ফিরবে চিনা ঠিকানায় পর্ব-০৮

0
878

#ফিরবে চিনা ঠিকানায়
#লেখনীতে_অনামিকা_ইসলাম_জেরিন
#পর্ব_৮

বাড়ি ভরা হৈ-হুল্লোড় বেড়ে চলছে।বাড়ি বড় ছেলের বিয়ে এত আয়োজন করা বটেই।সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।কিছু সময় পর ঝিনুকদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিবে বরযাত্রী।সিয়াম তৈরি হয়ে গেছে প্রায় একঘন্টা আগে।মেঘলা আর জোনিতাও রেডি হয়ে নিচে এসে হেনরির সাথে কথা বলছে।গোলাপি রংয়ের শাড়ীতে মেঘলাকে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে।হেনরি কথা বলছে আর আড়চোখে বারে-বার জোনিতাকে দেখছে।হেনরি এই দুইদিনে যেন অন্য এক জোনিতাকে আবিষ্কার করেছে। যাকে সে এর আগে কখনো দেখে নি।সবুজ রংয়ের শাড়ী,চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপিস্টিক,হাতে চুড়ি,চুল গুলো খোঁপা করা।বাঙালি মেয়েদের মতো লাগছে তাকে।হেনরিকে মেঘলার কাছে দেখে আকাশের মন চাইছে মেঘলার গালে ঠাস করে একটা চ’র দিতে।এত কি কথা একটা ছেলের সাথে?যখন তখন একে অপরের সাথে চিপকে থাকতে।কেন?কি এত কথা এদের?

সায়িদ বাইরে থেকে এসে ব্যস্ততার সাথে মেঘলাকে বলল,

—“তোরা এখনও এখানেই দাঁড়িয়ে আছিস!তাড়াতাড়ি যেয়ে গাড়িতে বস।”

সায়িদ আকাশকে চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

—“ভাইয়া এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?কিছু হয়েছে?”

এত সময় আকাশ কল্পনায় হেনরি না জানি কত বার মে’রে তক্তা বানিয়ে ফেলেছে।সায়িদের কথা শুনে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল,

—“কিছু বলছিস আমাকে?”

—“তুমি কি যাবে না?”

পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল,

—“যাব না কেন?দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি চল।”

আকাশের সাথে পা মিলিয়ে সায়িদও বাইরে চলে যায়।সবাই গাড়ি উঠেছে কিনা দেখে নিয়ে বিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।

_____________________

গেটে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে সিয়ামদের।ঝিনুকের কাজিনদের মাঝে শিমু একটু বেশি বারাবারি করছে সবকিছুতে।যা কারোর সহ্য হচ্ছে না।মেঘলা ঠিক করে রাখছে আর কোনো ভাবে টাকা নিতে দেবে না এই মেয়েকে।গেটে থেকে অর্ধেক পকেট খসে দিছে।সিয়ামের জুতা পাহাড়া দিচ্ছে সবাই মিলে।কোনো ভাবে জুতা নিয়ে গেলে আর ফেরত নিবে সেটাও ঠিক করে রেখেছে।

বিয়ে ভালো ভাবে সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বসে আছে।কিছু সময়ের মধ্যে বউ নিয়ে বের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেবে বরপক্ষ।মেঘলাদের সাথে শিমুরা আর কোনো কিছু পেরে উঠে নি।মেঘলা পুরোটা সময় সিয়ামের সাথে ছিল।এখন তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।আকাশ আশেপাশে মেঘলাকে খুঁজছে।কথা নাহলেও তাকে চোখে-চোখে রেখেছে।

হঠাৎ করে পিছন থেকে কেউ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে ডাক দিলো,

—“আরে আকাশ ভাইয়া আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন এখানে?”

আকাশ পিছনে ঘুরে দেখে শিমু দাঁড়িয়ে আছে।আকাশকে একা পেয়ে যেন সে অমূল্য সম্পদ পেয়ে গেছে।মেঘলার সাথে লাগতে গেয়ে আজ আকাশের সাথে তার কথা বলা হয়ে ওঠে নি।আবার আকাশকে একাও পাওয়া যাচ্ছিল না।এখন আকাশকে একা পেয়ে তার খুশি কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।কি বলবে?কি করবে?কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।কিন্তু তার এই সুখ বেশি সময় রইল না।

শিমু গদগদ হয়ে বলল,

—“আপনাকে কিন্তু বেগুনি রংয়ে দারুণ মানায়।আপনি এমনিতে অনেক হ্যান্ডসাম তারপর এই বেগুনি রঙের পাঞ্জাবিতে আপনাকে পুরো নায়ক মনে হচ্ছে।”

আকাশ বিরবির করে বলল,

—“যার কথাগুলো বলার কথা তার কোনো খবর নেই।এই পিচ্চি মেয়ে আসছে তার সাথে ফ্ল্যাটিং করতে।আর কিছু দেখার বাকি আছে?”

চিন্তিত হয়ে শিমুকে বলল,

—“আমি কি আপনাকে চিনি পিচ্চি আপু?”

শিমুর মুখটা চুপসে গেলো।ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না।তাকে চিনতে পারছে না আকাশ?কালই তো কত কথা বলল আর আজ চিনতে পারছে না।এক রাতের ব্যবধানে তার নাম,চেহারা সব ভুলে গেলো?আর তাকে দেখে পিচ্চি মনে হচ্ছে?

অভিমানী গলায় বলল,

—“আমি শিমু।কাল আপনার সাথে কত কথা বললাম আর আপনি আমাকে এভাবে ভুলে গেলেন?”

—“ওহ তুমি!তা কি হয়েছে পিচ্চি?কেউ বকা দিয়েছে নাকি?চকলেট খাবে?”

এত বড় একটা মেয়েকে পিচ্চি বলছে?আবার চকলেট খাবে কিনা জিজ্ঞেস করছে।যদি এমনি জিজ্ঞেস করত তাহলে মানা যেতো।এখন কি রাগ করে বা বকা খেয়ে চকলেট ঘুষ নেওয়ার বয়স কি তার আছে?নেই।কিঞ্চিৎ রাগ প্রকাশ করে বলল,

—“আমি বাচ্চা না।কলেজে পড়ি আমি।”

—“১৭ বছরের একটা মেয়েকে পিচ্চি ছাড়া আর কিছু বলা যায় শিমু?”

ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথাটা বলল মেঘলা।তার সাথে সায়িদ আর আতিফ দাঁড়ানো।মেঘলাকে দেখে শিমু খুশি হতে পারলো না।এর আগে মেঘলাকে ভালো লাগলেও আর আজ লাগছে না।তার সব কাজে বাধা দিচ্ছে।এখানে না আসলে কি হতো না?

মেঘলা কয়েক পা সামনে এগিয়ে এসে বলল,

—“আকাশ ভাইয়া যে হাফ বিবাহিত তা কি তুমি জানো?”

আকাশ আবাক হয়ে মেঘলার দিকে তাকাল।শিমু চোখ বড় বড় করে বলল,

—“কি!”

পর মূহুর্তে হকচকিয়ে গেলো।মেঘলা ঠোঁটে চেপে হাসছে।মেঘলা সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

—“কেন তুমি জানো না?”

—“আমি বিশ্বাস করি না।আপনি আমাকে মিথ্যা বলছেন।”

আতিফ ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

—“কেন বিশ্বাস করো না?তুমি কি ভাইয়া পছন্দ করো শিমু?তাহলে অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আমার ভাবি আছে।”

—“তাহলে সে কোথায়?”

শিমুর প্রশ্নে তিনজনে নড়েচড়ে দাঁড়ালো।এত কিছু ভেবে তারা কথাটা বলে নি।মেঘলা আতিফ আর সায়িদের দিকে তাকাল।শিমুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

—“ভাইয়ার বিয়েতে তোমাকে দাওয়াত দেওয়া হবে তখন বউ দেখে নিও।এখন তাকে দেখলে তুমি বেহুশ হয়ে যেতে পারো।এত কাজ তার ভিতর তুমি অসুস্থ হলে ঝামেলা হবে।”

শিমু অসহায় ভাবে আকাশের দিকে চাইল।ভেজা গলায় বলল,

—“সত্যি আপনার কেউ আছে?”

আকাশ দ্রুত হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।শিমু টলমলে চোখ নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।মা ঠিকই বলে সে সব কিছু তাড়াতাড়ি করে।আকাশের ব্যাপারে আগে তার জেনে নেওয়া উচিৎ ছিল।

আকাশ থ হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।মেঘলা তার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল,

—“এখানে থাকার ইচ্ছা হলে থেকে যান।যদি বাসায় যেতে চান তাহলে তাড়াতাড়ি আসেন আমরা বের হব।”

_________________

বিয়ের জনিত সকল ঝামেলা শেষ।সব আত্মীয় স্বজনরা আরও আগে চলে গেছে যে যার বাসায়।মেঘলার রুমে বসে মেঘলা আর ঝিনুক গল্প করছে।

হেনরি মেঘলার সামনে এসে করুন গলায় বলল,

—“মেঘু সাহস পাচ্ছি না।আজ সারাদিন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম।”

মেঘলা শান্ত গলায় বলল,

—“এত ভয় পাচ্ছো কেন?”

—“আই ডোন্ট নো।”

—“জোনিতা কই?”

—“ছাদে রেখে আসছি।প্লিজ হেল্প মি।”

মেঘলা দীর্ঘশ্বাস নিলো।ঝিনুক কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

—“কি হয়েছে?তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো?”

মেঘলা ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বলল,

—“হেনরি জোনিতাকে প্রপোজ করবে কিন্তু ভয়তে বলতে পারছে না।ছেলে মানুষ এত ভয় পেলে চলে বলো?”

ঝিনুক মৃদু হেসে বলল,

—“তাই তো এত ভয়ের কি আছে?জোনিতাকে বলে দেও তোমার মনের কথা।আআআ….এক কাজ করো এত সাদা-মাটা ভাবে না বলে সুন্দর করে সবকিছু সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে তারপর বলো।যাতে জোনিতার স্পেশাল ফিল হয়।”

মেঘলা এক চিৎকার দিয়ে বলল,

—“ওয়াও ভাবী!গুড আইডিয়া।এটা আরও দারুণ হবে।হেনরি তুমি কি বলো?তুমি রাজি থাকলে আমি সব ব্যবস্থা করে দিব।”

হেনরি মাথা চুলকে বলল,

—“এই প্লান আমার মাথায় আগে আসে নি কেন?”

হেনরি নিজের কথায় নিজেই হেসে দিলো।তার সাথে ঝিনুক আর মেঘলাও হেসে দিলো।হেনরি ওদের সাথে কিছু কথা বলে ছাদে জোনিতার কাছে চলে গেলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে