প্রিয় রাগান্বিতা পর্ব-২০+২১

0
551

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২০
________________
কতক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে মুহূর্তেই ফিক করে হেসে ফেললো রাগান্বিতা৷ এতে ইমতিয়াজ কি অবাক হলো মটেও হলো না সে শুধু চেয়ে রইলো রাগান্বিতার হাসি জোড়ানো ঠোঁটের দিকে। গম্ভীর আওয়াজে বললো,
“কি হলো হাসছো যে? ভয় লাগে নি তোমার।”

রাগান্বিতা তার হাসি থামালো দু’কদম এগিয়ে গেল ইমতিয়াজের দিকে। হাল্কা একটু উঁচু হয়ে ইমতিয়াজের কানের কাছে ঠোঁটটা নিয়ে শীতল সুরে সুধালো,
“ভালোবাসার মানুষকে কেউ কখনো খুন করতে পারে নাকি ইমতিয়াজ সাহেব?”

ইমতিয়াজ আওড়ালো, চোখের পলক ফেললো বার কয়েক স্তব্ধ সুরে গাইলো,
“তুমি জানলে কি করে আমি তোমায় ভালোবাসি?”

আবার হাসে রাগান্বিতা নিজের কক্ষের দুয়ারের দিকে এগিয়ে গিয়ে আবার পিছন ফিরে বললো,
“আমি তো জানি আপনি আমাকেই ভালোবাসেন আপনার সন্দেহ থাকলে কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন এতে আমি কিছু মনে করবো না। হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে কক্ষে আসুন আমি অপেক্ষা করছি।”

রাগান্বিতা চলে গেল। আর ইমতিয়াজ কেবল হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার যাওয়ার পানে। বললো,
“মেয়েটা বড্ড অন্যরকম।”

ইমতিয়াজ এবার হাতের কোদালটা কাঁধে তুলে এগিয়ে যেতে লাগলো তাদের কক্ষ থেকে আরো দু’ কক্ষ পরে। কোদালটা মাটি কাটার কাজে রবিন নিয়ে গিয়েছিল কাল। আজ সকালেই কাদা মিশ্রিত বাহিরের দুয়ারের ধারে যে রেখেছিল আর বাড়ির ভিতরে আনা হয় নি। একটু আগে আকাশের অবস্থা বুঝতে ইমতিয়াজ দুয়ার খুলেছিল তখনই তার নজরে আসলো তাই ওটাকে নিয়ে উপরে আসছিল কাঁদা থাকায় আর কাঁধে তোলেনি। তবে হাতে তার কাঁদা লেগেছে একটু!’
—–
ইমতিয়াজ হাত পা ধুইয়ে ওযু করেই তাদের কক্ষে ঢুকলো। রাগান্বিতা তখনও বিছানায় বসে। ইমতিয়াজ গামছা হাতে ভিতরে গিয়ে তাড়া দিয়ে বললো,
“এখনো ঘুমাও নি কেন বউ?”

রাগান্বিতা চোখ তুলে তাকালো। খানিকটা লাজুক সুরে সুধালো,
“দাদিমা বলেছিলেন আজ রাতে যেন আমি আপনার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি সঙ্গে আপনি রুমে এলে আপনার পা ধরে সালাম দেই।”

বলে উঠে গিয়ে পা ধরে সালাম দিতে নিলো রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ সরে গেল রাগান্বিতাকে ধরে উঠিয়ে বললো,
“তোমার স্থান আমার পায়ে নয় বউ আমার বুকে।”

রাগান্বিতা মুগ্ধ হলো। ইমতিয়াজ দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো রাগান্বিতাকে। রাগান্বিতা সালাম দিলো ইমতিয়াজও সালামের জবাব দিয়ে বললো,
“চলো দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আসি।”

রাগান্বিতা খুশি হলো কারণ কথাটা সেও বলতো ইমতিয়াজকে। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের থেকে সরে কাছেই টেবিলের উপর রাখা জায়নামাজ দুটো নিয়ে বিছিয়ে দিলো নিচে। ইমতিয়াজ টেবিলের ড্রয়ার খুলে টুপিটা নিয়ে মাথায় দিলো। দুজন একসাথে নামাজে দাঁড়ালো নফল নামাজ আদায় করলো। শ্রুতি মধুর একটা সময় পার করলো।’
—–
আকাশটা তখন ঘন কালো মেঘে ঢাকা ফজর হতে এখনো ঢের দেরি। রাগান্বিতা ইমতিয়াজ পালঙ্কে বসা। দুজনেই চুপচাপ কারো মুখে কথা নেই। হঠাৎই রাগান্বিতা বললো,
“আপনার জন্য গ্লাসে করে দুধ রেখেছিলাম কিন্তু এখন আর খাওয়া যাবে না ঠান্ডা হয়ে গেছে।”

ইমতিয়াজ খানিকটা হাসলো। বললো,
“সমস্যা নেই রেখেছো যখন দেও।”
“ঠান্ডা দুধ ভালো লাগবে না তো।”
“তুমি বললে আমি নিরদ্বিধায় বিষও পান করতে পারি বউ ওটা তো সামান্য ঠান্ডা দুধ মাত্র।”

ইমতিয়াজের কথায় খানিকটা রেগে গেল রাগান্বিতা। ভাড়ি কণ্ঠে বললো,
“আপনি বড্ড খারাপ জানেন, মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলেন আমার বড্ড রাগ লাগে।”

ইমতিয়াজ হাসলো। আলতো হাতে রাগান্বিতাকে নিজের কাছে টানলো। মাথাটা বুকে ঠেকিয়ে বললো,
“আমার বুকটা বড্ড জ্বলছে বউ, তুমি কি সারিয়ে দিতে পারবে?”

রাগান্বিতা যেন থমকে গেল দু’হাতে শক্ত করে ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“জ্বলছে কেন?”
“আগে একা থাকতাম জ্বলতো না তুমি আসার পর থেকে জ্বলছে।”

রাগান্বিতার যেন কি হলো সে ইমতিয়াজের বুকে চুমু কাটলো। ঠোঁট ছুঁয়ে ইমতিয়াজের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আর জ্বলবে না ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিয়েছি না দেখবেন এখন থেকে সব ভালো হবে।”

ইমতিয়াজ অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল রাগান্বিতার চোখের দিকে কি যে ভাবলো কে জানে। ধীরে ধীরে সে কেমন যেন হয়ে গেল আস্তে করে রাগান্বিতার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে অল্প করে সুধালো,
“তুমি বড্ড ভালো বউ।”

রাগান্বিতা মিষ্টি হাসে। বলে,
“আপনিও।”

ইমতিয়াজ হঠাৎ করেই ছোট বাচ্চাদের মতো রাগান্বিতার বুকে মাথা রাখলো। রাগান্বিতাও দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো। দুজনেই নীরব থাকলো বহুক্ষণ। তবে ইমতিয়াজ মনে মনে আওড়ালো,
“তুমি ভুল জানো বউ আমি ভালো নই। আমি যে বড্ড নিষ্ঠুর। আমি তো ভেবে পাই না তুমি এই নিষ্ঠুর পুরুষটাকে এত ভালোবাসলে কি করে! তোমার ভালোবাসা কি আমায় ভালো থাকতে দিবে। কেন যেন আমি তোমার চোখে বার বার আমার সর্বনাশই দেখি রেকশপুরের কাদম্বিনী।”

ধীরে ধীরে সময় গড়ালো ফজরের ধ্বনি কানে আসলো প্রকৃতি হতে লাগলো পরিষ্কার।’

——
সময় ছুটলো অনেকটা। দেখতে দেখতে দু’সপ্তাহ পেরোলো। এই দু’সপ্তাহে অনেকটাই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে রাগান্বিতা। পুরো বাড়ির রঙই পাল্টে ফেলেছে আশেপাশে থাকা যত আগাছা ছিল সব উপড়ে ফেলেছে এখন আর ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগে না। বাড়ির বাহিরের চারিদকে কিছু সুন্দর সুন্দর ফুলগাছ লাগিয়েছে রাগান্বিতা। ফুল ফুটতেও শুরু করেছে। এখনই সে ফুলের সুভাস পুরো বাড়ি জুড়ে ঘুরে। সারাদিন রাগান্বিতা বাড়িতে একাই থাকে রবিন শুধু কাজ করে চলে যায়। রাগান্বিতা বলেছিল একদিন তার বউকে নিয়ে এখানে আসতে কিন্তু রবিন বলে,
“তার বউটা নাকি পোয়াতে তাই এখন আসতে পারবে না।” রাগান্বিতাও মেনে নিয়েছে।’

নিস্তব্ধ বিকেল। বাড়ির বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতা প্রকৃতি জুড়ে কিছুক্ষণ পর পর গা ছুঁয়ে বাতাস বইছে। বাতাসে রাগান্বিতার কালো কেশগুলো উড়ছে। হঠাৎই সাইকেলের বেল বাজার আওয়াজ আসলো রাগান্বিতা সামনে তাকালো দেখলো তাদের বাড়ির দিকে এক ডাকপিয়ন আসছে। মুহূর্তেই বুকটা কেমন করে উঠলো। ডাকপিয়ন চেঁচিয়ে বললো,
“চিঠি এসেছে, চিঠি এসেছে!’

রাগান্বিতা আর দেরি করলো না। মাথায় লম্বা করে ঘোমটা টেনে ছুটে আসলো নিচে। যথারীতি তার হাতে চিঠি দিয়ে ছোট্ট একটা সাইন নিয়ে ডাকপিয়ন চলে গেল। রাগান্বিতা এপিট ওপিঠ উল্টে চিঠিটা বের করলো। সাথে সাথে গাড়ো কালিতে লেখা দেখলো। কেউ লিখেছে,

“তোমার নামে আর চিঠি লিখবো না বধূ
অনেক হয়েছে আর না
এবার তো জানো শুধু তুমি আমার ছাড়া আর কারো না!”

~ নিষ্ঠুর এক প্রেমিক পুরুষ!’

বুকটা আঁতকে উঠলো রাগান্বিতার আবার সেই পুরুষ। রাগান্বিতার বুকটা হাল্কা কাঁপলো। এরই মাঝে পিছন থেকে বললো কেউ,
“বউ।”

রাগান্বিতা পিছন ঘুরলো এই সময় ইমতিয়াজকে দেখে বড্ড অবাকই হয়েছে সে। চিঠিটা লুকিয়ে ফেললো দ্রুত এগিয়ে এসে বললো,
“এই সময় আপনি এখানে?”
“হ্যা, তোমার বাবা চিঠি পাঠিয়েছে দেখো।”

রাগান্বিতা চেয়ে রইলো ইমতিয়াজের হাতের দিকে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো তার সে দৌড়ে গিয়ে বললো,
“কই দেখি!”

রাগান্বিতার হাতে চিঠিটা দিলো ইমতিয়াজ। রাগান্বিতা ওখানে দাঁড়িয়েই চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো। তার বাবা লিখেছে,

প্রিয় কন্যা,
প্রথমেই আমার সালাম নিও। আশা করি তুমি শহরে ভালোই আছো। নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছো। তুমি বাড়িতে নেই আজ চৌদ্দটা দিন আর পনেরটা রাত গেল। তোমায় বড্ড মনে পড়ে কন্যা। মনে হয় কতবছর জেনো তোমায় দেখি না। তোমার দাদিমার শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না তোমায় খালি দেখতে চাচ্ছে। এমনিতেও বিয়ে দু’দিন পেরোতেই মেয়েরা নাইওর আসে তুমি এলে না। এতে অভিযোগ নেই কোনো পথ তো কম না। সুযোগ পেলে একবার জামাইবাবাকে নিয়ে এসো রেশবপুরে। তোমায় ছাড়া আমার বাড়িটা যেন পুরোই শূন্য। পরিশেষে বলবো ভালো থেকো, জামাইয়ের খেয়াল রেখো, মনে রেখো, বিয়ের পর মেয়েদের সর্বপ্রথম কাজ হলো নিজ স্বামীর সেবা যত্ন করা তাকে ভালো রাখা। তুমিও রাখছো নিশ্চয়ই! তাকে কভু কষ্ট দিও না। আবারও বলবো, সুযোগ মিল্লে এসো তোমার আর জামাইয়ের অপেক্ষায় রইলাম,

ইতি
তোমার বাবা।”

বাবার চিঠি পড়ে রাগান্বিতার চোখে পানি চলে আসলো। বাবা তাকে কতটা ভালোবাসে কতটা ব্যাকুল হচ্ছে তার জন্য তা যেন এই চিঠিতেই প্রকাশ পেল। ইমতিয়াজ এগিয়ে এলো রাগান্বিতা চোখের পানি মুছে বললো,
“কেঁদো না বউ আমরা শীঘ্রই যাবো।”

রাগান্বিতা ছলছল দৃষ্টিতে ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সত্যি নিয়ে যাবেন।”

মাথায় নাড়ায় ইমতিয়াজ। বলে,
“হুম।”

রাগান্বিতার চোখে আবার পানি আসলো শক্ত-পোক্ত মেয়েটা আজ বড্ড কাঁদছে। ইমতিয়াজ তার দিকে তাকিয়ে গাল দুটো চেপে ধরে শীতল সুরে বলে উঠল হঠাৎ,
“তুমি কাঁদলে আমার হৃদয়ে বড্ড ব্যাথা লাগে বউ। তুমি কি চাও আমি ব্যাথা পাই।”

রাগান্বিতা দ্রুত চোখ মুছতে মুছতে বললো,
“এই দেখুন চোখ মুছে ফেলেছি। আমি আর কাঁদবো না। আপনার ব্যাথাতে যে আমিও ব্যাথা পাই।”

ইমতিয়াজ হাসলো। মিনমিনিয়ে বললো,
“ওহে সখি গো অন্তর জুড়ে মোর এতো প্রেম
দেখাইতে না পারি তোমায়! এ যে কি যন্ত্রণার একবার যদি শুধাইতে পারতাম তোমায়!’

#চলবে……

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২১
________________

নিকষকালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে বহুক্ষণ হয়েছে। রাগান্বিতা মাগরিবের নামাজ সেরে জানালার ধারে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে কতক্ষণ যাবৎ, বাবার জন্য বড্ড মন খারাপ করছে তার। ইমতিয়াজ নামাজের জন্য বেরিয়েছে আর ফেরে নি। তবে দ্রুত চলে আসবে বলে গেছে। রাগান্বিতা নীরবে চুপচাপ তাকিয়ে রইলো বাহিরে, ঘন কালো অন্ধকার ছাড়া তেমন কিছুই নজরে আসছে না। রাগান্বিতা ভাবছে, ইমতিয়াজের প্রতি বড্ড বেশিই যেন আসক্ত হয়ে গেছে সে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ভয় বা দ্বিধা নেই রাগান্বিতার। সে মনে করে, বাঙালি নারী হোক বা অন্য কোনো শ্রেণির নারী সব বিবাহিত মেয়েদেরই উচিত তার স্বামীর প্রতি আসক্ত থাকা তাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা। কুহু আপা প্রায়ই বলতেন মা নাকি বাবার প্রতি সবসময় আসক্ত ছিলেন তাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। আম্মার মৃত্যুতেও নাকি বাবা প্রচুর কেঁদেছিলেন। বউকে খুব ভালোবাসতো কি না। রাগান্বিতা মনে মনে বিশ্বাস করে নিয়েছে ইমতিয়াজ তাকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসেন। প্রকাশ না করলেও বাসেন। তার চোখ, তার কথা বলার ধরন সবকিছুই যেন তাকে ভালোবাসার কথা মনে করিয়ে দেয়। মুখে বললেই যে ভালোবাসা হয় এমনটা নয়, মুখে না বলেও মানুষ আড়ালে আবডালে তার প্রিয় মানুষকে প্রচুর ভালোবাসতে পারেন। রাগান্বিতাকে আড়ালেই ভিতর থেকেই বড্ড ভালোবাসেন ইমতিয়াজ তা না হলে এত যত্ন করতো নাকি। রাগান্বিতার মন খারাপটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল এই ইমতিয়াজ নামটাই যে একটা বিশাল ভালোলাগা। মানুষটার কথা ভাবলেই রাগান্বিতার মনটা ভালো হয়ে যায়। হঠাৎই নিচে কাকে যেন হেরিকেন হাতে বাড়ির বামদিকটায় থাকা এক ঘনজঙ্গলের দিকে যেতে দেখলো রাগান্বিতা। তার মনে হলো ওটা বুঝি রবিন। রাগান্বিতা কি ভেবে যেন নিজের কক্ষ থেকে বের হলো, তাকে দেখতে হবে ওটা রবিন কি না আর রবিন হলেও এই রাত-রেরাতে হেরিকেন হাতে যাচ্ছে কোথায়!’

রাগান্বিতা ছুট্টে গেল নিচে দূর থেকেই সে বুঝতে পারলো ওটা রবিনই। কিন্তু রবিন এইসময় যাচ্ছে কই! রাগান্বিতা ভালোমতো তার মাথাটা ঘোমটা দিয়ে ঢেকে নিলো তারপর আস্তে আস্তে চলতে লাগলো রবিনের পিছন পিছন। রবিন হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে থামলো এক কবরস্থানের সামনে। রাগান্বিতা দেখলো তা হঠাৎই রবিন কাকে যেন বলে উঠল,
“তুমি এহানে আছো আর আমি তোমারে সারাজায়গায় খুঁজি।”

প্রতিউত্তরে কবরস্থানের পাশে বসে থাকা ব্যাক্তিটি বললো,
“এত খোঁজার কি আছে?”
“এক বেডায় আইছিল কইলো এবারের মালগুলান নাকি ভালো হয় নাই।”
“ভালো হয় নি মানে,
“আসলে কাশিমম্মা ভুল করছে একখান আজগর মিয়ার মাল মতিন মিয়ারে দিয়া দিছে।”
“তুমি খেয়াল করো নি?”
“আমি তখন বাড়িত ছিলাম।”
“আচ্ছা আমি দেখছি তুমি যাও।”
“এই রাত্তির বেলা একলা একলা কবরস্থানে বইয়া থাকা ঠিক হইবো না।”

ব্যক্তিটি তাও শুনলো না অনেকক্ষণ বসে রইলো। আলতো করে কবরস্থানের মাটিতে হাত বুলালো। রবিন মন খারাপ করে বললো,
“মৃত মানুষ কি আর ফিরা আহে কও?”
“জানি তো আসে না। ও আজ বেঁচে থাকলে খুব ভালো হইতো তাই না কও!’
“হুম। মাইয়াডা খুব ভালো আছিল! তোমারেও কত ভালোপাইতো।”

জবাব দিলো না ব্যক্তিটি। অন্যদিকে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রবিন যে কারো সাথে কথা বলছে তা বেশ বুঝতে পেরেছে রাগান্বিতা কিন্তু কি বলছে আর কাকে বলছে তা কিছুই দেখতে বা শুনতে পাচ্ছে না। হঠাৎই গাছের পাতা নড়তেই কিছু একটা আচ করতে পেরেই রবিনকে উদ্দেশ্য করে বললো ব্যক্তিটি,
“হেরিকেনের লাইট নিভাও ওখানে কেউ আছে গিয়ে দেখো।”

রবিন যেন চমকে উঠলো দ্রুত হেরিকেনের আলো কমিয়ে তাকালো ওদিকে। চেঁচিয়ে বললো,
“কে ওখানে?”

আচমকাই রবিনকে চেঁচিয়ে উঠতে দেখে ঘাবড়ে গেল রাগান্বিতা পরক্ষণেই নিজেকে সামলে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে বললো রাগান্বিতা,
“রবিন চাচা আমি রাগান্বিতা।”

রবিন কণ্ঠটা শুনতেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বললো,
“বউমা আপনি এহানে কি করেন? তাড়াতাড়ি বাড়িত চলেন রাত দুপুারে এইসব জায়গায় থাকা ঠিক না।”

রবিন কবরস্থান থেকে সরে এসে দাঁড়ালো রাগান্বিতার কাছে। রবিন কিছু বলার আগেই রাগান্বিতা প্রশ্ন করলো,
“আপনি এই জায়গায় কি করছিলেন চাচা?”

রবিন কি বলবে বুঝতে পারছে না। কথা পাল্টে বললো,
“বাড়ির সামনে চলেন তারপর বলতাছি।”
“আপনার সাথে কি কেউ ছিল রবিন চাচা?”

রবিন থরথর করে জবাব দিলো,
“কই কেউ ছিল না তো আমি একাই ছিলাম।”
“কিন্তু আমার কেন যেন মনে হলো আপনি কারো সাথে কথা বলছিলেন।”
“হ বলতাছিলাম তো?”

রাগান্বিতা আগ্রহ নিয়ে বললো,
“কে ছিল?”

রবিন নিশ্চুপ স্বরে বললো,
“আমার মা।”

—–
হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো ইমতিয়াজ। চোখে মুখে খানিকটা চিন্তিত ভাব। এই রাগান্বিতা গেল কই! ইমতিয়াজ সারাবাড়ি খুজলো কিন্তু কোথায় পেল না। এবার ইমতিয়াজ রবিন চাচাকে ডাকলো।”
“রবিন চাচা, রবিন চাচা।”

সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। ইমতিয়াজ আবারও চিন্তিত স্বরে রাগান্বিতাকে ডাকলো। বললো,
“রাগান্বিতা, রাগান্বিতা তুমি কোথায়?”

এরই মাঝে সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো রাগান্বিতা,
“আমি এখানে!’

ইমতিয়াজ দ্রুত রাগান্বিতার দিকে দৌড়ে গেল হতভম্ব হয়ে বললো,
“কোথায় ছিলে তুমি কত জায়গায় খুঁজেছি তোমায় জানো তুমি।”

রাগান্বিতা মাথা নত করেই বললো,
“আমি দুঃখিত। আমি আসলে একটু,

কিছু বলার আগেই রবিন বললো,
“রাগ হইও না ইমতিয়াজ ওই বাড়ির পিছনে একটা পুকুর আছে না ওইখানে গেছিলাম রাগান্বিতা একটু জেদ করছিল তাই জন্যে।”

ইমতিয়াজ তার রাগ কমালো। বললো,
“এই রাত-বেরাতে পুকুরপাড়।”

রাগান্বিতা এগিয়ে আসলো। ইমতিয়াজের হাত ধরে বললো,
“আমি দুঃখিত আমি আসলে ভুল করে ওই জঙ্গলের ওদিকটায় গিয়েছিলাম আপনি শুনলে রাগ করবেন তাই রবিন চাচা ওসব বলছেন।”

ইমতিয়াজ শুনলো। চিন্তিত হয়ে উঁচু আওয়াজে বললো,
“ওই জায়গাটা ভালো নয় তুমি এই রাতের বেলা ওখানে কেন গিয়েছিলে বউ?” যদি তোমার কোনো ক্ষতি হতো।”
“আমার কিছু হয় নি। আমি ঠিক আছি। আমি জানতাম না ওই জায়গাটা ভালো না। একা একা ভালো লাগছিল না তাই হাঁটতে বেরিয়েছিলাম কখন যে ওদিকটা গেলাম বুঝতে পারি নি। রবিন চাচা বললো পর জানলাম।”

ইমতিয়াজ শান্ত হলো। আর বেশি কিছু না ভেবে বললো,
“ঠিক আছে এবারের মতো তোমায় কিছু বললাম না কিন্তু আর কখনো ওখানে যাবে না রাতের বেলা তো একদমই না।”

রাগান্বিতা মাথা নাড়িয়ে বললো,
“ঠিক আছে।”

ইমতিয়াজ হাল্কা হাসলো। রবিন ওখান থেকে চলে গেল। ইমতিয়াজও তার বউকে নিয়ে উপরে উঠলো। আসার সময় বাজার থেকে গরম গরম পেঁয়াজু আর আলুর চুপ নিয়ে এসেছিল ইমতিয়াজ। কিন্তু রুমে ঢুকেই রাগান্বিতাকে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে গেছিল। ইমতিয়াজ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো,
“তোমার জন্য বাজার থেকে গরম গরম পেয়াজু আর আলুরচপ কিনে এনেছিলাম এতক্ষণে বোধহয় ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
“আমি গরম আনি।”
“বেশি ঠান্ডা হয়ে গেলে তাই করতে হবে।”
—–

রাতের ভোজন শেষ করে বিছানায় শুয়ে আছে রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজ। ইমতিয়াজের বুকে মাথা দেয়া রাগান্বিতা। হঠাৎই ইমতিয়াজ প্রশ্ন করলো। বললো,
“তুমি আমায় খুব ভালোবাসো তাই না বউ?”

রাগান্বিতা মিষ্টি হেঁসেই জবাব দেয়,
“হুম বাসি তো! কেন আপনি বাসেন না?’

ইমতিয়াজ জবাব দেয় না। উল্টো আবার বলে,
“আমায় এত ভালো কেন বাসো বউ?”

রাগান্বিতা ইমতিয়াজের বুক থেকে নিজের মাথাটা উঠালো। চাইলো ইমতিয়াজের চোখের দিকে, ইমতিয়াজও চাইলো। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,
“আমি যে আপনায় ভালোবাসি কেন বাসি জানি না। শুধু জানি আপনায় ভালোবাসাতেই আমার প্রকৃত সুখ। সবচেয়ে বড় কথা আপনায় ভালোবাসতে আমার ভালো লাগে তাই ভালোবাসি। আমি আপনায় সারাজীবন ভালোবেসে যেতে চাই ইমতিয়াজ।”

বলেই পুনরায় ইমতিয়াজের বুকে মাথা রাখলো রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ শুধু শুনেই গেল রাগান্বিতার কথা জবাবে কিছু বললো না। অনেকক্ষণ নীরবতা চললো দুজনের মাঝে। হঠাৎই নীরবতা ভেঙে ইমতিয়াজ বললো,
“নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিও আমরা কাল রেশবপুরে যাবো।”

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে