বসন্ত এসে গেছে পর্ব–১৫+১৬+১৭

0
1149

গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
লেখাঃনুশরাত জেরিন
১৫.১৬.১৭
পর্বঃ১৫

,

,

অপু ধীরেসুস্থে বৃদ্ধাকে যত্ন সহকারে খাওয়ায়।
একটা রিকশা ডেকে বৃদ্ধাকে তার বাড়িতে পৌছে দিতে বলে।
রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বৃদ্ধার হাতেও কিছু টাকা গুঁজে দেয় অপু।
তার হাতে এখন বেশি টাকা নেই।
আরমানের খানের টাকায় সে পড়াশোনা করছে,খাচ্ছে, ঘুরছে।অপু নিতে চায়না,আরমান খান জোর করে অপুকে দেয়।
সেই টাকা অপু বাড়তি খরচ করেনা।সাথে করে বেশি নিয়ে ও ঘোরেনা।
এই মুহুর্তে হাতে যা টাকা ছিলো সবটুকুই অপু বৃদ্ধাকে তুলে দেয়।বৃদ্ধা যাওয়ার সময় অপুর মাথায় হাত বুলায়।

—-

অপু বাড়তে ঢুকতে না ঢুকতে রুজি বেগম দৌড়ে আসে।
তার পেছন পেছন আসে নয়না।
এসে অপুর সামনে দাড়িয়ে হাপায়।
যত যাই হোক,দুজনেরই তো বয়স হয়েছে।
এভাবে দৌড়াদৌড়ি ছুটাছুটি তারা কি করতে পারে?
অপু দরজার সামনে দাড়িয়েই দুজনকে দেখে।
বলে,

—কি হয়েছে খালা?

রুজি আর নয়না একে অপরের দিকে তাকায়।
দুজনার মুখ ভয়ার্ত দেখায়।
অপু কিছুটা শঙ্কিত হয়।
তার মুখের আদলও পরিবর্তন হতে শুরু করে।অজানা আশঙ্কায় তার বুক কাপে।
কিছুটা জোর দিয়ে আবার বলে,

—কথা বলছোনা কেনো তোমরা?কি হয়েছে?

রুজি আমতাআমতা করে বলে,

—না মানে বড় সাহেব….

অপু কথা শেষ হতে দেয়না,তার আগেই বলে,
—কি হয়েছে বাবার?বাবা ঠিক আছে তো?শরীর বেশি খারাপ হয়েছে?কোথায় এখন?কতোটা অসুস্থ?

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে রুজি বেগমের উত্তরের অপেক্ষা করেনা অপু।
ঝড়ের গতিতে আরমান খানের ঘরের দিকে এগোয়।

রুমের সামনে গিয়ে অপু থমকে দাড়ায়।
আরমান খানের পাশে নোমান বসে আছে।
এক হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে নোমানও তাকায় দরজার দিকে।
দুজনার চোখাচোখি হয়।
অপু যেমন ঝড়ের গতিতে এসেছিলো তেমনি আবার বেরিয়ে যায়।
নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় ধপাস করে বসে অপু।
অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার হাত পা কাপে।
নোমানকে দেখে তার মনে ভয় কাজ করে।
মনে মনে ভাবে,
কেন এসেছেন উনি এখানে?অপুকে মেনে নিতে যে নয় সেটা অপু জানে।তবে?
অপুকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে?নাকি এই সম্পর্কটা থেকে মুক্তি নিতে?
নাকি আরমান খানকে দেখতে?
হ্যা,হ্যা এটাই হতে পারে।
হয়তো তার বাবাকে দেখতেই এসেছে।
অপু হাফ ছাড়ে।

ওয়াড্রব থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।
গোসল সেরে বের হবে সে।
অপু ভাবে আজ আর ঘরের বাইরে সে বের হবেনা।
বলা তো যায়না নোমানের সামনে পরলে যদি অপুকে কিছু বলে বসে?যদি রাগারাগি করে?অপু এখনো এই বাড়িতে আছে বলে যদি বের করে দেয়?

অপু আর ভাবতে পারেনা।শাওয়ার অন করে দাড়িয়ে পরে।
মাথা ঠান্ডা করা দরকার তার।এতো এতো চিন্তা করলে কবে না সে পাগল হয়ে যায়।

গোসল সেরে মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় অপু।
রুজি আর নয়না খালাকে বলে রুমে খাবার পাঠানোর কথা ভাবে।বাইরের সব কাজ আজ ঘরে বসেই সারবে অপু।

রুমে ঢুকে সোজা চলে যায় বেলকনিতে।
টাওয়াল খুলে কিছুক্ষণ চুল ঝেরে রুমে ঢোকে অপু।
বিছানার ওপর চোখ পরতেই আতকে ওঠে। মাথা ঝিমঝিমিয়ে ওঠে তার।
নিশ্বাস আটকে আসে।
বিছানায় নোমান আধশোয়া হয়ে আছে।
অপুকে দেখে নোমান সোজা হয়ে বসে।
কি বলে কথা বলা শুরু করবে বুঝতে পারেনা।
কিছুক্ষণ চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা চুলকায়।
অপুর দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কড়া নজর দেয়।
সাধারন সাদা সুতির সেলোয়ার-কামিজেও যে কাউকে এতোটা স্নিগ্ধ দেখাতে পারে সেটা নোমান ভাবতেও পারেনা।
চুল থেকে টপটপ পানি পরার দৃশ্য দেখে নোমান আরও বিমোহিত হয়।
হার্টবিট দ্রত গতিতে বাড়ে,বুকের ভেতর তোলপাড় হয়।
নোমান হাত নিয়ে বুকের বামপাশে রাখে।
নিজের উপর নিজেই অবাক হয়।
হাজার হাজার সুন্দরী ললনাদের দেখেছে নোমান,খুব কাছ থেকে দেখেছে।
কিন্তু কই এমন তো হয়নি কোনদিন?
তবে আজ কেনো হচ্ছে?
এমন অনুভূতির সাথে নোমান পরিচিত নয়।
উঠে দাড়িয়ে অপুর দিকে তাকায় সে।
কাছে এগিয়ে আসে হেঁটে।
একেবারে সামনাসামনি এসে দাড়ায়।
অপু ততক্ষণে জমে গেছে ভয়ে।
নোমানের সম্পর্কে এখন তার মনে শুধু ভয় কাজ করে।
নোমানের চোখের দিকে তাকানোর সাহস হয়না অপুর।
মনে মনে কঠিন কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার কথা ভেবে চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে থাকে।
ভাবে এই বুঝি খাবে থাপ্পড়।

নোমান অপুর ভীতি চাহনি দেখে হাসে।
আবার অবাক হয়।সে হাসলো?এই মেয়েটার জন্য?
পরক্ষনেই অপুর মুখের দিকে তাকায়।
কেমন বাচ্চাদের মতো ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে সে।
ভালো মতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে নোমান।
ঘন পাপড়িযুগল,গোলাপী কম্পিত ঠোঁট, বা গালে কিউট একটা তিল।
সবকিছু নোমানের কাছে অসাধারণ লাগে।
মনে হয় আগে কেন খেয়াল করেনি নোমান?আগে কেন বোঝেনি?তার ঘরে একটা পরীর বসবাস আছে।আগে তো দেখেনি?
আগে কেনো উপলব্ধি করেনি এ অনুভূতি? নাকি উপলব্ধি করতে চায়নি?

—-
অপু কিছুসময় থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।
নড়ার শক্তি পায়না।
কিন্তু সামনে নিরবতা দেখে চোখ পিটপিট করে তাকায়।
নোমানকে তার দিকে তীক্ষ্ণভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপুর গলা শুকিয়ে আসে।
শুকনো ঢোক গেলে সে ভয়ে।
দোয়া কালমা পরে বুকে ফু দেয়।
হঠাৎ করেই একটা সাহসী কাজ করে ফেলে অপু।
নোমানে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যা সে।
নোমান হতভম্ব হয়।
কি ঘটেছে তা বোঝার চেষ্টা করে।
বুঝতেই রেগে ফেটে পরে।
কপালের রগ ফুলে ওঠে।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে।
নোমান খানকে ইগনোর করলো এই মেয়ে?নোমান খানকে?
একটু কি গুরুত্ব দিয়েছে কি দেয়নি তাতেই এতো তেজ দেখালো মেয়েটা?
নোমানের রাগী সত্বা আবার ফেরত আসে।
রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে।

,

,
গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
লেখাঃনুশরাত জেরিন
পর্বঃ১৬
,

,
অপু দৌড়ে আরমান খানের রুমে ঢোকে।
রুমে ঢুকে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়।
হাঁপিয়ে গেছে সে।
আরমান খান বিছানায় শুয়ে ছিলেন।
অপুকে দেখে উঠে বসার চেষ্টা করেন।
অপু তা দেখে আরমান খানের কাছে এগিয়ে যায়।
উঠতে বাধা দিয়ে বলে,

—উঠছো কেনো বাবা?

আরমান খান সেকথার উত্তর দেন না।
অপুকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দেন,বলেন,

—নোমানের সাথে তোর দেখা হয়েছিলো মা?

অপু মাথা নিচু করে বলে,

—হ্যা বাবা।

—ও কি তোকে কিছু বলেছে?

অপু ভয়মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।
মনের ভয়গুলো একসাথে উঁকি দিতে লাগে।
বলে,
—কি বলবে বাবা?কিছু বলার কথা?

—না না,সেরকম কিছুনা।মানে তোর সাথে কি খারাপ ব্যবহার করেছে?

অপু মাথা নাড়ায়।
সত্যি তার সাথে আজ খারাপ ব্যবহার করেনি নোমান।কিন্তু কেনো?তবে কি ভাল কিছু হবে?
অপু আবার নিজের মনকে বুঝ দেয় হয়তো নোমান কিছু বলে ওঠার সময় পায়নি।অপু তখন দৌড়ে চলে এলো নয়তো তখনই হয়তো রেগে বোম হয়ে চিৎকার করতো।

পাশের টেবিলে খাবার ঢাকা দেখে অপু শাসনের সুরে বলে,
—খাবার খাওনি কেনো বাবা?এতো অনিয়ম করলে হয়?
আমি কলেজে থাকলে রুজি খালারা তো দেখি তোমার যত্নই নেয়না।শুধু খাবার রেখে গেলেই হলো? খাবার খেয়েছে কিনা দেখবে না?আর তুমিও হয়েছো খুব, কেনো?নিজের যত্ন করতে এতো কার্পণ্য কেনো?
খাবার না খেলে তো আরও অসুস্থ হয়ে পরবে সেকথা বোঝোনা?আর কোনদিন ও যেনো এমন না হয়।

আরমান খান নিঃশব্দে হাসেন।মেয়েটা কেমন মায়েদের মতো শাসন করছে।মায়েরা যেমন ছোট বাচ্চাদের খাবার না খাওয়ার জন্য বকে ঠিক তেমনটি মনে হচ্ছে তার কাছে।

নোমান ততক্ষণে আরমান খানের রুমের দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে।
বাবার সাথে এমন ভাবে কথা বলা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নোমান।তারউপর বাবাও মেয়েটার কথা শুনে হাসছে?কিছু বলছে না?

আরমান খান নোমানকে খেয়াল করে।
বলে ওঠেন,

—ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো নোমান?এদিকে এসো।

অপু নোমানকে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়ায়।রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়,আরমান খান আটকান।বলেন,

—আজ আমাকে খাইয়ে দে মা।

অপু আরমান খানের কথা শুনে একবার নোমানের দিকে তাকায়।মুখের আদল দেখে বোঝার চেষ্টা করে,নোমান রেগে আছে নাকি?
আচ্ছা অপুর মতো মেয়ে যদি নোমান খানের বাবাকে নিজের হাতে খাওয়ায় তাহলে কি নোমান রেগে যাবে?তার কি প্রস্টিজে লাগবে?
যদিও এর আগে অনেকবার অপু আরমান খানকে খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু নোমানের সামনে তো নয়।

অপু ইতস্তত করে।
ভয়ে ভয়ে একটু পর পর আড়চোখে নোমানের দিকে তাকায়।কিন্তু মুখের এক্সপ্রেশন দেখে কিছু বুঝতে পারেনা।
নোমান নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে,অপু আর আরমান খানের কর্মকান্ড দেখছে।

আরমান খান তাড়া দেন।

—কিরে মা আয়।

অপু আবার আরমান খানের পাশে বসে।টেবিল থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ধীরে সুস্থে আরমান খানের মুখের সামনে খাবার ধরে।
আরমান খানও তৃপ্তি করে খায়।
ভাবে,মেয়েটার হাতে জাদু আছে।
পরশপাথরের মতো।ছুয়ে দিলেই সোনা হয়ে যায়।
আরমান খান খেতে খেতে নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

—দাড়িয়ে আছো কেনো নোমান?এই যে এই চেয়ারটায় বসো।

নোমান এগিয়ে আসে।
অপুর পাশে চেয়ার টেনে বসে পরে।
কিছুটা কাছাকাছি বসায় অপুর শরীর থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রান নোমানের নাকে এসে লাগে।
নোমান বিমোহিত হয়।
ভাবে,
এটা কোন পারফিউম হতে পারে?এতোটা মিষ্টি ঘ্রান কোন পারফিউমে আছে?

অপু তাকে ইগনোর করেছিলো বলে যে রাগ মনে পুষে ঘুরছিলো নোমান তা হুট করেই গায়েব হয়ে যায়।
চেয়ার টেনে আরেকটু কাছ ঘেঁষে বসে সে।

অপু নোমানকে তার পাশে বসতে দেখে জড়োসড়ো হয়ে বসে।
ভিতরটা খুব জোরে জোরে ঢিপঢিপ করে।
অপুর মনে হয় এতো জোরে ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে হয়তো সবাই শুনে ফেলবে।
হয়তো হার্টটা বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসবে।

,

,
—–

,

অপু রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়।
আজ সে ক্লাস করবেনা।পিহুর কাছ থেকে কিছু ইম্পরট্যান্ট নোটস নেবে।সেইজন্যই ভার্সিটি যাওয়া।
নয়তো অপু আজ ভার্সিটি যেতোনা।
কেননা আজ আরমান খানকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।
নোমান কাল বলে গেছে সে আজ তার বাবাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবে।
আর আরমান খানতো অপুকে ছাড়া যাবেনা তাই অপুকেও সাথে যেতে হবে।

,

অপু তাড়াহুড়ো করে হাঁটে।ভার্সিটির সামনে পিহুকে দাঁড়াতে বলেছে সে।ওখান থেকেই নোটস নিয়ে আবার বাড়ির পথে রওনা দেবে।
অপু হাটতে হাটতে চারিদিকে একবার ভাল মতো দেখে।
রিকশার র ও দেখা যাচ্ছে না আজ।
এই হচ্ছে মহা ঝামেলা!দরকারের সময় একটা রিকশাও পাওয়া যায়না আর যখন দরকার থাকে না তখন শতো শতো রিকশা লাইন দিয়ে যায়।

বিরক্তিতে অপুর মুখ তেঁতো হয়ে আসে।
পেছোনে হর্ন শুনে অপু পেছন ঘোরে।
একটা বাইক পেছন থেকে বিশ্রীভাবে জোরে জোরে হড়ন বাজাচ্ছে।
চালকের মাথায় হেলমেট থাকার কারনে অপু তার মুখটা দেখতে পাচ্ছে না।
অপু সেদিকে একবার দেখে আবার হাঁটা শুরু করে।
কিন্তু আবার হর্ন বাজে।
অপু তেড়ে আসে।
বলে,

—কি সমস্যা কি আপনার?অসভ্যের মতো হর্ন বাজাচ্ছেন কেনো?
মেয়ে দেখলেই ফাজলামো করতে মনে চায়।
পাবলিক ডেকে এমন ধোলাই দেবোনা।

বাইকে বসা লোকটা তাড়াতাড়ি হেলমেট খুলে ভয় পাওয়া ভঙ্গিতে বলে,

—ওরে বাবা,রুপা তো দেখি রনচন্ডি রুপ নিলে?আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।

অপু রায়হানকে দেখে অবাক চোখে বলে,

—আপনি?

—হু আমি।

—আপনি কেনো পেছন থেকে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছিলেন?

রায়হান বাইক থেকে নেমে দাড়ায়।হেলমেট খুলে বাইকের ওপর রেখে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে।
বলে,

—দেখতে চেয়েছিলাম এভাবে বিরক্ত করলে তোমার কি প্রতিক্রিয়া হয়।

—তো কি দেখলেন?

রায়হান ফাজলামো করে ভয় পাওয়ার অভিনয় করে বলে,

—ও কথা আর বলোনা রুপা,ওতো ভয়ংকর কথা ভাবলেও ভয় পাই।আমি বাচ্চা মানুষ,ভয়ে যদি হিসু করে দেই তখন?

অপু শব্দ করে হেসে ফেলে।
রায়হানও হাসে।
বলে,

—ভার্সিটি যাচ্ছো রুপা?রিকশা তো নেই রাস্তায়।
কিছু মনে না করলে আমার বাইকে ওঠো না পৌঁছে দেই?

অপু ইতস্তত করে।
এভাবে একজনের বাইকে উঠতে তার মন সায় দেয়না।ভয় কাজ করে মনে।
কিন্তু রায়হানের মুখের দিকে তাকালেই ভয় দূরীভূত হয়।
এতো হাসি খুশি প্রানবন্ত মানুষকে এইটুকু বিশ্বাস করাই যায়।
অপু সাতপাঁচ না ভেবে বাইকে উঠে বসে।
দুরত্ব রেখে বসে।
রায়হানের চোখেমুখে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি ঝিলিক দেয়।
,

,
গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
লেখাঃনুশরাত জেরিন
পর্বঃ১৭
,
,
অপুর অসস্থি লাগছে নাকি ভয় লাগছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা সে।
কেমন যেনো অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে তার।

আরমান খানকে ডক্টরের চেকাপ করানোর পর ডক্টর কিছু টেস্ট করতে বলেছেন।
নার্সদের সাথে আরমান খান গেছেন সব টেস্ট করতে।

চেম্বারের বাইরে অপু আর নোমান বসে আছে।
অপু কিছুটা শঙ্কিত হয়ে আছে।
কিছুক্ষণ উশখুশ করতে করতে সে এদিক ওদিক হেটে এসেছে।
আবার চেয়ারে এসে বসেছে।
মুলত সে নোমানের পাশে বসতে চাইছে না।
নোমানকে নিয়ে যে ভয় অপুর মনে দানা বেঁধেছে তা সহজে বের হবার নয়।

নোমান বেশকিছু সময় ধরে অপুর গতিবিধি লক্ষ করছে।
মেয়েটা যেন কেমন ছটফট করছে।
নোমানের পাশে বসতেই চাইছেনা।
বসলেও মাথা নিচু করে গুটিয়ে বসছে।
নোমানের ভাল লাগছেনা।
মেয়েটার সাথে তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
একটু আধটু না, অনেক কথা!
নোমান ইদানীং নিজের কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে, দফায় দফায় অবাক হচ্ছে।
সে তো কখনো বাঁচাল ছিলোনা,খুব গম্ভীর মানুষ সে।দরকার ছাড়া একটা টু শব্দ ও করেনা।
মেপে মেপে কথা বলা যার অভ্যাস সে কিনা আজ কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে পরেছে?
ভাবতেই আরো একদফা অবাক হয় নোমান।

অপুর দিকে তাকিয়ে দেখে অপু খুব মনোযোগ দিয়ে মেঝেতে পা দিয়ে নখ খুটছে।মনে হচ্ছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। আশেপাশে কোন কিছুতেই তার কোন নজর নেই।
নোমান এবার অপুর ওপর বেশ বিরক্ত হলো।
মেয়েটা কেনো দেখছে না নোমানকে?কেন কিছু বলছেনা তাকে?
এতোদিন পর দেখা হয়েছে তবু তার কি কিছুই বলার নেই?যতো যাই হোক নোমান তো তার স্বামী নাকি?
নিজের ভাবনার মাঝেই নোমান চমকায়।
সে স্বামী? পাশে বসা মেয়েটা তার বউ?
সত্যি?

উশখুশ করতে করতে নোমান সতর্কতামূলক কাশি দেয়।
অপু চমকে নোমানের দিকে তাকায়।
নোমান বলে,

—আ,,মানে বলছিলাম যে,
কেমন আছো?

অপু কয়েকশো ভোল্টেজের ঝটকা খায়।
নোমান খান তাকে কেমন আছে জিজ্ঞেস করছে?নোমান খান?
কেন যেন অপুর বিশ্বাস হতে চায়না।মনে হয় সে স্বপ্ন দেখছে।
ডান হাতটা এগিয়ে জোরে এক চিমটি কাটে অপু।
বোঝার চেষ্টা করে এটা স্বপ্ন না সত্যি।
কিন্তু অপুর হাতে ব্যাথা লাগেনা।একটুও না।

নোমান আর্তনাদ করে ওঠে।
অপু হকচকিয়ে সেদিকে তাকায়।
নোমান নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

—পাগল হয়ে গেছো নাকি?চিমটি কাটছো কেনো আমায়?
একটু লাই দিয়েছি আর ওমনি মাথায় চড়ে বসেছো না?ইডিয়ট!

কথাটা বলেই অন্য দিকে হাটা দেয় নোমান।
তার মাথা গরম হয়ে গেছে।
মাথা ঠান্ডা করতে হবে।

অপু নোমানের যাওয়ার পথে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকে।

এরই মাঝে ফোন বেজে ওঠে অপুর।
অপু ছোখ মুছে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে।
অচেনা নাম্বার দেখে কল কেটে দেয়।
আবারও বেজে ওঠে ফোন।
অপু রিসিভ করে সালাম দেয়।
ওপাশ থেকে সালামের উত্তর দিয়ে পিহু বলে ওঠে,

—-অপুর বাচ্চা, আমার ফোন কাটলি কেন?

—আমি কি জানতাম নাকি এটা তোর কল,আমি তো ভেবেছি কে না কে।
এটা তোর নতুন নাম্বার?

—না।

—তাহলে কার নাম্বার?

—রাহুলের নতুন নাম্বার।

অপু উত্তেজিত হয়ে বলে,

—রাহুলের নাম্বার তোর কাছে কেনো?রাহুল ঠিক আছে তো?

পিহু অপুকে আস্বস্থ করে বলে,

—আরে কারও কিছু হয়নি।

—তাহলে?

—আমি আর রাহুল ডেটে এসেছি।

অপু চিৎকার করে বলে ওঠে,

—কিহহহ!

আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই অপুর দিকে তাকিয়ে আছে।অপু তাদের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবলা মার্কা হাসি দেয়।
ফোন কানের কাছে এনে বলে,

—কিভাবে কি হলো?কখন হলো?কিকরে সম্ভব এটা?তোরা তো দুজন দজনার জাত শত্রু।

—এতো প্রশ্নের উত্তর কেমন করে দেবো বলতো?ভার্সিটি আসিস কাল জানাবো।আর হ্যা একটা কথা,আমি হ্যা বলার সাথে সাথেই কিন্তু তোকে জানিয়েছি বুঝলি?

অপু হেসে ফেললো।
একটু আগের খারাপ লাগা মনটা তার এক নিমিষে ভাল হয়ে গেলো।
বললো,

—তো উনি কোথায় এখন?ওটার কাছে ফোন দে,কথা টথা বলি।

পিহু হাসতে হাসতে বললো,

—ও কাল কথা বলবে তোর সাথে, ওর নাকি এখন লজ্জা লাগছে।

অপু শব্দ করে হাসলো।

নোমান ততক্ষণে আবার আগের জায়গা ফিরে এসেছে।
অপুর হাসি মুখের দিকে কিছুক্ষণ মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
রিনিঝিনি হাসির শব্দগুলো বারংবার কানে বাজতে লাগলো।

অপু ফোনে বললো,

—আচ্ছা রাখি এখন।কাল দেখা হবে।

নোমান ভ্রু কুঁচকালো। কার সাথে কাল দেখা হবে বললো অপু?
কার সাথে কথা বলার সময় এভাবে হেসে কুটিকুটি হলো?
কার জন্য মুখের কোনে এমন হাসি লেগে আছে?
নোমানের বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো।
কেমন যেনো একটা জেলাসি জেলাসি ফিল হচ্ছে তার।
কিন্তু কেনো?
নোমান জানে না,জানতে চায়ও না।
শুধু জানে বুকের এই চিনচিন ব্যথাটার উপশম দরকার।

,

,
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে