বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব-০৫

0
1872

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_০৫

–বেমানান এক্স ওয়াইফ কে এতো দেখতে ইচ্ছে করে কেন মিঃ জায়েফ এহমাদ?

দুই হাত বুকে গুজে তার সামনা সামনি দাঁড়িয়ে এক নাগাড়ে বললাম কথা গুলো।
জায়েফ কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে বলল,,,

–আরে কিসের এক্স ওয়াইফ?আমি তো আমার জুঁইফুল কে একবার দেখার জন্য এসেছি।৮০ ঘন্টার বেশি হয়ে গিয়েছে জুইঁফুল কে দেখি না।আসলে মিনিট সেকেন্ড গুনে রাখিনি।তাই এক্সাক্ট টাইম টা বলতে পারছি না।সরি!(জায়েফ)

দাঁত খিঁচিয়ে আমি ধীর কন্ঠে বলে উঠলাম,,,

–সমস্যা টা কি আপনার?কি? কি চাই আর?এটাই দেখতে চলে এসেছেন তো যে গ্রামে আবার আমি ভুল করে হাসি খুশি আছি কিনা?

–রাইট।হুট করে গ্রামে আসলে তাই দেখতে আসলাম কোনো প্রবলেম হলো কিনা?কিন্তু তুমি তো দেখি পড়াশোনা বাদ দিয়ে সামার ভ্যাকেশনে চলে এসেছো।এখন যখন ভালোই আছো তাহলে আসো একটা বিগ হাগ দিয়ে যাও।কাম!!!(জায়েফ)

তার এমন আচরণে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।কিন্তু মুহূর্তেই তার করা কৃতকর্ম গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো।উনি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে আসতে আমাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে ফেলেছেন।হাত বাড়ালেই তাকে আমি ছুঁয়ে দিতে পারবো।মনের সব রাগ ক্ষোভকে এক করে শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে তাকে দু’হাতে স্ব জোড়ে ধাক্কা দিলাম।আমার এমন ভাবে ধাক্কাটা নিতে না পেরে উনি পিছিয়ে গিয়ে তার গাড়ির সাথে জোড়েসোড়েই একটা ধাক্কা খেলেন।আমার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছেন উনি।এমন একটা ধাক্কা তার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আবার এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আমি কিছুটা পিছিয়ে তার আর আমার দূরত্ব আরেকটু বাড়িয়ে নিলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে স্মিতহেসে বললেন,,,

–আমি যদি তোমাকে সরি বলি তাহলে ব্যাপারটা জুতো মেরে গরু দানের মতো হয়ে যাবে।আমি তোমাকে সরি বলতে আসিনি। আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।ক্ষমা করবে আমায় জুঁইফুল? (জায়েফ)

–ক্ষমা চাওয়া শেষ?এবার আসতে পারেন।(আমি)

–ওকে চলো।(জায়েফ)

কথা টা বলেই উনি বাড়ির দিকে হাটা ধরলেন।আমি হকচকিয়ে বলে উঠলাম,,,

–ওই দিকে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

সে আমার কাছে ফিরে এসে বললেন,,,

–তুমি তো বললে এবার আসতে পারেন।(জায়েফ)

তার কথা এবার সহ্য হলো না।তাকে এক নাগাড়ে বলতে লাগলাম,,,

–দেখুন মিস্টার জায়েফ এহমাদ, আপনাকে আর আপনার অত্যাচারকে এতদিন সহ্য করলেও আমি আর আপনাকে সহ্য করব না। কি ভেবেছেন আপনি আমি কি খেলনা পুতুল নাকি? যেমনভাবে ইচ্ছা হবে ব্যবহার করবেন ইচ্ছে হলোনা ব্যবহার করবেন না। এতদিন আমাকে দেখতে ইচ্ছা করে নি তাই না! আর এখন রাতের বেলাও একেবারে দৌড়ে চলে আসেন আমাকে দেখার জন্য। আপনাকে এখন আর আমার দেখতে ইচ্ছা হয় না। আপনাকে দেখলেই কষ্ট হয়। আপনাকে এখন দেখলে আপনার করা অত্যাচার আর অপমান গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আপনি আমার সামনে অন্য মেয়েদের ঘরে তুলে এনে আমাকে অপমান করেছিলেন। আমি কিছুই ভুলিনি। আপনি ক্ষমা চেয়েছেন আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি কিন্তু এখন যদি আমি বলি আমার উপর করা অত্যাচার গুলো ফিরিয়ে নিন পারবেন ফিরিয়ে নিতে? অপমান গুলোকে আপনি ফিরিয়ে নিন পারবেন ফিরিয়ে নিতে? কখনো পারবেন না। আমার জীবনটাকে কি আগের জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে পারবেন? পারবেন না। আমি যখন এতই বেমানান ছিলাম আপনার জন্য তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করে ছিলেন আপনার লজ্জা করেনি একটা ১৬ বছরের মেয়েকে বিয়ে করতে। শুধুমাত্র আপনার জন্য আজ আমি এই গ্রামে চলে এসেছি আপনার থেকে দূরে থাকার জন্য। আপনি দয়া করে প্লিজ আমার সামনে আসবেন না। আপনার থেকে আমি অনেক দূরে থাকতে চাই। অনেক দূরে। আপনার সংস্পর্শে আমি আসতে চাই না।

কথাগুলো বলেই আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলাম তখন উনি গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,,,

–জুঁইফুল আমরা কখনই কোন বিচ্ছেদের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম না।

তার বলা বাক্যটি শুনে নির্বোধের মতো তার দিকে কেবল তাকিয়ে আছি। আমার চোখ থেকে টুপ টুপ করে অজস্র অশ্রু গাল বেয়ে পড়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না আসলে সে কি বলতে চায়। আমার ভাবমূর্তি দেখে হয়তোবা উনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। একটু পরে নীরবতা ভেঙে সে বলে উঠলো,,,

–জুঁইফুল তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়েছো কিন্তু আমি তোমাকে ডিভোর্স দেইনি।

তাকে বলার মত কোন ভাষাই আমি এই মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছিনা। আমি নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করে তাকে আমি বললাম,,,

— দয়া করে কি আপনি আপনার এই ড্রামা টা বন্ধ করতে পারবেন? আমি আর নিতে পারছি না। আর ডিভোর্স আবার একজন দেয় কিভাবে?

— সত্যি বলছি। আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা ওয়েট আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।

কথাগুলো বলেই সে তার গাড়ি এর ভিতরে গিয়ে একটা ফাইল এর মত কিছু নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো। তারপর আমাকে ফাইলটা হাতে দিয়ে বলল,,,

–নাও এটা খুলে দেখলেই বুঝে যাবে। তোমার বিশ্বাস হয়ে যাবে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়েছো কিন্তু আমি তোমাকে ডিভোর্স দেই নি। তার এমন আচরণ দেখে আমি আসলে কি রিয়েকশন দেবো বুঝতে পারছিলাম না। কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইলটা নিয়ে খুললাম
এটা তো সেই ডিভোর্স পেপারের যেটা কয়েক মাস আগে আমার জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে। জায়েফ আমাকে বলল,,,

— যেখানটায় সাইন করেছ ওখানটা একটু দেখো। তোমার না তোমার না, আরে আমার সাইনটা দেখো।

ফাইলের ভিতরে থাকা পেপারটার সাইন করার জাগায় চোখ বোলাতেই চমকে উঠলাম।একবার জায়েফ এর দিকে তাকাচ্ছি আর একবার ফাইল টার ভিতরে থাকা পেপার টার দিকে তাকাচ্ছি। যেখানটায় উনার সাইন করার কথা ছিল সেখানে স্পষ্ট একেবারে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা -“ওয়ান্ট মোর ড্রিঙ্ক”

আমি বললাম,,,

–একটা নকল বানানো কাগজ নিয়ে এসে বললেন আমাদের ডিভোর্স হয়নি। আমিও তা মেনে আপনার সাথে ঢেং ঢেং করে চলে যাবো সংসার করতে এমনটা ভাববেন না।

উনি তড়িৎ গতিতে বললেন,,,

— না না।জুঁইফুল কাগজ টা আসল।ট্রস্ট মি।

আমি বললাম,,,

–ভাঙ্গা হাঁড়িতে পানি ঢালা আর আপনাকে বিশ্বাস করা একই কথা।কাগজ টা আসল হলে সাইন করেন নি কেন?আপনি ই তো ডিভোর্স টা চেয়েছিলেন।

–যেদিন সকাল বেলা তোমার থেকে সাইন নিয়ে ছিলাম ওই দিন রাতে আমি ড্রাঙ্ক ছিলাম
প্রচুর।তখন টেবিলের উপর পেপার টা দেখে এতটুকুই মনে করতে পারছিলাম যে আমি ডিভোর্স পেপার টায় সাইন করিনি।তাই ভেবেছিলাম সাইনটা করে দেই।কিন্তু সাইন করতে গিয়ে যে লিখেছিলাম “ওয়ান্ট মোর ড্রিঙ্ক” তা আমি বুঝিনি।তুমি চলে গেছো বলে আর ওই সব পেপার টেপার নিয়ে আর মাথা ঘামাই নি।(জায়েফ)

–আজ আমার জবাব চাই।আমাকে কেন অত্যাচার করেছিলেন? আমার দোষ ছিল কোথায়? আমাকে কিসের শাস্তি দিয়েছেন আপনি?(আমি)

— আমি নিশিকে খুব ভালবাসতাম। তাকে আমি আজও ভালোবাসি। আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে খারাপ আচরণ করলে তুমি চলে যাবে। বয়স তোমার কম ছিল। ছোট ছিলে তাই ভেবেছিলাম অত্যাচার সহ্য করতে পারবে না চলে যাবে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মারধোর করতে চাই নি।প্রতিবারই নিশির রাগ তোমার উপর ঝারতাম।তোমাকে কেবল আব্বুর কথা রাখতে আর জেদের বসে বিয়ে করেছিলাম।নিশির সাথে তখন রাগারাগি করে ওকে দেখাতে চেয়েছিলাম আমি ওকে ছাড়াই থাকতে পারি।কিন্তু যখন দেখলাম তোমার সাথে খারাপ আচরণ করে কোন লাভ হচ্ছে না তুমি তোমার মতই আছো, তখন ঘরে মেয়েদের আনা শুরু করলাম। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা ওদেরকে নিয়ে এসে অতিরিক্ত মাত্রায় ড্রিঙ্ক করাতাম কারণ ওরা তাতে অভ্যস্ত ছিল। তবে যতই অভ্যস্ত থাকুক মেয়ে মানুষ তো তাই অতিরিক্ত ড্রাংক হওয়ার পর ওরা নিজেরাই সেন্স হারিয়ে ফেলতো আর সারারাত পড়ে পড়ে ওরা ঘুমাতো। কেউ কেউ ওই অবস্থায় সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকত। সকালে ওদেরকে উঠিয়ে ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি করে পাঠিয়ে দিতাম। যেখানে আমি নিশিকে ভালোবাসি সেখানে অন্য মেয়েদের সঙ্গে আমি কিভাবে রাত কাটাই। আমি মানছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি।সত্যি আমি তার জন্য আজ অনুতপ্ত। শুধুমাত্র তুমি জেনো তোমার বাড়ি ফিরে আসো, তুমি জেনো নিজের ইচ্ছেয় আমাকে ডিভোর্স দাও সেজন্য ওগুলো করেছিলাম। তবে আমি আজ বুঝতে পারছি কতটা অন্যায় করেছি। আজ তোমার কাছে আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?(জায়েফ)

তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই শরীরের প্রায় সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তার গালে চর মেরে দিলাম আমি। তার কথাগুলো আমি আর নিতে পারছিলাম না। তাকে বললাম,,,

— জানেন আপনাকে দেখে এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে আমার সামনে মানুষরূপী কোন পশু দাড়িয়ে আছে। ক্ষমা তো আমি আপনাকে এ জীবনেও করব না।

— জুঁইফুল তুমি কি ভাবছো? তোমাকে আমার জীবনে ফিরিয়ে নিতে এসেছি?না জুঁইফুল তা আমি চাইলেও পারবো না।আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো না। তাই তোমাকে আমি আমার মতো খারাপ মানুষ টার জীবনে দ্বিতীয় বার জড়িয়ে আর কষ্ট দিতে চাই না।তোমাকে আমার ভালোলাগে কিন্তু আমি তো আর তোমাকে ভালোবাসি না।জুইঁফুল একটা বার আমাকে মাফ করে দেও না?

উনি বলতে বলতে আমার পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে পরলেন।আবারও বলতে শুরু করলেন,,,

–তুমি আমাকে তোমার ইচ্ছে মতো শাস্তি দিতে পারো। আমি সব শাস্তি মেনে নিতে রাজি আছি। গত কয়েক দিনের করা কাজের জন্যও আমি ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে। আমি শুধু দেখতে চাচ্ছিলাম আমার প্রতি তোমার প্রতিক্রিয়াটা এখন কি রূপ। সেজন্যই তোমাকে গত কয়েকদিন ধরে ডিস্টার্ব করছিলাম।তার জন্যেও আমি ক্ষমা চাই তোমার কাছে।

চোখের পানি মুছে গলা ঝেড়ে বললাম,,,

— আমার জীবনে আপনার ছায়াও দেখতে চাই না। আমাকে মুক্তি দিন।

আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে চলে আসি। পিছন থেকে জায়েফ ডেকে যাচ্ছে।এই মুহূর্তে পিছন ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ মনে করছি না। এসে দেখি বাবা আমার দরজার সামনে দাড়ানো। বাবাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবছি বাবা কি সব দেখে ফেলল বা শুনে ফেলল। আমি কিছু বলার আগেই বাবা বলে উঠলেন,,,

— তোর জীবনটা এলোমেলো করে দেয়ার জন্য কেবলমাত্র আমিই দায়ী।

বাবার কথা শুনে তার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। বাবার সঙ্গে এই মুহূর্তে কথা বলতে মোটেই ইচ্ছে করছে না। বাবাকে বললাম,,,

— আমার ভাগ্যে যা লেখা ছিল তাই হয়েছে আর ভবিষ্যতেও যা লেখা আছে তাই হবে। যাও তুমি ঘুমিয়ে পড়ো এখন।

রুমে এসে সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম। মনের মধ্যে হাজার ও জল্পনা-কল্পনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি না তাকে আমি ভালোবাসি কিনা তবে তার প্রতি কিছু একটা অনুভব হয়। জীবনটা আসলে বড়ই অদ্ভুত। ১৮ বছর বয়সে কত কিছুর মুখোমুখি হতে হলো। কিছু সময় পর অনুভব হতে লাগল আমার চোখ থেকে হালকা উষ্ণ তরল পদার্থ ঝরছে। বুঝতে পারলাম চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে আজ শব্দ করে কান্না করতেও মন চাইছে না।আমার সাথেই এমন হলো কেন? অন্য সব মেয়েদের মতো এখন আমিইও তো হেসে খেলে জীবন টাকে উপভোগ করতে পারতাম।

গ্রামে এসেছি আজ এক সপ্তাহ হতে চলল।জায়েফ এর মাঝে ২ বার কল দিয়েছিল আমি তাকে মাফ করে দেই যেনো।সাদুকে ওই দিনের কথা গুলো বলে দিয়েছি। এই মেয়েটাকে কিছু না বলে থাকতে পারিনা। আমার সকল খারাপ সময়েই ওকে আমার পাশে পেয়েছি। এরমধ্যে কমলা আন্টি ফোন করে প্রতিদিন আমার খোঁজখবর নিতেন। খেয়েছি কিনা ঘুমিয়েছে কিনা সব খেয়াল রাখতেন

এর মধ্যে আরো কয়েকদিন চলে গেলো। আমার এইচএসসি এর রেজাল্ট আউট হয়ে গেছে।জিপিএ এসেছে ৪:০০।আমার কাছে এটাই অনেক।কারণ যেখানে ভালো ভাবে ক্লাসই করিনি সেখানে এমন রেজাল্ট হবে আশা ছিল না।বাবা আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করে,,,

–জুইঁ মা গাজীপুরে যাওয়া দরকার এখন আমাদের। তুই যেতে না চাইলে থাক।তোর যেখানে খুশি সেখানে থাক তুই। জোর করতে চাই না। কিন্তু তোর পড়াশোনা টাও যে দরকার। এখানে তো লেখাপড়া হচ্ছে না।সামনে তো এডমিশন টেস্ট ও আছে।

–চলো কালকে তাহলে চলে যাই। আর বাসাও পাল্টানোর দরকার নেই।(আমি)

বাবার কথাটা ভুলতো বলে নি।এখানে লেখা পড়া তো হচ্ছে না।জীবনের কিছুটা সময়ের বিষাদ এর জন্যে ভবিষ্যতটাকে কেন নষ্ট করবো?জায়েফ আমাকে বলেছিল সে তার নিজের বাড়ি ফিরে গিয়েছে। তাহলে আমার তো সমস্যা ই নেই আর।এখন শুধু নিজেকে তৈরি করার পালা।বেঁচে থাকলে জীবন টাকে উপভোগ করতে পারবো নতুন ভাবে।

আজ ভাইয়া বাংলাদেশ ফিরবে। ভাইয়া দেশে ফিরবে বলে গ্রামের থেকে মামা মামী এসেছে। খালামণি আর খালু তারা আজকে আসতে পারবেনা। তাই তারা কাল বা পরশু দিন আসবে। মামি আমাদের দুই ভাই-বোনকে ছোট থেকেই খুব ভালোবাসেন। ভাইয়া আসবে বলে মামি নিজের হাতে ভাইয়ের সবরকম পছন্দের খাবার রান্না করছে। আমি ভাইয়ার থাকার ঘর ভাল করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছি। ভাইয়ার ঘর গোছানো থাকে তবে সবকিছুই একটু নতুনভাবে আবার গুছিয়ে রাখছি। আজকে সাদুও আসবে আমাদের বাসায়।কলিং বেলের শব্দে আমি ভাইয়ার রুমের থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে দেখি সাদু দাঁড়িয়ে আছে সাথে আন্টিও আছে।সাদু এসেই আমার রুমে ঢুকে গেলো।ওর পিছনে আমিও আসলাম।

–ওই চুন্নি এতো তাড়াতাড়ি আসলি কেন?তোরে কি এখন দাওয়াত দিছি?তোর তো বিকালে দাওয়াত ছিল। (আমি)

–হ আমি বুঝিনা না?নিয়াজ ভাইয়া যেই চকলেট আনবো সব জানি আগে তুই নিতে পারছ তাই তো কইছোস পরে আসতে।(সাদু)

–এহ তোর লালা পরতাছিলো চকলেট খাওয়ার জন্য তাই ফাল দিয়া আইসা পরলি (আমি)

–বাহ।আয় তোরে একটা চুমা দেই।এই না হইলো আমার বান্ধবী। কতো বুঝে আমাকে। (সাদু)

–তোর মতো খাদকরে আবার বুঝমু না।(আমি)

–আচ্ছা শোন তোর ভাই আসবো কখন?(সাদু)

–কে এয়ারপোর্টে যাইয়া খাড়াইয়া থাকবি নি চকলেট এর লাইগা।(আমি)

–আরে বা* জানতে চাইলাম। (সাদু)

–একটু পরে বাবা আর মামা এয়ারপোর্টে যাবে।সন্ধ্যা ৬ টায় ল্যান্ড করার কথা।(আমি)

–আগে কবি না?এহন বাজে মাত্র ৩ টা।আরেকটু ঘুমাইতে পারতাম। (সাদু)

সাদুর চুল ধরে টান দিয়ে বললাম,,,

–ওই তোরে কইছি আমি ১৪ ঘন্টা আগে আইসা বইসা থাক।(আমি)

–যা সর আমি আরেকটু ঘুমাইয়া নেই।(সাদু)

–ঘুমা তুই। যা মরার ঘুম দে।(আমি)

আমার রুম থেকে বের হতে নিব তখনি সাদু এসে আমার চুলে ধরে একটা টান দেয় আর বলে,,,

–একটু আগে দিছিলি। তখন দিতে মনে ছিলো না।(সাদু)

–তোরে চকলেট এর প্যাকেটও দিমু না।ঘুমা তুই।(আমি)

বলেই দরজা বাইরে থেকে লক করে দিলাম।সাদু তো বুঝতেই পারেনি দরজা যে বাইরে থেকে লক।

বাবার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাইয়ার অপেক্ষা করছিলাম।এই বারান্দা থেকে মেইন রাস্তা দেখা যায়।দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ দেখলাম একটা সাদা রঙ এর মাইক্রো গেট এর কাছে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। দেখলাম মামা বের হয়েছে।দেরি না করে দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।অপেক্ষা করছি কখন ওরা উপরে আসবে।আসলেই ভাইয়াকে টাইট করে একটা হাগ করবো।কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,

–ভাইয়াআআআআআআআআআ

একি এতো দিন পরে আমাকে দেখেও ভাইয়া কিছু বলছে না কেন?এভাবে স্টেচু হয়ে আছে কেন?ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে সামনে তাকালাম।সামনে তাকিয়ে মনে হলো এই মুহূর্তে আমি হার্টস্ট্রোক ব্রেনস্ট্রোক একসাথে করলাম।

চলবে………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে