#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১৫
________________
স্তব্ধ হয়ে আছে পুরো বিয়ে বাড়ি। রাগান্বিতার বরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কথাটা যেন ঝড়ের গতিতে পুরো রেশবপুরে ছড়িয়ে গেছে। রাগান্বিতার বাবা মাথায় হাত দিয়ে তাদের বসার ঘরে বসে আছেন। এবার কি হবে? এভাবে বিয়ে ভেঙে যাওয়া মেয়েটাকে কে বিয়ে করবে এই ভেবেই শরীর খারাপ করছেন। রেজওয়ানও চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে বাবাকে ধরে তারও মাথা কাজ করছে না। যেদিন থেকে কুহুটা মারা গেল সেদিন থেকে একটার পর একটা বাজে ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে তাদের সাথে।
আশেপাশে লোকজনও গোল হয়ে বসে আছে। সামনেই দরজার কাছ দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ইমতিয়াজ। দৃষ্টি তার নীরব কি হলো না হলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। রাগান্বিতা কি কথাটা শুনেছে তার বরকে যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আচ্ছা রাগান্বিতার মনের অবস্থাটা ঠিক কেমন এখন জানার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে ইমতিয়াজের। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনোভাবেই রাগান্বিতার রুমে যাওয়া যাবে না তাকে।”
বলতে বলতে আসরের আযানের ধ্বনি শোনা গেল। সবাই বেশ আফসোস করছেন আবার কেউ কেউ কানাফুসা শুরু করে দিয়েছেন। রাগান্বিতার বাবা সবটাই নীরবে হজম করে নিচ্ছেন। এত সুন্দরী রমনীর কপালটা শেষ পর্যন্ত এমন কেন হলো? এবার বিয়ে ভাঙা এই মেয়েটাকে কে বিয়ে করবে। রাগান্বিতা বাবা বেশ ভেঙে পড়লেন। বললেন,
“তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে আমার মেয়েটাকে বিয়ে করবে?”
বাবার আর্তনাদটা যেন রাগান্বিতার কানে বাজলো। সে মাত্রই তার রুম থেকে বেরিয়ে এসেছিল। বাবার আর্তনাদে তার ভিতরটা নড়ে উঠলো তার বাবা এইভাবে আহাজারি করছে। মাহাদ এমনটা কেন করলো? কেন নিখোঁজ হলো? কেউ কি নিখোঁজ করিয়েছে নাকি ইচ্ছে করে নিখোঁজ হয়েছে।
রাগান্বিতার বাবার কথা শুনে একজন লোক বললো,
“এগুলান আমনে কি কইতাছেন জমিদার সাহেব? আমগো লগে আমনেগো যায় নাকি।”
রাগান্বিতার বাবা আরো ভেঙে পড়লেন। আর্তনাদ ভরা কণ্ঠে বললেন,
“আমি এখন কি করবো আমার মেয়েটার যে গোটা জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। এভাবে বিয়ের আসরে বর না আসার কলঙ্ক যে আমার মেয়েটাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তোমাদের কিছু দেখতে হবে না শুধুমাত্র একটা ভালো ছেলে হলেই হবে আমার মেয়েটাকে একটু যত্নে রাখতে পারলেই হবে বাকিটা আমি দেখে নিবো।”
তাও কেউ শুনলো না সবাই মাথা নিচু করে রইলেন। এবার রাগান্বিতার নিজেকে বড্ড ঠুনকো মনে হচ্ছে বাবা এইভাবে অসহায়ের মতো সবার কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। বর আসে নি এক্ষেত্রে মেয়েটার কি দোষ? যদি তার আর জীবনে বিয়ে না হয় না হোক কিন্তু বাবাকে এভাবে দেখতে পারবে না রাগান্বিতা। রাগান্বিতা তার মাথার ঘোমটাসহই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। সবার দৃষ্টি তার দিকে গেল মুখটা ঘোমটা দিয়ে ঢাকা থাকায় চেহারা দেখা যাচ্ছিল না। ইমতিয়াজও খেয়াল করলো বিষয়টা। রাগান্বিতা তার বাবার কাছে এগিয়ে গেল তারপর বাবার পাশে বসে বলতে নিলো,
“বাবা।”
এরই মাঝে ইমতিয়াজ এগিয়ে এসে বললো,
“আপনার দ্বিধা না থাকলে রাগান্বিতাকে আমি বিয়ে করতে চাই জমিদার সাহেব।”
সঙ্গে সঙ্গে পুরো প্রকৃতি যেন আবার রঙ বদলালো। রাগান্বিতাসহ আশেপাশের সবাই বেশ অবাক হয়ে তাকালো ইমতিয়াজের মুখের দিকে। রাগান্বিতার বাবা বসা থেকে উঠে আসলেন। ইমতিয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
“তুমি সত্যি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও ইমতিয়াজ?”
মাথা নাড়ায় ইমতিয়াজ। বলে,
“জি।”
ইমতিয়াজের কথায় রাগান্বিতার কেমন যেন অনুভূতিপূর্ন একটা ফিলিংস আসলো। সে শুধু এক নজর ইমতিয়াজের দিকে তাকালো। ইমতিয়াজও এক নজর রাগান্বিতার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তবে তার আগে আমি একবার রাগান্বিতার সাথে কথা বলতে চাই?”
ইমতিয়াজের কথা শোনা হলো রাগান্বিতার বাবাও আর উপায় না পেয়ে রাজি হলেন এই বিয়ে দিতে। সবাইকে জানানো হলো আসরের নামাজের পরই ইমতিয়াজ আর রাগান্বিতার বিয়ে পড়ানো হবে। আপাতত সবাই আসরের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদে যাচ্ছেন। ইমতিয়াজও যাবে তবে তার আগে রাগান্বিতার সাথে দু’দন্ড কথা বলতে চায় সে।
—-
প্রকৃতি আজ চুপচাপ। ঘুটঘুটে নীরবতার মধ্যে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজ। রাগান্বিতার মাথায় ঘোমটা তখনও দেয়া ইমতিয়াজ তার পিছনে দাঁড়ানো। ইমতিয়াজ কিছু বলার আগেই রাগান্বিতা বললো,
“আপনি সত্যি আমায় বিয়ে করতে চান ইমতিয়াজ?”
ইমতিয়াজ বেশি ভাবলো না। দ্রুত জবাব দিলো,
“আপনি রাজি থাকলে আমার তো আপত্তি করার কারণ দেখছি না। তবে আপনার আমার বিষয়ে কিছু জানা উচিত রাগান্বিতা। আমি শহরে থাকি এটা তো আপনি জানেন বিয়ের পর আপনাকেও আমার সঙ্গে শহরে থাকতে হবে। শহরে আমার একটা বাড়ি আর নিজস্ব ব্যবসা আছে। মা বাবা নেই আমি একাই থাকি। বলতে পারেন আপনার সংসার আপনার নিজেকেই একা গুছিয়ে নিতে হবে। আপনি যদি রাজি থাকেন তবেই সবটা সম্ভব।”
রাগান্বিতা চুপ করে রইলো ইমতিয়াজের কেউ নেই তার যেন খারাপ লাগলো কথাটা শুনে। নিজেকে দমিয়ে বললো রাগান্বিতা,
“আপনি যদি আমায় একটু সাহায্য করেন আমি ঠিক সবটা গুছিয়ে নিতে পারবো।”
বিনিময়ে ইমতিয়াজ শুধু এতটুকু বলে,
“আছি আমি।”
ব্যস ইমতিয়াজের এতটুকু কথাতেই রাগান্বিতার ঠোঁটের হাসির রেখা ফুটে উঠলো। পুরো বিষয়টা যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। রাগান্বিতা ফিল করছে সে প্রেমে পড়ছে গভীর ভাবে ইমতিয়াজ নামক প্রেমরোগে আসক্ত হচ্ছে ধীরে ধীরে।’
রাগান্বিতা মুচকি হাসলো। বললো,
“আঘাত তো দিবেন না ইমতিয়াজ?”
রাগান্বিতা প্রশ্ন করলেও ইমতিয়াজ তার উত্তর দিলো না। কেননা ইমতিয়াজ অনেক আগেই রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। সে বুঝেছে রাগান্বিতার এই বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই। আর এমনিতেও সে বুঝতে পেরেছে রাগান্বিতা একটু হলেও তার প্রতি আসক্ত হয়েছে।’
—-
আসরের নামাজ সেরেই। কাজী এসেই কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ে হয়ে গেল রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজের। উপস্থিত সবার প্রথমে একটু কেমন কেমন লাগলেও পরবর্তীতে তেমন কিছু আর ভাবে নি। রাগান্বিতার দাদিমার অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন ইমতিয়াজের দিকে। ছেলেটা ভালো হবে তো রাগান্বিতার জন্য। দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। তাও মনের মধ্যে কেমন একটা অসস্তিকর অনুভূতি হচ্ছে।’
বেলা ঘুরলো সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এই রাতের আধারেই জাহাজে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে রাগান্বিতা আর ইমতিয়াজ। রাত আটটায় জাহাজ ছাড়বে। রাগান্বিতা কাঁদলো তার দাদিমা, বাবা আর ভাইকে ধরে। ইমতিয়াজ শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল তখন। কুহুর কথা বড্ড মনে পড়ছে রাগান্বিতার। বোনটা থাকলে আজকের ঘটনাগুলো বোধহয় অন্যরকম হতো।
সন্ধ্যা ৭ঃ০০টা।
নদীর ঘাটে জাহাজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতা, ইমতিয়াজ, মোকলেস এবং রাগান্বিতার পরিবার। মোকলেস কাঁদছে। সে ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আবার আইবেন তো ভাই?”
ইমতিয়াজ মুচকি হেসে বললো,
“হুম। সবসময় ভালো থাকিস।”
মোকলেস শুধু জড়িয়ে ধরে কেঁদেই গেল উত্তরে কিছু বললো না। এবার রাগান্বিতার বাবা এগিয়ে এলেন ইমতিয়াজের দিকে ওর হাত ধরে বললো,
“তুমি তো জানো বাবা তোমাদের বিয়েটা কেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিলাম। আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো একটু আগলে রেখো যত্নে রেখো। বড় মেয়েটা চলে যাওয়ার পর ওই মেয়ে হিসেবে একমাত্র সম্বল ছিল। তোমাকে আমার প্রথমদিনই ভালো লেগেছিল। তাই তো তোমার হাতেই মেয়েকে তুলে দিলাম। ক্ষোভ রেখো না কোনো সুখে শান্তিতে থেকো দুজন। আর সময় হলেই আমার মেয়েটাকে নিয়ে চলে এসো এখানে।”
ইমতিয়াজ আশ্বাস দিলো। বললো,
“চিন্তা করবেন না আমি আছি ওর পাশে।”
রাগান্বিতার বাবা যেন একটু শক্ত হলেন আরাম পেলেন বুকে। ইমতিয়াজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“সবসময় ভালো থেকো বাবা।”
ইমতিয়াজ একটু হাসে শুধু। অতঃপর সময় গড়ালো ইমতিয়াজ আর রাগান্বিতা এগিয়ে গেল জাহাজের দিকে। রাগান্বিতাও তার বাবা আর ভাইকে শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরে চললো ইমতিয়াজের সঙ্গে। তাদের জন্য গোটা একটা কেভিন বুক করা হয়েছে। আচমকাই রাগান্বিতা জাহাজে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেল সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরলো ইমতিয়াজ। চোখাচোখি হলো দুজনের রাগান্বিতা বললো,
“আঘাত তো পেতে দিলেন না, শুধু শুধু শুরুতে ভয় দেখালেন কেন?”
ইমতিয়াজ হাসে। রাগান্বিতার কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“মানুষ না পাওয়া জিনিসকে ভুলতে কত কথা বলে কাজললতা তুমি বুঝবে না।”
রাগান্বিতা মুগ্ধ হলো এই প্রথমবার ইমতিয়াজ তাকে ‘তুমি’ বলে সম্মোধন করলো এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল রাগান্বিতার মাঝে। আজ বুঝি পুরো দমেই রাগান্বিতা ইমতিয়াজের হয়ে গেল।”
#চলবে…..
#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-১৬
________________
রাতের আধারে ঘনিয়ে এসেছে চারপাশ। মুক্তদানার মতো চিকচিক করছে পানি। চাঁদ উঠেছে আকাশ ছুয়ে খানিকটা মেঘলাময়। বৃষ্টি হবে হবে এমন। জাহাজ ছুটছে আপন গতিতে। ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে জাহাজের এক কর্নারে রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে দৃষ্টি তার নিচের ঢেউগুলোর দিকে। আচ্ছা সাঁতার না জানা একটা জীবন্ত মানুষকে পানিতে ফেলে দেওয়ার পর তার যে কষ্টটা হয় সেটা কি খুবই যন্ত্রণাদায়ক হয়। হয়তো হয়। ইমতিয়াজ তার ভাবনা বদলালো তাকালো আকাশ পথে। সে কি খুব ভয়ংকর! হতে পারে অথচ সেই ভয়ংকর মানুষটাকেই রাগান্বিতার মতো এত সুন্দরী একটা মেয়ে বিয়ে করে ফেললো। কত নিরদ্বিধায় তার সঙ্গে তার বাড়ি ছুটছে। মেয়েটার কি একটুও ভয় লাগছে না আচমকা একটা অচেনা মানুষের সাথে অচেনা শহরে পারি জমাতে। রাগান্বিতা কেভিনে আছে ইমতিয়াজ তাকে জানিয়ে এসেছে কোনো দ্বিধা নেই সে নিশ্চিতে এখানে ঘুমাতে পারে। আজ রাতে তারা একে অপরের সাথে কোনো কথা বলবে না যদি রাগান্বিতা না চায় লাগলে যা বলার আজকের পরই বলবে। ইমতিয়াজের এ কথার পিঠে রাগান্বিতা কিছু বলে নি চুপচাপ ছিল। ইমতিয়াজও আর না বকে চলে আসে বাহিরে এরপর থেকে বাহিরেই আছে। বলতে গেলে মধ্যরাত চলছে। কি সুন্দর জোৎস্না ভরা আলো। আশেপাশে কেউ নেই একমাত্র ইমতিয়াজই দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে। ইমতিয়াজ জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো। তারপর চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবলো,
একটা মেয়ে, তার মুখে কি সুন্দর হাসি। একটা বাড়ির পিছনের আশেপাশে দৌড়াচ্ছে আর বলছে,
“আসো, আসো,আসো না। তুমি কিন্তু আমার জন্য আজও নূপুর আনো নি। তুমি বার বার কেন ভুলে যাও। এর পরের বার ভুলে গেলে আমি কিন্তু তোমায় ক্ষমা করবো না।”
আচমকাই হাতে কারো একটুখানি স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো ইমতিয়াজ। দ্রুত হাত সরিয়ে ফেললো। ইমতিয়াজের এমন কান্ডে খানিকটা হাসে রাগান্বিতা। বলে,
“আরে ভয় পাচ্ছেন কেন আমিই তো!’
ইমতিয়াজ তাকালো পুরো বিয়ের সাজেই তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
“তুমি এখনো ঘুমাও নি কেন?”
“ঘুম আসছে না।”
উত্তরে ইমতিয়াজ আর কিছু বলে না। রাগান্বিতা নদীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালো রাতের ফুড়ফুড়ে বাতাস তাকে ছুঁয়ে দিলো। রাগান্বিতা চোখ বন্ধ করে পুরো বাতাসটা ফিল করলো। ইমতিয়াজ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো রাগান্বিতার মুখের দিকে রাতের চক চক করা জোৎস্না ভরা আলোতে রাগান্বিতাকে যেন আরো বেশি মাধুর্যপূর্ণ লাগছে। মেয়েটা একটু বেশি সুন্দর।
ইমতিয়াজ রাগান্বিতা পাশ দিয়ে দাঁড়ালো। বললো,
“আমার বউটা একটু বেশি সুন্দর।”
রাগান্বিতা কথাটা শুনতেই চোখ খুলে ফেললো ‘আমার বউটা’ কথাটা যেন তড়িৎ গতিতে তার কানে বেজে উঠলো। রাগান্বিতা মুচকি হাসলো। বললো,
“ওই চাঁদের থেকে নয়।”
ইমতিয়াজ চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“যদি বলি তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি চাঁদের থেকেও বেশি সুন্দর।”
“আপনি বানিয়ে বলছেন।”
“তুমি মানো কিন্তু বলতে চাইছো না।”
রাগান্বিতা কি বলবে বুঝতে না পেরে হেঁসে ফেলে। রাগান্বিতার হাসি দেখে ইমতিয়াজ বুকে হাত দিয়ে বললো,
“ওভাবে হেঁসো না তো আমার বড্ড লাগে।”
রাগান্বিতা এবার ইমতিয়াজের চোখের দিকে তাকালো। বললো,
“আমার যে আরো লাগে।”
“মানে?”
এবার উচ্চ স্বরে হাসে রাগান্বিতা। বলে,
“মানেটা আরেকদিন বলবো।”
“আজ বললে কি হবে।”
“আপনার আগ্রহ কমে যাবে।”
“আগ্রহ কমবে কেন?’’
“বলে দিলেই বুঝে যাবেন।”
“তুমি আমায় চেনো না আমি,
আর কিছু বলার আগেই রাগান্বিতা ইমতিয়াজের ঠোঁট চেপে ধরলো। বললো,
“হুস, সমস্যা নেই চিনে নেবো। আপনি তো এখন আমারই।”
রাগান্বিতার এতটুকু কথার মাঝে ইমতিয়াজের ভিতরটা কেমন করে উঠলো। সে দ্রুত দু’কদম পিছিয়ে গেল রাগান্বিতার থেকে। বললো,
“আমি এখন তোমারই তাই না রাগান্বিতা।”
খানিকটা লাজুকভাব নিয়ে বলে রাগান্বিতা,
“হুম।”
এরপর এদের মাঝে অনেকক্ষণ নীরবতা চলে দুজনেই দাঁড়িয়ে থাকে রেলিং ধরে। কথা আর বলে না।”
সময় চললো। হঠাৎই রাগান্বিতা আবদার করে বললো,
“চলুন বসি।”
“এখানে?”
“হুম।
“আজ থাক এভাবে গা ভর্তি গহনাগাঁটি নিয়ে এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না তুমি বরং কেভিনে যাও।”
“আপনার কি ভয় করছে?”
ইমতিয়াজ জবাব দেয় না। রাগান্বিতা আবার বলে,
“আমার কিন্তু করছে না আপনি আছেন তো। আর এখানে কেউ নেই। চলুন বসি।”
ইমতিয়াজ আর বারণ করতে পারলো না। মেয়েটা এত দ্রুত তাকে এত বিশ্বাস করে নিলো। অতঃপর তারা গিয়ে বসলো জাহাজের এক কিনারায় পা ঝুলিয়ে। এতরাতে এভাবে বসে থাকাটা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত ইমতিয়াজ জানে না। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই সমস্যা হবে না হয়তো।”
জাহাজ ছুটছিল তার নিজ গতিতে। রাগান্বিতা ইমতিয়াজ পাশাপাশি বসে। দুজনেই চুপচাপ রাগান্বিতা বললো,
“পরিবেশটা সুন্দর না।”
উত্তরে শুধু এতটুকুই বলে ইমতিয়াজ,
“হুম।”
—-
রাগান্বিতার রুমে বসে ওর একটা শাড়ি জড়িয়ে ধরে কাঁদছে দাদিমা। মেয়েটা চলে গেল, রাগান্বিতার এভাবে বিয়ে হয়ে যাবে এটা কখনো ভাবে নি দাদিমা। কুহুর বিষয়টা ভাবলে আজও তার বুক ফাঁটে।
“এভাবে কাঁদছো কেন?”
দাদিমা চমকে উঠলেন সামনেই রাগান্বিতার বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,
“কই কানতাছি নাতো চোহে কি জানো একটা গেছে।”
রাগান্বিতার বাবা বিছানায় বসলেন। বললেন,
“পোলার কাছ থেকে লুকাইয়া লাভ আছে কও।”
এবার দাদিমা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। আরো উচ্চস্বরে কাঁদলেন। বললেন,
“মনডা বড্ড কানতাছে রে মোতালেব নাতিডা এমনে চইল্লা গেল।”
“ভয় পাইও না নামাজ পইড়া দোয়া কইরো দেখবা সব ভালো হইবো।”
“কুহুর কথা ভাবলেই মনডা ভয়ে কাইপ্পা উঠে রে।”
মোতালেব দ্রুত বললো,
“হু চুপ তাহো কেউ শুইন্না ফেলবো। ওর কথা কাউরে কবা না রাগান্বিতারে তো নাই।”
“একবার কইলে ভালো হইতো না।”
“আগে হইলে বলতাম কইয়ো কিন্তু এহন তো ওর বিয়া হইয়া গেছে আর বলা লাগবে না।”
“ওই পোলাডার হাতে তুইল্লা দেওয়া কি ঠিক হইলো মোতালেব।”
জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো মোতালেব। বললো,
“আর কি করতাম কও উপায় কি আর ছিল। তবে ছেলেডা মনে হয় ভালোই হইবো। আমি রাগান্বিতার জন্য ওই পোলাডার চোখে মায়া দেখছি।”
মোতালেবের কথা শুনে ফট করেই বলে উঠলেন দাদিমা,
“আমরা যা চোহে দেহি তা কি সবসময় হাছা হয় মোতালেব।”
মোতালেব জবাব দিলেন না। এমন সময় হঠাৎই বাহিরে শোরগোল শোনা গেল। কারা যেন চেঁচিয়ে বলছে, কেডা জানি আবার খুন হইছে তালুকদার সাহেব?”
এত রাতে আচমকাই এমন বার্তা শুনতেই বুকের ভিতর দক উঠলো দাদিমার। আর মোতালেব তালুকদার যেন অবাক হলেন। দ্রুত রাগান্বিতার রুম থেকে বেরিয়ে নিচে ছুটে গেলেন। দাদিমাও বেরিয়ে আসলেন রাগান্বিতার বাবার পিছু পিছু।
হতভম্ব হয়ে রুম থেকে বের হলো রেজওয়ান, বোনের চিন্তায় সেও ঘুমাতে পারছিল না। রেজওয়ান বের হতেই বাবাকে নজরে আসলো তার। কিছুটা চিন্তিত কণ্ঠে বললো,
“বাহিরে শোরগোল শুনছো বাবা?”
“হুম তা শুনেই তো আসলাম চলো তো দেখি,
বলেই রেজওয়ান আর মোতালেব তালুকদার চললো বাড়ির বাহিরে। বাড়ির উঠানে ভিড় পড়েছে আবার। এমন ভিড় দেখে খানিকটা আন্দাজ করতে পেয়েছেন রাগান্বিতার বাবা। রেজওয়ান সরাসরি জিজ্ঞেস করলো সবাইকে,
“কি হয়েছে?”
একজন বললো,
“কি কমু রেজওয়ান বাবা মুজিবর গো বাড়ির পিছনের ডোবায় একটা পোলার লাশ ভাইসা উঠছে কে যেন মাইরা হালাই থুইছে।”
রেজওয়ান অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কার লাশ?”
সবাই সরে গেল লাশের কাছ থেকে। লাশের চেহারাটা দেখতেই রাগান্বিতার বাবা যেন থমকে গেলেন। কারন লাশটা আর কারো নয় মাহাদের!’
#চলবে……