“বখাটে বউ”(পর্ব-১০)

0
1943

“বখাটে বউ”(পর্ব-১০)

সকাল দুপুর রাত তিন বেলা কাঁচকলার তরকারী খেয়ে ধেড়ে বাবু টারজান হয়ে গেছে। রাতে আমি বেডে বসে চুল বাঁধছি, হঠাৎ সে হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে চোখ পাকিয়ে টারজানের মতো উ উ করে বললো-
__”এই যে বখাটে মেয়ে, বেড থেকে নেমে সোফায় গিয়ে ঘুমান।”
__”কেনো?”
সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো-
__”এই বেড আমার। এখানে শুধুই আমি ঘুমাবো।”
আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__”এই বেড আপনার কিন্তু এখানে শুধু আমিই ঘুমাবো। আপনি সোফাতে গিয়ে ঘুমান, যান।”
__”সোফাতে আপনি ঘুমাবেন।”
ওর কথায় মেজাজ গরম হয়ে গেলো। বললাম-
__”কাল লাইট ভেঙেছি আর আজ কিন্তু খাট ভেঙে চুরমার করবো। ভালো চান তো চুপচাপ সোফায় ঘুমান।”
সে উল্টা রাগ দেখিয়ে বললো-
__”তাই ভাঙুন তবুও আমি খাটেই ঘুমাবো।”
কথাটা বলেই সে খাটে এসে ছুঁ মেরে কোলবালিশটা টেনে নিয়ে সোজা শুয়ে পড়লো। তাকে সরানোর কোনো উপায় খুঁজে পেলাম না। আর আমি তো সোফায় ঘুমাতে পারি না। এত কম জায়গায় তো আমার হয় না। সারা খাট গড়াগড়ি করে ঘুমানোর অভ্যেস আমার। একাধিক কোলবালিশও লাগে আমার। গত রাতে ওর কোলবালিশটা দখল করে ছিলাম। আজ তো সে কেড়ে নিলো। আমি ঝামেলা করার কিছু না পেয়ে বললাম-
__”বিছানায় শুয়েছেন ভালো কথা। কিন্তু কোলবালিশটা ছেড়ে দিন।”
__”কেনো?”
__”আমি কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না তাই।”
__”আমিও কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না।”
আমি ধমকের স্বরে বললাম-
__”এসব কথা রেখে কোলবালিশটা দিন।”
সে কোলবালিশটা আরো চেপে ধরে বললো-
__”দেবো না।”
আমি কোমরে শাড়ির আঁচল গুজে ঠিকঠাক ভাবে বসে, জোর করে কোলবালিশ টেনে নিতেই সে ধরে ফেললো। দু’জন কিছুক্ষণ কোলবালিশ টানাটানি খেললাম। ওর শক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে না পারলেও খামচি ধরে কোলবালিশটাকে ধরে রাখলাম। অবশেষে যা হবার তাই হলো। কোলবালিশটা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। সারা বিছানা তুলায় ময় হয়ে গেলো। দু’জন হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলাম। সে রেগে গিয়ে বললো-
__”বজ্জাত বদ বখাটে মেয়ে, দিলেন তো আমার সাধের কোলবালিশটা ছিড়ে?”
__”বেশ করেছি। টেনে ধরে ছিলেন কেনো? ছেড়ে দিলে তো আর ছিড়তো না।”
__”ধুর।”
__”এখন তুলো গুলো পরিষ্কার করুন।”
__”আমি ছিড়েছি যে আমি পরিষ্কার করবো?”
__”টানাটানি তো দু’জনই করেছি। সুতরাং আপরাধী দু’জনই।”
__”অপরাধী শুধুই আপনি।”
__”ঠিক আছে।”
আমি আমার শোবার যায়গা থেকে সব তুলো ঝেড়ে ওর গায়ে দিলাম। তারপর আমার জায়গায় শুয়ে পড়লাম। ওর গায়ে তুলোয় মাখামাখি হতেই সে লাফ দিয়ে বসে বললো-
__”এই এই কি করলেন এটা?”
__”আমার জায়গা আমি পরিষ্কার করেছি। এবার নিজের যায়গা নিজে পরিষ্কার করে নিন।”
__”তাই বলে আমার গায়ে দেবেন?”
__”ওখানে শুয়েছেন কেনো? এপাশে শুলে তো আর গায়ে তুলো লাগতো না।”
সে আর কিছু না বলে ওর জায়গাটা ঝেড়ে পাশ ফিরে শুয়ে থাকলো। আমি আবার তাকে জব্দ করার ফন্দি এটে বললাম-
__”আপনি এই পাশে ঘুমান আমি ওপাশে ঘুমাবো।”
__”এটা আমার খাট আর আমি এখানেই ঘুমাই। ইচ্ছে হলে আপনি ওখানে ঘুমান, না হলে ফ্লোর আর সোফা আছে।”
আমি রাগে গম গম করে শুয়ে পড়লাম। এর শোধ নেবেই বর্ণ। রাতে আমার ঘুম এলো না। এপাশ ওপাশ করছি আর তাকে জব্দ করার প্ল্যান করছি। দেখলাম সে ঘুমিয়ে গেছে। হুট করে মাথায় একটা আইডিয়া ভর করলো। উফ্ দারুণ আইডিয়া! আইডিয়াটা ভেবে নিজেকে নিয়ে আমার খুব গর্ব হলো। এত সুন্দর আইডিয়া আমার মাথায়, ভাবা যায়!
আমি ঘুমের ভান করে তার কাছাকাছি গিয়ে শুয়ে থাকলাম। দেখলাম সে বেহুশের মতো ঘুমাচ্ছে। আমি হালকা ধাক্কা দিলাম তবুও সে টের পেলো না। আরেকটা জোরে ধাক্কা দিতেই সে ফ্লোরে গিয়ে পড়লো। আমি ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকলাম কিন্তু হাসি চেপে রাখতে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
সে ধুপ করে পড়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। আমি চোখ হালকা তাকিয়ে ডীম লাইটের আলোতে দেখলাম সে খাইয়ালাইমু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যদি বৃটিশ আমল হতো তাহলে বউ পিটানো সূত্রানুসারে আমি এখন উত্তম মাধ্যম খেতাম। যাই হোক এটা বৃটিশ আমল না তাই নিশ্চিন্তে তাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছি। বর্ণর সাথে ফাঙ্গা নিলে এসব ঘটবেই। সে বসা থেকে আমার কাছে এসে দাড়িয়ে বললো-
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

__”ফাজিল পাজি বখাটে মেয়ে। এমন বদ মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি। আর এই মেয়েই আমার কপালে ছিল আল্লাহ! আম্মু আমার সাথে এটা কি করলো!”
আমি চোখ বন্ধ করে চুপচাপ থাকলাম। তার পরাণ জ্বলছে পুড়ছে সাথে কোমর ব্যাথা করছে, সে তো একটু বলবেই। মনে মনে বললাম, বলো বাবু বলো, আরো মেল্লা করে বলো। আমি তো জানে শান্তি পাচ্ছি এতেই আমার হবে। আমি ঘুমে বিভোর এমন ভান করেই শুয়ে থাকলাম। সে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আমাকে ধাক্কা দিলো জাগানোর জন্য। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসে চোখ ডলতে ডলতে বললাম-
__” কি হয়েছে?”
তারপর চোখ খুলে দেখি, সে কিলারের মতো চোখ করে আমার দিকে চেয়ে আছে। একটা চাক্কু থাকলে এতক্ষণে সে হয়তো আমার পেটে ঢুকিয়ে দিতো। যেমন করে সে তাকিয়ে আছে বাবাহ একটু ভয়ও লাগছে। তার চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে, এই রে মারবে নাকি? মারলে তো বিপদ। শক্তিতে তো পেরে উঠবো না। কুইক একটা আইডিয়া বের করলাম। আমি চিৎকার করে বললাম-
__”ভুত ভুত ভুত।”
হঠাৎ তার কিলার চোখ ভীতো চোখে পরিণত হলো। সে আমার কাছে এগিয়ে এসে বসলো তারপর ভীতো স্বরে বললো-
__”ভুত কোথায়?”
আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম-
__”এই ভুত কাছে আসবে না বলে দিলাম।”
সে আরো কাছে এসে আচমকা আমাকে জাপটে ধরে বললো-
__”আমি না ভুতে খুব ভয় পাই জানেন!”
আমি তো তার কান্ড দেখে অবাক বনে হারিয়ে গেলাম। হায় আল্লাহ নিজের জালে নিজেই ফাঁসলাম নাকি? আমি চেচিয়ে উঠে বললাম-
__”এই ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন।”
__”ছাড়লেই ভুত আমাকে ধরবে। আমি কিছুতেই ছাড়বো না।”
কথাটা বলেই সে আরো শক্ত করে আমাকে জাপটে ধরলো। আমার তো দেখছি দম আটকে আসছে। আমি শান্ত স্বরে বললাম-
__”ভুত চলে গেছে এখন ছাড়ুন।”
সে চোখ বন্ধ করে বললো-
__”আমি জানি ভুত যায়নি।”
আচ্ছা মহা মুশকিলে পড়লাম তো! কি করতে যে কি করলাম! এখন এই খোকাবাবু সারা রাত আমাকে জাপটে ধরে থাকবে নাকি? আব্বু এ তুমি কার সাথে আমার বিয়ে দিলে গো? এতো ভীতু ছেলে বর হয় কি করে? কোথায় সে আমাকে টারজান হয়ে ভুত থেকে উদ্ধার করবে তা নয়, সে নিজেই ভুতের ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি ম্যানেজ করার জন্য বললাম-
__”আমাকে একটু ছাড়ুন আমি ভুত মেরে আসি তারপর না হয় আবার জাপটে ধরবেন।”
__”না না ছাড়লেই ভুত আমাকে ধরবে।”
আমি আশেপাশে তাকিয়ে ভুত তাড়ানোর ভান করে হাত নাড়িয়ে বললাম-
__”এই ভুত যা বলছি যাহ। আর আসবি না এ ঘরে।”
আমার কান্ড দেখে আমার নিজেরই খুব হাসি পাচ্ছে। এমন করে পৃথিবীতে কেউ ভুত তাড়ানোর রেকর্ড করে ছিল কি না আমি জানি না। তবে মুরগি তাড়ানোর মতো করে আমি তো ভুত তাড়ালাম কিন্তু খোকাবাবু বিশ্বাস করলো কি না কে জানে! বললাম-
__”ভুতকে তাড়িয়ে দিয়েছি এবার ছাড়ুন।”
__”আমি জানি ভুত যায়নি কারণ এই বাড়িতে আত্মা ঘুরে সেটা আমি দেখেছি।”
__”হোয়াট?”
__”হ্যাঁ আমি নিজে চোখে দেখেছি।”
এবার তো আমারো ভয় করছে। ইয়া আল্লাহ হেল্প মী। হঠাৎ কিসের যেনো একটা আওয়াজ শুনে ভয়ে আমিও তাকে জাপটে ধরে ভুত ভুত করে চিল্লাতে শুরু করলাম। হঠাৎ দরজায় নক শুনে আমি তো প্রায় বেহুশ। এই রে ভুতকে মুরগির মতো করে তাড়ানো বোধ হয় ঠিক হয়নি। নির্ঘাত সে মাইন্ড করেছে। আমার মাথা ঘুরছে, ভুতের হাতেই আমার মরণ এটা ভাবতেই যেনো চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলাম। হঠাৎ দরজার ওপার থেকে আন্টির গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে বুকে প্রাণ ফিরে এলো। খোকাবাবুকে বললাম-
__”যান খুলে দিয়ে আসেন।”
__”আমি বাবাহ বেড থেকে নামবো না আর আপনাকে ছাড়বোও না। আপনিই খুলে দিয়ে আসেন।”
আজব হাদারাম একটা! বললাম-
__”না ছাড়লে খুলবো কি করে? ছাড়ুন বলছি।”
__”না ছাড়বো না।”
আচ্ছা যন্ত্রণা দেখছি! এদিকে আন্টি দরজা ধাক্কিয়েই চলেছেন। অনেক কষ্টে তাকে ধাক্কিয়ে সরিয়ে দরজা খুললাম। আন্টি রুমে ঢুকে বললেন-
__”কি হয়েছে? চিৎকার করছিস কেনো?”
__”আন্টি বাবু ভুত দেখে ভয় পেয়েছে।”
আন্টি হতবাক হয়ে বললেন-
__”কিহ?”
__”হ্যাঁ সে আত্মা দেখেছে।”
__”বাবু কবে থেকে এসব বিশ্বাস করতে শুরু করেছে?”
আমি বাবুর দিকে আঙ্গুল ইশারা করে বললাম-
__” ঐ যে দেখুন কেমন করে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সে।”
আন্টি ওর দিকে তাকিয়ে বললো-
__”ও তো ঠিকই আছে, ঘুমাচ্ছে।”
পেছনে তাকিয়ে দেখি সে ঘুমিয়ে আছে। আমি হতবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। এই ছেলে ইচ্ছে করেই তাহলে আমার সাথে এসব করেছে? আবার বর্ণর সাথে ফাঙ্গা? এর শাস্তি তাকে পেতেই হবে।
আন্টি মুচকি হেসে চলে গেলেন। আমি গিয়ে বাবুর পাশে শুয়ে পড়লাম। রাগে তো আমার শরীর জ্বলছে। বললাম-
__”আন্টি চলে গেছে এখন ঘুমের ভান করা ছাড়ুন।”
সে এদিকে পাশ ফিরে মুচকি হেসে বললো-
__”দেখেছেন বখাটের জবাব আমিও দিতে পারি?”
__”জবাব দিলেন তো নির্লজ্জের মতো। দেখলে তো মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেন না।”
__”কি নির্লজ্জতা দেখলেন?”
__”অমন করে জাপটে ধরার কি দরকার ছিল?”
__”আপনি তো ভুত দেখে ভয় পাচ্ছিলেন, ভয় যেনো না পান তাই জড়িয়ে ধরেছি।”
__”মিথ্যুক একটা। আপনি ইচ্ছে করে এসব নাটক করেছেন।”
__”হ্যাঁ নাটক করেছি, আপনার মতো বখাটে মেয়েকে কে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরবে? আপনার মধ্যে ফাজলামি ছাড়া আর কি আছে? নারীর মায়া মমতার ছায়া আপনার ভেতরে নেই। জাস্ট আপনি একটা প্রাণী।”

ওর কথা শুনে হুট করেই আমার চোখ জলে ভিজে গেলো। আমি নির্বাক বসে থেকে নিজের চোখে জল দেখে নিজেই অবাক হলাম। জানি না বর্ণিতার চোখে জল এলো কোথায় থেকে! ডীম লাইটের আলোতে আমার ভেজা চোখ তার দৃষ্টিগোচর হলো না কিন্তু বর্ণিতার হৃদয়ে কষ্টের ঢেউ বার বার আচড়ে পড়লো। এই প্রথম আমার মনে এতটা গভীর ভাবে দাগ কাটলো। সত্যিই কি আমি শুধুই প্রাণী?
সে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেলো। আমি বেলকোণ বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। পূর্ব দিক থেকে হাওয়া এসে লাগছে আমার গায়ে। আমি নিস্তব্ধ দাড়িয়ে আধার দেখছি। আজ কেনো যেনো নিজেকে ঐ আধারের মত বড্ড একা লাগছে। সব মানুষের জীবনেই কি এমন একটা নিঃস্ব রাত আসে?

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল….
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-৯
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=916038412160212

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে