প্রিয় রুদ্রাক্ষী – কলমে: জান্নাত

0
674

#গল্পপোকা_কবিতা_লিখন_প্রতিযোগিতা

কবিতা: প্রিয় রুদ্রাক্ষী
কলমে: জান্নাত

প্রিয় রুদ্রাক্ষী,
কেমন আছো?
তোমার প্রিয় দোলনচাঁপা ভালো আছে তো?
আচ্ছা নিমাই ভট্টাচার্য এর লেখা
তোমার পছন্দের বই মেমসাহেব
তুমি নিয়ম করে পড়োতো?

রুদ্রাক্ষী,
আমি রোজ অনিয়মেই স্মৃতিতে হারিয়ে যাই!
তুমি কি বলতে পারো
স্মৃতিরা কেন এমন হানা দেয় আমার বুকে?

আমার বেখেয়ালি মন কেবলই বলে
আবার নতুন করে শুরু হোক!
বুকের বা পাশের বারান্দায় তোমায় যত্ন করে লুকিয়ে রাখি!
সেবারের মত যেন তৃতীয় পক্ষ আমার রুদ্রাক্ষীর মনটা ছুঁতে না পারে!
রুদ্রাক্ষী যেন হারিয়ে না যায় অচেনা মায়ায়!

আমাদের প্রেমটা হয়েছিল বিশ্বাসে
দু’জন দু শহরের,
তবু দু’জনে মিলে গড়েছিলাম
ভালোবাসার শহর!
সেই শহর ছিল স্বপ্নে আঁকা,
ভালোবাসার কথোপকথনে ভীড় জমতো এক ঝাঁক অতিথি পাখির।

হঠাৎই একদিন আকাশ কালো করে মেঘের গর্জন!
আমি সেই মেঘকেও বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম অতি সংগোপনে!
কিন্তু ধীরে ধীরে তোমার অভিযোগ আর আমার অভিমানে
ভালোবাসার শহরে ধুলো পড়তে শুরু করে!
আমি প্রতিনিয়ত গোছানোর চেষ্টা করেছি,
চেয়েছি শহরটা থাকুক স্বচ্ছ।

কিন্তু তুমি!
রুদ্রাক্ষী তুমি ঠিক কি চেয়েছিলে?
এই প্রশ্নটা রোজ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে!
আমার উপর আনা অভিযোগ
তুমি আমাকেই জানালেনা!
ডাকলে তুমি বিচারক!
আমরা কিন্তু পারতাম
ছোট ছোট অভিমানগুলো ভেঙে
ভালোবাসার ঘরটা মজবুত করে নিতে!
পারতাম কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে!

তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি না শুনলে
আমি ঘুমোতে পারতাম না
অথচ সব কথা বলতে হবে তৃতীয় ব্যক্তির সামনে!
এমন বিচারকের মায়ায় কিভাবে জড়ালে?
কিভাবে ভুলে গেলে আমার ভালোবাসাকে?

সবটা মেনে নিয়েও আমি ভালোবেসে গেছি তোমাকে!

আর তুমি কোনো কারন ছাড়াই বিচ্ছেদ চাইলে!
কেমন পাষাণীর মত যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দিলে!
বিনা বার্তায় হারিয়ে গেলে!

অথচ তোমার শেষ কথাটি ছিল ভালোবাসি!
এই একটা শব্দের মায়ায় আমি বেঁচে আছি।
বেঁচে আছি বহুকাল ধরে!

আজ বুড়ো বয়সে এসেও মনে পড়ে
আমার রুদ্রাক্ষীর সেই সাজ!
তুমি কি এখনো লাল টিপ পড়ো?
লাল সাদা শাড়িতে জড়াও নিজেকে?
চোখে কাজল পড়ে কার দিকে তাকাও?

শেষ যেদিন তোমার সাথে কথা হয়েছিল
আমার বুকের মধ্যে ঝড় উঠছিল!
আমি আজও বিশ্বাস করিনা
তুমি আমায় ছাড়া থাকতে পারো!
আচ্ছা সম্পর্কে ইতি টানার পর,
তোমার কখনো মনে হয়নি একবার ফিরে দেখা উচিত?

অন্তত একটা বার যদি ফিরতে তাহলে দেখতে পেতে
তোমার রুপম তোমার অপেক্ষায়।
এই যে দেখো, চুল-দাড়ি পেকেছে,
অথচ কেউ নেই!
পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার বেলায় হাতটি ধরে বলে যাবো, অনেক জ্বালাতন করেছি আমায় ক্ষমা করে দিও!

এতগুলো বছর ধরে আমি শুধু স্মৃতি লালন করেছি,
যেখানে খুঁজে পেয়েছি রুদ্রাক্ষীর কাজল কালো চোখ, লাল টিপ, সাদা শাড়ি!
কত চিঠি ভাঁজে ভাঁজে রেখেছি তোমার নামে!
শুধু ভালোবাসার শহরটাকে আর গোছানো হয়নি!
কতবার গিয়েছি সেই শহরে,
ধুলো জমে আছে শহরের আনাচে কানাচে!
ভালোবাসা এত কাঁদায় কেন রুদ্রাক্ষী?
তোমার অপেক্ষা করতে করতে আমার মধ্য রাতগুলো নির্ঘুম কেটেছে!
বিশ্বাস করো, আমার প্রতিনিয়ত মনে হতো তুমি ফিরবে মধ্য রাতে!
ফিরে এসে আমার চোখের জল মুছতে মুছতে বলবে
“রুপম তোমাকে ভালোবাসি”।
কিন্তু তুমি আর ফিরলেনা।

বাবা মরে যাওয়ার পূর্বে বলেছিলেন,
রুপম তোর ভালোবাসা সার্থক হোক!
মা বলেছিলো,
রুদ্রাক্ষীরা কোনেদিন ফিরেনা বাবা!

আমিও আর বেশিদিন নেই পৃথিবীতে
শেষ বেলায় সূর্য যখন পশ্চিমে
দিনের মায়া কাটিয়ে হারাচ্ছে বহুদূরে
তখনও আমার রুদ্রাক্ষীর কথা মনে পড়ছে!
মনে পড়ছে রুদ্রাক্ষীর সেই ভালোবাসি শব্দটাকে!

আকাশে যখন নীলেরা ভেসে বেড়ায়
আমার মনে হতো আমার রুদ্রাক্ষীর কষ্ট হচ্ছে!
কারন রুদ্রাক্ষীর কষ্টের রং ছিলো নীল!

দু’জন দু’প্রান্তে
আমার মত তুমিও কষ্ট পাচ্ছো কি বহুকাল?
হয়তো না!
এই জীবনের মায়ায় ঘেরা প্রেম
তোমাকে কিসের কষ্ট দিবে!
তুমি তো মায়া কাটাতে জানো!

অবশেষে, ভালো থাকুক এই শহরের রুদ্রাক্ষীরা!

বয়সের ভাড়ে আমি আজ ক্লান্ত ভীষণ
কিন্তু ক্লান্ত হইনি কভু রুদ্রাক্ষীর অপেক্ষায়।
ক্লান্ত দেহে মনটা বড্ড অসহায়!
যদি দেখা মিলতো প্রিয়তমার,
এই ভাবনায় হয়তো মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ হবে আমার!
ভালো থেকো রুদ্রাক্ষী,
ভালো থেকো!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে