“বখাটে বউ”(পর্ব-১৫)
লাট সাহেব ঘুমাচ্ছে আর আমি মাথায় হাত বুলিয়েই চলেছি। এর চেয়ে করুণ দৃশ্য পৃথিবীতে কি আর দ্বিতীয়টা আছে? মাথা থেকে হাত একটু সরালেই সে জেগে যাচ্ছে। আর তার বুকে আমার যে হাতটা চেপে ধরে রেখেছে সেটা তো নড়ানোর উপায়ই নেই। অসহ্য লাগছে আমার। ইচ্ছে করছে তার সব গুলো চুল গুলো ছিড়ে তাকে চুলহীন করে ফেলি। কিন্তু সে উপায়টিও নেই আমার। আমি যে কি জ্বালায় পড়ে আছি তা শুধুই আমিই জানি। এদিকে একটু ঘুম ঘুম ভাব হতেই মনে পড়ছে যদি জেগে উঠে সে মাতলামি করে! মাতলামি সম্পর্কে সিনেমাতে কত কি দেখেছি। দরজায় লাথি দেয়া, অকথ্য গালিগালাজ করা, রুমের জিনিস পত্র ছুড়ে ফেলে দেয়া, এমনকি মারপিটও করে মানুষ মাতাল হয়ে। এসব মনে হলেই ভয় লাগছে। লাট সাহেব যদি এসব করে তাহলে তো লংকা কান্ড শুরু হবে। দেখা গেলো তার মাতলামি দেখে আমি রুমে সাইক্লোন শুরু করলাম আর সেই সাইক্লোনে ওর কিছুই হলো না, যা হবার আমার হলো। তাই আমি লংকা কান্ড ঘটাতে চাইছি না। কি দুঃখে যে বিষ খাওয়াতে গেলাম, মানে স্যালাইন খাওয়াতে গেলাম! সারারাত সে ওয়াশরুমের সাথে প্রণয় অভিসার করতো তাতে আমার কি? আমার যে কেনো এমন ন্যাকা দরদ শুরু হলো সেটা ভেবেই রাগে নিজের গালে নিজেরই চড়াইতে মন চাচ্ছে। আর তার উপরও ভীষণ ভীষণ রাগ হচ্ছে। এমন ন্যাকামি আমার সত্যিই খুব অসহ্য লাগে। সকালটা আগে হোক তারপর ঐ বান্দরটার স্বামী স্বামী ভাব নেয়া দেখে নেবো। কারো কাছে যে একটু হেল্প চাইবো, কে হেল্প করবে আমায়? আব্বু ছিল একমাত্র আমার সাপোর্টার, সেও এখন ঐ লাট সাহেবের পক্ষে। সবাইকে একসাথে জেলে দেয়া উচিত। জামাই শ্বশুর শাশুড়ি একসাথে জেলে বসে খোশগল্প করবে। যত্তোসব!
এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই কখন যেনো ঘুমিয়ে গেছিলাম। ভোর বেলা ঘুম ভেঙে দেখি আমার হাত বান্দরটার বুকে। আস্তে করে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। সূর্য উঠে আমাকে রক্ষা করলো। রুম থেকে বেরিয়ে তো আগে নিজেকে উদ্ধার করি! তারপর লাট সাহেবের সাধের ঘুমে জল ঢালবো। না না জল না, বালু ঢালবো। না না গরম ছাই ঢালবো।
কয়েক দিন ধরে গান গাই না। গায়িকা এমন হলে হবে নাকি? এমন করলে তো বখাটে গিরিতে মরিচা ধরে যাবে। এটা তো হতে পারে না কিছুতেই। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি বেলকোণে দাড়িয়ে চিল্লিয়ে আব্বুকে ডাকলাম। আব্বু হন্ত দন্ত হয়ে বেলকোণে এসে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। বললাম-
__”তবলা আনো।”
আব্বু আসামীর মতো মুখ করে বললেন-
__”মা আমার একটা কথা শোন!”
__”কোনো শোনাশুনি নাই। আমি এখন গান গাইবো আর তুমি তবলা বাজাবে। যাও তবলা আনো।”
__”দেখ মা আমার আজ গানে মন নেই।”
__”মন তো লাগবে না, লাগবে তোমার হাত দুটো, যা দিয়ে তবলা বাজাবে। যাও তবলা আনো।”
আব্বু দুখী দুখী মুখ করে বললেন-
__”তোর আম্মু বলেছে আমি তবলা বাজালে সে নাকি বাপের বাড়ি চলে যাবে।”
__”গেলে যাবে, তাতে কি? এই বয়সেও তুমি এত বউ বউ করো কেনো? আম্মু চলে গেলে আমি আবার তোমাকে বিয়ে দেবো।”
কথা গুলো আমি চিৎকার করে বললাম যেনো আম্মু শুনতে পায়।
__”আস্তে বল আস্তে বল। তোর আম্মু শুনতে পেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
__”কিচ্ছু হবে না। যাও তবলা আনো।”
হঠাৎ আম্মু এসে সামনে দাড়ালো। ওয়াও ঢিল লেগেছে তাহলে। আমি কিছু না বলে হারমোনিয়ামে মন দিলাম। আমার ভাব খানা এমন যেনো আমি কোনো জনপ্রিয় সঙ্গীত শীল্পি। খুন করে ফেলবো এমন টাইপের মুখভঙ্গিমায় আম্মু বললো-
__”কাকে আবার বিয়ে দিবি?”
ডোন্ট কেয়ার মুখভঙ্গিমায় আমি বললাম-
__”আমার আব্বুকে।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
__”তোর এত বড় সাহস?”
__”তুমি বাপের বাড়ি চলে গেলে বিয়ে দেবো বলেছি। না গেলে দেবো না।”
__”আমি বাপের বাড়ি গেলেই তাকে বিয়ে দিতে হবে?”
__”হ্যাঁ হবে। আর যাও তো তাড়াতাড়ি। আমরা এখন গান গাইবো। কুইক বাপের বাড়ি চলে যাও।”
__”পেটের মেয়ে যে এত শত্তুর হয় তা এই প্রথম দেখলাম।”
__”দেখা হয়েছে এখন যাও।”
__”এত কষ্ট করে সংসার সাজিয়েছি ঘরে সতীন আনার জন্য নাকি? যাবো না বাপের বাড়ি।”
__”যাবে যাবে। আব্বু এখন তবলা বাজালেই তুমি দৌড়ে বাপের বাড়ি চলে যাবে। আমি সব জানি।”
আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললাম-
__”কুইক তবলা আনো।”
আম্মু রেগে উঠে বললো-
__”যা ইচ্ছে কর তোরা।”
কথাটা বলেই সে বেলকোণ থেকে ভেতরে চলে গেলো। আমার খুব হাসি পেলো আম্মুর ভাব দেখে। পৃথিবীর সব মেয়ে গুলো একটা দিক দিয়ে কি করে যেনো একই রকম। তারা সব ছাড়লেও স্বামীকে কখনো ছাড়ে না। স্বামীর এক চিমটি ভাগ দিতেও পারে না তারা। এটা নিঃসন্দেহে চরম স্বার্থপর ভালোবাসা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি একজন অনুভূতিহীন মানুষ। আমি চেতনায় ফিরে আব্বুকে বললাম-
__”আব্বু দাড়িয়ে কেনো আছো? যাও তবলা আনো। নইলে কিন্তু তবলা না বাজানোর দায়ে আমি আম্মুকে বাপের বাড়ি রেখে আসবো।”
আব্বু অসহায়ের মতো রুম থেকে তবলা এনে বসলো। ওবারান্দায় আব্বু তবলা বাজাচ্ছে আর এ বারান্দায় আমি হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান শুরু করতেই আব্বু বললেন-
__”থাম আগে আমি গান গাই।”
__”ওকে।”
আব্বু গান ধরলেন-
“ও আমি ফাঁইছা গেছি, আমি ফাঁইছা গেছি, ফাঁইছা গেছি মাইনকার চিপায়।
আমার এই দিলের চোট বুঝে না কোনো হ্লায়….”
এই টুকু গাইতেই হঠাৎ আব্বু গান থামিয়ে করুণ মুখ করে তাকিয়ে রইলেন। আব্বুর করুণ মুখের ভাষা আমি বুঝতে পারলাম না। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
__”আব্বু থেমে গেলে কেনো? গানটা তো হেব্বি।”
আব্বু অসহায়ের মতো বললেন-
__”এবার তুই গান গা মা। আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হতে চাইছে না।”
__”না তুমিই গাইবে। গাও বলছি।”
ধমকের ঠ্যালায় বাধ্য হয়ে আব্বু গান শুরু করলেন-
“দক্ষিণ দিগন্তে সীমান্ত উঠেছে চক্ষু লাল, চক্ষু লাল, চক্ষু লাল…”
আমি বললাম-
__”আব্বু দক্ষিণ দিকে সীমান্ত উঠে? আর সীমান্ত উঠবে কেনো? উঠবে তো সূর্য! কি সব ভুলভাল গাইছো!”
আব্বু ইনোসেন্ট মুখভঙ্গিমায় আমার দিকে নিশ্চুপ চেয়ে রইলেন। আব্বুর মুখভঙ্গি যেনো বলছে, “আমি নির্দোষ, আমি নির্দোষ।”
__”কি হলো আব্বু? আজ তোমার কি হয়েছে? আরেহ বাবাহ আম্মু কোত্থাও যাবে না। তুমি নিশ্চিন্তে গান গাও তো!”
__”আসলে আমি সব ভুলে গেছি রে বর্ণ। তুই বরং দক্ষিণ দিকে একটু তাকিয়ে দেখ।”
আমি হতবাক হয়ে বললাম-
__”দক্ষিণ দিকে কেনো তাকাবো?”
__”একটি বার তাকা মা প্লিজ!”
আমার পেছন সাইডটা হলো দক্ষিণ দিক। আমি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি লাট বাবু খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছে। হারমোনিয়াম বাজানোর তালে আমি টেরই পাইনি যে সে পেছনে দাড়িয়ে আছে। আর ওর চোখ দুটো সত্যিই লাল হয়ে আছে। এত সকালে শান্তির ঘুম ভেঙে দিয়েছি চোখ তো রক্ত বর্ণ হবেই। ঠিক করেছি, বেশ করেছি। আমাকে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নেয়া, আমার হাত বুকে চেপে রাখা, মাতলামি করার হুমকি দেয়া, সব কিছুর শোধ নেবো আমি। বর্ণর সাথে ফাঙ্গা নেয়ার ফলাফল ভয়াবহ হবেই। মনে মনে বললাম, দাড়িয়ে আছো থাকো, আমি গান গাই তুমি দাড়িয়ে থেকে শুনো ধেড়ে বাবু। গান গাওয়ার জন্য সামনে মুখ ঘুরিয়ে দেখি তবলা আছে আব্বু নেই। এটা কি হলো? মেয়েকে একটা বাঘের মুখে রেখে আব্বু এভাবে পালিয়ে গেলো! এটা কেমন পিতা মাবুদ! ঠিক আছে আজ খোকাবাবুকে মাফ করে দিলাম, আজ তাকে গান শোনাবো না। আমি হারমোনিয়ামটা রেখে উঠে দাড়ালাম। সে দরজা জুড়ে দুই হাত মেলে দিয়ে দাড়িয়ে আছে। রুমে যেতে হলে ওর হাত সরিয়ে যেতে হবে। আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম-
__”হাত সরান ভেতরে যাবো।”
সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
__”কা কা শেষ হলো মহারাণীর?”
__”গানকে কা কা বলবেন না।”
__”কাউয়া সঙ্গীতকে কা কা-ই বলে। আগে নিজের বাপের বাড়ি থেকে কা কা করেছো তাই কিছু বলিনি। আমাদের বাড়িতে এসব চলবে না। হারমোনিয়াম অক্ষত রাখতে চাইলে এই মুহূর্তে ওবাড়িতে রেখে এসো।”
__”এই আপনি আমাকে থ্রেড করছেন নাকি?”
__”সাবধান করছি।”
__”আমার সাধের হারমোনিয়ামে যদি টাচ করেন তাহলে ঘরের সব কিছু ভেঙে তছনছ করে দেবো কিন্তু।”
__”সিন্ধুকে ঢুকিয়ে রাখো তোমার সাধের হারমোনিয়াম। আমার চোখের সামনে থাকলে ওটা আস্ত থাকবে না।”
__”আমিও দেখতে চাই আস্ত না থাকে কি করে।”
কথাটা বলে তাকে ঠেলে সরিয়ে রুমে ঢুকলাম। এমন ছেলের সাথে কে সংসার করবে? আমার সব কিছুতেই তার বিরোধিতা। অবশ্য আমার কাজ কর্ম তো সুবিধার নয়। না হোক সুবিধার তাই বলে এমন করবে নাকি? ফাজিল বান্দর একটা। আর এই ছেলের কি প্রশংসা আমার বাবা মায়ের কাছে। আজকেই এর হেস্তনেস্ত করবো।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আগামীকাল……
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-১৪
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=921635458267174