বিচ্ছেদের পরেও ভালোবাসি পর্ব-০২

0
1130

#বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️
পর্ব ০২
#লেখনিতেঃনুসরাত

“হু!”

“কিন্তু এত বছর পর হঠাৎ তোর সামনে কিভাবে?”

তারপর মায়া অহনাকে সবকিছু খুলে বলে।সবকিছু শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহনা।আর বলতে থাকে,

“তুই যথেষ্ট স্ট্রং হয়েছিস মায়ু।আর এখন তোর পিছুটান রাখার প্রয়োজন নেই।ভুলে যা আজ তুই তোর প্রাক্তনকে….” বলতে না দিয়ে মায়া ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“প্লিজ অহু প্রাক্তন বলিস না।খুব কষ্ট হয়।আমি যে ওকে এখনো ভালোবাসি।হ্যা আমি ওকে #বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️” মাথাটা নিচু করে বলে।

“কিন্তু এটা বাস্তবতা মায়ু যে ও এখন তোর প্রাক..” অহনাকে থামিয়ে দেয় মায়া।

“প্লিজ অহু প্লিজ এটা বলিস না।আমার বুক ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়।আমি কখনো ওকে আমার প্রাক্তন মানিনি।সবসময় আমার বর্তমান ভেবে এসেছি।হয়তো ও আমাকে এখন আর ভালোবাসেনা।হয়তো আমাকে ভুলেও গেছে কিন্তু আমি ওকে ভুলতে পারিনি।ভীষণ ভালোবাসি আমি আমার আরফুকে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।এখন ওর কথা বাদ দে চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি ভালো লাগবে তোর”

“বাসায় থাকনা আমার সাথে প্লিজ”

“বার বার প্লিজ বলছিস কেনো হারামি!আমার সাথে ফর্মালিটি করিস?আমিতো আছি ই তোর পাশে”

“হুম।জানিস ও এটা জানতো যে ঐ রেস্টুরেন্টে ই আমাদের পরিচয় হয়।আমাদের প্রথম দেখা।আমাদের প্রথম ভালোবাসি বলা আমাদের প্রতিটা স্পেশাল মুহুর্ত ঐ রেস্টুরেন্টেই কাটিয়েছি আমরা আর ও তাই আমাকে বলেছেও বিচ্ছেদ টাও তাই এই রেস্টুরেন্টেই এনে করেছে!” চোখে পানি টলমল করছে।

“একদম কাদবিনা।এই কথা আমাকে বহুবার শুনিয়েছিস।ভুলে যা না ইয়ার প্লিজ”

“চাইলেই কি ভুলা যায়?”

“হ্যা যায়।আর না গেলেও চেষ্টা তো করা যায়।কিন্তু তুই সেই চেষ্টা টুকুও করিস না” ধমকের সুরে বলে অহনা।

“হুম।আমার জন্য কেনো তুই তোর লাইফটাকে এভাবে রেখেছিস বল তো?কেনো তুই রিশান ভাইয়াকে…” ধমক দিয়ে মায়াকে থামিয়ে অহনা বলে,

“চুপ।একদম ওর নাম নিবিনা।ভুলে গেছিস?আরাফও তোর জন্য প্রথম প্রথম খুব পাগলামি করেছে।তোকে প্রথম দেখার পর পাগলপ্রায় হয়ে তোকে খুজেছে।খুব পাগলামি করেছে তোর জন্য।কিন্তু শেষে কি হলো?সেইতো ছেড়েই চলে গেলো তাইনা?সব ছেলেরাই এক।আমি আমার আরও বান্ধুবীদের দেখেছি। ওদের এভাবেই একা করে দিয়ে চলে গিয়েছে।আমি পারিনা কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে।আর আমার বেস্টু তুই তোকে ঐ আরাফ জাস্ট ভেঙে দিয়েছে মায়ু!”

“সব ছেলে এক হয়না অহু।এই যেমন আমাদের বাবা ভাইয়াকে দেখ”

“এসব উলটা পালটা উদাহরণ দিস না মায়ু।বাবা ভাইয়া বাদে সবাই ই কষ্ট দেয়।কোনো গ্যারান্টি আছে বাবা কখনো কারো সাথে এমন করেনি?আছে কোনো গ্যারান্টি তোর কাছে ভাইয়া কখনো করবেনা? বল মায়ু বল!” চিল্লিয়ে বলে অহনা।

“তুই চিল্লাচ্ছিস কেনো।সবাই এসে পড়বে।তুই পাগল হয়ে গেছিস।তুই বিশ্বাস জিনিস টা নিজের মধ্যে থেকে উঠিয়ে ফেলেছিস।”

“দেখ এসব আমি আর শুনতে পারবোনা।বিশ্বাস করিনা মানে করিনা ব্যাস!”

“আচ্ছা ঠিক আছে”

“আর ঐ আরাফ…” আবার ও থামিয়ে দেয় মায়া ওকে।

“কি বারবার আরাফ আরাফ লাগিয়েছিস?ভাইয়া বলা যায়না?”

“ও আচ্ছা তোর জ্বলেরে?কই তখন তো তুই নিজেই ওকে ভাইয়া বলে এসেছিস।আমি না বললেই কি?”

“ঐটাতো ওকে শুনানোর জন্য বলেছিলাম”

“পাগলি”

ওর মুড ভালো করে দিয়ে অহনা ওর বাসায় চলে যায়।

পরেরদিন সকালে নাস্তা করতে ডাইনীং টেবিলে সবাই বসে নাস্তা করছে।মায়ার নাস্তা প্রায় শেষ।কলেজে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে মায়া।

“সাবধানে যাস বোনু” মায়ার ভাই মায়ান বলে।

“ঠিক আছে ভাইয়ু” স্মিত হেসে বলে মায়া।

মায়া চলে যায়। ডাইনীং টেবিলে পিনপতন নীরবতা। এর ই মাঝে মায়ান ওর বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,

“দেখোনা বাবা আমাদের মায়াটার মায়াবী মুখ কেমন মলিন হয়ে গেছে।হারিয়ে গেছে আমার মায়ুর চঞ্চলতা।৬ টা বছর ধরে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে।প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা।হাসিটাতো দেখাই যায়না অহনা ওর আশেপাশে না থাকলে।আর সেই ১ টা বছর!আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো আমার বোনকে ওভাবে দেখলে!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে মায়ান।

“হ্যা রে অহনা মেয়েটা না আসলে ওর জীবনে হয়তো অন্ধকারেই আমার মেয়েটা থেকে যেতো” নীরবে চোখের জল ফেলে বলেন মায়ার মা।

“আজও আমাদের বললোনা কি হয়েছিলো ওর সাথে” মায়ার বাবা বলেন।

মায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“কিন্তু আমরা জোর ও তো করতে পারিনা।আগে সবসময় আমার সাথে খুনশুটি লেগেই থাকতো।আই মিস মাই পিচ্চি মায়ু!”

“তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি খেয়ে বেরিয়ে পড়ো।আমিও বেরোচ্ছি” মায়ার বাবা টপিক পালটাতে কথাটা বলেন কেনোনা তার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে মেয়ের জন্য আর ঐদিকে উনার স্ত্রী কান্না করছেন যেটা তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

বিকালে মায়া অহনাকে সাথে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসেছে।এই সেম পার্কেই রিশান ও এসেছে অহনার পিছুপিছু।আরেকবার ট্রাই করতে চায় অহনার মন গলানোর।এসে হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে অহনার সামনে হাটুগেরে বসে ভালোবাসার কথাবার্তা বলতে থাকে।মায়া ওদের মাঝে কাবাবের হাড্ডি হতে চায়না বিধায় অন্য সাইডে চলে আসে।আর অহনা বিরক্তির চরম সীমানায় পৌছে গেছে।লোকটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা।

রাগ নিয়েই অহনা ক্ষীপ্ত গলায় বলে,

“দেখুন মি.রিশান আমি কোনো ছেলেকেই বিশ্বাস করিনা।সব ছেলেরাই এক।প্রথমে হাত ধরবে তারপর মাঝ পথে এসে হাত ছেড়ে দিবে এটাই তাদের কাজ!”

“সবাই ছেড়ে যায়না আপু।তবে কিছু কিছু মানুষের হয়তো বাধ্য হয়ে হাতটা ছেড়ে যায় কিন্তু ভুলতে পারেনা তার ভালোবাসার মানুষটিকে” একটি ছেলে বলে উঠে ওদের মাঝখানে।

“হ্যা অহনা। ভাইটি ঠিক বলছে”

“কি এমন বাধ্যতা যে ভালোবেসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঝ পথে ফেলে চলে যেতে হয়?”

“থাকে কিছু বাধ্যতা।যা সবাইকে চাইলেই বুঝানো যায়না।তাই আমি বলবো যে আছে তার কদর করতে শিখুন নয়তো হারিয়ে গেলে কেদেও ফিরে পাবেন না।”

“আমার বেস্টুও ঠিক এইভাবেই বিশ্বাস করে ঠকেছিলো।তাই আমি ঠকতে চাচ্ছিনা ভাইয়া।আর মি.রিশান আপনি আমার পিছু ছেড়ে দিন এটাই আপনার জন্য ভালো হবে।” বলেই চলে যায় মায়ার কাছে।

একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে অফিসে চলে যায় রিশান।মেয়েটা কিছুতেই ওকে বিশ্বাস করেনা।ভালোবাসা তো দূরে থাক!হতাশ রিশান ওকে বুঝাতে বুঝাতে তবুও হাল ছাড়বেনা।শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবে।

আরাফ বসে আছে পার্কের এক কোনায় ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আলাকের সাথে।আকাশের পানে চেয়ে আছে আরাফ।আলাক ওর কাধে হাত রাখতেই ধ্যান ভাঙে আরাফের।

এতক্ষণ ভাবছিলো ওদের প্রথম দেখার কথা।সেই রেস্টুরেন্টে মায়া এসেছিলো ওর ভাইয়ের সাথে আর ওর কিছু কাজিনের সাথে। পরনে ছিলো নীল শাড়ি আর খোলা চুল।কোনো সাজ নেই।সাজহীন ই আরাফের নজর কেরে নেয় মেয়েটি।
আরাফ এসেছিলো ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ওদের ট্রিট দিতে আর মায়া এসেছিলো ওর ভাই মায়ানের থেকে ট্রিট নিতে।মায়াদের টেবিলের পাশের টেবিলেই আরাফরা বসেছিলো।মায়া বার্গারে সস মাখাতে মাখাতে খাচ্ছিলো আর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসায় সবার দিকে সসের বোতলে চাপ দিয়ে ওদের কাপড়ে ভরাচ্ছিলো।ভুলবশত নাচতে নাচতে চাপটা পাশের টেবিলে দিয়ে ফেলে আর আরাফের শার্ট পুরো নষ্ট হয়ে যায়।রেগে গিয়ে সামনে তাকিয়ে আরাফ বলতে থাকে,

“হোয়াট দ্য…. ” ব্যাস আর বলতে পারলোনা।মেয়েটার চোখ খিচে বন্ধ করা অবস্থায় বারবার বলা “সরি সরি। সরি সরি” ওর কানে বাজছিলো আর ওর চেহেরার দিকে এক ধ্যানে চেয়েছিলো।
এই সেই সময় যখন আরাফ মারাত্মকভাবে প্রেমে পড়ে। মায়ার মায়াতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।তারপর মায়ান এসে সরি টরি বলে ওদের নিয়ে যায়।অনেক খোজ করে পাগলপ্রায় হয়ে মায়াকে খুজে ওর জন্য পাগলামি করে ওকে নিজেকে ভালোবাসাতে পাগল করে দেয়।আর ঠিক ই মায়া ওর ভালোবাসায় পাগল হয়ে যায়।আর ওর চাইতেও ডাবল পাগলামি করতে শুরু করে দেয়।আরাফ ছাড়া আর কিচ্ছু বুঝেনা।পড়াশুনা,খাওয়া দাওয়া সব বাদ দিয়ে ওর সাথে সময় কাটানো শুরু করে।ফ্রেন্ডদের ও ভুলে যায়।ফ্যামিলির সবাইকেও ভুলতে শুরু করে।আর আরাফ এসব কিছুর জন্যই ওকে ছাড়তে বাধ্য হয়।ওর আগের লাইফ ওকে দিতে নিজের ভালোবাসাকে দমিয়ে রেখে কঠোর হতে হয় ওর প্রিয়তমার জন্য।এই কথাটি কেবল আলাক ই জানে।আর কেউ জানেনা।

“কি ভাবছিস ভাই?” আলাক বলে।

“ভাবছি জীবন টা পালটে গেলো।যেই মায়ার মায়াতে আমি জড়িয়ে গিয়েছিলাম তাকে তার লাইফ ব্যাক দিতে গিয়ে নিজেই ওকে ভেঙে দিয়েছি হাজারো টুকরায়।মেয়েটা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ঠিকি করেছে।কিন্তু আগের লাইফে ব্যাক আসতে পারেনি।ওর চাঞ্চল্য ভাব ওর সেই মায়াবী মুখ মলিন হয়ে গেছে একদম বদলে গেছে আমার মায়াপরী”

“তাহলে কি তুই আর ওকে ভালোবাসিস না?”

“পাগল হয়েছিস?”

“তাহলে?”

“আমি আমার মায়াপরীকে #বিচ্ছেদের_পরেও_ভালোবাসি❤️ আর আজীবন বেসে যাবো।” চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে বলে।

To be continued…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে