
আগুনে ঘি ডালার মতো কথা ছিলো।
শার্লিন নিজের রাগ লুকিয়ে হেঁসে বললো, ‘ তিতিরের কথা বলছেন..? সে আসবে কাল থেকে, সে জব নিয়েছে তাই রেগুলার আসতে পারবে না।আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন..??’.
ফারাজঃ আপনি ঠিক আছেন..?
শার্লিনঃ কেনো স্যার আমাকে দেখে কি অসুস্থ মনে হচ্ছে..?
ফারাজ বসা থেকে দাঁড়িয়ে শার্লিনের কাছে আসলো।
শার্লিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো৷
ফারাজের হাসি পেলো তাও হাসলো না।
ফারাজ আরও দুই পা এগিয়ে এসে শার্লিনের একদম কাছে দাঁড়ালো শার্লিনের কপালে হাত রেখে বললো,’ নাহ দেখে অসুস্থ মনে হলেও আপনি তো একদম সুস্থ। ‘
শার্লিনের বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো। এ জেনো হাতের ছুঁয়া নয় কারেন্টের সট লেগেছে শরীরে।
শার্লিনঃ উপরের অসুখ সবাই বুঝে ভেতরের খবর কয়জন রাখে।
বলেই বেরিয়ে গেলো শার্লিন।

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফারাজ পরক্ষনে হেঁসে ফেললো। কিন্তু এখন চিন্তার বিষয় হলো এই ৪ফুট মেয়ের ভেতরে কি অসুখ হয়েছে..?

এখন শার্লিন শুনলে রেগে ঠিক বলতো, ‘ আমি ৪ফুট নই স্যার ৫ফুট ৩ ইঞ্চি.. …

________

ছুটির পর তিতির অফিস থেকে বের হয়ে দেখা হয়ে গেলো দিশার সাথে।

তিতিরঃ সে কি তুমি এখনো যাওনি..?
দিশা লজ্জা পেয়ে বললোঃ আসলে আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
তিতিরঃ এখনো আসেনি..!
দিশার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো,’ আসলে ও অনেক কাজ করে তো তাই বিজি থাকে সব সময়। ‘
তিতিরঃ ওহ আচ্ছা। তবে গার্লফ্রেন্ডের থেকে বড় কিন্তু কিছু না।
দিশাঃ সে আমাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু চেষ্টা করেও সময় বের করতে পারে না।
তিতির মনে মনে ভাবলো,’ কতোটা বিশ্বাস করে বয়ফ্রেন্ডকে। বিশ্বাস ভালো তবে অন্ধবিশ্বাস ভালো না। প্রেমিকার থেকে বড় কাজ আর কিছুতে হতে পারে না। ‘

কিন্তু মনের কথা মনে রেখেই বললো,’ তাহলে তো ভালো। আরও অপেক্ষা করবে নাকি চলে যাবে..!!?’.

দিশাঃ সে তো আসবে না অপেক্ষা করে কি করবো চলো এক সাথেই যাই।

ওরা কথা বলছে তখনি পাশ দিয়ে মুরতাসিমের গাড়ি যাচ্ছিলো। মুরতাসিম কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে আসলো।

মুরতাসিম দিশা কে দেখে বিরক্ত হলো এদের মধ্যে এখন এই মেয়ে কেনো কাবাবে হাড্ডি হতে দাঁড়িয়ে আছে!! তাও হেঁসে ওদের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোমরা এতো রাতে দাঁড়িয়ে আছো কেনো..?’
দিশাঃ রিক্সার জন্য স্যার।
মুরতাসিমঃ এখন তো মনে হয় গাড়ি পাবে না চলো আমার সাথে।
তিতিরঃ প্রয়োজন নেই স্যার। আপনি চলে যান আমরা ঠিক চলে যাবো।
মুরতাসিম তিতিরের দিকে তাকিয়ে রেগে চলে গেলো। এই মেয়ে সব সময় আগে আগে কথা বলতে হবে। একটু কি সুন্দর করে কথা বলা যায় না!!’

মুরতাসিম যেতেই তিতির তাকিয়ে রইলো গাড়িটির দিকে।

সামনে তাকিয়ে তিতিরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

দিশা আর তিতির বসে আছে ফাহাদের গাড়িতে।
দিশার সাথে ফাহাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে তিতির।

কিছু দূর যেতেই দিশা বলে উঠলো গাড়ি থামান।

ফাহাদ গাড়ি থামাতেই দিশা গাড়ি থেকে নেমে ধীরে ধীরে সামনে গেলো।
ওর চোখের সামনে ওর বয়ফ্রেন্ড একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে। দিশার চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।

তিতিরও নেমে আসলো।
দিশার বয়ফ্রেন্ড দিশা কে দেখেই মেয়েটিকে ছেড়ে দিলো। ভয়ে ভয়ে দিশার দিকে তাকালো।
দিশাঃ এই মেয়েটি কে আরিফ..??
আরিফঃ আমার বোন দিশা।
~ কে তোমার বোন আরিফ!!..? আর এই মেয়েটি কে..??
দিশা আর তিতির তাকালো মেয়েটির দিকে।
আরিফ এখন কি বলবে..? সে দিশা কে বুঝানোর জন্য এগিয়ে যেতেই দিশা পায়ের জুতা খুলে মারা শুরু করলো। আকস্মিক ঘটনায় ভেবাচেকা খেয়ে গেলো তিতির, ফাহাদ, আর মেয়েটি।

দিশা রেগে বলে উঠলো, ‘ এর আগেও ৫টা মেয়ের সাথে ধরেছি সব গুলো তোর, খালাতো বোন, মামাতো বোন,নিজের বোন, ভাইয়ের শালি কুত্তার বা** তোদের মতো ছেলেদের জন্য আজ মেয়েরা ছেলেদের বিশ্বাস করতে দশ বার ভাবতে হয়। বলেই জুতা দিয়ে গালে মারা শুরু করলো।
আরিফ রেগে দিশার হাত চেপে ধরতেই দিশা আরও রেগে গেলো৷ পা দিয়ে ওর দুই পায়ের মাঝে কিক মারলো বেচারা এখানেই অজ্ঞান।

থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলো সবাই। এতোক্ষন এখানে এগুলো কি হয়ে গেলো!!??

দিশা মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে গিয়ে গাড়িতে চুপচাপ বসে পড়লো। ওর পিছু পিছু তিতির,ফাহাদ এসে বসলো।ফাহাদ এখনো ভাবতে পারছে না একটা মেয়ে কিভাবে একটা ছেলেকে এভাবে মে’রে অজ্ঞান করতে পারে। এখন শুধু ওর মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বেচারা ভবিষ্যতে বাবা ডাক শুনতে পারবে তো..? নাকি আজকেই ওর ভবিষ্যতের বাতি নিভে গেছে!!

ওদের গাড়ি যেতেই পেছনে একটা গাড়ি দেখা গেলো।

মুরতাসিম গাড়ি নিয়ে আবার ফিরে এসে ছিলো। তখন তিতির আর দিশাকে অন্য একটা ছেলের গাড়িতে উঠতে দেখে পিছু করে গাড়ির কিন্তু এমন কিছু দেখতে হবে হয়তো সেও ভাবতে পারেনি।

চলবে৷ …..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে