“বখাটে বউ”(পর্ব-১১)

0
2282

“বখাটে বউ”(পর্ব-১১)

নির্ঘুম রাতের পর একটা সকাল এলো। আমি নিজের স্বভাব বদলাতে পারলাম না। আসলে একটা রাতে কখনো কি স্বভাব বদলে ফেলা যায়? গেলেও আমি পারি না। তাকে জব্দ করার ফন্দি এটেই কিচেনে গেলাম। বিস্বাদ খাবার তৈরি করলাম। এমনিতেও আমি রান্না বান্না একদম পারি না। তার উপর ইচ্ছে করে খারাপ করা মানেই হলো অখাদ্যের উপরে কুখাদ্য। তবে খাবারটা শুধুই বুইড়া খোকাবাবুর জন্য বানালাম। আমি জানি ধেড়ে খোকা একটুও ঝাল খেতে পারে না। ওর জন্য ডিম ভাজিতে কোনো মরিচ কুচি দেয় না আন্টি। কিন্তু আজকের স্পেশাল ডিম ভাজিতে পেঁয়াজ না দিয়ে শুধু ছয় সাতটা মরিচ কুচি দিলাম সাথে কিছু ধনে পাতা কুচি দিলাম যেনো মরিচ কুচি আর ধনে পাতা মিলে মিশে একাকার হয়। লবণ দেবার দরকার মনে করলাম না। পরোটাতে একগাদা লবণ দেবার দরকার মনে করলাম। সবজিতে হলুদ আর হালকা তেল ছাড়া আর কিছুই দেবার দরকার মনে হলো না। আর কিছু রান্না না করে ফ্রিজ থেকে রান্না করা মাংস বের করে এনে তাতে এক মুঠো মরিচ গুড়ো দিয়ে নেড়ে চেড়ে গরম করলাম। উফ্ কি সুন্দর দেখাচ্ছে মাংস! একটু মুখে দিয়ে দেখার সাহস পেলাম না। এটাকেই বলে মরিচ থেরাপি। সব রেডি করতেই দেখি আন্টি কিচেনে আসছেন। থ্যাংকস গড! বেঁচে গেছি। আরেকটু আগে এলে তো আমার রান্না মাঠেমারা যেতো। আন্টি আমাকে এতো সকালে কিচেনে দেখে অবাক হলেন। হবারই কথা, কারণ আমি তো কিচেন মাড়াই না কখনো।
__”কি রে এখানে কি করছিস?”
এখন কি বলবো? সত্যি কথাই বলি। সত্যের মৃত্যু নেই। মুখটাকে লাজুকাকৃতির করে বললাম-
__”না মানে আন্টি আপনার ছেলের জন্য নাস্তা বানাচ্ছি।”
__”এখনো বুঝি আমাকে আন্টিই ডাকবি?”
__”আসলে অন্য কিছু ডাকতে আমার লজ্জা করে।”
__”প্রথম বার লজ্জা করবে, তারপর আর করবে না। ডাক একবার!”
__”খালাম্মা।”
আন্টি হেসে ফেললেন।
__”ফাজিল মেয়ে একটা! মা বল!”
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। আন্টি আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন-
__” কি রে কি হলো? বল!”
আমি চোখ বন্ধ করে বললাম-
__”মা!”
আন্টি মানে মা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। তার বুকে মাথা রেখে আমার আলাদা একটা অনুভূতি হলো, ঠিক যেনো মা মা একটা গন্ধ। আমি বুকে মাথা রেখে বললাম-
__”অনুভূতি বলছে আপনি আমার আরেকটা মা।”
তিনি আমার মুখটা তার সামনে উচু করে ধরে বললেন-
__”মা বলে ডাকছিস আর ‘আপনি’ সম্বধন করছিস? এই সম্বধনে পর পর লাগে জানিস না?”
__”তো কি বলবো?”
__”এখন থেকে ‘তুমি’ করে বলবি।”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


__”আচ্ছা।”
__”তা হঠাৎ আমার ছেলের জন্য রান্না করার কারণটা কি জানতে পারি? প্রেম টেম কি হয়ে গেলো নাকি?”
আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম-
__”কি যে বলো না মা? তোমার ঐ বান্দর ছেলের সাথে কোন্ মেয়ের প্রেম হবে?”
__”তা তো ঠিকই। কিন্তু কি এমন হলো যে কিচেনে ঢুকলি তাও আবার এত সকালে?”
এই রে, এখন কি বলি? ভারী বিপদে পড়লাম দেখছি। কিছু খুঁজে না পেয়ে বললাম-
__”আসলে বাবু তো কাল থেকে কাঁচকলার তরকারী খেয়েছে। পেট ভরে তো খেতে পারেনি তাই ভাবলাম…”
মা দুষ্টুমির চোখে তাকিয়ে বললেন-
__”হুম বুঝেছি। তো বাবুটা কি তোরও বাবু?”
__”না না, সে তো তোমার বাবু।”
মনে মনে বললাম, সে আমারো বাবু তবে বুইড়া ধাইড়া খোকাবাবু। মা হেসে উঠে বললেন-
__”তাহলে বাবু বাবু করিস কেনো?”
__”তো কি বলবো?”
__”নাম তো আছে তার একটা।”
বয়ে গেছে তার নাম ধরে ডাকতে আমার। সুন্দর করে সুস্ত্রীর ভাব নিয়ে বললাম-
__”স্বামীর নাম মুখে আনতে নেই তাই বাবু বলি।”
__”ওরে বাপরে! এ মেয়ে তো দেখছি এক ধাপ উপরে।”
এক ধাপ নয় মা, কয়েক ধাপ উপর থেকেই বলছি, বয়ে গেছে ঐ বান্দরকে আমার স্বামী ভাবতে। এসব কুখাদ্য খাওয়াতে হবে তাই তোমাকে পটাচ্ছি মা। প্লিজ মাফ করে দিও আমাকে! ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম-
__”মা আমি তো রান্না করতে পারি না তাই অল্প করে শুধু তোমার ছেলের জন্যই নাস্তা বানিয়েছি। আগে সব শিখে নিই তারপর সবার জন্য করবো।”
মা আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন-
__”আচ্ছা বাবাহ আচ্ছা। বাকী সব নাস্তা আমি বানাচ্ছি। তুই খাবার নিয়ে রুমে যা।”
ওহ নো! খাবার নিয়ে তো রুমে যাওয়া যাবে না। তাহলে তো ধরা পড়ে যাবো। সে যদি বুঝে ফেলে যে এসব আমি বানিয়েছি তাহলে সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে। এই সব খাবার মাকে দিয়েই খাওয়াতে হবে। আমি দুখী দুখী মুখ করে ইনিয়ে বিনিয়ে বললাম-
__”আসলে সে তো আমাকে পছন্দ করে না তাই আমি খাবার নিয়ে গেলেও সে খাবে না। আমি টেবিলে রেখে যাচ্ছি। সে এলে তুমি খাইয়ে দিও। সে সবটা খেলে আমার ভালো লাগবে।”
মা মুচকি হেসে বললেন-
__”আচ্ছা আমি তাকে সবটাই খাইয়ে দেবো। তুই আড়াল থেকে দেখে নিস।”
__”মা আরেকটা কথা হলো, আমি নাস্তা বানিয়েছি এটা তাকে বলবে না। তাহলে তার নাস্তা করাই হবে না।”
__”আচ্ছা বাবাহ ঠিক আছে।”
এবার বুইড়া খোকাবাবু তুমি পালাবে কোথায়? টের পাবা বর্ণর সাথে ফাঙ্গা নেয়ার মজা।

রুমে ঢুকে দেখলাম লাটসাহেব ঘুমাচ্ছেন। ইচ্ছে করছে এক বালতি পানি তার গায়ে ঢালি। হাতও পানি ঢালার জন্য চুলকাচ্ছে। হঠাৎ গতরাতের কথা মনে পড়লো। থাক বাবা রাতের মতো বখাটের জবাব চাই না। দেখা গেলো সে লাফ দিয়ে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বললো, “আমি ডুবে যাচ্ছি বাঁচাও বাঁচাও!”
এ ছেলেকে করে কোনো বিশ্বাস নেই তাই এমন রিস্ক নেয়া অসম্ভব। কিন্তু তাকে না জ্বালিয়ে তো শান্তি পাচ্ছি না। এত বেলা পর্যন্ত কিসের ঘুম? আলসে বিড়াল একটা! না না আলসে বিলাই। আরো খারাপ করে বলা উচিত, আলসে বিলি একটা। কোন্ কুক্ষণে যে আমি এই ছেলেটাকে ইফটিজিং করতে গেছিলাম! আজ নিজের দোষেই সে আমার গলার কাঁটা হয়ে গেছে। ওর ঘুমানো দেখে মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। আর সহ্য করতে পারছি না এবার তাকে জাগাতেই হবে। আমি বেডের কাছে দাড়িয়ে তার কানের কাছে জোরে জোরে চিল্লিয়ে বললাম-
__”এই যে লাট সাহেব উঠুন তাড়াতাড়ি আপনাকে আন্টি ডাকছে। ওহ স্যরি মা ডাকছে।”
সে ঘুমের মধ্যে আমার হাত টেনে ধরে বললো-
__”আরেকটু পর উঠবো।”
এই রে হাত ধরলো কেনো? রাতে জাপটে ধরে ছিল আমাকে আর এখন হাত ধরেছে। এ ছেলের তো দেখছি মতলব ভালো না। বললাম-
__”আরেকটু পর উঠবেন ভালো কথা। তাই বলে হাত ধরার কি আছে? ছাড়ুন হাত!”
সে চোখ বন্ধ করেই বললো-
__”হাত কখন ধরলাম?”
__”এই তো ধরে আছেন।”
__”এটা তো আমার কোলবালিশ।”
__”এত চিকন আপনার কোলবালিশ?”
__”তাহলে এটা কোলবালিশের কভারের ফিতা।”
__”ঢং বাদ দিয়ে হাত ছাড়ুন। নইলে আমি কিন্তু আমি চেচাবো!”
__”আমি কোলবালিশ ছাড়লেই ঐ বখাটে বদ মেয়েটা আমার নিরিহ কোলবালিশটাকে মেরে ফেলবে তাই কিছুতেই ছাড়বো না।”
ঘুমের মধ্যে এত কথা বলতে কাউকে দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম কেউ ঘুমের ঘোরে ঠিক ঠিক জবাব দিচ্ছে। তারমানে হলো এটা ফাজলামি ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। আমি জোরে একটা টান মেরে হাত ছাড়িয়ে নিলাম কিন্তু আমার চুড়ি গুলো সব ওর হাতেই থেকে গেলো। ব্যাথাও পেলাম অনেকটা। রাগে আমি লুচির মতো ফুলে দাড়িয়ে রইলাম। তারপর পানির গ্লাস থেকে পানি নিয়ে ওর চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলাম। সে লাফ দিয়ে বসে আমার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চুড়ি দেখে সে চমকে উঠে চুড়ি গুলো বিছানায় ছুড়ে ফেললো। তার ন্যাকা ঢং দেখে আমার তো ইচ্ছে করছে রুমের ভেতরে সাইক্লোন ঘটাই। সে অবাক হবার ভান করে বললো-
__”আমার হাতে চুড়ি কোথা থেকে এলো? এই আপনি চুড়ি খুলে আমার হাতে দিয়েছেন কেনো? আবার কি নতুন প্ল্যান করছেন হুম?”
আমার তো রাগে সারা শরীর খিটখিট করছে। দাঁতে দাঁত পিশে বললাম-
__”এগুলো আপনার কোলবালিশের চুড়ি, সে তো মরে গেছে তাই আপনি হাতে পরবেন বলে নিয়ে এসেছেন।”
সে বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
__”কি সব ফালতু কথা বলছেন? আমি চুড়ি কেনো পরবো? আর কোলবালিশের চুড়ি মানে?”
__”গতরাতে ভুতের কাহিনীর মতো কাহিনী করবেন না একদম। এই সব ন্যাকামী আমার অসহ্য লাগে।”
__”ন্যাকার ড্রামের মুখে এসব মানায় না।”
__”আমি আপনার হাত চেপে ধরে ছিলাম নাকি আপনি আমার হাত চেপে ধরে ছিলেন? আমার হাত চেপে ধরাটা কি ন্যাকামী নয়?”
__”হাত চেপে না ধরলে তো ভয়ানক কিছু করতেন হাত দিয়ে। জাস্ট আত্মরক্ষা করেছি।”
__”ভয়ানক কিছু করতাম মানে?”
__”আপনার মত পাজি বদ বখাটে মেয়েকে আমি একটুও বিশ্বাস করি না।”
__”আমি এখন পর্যন্ত নিজে থেকে আপনাকে টাচ করিনি আর আপনি আমার হাতের দোষ দিচ্ছেন?”
__”বাহ্! রাতের কথা ভুলে গেলেন? আমাকে ধাক্কা দিয়ে কে ফেলে দিয়েছিল? নাকি ধাক্কা দেয়াটা টাচ নয়?”
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললাম-
__”ঘুমের মধ্যে ঠেলা লেগে ছিল। ওটা ইচ্ছাকৃত নয়।”
__”আপনার কি ধারণা একটা বখাটে মেয়েকে পাশে রেখে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলাম? একদম না। আমি সব জানি।”
__”ঘোড়ার ডিম জানেন আপনি।”
__”যাই হোক, এই সাত সকালে আমাকে ডাকতে কে বলেছে? অবশ্য আপনার তো পার্মিশন লাগে না। আপনি এলাকার বখাটে গুন্ডী। যখন যাকে ইচ্ছে আপনি তাকে জাগাতেই পারেন।”
__”কিহ আমি গুন্ডী?”
__”ওহ নো নো, আপনি লেডী রংবাজ।”
__”কিহ আমি রংবাজ?”
__”নো, আপনি লেডী রংবাজ।”
__”সব শোধ নেবে বর্ণিতা।”
__”একটা কথা বলি?”
__”মুখ তো বন্ধ করে রাখেননি, ঘটা করে অনুমোদনের কি দরকার আছে?”
__”তাহলে বরং বলেই ফেলি।”
__”বলুন।”
__”আপনার বৈশিষ্ট্যের সাথে বর্ণিতা নামটা একদম যায় না।”
__”কি নাম যায় আমার সাথে?”
__”অবর্ণিতা”
__”ফাজিল বান্দর ধেড়ে বাবু।”
__”কিহ? আমি ফাজিল বান্দর ধেড়ে বাবু?”
__”তো আপনি কি কচি বাচ্চা?”
__”আপনার সাথে তর্ক করার ইচ্ছে আমার নেই। আমি আরেকটু ঘুমাবো তারপর উঠবো। আপনি এখন যান।”
__”মা মানে আপনার আম্মু বলেছেন, এখন উঠে নাস্তা না করলে তিনি আপনাকে আজকেও কাঁচকলার তরকারী খাওয়াবেন।”
আমার সব টুকু কথা শেষ হবার আগেই সে ধুচমুচ করে উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বুঝলাম কাঁচকলা নামক এন্টিবায়োটিক দারুণ কাজ করেছে। সাবাস বর্ণ সাবাস। আজ তোকে মালা দেয়া উচিত। যাই আমিও রেডি হই ধেড়ে খোকার কুখাদ্য খাওয়ার অনুষ্ঠান দেখার জন্য। খুশির ঠ্যালায় কি যে করি!

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল….
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-১০
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=916697958760924

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে