Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৬০+৬১+৬২

প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৬০+৬১+৬২

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা এখনও একই জায়গায় বসে আছে,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৮টা বাজে এখন
ঠিক ৮টা বাজতেই শান্ত ছাদ থেকে ফিরে তার রুমে আসলো
আহানাকে নিচে বসে থাকতে দেখে সে কিছু বললো না,চুপচাপ ল্যাপটপটা নিয়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো সে
বিন ব্যাগে বসে আবারও আহানার দিকে তাকিয়ে সে আহানাকে দেখতে পেলো না
লজ্জা পেয়ে চলে গেছে মনে হয়,শান্ত মুচকি হেসে তার কাজে মন দিলো
আহানা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,এত কিছুর পরেও আহানার আজ ভীষণ খারাপ লাগছে
কেন লাগছে তা সে জানে না,তবে মনে হচ্ছে সবকিছুই সে শান্তকে জোর করিয়ে করাচ্ছে
এটা কিআসলেই ঠিক?
নাহ ঠিক নয়,আমি ঠিক করিনি,উনার সামনেই যাব না আর

রাত ১১টা বাজতে চললো অথচ আহানা এখনও ওর রুমে আসছে না
শান্ত কাজ সেরে উঠে ডিনারের জন্য আসলো,সাথে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আসতেছে,আহানা মনে হয় নিতুর রুমে,কারণ মায়ের রুমেও সে আহানাকে দেখেনি
মেয়েটা দূরে দূরে থাকছে কেন এত!
.
আহানা নিতুর রুমে বসে নিতুর সাথে গল্প করছে,শান্ত নিতুর রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো ওদের গল্পে সামিল হওয়ার জন্য
আহানা শান্তকে দেখে নড়েচড়ে বসলো
শান্ত কথার ছলে ছলে বারবার ওর দিকে তাকায় শুধু
আহানা তাই উঠে গিয়ে বললো”নিতু আমি ডিনার রেডি করতে যাচ্ছি,তোমরা কথা বলো কেমন?”
আহানা আর দেরি না করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো
শান্ত ও সাথে সাথে বেরিয়ে ওর হাতটা ধরে ওকে আটকালো তারপর বললো”এরকম পালাচ্ছো কেন বলোতো?”
.
আহানা চোখ বন্ধ করে রেখেছে,তারপর একটা শ্বাস নিয়ে বললো’কাজ আছে আমার,হাতটা ছাড়ুন”
.
শান্ত হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের দিকে চলে যেতে যেতে বললো”আমি ডিনার করবো না”
.
আহানা শান্তর চলে যাওয়া দেখছে,তারপর টেবিলে খাবার সার্ভ করে,মাকে আর নিতুকে খাবার দিয়ে শান্তর রুমের দিকে তাকিয়ে রইলো সে
তারপর শান্তকে আসতে না দেখে সেদিকে গেলো সে
ওকে ডাকার জন্য
মা আবার কি না কি মনে করে বসবেন পরে!
আহানা রুমে এসে দেখলো শান্ত চাদর টেনে শুয়ে পড়েছে,রুমের লাইটটা অফ করে,এখন ল্যাম্পশ্যাড জ্বলছে শুধু
আহানা কাছে এসে বললো”আসুন না,মা ভাববে আমরা আবারও ঝগড়া করেছি,শুধু শুধু রাগ করছেন কেন?”
.
শান্ত ঘুরে আরেকদিকে ফিরে গেলো
আহানা সেদিকে এসে শান্তর গায়ে হাত রেখে বললো”আসুন না প্লিস! ”
.
খাবো না বললাম না???
.
আহানা আর কিছু বললো না,আবারও ফেরত গেলো ডাইনিং রুমের দিকে
মা আহানার দিকে তাকিয়ে আছেন,তার আর বুঝতে বাকি নেই দুজনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে,উনি তাই খাওয়া শেষ করে চুপচাপ চলে গেলেন,কারণ এরা যতই ঝগড়া করুক না কেন পরে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়
.
আহানা খাবার খেলো না,রুমে ফেরত আসলো না খেয়েই,তারপর শান্তর এক পাশে শুয়ে পড়লো সে
.
কি থেকে কি হয়ে গেলো,আমি কি উনাকে রাগ দেখিয়েছিলাম?তাহলে উনি এতো রাগ কেন দেখাচ্ছেন আমাকে?খাবারটাও খেলো না,সকালে নাস্তা করবে কিনা কে জানে!

খিধাতে দুজনের একজনেরও ঘুম হচ্ছে না
রাত ২টোর দিকে দুজনেই এপাশ ওপাশ করতে করতে উঠে পড়লো একসাথে
আহানা ঘুম ঘুম চোখে শান্তর দিকে চেয়ে কিছু না বলে উঠে গিয়ে পানি এক গ্লাস ছিলো সেটা নিলো খাওয়ার জন্য
শান্ত তার আগেই এসে ছোঁ মেরে গ্লাসটা নিয়ে নিলো তারপর বললো”আমি কিছু খাইনি,সো এটার প্রতি অধিকারটাও আমার”
.
আহানা গাল ফুলিয়ে বললো”আমিও খাইনি”
.
খাওনি কেন?আমি কি তোমাকে বলেছিলান যে খেও না?
.
আপনি এরকম রাগ দেখান কেন আমাকে?কি করেছি আমি?
.
কি করো নাই সেটা বলো,কিস করার পর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতেছো,অন্য কোনো হাসবেন্ড হলে সিধা গালে চড় মেরে দিতো বুঝলা?
.
আহানা মাথা নিচু করে বললো”আমি ভাবলাম আমি জোর করাতে এমন করেছেন”
.
তুমি?তুমি কিসের জন্য আমাকে জোর করেছো?কবে?বরং কিস করতে গিয়ে দুবার চড় খেয়েছি আমি
.
না সেটা না,ভলোবাসার ব্যাপারটার কথা বলছি
.
শান্ত পানির গ্লাসটা টেবিলে রেখে আহানার দুকাঁধ ধরে বললো”দেখো আহানা!আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ,এরকম রিলেশন হওয়া স্বাভাবিক ”
.
তার মানে আপনি আমার স্বামী হওয়ার কারণেই এমনটা করলেন?আর কিছু না?
.
না?আর কি?
.
আহানা মুখ কালো করে বিছানায় এসে বসলো,তারপর কেঁদে দিলো আবার
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে ওর পাশে বসে পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরে বললো”উফ,তোমাকে কি করে বুঝাই যে!!! থাক,বুঝতে হবে না,তুমি কি চাও খোলসা করে বলো,আমাকে এতো প্যাচে ফেলবা না একদম
.
আহানা শান্তর দিকে ফিরে বসে হাত দিয়ে চোখগুলো মুছে বললো”আপনি আমাকে ভালোবাসেন?”
.
শান্ত আহানার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে,তারপর কিছু না বলেই উঠে বারান্দায় চলে গেলো
আহানা বুঝতে পারলো শান্ত ওকে ভালোবাসে না,সে কাঁথাটা টেনে আবারও শুয়ে পড়লো,শান্তর থেকে এই উত্তরটা সে আর কোনোদিন চাইবে না,যে ওকে ভালোবাসে না তাকে জোর করে কি লাভ!
.
পরেরদিন সকাল সকাল আহানা শান্তর সামনে ওর মাকে বললো সে কয়েকদিনের জন্য তার মায়ের বাড়িতে থাকতে চায়
শান্ত চুপচাপ নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো,কথাগুলো ভালোমতন শুনেছে সে,কিন্তু তাও কোনো পাত্তাই দিলো না
আহানাও নিরুপায় হয়ে সব গুছিয়ে মায়ের বাসায় চলে আসলো
সারাদিনে দুজন দুজনের কোনো খোঁজ নিলো না
.
আহানা বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা ছবি দেখছে,ছবিটা শান্তর,যখন তার ১৮বছর বয়স ছিলো এটা তখনকার ছবি
আহানা শান্তি রহমানের রুমে পেয়েছিলো ছবিটা,বেশ ভালো লেগেছিলো বলে ছবিটা নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলো আহানা
শান্তর গায়ে ছিলো সবুজ রঙের একটা টিশার্ট
বাসার সামনে দাঁড়িয়ে এক গাল হাসি নিয়ে সে ফটোগ্রাফারের দিকে চেয়ে ছিলো
আহানা ছবিটা দেখতে দেখতে ফোনের দিকে তাকালো একবার,ফোন জ্বলছে না,শান্তর একটা ফোনের আশায় সে আজ সারাটা দিন লাগিয়ে দিয়েছে,কিন্তু কেন?
যে আমাকে ভালোবাসে না তার প্রতি আমার কেন এত টান??একটা স্বার্থপরকে ভালোবাসি বলেছিলাম,এই তার নমুনা
.
শান্ত বাসায় ফিরেছে,আজ জলদি করেই ফিরেছে,সে জানে বাসায় আহানা নেই,এউ কথা ভেবে অফিসের কোনো কাজেই তার মন বসছিলো না তাই চলেই আসলো
.
পুরো রুমটা তার খালি পড়ে আছে,সেই বৃষ্টি শুরু আবারও,মন খারাপের সময় কেন যে বৃষ্টি হয় কে জানে!
শীত এমনিতেই পড়তে শুরু করেছিলো এবার তো জোরেশোরে পড়বে মনে হয়
শান্ত চেঞ্জ করে এসে বিছানায় বসলো,আহানার গায়ের গন্ধ পুরো রুম জুড়ে,অথচ সে নেই,একটা কথার উত্তর দেইনি বলে চলে গেলো
আমি বলেছি সব কিছুর একটা সময় আছে
জীবনে প্রেম করি নাই,হুট করে আই লাভ ইউ বলতে পারি না আমি
তোমার প্রশ্নের সোজা উত্তরটাও দিতে পারলাম না বলে তুমি চলেই গেলে?আমার মন বুঝতে এত কিসের কষ্ট তোমার?সব কিছুতে দেমাগ দেখানো কি সাজে?
সন্ধ্যা হয়ে আসতেছে একটা কল পর্যন্ত করে নাই,নিশ্চয় আমার কলের অপেক্ষাই আছে,এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারবো না আমি
.
শান্ত একটা কালো জ্যাকেট নিয়ে তার টিশার্টের উপর দিয়ে সেটা পরতে পরতে বেরিয়ে গেলো
আহানাদের বাসার সামনে কার থামাতেই সবার আগে নজরে পড়লো আহানাকে
আহানা তার বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি উপভোগ করছে
পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে গেছে তার
শান্ত কার থেকে নেমে আহানার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো,আহানা চোখ খুলছে না,সে বৃষ্টির মধ্যে ডুবে আছে
.
আমার প্রতি যত রাগ সব নিজেকে ভিজিয়ে মেটাচ্ছে,জ্বর হলে কার ক্ষতি হবে আমার নাকি তার??এটা বুঝে না
.
শান্ত বাসায় ঢুকে সোজা আহানার রুমে আসলো
গায়ের জ্যাকেটটা খুলে হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে ছুটলো সে
কাছে এসে আহানার গায়ে জ্যাকেটটা পরিয়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করালো সে
আহানা চমকে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
.
শান্ত কিছুটা রাগি চোখে আহানার দিকে তাকালো তারপর নিচু হয়ে আহানাকে কোলে তুলে নিলো সে
আহানার পুরো শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে
আহানা নরম গলায় বললো”যে আমাকে ভালোবাসে না তার কোনো অধিকার নেই আমাকে ছোঁয়ার,তার থেকে প্রাপ্য যে অধিকার আছে সেসব ও আমার লাগবে না”
.
শান্ত আহানাকে বিছানায় নামিয়ে আলমারি থেকে তোয়ালে নিয়ে ওর গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো”কবির মতন বড় বড় ডায়ালগ না মেরে মাথা মুছে ফেলো”
কথাটা বলে শান্ত আলমারি খুঁজে একটা থ্রি পিস বের করে সেটাও আহানার গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো”চেঞ্জ করো শাড়ীটা,নাহলে আমি করাই দেবো”
.
আহানা তোয়ালে আর জামা কাপড় সব বিছানায় ফেলে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত সামনে দিয়ে এসে দরজাটা লাগিয়ে ফেললো
আহানা বিরক্ত হয়ে বললো”আর কি চান আপনি!এখানে এসেছেন কি জন্যে?যাকে ভালোবাসেন না তার প্রতি এত কিসের দরদ আপনার?”
.
দরদ না কর্তব্য
.
চুলোয় যাক সেসব,এখন পথ ছাড়ুন আমার,অনেক বিরক্ত করছেন!আপনাকে কে বলেছিলো এখানে আসতে?আমাকে ছাড়া চলে না?
.
শান্ত কিছু না বলে আহানাকে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তোয়ালে বাড়িয়ে ধরলো ওর দিকে
.
আহানা আবারও চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর শাড়ীর আঁচল মুঠো করে ধরলো তারপর বললো”চুপচাপ মাথা মুছো নাহলে……
.
আহানা বাধ্য হয়ে চুল মুছে নিচ্ছে,শান্ত এবার থ্রি পিসটা আহানার হাত ধরিয়ে দিয়ে বললো”নাও চেঞ্জ করে আসো”
.
পারবো না,আঁচল ছাড়ুন আমার
.
শান্ত আঁচলটা আরেকটু টেনে ধরে বললো”মেজাজটা খারাপ করিও না আহানা,যেটা বললাম সেটা করো, তুমি জানো বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার অসুখ হয় তাও জেনে শুনে এমন করার কারণ কি সেটা বুঝতেছি না আমি
সিমপাথি পেতে চাও আমার থেকে?
.
আহানার চোখে পানি এসে গেছে শান্তর মুখে সিমপাথি কথাটা শুনে তারপর নিজেকে শক্ত করে সে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো”সিমপাথি??আপনার থেকে সিমপাথি পাওয়ার আশায় আমি এসব কেন করবো??আমি ওমন মেয়ে?আপনার তা মনে হয়?
আমি কণা নই মিঃশাহরিয়ার শান্ত!আমি আহানা,আমার কাছে নাটক জিনিসটা নেই,আমি যা করি মন থেকে করি
আর আপনি আমাকে এখন বলছেন আমি সিমপাথি পাওয়ার জন্য বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম??আমার জ্বর হলে আপনি কেয়ার দেখাবেন তাই??
কেয়ার ছাড়া আর কি দেখিয়েছেন যে সেটা পাবার আশায় আমি এমন করবো?
আমার শরীর আমার ইচ্ছা,আমি যা খুশি তাই করবো,আপনার কোনো অধিকার নেই কেনো কিছুতেই
আপনি আমাকে ভালোবাসেন না
নামেই স্বামী আপনি তাহলে এতকিছুতে মাথা ঘামান কেন আপনি?
বেরিয়ে যান আমার বাসা থেকে,আমি আপনার মুখ ও দেখতে চাই না!যার মনে আমাকে নিয়ে এরকম নিচু মনমানসিকতা আছে তার সাথে আমার কোনো কথা নেই
.
শান্ত রেগে আহানার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো
.
আহানা গালে হাত দিয়ে কিছু না বলে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাত ধরে কাছে টেনে এনে বললো”এমন ভাবে কথা বলতেছো যেন আমার আর তোমার এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছে?”
.
আহানা নিশ্চুপ হয়ে কেঁদে যাচ্ছে
.
শান্ত ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”মুখে বললেই বুঝবা আমি তোমাকে ভালোবাসি?এটা কোন ধরনের লজিক আহানা?তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না আমি,বারবার আমাকে বাধ্য কেন করো??গায়ে হাত তুলতেও বাধ্য করলে তুমি
ভালোবাসি বলিনি মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি না??তোমার প্রশ্নের উত্তর দিই নাই বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি না?
তুমিও ম্যাচিউর এবং আমিও,বাট তোমার লজিক সেকেলে রয়ে গেছে,বাচ্চামি ছাড়া আর কিছুই দেখি না আমি তোমার মাঝে
কাল বিকালের সেই সময়টুকু যথেষ্ট নয় তোমার এটা বুঝার যে আমি তোমাতে আসক্ত???ভালোবাসি বললেই তুমি হ্যাপি?আর কিছু লাগবে না তোমার??তো ফাইন,আমি তোমাকে ভালোবাসি,এবার খুশি তো তুমি??নিজের সমস্ত জেদ ছেড়ে এবার শাড়ীটা চেঞ্জ করে ফেলো,আর কথা বাড়িও না তুমি
.
আহানা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো”জোর করে চাইনি আমি,আর তাই চলে এসেছিলাম এখানে,আপনার দয়া আমার লাগবে না,চলে যান এখান থেকে!”
.
আই নিউ ইট!তুমি ভালোবাসি কথাটা শোনার পরে ঠিক এই রিয়েকশানটা দেখাবে,আসলেই কি চাও তুমি নিজেও সেটা জানো না আহানা
.
আহানা শান্তকে দূরে ঠেলে দিলো ধাক্কা দিয়ে
তারপর বললো”আমি শুধু এটা চাই আপনি এখান থেকে চলে যান প্লিস!”
.
শান্তর মাথা চড়ক গাছ,রেগে আহানাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেললো সে
তারপর হাত দিয়ে নিজের মাথার চুলগুলো টানলো মিনিট দুয়েক ধরে
আহানা এক দৃষ্টিতে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত চুল গুলো ঠিক করে গায়ের টিশার্টে হাত দিলো,চট করে খুলে ফেললো টিশার্টটা
আহানা এখনও চুপ করে তাকিয়ে আছে
শান্ত টিশার্টটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মেরে এগিয়ে আসতে আসতে বললো”আজ সব প্রমাণ করে দেবো”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
প্রমাণ লাগবে না আমার,ভালো যে বাসেন না তা খুব ভালো করে জানি,তো কিসের প্রমাণ দেবেন আপনি??
বলার আর কিছু আছে??
.
শান্ত পাশ থেকে থ্রি পিসটার ওড়না হাতে নিয়ে আরও এগিয়ে আসতেছে
আহানা ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে খানিক ভয় পেয়ে গেলো,তারপর একটু পিছিয়ে বললো”বললাম না,কোনো প্রমাণ লাগবে না আমার,এসব কি করতে চান কি আপনি? ”
.
দেখবা তো!
.
আহানা কিছু বলার আগেই শান্ত ওড়না দিয়ে আহানার মুখটা ভালো করে বেঁধে ফেললো,আহানা ভেবেছিলো হয়তবা ওর হাত দুটো বাঁধবে কিন্তু এ দেখি তার উল্টাটা করলো শান্ত
আহানা চোখ বড় বড় করে শান্তর দিকে তাকিয়ে হাত উঠালো মুখের বাঁধন খুলার জন্য, শান্ত এবার তার দুহাত ও ধরে ফেললো শক্ত করে
.
আহানা কিছু বলতেও পারছে না,হাত ও নাড়াতে পারছে না,কিরকম একটা বিরক্তির মাঝে সে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত মুচকি হেসে বললো”কেমন লাগছে??
বেশি বকবক করো বলেই একদম সবার আগে মুখ বেঁধেছি তোমার,এবার কাউ কাউ করো যত পারো”
.
আহানা চোখ দিয়ে রাগ ঝাড়ছে তাও কোনো লাভ হচ্ছে না,শান্ত এমন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেন সে আহানার রাগে ভয় পায়নি বরং আরও রাগানোর ফন্দি আঁটছে
.
কি??কিছু বলবা না আহানা??বলো না একটু শুনি!ভালোবাসি বলি না সবসময় এটা বলো যে এখন ভালোবাসা দেখাতে আসায় এত ছটফট করছো কেন হুমমম?
.
আহানা হাত পা নাড়াতে নাড়াতে শান্তর গায়ের দিকে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে,শান্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”এত কিছুর মাঝে তুমি আমার বডি চেক করছো?ভাল্লাগছে??”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে মুখ আরেকদিকে ঘুরিয়ে নিলো,সোজা বারান্দার দিকে তাকালো সে,বৃষ্টি থেমে গেছে,সব অন্ধকার,ঘড়িতে সাড়ে ৭টা বাজে এখন
আহানা শান্তর দিকে তাকাচ্ছে না,হাত ও নাড়াচ্ছে না,চুপ করে নির্বাক হয়ে সে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,অথচ বাইরে কিছুই নেই দেখার মতো,সব অন্ধকারে ছেয়ে গেছে,শান্তদের বাসার মতন এখানে ল্যাম্পপোস্ট নেই
আহানা তার গলায় শান্তর স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো সাথেসাথে
তাও তাকালো না সে শান্তর দিকে,একটা গভীর রাগ এখন তার মধ্যে বাস করছে
বারবার করে সে বলেছিলো যে তাকে ভালোবাসি না বলে যেন শান্ত তাকে না ছোঁয়
আর শান্ত তার এই কথাটা শুনলো না,বললো ঠিক আছে তবে সেটা জেদ ধরে,মন থেকে তো বলেনি
তাই এখন এত ভালো লাগার স্পর্শের মধ্যেও ভালো লাগছে না,বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে তার
শান্তর ঠোঁটজোড়া আহানার গলা থেকে সরিয়ে আহানার কানের কাছে নিয়ে আস্তে করে বললো”তোমাকে খুব ভালোবাসি,কখনও কাউকে এই কথাটা বলা হয়ে উঠেনি বলে তোমাকে হুট করেই বলতে এত দেরি হয়ে গেলো!ভেবেছিলাম তুমি হয়ত বুঝবে!
কিন্তু তুমি তো মুখের কথায় বিশ্বাসী! শুনে রাখো! আই নিড ইউ!!”
.
আহানা কথাগুলো শুনে শান্তর দিকে তাকালো,শান্তর মুখটা আহানার পাশে বালিশের উপর রাখা,তারপরেও দুহাত দিয়ে সে এখনও আহানাকে ধরে রেখেছে


ভোর ৫টা ১৪বাজে,আহানা খাটের এক কোণায় গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে শান্তর দিকে তাকিয়ে
শান্ত তার সাদা পিঠটা উপরে রেখে ঘুমাচ্ছে মাথা বালিশের নিচে গুজে দিয়ে
আহানা এবার নড়েচড়ে বিছানা থেকে নামলো,শাড়ীর আঁচলের অর্ধেক অংশ শান্তর বুকের নিচ দিয়ে গিয়ে বিছানার ওপাশে পড়েছে,আহানা আঁচলটা ধরে বেকুবের মতন চেয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর এক ঝটকা দিতেই শান্ত মুখের উপর থেকে বালিশটা একটু সরিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললো”আরও ভালোবাসা চাও নাকি?ঘুমাতে পারিনি,এবার একটু ঘুমাতে দাও আমাকে”
.
ঢং করবেন না একদম! জোর করে ভালোবাসা দিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছে,আঁচলের উপর থেকে নিজের এই খাম্বা বডি সরান!
.
শান্ত আঁচলটা সরিয়ে আরেকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো
আহানা আঁচল হাতে নিয়ে ব্রু কুঁচকে বারান্দায় চলে আসলো,শাড়ীটা কাঠ শুকা শুকিয়েছে,গায়ে থেকেই শুকিয়ে গেছে,আজব ব্যাপার হলো শান্ত যখন এসেছিলো তখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে আর এখন সকাল সাড়ে পাঁচটা বাজে
অথচ মা আর খালা একবারও ডাকলো না!!
আহানা ভাবতে ভাবতে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো একবার!
কাল রাতে যা হয়েছে সব প্রথমে আহানার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই হচ্ছিলো,পরে যখন আহানা শান্তর থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনলো তারপর থেকে সে শুধু শান্তর মুখের দিকেই চেয়ে ছিলো
.
আহানা ফ্রেশ হয়ে সেই থ্রি পিসটা পরে রুম থেকে বের হয়েছে,মা নিজের রুমে ঘুমাচ্ছেন,খালাও
আহানা সোফায় এসে পা তুলে বসে একটু হেলান দিলো,চোখে ঘুম নেমো আসলো তার সাথে সাথেই,ভেজা চুলে ঘুম ভালো করে আসে,এখনও তাই হলো,তার উপর শীত শীত আবহাওয়া
.
শান্ত এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়েছে,আহানা রুমে নেই
সকাল সকাল যে ঝাড়িটা দিলো বাপরে বাপ!!
যেন তাকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছি,কেন করেছি!এখন এসব বলে লাভ আছে??
সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতো কখন তাকে বলবো আমি ভালোবাসি,এবার সোজা সাফটা যখন প্রুভ করে দিলাম তখন উনি রাগ দেখাচ্ছেন,আমার কি,আমার বউকে আমি ভালোবেসেছি,আমার কাছে তো ভালোই লাগছে
তাহলে ও এরকম রাগ দেখায় কি জন্যে সেটা বুঝলাম না আমি
শান্ত নিজের টিশার্টটা খু্ঁজে সেটা পরে নিলো তারপর গেলো ফ্রেশ হতে
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আহানাকে এখনও না দেখে এবার সে রুম থেকে বের হলো
আহানাকে নিচে দেখলো সোফায় পা তুলে গুটিশুটি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন উনি,কপাল কুঁচকানো রেখে
এই মেয়েটা আমাকে বাধ্য করেছিলো কাল রাতে জোর করতে আর এখন এমন ভাব করে ঘুমাচ্ছে যেন সব দোষ আমারই ছিলো!
ভালোবাসলেও দোষ না বাসলেও দোষ
.
শান্ত কাছে এসে আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো
আহানা সাথেসাথে চোখ খুলে ফেলে উঠে পিছিয়ে গিয়ে বললো”আবার কি চাই?”
.
যদি বলি আবারও তোমাকে চাই?
.
একদম হাত ভেঙ্গে দিব,অনেক হইছে!
.
হাত ভাঙ্গবা কেন?আমি তোমার বর,এখন আমরা পুরোপুরি হাসবেন্ড ওয়াইফ,আমাদের মাঝে সে সম্পর্কটা হয়েছে
শান্ত কথাটা বলে আহানার দিকে দাঁত কেলিয়ে চেয়ে রইলো
আহানা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো”আর হবে না কোনোদিন,কারণ আমি আর আপনাকে আমার মুখ আর হাত বাঁধতে দেবো না”
.
তো না বেঁধেই ভালোবাসবো নাহয়
.
আপনি একটা!!!
যান এখান থেকে!স্টুপিড!
.
শান্ত হাসতে হাসতে ডাইনিংয়ে এসে পানি নিয়ে খেয়ে বললো”বউ যাও আমার জন্য নাস্তা বানিয়ে আনো,কাল তোমার চক্করে সন্ধ্যা থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি আমার”
.
আহানা আরোকদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো সোফায়
.
শান্ত ফ্রিজ খুলে আইসকিউব বের করে পা টিপে টিপে আহানার কাছে এসে আহানার গলার উপর ২/৩টা আইস কিউব নিয়ে ছেড়ে দিলো
আহানা এক চিৎকার দিয়ে উঠে বসে জামা ঝাড়তে ঝাড়তে সোফা থেকে নেমে গেলো সাথেসাথে
.
শান্ত সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো”যাও বাবু,যেটা বলছি সেটা করো”
.
আহানা রাগে কটমট করতে করতে রান্নাঘরের দিকে চললো
.
শান্ত টিভিটা অন করে একটা কুশন কোলে রেখে টিভি দেখায় মনযোগ দিয়েছে
আহানা পিঠ মুছতে মুছতে রুটি বানাচ্ছে
কি জ্বালাচ্ছে লোকটা!!এমন করে কেন বুঝি না!
.
আহানা এবার নাস্তা বানিয়ে এনে টেবিলে রেখে গাল ফুলিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”নেন,এসে খেয়ে নেন,আর আমাকে উদ্ধার করেন,আপনি তো সব করে আমাকে ইদানিং উদ্ধার করছেন
.
শান্ত চেয়ার টেনে বসে বললো”খাওয়াই দিবা না?”
.
আপনার সমস্যা কি বলুন তো?এমন ভাব করছেন যেন কি দয়া করছেন আমাকে যে আমি সেটা চুকাবো এখন?
.
দয়া?? কিসের দয়া?ভালোবাসি কিনা জানার জন্য মাথা চিবিয়ে খাচ্ছিলা আমার,এখন এমন রাগ দেখাও কেন?ভালোবাসা কম হয়েছে নাকি?
.
চুপ করে থাকুন তো!আপনি ভালোবাসেন কিনা তা জানার জন্য জিজ্ঞেস করছিলাম এটা ঠিক তবে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বলিনি আমি আপনাকে!
আপনি কাল যা করেছেন সব আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিলো
.
বিয়ের ২০/২৪দিন পর তুমি এটা বলছো?আমার মনে হয় না তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছিলো,আমি তোমার চোখের ভাষা পড়তে পারি আহানা
.
আহানা কিছু না বলে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
.
শান্ত নাস্তা করে মেইন দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে তার বাসায়
আহানার সামনে আসেনি আর,বাসায় ফিরে রেডি হয়ে অফিসে চলে গেলো সে
আহানা উঁকি দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো শান্তকে ড্রয়িং রুমে দেখা যাচ্ছে না তার মানে চলে গেছে,আহানা তাই আবার নিজের রুমে ফেরত চলে আসলো
.
শান্ত অফিসে মাথায় হাত দিয়ে নিজের রুমে বসে আছে,ঊষা এক কাপ কফি ওর সামনে রেখে বললো”স্যার আজ এত তাড়াতাড়ি এলেন যে?কোনো মিটিং আছে?”
.
নাহ,এমনি ভালো লাগছিলো না,যে ক্লায়েন্টের সাথে আমাদের কাল মিটিং করার ছিলো তাকে আজ ডাকো,অন্য কোনো ক্লায়েন্ট থাকলেও তাদের আজ ডাকো
আমি আজ সারাদিন ব্যস্ত থাকতে চাই
.
ঠিক আছে স্যার
.
আহানা ফোন নিলো শান্তকে কল করার জন্য তার আগেই কল আসলো শান্তর বাসা থেকে,রিপার কল
আহানা রিসিভ করতেই রিপা বললো”আহানা জলদি করে হসপিটালে চলে আসো,শান্তি ম্যাডামের শরীর খারাপ হয়ে গেছে”
.
আহানা বিচলিত হয়ে বললো”কিহহ!কি হয়েছে?মা এখন কোথায়?কেমন আছে?”
.
শরীর খারাপ হয়ে গেছে,বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছেন শুধু,আমি দেরি না করে হসপিটালে নিয়ে এসেছি,শান্ত স্যার ফোন ধরছেন না,তুমি জলদি চলে আসো,আমার একা ভয় করছে,নিতু ও স্কুলে
.
আহানা দেরি না করে বেরিয়ে পরলো বাসা থেকে,হসপিটালে এসে সে শান্তকে অনেকবার ফোন করলো কিন্তু শান্ত ক্লায়েন্টের সাথে মিটিংয়ে ব্যস্ত
এদিকে ডাক্তার অপারেশনের জন্য এডভান্স ৫লাখ টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলেছে সেটা দিলেই অপারেশন শুরু করবে
১০মিনিট ও অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে যার কারণে আহানা শান্তর অফিসে যাওয়ার সাহস করলো না,পেপারে সাইন করে হসপিটালের নিচে গেলো এটিএম থেকে টাকা তুলতে,একদিন শান্ত ওকে তার এটিএমের কার্ড দিয়েছিলো
টাকা তুলে সে টাকা জমা দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে করিডোরের একটা চেয়ারে এসে বসলো,সব টেনসন তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,এসময়টায় শান্তকে অনেক দরকার,এভাবে মাকে একা রেখেও যেতে পারছে না সে
.
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চললো,শান্ত সবে একটা মিটিং শেষ করেছে
ঊষা দৌড়ে এসে বললো”স্যার একটা কথা!”
.
কি?
.
স্যার আপনার একাউন্ট থেকে সকাল ১১টা ১৯মিনিটে ৫লাখ টাকা উইথড্র করা হয়েছে,মেসেজ এসেছে একাউন্ট থেকে
.
শান্ত চেয়ার থোকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”কি?কে উঠালো?কি দিয়ে উঠিয়েছে?”
.
স্যার আমি অফিসে ফোন করেছিলাম উনারা জানালো আপনার পার্সোনাল এটিএম কার্ড থেকে
.
আমার পার্সোনাল কার্ড তো আমি আহানাকে দিয়েছিলাম,তাহলে কি আহানা?এত টাকা তুললো কেন,কি হয়েছে!!
.
শান্ত ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আহানার ৫৬টা কল
শান্ত বুঝলো কিছু তো একটা হয়েছে,সোজা আহানাকে ফোন করলো সে,আহানা কাঁদতেছে শান্তি রহমানের জন্য
ফোন বাজতে দেখে চোখ মুছে রিসিভ করে শুধু বললো”শান্ত প্লিস হসপিটালে আসুন,শান্তি আন্টি অনেক অসুস্থ!অপারেশনের জন্য নিয়ে গেছে”
.
শান্তর মনে হলো পুরো পৃথিবীটা তার থমকে গেছে,হাত থোকে ফোন ফেলে সে ছুটলো,যত দ্রুত সে যেতে পারে
১৫মিনিটের পথ সে হাই স্পীডে গাড়ী চালিয়ে ১০মিনিটেই চলে আসলো,৪র্থ তলায় এসে আহানার দিকে তাকিয়ে সে সামনের রুমটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর মাকে দেখতে না পেয়ে আহানার কাছে এসে বললো”মায়ের কি হয়েছে আহানা?আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম তাই তোমার কল রিসিভ করতে পারিনি”
.
মায়ের হঠাৎ করে শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেছিলো,অপারেশনের জন্য নিয়ে গেছে,আমার হাতে টাকা নেই বলে আপনার এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলে কাগজে সই করে দিয়েছি
আমাকে রিপা জানালো,তখন ছুটে এসে দেখি মাকে অপারেশন করার রুমে নিয়ে গেছে
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো,৭বছরের আগের ঘটনাটা তার চোখের সামনে এখন মনে হচ্ছে আবারও রেপ্লে হচ্ছে
বাবাকে হারানোটার কষ্ট আবারও বুকে বিধছে খুব করে
মাকে হারালে সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না কিছুতেই
কি থেকে কি হয়ে গেলো,সকালে অফিসে আসার সময় নিয়ম করে শান্ত তার মায়ের রুমে গিয়েছিলো,,মা তখন চুপ করে বারান্দার বাইরের ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাহলে হঠাৎ করে শরীর এমন খারাপ হলো কেন তার
.
ডাক্তার বেরিয়ে এসে শান্তকে দেখে বললেন”আরে শান্ত!!আপনার মা উনি??”
.
শান্ত চোখ মুছে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”মায়ের কি হয়েছে ডাক্তার?শ্বাস কষ্ট হলে অপারেশন কেন?”
.
শ্বাসকষ্ট হয়ে উনার হার্ট এটাক হয়েছে,হার্ট এটাকের আগে যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় সেটাই হয়েছিলো,এবং তার পরপরই হার্ট এটাক হয়েছে উনার!আর তাই অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া উনাকে
ডাঃআয়ুশ এসেছেন বলে আমি বেরিয়ে এসেছি,উনি আজই চলে যেতেন এই কেসটা এসে পড়ায় থেকে গেলেন,টেনসন করবেন না উনি সব সামলে নেবেন ”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
মায়ের কি অবস্থা এখন?আমি একটু দেখতে যেতে পারি?
.
নাহ এখন না,অপারেশন শেষ হোক তার আগে দেখা করা যাবে না
.
মন খারাপ করে শান্ত এসে আহানার পাশে বসলো,রিপা গেছে নিতুকে স্কুল থেকে আনতে,আহানা শান্তর হাতটা ধরে বললো”সব ঠিক হয়ে যাবে”
.
সেটাই যেন হয়,মাকে ছাড়া আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার,,নিতু কখনও বাবার আদর পায়নি,আর এবার সে এত কম বয়সে মাকে ছাড়া হলে ওকে সামলাবো কি করে আমি?
এসব ভেবেই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আহানা!
.
এতসব ভাববেন না,মায়ের জন্য দোয়া করুন,আমি আমার মাকে ফোন দিয়েছি,মা আর খালা এসে পড়বে কিছুক্ষনের মধ্যেই
.
শান্তর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,চোখ মুছতে মুছতে প্রায়ই অচেতন হওয়ার মতো হাল হয়ে গেছে তার,আহানা ওর এমন অবস্থা দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না,কি করে শান্তকে সে এখন সামলাবে
আহানা বাধ্য হয়ে উঠে গিয়ে দুটো কফি আনলো হসপিটালের ক্যানটিন থেকে
শান্তর কাছে এসে কফির গ্লাসটা শান্তর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো”এটা খেয়ে নিন,মায়ের সাথে কথা বলার শক্তি টুকু জোগাবে অন্তত”
.
শান্ত কফি হাতে নিয়ে চুপচাপ খেয়ে আবারও অপারেশন থিয়েটারের কাছে এসে দাঁড়ালো,তার মিনিট পাঁচেক বাদেই মিঃ আয়ুশ বের হলো,শান্ত উনাকে দেখেই সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলো” মা কেমন আছে”
.
উনি মাস্ক খুলতে খুলতে বললেন”এখন সেফ আছে”
.
আমি একবার দেখা করতে পারি?কোনো কথা বলবো না
.
আচ্ছা,তবে শুধু আপনি যাবেন
.
কথাটা বলে আয়ুশ চলে গেলেন,শান্ত দেরি না করে তার মাকে দেখতে চলে গেলো
হসপিটালের ড্রেস পরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাকে,মায়ের এখনও সেন্স ফেরেনি,চোখটা বন্ধ তার
শান্ত কাছে এসে উনার মাথায় হাত রাখলেন তারপর নিঃশব্দে কেঁদে ফেললো সে
একটা টু শব্দ ও সে করেনি,মায়ের মাথায় হাত রেখে আরেক হাত দিয়ে মায়ের হাতটা ধরে চুমু খেলো সে,কাঁদতে কাঁদতে শুধু মাকেই দেখে যাচ্ছে শান্ত
নার্স ছিলো ৩জন,তারা শান্তর কান্না দেখে তাদের ও অনেক খারাপ লাগলো
মায়ের সব ছেলেই হয়ত এমনভাবে কাঁদে যখন তাদের মমতাময়ী মায়ের অসুখ হয়
শান্ত ও তাই কাঁদছে,তার কষ্টটা একটু বেশিই
কারণ সে তার বাবাকে তাদের ছেড়ে চলে যেতে দেখেছে,এখন আবার মায়ের এই অবস্থা,তার বুক ফেটে কান্না আসছে শুধু
মায়ের সুস্থতা দেখে অবশেষে তার কান্না থামলো,চুপচাপ মায়ের হাত ছেড়ে বেরিয়ে আসলো সে
বের হতেই আহানার মুখোমুখি হলো শান্ত,আহানা একবার শান্তর দিকে তাকাচ্ছে আবার রুমটার দিকে তাকাচ্ছে
শান্ত আহানাকে এমন বিচলিত দেখে চোখ মুছতে মুছতে চেয়ার টেনে বসে বললো”মা ঠিক আছে,আমি গিয়ে দেখে আসছি”
.
আলহামদুলিল্লাহ,জ্ঞান ফিরেছে?আমি একটু যাই?
.
না,ডাক্তার মানা করেছে
.
ওহ!বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে কখন?
.
কাল,বা পরশু জানি না ঠিক,তুমি এক কাজ করো আন্টির সাথে বাসায় চলে যাও,আমি এখানে মায়ের সাথে আছি
.
নাহ,বাসায় গিয়ে কি করবো,এখানে আমার প্রয়োজন হতে পারে আমি বরং এখানেই থেকে যাই
.
শান্ত আর কিছু বললো না,চুপ করে বসে থাকলো,আহানার মা আর খালা অনেকক্ষণ ছিলেন হসপিটালে
তারপর তারা বাসায় ফিরে গেলো,সাথে করে নিতুকেও নিয়ে গেলো
বাচ্চা মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে শেষ,তার উপর তার কিছু খাওয়াও হয়নি
আহানা আর শান্ত ও কিছু খায়নি,দুজনেরই মনের ভেতর ভয় মাকে নিয়ে
.
আহানা গালে হাত দিয়ে বসতে বসতে মাথা এলিয়ে কখন যে শান্তর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো,রাত ৯টা বাজতেই শান্ত আহানাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো কিছু খেতে যাবে তাই
আহানা সকালে যে নাস্তা করেছিলো আর কিছু খায়নি সারাদিনে
তাই সে শান্তর কথামতন রেস্টুরেন্টে চললো ডিনার করার জন্য
আহানা খিধার জোরে গপাগপ খেয়ে যাচ্ছে,কিন্তু শান্ত কিছুই মুখে তুলছে না দেখে আহানা এক লোকমা তুললো ওর মুখের সামনে
.
শান্ত বললো তার খিধা নেই,আহানা তাও জোর করায় আহানার হাতেই সে ২/৩লোকমা ভাত খেয়ে নিলো,ডিনার শেষে শান্ত আহানাকে জোর করে বাসায় রেখে গেছে,আহানা বাসায় আসতে চায়নি,কিন্তু শান্তর ধমকে আর কিছু বলার সাহস পেলো না সে
শান্ত বললো সে একাই তার মায়ের খেয়াল রাখতে পারে
আহানা এদিকে একা একা টেনসন করছে শান্ত ওখানে কি করছে,সব সামলাতে পারছে তো??
রাত ১২টা বেজে গেছে অথচ আহানার চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই,থাকার কথাও না,কারন মায়ের মতন একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে হসপিটালের বেডে পড়ে আছে,নিজের স্বামীও সেখানে তাহলে নিজের কি করে ঘুম আসে??
তার উপর জোর করে বাসায় ফেলে গেছে আমাকে,আমি একা একা এত টেনসন কি করে নিতে পারি
♣♣
আহানা পরেরদিন ভোর হতে না হতেই বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো সোজা হসপিটালে,এসে দেখলো হসপিটালে মায়ের রুমে এপাশে একটা সিঙ্গেল বেডে শান্ত মাথায় হাত রেখে ঘুমাচ্ছে,আহানা শান্তকে আর মাকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো,আসার সময় নাস্তা বানিয়ে এনেছে সে শান্তর জন্য,কাল রাতে শুধু ৩লোকমা খেয়েছিলো শান্ত সেটা আহানার মনে আছে,আস্তে করে সে শান্তর কাছে গেলো জাগানোর জন্য পরে ভাবলো হয়ত সারারাত ঘুমাতে পারেনি তাই সে শান্তকে জাগালো না,ব্যাগটা এক পাশে রেখে সে করিডোরের দিকে আসলো,হসপিটালে এখন ক্লিনাররা ছাড়া আর কেউ নেই,তাও সবাই ঘুমাচ্ছে ফ্লোরে কাঁথা বালিশ বিছিয়ে
ভোর ৫টা বা ৬টা থেকে হয়ত তাদের কাজ শুরু হবে
আহানা হেঁটে হেঁটে চারিদিকটা দেখে নিয়ে পিছন ফিরতেই শান্তকে হঠাৎ দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো,তারপর বুকে থুথু দিয়ে বললো”এমন করে ভয় দেখালেন কেন,আমার কলিজা কাঁপতেছে,সারা হসপিটাল খালি,হুট করে এমন একজনকে দেখলে ভয় পাবারই কথা আমার”
.
তুমি এই ভোরে এখানে কেন?রিকসা পেলে কই?
.
হুহ,হেঁটে এসেছি
.
এত দরকার ছিলো?বাসায় ঘুমিয়ে থাকতে পারলে না?
.
ঘুম আসে না তো আপনাদের টেনসনে,আপনি কাল রাতে আমাকে বাসায় রেখে এসে ঠিক করেননি একদম
.
তোমাকে এখানে রাখলে আলাদা বেড নিতে হতো তার উপর তোমাকে একা রুমপ দিতে দেওয়ায় টেনসন ছিলো,আমি থাকতাম মায়ের পাশে তাই বলে এত ঝামেলা মাথায় নিই নাই,তোমাকে সোজা বাসায় রেখে এসেছি একেবারে
.
আপনি কি করে জানলেন যে আমি এসেছি?
.
তুমি আমার বালিশের কাছে নাস্তার টিফিন বক্স রেখে এসেছো,তোমার হাতের রান্নার ঘ্রান নাকে আসতেই জেগে গেছি
.
আচ্ছা,তো এখন নাস্তা করবেন?সার্ভ করে দিব?
.
নাহ এখন না
.
মায়ের অবস্থা কেমন?রাতে জ্ঞান ফিরেছিলো?
.
হুম,রাত ২টোর দিকে চোখ খুলেছিলো,আমি তখন তার পাশে চেয়ারে বসা ছিলাম,আমাকে দেখতে পেয়ে খুশি হয়েছে অনেকে
.
আমাকে দেখলে আরও খুশি হতো হুহ!
.
ত্যাড়ামি না করে চলো রুমে গিয়ে বসে থাকবে,এভাবে একা একা করিডোরে হাঁটার সাহস দিছে কে তোমাকে ?
.
এখানে তো আর মজনু বা সাইমন এসে পড়বে না
.
তবে তাদের মতো আরও লোক আছে পৃথিবীতে,মেয়ে হয়েছো যখন!!! তখন বুঝেশুনে চলা শেখো
.
ভয় দেখতে হবে না আমাকে,চলুন তো,আমি মায়ের কাছে বসে থাকবো এখন
.
আহানা সোজা গিয়ে মায়ের কাছে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো,শান্ত পাশের বেডটায় বসে চোখ ডলতেছে,চোখে ঘুম নেই তার
হসপিটালে আসলে এই এক ঝামেলা,ঠিকমত ঘুম আসে না
মোটকথা নিজের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও সহজে ঘুম আসে না কারোরই
শান্তর হয়েছে তাই
.
সকাল ৭টা বাজে এখন,আহানা মায়ের বেডটায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে,শান্ত উঠে এসে আহানাকে উঠিয়ে দিতে গিয়েও পারলো না,বেচারি আমার মতন মনে হয় ঘুমাতে পারেনি ঠিকমত,এরকম একটা জীবনসঙ্গীনি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,যে আপনার মাকে নিজের মা মনে করে
শান্ত আহানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গেলো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে,ডাক্তার বললেন সব তো ঠিকঠাক আছে তবে একটু খেয়াল রাখতে হবে উনার,সবসময় উনার পাশে কাউকে না কাউকে থাকতে হবে মাস্ট
উনার সাথে হাসি-মজা করতে হবে যাতে সবসময় তার মন ভালো থাকে
শান্ত হসপিটালের কর্তৃক সব পেপারে সাইন করে নিলো,আজই মাকে বাসায় নিয়ে যাবে সে
আহানা এখনও ঘুমায় কি ঘুম তার,চোখের সামনে দেখছে শান্ত তাকে কিস করতে আসতেছে
এক কাঁপুনি দিয়ে আহানা জেগে গেলো,চোখ মুখ ডলে বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন ছিলো,মাথার ঘাম মুছে সে চেয়ার থেকে উঠে পাশের বেডটায় এসে বসলো দপ করে
এত কিছুর পরেও কিসের কথা আসতেই ভয় পায় কেন আমার!
কিন্তু শান্ত গেলো কই আবার,নাস্তা করবে না!
.
আহানা বেড থেকে নেমে দরজা দিয়ে উঁকি দিলো করিডোরে,কিন্তু বের হলো না,মাকে একা রেখে যাওয়া যাবে না তাই
শান্ত প্রায়ই ৩০/৩৫মিনিট পর ফেরত আসলো,মুখে হাসি নিয়ে
.
আহানা বললো”কি?এরকম হাসির কারন কি?”
.
মাকে আজই নিয়ে যাওয়া যাবে
.
এটা তো খুশির খবর,কখন নেওয়া যাবে?
.
দুপুরের দিকে,দাও নাস্তা,খেয়ে নেবো,আজ আর অফিসে যাবো না,মায়ের কাছে থাকাটা মোর ইম্পরট্যান্ট
.
হুম
.
শান্ত নাস্তা করে নিলো সাথে আহানাও,মাকে আপাতত খাবার খাওয়ানো যাবে না,হসপিটাল থেকে ওরা আলাদা করে সুপ আর কি কি যেন দেবে সেটা খেতে বলা হয়েছে
আহানা আর শান্ত এখন দুজনে সেই পাশের বেডটায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এক খোঁচা মারলো
শান্ত তখন নিজের ফোন দেখতেছিলো,আহানার খোঁচায় সে আহানার দিকে চেয়ে নরমালি বললো”সব ভুলে গেছো?মনে লাড্ডু ফুটতেছে তোমার?”
.
আহানা চমকে বললো”কি ভুলছি?”
.
পরশু রাতটা!
.
আহানা চোখ বড় করে একটু সরে বসলো তারপর বললো”ও হ্যাঁ,ভুলে গিয়েছিলাম তো,না সেটা তো আজীবন মনে থাকবে,খোঁচা তো দিয়েছি অন্য কারনে
.
কি কারণ?
.
আগে বলুন আপনি আমাকে ঐ রাতের কথা মনে করিয়ে দিলেন কেন?আমি কি বলছি” শান্ত কিস মি”
.
চোরের মনে পুলিশ পুলিশ
.
চোর কে আর পুলিশ কে?
.
চোর ছিলে তুমি,এখন পুলিশ পুলিশ ভাব নিতেসো
.
আহানা শান্তর কথাটা গভীর মনযোগ দিয়ে ভাবতে লাগলো,তাও এর মানে বুঝলো না
তারপর বললো”আরে শুনুন না”

হুম বলুন না,কান তো খাড়া,সব শুনতেছি,বলুন,অনেকদিন আপনার ক্যাঁচক্যাঁচ শুনি না আমি,এখন কান আমায় বলছে”কিছু একটা মিসিং”
.
একদম মজা নেবেন না,একটা সিরিয়াস কথা বলার ছিলো,ভুলে গেছি,ধুর!
.
আচ্ছা আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি,খোঁচা মেরেছিলা কি জন্যে?
.
ও মনে পড়েছে,অনেকদিন আপনার সাথে ঝগড়া করা হয় না তো তাই ভাবলাম একটু ঝগড়া করবো
.
মা সামনে ঘুমাচ্ছে,আর তুমি ঝগড়া করতে চাও সেধে সেধে?
.
এটা চেঁচিয়ে ঝগড়া হবে না,এটা হবে ফিসফিস ঝগড়া
.
ওকে তাহলে করতে পারো,শুরু করো
.
আপনি একটা উজবুক
.
উজবুক নাম শুনেছি,তবে এর মানে জানি না সরি,তাই পাল্টা জবাব দিতে পারলাম না,তবে সময় পেলে গুগল করে বের করতে পারলে তোমার চুল ছিঁড়বো মনে রেখো
.
তাহলে আপনি খাটাশ
.
খাটাশের কি দেখলে?
.
কিছুই না! এমনি এমনিও পদবি দেওয়া যেতে পারে পার্সোনাল লোকদের
.
আমি তোমার পার্সোনাল লোক?কবে হলাম?
.
বিয়ের দিন থেকেই
.
তবে তুমি কিন্তু আমার সেই ছোটবেলা থেকেই পার্সোনাল লোক
.
ঠিক কখন থেকে?
.
তুমি আমার ৪বছরের ছোট ছিলে,তো যখন তুমি জন্মেছিলে তখন মনে হয় আমি ৪বছরের ছিলাম,তেমন হিতাহিত জ্ঞান না থাকলেও আমি নাকি তোমার সেরেলাক নিজে আগে টেস্ট করে তারপর তোমার মুখে দিয়ে দিতাম যখন তোমার উঠতি বয়স ঠিক তখন
.
আগে আপনি টেস্ট করতেন কি জন্যে?
.
সেরেলাক অনেক মজার একটা খাবার,শুধু শুধু খেতে তো জোস লাগে তার উপর তোমার প্রতি আমার কেয়ার কাজ করতো তখন,তোমাকে আন্টি কি খাওয়াই না খাওয়াই আমার তো জানতে হবে তাই না?
.
এইটুকু বয়সে এসব ভাবতেন?
.
জি না ভাবতাম না,ভাবা শিখেছিলাম তাও মায়ের থেকে
তোমাকে তো আমি দুচোখে দেখতে পারতাম না
তোমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দেওয়ার ও চেষ্টা করতাম,তোমার বুকে বালিশ রেখে আন্টি তোমার ঘুম পাড়াতো আর আমি সেটার উপর উঠে একদিন বসতে গিয়েছিলাম,পরে আম্মু হাতেনাতে আমাকে ধরে নাকি অনেক পিটিয়ে ছিলো আর প্রমিজ করিয়েছিলো যেন আমি সবসময় তোমার পাশে ছায়া হয়ে থাকি,তোমার কেয়ার করি,তোমাকে বেশি ভালোবাসি
.
আপনি এত গুন্ডা ছিলেন?
আল্লাহ তুমি আমাকে জন্মের পরপরই কোন রাক্ষসের কাছে বড় হতে দিয়েছিলা
.
এই রাক্ষসটাই এখন তোমার বর
.
যাই হোক!আমার তো ছিঁটেফোটাও মনে নেই
.
থাকবে কি করে??আমি যখন আমেরিকা চলে আসি তখন তুমি অনেক ছোট ছিলে,এত কিছু মনে থাকার কথা না
আমার ৭বছরের পরের তোমার সাথে কাটানো সময় গুলো মনে আছে,বাকিগুলা মা বলেছিলো আমায়,সেগুলো মনে ছিলো না,কারণ তোমাকে আমি পিচ্চিকাল থেকেই চিনি
.
এত এত মেয়ের মাঝে আহানাকেই মনে ধরেছিলো কেন?
.
কে বলেছে??তোমার মাঝে আহামরি বলতে জাস্ট দুইটাই জিনিস আছে সেটা হলো মায়া ভর্তি একটা চেহারা আর দুষ্টুমিষ্টি স্বভাব এগুলাতে আমার মা ইম্প্রেসড আর আমি তো ছোট থেকে একসাথে থাকতে থাকতে ফিদা
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”তাহলে এতদিন চেপে রেখেছিলেন কেন?”
.
আমার কথা হলো ভালোবাসি বললেই সেটা ভালোবাসা হয় না
কাজে দেখানোতে বিশ্বাস করি আমি,তুমি তো নিব্বি,তুমি এসব বুঝবা না খুকি
চলবে♥

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

3 মন্তব্য

Leave a Reply to Tania উত্তর বাতিল

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ