প্রিয় অভিমান পর্ব ১০

1
1994

#প্রিয়_অভিমান

পার্ট : ১০

লেখা নিশাত সিদ্দিকা
.
আমি অসহায়ের মতো একা একা বসে কাদঁতে লাগলাম,শেষ পর্যন্ত মা ও আমায় ভুল বুঝলেন,
কেউই আমার কোনো কথা শুনলো না সবাই কাব্য ভাইয়ের বলা মিথ্যা কথাগুলো বিশ্বাস করে নিল,
কাব্য ভাইয়া সবটা এতো নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে ,আমায় এমন এক সিচুয়েশনে এনে দাঁড় করালেন যেখানে সত্যিটা আমি চিৎকার করে বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না।
তারা ভাবছে আমি ভয় পেয়ে মিথ্যা কথা বলছি।
কারন সবাই জানে আমি ছোট বেলা থেকেই ভীতু প্রকৃতির ,কাব্য ভাইয়া আমার এই দুর্বলতারই সুযোগ নিলেন,
উনি খুব জগন্য একজন মানুষ ,উনার সাথে একটু রেগে কথা বলার জন্য উনি আমার এত বড় একটা ক্ষতি করে প্রতিশোধ নিলেন।
শুধু মাএ উনার জন্য মা আমাকে ভুল বুঝে এতোটা কষ্ট পেয়েছেন।
এর জন্য কাব্য ভাইয়াকে আমি কোনদিনও মাফ করবো না।
,
.
কিছুক্ষন আগের ঘটনা,
আমি মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকালাম কিছু বলার জন্য ,আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলে উঠলাম,
মা তোমাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে,মা কাব্য ভাইয়া আমাকে,
এটুকু বলার মাঝে মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন ,
তোকে আর সাফাই গাইতে হবে না আমি সবটা শুনেছি,আর এখানে এসে যা দেখলাম তাতে আমার কাছে সবটা জলের মতো পরিষ্কার ,
তুই কাব্যকে আগ থেকে পছন্দ করতি ,সেটা আমাদের বললেই পারতি,
আমি মায়ের কথার মাঝখানে কেঁদে কেঁদে বললাম,
-মা আগে আমার কথাটা তো তুমি শুনো,তুমি আমায় ভুল বোঝছো,
আমার কথা শুনে মা আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললেন,
আর কি শুনার বাকি রেখেছিস,কাউকে ভালবাসা তো অপরাধ না ,আমাদের একটিবার বলে দেখতে পারতি আমরা কি করি, তা না করে কাউকে কিছু না জানিয়ে
সবাইকে লুকিয়ে বিয়ে করে ফেললি,লুকিয়ে বিয়ে করতে ভয় করেনি এখন সেটা সবার কাছে স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছিস।
তুই যে এভাবে এমন একটা কাজ করবি আমরা ভাবতে পারিনি ।তোর কাছ থেকে আমরা এটা আশা করিনি ,তোর এই কাজের জন্য তোর বাবা এবং আমি খুব কষ্ট পেয়েছি,
বলেই মা কেঁদে কেঁদে চলে গেলেন ,আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ।
,
হঠাৎ কারো আগমনের সারা পেয়ে আমার ভাবনার ঘোর কাটল,তাকিয়ে দেখি আপু এসেছেন,
আপু আমার কাছে আসতেই আমি আপুকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলতে লাগলাম,
আপু মা আমাকে ভুল বুঝে কষ্ট পেয়ে চলে গেলেন,
মা,বাবা আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন আমি তাদের কাছে যেতে চাই,প্লিজ আপু আমায় বাড়ি যাবার ব্যবস্তা করে দে,
আমার নিজেকে ভীষন অপরাধী লাগছে,নিজেকে নিজে শেষ করে দিতে মন চাইছে,মায়ের চোঁখে অপরাধী হয়ে আমি বাঁচতে পারবো না,
আমাকে এই ভাবে পাগলের মতো কাঁদতে দেখে আপু আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত হতে বলতে লাগলেন,
সুহা শান্ত হও বোন আমার এভাবে কাঁদিস না,তুই যা করেছিস তাতে বাবা,মায়ের খারাপ লাগারি কথা,কষ্ট পেয়ে মা অভিমান করে চলে গেছেন ,কিন্তু তারা তোর উপর বেশিদিন রাগ করে থাকতে পারবেন না,
দেখিস কিছুদিন পর সবটা ঠিক হয়ে যাবে ।
এরি মাঝে আন্টি ও রুমে চলে এলেন তিনি এসে ও আমায় শান্তনা দিতে লাগলেন,আন্টি বললেন,তিনি আমাদের নাকি বাবা,মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাহলে নাকি তারা আর আমাদের উপর রাগ করে থাকতে পারবেন না,আরো বললেন বাবা , মারা সন্তানের উপর রাগ করে থাকতে পারে না সন্তান যত বড় ভুলই করোক না কেন।
আন্টি আর আপু কথায় আমি ভরসা পেয়ে কান্না থামিয়ে শান্ত হলাম,অপরাধ না করে ও আজ আমি কাব্য ভাইয়ের করা অপরাধের সমান অংশীদার ,কিন্তু উনাকে তো কেউ কিছু বলছে সব কথা আমাকে শুনতে হচ্ছে।
আপু আর আন্টি আমার কাছে বসে আমাকে আরো অনেক কিছু বুঝাতে লাগলেন,
তারপর অনেক রাত হয়েছে বলে তারা আমাকে খাবার খাওয়ার জন্য জোর করতে লাগলেন,তাদের অনেক করে বললাম যে আমি খাবো না আমার খিদে নেই কিন্তু তারা আমার কোনো কথাই শুলো না জোর করে আমাকে নিয়ে গেলেন।
,
.
নিচে এসে দেখি কাব্য ভাইয়া স্নেহাকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন আর স্নেহা উনার কোলে ঘুমিয়ে পরেছে,
কি সুন্দর একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পরম যত্নে ঘুম পাড়াচ্ছে একে দেখলে কারো বুঝার সাধ্য নেই এ এতো বড় একটা শয়তান।
আমি মাথা নিচু করে উনাকে পাশ কাটিয়ে চলে এসে আন্টির পাশে ডাইনিং চেয়ারে বসলাম,
খানিক্ষন পর আপু আর উনি ও চলে আসলেন,উনি এসে আমার সামনের চেয়ারে বসলেন,
আমি কোনদিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে খেতে লাগলাম,
হঠাৎ পায়ে কিছুর স্পর্শ পেয়ে আমি চমকে উঠলাম ,আমি খাওয়া থামিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম জিনিসটা কি,
এটা প্রথমে আমার পা চেপে ধরল তারপর পায়ের মাঝে আস্তে আস্তে স্লাইড করতে লাগল,আমি প্রথমে ভীষন ভয় পেয়ে গেলাম কিন্তু
কিছুক্ষনের ব্যবধানে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না এটা কি ,আমি অগ্নি দৃষ্টি উনার দিকে তাকালাম কিন্তু সে আমার অগ্নিদৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মহা আনন্দ খেতে খেতে আমার পায়ে স্লাইড করতে লাগল,
উনার এই পায়ে ঘষাঘষির অত্যাচারে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল,এই আপদটা যে আমাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে কয়লা বানিয়ে শান্ত হবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ।
পৃথিবীতে এতো এতো ভালো মানুষ থাকতে এর মতো একটা বজ্জাত লোকই আমার বোনের দেবর হতে হলো,
আর আজ থেকে আবার সে বজ্জাতটা আমার বর হয়ে গেল,ইশ!!আমার ভাগ্যটা এতো হলো কেন কে জানে,
আমি পা সরিয়ে নিতে চাইলে সে আমার পা শক্ত করে চেপে ধরছে,
বসে বসে এই অত্যাচার সহ্য করছি আর খাবার নাড়া ছাড়া করছি,
গলা দিয়ে আমার খাবার নামছে না,
আমাকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে আন্টি প্রশ্ন করলেন,
কি হলো সুহা তুমি খাচ্ছো না কেন কোনো সমস্যা,
কিছু হয়েছে তোমার মুখটা এমন দেখাচ্ছ কেন?
আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে জোর করে মুখে একটা শুকনো হাসি এনে বললাম,
কিছু হয়নি আন্টি এইতো খাচ্ছি।
খাবার ছেড়ে উঠতেও পারছি না আপু আর আন্টির জন্য,উনারা কি ভাববেন,
উনার এই স্পর্শগুলো বারবার আমার শরীর কাঁপিয়ে তুলছে,আমার এই অবস্তা দেখে উনি মজা পাচ্ছেন কিছুক্ষন পর পর আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিয়ে হাসছেন,উনার এই হাসি দেখে রাগে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল খাবার প্লেটটা উনার মুখে ছুঁড়ে মারি ,কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো হবে না আমি যদি তার মুখে প্লেট ছুঁড়ে মারি দেখা যাবে এই রাক্ষসটা আমাকেই আছাড় মেরে ফেলে বর্তা বানিয়ে ফেলেছে ,নিজের ইচ্ছাকে নিজের মাঝে দমিয়ে রেখে
দাঁতে দাঁত চেপে খাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেলাম,মনে মনে উনাকে ভয়ংকর সব গালি দিতে লাগলাম ,অবশেষে অসহ্য হয়ে খানিক্ষন পর প্লেটে পানি ঢেলে উঠে পরলাম ,
,
.
ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে সোজা আপুর রুমে চলে এলাম,
কিছুক্ষন পর আপুও চলে এলেন,আপুর সঙ্গে বসে গল্প করতে লাগলাম ,বিয়ের সত্যিটা আর ভয়ে বলতে যাইনি ,বললেও বিশ্বাস করবে না উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে বলবে বারবার একি মিথ্যে কথা কেন বলছি ,অনেকক্ষন আপুর সাথে কথা বললাম ,খুব ঘুম পাচ্ছে আপুকে ঘুমানোর কথা বলতেই আপু বলে উঠলেন,
কাব্য ভাইয়ার রুমে গিয়ে ঘুমাতে ,আজ থেকে নাকি ওটাই আমার রুম,
আপুর মুখে এমন কথা শুনে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল,আমি ওই রাক্ষসটার সাথে একি রুমে অসম্ভব !!!
আপুকে ব্ল্যাকমেইল করতে হবে,আজকের রাতটা কোনো মতে আপুর সাথে কাটিয়ে কালই আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে,
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে রিকুয়েস্ট করতে লাগলাম,
আপু আজ আমি তোমার সাথে থাকবো ,প্লিজ আপু তুমি মানা করো না ,একটা রাত তোমার সাথে থাকিনা ,আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে মাকে ভীষন মনে পরছে ,বাড়িতে থাকলে তো মায়ের সাথে ঘুমাতাম,তুমি কি তোমার কাছে আমায় থাকতে দিবে না,প্লিজ আপু প্লিজ !
-কিন্তু সুহা ভাইয়া কি এটা মানবেন,
-প্লিজ আপু তুমি উনাকে একটু বুঝিয়ে বলো না,
আমার রিকুয়েস্ট করার মাঝে কাব্য ভাইয়া রুমে এসে ঢুকেলেন,উনাকে দেখে আমি থেমে গিয়ে অসহায় দৃষ্টি আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম,
উনি এসে আপুকে বলে উঠলেন,
কি হল ভাবি আমি কি এবার আমার বৌ কে নিয়ে যেতে পারি ,
আমি তখনও আপুর দিকে অসহায় মতো তাকিয়ে রইলাম,আপু একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
ভাইয়া একটা রিকোয়েস্ট ছিল,
আপুর কথা শুনে কাব্য ভাইয়া বলে উঠলেন,
ভাবি এমন কোনো রিকোয়েস্ট করো না যেটা আমি রাখতে পারবো না,
উনার কথা শুনে আপু দমে গেলেন,
কাব্য ভাইয়ার রাগ সম্পর্কে সবার ধারনা আছে তাই আপু উনাকে আর না ঘাঁটিয়ে ,আমার দিকে তাকিয়ে চোঁখ দিয়ে ইশারা করলেন আমি যাতে উনার সঙ্গে চলে যাই,
কাব্য ভাইয়া আমার দিকে আদেশের সুরে বলে উঠলেন,
সুহা রুমে চলো অনেক রাত হয়েছে,
উনার কথায় আমি জেদের সাথে বলে উঠলাম,
আমি কোথাও যাবো না আজ আমি আপুর সাথে এখানেই থাববো,
আমার কথায় উনি রেগে গিয়ে বলে উঠলেন,
আমাকে রাগালে কিন্তু খুব খারাপ হবে যেটা বলছি শুনো ,আমার সঙ্গে এক্ষুনি রুমে চলো,
উনার কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল কি পেয়েছেটা কি এই লোক সবসময় শুধু জোর খাটানো
আমি তো আজ কিছুতেই উনার সাথে যাবো না,
আমি উনার রাগকে তোয়াক্কা না করে বললাম,
আমি কারো সাথে কোথাও যেতে পারবো না আমি এখানেই ঘুমাবো বলেই আমি ঘুমানোর জন্য খাটে উঠতে যাবো তখনই কাব্য ভাইয়া এসে আমাকে পাজো কোলে তুলে নিলেন,
উনার এমন কান্ডে আমি হতবিহ্বল হয়ে পরলাম,তারপর চিৎকার করে বলতে লাগলাম ,ছাড়ো আমাকে আমি তোমার সাথে যাবো না ,আমি আপুর সাথে থাকবো,হাত পা ছুঁড়তে লাগলাম নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ,কিন্তু উনি কিছু না বলে আমাকে কোলে নিয়ে নির্লিপ্তভাবে হেঁটে যেতে লাগলেন ,উনার মুখের ভাব ভঙ্গি এমন যেন আমি উনার নিজের সম্পত্তি ,আর আপু নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে রইলেন আমাদের দিকে।
,
.
কাব্য ভাইয়া আমাকে উনার রুমে নিয়ে এলেন আমি তখনও মৃদু চিৎকার করছিলাম আমাকে ছাড়ার জন্য,
রুমে এসেই উনি আমাকে একটা ধমক দিলেন,
চিৎকার থামাও না হলে এক্ষুনি কোল থেকে ফেলে দিবো,
উনার ধমক শুনে আমি নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম,
মুখ বন্ধ করে তাকালাম চারিদিকে তাকিয়ে আমি অবাক,
উনি আমাকে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলেন,তারপর উনি গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন,
উনার দরজা লাগানো দেখে ভয়ে আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল ,
উনি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন ।(চলবে)

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে