বিষাক্ত প্রেম পর্ব-০৬

0
552

#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_6
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

তিতির বাসায় আসতেই ফাহাদ ওর দিকে শরবত এগিয়েই দিলো। সারাদিন খুব দখল গিয়েছে ওর উপর দিয়ে । বাসায় এসেই এমন খাতিরযত্ন পেয়ে সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো কিছুটা । মুচকি হেঁসে গ্লাস নিয়ে সোফায় বসে পরলো।

ফাহাদঃ প্রথম দিন কেমন কাটলো..?
তিতিরঃ খুবি জঘন্য ভাইয়া। সারাদিন আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছে।
ফাহাদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার তিতিরপাখি কে সে কোনো কষ্ট পেতে দেয়নি আর আজ এতো এতো কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ওর সামনে বসে আছে তার তিতিরপাখি! ফাহাদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সে কাল যাবে তিতিরের অফিসে আর তিতিরকে চাকরি থেকে বের করে নিয়ে আসবে। সব সহ্য হলেও তার তিতিরপাখির কষ্ট সে সহ্য করতে পারবে না। খুব যত্নের এই তিতিরপাখি। ‘

ফাহাদঃ আমি আগেই বলে ছিলাম তোমার জব করার প্রয়োজন নেই। তোমার কি কিছুর কষ্ট দিয়েছি যে তোমার জব করতে হবে..??

তিতিরঃ প্লিজ ভাইয়া আমিও কিছু করতে চাই। তোমরা আমাকে কষ্ট দাওনি কিন্তু আমি চাই নিজেই পায়ে দাঁড়াতে।

শার্লিন রুম থেকে বেরিয়ে তিতিরকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।
শার্লিনঃ কেমন কাটলো প্রথম দিন .?
তিতিরঃ খুব ভালো।
শার্লিনঃ চল ফ্রেশ হয়ে নে আগে। আমিও একটা জব খুঁজে নিবো।
তিতিরঃ তুই কেনো জব খুঁজবি..?
শার্লিনঃ আমিও জব করবো।
ফাহাদঃ প্রতিদিন বাসায় নতুন নতুন বিনোদন।
শার্লিনঃ তোমার মতো সার্কাস বাসায় থাকলে বিনোদন তো পাওয়াই যাবে।
ফাহাদঃ কে সার্কাস..?
শার্লিন মুখ ভেঙচি কেটে বললো,’ এখন যার নিজেকে সার্কাস মনে হচ্ছে..!! ‘
লেগে গেলো দুই ভাই বোন ঝগড়া। তিতির ওদের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে । ফ্রেশ হয়ে সাইফ কে কল দিতে হবে বেচারা সারাদিন কল দিয়েছে।

তিতির ফ্রেশ হয়ে এসে সাইফকে ফোন দিলো৷
~হ্যালো কই থাকিস তুই..??
~ অফিসে ব্যাস্ত ছিলাম।
~ তাই বলে এক বার মেসেজ করে বলা যেতো না!! তুই যে জব পেয়েছিস এক বার জানিয়েছিস…??
~ আজ জব হয়েছে জানানোর সময় হয়ে উঠেনি।
~ এখন সব বাদ ট্রিট দে…
~ আমি এখন…
~ একদম না করবি না তিতির আমি ভার্সিটির পাশে ফুচকার দোকানের কাছে আছি শালুকে নিয়ে চলে আয়।
তিতির কিছু বলার আগেই কল কেটে দিলো সাইফ।

____

তিতির আর শার্লিন বসে আছে ফুচকার দোকানে। শার্লিনের এই নিয়ে তিন প্লেট ফুটকা খাওয়া শেষ।

সাইফঃ এরে দেখে তো মনে হচ্ছে এক মাস ধরে কিছু খায় না।কিরে তোকে কি বাসায় আন্টি খাবার দেয় না নাকি!”

শার্লিন রেগে পানির বোতল সাইফের দিকে মারলো।

তিতিরঃ এবার বল এতো জলদি আসতে কেনো বলেছিস..?
সাইফঃ মামা আমি একটা ঝামেলায় পড়ছি।
শার্লিনঃ তোর কাজেই একটার পর একটা ঝামেলা লাগানো। এই তিতু সোনা তুমি যদি এবার এই বান্দরকে হেল্প করেছো তাহলে আমি….
সাইফঃ কি তুই..? কি করবি..?

শার্লিন গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালো। আসলেই সে কি করবে..?
শার্লিনঃ তোর সেই ঝামেলায় আগুনে ঘি ঢেলে দিবো।
সাইফঃ ডাইনী একটা!!
শার্লিনঃ কি বললি সাইকেলের বাচ্চা!!..?
সাইফঃ আমার নামের কি অবস্থা!

তিতিরঃ কি হয়েছে আবার তোর..?
সাইফঃ তুই তো জানিস আমার একটা টিউশন ভালো করে দুই মাস ও টিকে না।
শার্লিনঃ টিকবে কিভাবে টিউশন করাতে তো যাসনা প্রেমের ক্লাস করাতে যাস।
সাইফঃ শালিকের বাচ্চা মুখ বন্ধ রাখ বেশি পকপক করবি না। মেয়েরা যদি আমার প্রেমে পড়ে যায় আমি কি করবো।
শার্লিনঃ ধলা বিলাই, মেয়েদের রুচির কি একটা অবস্থা!!
সাইফেঃ তোর থেকে ভালো আছে।
শার্লিনঃ ভালো হলে গলায় ঝুলিয়ে রাখ আমাদের থেকে বার বার হেল্প কেনো চাস!!
সাইফঃ তুই এবার চুপ কর বইন, আমার ভুল হইছে।

শার্লিন মুখ ভেঙচি কেটে সামনে তাকালো।
সামনে গাড়িটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে শার্লিন বলে উঠলো, ‘ আরে আমার এক্স ক্রাশ এখানে কি করে..?! ‘
শার্লিনের কথা শুনে তিতির, সাইফও গাড়ির দিকে তাকালো।

গাড়ি থেকে ফারাজ আর ইভা নেমে আসলো।

শার্লিন চোখ ছোটো ছোট করে তাকিয়ে সাইফের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,’ এই বেডা এই মাইয়ার লগে কি করে..!!..?’

সাইফ শার্লিনের হাত সরিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ গিয়ে ওই মেয়েকে জিজ্ঞেস কর আমার হাত কেনো ভাঙতাছস।’

তিতিরঃ দেখে তো মনে হচ্ছে স্যারের গার্লফ্রেন্ড। ওয়েট আজকে আমি এই মেয়েকে অফিসেও দেখেছি।
শার্লিনঃ এই মেয়ে কি অফিসে জব করে..?
তিতিরঃ না।
সাইফ শার্লিন কে জ্বালানোর জন্য বলে উঠলো, ‘ এটা স্যারের গার্লফ্রেন্ড। ‘
শার্লিনের মনটা ভেঙে খানখান হয়ে গেলো। সেই প্রথম দেখা থেকে সে ফারাজের উপর ক্রাশ খেয়েছে উঁহু এটাকে ক্রাশ বলে না সে ভীষণ ভাবে দূর্বল হয়েও পড়েছে ফারাজের প্রতি যদিও সে এটা শিকার করে না মুখে। ফারাজকে দেখার পর সে আর কোনো ছেলের উপর ক্রাশ খায়নি, কোনো ছেলেকে ভালো লাগেনি। মুরতাসিম কে ভালোলেগেছে ফারাজ ভেবে। আর আজ জানতে পারলো ফারাজের গার্লফ্রেন্ড আছে! ভালোবাসা বুঝার আগেই মনটা ভেঙে গেলো।

ফারাজকে জোর করে নিয়ে এসেছে ইভা। আজ ইভার জন্মদিন তাই ফারাজ নিষেধ ও করতে পারেনি। ভবিষ্যত ভাবি নিষেধ করে কিভাবে..!

ইভা ফুচকার দোকানে গিয়ে দুই প্লেট ফুচকা দিতে বললো৷

ফারাজ তিতির, সাইফ, শার্লিন কে দেখে খুশি হলো। যাক এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোরিং হওয়া লাগবে না।

ওরাও খুব সুন্দর ব্যাবহার করলো স্যারের সাথে । কিন্তু শার্লিন এক বারও তাকায়নি কোনো কথাও বলেনি। ফারাজ বার কয়েক শার্লিনের দিকে তাকালো। এই বাঁচাল মেয়ের আজ আবার কি হলো..? এতো চুপচাপ থাকার মেয়ে না। ক্লাসে একটা পড়া বুঝার পড়েও ফারাজকে বিরক্ত করার জন্য বার বার জিজ্ঞেস করবে।ফারাজ বুঝেও কিছু বলে না। ভার্সিটির প্রথম প্রথম তো বিভিন্ন বাহানা খুঁজতো ফারাজের সাথে একটু কথা বলার জন্য৷ এখনো থেমে নেই সব সময় ফারাজকে ফলো করে শার্লিন আর এইগুলো সব ফারাজ খেয়াল করে। এইসব ভেবে ফারাজ আবার তাকালো শার্লিনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে শার্লিন। এই মেয়ের কি মন ভালো না.? আবার মন বলে উঠলো “শয়তানের কখনো মন খারাপ হয় না” নিজের ভাবনায় নিজেই হেঁসে উঠলো।

সাইফ তিতিরকে ইশারায় ওদের দিকে তাকাতে বললো। তিতির চোখ রাঙ্গিয়ে সাইফের দিকে তাকাতে শব্দ বিহীন দাঁত বের করে হেঁসে তাকিয়ে রইলো সাইফ।সাইফ খুব ভালো করেই জানে এই শার্লিন ফারাজ স্যার বলতেই পাগল আজ সাথে গার্লফ্রেন্ড এখনো যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়নি এটাই অনেক।

ইভা ওদের কারো সাথে কথা বললো না। ফারাজও ইচ্ছে করে পরিচয় করায়নি।

ফারাজ ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতেই শার্লিন রেগে বলে উঠলো, ‘ দেখলি মেয়েটা কিভাবে দাঁত বের করে হেঁসে হেঁসে কথা বললো। মন তো চায় দাঁত গুলো ভেঙে দেই।’

সাইফঃ শালু আমার মনে হয় আজ প্রথম মেয়েটা দাঁত ব্রাশ করেছে তাও ক্লোজ আপ দিয়ে এবার সুন্দর একটা রোমান্টিক জায়গায় যাবে দুইজন তারপর মেয়েটা স্যারকে বলবে কাছে এসো কাছে এসো….. কাছে আসো না…তারপর স্যার আস্তে আস্তে কাছে আসবে তারপর..
আর কিছু বলার আগেই তিতির ঠাসসস করে সাইফের পিঠে থাপ্পড় বসালো।
সাইফ চুপ করে যেতেই শার্লিন হেঁসে বললো, ‘ তাতে আমাদের কি স্যার যার সাথে ইচ্ছে দরকার হলে আজ বাসর করুক চল আমরা মন খুলে ফুচকা খাই। ‘
সাইফঃ তুই তো আমার থেকেও ফাস্ট শালু বাসর পর্যন্ত চলে গেছিস।আরও খাবি এটা পেট নাকি অন্য কিছু!!

শার্লিন কিছু না বলে ফুচকা খাওয়াই মন দিলো৷ উপরে যতোই ভালো থাকার চেষ্টা ভেতরে তো হৃদয় পুড়ছে। এক তরফা ভালোবাসা ভীষণ পুড়ায়।

সাইফঃ হাঁটতে বসতে ছেলেদের উপর ক্রাশ খাওয়া মেয়েগুলোও আজ কাল এক পুরুষে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার তুমি এখনো দেখাই দিলা না। শুধু একবার দেখা দাও তারপর ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলবো এতো দিন কোথায় ছিলে..?’

তিতির সাইফের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলে উঠলো ” পাবনায়”

__________

সকাল ৭টায় তিতির দাঁড়িয়ে আছে একটা ভাঙ্গা দুই তালা বাড়ির সামনে।

” এই কিপ্টে লোক কি আর কোনো জায়গা পায়নি এমন ভূতুড়ে জায়গাই পেলো!! আশ্চর্য আমিও এই লোকের কথায় এখান অব্দিচলে আসলাম!!

অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে কয়েক বার কল দিলো নাম্বার বন্ধ। কিছু সময় যেতেই তিন চারটা ছেলে তিতিরকে ঘিরে ধরলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এইলোক গুলো সুবিধার নয়।

তিতির এক হাতে ব্যাগটা শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়ালো।

ছেলে গুলো একটা আরেকটার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তিতির পাশে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেটে টান দিলো আরেকটা হাতে পিস্তল নিয়ে তিতিরের দিকে এগিয়ে গেলো। বাকি গুলো একটা আরেকটার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।

________

তিতির অফিসে এসে চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগলো।

একটা মেয়ে এসে দাঁড়ালো তিতিরের পাশে।

তিতির একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো৷

~ আমি দিশা তুমি কি নতুন জয়েন করেছো..?
তিতিরঃ হুম।
~ আসলে আমি ছুটিতে ছিলাম তাই জানতাম না। তোমার ওড়নায় কি হয়েছে..?
তিতির ওড়নার দিকে তাকালো অনেকটা ছিঁড়ে গেছে সাথে কাপড়ে ময়লা লেগে আছে।
তিতিরঃ তেমন কিছু না আসার সময় রিক্সায় লেগে ছিঁড়ে গেছে।
দিশা হয়তো কথাটা বিশ্বাস করেনি তাও হেঁসে বললো, ‘ ওহ্হ আচ্ছা। আমি দিশা মনি তুমি..?’
তিতিরের খুবি বিরক্ত লাগছে এখন কথা বলতে তাও মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ আমি তিতির।’

দিশাঃ আচ্ছা এখন আসি পড়ে আবার কথা হবে৷

মুরতাসিম অফিসে এসে যাওয়ার সময় একবার তিতিরের দিকে তাকালো। প্রথমেই চোখ পরলো তিতিরের হাতের দিকে অনেকটা কেটে রক্ত শুকিয়ে আছে৷ ওড়না ছিঁড়ে আছে সাথে কাপড়ের অবস্থাও ঠিক নেই। ‘

মুরতাসিম ক্যাবিনে এসে চুপচাপ বসলো। মোবাইল বের করে কাউকে কল দিলো।
~ জ্বি বস বলুন।
মুরতাসিমঃ গ্রামের লোক কি বললো..?
~ বস এটাই সেই মেয়ে।

মুরতাসিম কল কেটে মোবাইল দূরে রাখলো মুরতাসিমের ক্যাবিন থেকে তিতিরকে দেখা যায় সে তিতিরের দিকে তাকালো। কিছু একটা ভেবে রহস্যময়ী হাসি দিয়ে তিতিরকে ডাকলো।

তিতিরঃ আসবো স্যার.??
মুরতাসিমঃ আসুন।
তিতির ফাইল গুলো মুরতাসিমের সামনে দিয়ে বেরিয়ে আসতে নিলেই মুরতাসিম বলে উঠলো, ‘ আমি কিন্তু যেতে বলিনি!!…’
তিতির থেমে যায়।
মুরতাসিম তিতিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তিলোত্তমা তিতির, এক এক করে তিতিরের সব পরিচয় বলে লাস্ট নাটকিয় ভঙ্গিতে বললো এখনো সিঙ্গেল!!… ‘
তিতিরের বুক কেঁপে উঠল। এই একটা সিঙ্গেল শব্দ বার বার মনে করিয়ে দেয় সে সিঙ্গেল নয়!!.. ‘

তিতির খুব স্বাভাবিক ভাবে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনি কি এইগুলো মুখস্থ করছেন..?!’
মুরতাসিম হেঁসে বললো, ‘ আপনার কাপড়ের এই অবস্থা কেনো..??’

তিতির নিজের দিকে তাকিয়ে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে