বিষাক্ত প্রেম পর্ব-১৮

0
831

#বিষাক্ত_প্রেম
#পর্ব_১৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সকালের মিষ্টি বাতাস নেওয়ার জন্য নামাজ পড়ে তিতির গিয়ে দাঁড়ালো বারান্দায়।
কেটে গেছে কতো গুলো দিন। শার্লিনের বিয়ের আজ ১৫দিন চলে৷
ওই দিনের পর ইভাকে আর দেখেনি তিতির প্রায় শার্লিন আর হালিমা চৌধুরী কে দেখত যাওয়া হয় ওই বাড়িতে।

মুরতাসিমের কল আসাতে রুমে আসলো তিতির বেশ অবাক হলো এতো সকালে মুরতাসিম কেনো কল দিয়েছে..!?

তিতির কল ধরতেই মুরতাসিম বলে উঠলো, ‘ এই মেয়ে কল রিসিভ করতে এতো সময় লাগে..!!?’
তিতিরঃ এতো সকালে আপনার কল..!
মুরতাসিমঃ আমার বউকে আমি যখন ইচ্ছে তখন কল দিবো। লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো তিতির।মুরতাসিমের মুখে ‘ বউ’ ডাকটা বুকের ধুকপুক বাড়িয়ে দিলো। অন্য রকম এক ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো হৃদয়।

_________________

ফারাজ রেগে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দুই ঘন্টা আগে শার্লিন ওয়াশরুমে ঢুকেছে এখনো বের হওয়ার কোনো খবর নেই৷ এই কয়দিনে ফারাজ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বিয়ে করা মানে সাথে সাথে নিজের জীবন জলে ভাসিয়ে দেওয়া। যেই মেয়ে আগে একটা ধমক দিলে ভয়ে কেঁপে উঠতো আজ তাকে ধমক তো দূর চোখ রাঙিয়ে তাকালে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দেয়। সারাক্ষণ কিছু না বলতেই রেগে ধমকের সুরে কথা বলে।

প্রায় তিন ঘন্টা পর শার্লিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফারাজের দিকে তাকিয়ে ঘা জ্বালানো হাসি দিয়ে নিজের মোবাইল নিতে গেলে ফারাজ শার্লিনের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ সমস্যা কি তোমার.?’
শার্লিনঃ আমার আবার কি সমস্যা হবে..?
ফারাজঃ এতোক্ষন কি করেছো..?
শার্লিনঃ গোসল…
ফারাজঃ এতো সকালে!!
শার্লিনঃ আপনার সমস্যা..?
ফারাজ কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
ফারাজঃ ভার্সিটিতে যাচ্ছো না কেনো.?
শার্লিনঃ আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ভার্সিটি গিয়ে আর কি করবো আমি।
ফারাজঃ বোকার মতো কথা কেনো বলো! আমি চাই আমার বউ অন্তত পড়াশোনা শেষ করুক।
শার্লিনঃ আপনার আগে বলে নেওয়া প্রয়োজন ছিলো। আমি বিয়ে করে নিয়েছি এখন কিসের পড়াশোনা! আমি এখন স্বামী,শাশুড়ী, শশুর বাড়ির সবার যত্ন নিবো ।
ফারাজ কিছু সময় শার্লিনের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে উঠলো ‘ আচ্ছা ‘

শার্লিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলো।

___

তিতির রেডি হয়ে গেলো মুরতাসিমের সাথে দেখা করতে।
কালো শাড়ি, হাল্কা সাজ,চুল বিনুনি করে এক পাশে রেখে চশমা পরে বেরিয়ে গেলো।

মুরতাসিম একটা নদীর তীরে তিতিরের জন্য অপেক্ষা করছে।

তিতির মুরতাসিমের পাশে দাঁড়ালো..
কিছু সময় এভাবেই কেটে গেলো না তিতির কিছু বললো আর না মুরতাসিম।

কিন্তু সময় যেতেই নিরবতা ভেঙে মুরতাসিম তিতিরের হাতটা আলতো করে ধরলো।
তিতির কিছু না বলে মুরতাসিমের দিকে তাকাতেই মুরতাসিম বলে উঠলো, ‘ আমি অন্য প্রেমিকদের মতো বলতে পারি না। আমি আমার মতো করে বলতে চাই। তুমি কি আমাকে আর একটা সুযোগ দিবে..? আমার ভুল গুলো শুধরে আমি তোমাকে আপন করে নিতে চাইছি তিতির। সব ভুলে কি আবার এক হওয়া যায় না..? তুমি কি আমার হয়ে থাকবে..? সারাজীবনের জন্য!

তিতির মুচকি হেঁসে মুরতাসিমের হাতটা শক্ত করে ধরে ওর দিকে তাকালো।

মুরতাসিম হয়তো বুঝে গেলো তাও তিতিরের মুখ থেকে শুনার জন্য তাকিয়ে রইলো।

তিতিরঃ আপনি কি আমার প্রিয় অসুখ হবেন.? যাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকা মূল্যহীন।যাকে হারালে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলবো। বেঁচে থাকার কারন হারিয়ে ফেলবো। আপনি কি আমাকে সব সময় আপনার বুকে রাখবেন হাজার বাঁধা আসলেও এই হাত ছেড়ে দিয়েন না আমি বাঁচতে পারবো না। সেই প্রথম গ্রামে দেখায় আমি আপনার প্রেমে পড়ে ছিলাম সে কি মুগ্ধ কর অনুভূতি। প্রতি দিন আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম এই বুঝি আপনি আসলেন। আমি আমার অতীত ভুলে যেতে চাই। আমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ আপনার সাথে কাটাতে চাই।

মুরতাসিম খুশিতে তিতিরকে জড়িয়ে ধরলো।

সারাদিন আজ তিতির আর মুরতাসিম বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলো। আজকের দিনটা হয়তো ওদের জীবনের সব চেয়ে সুন্দর আর আনন্দের দিন ছিলো৷

সন্ধ্যায় বাসায় আসার পথে তিতির সাইফকে একটা মেয়ের সাথে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো৷
একবার ভাবলো ফুচকার দোকানে গিয়ে হাতেনাতে ধরবে তলে তলে এতো দূর। পরে মুরতাসিমের দিকে তাকিয়ে মোবাইল বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। আর সাথে সাথে সাইফের কাছে পাঠিয়ে ছিলো।

তিতির বাসায় আসতেই আমেনা বেগম হেঁসে ওর সামনে এসে বললো, ‘ তোর সাথে কথা আছে ফ্রেশ হয়ে আয়।’
তিতির আচ্ছা বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

শার্লিন কল দিয়ে আমেনা বেগমের সাথে কথা বলে হালিমা চৌধুরীর রুমে গেলো।

হালিমা চৌধুরী শার্লিনকে দেখে হেঁসে কাছে ডাকলো।

শার্লিন শাশুড়ীর কাছে গিয়ে এক এক করে সারাদিনের ঘটনা বলতে শুরু করলো সাথে ফারাজের নামে এক ঝুরি অভিযোগ নিয়ে বসলো।

ফারাজ সকালে কয়েকদিনের জন্য বাসার সব কাজের লোকদের ছুটি দিয়ে দিলো। সেই জন্য পুরো বাড়ির কাজ একাই করতে হচ্ছে সাথে রান্না তো আছেই। বেচারি শার্লিনের অবস্থা খুবি খারাপ করে ছেড়েছে একদিনে ফারাজ। আর এই গুলোই বলছে শাশুড়ীর কাছে।
হালিমা চৌধুরী শার্লিনের মাথায় হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ আজ ফারাজ বাসায় আসুক আমি ওকে ইচ্ছে মতো বকে দিবো।’
শার্লিন খুশি হয়ে শাশুড়ীর দিকে তাকালো। এতো ভালো শাশুড়ী কয় জনের ভাগ্যে মিলে।

তিতির ফ্রেশ হয়ে আসতেই আমেনা বেগম তিতিরকে উনার নিজের সামনে বসিয়ে নিজের কিছু গহনা আর একটা শাড়ি দিলো৷
তিতির বেশ অবাক হলো৷
এই গহনা আর শাড়িটা একদিন শার্লিন ওকে দেখিয়ে ছিলো আর বলে ছিলো,’ এই গুলো ওদের বংশের অনেক পুরোনো গহনা,শাড়ি। যখন এই বংশের ছেলেদের জন্য বউ ঠিক করা হয় তখন বউকে এই গুলো দিয়ে আনা হয় আবার এই গহনা যত্ন করে রেখে দেওয়া হয় নিজের ছেলের বউয়ের জন্য।

আমেনা বেগম তিতিরকে একটা বালা দিয়ে বললো এটা পড় কেমন লাগে দেখি।
তিতিরঃ এইগুলো তো!!
আমেনা বেগম হেঁসে বললো,’ আমি এই গুলোর দায়িত্ব তোর হাতে দিতে চাই। ‘

তিতির কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেললো।বুকের ভেতরে ভয়ে চুপসে গেলো। কি বলবে এখন..?
আমেনা বেগমঃ অবাক হয়েছিস..? আমি জানি আমার ছেলের জন্য যদি পারফেক্ট কোনো মেয়ে থেকে থাকে সেটা তুই। আমার ছেলেটা তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। বোকাটা তোকে বলতে পারে না। তুই আমার ছেলের বউ না আমার আরেক মেয়ে হয়ে থাকবি।

তিতির কিছু না বলে একটু হাসার চেষ্টা করলো।
আমেনা বেগম মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে। কিভাবেমায়ের আসনে বসানো এই মায়াবী মহিলাটিকে ফিরিয়ে দিবে তিতির!! বুক ভার হয়ে আসলো।
এক ছুটে চলে আসলো নিজের রুমে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে